জীবন কাহিনি ‘রবিপথ’ পরিক্রমায় বহুবার পথহারা পথিক হযেছি, আমি, তারপরও লিখে চলেছি। জানি প্রথমদিকে যেমন একটু ধরে ধরে যতটুকু সম্ভব পাঠযোগ্য করে লিখছিলাম, পরবর্তীতে আর সেটা ধরে রাখতে পারিনি। ঘটনাক্রমের যে ক্রমপর্যায় তাও বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। সবই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সেই কবে ছ’সাত বছর পূর্বে শুরু করে আজ (সেপ্টেম্বর ২০২৩) অবধি লিখে শেষ করা সম্ভব হলো না। এত পাতা হাবিজাবি আঁকিবুকি করেও সব কথা যেন বলা হচ্ছে না, তাই বিরক্তই হচ্ছি নিজের ওপর।
বেশ একটা দীর্ঘ বিরতির পর আজ বসেছিলাম খাতা কলম নিয়ে। কী দিয়ে আরম্ভটা করা যায় ভাবতে গিয়ে হঠাৎই মনে পড়ে গেল বিহারীদের কথা। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পর্যন্ত বেশ কিছু বিহারীর সংস্পর্শে এসেছি। পাকিস্তান আমলে তারা তো বসবাস করতো আমাদের সাথেই। আর পাকিস্তানি শাসকশ্রেণিকে তারা মনে করতো, তাদের বাপ ভাই। সে কারণেই পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধে বা তার পূর্বে সাংস্কৃতিক আন্দোলন বা বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলন ইত্যাদিকে তারা দেশদ্রোহিতা ভাবতো এবং এটা নিয়ে বাঙালিদের প্রতি তাদের একরকম ক্রোধ কাজ করতো। খুব কম বিহারীই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে মেনে নিতে পেরেছে। এর প্রধান কারণ, ওই যে তারা এবং শাসকরা একই ভাষাভাষি নাগরিক ছিল।
সাতচল্লিশ সনে দেশ ভাগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবাংলার অনেক বাঙালি মুসলমান পরিবার পূর্ব পাকিস্তানে হিযরত করেন। কিন্তু তাঁদের চেয়ে সংখ্যায় অধিক সংখ্যক পরিবার আসেন বিহার থেকে। প্রধানত এঁরা হচ্ছেন বিহারী, এবং তাঁদের ভাষা হচ্ছে উর্দু। এই উর্দুভাষী বিহারী ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের উর্দুভাষী আরো অনেক পরিবারও এখানে চলে আসেন এবং এঁদের ভাষার কারণে বাঙ্গালীরা তাঁদের বিহারী বলেই চিহ্নিত করে ফেলেন।
পূর্ব পাকিস্তানে আমরা বাঙালি আর বিহারী, এই দুই সম্প্রদায় বসবাস করতাম পাশাপাশি। আগেই বলেছি আমদের পরিবার মুর্শিদাবাদ থেকে এসে চট্টগ্রামের টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে বসবাস করে। এবং আমরা যে পাড়ার বাসিন্দা ছিলাম, সেখানে একটি মাত্র পরিবার ছিল-বিহারী। ভদ্রলোকের নাম সিদ্দিকী। পুরোনাম জানতাম না, আজও জানি না। সম্ভবত চার পাঁচটি মেয়ে ছিল— নান্নি, মুন্নি, টুন্নি ইত্যাদি। এবং পুত্রধন একটি শাহাজাদা-জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী। আমার বয়েসী। ডাক নাম নান্না। সেই ছিল আমার সেই বয়সের একমাত্র বিহারী বন্ধু। প্রথমদিকে যে আমাদের সাথে উর্দুতে কথা বলতো বিধায় আমরাও মোটামুটি উর্দু বোলচালে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। আবার, আর একটু বয়েসকালে, এই ধরেন যখন হাইস্কুলে পড়ি, নান্না চোস্ত বাংলায় কথা বলতো আমাদের সাথে। আরও বড় বয়সে তো মোটামুটি বেশ ভালোভাবে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাও রপ্ত করে ফেলেছিল সে।
আমাদের মধ্যে বেশ এক ধরনের মিশ্রণ চালু হয়ে গিয়েছিল তখন। বিহারী পরিবারের আদব কায়দা, কথা বলার ধরন, পোশাক-আশাক, সম্বোধন করার কায়দা এসব আমরা শিখে ফেলেছিলাম।
যেমন ধরেন নান্নার আব্বার সঙ্গে যদি দেখা হয়ে যেত পথে-অমনি তিনি সালাম দিতেন, আমি দেয়ার আগেই।
স্লামালেকুম বেটা, তবিয়ত ক্যায়সা হায়?
ওয়ালাইকুম সালাম চাচাজান।
তুমহারা আব্বাজান ক্যায়সা হ্যায়?
মানে, এটা ছিল সাধারণ কথাবার্তা। কিন্তু কোথায় যেন ভীষণ একটা স্নেহ-আর আদর মেশানো সুর থাকতো তাঁর কথায়। আমাদের পাড়ায়, আমরা প্রায় সবাই, জামালউদ্দীন মিন্টু ছাড়া পড়তাম বাংলা মিডিয়াম স্কুলে – (দু’একজন ছাড়া), আর নান্না পড়তো সেন্টপ্লাসিড স্কুলে। সেখানে ট্যাশ ফিরিঙ্গি (বাঙালি খ্রীষ্টান) দের কাছ থেকে বেশ ইংরেজি কায়দা-কানুন রপ্ত করে, আমাদের ওপর ঝাড়তো নান্না। তার থেকে আবার আমরাও কিছু সংগ্রহশালায় জমা করতাম। বিশেষ করে ইংরেজি কিছু কথাবার্তা, ইংরেজি শব্দ, পোশাক ইত্যাদি। আর একটা ব্যাপারে আমাদের খুব পছন্দ ছিল নান্নাকে— সেটা হলো ‘ক্রিকেট’। আমার সেই ছোট্টবেলা থেকে পাকিস্তানের সব ক্রিকেটারদের নাম জানতাম, নিয়মিত খেলতাম ক্রিকেট, সেই বয়সেই— চায়ের দোকানে গিয়ে রেডিওর ধারাবর্ণনা শুনতাম।
নান্নার বুদ্ধিশুদ্ধি ছিল দারুণ। সকল ব্যাপারেই সে নিজেকে এক্সপার্ট মনে করতো এবং জাহির করার চেষ্টা করতো সেটা। একটা উদাহরণ দিই, সিদ্দিকী চাচার বাড়িতে বেশ কঠিন নিয়ম ছিল, সবাইকে রোজা রাখতে হবে। ছোট বড় সবাই। নান্নার ছোট ছোট বোনগুলোকেও দেখতাম শুকনো মুখে পাড়ায় ঘুরে বেড়াতে। দুষ্টু বুদ্ধির নান্নাও রোজা রাখতো এবং প্রায় দুপুর বেলায় লুকিয়ে হোটেলে খেয়ে নিতো। কারণ বাড়িতে দিনের বেলা চুলো বন্ধ থাকতো তাদের। বাইরে খেতো, কিন্তু চেহারাটা এমন করে রাখতো যেন ক্ষিধেয় তার জানটা বেরিয়ে যাচ্ছে। বড় হয়েও এ দুষ্টুবুদ্ধি ছাড়তে পারেনি সে।
খেলাধুলায়ও দুষ্টুমি কম ছিল না কোনোভাবেই। ক্রিকেটে ও যদি আগে ব্যাটিং করতো, তাহলে দু’এক ওভার বোলিং করেই ‘আ রাহা আব্বাজান—’
বলেই দিতো বাড়ির দিকে দৌড়।
স্কুলের মাঠ ছিল, ঠিক ওদের বাসার সামনেই।
এ ধরনের আরও নানান রকমের দুষ্টুমির শিরোমনি ছিল নান্না।
আমি চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে আসার পর দু-একবার টেলিফোনে কথাবার্তা ছাড়া দেখা হয়নি কখনো।
শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশ মাস্তানী করেছে রেল কলোনিতে। পরে চলে যায় করাচি। নান্নাপর্ব এখানেই শেষ, তবে বিহারীদের সাথ ছাড়া হয়নি আমাদের। আমি যখন কলেজে পড়ি, আমাদের পাশের বাসার ফজলু চাচা অবসর নিয়ে চলে যাওয়ায় সেই বাসায় এলেন এক বিহারী পরিবার। ভদ্রলোক অত্যন্ত বিনয়ী, মিষ্টি কথায় মন ভরিয়ে দেয়ার মত মানুষ। বেশ ভাল লাগতো তাঁকে, তাঁর বাংলা বলার জন্য। চমৎকার বাংলা বলতেন। আমি তো নিয়মিত বাগান করতাম, চাচাও (নামটা মনে নেই) বাগানের চর্চার সময় দিতেন বেশ। ঘর থেকে বেরোলেই প্রায়ই শুনতাম তাঁর কণ্ঠ-
কি রবি, কেমন আছ বাবা?
সেই সময়টা আমার মেজোখালার মেজো ছেলে কামরেজ চুয়াডাঙ্গা থেকে এল আমাদের বাসায়। আব্বা তার একটা চাকরির বন্দোবস্ত করে দিলেন স্টেট ব্যাংকে। আমারই বয়স তার। তার সাথে তো বিহারী চাচার দারুণ ভাব হয়ে গেল। কামাই (আমার ভাই-এর ডাক নাম) বলতে তিনি ছিলেন অজ্ঞান।
এর মধ্যে আমি চলে এলাম ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। এবং ছুটিতে বাড়িতে গেলেই দেখতাম— দুই চাচা ভাতিজার ভাব। তো চাচার ছিল দুইটি কন্যা-আক্তারী আর আনোয়ারী। আমাদের দুটি বাড়ির মাঝে বেশ খানিকটা ফাঁকা যায়গা থাকলেও দু’বাড়ির বৈঠকখানার জানালা ছিল মুখোমুখি।
আর এতেই ঘটেছিল ঘটনা যা অন্যত্র বর্ণনা করেছি।
একটা মজার ঘটনা বলি। ক্লাস সেভেনে ওঠার পর স্কুলে আমাদের আর একটি বিষয় নিতে হতো, হয় উর্দু না হয় আরবি। আরবি তো কিছুই বুঝি না, নিয়ে নিলাম উর্দু-সাহস করে-ধারণা ছিল উর্দু তো হরহামেশাই বলা হয়— এটা হবে সহজ।
পড়তে গিয়ে বুঝলাম কতটা সহজ। প্রথম পরীক্ষাতেই একশো’তে পেলাম আট। এবার কোন দিকে যাই। একটা তো পড়তেই হবে। এক বড় ভাই বুদ্ধি দিল—
শোনো, পরীক্ষায় যখন মোজাক্কার (পুংলিঙ্গ) আর মোয়ান্নাস (স্ত্রী লিঙ্গ) নির্ণয় করতে দেবে না পারলে সব শব্দগুলো এক ঘরে লিখে দেবে-হয় মোজাক্কার না হয় মোয়ান্নাস-অর্ধেকতো শুদ্ধ হবে।
ট্রান্সস্পেসনের ব্যাপারেও বুদ্ধি দিলেন-
প্রথম লাইন পড়লেই বুঝবে কোন প্যারা এসেছে, ব্যাস মুখস্ত লিখে দেবে অনুবাদ। বাংলাটা মুখস্ত করে রেখ।
যাই হোক এভাবেই উর্দুর খেয়া পেরুনো গেছে তখন। আসলে এ বিষয়গুলোতে স্যাররাও গুরুত্ব দিতেন না তেমন, আমরাও সুযোগ বুঝে দিতাম ফাঁকি।
চট্টগ্রামে পাহাড়তলীতে রেলের একটা এলাকা আছে-পাঞ্জাবি লাইন। এলাকাটা কেন পাঞ্জাবি লাইন এর কারণ জানি না তবে এখানে পাঞ্জাব থেকে আসা মানুষ না থাকলেও সেই বিহারীদের ছিল আধিক্য। আর এদের সাথে বাঙালিদের খটাখটি লেগেই থাকতো। একাত্তরে প্রচুর বাঙালি নিধন হয়েছে এ এলাকায়। রেলওয়েতে বিহারীদের আধিপত্য ছিল প্রচুর— যেমন পাহাড়তলী, তেমনি সৈয়দপুর আর পার্বতীপুরেও।
কোথায় না ছিল আধিপত্য। সরকারি অফিস আদালত, মিল ফ্যাক্টরী, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি-যেখানেই বিহারী ছিল তারা নিজেদের মনে করতো রাজার জাত, বাঙালিরা প্রজা। ব্যাপারটাও ছিল তেমনি। সরকার চালাতো পশ্চিম পাকিস্তানিরা এক হাজার মাইল দূর থেকে, আর তার জাতভাইরা মস্তানী করতো পূর্ব পাকিস্তানে।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ও দেখেছি— খেলার মাঠে বিশেষ করে ক্রিকেটে বিহারীদের আধিপত্য। আমার একটু নেশা ছিল ওই খেলার প্রতি বিধায় প্রায়ই মাঠে যেতাম ক্রিকেট খেলতে— দলে নিতেই চাইতো না আমাদের-যেন ক্রিকেট ওদেরই খেলা। জানেন তো জাতীয় দলে ওরা বাঙালি নেয়নি কখনো। নিলেও অতিরিক্ত খেলোয়াড়, মাঠে পানি আর তোয়ালে টানার জন্য নিত।
বাঙালি বিহারী ঠুকঠাক দাঙ্গাও লাগতো মাঝে মধ্যে। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, ফৌজদারহাট, কুমিরা এইসব এলাকায় অনেক মিল কারখানা ছিল, সেখানে ছোটখাট দাঙ্গা লেগেই থাকতো। আর সব চেয়ে বড় দাঙ্গা হয়েছিল ১৯৬৯-এর শেষে মোহাম্মদপুর মিরাপুর এলাকায়। আমি বাস করতাম তখন মোহাম্মদপুরে। সব ফেলে টেলে পালাতে হয়েছিল— বাসা ছেড়ে। তবে এটা বলতেই হবে ওই বাড়ির মালিক আমার পুরো পরিবারকে পার করে দিয়েছিলেন মোহাম্মদপুর থেকে নিরাপদে। আর আমার ওপরতলার ভাড়াটে পরিবার পাহারা দিয়ে রক্ষা করেছিলেন আমাদের সহায়সম্পদ।
এক দিকে স্বাধিকার আন্দোলন অন্যদিকে মোহাজির বিহারীদের মনোভাব, বাঙালিদের গর্জে উঠতে উত্তেজিত করে তুলেছিল-যার বহিঃপ্রকাশ ১৯৭১-এ ঘটে।
মরণপন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি মুক্তির আশায়।
আগেই বলেছি— মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া হয়নি অসুস্থতার কারণে— বেশ কিছুদিন অসুস্থ অবস্থায় গ্রামে থেকে শহরে এসে চাকরিতে যোগ দিতে হয়। তখন দেখেছি— পরিচিত বন্ধুস্থানীয় বিহারীদের দাপট। ওয়াসাতে চাকরীরত বিহারী ড্রাইভার থেকে শুরু করে জুনিয়র প্রকৌশলী অবধি সবাই ওয়াসার হর্তাকর্তা হয়ে গেছেন তখন, ফোন, গাড়ি, বাসা সব তাদের দখলে। বাঙালিদের কিছু বলার সাহস ছিল না-তাহলে এক রাত্রেই গুম হয়ে যাবে, তাদের ইশারায়।
আমাদের এক সহকর্মী প্রকৌশলীকে দেখেছি— কেমন ব্যঙ্গ করে কথাবার্তা বলতো আমাদের সাথে। প্রায় প্রতিদিন সকালে অফিসে এসেই বলতো-
কী হে তোমাদের আকাশবাণী আজ কী বললো?
সে বাংলায় ম্যাট্রিক পাশ। রবীন্দ্রনাথের কবিতাও আওড়াতো সব সময়।
আরও নানান ভাবে আমাদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করতো সে। আমরা পারতপক্ষে তাকে এড়িয়ে চলতাম তখন। শেষ পর্যন্ত কী হলো?
বাঙালি বন্ধুরাই তাকে অতি যত্নে রাতের বেলায় বিমান বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিল— করাচি পালাতে। সে কি তা মনে রেখেছে? আল্লাই বলতে পারেন শুধু।
লিবিয়ায় চাকরি করতে গেলাম ১৯৭৮ সনে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সাত বছর পর। সেখানে প্রচুর পাকিস্তানী তখন। বাঙ্গালীও অসংখ্য। আমি ছিলাম এক সেচ প্রকল্পে। আমার সাথে প্রায় দুইশ বাঙ্গালী শ্রমিক কাজ করতো ওই প্রকল্পে। আর পাকিস্তানী ড্রাইভার আর ট্রেকনিশিয়ান ছিল জনা বিশ পঁচিশেক।
ওদের সাথে আলাপ করে দেখেছি— ওদের কোনো ধারণাই নেই— ৭১-এ কী হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানে। বরং ওরা জানে শুধু এই টুকু যে, ইন্ডিয়ার সাথে যোগ সাজসে আমরা বাঙালিরা পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দু’টুকরো করেছি। ওদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে পাকিস্তানি সৈন্যরা শুধু ভারতীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।
একদিন এক ক্যাটারপিলার চালকের সাথে আমার লেগে যায় প্রবল তর্ক। এই পাকিস্তানিগুলো সব আমার নির্দেশেই কাজ করতো। তবে আমি ওদের নিয়ন্ত্রক অফিসার ছিলাম না। ওরা সরাসরি প্রকল্প পরিচালক (লিবিয়ান)-এর অধীন ছিল।
প্রবল তর্কতর্কি হলো আমাদের মধ্যে। আমরা সব বাঙালি গাদ্দার, বিশ্বাসঘাতক। দেশ ভেঙ্গেছি। এইসব বলছিল। আর আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম ঘটনা কী ঘটেছিল। সে যখন খুবই উত্তেজিত হয়ে ওঠে, বাঙালি শ্রমিকদের একটা দল এসে আমার পেছনে জড়ো হয় এবং তারাও তখন উত্তেজিত।
এরপর আমার বিরুদ্ধে সে অভিযোগ জানায় পরিচালককে। আমি নাকি প্রকল্প ক্যাম্পে রাজনীতি করি। প্রকল্প পরিচালক আমাকে খুবই ভাল জানতেন। তাই রক্ষে। আমার সাথে কথা বলার পর তাকে (নাম ছিল সাঈদ) অন্য প্রকল্পে বদলি করেন তিনি।
আমার বিশ্বাস, আজও পাকিস্তানিরা জানে না তাদের জাত ভাইরা এ দেশে একাত্তরে কী করেছে।
এই সূত্রে একটি গল্প বলি। আমি একটি টেলিভিশন নাটক লিখেছিলাম এবং নির্দেশনা দিয়েছিলাম একটি বিহারী মেয়েকে নিয়ে। সেই মূল চরিত্র গল্পের। সে জেনেভা ক্যাম্পে জন্মেছে, সেখানেই বড় হয়েছে— বাংলা স্কুলে পড়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কর্পোরেট কোম্পানিতে চাকরি করে। যাই হোক সেই নাটকটি রেডিওতেও করতে চাইলাম। নাটক পড়ে সবাই মুগ্ধ, শিল্পী নির্দ্ধারিত হলো, স্থির হলো রেকর্ডিং ডেট। হঠাৎ খবর এল এ নাটক করা যাবে না।
কেন করা যাবে না।
এতে বিহারী মেয়ে আছে, এ জন্যে।
কে বলল? স্টেশনের বড় কর্তা, স্ক্রিপ্ট পড়েছেন তিনি এবং তাঁর মন্তব্য কোনো বিহারী চরিত্রের নাটক হতে পারবে না বেতার বাংলাদেশে।
হলো না নাটকটি বেতারে।
পাকিস্তান আমলে শুনতাম, হিন্দু চরিত্রবিহীন নাটক করতে হবে। আর এখন বিহারী চরিত্রবিহীন।
আপাতত: বিহারী পর্বর এখানেই ইতি টানি।
.
ইতি টানতে গিয়েও পারা গেল না, মনে পড়ে গেল আর এক জরুরি ঘটনা, উর্দু নিয়েই বলা চলে। এদেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সরকারী প্রযোজনায় একটি ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে, যেটার নির্দেশক ছিলেন ভারতীয় প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক শ্যাম বেনেগাল। প্রসঙ্গটা একটু অন্যরকম, তবু বলি, এই ছবির জন্য শিল্পী মনোনয়ন হলো বেশ জমজমাটভাবে। পরিচালক এলেন তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে, তাঁকে দেখানো হলো এখানকার শিল্পীদের ছবি এবং জানানো হলো তাদের ইতিবৃত্ত। সেখান থেকে তিনি শিল্পী বেছে নেবেন সিনেমার ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর সাথে কার কতটা মিল, সেটা দেখে।
আমার কাছে একটি পত্র এল এক নির্দিষ্ট তারিখে বঙ্গবন্ধুর পিতার চরিত্রে ভিডিও অডিশন দেবার জন্য। এটা আমার কাছে একটু বিব্রতকর মনে হওয়ায় আমি প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টাকে (যিনি আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন) উত্তরে লিখলাম-অডিশনের ব্যাপারটা আমার কাছে বিব্রতকর মনে হচ্ছে— কারণ আমার অভিনয় নতুন করে দেখাবার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না—এত ভিডিও, এত সিনেমা রয়েছে আমার, উপরন্তু শ্যাম সাহেবের সাথে এত দেশি সহকারি রয়েছেন—তাঁরাই তো যথেষ্ট আমার বিষয়ে শ্যামবাবুকে জানাতে-ইত্যাদি।’ পরদিন ই-মেলে চলে এল উত্তর। বেনেগাল কয়েকজন সিনিয়র শিল্পীর সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে চান সোনারগাঁ হোটেলে। নির্ধারিত দিনে যথা সময়ে হাজির হলাম। সেখানে ছিলেন বেনেগাল দলবল নিয়ে-আর আমাদের শিল্পী কয়েকজন— সৈয়দ হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, আমি। আর কারো নাম মনে করতে পারছি না। কথা বললেন আমাদের সাথে পরিচালক। বিভিন্ন এঙ্গেলে তোলা হলো ছবি।
চরিত্রের শিল্পী ঘোষণায় আমার নাম কখনোই এলো না। পরে শুটিং শুরু হওয়ার পর একদিন হঠাৎ মুম্বাই থেকে খেলন সাহেবের (একজন সহকারি) ফোন এল আমার কাছে whatsapp-এ।
হায়াত সাহেব।
কি ব্যাপার, খেলন ভাই।
জলদি বলেন তো উর্দু-হিন্দি বলতে পারেন কিনা?
উর্দু তো বেশ পারি কারণ উর্দু পড়েছি স্কুলে, আর বিহারী বন্ধু অনেক ছিল— স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে।
একটু বলেন তো,
খেলন ভাইয়া, আপ কায়সে হ্যায়?
শোনেন, একটা ভিডিও পাঠান তো হিন্দিতে। হিন্দি জানেন তো?
হিন্দি সিনেমা দেখে যা শিখেছি, সে রকম কিছুটা তো পারবোই!
ঠিক আছে, ভিডিও টা পাঠান।
বেশ কসরৎ করে হিন্দিতে কিছু সংলাপ লিখলাম, তারপর সেগুলো voice record করে, whatsapp-এ পাঠালাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে উত্তর চলে এল।
“Excellent, congratulation”
এরপর আর কি। আমি জানলাম, আমাকে ‘মহাত্মা গান্ধীর’ চরিত্রে সিলেক্ট করা হয়েছে। আমি যেন FDCতে বেনেগালের ছায়াছবির লোকাল অফিসে দেখা করি।
গেলাম সেখানে। বেশ এলাহি ব্যাপার স্যাপার। কম্পিউটার নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন, কেউ ফোনে বোম্বেতে কথা বলছেন, মহা ব্যস্ত সকলে। আমাকে সাদরে গ্রহণ করলেন তাঁরা, কিছুক্ষণ পরে একজন এসে বললেন, আমাকে পোশাকের মাপ দিতে বলা হয়েছে।
গান্ধির পোশাক কী? তিনি তো সাদা ধুতি না হয় লুঙ্গি পরতেন,আমি জানতে চাই।
দাঁড়ান জেনে আসি।
তিনি জানতে গেলেন। এসে বললেন-
আপনি শুধু খড়মের মাপ দিয়ে যান। গুলটিওয়ালা খড়ম।
নম্বর বললে হবে না?
নম্বর লিখে রাখলাম। কাগজে মাপটাও দিয়ে যান।
দিলাম মাপ।
তারপর বেশ কিছুদিন চলে গেল কোনো খবর নেই। হঠাৎ এক সকালে ফোন এল খেলন ভাইয়ের।
হায়াত ভাই চলে আসেন।
কোথায়?
শুটিং-এ।
হঠাৎ জানি না কিছু না, কি শুটিং করবো?
চলে আসেন, কিচ্ছু লাগবে না।
এভাবে তো শুটিং করা সম্ভব না। স্ক্রীপ্টটা তো দেবেন,
আচ্ছা দেখছি।
এখনো দেখছেন তাঁরা। সিনেমা রিলিজ হলো। দর্শক দেখলো, আমিও দেখলাম।
ওঁরা এখনো দেখছেন,
বিহারী পর্বে এ লেখাটা বেমানান হলো বোধহয়, তবুও ঘটনাটা তো জানানো হলো। আর বিহারী বন্ধুর কল্যাণে উর্দু-হিন্দী মিশ্রনে একধরণের ভাষার কল্যাণে মহাত্মার চরিত্রটা তো পেয়েছিলাম। সেটাই বা কম কী! শেখা হলো।
দুঃখিত এখানেও শেষ করতে পারছি না এ পর্ব। আমার জীবনের আরও দুটো উল্লেখযোগ্য ঘটনা এখানে বয়ান করা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী শাসককুল পূর্ব পাকিস্তানী প্রচুর সৈন্য সামন্ত, পুলিশ, হাফ পুলিশ ইত্যকার বাহিনী আমদানী করেছিল বাঙালী নিধনকল্পে। এরা সবাই যে উর্দু বলতো তা নয়। তবে আমাদের কাছে সবাই ছিল বিহারী আর ওদের মুখের বোল ছিল ‘উর্দু’।
ওই যে এই পরিচ্ছেদের শীর্ষলাইনে লিখেছি বিনোদ বিহারীর কথা— সেই ব্যাপারটা হচ্ছে এই রকম—
পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে লোক ধরে নিয়ে এসে এখানে রাস্তাঘাটে পাহারায় নামিয়েছিল সরকার। বলে দিয়েছিল উর্দুভাষী বিহারী ছাড়া সবই বাঙলায় কথা বলে যারা-সব হচ্ছে হিন্দু– এরা পাকিস্তানের শত্রু। দেশ ভাঙতে চায়। এদের খবর রাখবে ভাল করে। পোষাক ছিল এদের ভিন্ন, সবাই বলতো মিলিশিয়া।
তো এক মিলিশিয়া রাত্রে রাস্তায় পাহারা দেবার সময় দু’জনকে ধরেছে— জিজ্ঞেসাবাদ করছে-প্রথমজনকে নাম জিজ্ঞাসা করতে সে বলে ফেলে তার নাম ‘প্রতাব মণ্ডল’।
তোম্ ইধার যাও।
বেচারা কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে একপাশে দঁড়ালো।
এবার দ্বিতীয় জনের পালা এলে সে উত্তর দিল-
আমি বিনোদ বিহারী।
আচ্ছা তো তুম বিহারী হায়। যাও যাও, ঘর যাও।
তো এই এক বিহারী মিলিশিয়া হাবিলদার হঠাৎ দুজন রাজাকার ছোকরা নিয়ে আমার মালিবাগের বাসায় হাজির। সেটা বোধকরি ৭১ এর আগস্ট মাসের দিকে হবে। সন্ধে বেলা কড়া নাড়া, মনে একটু ভয়ই পেলাম। দ্বিতীয়বার কড়া নাড়া শুনে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখি হাবিলদার সাহেব হাসিমুখে দাঁড়িয়ে, পেছনে দুই রাইফেলধারী রাজাকার।
সালামালেকুম্
সেই বললো।
ওয়ালাইকুম সালাম।
আন্দার আ সেকতা?
কথাটা বলেই উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে সোজা ঢুকে পড়লো ঘরে। চামচা দুটো অবশ্য ঢুকলো না— ওরা দরজার বাইরে পাহারায় রইল।
ভেতরে এসে তার চোখ দুটো ঘুরতে লাগলো ঘরের ভেতরের সব কিছুর ওপর।
কেয়া নাম হায় আপকা?
আবুল হায়াত
কেয়া করতে হেঁ?
পানি কা ইঞ্জিনিয়ার হুঁ
তব তো শরীফ আদমি হোঙ্গে। ইঁয়া কোই মুক্তি উক্তি আতা হায়?
বলেই ঘরের ভেতরের দিকে রওয়ানা দিল।
ভেতরের ঘরে শিরী, আম্মা, মমতাজ, পুতুল, সব বিপদ গুণছে তখন। প্রথমেই সামনে পড়লো শিরী,
ইয়ে কোন হায়?
মেরে বিবি।
হুঁ।
বলে ভাল করে দেখে নিল একবার ওকে।
আম্মা খাটে বসে, মমতাজ, পুতুল ভয়ে কাঁপছে পাশে দাঁড়িয়ে।
মেরে আম্মা।
আম্মাকে দেখিয়ে বললাম। সালাম মাজী।
ইয়ে দোনো?
বহেন-ইয়ে মমতাজ বেগম, আর ইয়ে ছোটা বহেন শাহীন আক্তার।
ওর পুতুল নামটা বললাম না ব্যাটাকে ভয়ে।
আপ কেয়া করতে হেঁ?
মমতাজকে জিজ্ঞেস করলো।
মমতাজ তখন কলেজে পড়ে, ভয়ে বললো-
নাইনে পড়ি
আচ্ছা, আওর আপ?
পুতুল তার আসল ক্লাসই বললো-ক্লাস টেন,
ইয়ে কায়সা হুয়া! ছোটা বহেন টেন মে পড়তা আওর বড়া বহেন নাইন মে।
আমরা কেউ কোনো জবাব দেয়ার আগেই ব্যাটার চোখ পড়লো টেবিলে রাখা একটা বইয়ের ওপর তাসের প্যাকেট।
আমাদের সময় কাটাবার একটা বস্তু।
হাত দিয়ে বেশ কায়দা করে নাড়াচাড়া করে আমাকে জিজ্ঞেস করলো-
ইয়ে কেয়া?
ইয়ে মানে, তাস হায়।
কোন খেলতা?
হামলোগ ঘরকে সব মিলকে, ব্যাস।
হুঁ।
এবার নজর গেল বইটার দিকে, বাংলায় বড় বড় করে লেখা নামাজ শিক্ষা, একটা চাঁদ
আর গম্বুজের ছবিসহ।
ইয়ে কিয়া কিতাব হায়?
নামাজ শিক্ষার বই।
মমতাজই বলেছিল বোধকরি
তোমলোগ কিয়া মুসলমান হায়? নামাজকা ওপর তাস রাখতে হো?
উত্তর নেই আমার।
ভুল হো গেয়া।
কে উত্তরটা দিয়েছিল বলতে পারবো না এখন।
তার ঘোরা ফেরা শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। নজর পড়ে গেছে রবীন্দ্রনাথের ছবির ওপর। দেয়ালে ঝোলানো ফ্রেম-এ বাঁধানো।
ইয়ে কিসকা তসবীর?
কি বলবো ভাবছি। রবীন্দ্রনাথ তো বলা যাবে না,
মেরা দাদাজি।
কী করে যেন বেরিয়ে গেল মুখ থেকে।
বহুত শরীফ লাগতা। উনকা নাম কেয়া?
খোন্দকার জয়নুল আবেদীন।
দাদাজানের নামটাই বললাম।
হুঁ।
এবার ঢুকে পড়েছে আমার বেডরুমে। সেখানে প্রথমেই চোখে পড়লো শিরীর একটা
পোর্ট্রেট।
পেন্সিল স্ক্রেচ।
ব্যাস ওটাই ধরে বসলো।
ইয়ে কিসকি তাসবীর?
মেরা বিবিকা।
কিসনে বানায়?
মেরা এক দোস্ত।
বহুৎ গলৎ বানায়া।
মতামত দিয়ে দিলো।
এ ঘরে আর কিছু তো দেখার নেই। আমার ড্রইং রুমের দিকে দিলো হাঁটা।
থোড়া চায়ে তো পিলায়েঙ্গে।
এই মেরেছে, ব্যাটা তো ছেঁচড়া আছে। মাথায় কি প্ল্যান নিয়ে এসেছে কে জানে।
সোফায় বসলো আরাম করে। চামচা দুটো তখনো বারান্দায় পাহারায়।
জি জরুর।
শিরী পাশেই ছিল, ওকে চা বানাতে বললাম। বসলাম আমি তার থেকে একটু দুরত্বে।
সে শুরু কররো খাজুরে আলাপ।
আপ লোগ তো শরীফ লাগতে হেঁ।
জি, জি।
আওর কোই তো নেহী রাহতে হেঁ ইয়া?
জি নেহী।
আরও দুচারটে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলো-
আপকা পাস বন্দুক হ্যা?
চন করে আমার মাথাটা ঘুরে উঠলো, এই মরেছে, আমার কাছে তো বন্দুক আছে, আব্বার বন্দুকটা। ভুলেই দিয়েছিলাম ওটার কথা, সেই মার্চের কালরাত্রির পর সরকার নির্দেশ দিয়েছিল সবার অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য। আমি অসুস্থ থাকায় এবং তিন চারমাস গ্রামে থাকায় সেটা করা হয়নি। তারপর সেটার কথা কখনো মনেও আসেনি আমাদের কারও। এর মধ্যে শিরী চা নিয়ে এসেছে। চোখাচোখি হলো আমাদের।
হাঁ, হায়।
আমতা আমতা করে বললাম আমি।
লেসেন্স তো হায় জরুর?
জি জি। হায়।
দেখাইয়ে গা?
বলেই আরামসে চা-কাপে চুমুক দিল লম্বা একটা।
আমি দৌড়ালাম বন্দুক আনতে। শিরীও এল পিছে পিছে।
বিছানার তলা থেকে বের করলাম বন্দুকটা। অব্যবহার আর অযত্নে ওতে জং ধরেছে কিছু কিছু যায়গায়। একটু মুছে নিলাম কাপড় দিয়ে। লাইসেন্সটা বের করলো শিরী আলমারী খুঁজে।
দিলাম ব্যাটার হাতে। সে বন্দুকটাকে ঘুরিয়ে টুরিয়ে দেখে— বেশ গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করলো-ইয়ে কিয়া মিট্টিকা আন্দার থা?
নেহী, নেহী। মিট্টিকা আন্দার কিউ রাহেগা। মেরে বিস্তারকা নীচে থা।
নেহী নেহী, ইয়ে লাগতা হায় মিট্টিকা আন্দার থা।
কোয়ী মুক্তি ওয়ালাকা পাস তো নেহী থা?
এবার আমার আবার কাঁপাকাপি শুরু হলো।
জি কভী নেহী। ইয়ে দেখিয়ে মেরে লেসেন্স।
এবার সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লাইসেন্সটা দেখতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ দেখে মন্তব্য তার—
ইসমে তো মেজর সাবকা দস্তখৎ নেহী হায়।
জী নেহী।
তো, ইয়ে তো মুস্কিল কা বাৎ হো গেয়া। আপ শরীফ আদমী হ্যায়— মগর আপ তো ফাঁস যায়েঙ্গে। মুঝে তো খাওফ হোতা কে আপ বহত মুষ্কিলমে ফাঁস যায়েঙ্গে।
এরপর বুঝতেই পারছেন আমাদের অবস্থা। এক্ষুণি ধরে নিয়ে যায় কিনা। আর নিয়ে গেলে তো টর্চার-তারপর অবধারিত মৃত্যু। ঘরের ভেতরে কান্নাকাটি হচ্ছে বোঝা গেল। আমি মরিয়া হয়ে বললাম-
আপ তো দেখা হামলোগ শরীফ হেঁয়। ইয়ে এক গলতি হো গেয়া— আপহি আব বাতাইয়ে মেয় কেয়া করুঙ্গা। মুঝে বাঁচা লিজিয়ে-
এবার সে আমাকে ভয় দেখালো বেশি বেশি, আবার একটা কঠিন বুদ্ধিও বাতলে দিল। হায়াত সাব, মুঝে তো বহৎ ডর লাগতা, ইয়ে বহত বড়া গলতি আপনে কিয়া, আপ যায়সে
শরীফ আদমি বহুত গহেরা গাড্ডামে গির যায়েঙ্গে।
চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে আরো বলল গলা ঝেড়ে—
এক রাস্তা হায় বাঁচনে কে লিয়ে-মেজর সাব কা দস্তখৎ লাইয়ে ইস লেসেন্সে মে। ব্যাস ঠিক হো যায়গা সব।
আস্বস্ত হবো কি, আরো ঘামতে শুরু করলাম পুরোদমে— কোনসা মেজর সাবকা দস্তখৎ? সাহস করেই বললাম।
ইয়ে তো মে নেহী জানতা। এক হপ্তা বাদমে মেয় ফির আউঙ্গা। আব চলে। সালামালেকুম। গটগট করে বেরিয়ে গেল— চামচা দুটো একবার আমার দিকে ভাল করে দেখে পিছু নিল ব্যাটা হাবিলদারের। আমিও বের হলাম একটু পর। ততক্ষণে গলির অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে— তিন শয়তানের চেলা।
বুঝতে বাকি রইল না, টাকা পয়সা খাওয়ার ধান্ধা। সে জন্যে আমাকে ঝুলিয়ে গেল মহাশূন্যে! বাসার মানুষের মনের অবস্থা তো অবর্ণনীয়। আমিও তথৈবচ। আমি মেজর কোথায় পাবো?
পেলেই বা? বাঙ্গালী মেজর কি আর কেউ দেশে আছে? বিহারী মেজরের কাছে যাবোই বা কী করে— সেকি দেখেই সই দিয়ে দেবে? নানান প্রশ্ন করে— চৌদ্দশিকে ঢুকিয়ে ছাড়বে! কী করা যায়। ভাবতে ভাবতেই দিন চলে গেল একটা। কী করি। অফিসের যে বিহারী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফি আলম-যিনি আমাকে ২৪ শে মার্চ কোমাতে থাকা অবস্থায় হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ছিলেন, তাঁর সাথে দেখা করে বললাম সব।
তিনি তাঁর অফিসিয়াল প্যাডে, আমার সমস্ত অবস্থার বর্ণনা দিয়ে একটা চিঠি দিয়ে দিলেন-If he comes again, show this letter.
চিঠিটা নিলাম, কিন্তু মন বলছে, এতে কাজ হবে না কোনো। ও ব্যাটা এই চিঠির মর্মই বুঝবে না। তার টার্গেট হচ্ছে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়া।
রাতে শিরীর সাথে এ নিয়ে আলাপ করার সময় শিরীই বলে উঠলো—
চলো জালাল চাচার কাছে যাই।
জালাল চাচা শিরীর বান্ধবী নান্নির আব্বা, আলবার্ট ডেভিডের ম্যানেজার তখন, ঢাকায় পোস্টিং। উনি ক্লাবে নিয়মিত, সেখানে আর্মির লোকজন নিশ্চয় আসা-যাওয়া করে। উনি নিশ্চয় সাহায্য করতে পারবেন।
গেলাম পারদিন চাচার কাছে।
সব শুনে উনি তো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলেন সব ভয়ভীতি।
ঘাবড়িও না বেটা। আমি এক্ষুণী কথা বলছি। লাগালেন ফোন— দু’তিনবার চেষ্টার পর পাওয়া গেল লাইন। কথাবার্তা হলো দু’জনের— পরের দিন দুপুর বেলা ক্যান্টমেন্টে যাওয়ার সময় নির্দ্ধারিত হলো আমাদের।
পরদিন সময়মত গেলাম ক্যান্টনমেন্টে। জীবনে কোনদিন মাড়াইনি আমি ওপথ বা ওই সেনাসদরে। বোধকরি বেলা দেড়টা কি দুটোয় পৌঁছলাম, এক টিন শেড অফিসের চত্ত্বরে। হায় হায়। মেজর সাহেব তো বেরিয়ে যাচ্ছেন তখন— গাড়িতে উঠতে যাবেন তখনই জালাল চাচাকে দেখে এগিয়ে এলেন আমাদের দিকে।
চাচা আবার আমাকে দেখিয়ে বললেন সব কথা,
ঘাবড়াও নেহী বেটা। সব ঠিক হো যায়গা। তুম লেসেন্স মেরে পাস ছোড়কে যাও। আগলে হপ্তা হাম জালালকা ওহা ভেজ দেঙ্গে।
হায়রে কপাল! এই সপ্তাহে তো ওই ব্যাটা হাবিলদার আমাকে নিয়ে যে কী করবে আল্লাহ তালাই জানেন শুধু। আমার লাইসেন্সটাও যদি রেখে যাই। ওহ! আর ভাবা যায় না!! আমার ভয়ের কথাটাও জানালাম মেজর সাহেবকে। উনি এবার হেসে দিলেন— একটা কাগজে নিজের নাম আর ফোন নম্বর দিয়ে বললেন-
If the comes again, just give him this phone no and tell him to ring me and dont forget to take his id no.
এরপর তাড়াহুড়া করে চলে গেলেন মেজর তাঁর কাজের উদ্দেশে।
ছ’সাতটা দিন বড় শঙ্কায় কাটলো আমাদের, ঘন্টা-মিনিট-সেকেন্ড। এক সময় চাচার হাত ঘুরে, মেজর সাহেবের স্বাক্ষরসহ সীল মারা লাইসেন্স এল আমার হাতে।
ধড়ে প্রাণ এলো আমাদের। এবার হয়তো বিপদ কাটবে।
চাচা জানালেন, মেজর বলে দিয়েছেন হাবিলদারের আইডি নম্বর নিতে যেন ভুলে না যাই আমি। অপেক্ষায় থাকলাম ব্যাটার জন্য, প্রায় দু’সপ্তাহ। দেখা নেই তাঁর আর। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় হাজির হলেন উনি। দরজা খুলতেই শুধু-
সালামালেকুম, কায়সে হেঁ আপ হায়াত সাব?
বলতে বলতে আমাকে পাশ কাটিয়ে সোজা হাজির হলো আমার বেডরুমে।
থোড়া চায়ে কা বন্দেবস্ত কিজিয়ে না।
আমার বোনদের উদ্দেশ্যে বললো। আমি ইশারায় ওদের সরে যেতে বললাম। সে আবার সব ঘর ঘুরে ড্রইং রুমে এলো।
আপকা লিয়ে মুঝে বহৎ আফসোস হুয়া হায়াত সাব। বহৎ গহরে মুসকিল মে গির যায়েঙ্গে আপ!
আমি চট করে বলি-
লেসেন্স মে তো মেজর সাবকা সীলমোহর কা সাথ দস্তখত ভি লায়া মেয় নে। দেখেঙ্গে আপ? জী দেখাইয়ে তো।
একটু হতাশ হলো মনে হয় সে।
মেজর সাবনে তো আপকা নম্বর মাঙ্গা। আওর উনকা ভি টেলিফোন নাম্বার দিয়া কে আপ উনকো ফোন করেঙ্গে। উয়ো তো মেরে চাচাকে দোস্ত হেয়।
এরপর সেকেন্ডের মধ্যে তড়াং করে লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে পড়ে হাবিলদার।
ইয়ে তো মেয় জানতা থা কে আপ শরীফ আদমি হ্যায়। আপকো মসিবৎ নেহী হো সেকতা, বলেই হেঁটে বেরুতে থাকলো,
লেসেন্সে নেহী দেখেঙ্গে?
কই জরুরৎ নেহী। আপ তো শরীফ আদমী হায়।
চায়ে নেহী পিয়েঙ্গে?
আর চায়ে। ওর তখন পেট খারাপের অবস্থা। যে দ্রুততায় দৌড়লো, চামচা দুটো ওকে ধরতে পারলো না ঠিকমতো।
ব্যাস, ওই শেষ আমার গলিতে আর মিলিটারী মিলিশিয়া কিংবা রাজাকার কেউ আসেনি, পহেলা ডিসেম্বরের আগে। পাড়ার লোকের মুখে শুনেছি, গলির গোঁড়ায় দু’জন রাজাকার নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিল-খবরদার ওই গলিতে কখনো যাবি না, ওখানে এক মেজরের ভাতিজা থাকে।
শেষ পর্যন্ত ডিসেম্বরের ১ তারিখে ঘটল আমার দ্বিতীয় ঘটনাটি। পাকিস্তান বাহিনীর তখন নাভিশ্বাস। মরণদশা। তারা বাঁচার জন্যে মরিয়া হয়ে অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়েছে-মুক্তিযোদ্ধারা ও পিছিয়ে নেই। তারাও অনেক উদ্দীপ্ত হয়ে জয়ের পথে চলেছে এগিয়ে। এমন সময় ডিসেম্বরের প্রথম দিনে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য বেরাইদ গ্রামে গিয়ে হাজির। মারধোর, আরও নানান রকম অত্যাচার করে গ্রামের মানুষকে ছত্রখান করেছে। আমার শ্বশুর আর মেজ সম্বন্ধী মাসুদুর রহমান এসে আমার বাসায় উঠেছেন মালিবাগে। মাসুদ ভাই বাবাকে রেখে বিকালে চলে গেলেন অন্য আশ্রয়ে।
সন্ধের পরপর ঘটনাটা ঘটলো। সেদিন ছিল জ্যোৎনায় ভরা আকাশ। যথারীতি ঘরবাড়ির দরজা জানালা বন্ধ করে আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত। ঠিক তখনই প্রচণ্ড শব্দে চারদিক আলোড়িত হলো। ঘরের কারেন্ট চলে গেল। বুঝলাম গলির মুখের ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমারটি উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কে কাজটি করেছে তা তো আমাদের জানাই।
ছাদের ওপর দিয়ে দৌড়ে কয়েকজনের পালাবার শব্দ পেলাম। বোঝা গেল তারাই। পরমুহূর্তে দরজায় প্রচণ্ড শব্দ।
দরওয়াজা খোলো, খোলো দরওয়াজা।
সঙ্গে সঙ্গে লাথি এবং বন্দুকের বাঁটের গুঁতোর শব্দ।
দরজা খুলতেই দেখি রাইফেল তাক করা দুই সেপাই, আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেল—
মুক্তি কাঁহা?
কাঁহা হায় মুক্তি?
ইঁয়া তো কোয়ী নেহী হায়।
কে কার কথা শোনে— নিজেরাই সব ঘর ঘুরে ঘুরে দেখলো। পেছনের দরজা খুলে হাঁস-মুরগীর দরমা খুলেটুলে একাকার করে আবার ঘরে এসে আমাকে বললো-
চলো হামারা সাথ।
ব্যাস, আম্মা আর সবাই চীৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো।
ওতো কিছু করেনি।
আমার শ্বশুর বলে উঠলেন।
একজন রেগেমেগে জিজ্ঞেস করে,
ইয়ে বুঢ়া কোন হায়?
মেরা শ্বশুরজী হ্যায়।
আমি উত্তর দিলাম।
তুম ভি চলো হামারা সাথ।
অনেক বোঝালাম তাদের, ‘উনি বুড়ো মানুষ, ওঁকে নিয়ে কী হবে?’ শুনল না আমার কথা, জোর করে নিয়ে চললো আমাদের।
ঘরের বাইরে বেরিয়েই দেখি গলিতে আমাদের আশেপাশের বাসার যত পুরুষ সবাইকেই নিয়ে যাচ্ছে।
পেছনে পুরো পরিবারের কান্না রেখে গেলাম ওদের সাথে। গলির মুখে গিয়ে হঠাৎ একজন আমার শ্বশুরকে বললো-
এই বুঢ়া তোম ঘর যাও।
বাবা, মন খারাপ করে চলে গেলেন বাসায়। যাবার সময় আমার দিকে অসহায় একটা দৃষ্টি দিয়েছিলেন, সেটা আমার এখনও মনে পড়ে মাঝে মাঝে। যেন বলছিলেন-আল্লাহ ভরসা। শুনশান, রাস্তায় শ’খানেক লোককে লাইন ধরে দাঁড় করিয়েছে, সেপাইরা কাউকে কাউকে পেটাচ্ছে— আর বলছে বোলো কিসনে কিয়া।
কাঁহা হায় মুক্তি লোক, বাতাও।
আরও কত সব কথা— গালাগালি-আমরা বাঙালিরা ভারতের দালাল-দেশের শত্রু-ইত্যাদি নানান গালাগালির সাথে মারও দিচ্ছে বেজায়।
লাইনে দাঁড় করালো আমাকে। সাথে গলির মধ্যে বসবাসরত আমার সঙ্গী কয়েকজন প্রকৌশলীও।
একজন মেজর, মাঝ বয়সী, বক্তৃতা দিচ্ছে সবার উদ্দেশ্যে— ভারত কতটা খারাপ, তারা পাকিস্তান ভাঙ্গতে চায়, তোমরা ভুল করছো। ওদের কথা শুনে— এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা-ইত্যাদি ইত্যাদি— তারপর শুরু হলো প্রশ্নোত্তর পর্ব। একে একে নাম জিজ্ঞাসা-আর কি করে— কোথায় থাকে-তার সঙ্গে সঙ্গে বাছাইও চলছে— বুঝলাম ফায়ারের ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রায় সবাইকেই এক লাইনে নিয়ে দাঁড় করাচ্ছে। বুঝলাম, আজ জীবনের শেষ দিন— এই ব্যাটা পাকিস্তানী বাহিনীর হাতেই এখানে জীবনটা দিতে হবে।
ওদিকে মারপিট, চিৎকার, কান্না, গালাগালি, সবই চলছে একাধারে।
এক সময় মেজর সাহেব আমার কাছে এলেন, প্রশ্ন করলেন-আপকা নাম?
কি যেন কী মনে হলো আমার, মায়ের নানার দেয়া সেই নামটাই বলতে ইচ্ছা হলো। বেশ কায়দা করে বললাম—
খন্দকার মোহাম্মদ শামসুল আরেফীন আবুল হায়াত গোলাম মাহবুব।
বহত উমদা নাম হায় আপকা!
সে চমৎকৃত।
কেয়া করতে হেঁ আপ?
জী মে পানি কা ইঞ্জিনিয়ার হুঁ।
পানি কা ইঞ্জিনিয়ার!!
সে আকাশ থেকে পড়লো যেন। সঙ্গে সঙ্গে যে দুই সেপাই আমাদের ধরে নিয়ে এসেছিল ওদের উদ্দেশে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ছুঁড়ে— ওদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করার হুশিয়ারী দিলো—
সালে সুয়ার কা বাচ্চা তোম লোগ কো মেয় দেখ লেঙ্গে—
তুম পানি কা ইঞ্জিনিয়ারকো পাকড়কে লায়া?
তারপর আমার দিকে ফিরে বলে-
ইঞ্জিনিয়ার সাব আপ ঘর যাইয়ে— তাশরীফ লাইয়ে-
আমি তো বিশ্বাসই করতে পারি না, ও আমাকে বাড়ি যেতে বলছে-
যাইয়ে, যাইয়ে— আপ যাইয়ে।
এ সময় আমার প্রতিবেশী আরও দু’জন ওয়াসার ইঞ্জিনিয়ারও হাত তুলে বলে উঠলেন—
হাম ভি পানি কা ইঞ্জিনিয়ার হুঁ।
এবার তো মেজর সাহেব ক্ষ্যাপা কুকুরের মত চিৎকার দিলেন—
ওই সৈন্যদের উদ্দেশ্যে-
সব পানি কা ইঞ্জিনিয়ার কো তুম লে আয়া-তুম লোগো কো মেয়— (গালাগালি চললো) আপ লোগ তশরীফ লাইয়ে জনাব।
আমরা অবিশ্বাসী ভাব নিয়ে আস্তে আস্তে গলির দিকে রওয়ানা দিলাম-তবে কি আল্লাহ তায়ালা আমাদের আজ বাঁচিয়ে দিলেন!
গলির ভেতর ঢুকেই ভৌ দৌড়! সোজা বাসায়।
আল্লার অশেষ রহমতে বেঁচে ফিরে এলাম সেদিন। পানি কা ইঞ্জিনিয়ার’-ই বোধহয় ওসিলা ছিল সেদিন আমার বাঁচার নাকি ওই বিহারীদের ‘উর্দু’ কে জানে।
দু’দিন পরই শুরু হলো যুদ্ধ। কাকভোরে প্লেনের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গলো— শুনি ভারতীয় বিমান বাহিনী রাতেই তেজগাঁও বিমানবন্দর ‘ছ্যারাব্যারা’ করে ফেলেছে। বাকি সবই ইতিহাস।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন