১১. দিগবলয়ে নব শশী লেখা

দিগবলয়ে
নব শশী লেখা
টুকরো যেন
মানিকের রেখা

বুয়েট জীবনের কথা লিখতে গিয়ে কেন যেন আমার রবি ঠাকুরের এই ক্ষণিকার কথাটাই মনে এল। ১৯৬২তে আইএসসি পাশ করে বড় আশা করে এসেছিলাম, ইস্ট পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজিতে প্রকৌশলী হব বলে।

আশা পূর্ণ হয়েছে, তাই মনে হয়েছে জীবনের দিগ্বলয়ে নব শশীলেখা-যেটা এক টুকরো মানিকের রেখাই এঁকে দিয়ে গেল হৃদয়ে।

মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়েন দেখেছি তো, তাই প্রকৌশলী হতে পারাটা মনে হয়েছে মুক্তির আলোক। অনেক দুঃখ-কষ্টের বেড়াজাল থেকে বেরোতে পারার হাতছানি। তবে বয়স তো সবে আঠারো।

এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর।
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্ৰণা।

সুতরাং পেছনে যতই দুঃখ কষ্ট, যন্ত্রণার গল্পই থাক, জীবনে প্রথম আলাদা থাকার আনন্দ আর সুখকে উপভোগ না করে কি পারা যায়।

উনিশ শ’ বাষট্টির শেষ ভাগে এসে উঠলাম পলাশি হোস্টেলে। যদিও সে বছর আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মাত্রই রূপান্তরিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে-প্রিন্সিপাল ড. আব্দুর রশিদকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দিয়ে-হোস্টেল গুলো তখনও হল (Hall) হয়ে ওঠেনি। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ ছিল মেইন হোস্টেল, আর পলাশি হোস্টেল। মেইন হোস্টেল এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন— তখন প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্ররা থাকতো, আর পলাশি ব্যারাক টিনশেড হোস্টেল কেবলই প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য। অন্য দুটো হল-১ নিউ হোস্টেল (এখন আহসানউল্লাহ হল) আর ২. সাউথ হেস্টেল যেটা এখন নজরুল হল।

আমি ব্যারাকে থাকাটা বেছে নিলাম। পাঁচ ইঞ্চি দেয়ালের টিনের ছাউনি দেয়া হোস্টেল। খোলামেলা পরিবেশ। বেশ পছন্দ হলো আমার। হোস্টেল পছন্দের ব্যাপারে সাহায্য করলো বন্ধু মিন্টু (জামালউদ্দিন হোসেন)। সে আমার আগের বছর ভর্তি হয়েছে-ব্যারাকটা তারই পছন্দের।

তার প্ররোচনায় হোস্টেল জীবনের প্রথম দিনই চলে গেলাম ‘নাজ’ হলে নাইট শোতে সিনেমা দেখতে। জীবনে কোনোদিন বাড়ির বাইরে— একা বাস করিনি। এক ধরনের স্বাধীনতা ভোগের আনন্দে গিয়েছিলাম ওই সিনেমা দেখতে। হিচককের ‘সাইকি’। ভয়ের সিনেমা। তবে দেখে যখন ফিরলাম ভয়ানন্দ অনুভূতি হয়েছিল-সেটা এখনো মনে করতে পারি।

শো শেষ হতে প্রায় রাত ১২টা। সন্ধে রাতেই হলে খেয়ে গিয়েছিলাম। এসে দেখি গেটে তালা। শুনলাম দশটার পরপরই তালা পড়ে প্রধান ফটকে। জামাল বললো ‘কোনো অসুবিধা নেই’। সে-নিজেই দারোয়ানকে ডাকলো দরজা খোলার জন্য। দারোয়ান তার অপারগতা প্রকাশ করে পরামর্শ দিল— দেওয়াল টপকাতে। তাই করা হলো। হোস্টেল জীবনের প্রথম দিন দেয়াল টপকালাম বন্ধু আর দারোয়ানের সাহায্যে।

এক এক রুমে চারজন ছিলাম। বন্ধুদের সাথে ভাব জমতে দেরী হলো না। লম্বা পুলিশদের ব্যারাকের মত-প্রচুর আলো বাতাস। শুধু বাথরুম একটু দূরে। পাশেই রেললাইন। ফুলবাড়িয়া স্টেশনে রাতে দিনে যত ট্রেন যায় সবই সাড়া জাগিয়ে যায়। এতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ ছোট্টবেলা থেকে রেলের সাথেই তো আমার সম্পর্ক। আঠারো অবধি মায়ের হাতের খাওয়া খেয়ে অভ্যস্ত-হোস্টেলের খাবারের সাথে সমন্বয় ঘটাতে একটু অসুবিধা হলেও এক সময় সয়ে এলো।

নিউমার্কেট যাওয়া আসা নৈমিত্তিক হয়ে উঠলো। আমাদের প্রকৌশলী ক্লাসের জন্য ড্রয়িং পেপার, বাটার পেপার, ট্রেসিং পেপার, T-square পেন্সিল (হরেক নম্বরের) ইরেজার— যত ছোটখাটো জিনিসই হোক না কেন, তার জন্য আমরা নিউমার্কেট ছুটতাম, কখনো একা কখনো দলবদ্ধভাবে। হেঁটে বা রিকশায় (চার আনা) বা বাসে (এক আনায়)। বাস ছিল মুড়ির টিন নামে বিখ্যাত।

ক্লাসের অফ পিরিয়ডে আড্ডা চলতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে, আবার কখনো বকসিবাজার ইডেনের দিকে হেঁটে আসাও হতো। সিনেমাটা (ইংরেজি) ও নিয়মিত হয়ে পড়লো। ছাত্র কনসেশন ছিল, তখন ID card দেখালে Ticket এক ক্লাস উপরের করে দিত।

এই সময় আর এক হুজুগে মেতে উঠলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত হল। নির্বাচন, ছাত্র পরিষদের নির্বাচন। কেন্দ্রের এবং হোস্টেলের।

কেন জানি আমার রুমমেটরা আমাকে ধরে বসলো নির্বাচনে দাঁড়াবার জন্য। সহসভাপতি পদে। কোনো ওজর-আপত্তি চললো না। দাঁড়িয়েই গেলাম।

বেশ হৈ চৈ করে ক্যাম্পেইনও চললো ক’দিন। আমি অন্য ছাত্রদের প্রতিক্রিয়াতে নিশ্চিত ছিলাম-জিতবোই। ফল বেরুলো— ২ ভোটে পরাজয়। জীবনে প্রথম নির্বাচনে। প্ৰথমেই পরাজয়। তখন তো আর রাজনীতি মানে দলবাজি ছিল না ওখানে-এক ধরনের আনন্দ উৎসবই হলো নির্বাচনে-আর হেরে গিয়ে বিজয়ীদের সাথে মিলে নাইট শো দেখে এসে পরমানন্দে পরাজয়ের জ্বালাটুকু মেটানোও হলো।

ইতোমধ্যে একটা খবর এলো-হোস্টেল ছাড়তে হবে— কারণ এখানে নতুন হল তৈরী হবে। আমেরিকান স্থপতির ডিজাইনে তিনটি হল হবে পুরো পলাশি হোস্টেলের যায়গা জুড়ে। অগত্যা চাট্টিবাট্টি গুটিয়ে গেলাম নিউ হোস্টেলে।

তার আগেই কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদের বার্ষিক নাটকের নোটিশ পড়লো হলে হলে। আমি ভাবছি যাবো কি যাবো না-জামাল জোর করে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে দেখি-নাটকের পরিচালক প্রখ্যাত অভিনেতা পরিচালক ওবায়দুল হক সরকার। পরীক্ষা নিচ্ছেন তিনি অভিনয় ইচ্ছুক ছাত্রদের। নাটকের প্রধান উদ্যোক্তা সিরাজুল মজিদ মামুন। এক একটি চরিত্রের জন্য প্রায় দশ বারোজন করে প্রার্থী। নায়ক নাকি আগেই নির্ধারিত-মামুন। ছোট আর মাঝারি চরিত্রের প্রার্থী প্রচুর।

দাড়িয়ে গেলাম আমি এক চরিত্রে। জামাল পুরোন ছাত্র হিসেবে পেয়ে গেল একটি চরিত্র। আমি পরীক্ষায় ওয়েটিং লিস্ট এবং চূড়ান্ত টেস্টে পাশ করলাম, অবশেষে একটি মাঝারি ধরনের চরিত্রে। নাটকটির নাম এক মুঠো আকাশ। রচনা ধনঞ্জয় বৈরাগী। আমার চরিত্রের নাম মনে নেই। সেই নাটকে যাঁরা ছিলেন তাদের মধ্যে আমার সাথে-জামাল, আবুল কাশেম, গোলাম রাব্বানী, মামুন তো অবশ্যই, আরও অনেকে।

মহিলা চরিত্রের জন্য আনা হয়েছিল বাইরের প্রফেশনাল শিল্পী যেমন নাজনীন, রানী সরকার, সীমা খান প্রমুখ। নাটক মঞ্চায়িত হলো। আমি একটু পরিচিত হলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এরপর আমরা আবার স্থানান্তরিত হলাম মেইন হোস্টেলে-শুরু হলো নতুন বছরের পড়াশুনা। Chemistry তে আশানুরূপ ফলাফল না হওয়ায় আমাকে course repeat করতে হলো-নতুন হোস্টেলে আমি আবার দাঁড়ালাম নির্বাচনে। নাটকে অভিনয়ের কারণে পরিচিতি একটু বেশি হওয়ায় সবাই বেশ ঠেলেঠুলে আমাকে উঠিয়ে দেয় নির্বাচনে যোগ দেবার জন্যে। আর আমি বোকার মত সেই ফাঁদে পা দিই। তবে এবার জয় পেলাম এন্টারটেইনমেন্ট সেক্রেটারি পদে।

ক’মাস যেতে না যেতেই আবার হল বদল— এবার আর হোস্টেল নয়। এর মধ্যে (Hall) ঘোষণা হয়ে গেছে। আমরা এবার যাবো পলাশিতে-তবে নতুন চারতলা ভবনে ( Hostel complex নাম ছিল)। তিনটে হল নির্মিত হচ্ছিল (দুটো করে উইং)-কায়েদে আযম হল-যা এখন তিতুমির হল, শেরে বাংলা হল, আর লিয়াকত হল (যা এখন সোহরাওয়াদি-হল)। আমি উঠলাম শেরে বাংলা হলের চার তলায় কক্ষ নম্বর ৪০৯। চারটি করে সিট। বাকী সময়টা কাটলো এখানেই রুম মেট আনিসুজ্জামান, পিটার আর আকরাম (ভাই) এর সাথে। আকরাম ভাই আমাদের বয়সে বড় এবং বিবাহিত ছিলেন বলে ভাই সম্বোধনটা অনিবার্য ছিল।

Hostel complex প্রকল্পে তৈরি হলগুলো বড় সুন্দর ডিজাইনে তৈরি। জমির ওপর যথোপযুক্ত space দিয়ে রুম, ডাইনিং, কমনরুম। সামনে পেছনে করিডোর, মসজিদ, বাগান ইত্যাদি নিয়ে অসাধারণ হল ছিল এগুলো। রুমগুলোতে দু’দিক থেকে প্রচুর আলো বাতাস-ফার্নিচার প্রত্যেকের পৃথক পৃথক (চেয়ার টেবিল আলমারি, খাট)। বলতে গেলে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

প্রথম নতুন হলে আসবার পর আমাদের একটি নাটক মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত হলো। সিরাজুল মজিদ মামুন আমাদের সাহায্য করলেন। তিনি তখন ঢাকা বেতারের একজন গর্বিত অনুষ্ঠান ঘোষক। নাটক ঠিক করা হলো— শম্ভু মিত্র ও কিরণ মৈত্রর লেখা কাঞ্চনরঙ্গ। পরিচালক তিনিই ঠিক করে দিলেন-জনপ্রিয় অভিনেতা ফরিদ আলীকে। মামুনের রেডিওতে কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন জাতীয় লেভেলের শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ ছিল। ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চায়ন হলো। এতে আমাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চরিত্রে যারা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা হলেন আবুল হায়াত, আবুল হাসান (সাধারণ সম্পাদক) আবু জাফর খান, ওয়ালিউল ইসলাম, মনজুরুল ইসলাম প্রমুখ। জনপ্রিয় অভিনেত্রী সীমা খান (পরবর্তীতে কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের গৃহিণী) এবং গীতা দত্ত। গীতা দত্ত সেই সময়ের একজন নিয়মিত মঞ্চশিল্পী ছিলেন। তাঁর আরেকটি পরিচয় হলো তিনি প্রখ্যাত রূপসজ্জাকর সুরেশ দত্তের কন্যা। নাটকের মঞ্চ সাজিয়েছিলেন খুবই জনপ্রিয় সেট ডিজাইনার বিশু মুখার্জী। আর শব্দপক্ষেপণে ছিলেন দয়াল দা। এদের নামগুলো লিখবার কারণ হলো এঁরা এই বাংলার মঞ্চ নাটকের পথ চলায় অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখে গেছেন।

আরেকজনের নামটাও বলে রাখা দরকার। ইমারত হোসেন। ইনি ছিলেন প্রফেশনাল প্রম্পটার।

ইমারত ভাই ছাড়া সে সময় কোনো মঞ্চে অভিনয় মোটামুটি অসম্ভবই ছিল।

আমাদের নাটকটি ছাত্রমহলে তো বটেই এমনকি শিক্ষক মহলেও রীতিমত সাড়া ফেলে দিল— ফলে অভিনেতা হিসেবে বেশ একটা ভাল পরিচয় আমি পেয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় বলয়ে।

ঢাকায় সে সময় সাংস্কৃতিক মাঠটা বেশ তৎপর ছিল— সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো বিভিন্ন ব্যানারে। পাড়ায় পাড়ায়, অফিসে অফিসে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এতে গান, নাচ, নাটক-এর প্রতিযোগিতা চলতো প্রায় প্রতি বছর। মানুষের মধ্যে সংস্কৃতির প্রতি একটা ভালোলাগা ছিল, ছিল এক ধরনের মায়া।

ও হ্যাঁ, আমি মেইন হোস্টেলের বিনোদন সম্পাদক হয়ে প্রথম যে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলাম, সেটা ছিল Installation Ceremony। সেই অনুষ্ঠানের শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল যার জন্যে, আমার মনে পড়ে সব কিংবদন্তী শিল্পীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের সময় নিয়ে আসা, সব কাজই করেছি আমি। যাঁদের সংস্পর্শে তখন এসেছিল, তাঁরা হলেন-সোহরাব হোসেন, খালেদ হোসেন, আনোয়ার উদ্দীন খান, জাহেদুর রহিম, নীনা হামিদ, আব্দুল হামিদ, আব্দুল জব্বার, গীটারিস্ট পান্না ভাই— নাচের শিল্পীর নাম মনে করতে পারছি না— সে বিরাট এক বহর। তখনকার কোনো সাংস্কৃতিক যজ্ঞ এঁদের ছাড়া সম্পন্ন হতো না।

এখন লিখতে (২১.০৭.২০২৪) গিয়ে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাকে। প্ৰায় দশ বছর পূর্বে ‘রবিপথ’ শুরু করেছিলাম, তখন কিন্তু তরতর করে চলেছে কলম। পদ্ধতির বিড়ম্বনা ছিল না আদৌ। আর এখন দুলাইন লিখেই থামতে হচ্ছে— নাম মনে আনতে পারছি না অনেকেরই। শেরে বাংলা হলের প্রথম প্রভোস্ট অনেক সজ্জ্বন ব্যক্তি কেমিস্ট্রির অধ্যাপক-উর্দুভাষী, কিন্তু চমৎকার বাংলা বলিয়ে মানুষ— অধ্যাপক মাজহারুল হক, তাঁর ছত্রছায়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করাটা আমাদের জন্য অনেক সহজ হতো।

তিনি চলে যাওয়ার পর এলেন অধ্যাপক শাহজাহান। তিনিও ডিপার্টমেন্টের। অর্থাৎ আমার ডিপার্টমেন্টের স্যার। আমরা সব ডিপার্টমেন্ট পছন্দ করে নিয়ে নিয়েছি এর মধ্যে। আমার রুমমেটদের মধ্যে তিনজন একই অর্থাৎ সিভিল-শুধু আনিসুজ্জামান ব্যতিক্রম-মেকানিক্যাল (যন্ত্রকৌশল)।

আবার হুজুগ উঠলো নির্বাচনের। এবার লিয়াকত হলের উত্তর শাখা নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় সেখানেও ছাত্র এলো— আর কর্তৃপক্ষ এই দুই হলের একটি করে শাখা নিয়ে শেরে বাংলা হলের নিয়ন্ত্রণে দিলেন। সুতরাং ভোটার প্রায় ৩০০। প্রিয়জনদের প্ররোচনায় (?) দাঁড়িয়ে গেলাম সাধারণ সম্পাদকের পদে। এবার বিপুল ভোটে জয়ও এল। ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করা হলো ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে। শিল্পী প্রায় বাঁধাই থাকতো, আগেই বলেছি। তবে এবারের সংযোজন ছিল দুজন নতুন শিল্পী (আমাদের তখনকার অজানা, অল্প বয়সী) সাবিনা ইয়াসমিন ও শাহনাজ (রহমতউল্লাহ)। এটা সেই ১৯৬৪ তে বোধকরি। আর একজন শিশু শিল্পীর নামও উল্লেখও করা প্রয়োজন— যে খুবই ভাল গান গাইতো এবং ভীষণ জনপ্রিয় ও ছিল— তার নাম শিমুল বিল্লাহ (ইউসুফ)।

এই অনুষ্ঠানে আমরা ছোট্ট একটি নাটিকাও উপস্থাপন করেছিলাম, নারীবিহীন নাটিকা। আমার পরিচালনায়— এই আমার হাতেখড়ি নাট্যনির্দেশনায়। নামটা মনে নেই নাটিকার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলতে এসে শুধু সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ নিয়েই বলে যাচ্ছি— এর একাডেমিক বিষয়টা নিয়েও তো বলা প্রয়োজন। স্কুল-কলেজ জীবনে যে পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেছি, এখানে এসে পেলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা নিয়ম। সিমেস্টার সিস্টেম। বিদেশে এই পদ্ধতি চলে জানতাম, তবে সরেজমিনে দেখা ও জানা এখানেই প্রথম পড়াশোনার প্রতি আমার যেহেতু ঝোঁক সবসময়ই কম ছিল-সেই কারণে দশ বছরের পড়াশোনার পর একবারে পরীক্ষা দেয়াটা মনে হতো অত্যাচার। আবার উচ্চ মাধ্যমিকের অবস্থা আরও কঠিন। মাত্র দুই বছরে এত কিছু পড়তে হয়-হঠাৎ করে ভড়কে যাওয়ার মত। তাও দু’বছর তো কাগজে কলমে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক কম। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল শিক্ষার মাধ্যম। ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলায় পড়ালেন শিক্ষকরা, এবার উচ্চ মাধ্যমিকে এসেই সব হয়ে গেল ইংরেজি-ফিজিকস কেমিস্ট্রি, বাইওলজি-ম্যাথেমেটিকস সব সবই ইংরেজি। বেশ একটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া— সত্যিই বড়ই কঠিন। তারপরও চেষ্টা চরিত্র করে ইংরেজিতে শিক্ষা পাওয়াটা কিছুটা হলেও রপ্ত করার ফলে প্রকৌশলের ইংরেজি বই এবং ইংরেজিতে পড়ানো, এতটা কষ্ট হয়নি। আর সিমেস্টার পদ্ধতি ছাত্রদের কষ্ট লাঘব করার অতি উত্তম একটা পদ্ধতি।

বছরকে দুই বা তিন ভাগ করা হয়। এক এক ভাগে যা পড়ানো হয় তারই ওপর পরীক্ষা চূড়ান্ত— ও নিয়ে আর চার বছর পর আপনার মাথা নষ্ট করতে হবে না। এই চার বছরের ৮ অথবা ১২টা সিমেস্টারের গড় দিয়ে ফলাফল হবে। সুতরাং পড়ার চাপ কমলো ঠিকই, আবার সারাটা সময় (চার বছর) আপনাকে ব্যস্ত রাখা হলো পড়াশোনায়-কারণ সব পরীক্ষাই চূড়ান্ত ফলাফলের নিয়ামক।

এখানে আবার শারীরিক ব্যায়াম বাধ্যতামূলক ছিল (P.T). ভোর বেলা উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে আপনাকে পিটি ক্লাস করতে হবে। এবং তার জন্য নম্বর যেটা পাবেন তাও আবার চূড়ান্ত ফলাফলে যুক্ত হবে।

এ সমস্ত কারণে আমার পক্ষে নিয়মিত পড়াশোনা করার একটা অবকাশ হয়েছিল। তবে ওই যে, বেশি ভাল করার প্রয়োজন কখনোই বোধ না করে, সুন্দর একটা ফল করার দিকে মনোযোগ বেশি ছিল।

খেলার মাঠেও কিন্তু আমি নিয়মিত ছিলাম। বিশেষ করে ক্রিকেট মৌসুমে আমার মাঠে উপস্থিতি সবার নজরে পড়তো-আর চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলের JCC ট্রেনিং-এ PT ক্লাস নিয়মিত করা হতো বিধায় সেটাতেও আমি নিয়মিত ছিলাম এখানে।

একটু গল্পগুজব ঘোরাফেরা, সিনেমা দেখা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পেছনে সময় দেয়া— ওই সময় ‘আমরা ক’জনা’ প্রতিষ্ঠানের সদস্যও ছিলাম (লিখেছি আগে)। এই সব নানাবিধ ব্যস্ততায় যেটা হয়েছিল আমি অনেকেরই ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেছিলাম। ফলে আমার রুমের, আমার বেডটা ছিল আড্ডার একটি কেন্দ্র। ঘুরে ঘুরে সময় করে অনেকেই এসে আমার সাথে গল্পে মাততো— রাতে পড়ার কাজে আমি যতটুকু না হলেই নয় ততটুকু সময় দিতাম। রুমমেট আকরাম ভাই ছিলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে পড়ুয়া ছাত্র। আর ওঁকে জ্বালাতাম আমি বেশি। কিছু না বুঝলেই তাঁর দ্বারস্থ হতাম। তখন উনি খুবই সিরিয়াস শিক্ষকের মত বোঝাতে শুরু করতেন।

আমি একটা কাজ খুবই যত্নের সাথে করতাম। আর সেটা হলো ক্লাস নোটস্। এখানে আমি ছিলাম ওস্তাদ। ক্লাস মিস করা যাবে না (নন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বেলায় অবশ্য একটু ফাঁকি চলতো)। পারফেক্ট নোট করতাম আর পরীক্ষার সময় সেগুলোই হতো আমার সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। বড় ভাইও মাঝে মাঝে আমার নোট ধার নিতেন। বন্ধু রুমমেট পিটার, সে অনেকটা আমার মতই ছিল। এর বাইরেও ছিল আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়ালিউল ইসলাম— সে থাকতো তিন তলায় ৩০৭ নম্বর রুমে। পরীক্ষার রাতে আমাদের – পিটার, আকরাম ভাই, ওয়ালি আর আমি আমাদের সেশন বসতো আমার ডেস্কে-রিভাইস চলতো পরীক্ষার পড়ার-একজন প্রশ্ন করতো-অন্যরা উত্তর দিত যার যার মত-সেগুলোই অন্যরা আবার রিপিট করে ফেলতো মুখে মুখে— হয়ে যেত পরীক্ষার পড়া। অনেক রাত হয়ে যেত কখনো কখনো— তবে সেজন্যেও প্রস্তুতি থাকতো আমাদের— Anti Sleeping pill খেয়ে ঘুম তাড়ানো হতো-পলাশির দোকানে চা খেয়ে এসে আবার সেশন বসতো— কখনো চলতো ভোর পর্যন্ত-সোজা পরীক্ষা দিয়ে এসে— ঘুম। ঘুম থেকে উঠে কেউ কেউ সিনেমা হলে দৌড়াতো। সে সময় হলিউডের সব রকম টাটকা সিনেমা পাকিস্তানে আসতো। এবং কালজয়ী সেই ষাটের দশকের সিনেমাগুলো দেখাটা আমাদের জন্য ছিল একটা বড় পাওয়া।

আগেই বলেছি— অভিনয়ের কারণে শিক্ষকগণ আমাকে ভাল করেই চিনতেন-এতে সুবিধা অসুবিধা দুটোই হতো। ক্লাসে অনেক প্রশ্নই আমার দিকে ধেয়ে আসতো স্যারদের কাছ থেকে। উত্তর দিতে না পারলে হয়তো কখনো মৃদু ভৎর্সনা পেতাম-তবে উত্তর দিলে স্যারদের বাহবাহ-ই পেতাম বেশি। এবং আমার মনে আছে তৃতীয় বর্ষে একবার Midterm Examination-এ আমি ক্লাসের মধ্যে Irrigation-এ সর্ব্বোচ্চ নাম্বার পাওয়ায় শিক্ষক খোন্দকার আব্দুর রহমান (KAR স্যার) খাতা তুলে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন দেখ দেখ, হায়াত নাটকেও ফার্স্ট পরীক্ষায়ও ফার্স্ট।

লজ্জায় আমি লাল। কারণ জীবনে এই ঘটনা সেই প্রথম এবং সেই শেষ।

তবে চতুর্থ বর্ষের ঘটনাটাও আবার খুব মনে পড়ে— Railway তে আমি ১০০তে ৮৯ পেয়ে সবাইকে অবাক করেছিলাম। তবে আমি মোটেই অবাক হইনি, কারণ ছোট্টবেলা থেকে রেল আমার প্রিয় বিষয়। রেলের বই পড়তে গিয়ে কেন যেন মনে হতো— এটা তো আমার নিজের জিনিস। এর নাড়ীনক্ষত্র জানতে হবে।

বিশ্বাস করেন, এখনও রেলকে আমার মনে হয়— এ তো আমার। সব রেল পরিবারেই নাকি এরকম অনুভূতি হয়। আমার নাটকে আসাটায় তো এই রেলেরই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের এক কেন্দ্র চট্টগ্রামের ওয়াজিউল্লাহ ইন্সটিটিউটের অসীম অবদান। স্যারদের কথায় ফিরে যাই। প্রতি সিমেস্টারে আমাদের Practical ক্লাস (sessional) থাকে-যার আবার ভাইভা হতো Course শেষে, সেক্ষেত্রে স্যারদের প্রথম প্রশ্ন ছিল নাটক নিয়ে, অভিনয় সম্পর্কে। এটা এক ধরনের স্নেহের বহিঃপ্রকাশ। ভাল উত্তর দিতে পারলে স্যাররা ভীষণ খুশি হতেন।

দ্বিতীয় বর্ষে আবার কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদের বার্ষিক নাটকেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পেলাম। মাটির ঘর বিধায়ক ভট্টাচার্যের। নির্দেশক সেই আমাদের ওবায়দুল হক সরকার। এখানেও আমরা মানে সিরাজুল মজিদ মামুন, গোলাম রাব্বানী, আবুল কাসেম, জামালউদ্দিন আর আবুল হায়াত। নাটক শেষে দীর্ঘদিন ধরে চললো Postmortem.-নিজেরাই মাঠে, হলে রেস্টুরেন্টে— যখনই এক সাথে হতাম ওই নাটক নিয়ে চলতো কাঁটাছেঁড়া-হাসাহাসি-গালগল্প।

অন্য ছাত্রদের সেটা নজর এড়ায়নি— তারা আমাদের টাইটেল দিয়ে দিল ‘ঘেঁটুপাৰ্টি’। সে বছরই আবার করলাম কল্যাণ মিত্রের পাথর বাড়ি। সেখানেও ঘেঁটুপার্টিই প্রধান— যদিও নাটকটি আমার হলেই হয়েছিল।

আনিস আর আমি একবার ঠিক করলাম ছায়ানটে ভর্তি হবো। আমার ছোটবেলা থেকে একটা শখ ছিল গান শিখব। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। টাইগারপাসে আমরা দল বেঁধে গান গাইতাম— বন্ধু বুলুই এক মাত্র হারমোনিয়াম বাজাতে পারতো-তাকে নিয়েই চলতো আমাদের গান গাওয়ার নামে হেঁড়ে গলায় চিৎকার চেঁচামেচি। বুলু বলতো-তোমার গলায় তো সুর আছে, শেখ না কেন?

কেন শিখিনি জানি না। আজও শেখা হয়নি

আনিস তো ফট করে গেল ভর্তি হয়ে। তার শখ যন্ত্র বাজানো শিখবে। হঠাৎ দেখি এস্রাজ নিয়ে হাজির। কিনেই ফেললো একেবারে। আর আমি আজিমপুরে ছায়ানটের দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার এলাম ঘরে ফিরে। হলো না শেখা।

পরের বৎসর আমাদের আর এক সহপাঠি সাজ্জাদ হলো সাধারণ সম্পাদক। সে আবার আনিসের ডিপার্টমেন্টের (mechanical) আর আনিসের সুহৃদ। প্রথমেই সে T & T থেকে একটি Public telephone booth ব্যবস্থা করে ফেললো হলের জন্যে। ধন্য ধন্য হলো সে। এবার সে একটি গানের প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করলো— যেটা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। সবার জন্যে মানে শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়-তার বাইরে থেকেও যে কেউ নাম দিতে পারবে।

নাম এলো অনেক। বিশেষ করে ছায়ানটের অনেক ছাত্রী এল এই প্রতিযোগিতায়। এদের মধ্যে ছিল একজন— মনোয়ারা। তার গান শুনে আমাদের আনিস মোহিত! দু’দিন পর বুঝলাম সে মজেছে। এস্রাজের তারে বেশ ঘন ঘন ঘষাঘষি চলছে তার। জানিয়েই দিল একদিন-আমি ওর প্রেমে পড়েছি। ঠিক এটাই বলেছিল কিনা মনে নেই। তবে আমাদের প্রতি তার অনুরোধ ছিল তাকে সহযোগিতা করার জন্যে।

পিটার বেশ উৎসাহিত হলো ব্যাপারটিতে। প্রায়ই আনিসকে নিয়ে বেরুতো off period-এ পলাশির রাস্তায়, যখন মনোয়ারা কলেজ যেতো সেই সময়ে। অনেক ঘোরাঘুরি করেও মনের কথাটা আর বলা হয় না আনিসের।

পিটার একদিন ক্ষিপ্ত হয়ে ঘোষণা দিল-

আজ আপনাকে বলতেই (ওরা আপনি সম্বোধন করতো পরস্পরকে) হবে।

চললাম আমরা সাক্ষী হয়ে, আমি, পিটার, মান্নান আর আনিস। ঠিকই পেয়ে গেলাম মনোয়ারাকে এসএম হলের সামনে। পিছনে পিছন কথা বলতে বলতে আমরাও চললাম, আর পিটার আনিসকে বেশ চাপ দিতে লাগলো কথাটা বলার জন্যে। আনিস কিন্তু কোনো কথাই বলল না, শেষে পিটার রেগে গিয়ে বললো-আপনি না বললে আমিই বলে দিচ্ছি— এই যে মনোয়ারা শোনেন-

চিৎকার দিল পিটার।

মনোয়ারা এবং বান্ধবীরা ঘুরে দাঁড়ালো-

এই যে আমার বন্ধু আনিস, আপনাকে ভালোবাসে-

সঙ্গে সঙ্গে ও দিক থেকে কেউ একজন পায়ের স্যান্ডেল খুলে দেখালো-

আর আমরা সঙ্গে সঙ্গে উল্টোদিকে হাঁটা দিলাম।

মজা করতে গিয়ে যে পাবলিকের পিটুনি খাইনি, ভাগ্যিস।

সেই মনোয়ারা কোনো এক সময় আমাদের আনিসের ঘরনী বা অর্ধাঙ্গিনী হয়। তারা সুখী দম্পত্তি। বাস করছে কানাডার টরোন্টো শহরে। ২০২৩ শে আমি গেলাম তাদের বাসায়। অত্যন্ত চমৎকার তাদের একটা বাড়ি, গোছানো সুন্দরভাবে। অনেকটা যায়গা নিয়ে বাড়িটা। সারাটা দিন কাটালাম আরও কয়েকজন বন্ধুসহ। ভুরিভোজের আয়োজন ছিল। কথায় কথায় পুরোন কথাও উঠলো এক সময়-মনোয়ারা বললো-

আপনারা আসামী-দিয়েছেন আমাকে গছিয়ে এমন একটা দুর্বল পেটরোগা মানুষ বলোতো ফিরিয়ে নিয়ে যাই-

তারপর হাসির রোল।

পৃথিবীটা আসলেই বড় সুন্দর।

বড় ভাই আকরাম পাশ করে পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডে চাকরি করতেন, সেখান থেকে চলে যান মুক্তিযুদ্ধে। অবাক লাগে, তাঁর মত দুর্বল একটা মানুষ কীভাবে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, জীবন বাজী রেখে, ধন্য আপনি আকরাম ভাই।

তিনি আজ প্রয়াত, সেও অনেক দিন হয়ে গেল। পিটারের সাথে দেখা হত কখনো কখনো। শুনেছি সেও আজ অন্য জগতে।

পিটার (মনসুর তৌহিদ)-এর কথা উঠলো যখন বলি-আমাদের মধ্যে ও সবচেয়ে অগোছালো, আনিসও প্রায় তথৈবচ। বড় ভাই ছিলেন টিপটপ। মিষ্টি স্বভাবের। তাঁর কাছে আমরা শুধু ভাবীর গল্প শুনতে চাইতাম আর তিনি লজ্জায় লাল হতেন।

পিটারের একটু নেশা ছিল কাচ্চু খেলা। কাচ্চু খেলাটাকে কেউ কখনো জুয়া ভাবতো না। একটা শুধু মজা করা, চার আনা, আট আনা স্টেকে খেলা চলতো। আমাদের নীচের তলায় একটি রুমে জমতো কাচ্চু সেশন। সেখানে পিটারের যাতায়াত ছিল প্রায়ই। আমাদের এখানেও দু একদিন বসেছিল-আমি আর আনিস হতাম দর্শক। আর একটি কাজ আমরা করতাম। প্রতি বোর্ডের থেকে একটি সিকি উঠিয়ে নিয়ে দেদারসে সিনেমা দেখতাম। আমি মোটামুটি গোছানোই ছিলাম। আমি অন্যদের চেয়ে ছিলাম একটু ভিন্নই। যেমন আমার টেবিলে একটি টেবিল ক্লথ থাকতো। টেবিলে একটা ফ্যান ছিল— মান্ধাতার আমলের। আব্বা কিনেছিলেন বাসার জন্য-পরে আমি নিয়ে এসেছিলাম। সর্বোপরি আমার একটি ট্রানজিসটার রেডিও ছিল-যাতে আকাশবাণী কলকাতার গান এবং নাটক শুনতাম আমরা দল বেঁধে।

রেডিওটা একবার রুম থেকে চুরি হয়েছিল। কী করে, যেন আবার চোর ধরা পড়ে রেডিওটাও ফেরৎ পাই। হলের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল সেটি আমার সাথে-বোধকরি কোনো হলবয়কে দিয়ে দিয়েছিলাম।

১৯৬৪-তে পাকিস্তান টেলিভিশন এল। করাচি এবং ঢাকায় পাইলট স্টেশন স্থাপিত হলো জাপানের NEC-র সহযোগিতায়। যোগাযোগের নতুন দুয়ার উন্মুক্ত হলো আমাদের সম্মুখে, ভারতে তখনো আসে নি। মনে পড়ে ডিসেম্বরের সম্ভবত ২৫ তারিখে জিন্নাহ সাহেবের জন্মদিনে শুরু হয়েছিল সম্প্রচার। সরকারের দেয়া ১২০০ TV-র একটি আমাদের হলও পেয়েছিল। দল বেঁধে দেখলাম ফেরদৌসী রহমানের গানের অনুষ্ঠান। একতলা দোতলা নামের একটি নাটকও সম্ভবত ওই দিনই প্রচারিত হয়েছিল। সেদিন থেকে হলে একটি টিভি কক্ষও প্রতিষ্ঠিত হলো, সন্ধে থেকে প্রতিদিনই জমায়েৎ হতাম আমরা। টিভি সম্প্রচারের সময় ছিল সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১০টা। টিভির নাটক দেখতে দেখতে আমিও এক সময় Acting এর জন্য দরখাস্ত পাঠালাম। সে কথা বলেছি অন্যত্র। ৬৫তে লেগে গেল পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ। রান-অফ-কচ্ এলাকায়। তার প্রভাব পড়লো আমাদের এখানেও। সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং দেয়া হলো আমাদের। রাত্রে হতো Blackout! আমরা পাহারা দিতাম, শত্রুপক্ষের কেউ সিগন্যাল টিগন্যাল দেয় কিনা। কেন যেন সবার দৃষ্টি তখন হিন্দুহলের দিকে। ভাবটা এরকম যে ওরাই পাকিস্তানকে ডোবাবে। একরাত্রে তো কে যেন দেখলো Black out-এর সময় হিন্দু হোস্টেলের ছাদ থেকে কে একজন আকাশের দিকে টর্চের আলো ছুঁড়ছে। সে নিয়ে হুলস্থুল বাধলো। পরে জানা গেল সব ভুয়া। কেউ হয়তো অন্ধকারে বের হয়েছিল প্রকৃতির ছোটো ডাকে। পারেও বাঙালি। যুদ্ধ শেষে আবার আর এক উত্তেজনা। মানে সরকার বলে দিল আমরা জিতেছি। উৎসব করো। ভারত তো প্রচার করছেই যে তারা জয়ী। আমাদের নেতারা একটা মিটিং-এর ব্যবস্থা করে ফেললেন গভর্ণর মোনেম খানের সাথে দেখা করে, আয়ুব খানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন যুদ্ধজয়ের জন্য।

উত্তেজনায় আমরাও গেলাম গণভবনে। স্বৈরাচারের দোসর মোনেম খানের হাতে ফুল দিল নেতারা। দেখলাম আমরা। আজ মনে করলে লজ্জা লাগে। কিন্তু হয়েছে তো তাই। রাজনীতি ছিল না প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু তলে তলে অনেকে দলবাজির চেষ্টা চালিয়েছে— কেউ ছাত্র ইউনিয়ন করতো, ময়ূখ নামের এক প্রতিষ্ঠানের নামে। এই নামে নির্বাচন করতে গিয়ে ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়েছিল। আর আয়ূব খানের দলও NSF করতে চেয়েছিল— পারে নি। ওরাই সম্ভবত ওই মিটিংটা আয়োজন করেছিল। বাস্তবে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ছিল না, তাই বলে ছাত্ররা যে রাজনীতি সচেতন ছিলেন না তা নয়। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ ১৯৬৬তে দেশে যখন শিক্ষানীতি, ছাত্রদের ১১ দফা ইত্যাদি নিয়ে তুমুল আন্দোলন চলছে আর সরকারের পেটোয়া বাহিনীর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ট, তখনই গর্জে উঠে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র। বিশাল এক মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে রওয়ানা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে। আমার জীবনেও সেই ছিল প্রথম কোনো মিছিলে যোগ দেয়া। মজার ব্যাপার ছিল সেই মিছিলে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে Interwing স্কলারশিপ নিয়ে যারা পড়তে এসেছিল তারাও শামিল হয়েছিল। মিছিল যখন শহীদ মিনারে পৌঁছায় হঠাৎ পুলিশ আমাদের তিন দিক থেকে ঘিরে আক্রমণ করে বেধড়ক পেটানো শুরু করে-আমাদের দৌড় দিগবিদিগ। আহত অনেকে, আমিও ঢাকা মেডিকেলের লোহার গেট পেরুতে গিয়ে ক্ষত বিক্ষত। আমার এক সহপাঠী Interwing স্কলার লাঠির আঘাতে রাস্তায় পড়েছিল অনেকক্ষণ। আমার জীবনে ওই প্রথম ও শেষ মিছিল করা।

সেদিন রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে নার্সেস কোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে ঢুকে মেডিকেলের বকশিবাজারের দিকের দেয়াল টপকে রাস্তা পেরিয়ে গেলাম। আমাদের দেয়াল টপকে মাঠ দিয়ে দৌড়ে সোজা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে ঢুকে পড়েছিলাম। দেখি আমার আগেই দুচারজন চিকিৎসারত।

আমাদের মেডিকেল কেন্দ্রের কথাটা মনে পড়ছে-ভর্তির সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর একটি বাধা রয়েছে তখনো। মেডিকেল পরীক্ষা। ওই পুরোনো এক তলা ছোট্ট বিল্ডিংটা, এখন বোধহয় নেই আর। একজন ডাক্তার-সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার কোনো এক ভিলেনের মত দেখতে ছিলেন ভদ্রলোক, আর একজন কম্পাউন্ডার। তো ওই মেডিকেল টেস্টের দ্বার পেরুতে না পারলে আর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া হবে না-দুরু দুরু বক্ষে বিশেষ রুমে ঢুকলাম। ডাক্তার সাহেব গভীরভাবে দেখছেন। কম্পাউন্ডার লিখছে কিছু আর তাকে প্রয়োজনমত সাহায্য করছে। নাক গলা, হাঁটা চলা, প্রেশার পালস্ ইত্যাদি পরীক্ষা করার পর বললেন-প্যান্ট খোলো।

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলাম তাঁর দিকে।

কই প্যান্ট খোলো।

নামালাম প্যান্ট।

ওটাও খোলো।

ইয়া আল্লা, এযে ন্যাংটো হতে বলছে।

অগত্যা খুলতেই হলো। বন্ধ করলাম চোখ। লজ্জা তো সবার, ওনার নয়। ভদ্রলোক অন্ডকোষে এমন এক টিপ দিলেন-

ও মাগো!

সেই ভদ্রলোক কিছুদিনের মধ্যে অবসর নিয়ে চলে গেছিলেন— তবে তাঁকে নিয়ে মজার গল্প আছে একটা।

পেট খারাপ নিয়ে একজন ছাত্র গিয়েছিল তাঁর কাছে চিকিৎসার জন্যে। হোস্টেলে ঢুকে প্রথম দিকে পেট খারাপ হয়নি এমন ছাত্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমিও একজন ওই দলের। বাড়ির রান্না খেয়ে এসে হঠাৎ করে হলের বাবুর্চির ‘উমদা খানা’ পেট মহাশয় সহজে হজম করতে নারাজ। তো সেই ছেলের পেট টিপেটুপে দেখে তিনি তাকে দুরকমের ট্যাবলেট দিলেন।

দুটো ট্যাবলেট দিলেন কেন ডাক্তার সাহেব?

আপনার যেহেতু অতিরিক্ত পায়খানা হচ্ছে প্রথমটা খাবেন এখুনি। যদি দেখেন এতে পেট টাইট হয়ে গেছে— তখন দ্বিতীয়টা খাবেন-এতে আবার ঢিলা হয়ে যাবে পেট। যদি অতিরিক্ত ঢিলা হয় তখন আবার প্রথমটা খাবেন। এভাবেই ঠিক হয়ে যাবে আপনার সমস্যা।

এটা কেমন চিকিৎসা স্যার?

আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন আর এটা বোঝেন না? This is called trial and error method of treatment!

আবার একটু ছাত্র আন্দোলনে ফিরে যাই। বলেছি আগেই এখানে ছাত্র রাজনীতি ছিল না-তবে একটা বিষয়ে সবার একতা ছিল— পরীক্ষা পেছানোর ব্যাপারে। দেশে বন্যা-সাইক্লোন হলো পরীক্ষার আগে আগে! ব্যাস, একদল নেমে পড়লো সেই অজুহাতে পরীক্ষা পেছানোর জন্য। এক সময় দেখা গেল সবাই মিলে প্রসেশন করে বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য আবেদন আর পরীক্ষা পেছানোর জন্য ভিসির কাছে ধর্ণা দিলাম।

ভিসির বাসায় গিয়ে হাজির আমরা। মেইন হোস্টেলের সঙ্গেই ছিল তাঁর বাসা তখন। ভিসি ডক্টর রশিদ। এক অনন্য প্রতিভা ইঞ্জিনিয়ারকুলের। হাসি মুখে এলেন, কথা বললেন, বোঝালেন সম্ভব নয়, আমাদের নেতারা বক্তৃতা দিয়ে আবেদন নিবেদন করলেন। রশিদ স্যার হাসিমুখে বসে বসে সব শুনলেন। এ এক অসাধারণ মুহূর্ত। কোনো রকম উত্তেজনাহীন জমায়েত অথচ দাবী আদায়ের প্রত্যয় নিয়ে ঘণ্টা কয়েক মুখোমুখি ছাত্রকুল ও ভিসি।

শেষ অবধি ছাত্রদের দাবীই হয়তো মেনে নিতেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে-কিন্তু কখনো এ জন্যে কোনো রকম কোনো শাস্তি বা কিছু ছাত্রদের দেয়া হয়নি।

ইদানীংকালে কী দেখলাম? এক দলের ছাত্র নেতারা সাধারণ ছাত্র পিটিয়ে মেরে ফেললো, অথচ সেই ছাত্রকে দেখতে যেতেও ভিসি মহোদয়ের সময় লাগলো প্রায় দু’দিন। উপরের অনুমতির অপেক্ষায় ছিলেন তিনি!

EPUET, এই ছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হয়ে গেল BUET। এখন আমরা বুয়েটিয়ান হিসেবে পরিচিত। নামের সাথে সাথে কত কিছুই বদলে গেছে। পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে প্রচুর। ছাত্র বেড়েছে কয়েকগুণ। আমরা ছাত্রী দেখেছিলাম আঙ্গুলে গোনা কয়েকজন— আজ প্রায় আধাআধি ছেলে-মেয়ে। ডিপার্টমেন্ট যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সুযোগ সুবিধা, ছাত্রাবাসের সংখ্যাও অপ্রতুল নয়।

কত কথাই মনে পড়ে, সব হয়তো লেখা সম্ভব নয়। আবার যেগুলো লিখতেই হয়, সেগুলো মনে পড়ছে না। স্মৃতির উপর দোষ দিয়ে শেষ করি বুয়েট পর্ব। তবে হ্যাঁ, শেষ নাটকটির কথা বলতে হয়। সেবার Central Union-এর Entertainment Secretry হয়েছিল এক কাশ্মিরী ছাত্র, নাম মনে হয় খোরশেদ। সে যখন বার্ষিক নাটকের দায়িত্ব পেল, পড়লো অকুল পাথারে। সবাই পরামর্শ দিল— হায়াতের কাছে যাও।

এল আমার কাছে। বুদ্ধি দিলাম রবীন্দ্রনাথের নাটক কর। ও তো ঠাকুর সাহেবকে চেনে না। বললাম চেনার দরকার নেই, আমার ওপর ছেড়ে দাও। শুরু করলাম মহড়া-রবিঠাকুরের ‘শেষ রক্ষা’ IEB-মঞ্চে। আমাদের কিন্তু নিজেদের কোনো মিলনায়তন ছিল না তখন। এখন একটা হয়েছে তাও তেমন যুৎসই নয়। সেই নাটকের চন্দ্রকান্তের চরিত্রে অভিনয় আমার BUET জীবনের বিদায়ী অভিনয়।

সময় হলো Campus থেকে বিদায় নেবার। র‍্যাগ-ডে তে হুড়োহুড়িতে পা ভাঙলো। ভাঙ্গা পায়ে হকি স্টিক নিয়ে দিলাম পরীক্ষা। সে সময় দাড়ি টাড়ি রেখে বেশ একটা চেহারা হয়েছিল আমার।

তারপর আর কী বিদায় EPUET. সেই প্রাইমারি স্কুলে স্যারদের যেমন স্নেহ আর আদর পেয়েছিলাম, আমার ধারণা এখানেও শুধু আমার অভিনয়ের কারণে প্রত্যেক স্যার-এর বিশেষ দৃষ্টি, আর স্নেহ পেয়েছি আমি। স্যারদের হাজার সালাম।

১৯৬৭তে বেরিয়ে এলাম প্রিয়প্রাঙ্গন ছেড়ে। ভুলিনি আজও তার সৌন্দর্য, ফেলে আসা রঙিন দিনগুলো। পরবর্তীতে একটি কাজ আমি করতে পেরেছিলাম— শেরেবাংলা হলের এলামনাই এ্যাসোসিয়েশনটার প্রতিষ্ঠা। এই কাজে আমার সাথে অন্যান্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে, প্রকৌশলী আকরামুল হক। আমরা শেরেবাংলা হলের রজতজয়ন্তী প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী দিয়ে জানান দিলাম যে, হলের পুরোনো ছাত্রদের এ্যাসোসিয়েশন— পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরপর কয়েকটি পুনর্মিলনী করায় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি পড়ে— তারপর যখন হলো ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে Grand পুনর্মিলনী। তখন কর্তৃপক্ষ অন্যান্য সমস্ত হলকে নির্দেশ দিল— তারা যেন নিজেরা তাঁদের হলের এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন তৈরি করে। আজ সব হলের পুরোনো ছাত্রদের এ্যাসোসিয়েশন তৈরি হয়ে গেছে। আমি এখনও হলের সঙ্গেই আছি পুরোরো ছাত্র পরিষদের অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে। যাই প্রায়ই, তখনই যেন ফিরে পাই সেই সোনালী দিন! সোনালী সময়কে।

সকল অধ্যায়

১. ১. দিনগুলি মোর সোনার খাচায় রইল না
২. ২. তেলের শিশি ভাঙলো বলে খুকুর পরে রাগ করো
৩. ৩. জীবন যখন শুকায়ে যায়
৪. ৪. মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি
৫. ৫. আসা-যাওয়ার পথ চলেছে
৬. ৬. শৈশব হারিয়ে গেছে সময়ের স্রোতে
৭. ৭. নদী বহে যায় নূতন নূতন বাঁকে
৮. ৮. আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো
৯. ৯. রেলগাড়ি ঝমাঝম, পা পিছলে আলুর দম
১০. ১০. পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে হারে
১১. ১১. দিগবলয়ে নব শশী লেখা
১২. ১২. ছেলে আমার মস্ত মানুষ মস্ত অফিসার
১৩. ১৩. নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়
১৪. ১৪. দূর কোন পরবাসে তুমি চলে যাইবারে
১৫. ১৫. এলেম নতুন দেশে
১৬. ১৬. নীড়ে ফেরা পাখি
১৭. ১৭. মিলিটারি ॥ আপকা নাম কিয়া?
১৮. ১৮. চল চল চল ভাই আজি শুভদিনে পিতার ভবনে
১৯. ১৯. মাগো মা ওগো মা আমারে বানাইলা তুমি দিওয়ানা
২০. ২০. আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ দহন লাগে
২১. ২১. একজন অভিনেতা হবে ভাল এবং সৎ মানুষ
২২. ২২. মার্কনীর বেতার তরঙ্গে আমি
২৩. ২৩. আমি সিনেমা নির্মাণ করি গল্প বলার জন্য-সত্যজিৎ রায়
২৪. ২৪. বোকার বাক্স
২৫. ২৫. বিজ্ঞাপন একটি সৃজনশীল শিল্পকলা
২৬. ২৬. আমি কি লেখক?
২৭. ২৭. পুরস্কার
২৮. ২৮. মাঠে প্রান্তরে
২৯. ২৯. আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ
৩০. ৩০. ছানাপোনার কাহিনি
৩১. ৩১. সারমেয় সমাচার
৩২. ৩২. পায়ের তলায় সর্ষে
৩৩. ৩৩. কোন আলো লাগলো চোখে
৩৪. ৩৪. সুন্দরের কোন মন্ত্রে মেঘে মায়া ঢালে
৩৫. ৩৫. তামাম শোধ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন