২৯. আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ

আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ
সুরের বাঁধনে

শিরীণ, শিরী হায়াত, শিরী, মাহফুজা খাতুন। এতগুলো নামের অধিকারিণী যিনি তিনি আমার সহধর্মিনী, আমার ৫৫ বছরের জীবন সাথী, সুখ দুঃখের সঙ্গী। প্রাণের সখী, অনপ্রেরণাদাত্রী, সাহস করে এগিয়ে চলার সারথি। অনেক বিশেষণ লিখলাম তাঁর নামে। হয়তো আরও কিছু বলা যেতো কিন্তু মনে আসছে না আর। থাক বেশি হয়ে যাচ্ছে হয়তো।

আমার পঞ্চাশতম বিবাহ বার্ষিকী অনুষ্ঠানে এক ভাগ্নে রিটু (কোভিড বিশ্বমারী তাকে নিয়ে গেল নিষ্ঠুরের মতো) হঠাৎ মাইক্রোফোন নিয়ে বলে বসলো, মামা, মামীর সাথে প্রথম দেখার গল্প আজ বলতেই হবে।

উপস্থিত অতিথিরা বেশ মজা পেলেন, এবং সবাই একবাক্যে ধুয়া তুললেন-হ্যাঁ হ্যাঁ, বলতে হবে।

কি আর করি মাইক্রোফোন নিয়ে আমি জমাটবাধা ধুলো ঝেড়ে থলের বিড়াল বের করার চেষ্টা করলাম।

ঘরনী শিরী আইনত সম্পর্কেরই মানুষ আমার (inlaw). আমার মেজো দুলাভাই মনিরুজ্জামানের সবার ছোট বোন। বাস করতো গ্রামের বাড়িতেই— ঢাকা শহরের অদূরে বেরাইদ নামক এক গ্রামে। বড় ভাই-এর বিয়েতে পরিবারের সাথে গিয়েছিল চট্টগ্রামে-তখন তার বয়স চার (৪) আর তখনই তো হয়ে গেল চার চোখের মিলনটা— আহ সে কী শিহরণ খেলে গেল আমার মনে। তখন তো আমি দশ বছরের ভরপুর যুবাপুরুষ! বোনের বিয়েতে সেজেগুঁজে ছিলাম বেশ। ও তেই সে কাৎ’ আমিও তথৈবচ।

গল্পটা সেদিন জমেছিল ভালই। তবে এটাই ছিল আমাদের প্রথম দেখা। সে তার ভাবি (আমার মেজো বোন)র কাছেই থাকতো চট্টগ্রামে। ফোরে কি ফাইভে উঠে চলে যায় খুলনায়, কারণ দুলাভাই বদলি হয়ে গিয়েছিলেন ওখানে।

আব্বা যেহেতু রেলে চাকরি করতেন, আর বোনের বাসা খুলনায় বছরে একবার অন্তত রেলে চড়ে খুলনায় যাওয়া হতোই, মাঝে ফাউ হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় মেজোখালার বাড়িতেও চুঁ মারা হতো। এই রকম যাওয়া আসার মধ্যে সময় অনেক গড়িয়ে গেছে— বুঝতেই পারিনি— আমি ঢাকায় EPUET-এ ভর্তি হলাম। ওদিকে সেও বেশ ডাঙ্গর হয়ে উঠেছে কোন্ সময়ে— যখন চোখ পড়লো— সেই চার চোখ আবার এক হলো। বলার সাহস হয় না। চারদিকে সব লোকজন— দুলাভাইয়ের কাজের মানুষই ছিল সাত আটজন, প্লাস ড্রাইভার। আত্মীয়স্বজন ও প্রায় আসা যাওয়ায় থাকেন।

কোনো এক স্বর্ণালী সন্ধ্যায় ঘটনাক্রমে একা পাওয়া গেল তারে। নানান গল্পগুজবে পেরিয়ে যায় সময়। কথাটা হয় না কওয়া, হঠাৎ দেখি সে একটা প্রশ্ন করে বসলো

আচমকা— তখনো আমাদের সম্পর্ক আপনি আর তুই।

প্রেম ট্রেম করেন নাকি?

হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?

এমনি জানতে ইচ্ছে করলো।

উঁ, না মানে–

সত্যি বলবেন কিন্তু!

না মানে একজনকে মনে মনে –

মনে মনে? বলে ফেলেন, বলেন না কেন?

সাহস হয় না।

কেন? আমি কি বাঘ নাকি?

কথাটার মানে বুঝতে সময় নিল না আমার মনে সেকেন্ডও।

সে তো উঠে দৌড়!

ব্যাস হয়ে গেল আর কি! এটা সেই ৬৬ সালের কথা। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আমি। সে বোধহয় দশম শ্রেণিতে। জমে গেল প্রেম। চিঠি লেখালেখিও শুরু হলো। অনেক বাধা পেরিয়ে চিঠি বেচারা আসতো যেতো। খুলনায় এক মাধ্যম পেলাম-আমার বড় দুলাভাই আব্দুর রাজ্জাক সাহেবকে— তখন তিনি পরিবার নিয়ে ওখানেই স্থায়ী হয়েছিলেন।

দুতিনবার চিঠি আসা যাওয়ার পর দুলাভাই সাহেব হঠাৎ করে হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গলেন। আমার মেজো বোন জানলেন, বাড়ির সবাই জানলো— এদিকে চট্টগ্রামে ফোন চলে গেল।

আমাদের চিঠি হলো বন্ধ। আমারও খুলনা যাওয়া বন্ধ। কিছু খবর আসতো আমার দুই শুভাকাঙ্ক্ষী ছোট বোন মমতাজ আর পুতুলের মাধ্যমে। ওদের মাধ্যমেই জানলাম-আমার আম্মা ভীষণ ক্ষিপ্ত— এক বাড়িতে তিনি কিছুতেই দুই বিয়ে দেবেন না। ওদিকে নাকি অবস্থা আরও গুরুতর, তার পিতা মাতা ঘরবাড়িবিহীন পাত্রের হাতে মেয়েকে দেবেন না তুলে।

চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় কোনো এক ছুটি উপলক্ষে আমাদের বাড়ির সবাই চললো খুলনা, তখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কিছুদিনের। সবাই যাবে, আমাকে কেউ নেয়ার কথা বলে না। শেষে আমিই আব্বাকে বল্লাম আব্বা আমার বন্ধু রুমমেট আনিস, নড়াইলে থাকে, ওর ওখানে যেতে বলেছিল, আমি আপনাদের সাথে যাই?

হ্যাঁ, হ্যাঁ, চলো।

আব্বা সবসময়ই এমন। ওই ব্যাপার নিয়ে আব্বা-আম্মা কেউই কিন্তু আমাকে কিছু বলেননি। কোনো পক্ষেরই কেউ না।

যশোর স্টেশনে আমি নেমে গেলাম, মনের দুঃখ মনে চেপে। একটা দেখা অন্তত হওয়া দরকার ছিল শিরীর সাথে কিন্তু কী আর করা। কি যেন এক সিনেমা হলের সামনে থেকে এক লক্কড়মার্কা বাসে চড়ে গেলাম নড়াইল, আনিসের বাড়ি।

ধাক্কাটা খেলাম জোরে শোরে। বন্ধু আমার খুলনায় গেছে বেড়াতে। আমি এখন করি কি। কবে আসবে তাও ঠিক ঠিকানা নেই। রাত কাটিয়ে পর দিন সকালেই ট্রেনে উঠলাম। ছাত্র-পাশ তো পকেটেই ছিল। না, ঢাকার ট্রেনে নয়, খুলনা ট্রেনে। আর যাবই বা কোথায়? চুয়াডাঙ্গায় যেতে পারতাম— কিন্তু মন টানছে খুলনায়-আনিসের জন্যে অবশ্যই নয়। আমাকে দেখে মনে হলো চমকে গেলেন অনেকেই। দিন দুয়েক ছিলাম-বন্ধু মঞ্জুর (শিরীর সেজ ভাই) আমার ঘনিষ্ট সঙ্গী। ওর সাথেই ঘুরে বেড়িয়েছি— ও কিন্তু একবারও জিজ্ঞেস করেনি আমাকে শিরীর কথা। সে আসলে আমার খুব প্রিয় মানুষ। তার সাথে অন্তরঙ্গতা এবং পরবর্তীকালে রোজী ভাবীর সাথে খুবই হৃদয়ের কাছের সম্পর্ক ছিল আমাদের। মঞ্জুর চলে গেছে তাও বছর দশ হলো।

দুদিনে একবার দেখা হলো তাঁর সাথে। বাড়িতে পার্টি হচ্ছিল। মেলা মানুষ। সেই ভীড়ে, অপরূপ সাজে সজ্জিত শিরী ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে— পরনে কালশাড়ি, লালপেড়ে, আহ কী অপরূপ লাগছিল ওকে, এক ফাঁকে সেই চারচোখের মিলন-দিল একটা ফোন নম্বর হাতে গুঁজে।

এখানে ফোন কোরো।

ব্যাস, ওই টুকুই। আর কোনো সুযোগই হলো না কথা বলার।

ঢাকা ফিরে ওই নম্বরে ফোন করলাম একদিন, আমাদের DSW-র অফিস ফোন থেকে, সুযোগ বুঝে। ওপারে নারী কণ্ঠ-

কে বলছেন?

ঢাকা থেকে রবি বলছি, শিরী আমাকে এই নম্বর দিয়েছিল।

এবার হাসির আওয়াজ পেলাম ওপারের।

আমি শিরীর আপা, কাজি বাড়ির আপা। ওকে তো এখন পাবেন না।— কাল ৪টার সময় ওকে ডেকে রাখবো।

ট্রাঙ্ক লাইনে ফোন, তার ওপর DSW স্যারের রুম, তাড়াতাড়ি শেষ করে ভাবতে বসলাম, কাল কোথা থেকে ফোনটা করা যায়।

ব্যবস্থা একটা হয়ে গিয়েছিল— PT sir-এর অফিসে গিয়ে। স্যার তো আমাদের মাইডিয়ার ম্যান ছিলেন— জলিল স্যার। শিগারেট নেয়া দেয়া হতো আমাদের।

এভাবেই ম্যানেজ করেই চলতো আমাদের কথাবার্তা দিনের পর দিন।

এক সময় পাশ করে বেরুলাম আমি, তিনিও তখন কলেজের ছাত্রী, বয়রা কলেজের। আমি ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী। এবার অফিসের ফোন ব্যবহার করেছি, আর আমার পাশের ইস্পাহানী বিল্ডিং-এ Water Development Board-অফিসে বসতো বন্ধু আমিনুর রহমান। তার ফোনের ওপর অত্যাচার চলতো প্রায়ই।

শিরীর আর আমার ব্যাপারটা চলমান থাকলেও দু’পক্ষের নীরবতা সত্যিই পীড়াদায়ক ছিল আমাদের জন্যে। আমরা একটু শঙ্কিতও ছিলাম-ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে সমস্যার শেষে পৌঁছুবো। আগেই বলেছি, আমি চাকরি পেলাম, তার আগেই আব্বা অবসর নিয়ে বেশ ভাল বেতনের একটা চাকরিতে ঢুকলেন— এ. কে. খান কোম্পানির Administration Officer. ওদিকে পেনশনের টাকা আসছে। আলোর মুখ দেখছি আমরা মধ্যবিত্তর সদস্যরা। সেই সময়টাতে আব্বার ক্যান্সার ধরা পড়লো। সব স্বপ্ন শেষ। প্ৰায় দুটো বছর বিছানায় পড়ে শেষ হয়ে গেলেন— আমরাও অকুল পাথারে। সবাইকে এর আগেই নিয়ে এসেছি ঢাকায়। মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে থাকি। আব্বা তখনও আছেন আমাদের সাথে।

এক দুপুরে, রোববার ছুটির দিন, খেয়েদেয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। বাইরের ঘরটায় থাকতাম আমি। ভেতরের দিকে আম্মা-আব্বা আর বোনেরা আলাদা আর একটা ঘরে। হঠাৎ গায়ে একটা খোঁচা খেলাম। ঘুম ভেঙ্গে দেখি জানালার বাইরে থেকে কে যেন একটা ছড়ি দিয়ে খোঁচাচ্ছে আমাকে।

কেরে?

বলতেই চেহারা দেখালো একটি চঞ্চলা মুখ। রাবু, শিরীর মামাতো বোন, গোপীবাগে থাকতো। ও বাড়িতে আমার অনেক যাতায়াত হয়েছে কয়েক বছরে। পরবর্তীতে তিনি আমার অতি প্রিয় প্রাণের শ্যালিকা। আল্লা তাকেও নিয়ে গেলেন খুব কম বয়সে, ক্যানসারে নিয়ে গেলেন।

সে আমায় আঙুলের ইশারায় চুপ করতে বলে ফিসফিস করে ডাকলো, বাইরে আসেন। তাড়াতাড়ি সার্ট প্যান্ট পরে বাইরে এসে আমি তো হতবাক।

শিরী দাঁড়িয়ে তার পেছনে। সঙ্গে আমার এক বোন-নাজমা (চুনি) ‘আমরা কজনা’ প্রতিষ্ঠানের সহযাত্রী। সে পরে বন্ধু ওয়ালিউল ইসলামের ঘরনী।

তাদের কথামত শিরীকে নিয়ে উঠলাম রিকশায়।

জীবনে প্রথম তার সাথে একা পথে, তাও রিকশায় ঘনিষ্ঠ হয়ে। ঘামছি আমি, সে কিন্তু সপ্রতিভ।

বুঝতে পারছি না, কি বলবো।

সেই-ই বলা শুরু করলো।

অবাক হয়েছ না?

হ্যাঁ, মানে হঠাৎ?

এভাবেই গ্যা গ্যাঁ করে চললাম কিছুক্ষণ। কিন্তু যাচ্ছি কোথায়! মোহাম্মদ পুর থেকে বেরিয়ে মীরপুর রোড ধরে এগোচ্ছি। নিউ মার্কেটের দিকে। পেছনের রিকশায় রাবু আর চুনি।

হঠাৎ মনে হলো শেরে বাংলা হলে যাই। ওখানে অন্তত বসে কথা বলা যাবে। ছুটলাম সেদিকেই। তিন তলায় থাকতো আমার এক জুনিয়ার বন্ধু টিটো। তার রুমেই হাজির হলাম। সে তো অবাক-

হায়াত ভাই তুমি হঠাৎ।

দেখ কাকে নিয়ে এসেছি।

ওকে দেখে টিটোও থতমত।

বিষয় কি?

বিষয় কিছু না। আমরা একটু আলাপসালাপ করবো। ভাবলাম এখানেই ভালো।

ওর আর একটা রুমমেটও সিটে ছিল। দুজনই বেরিয়ে গিয়ে আমাদের কথা বলার সুযোগ করে দিল।

এখানে দু’জন কী আলাপ হয়েছিল, সেটা না হয় উহ্যই থাক। টিটোই আমাদের আপ্যায়ন করলো পেটিস আর কোকাকোলা দিয়ে। রাবু আর চুনি বারান্দা থেকে ভেতরে এসে যোগ দিল সে আপ্যায়নে। এই ঘটনাটা সম্ভবত ১৯৬৯-এর জুন জুলাই-এর দিকের। এর পর তো চলে গেলেন আব্বা। আমার বড় বোনেরা এল। শোকাবহ পরিবেশে থাকলো কিছুদিন আমার বাসায়।

এরপর হঠাৎ একদিন মেজো দুলাভাই এসে হাজির। উনি তখন পাটের ব্যবসা করে প্রায় দেউলিয়া। অতবড় ব্রিটিশ কোম্পানির চাকরি ছেড়ে আফিলউদ্দিন সাহেবের পরামর্শে পাটের ব্যবসা করতে গিয়ে এ অবস্থা। অনেক ম্রিয়মাণ মনে হলো তাঁকে। কিছু সমবেদনার কথা বলে চলে গেলেন-যাবার মুহূর্তে বললেন-

তোমরা এত মন খারাপ করে আছো, চলো তোমাদের কাল বলাকা হলে সিনেমা দেখাবো। কি একটা বাংলা সিনেমা চলছিল। মমতাজ-পুতুল রাজী হচ্ছিল না, দুলাভাই জোর করে রাজী করালেন।

আমিও সঙ্গে গিয়েছিলাম ওদের। দুলা ভাই বক্সের টিকেট কিনেছিলেন নাকি D.C বোধ করি। সিনেমা হলে থাকলেন কিন্তু সিনেমা দেখলেন বলে মনে হলো না চুপচাপ বসেই সময় কাটালেন। এক সময় আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন-

Are you serious about Shiri?

আমি খুব অবাকই হলাম দুলাভাইয়ের কথায়। কোনোদিন তো শিরীকে নিয়ে তিনি কিছুই বলেননি— বাড়িতেও এসব আলাপে যোগ দেননি কোনোদিন। অন্ধকার সিনেমা হলে তিনি কথাটা বলে ভালই করেছেন নইলে দেখতেন আমি কি রকম কুঁকড়ে গেছি তখন। হ্যাঁ, দুলাভাই।

কোনো রকমে বলেছিলাম কথাটা।

Oh god, my future is bleak.

দুলাভাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন।

আমার একটু খারাপই লাগলো কথাটা শুনে।

একটু নীরবতা। আমি সিনেমায় মন দিতে গিয়েও পারছি না। মমতাজ পুতুল কিছুই শোনেনি আমাদের কথা।

একটু পর দুলাভাই বলে উঠলেন আবার—

একটা মাত্র শালা, তার বৌকে নিয়ে মজাও করতে পারবো না।

এবার তাঁর চাপা হাসিটা আমি পরিষ্কার শুনলাম— এবং বুঝলাম আমার সমস্যাটা বোধকরি সমাধান হয়ে যাবে দুলাভাইয়ের কল্যাণে।

সমস্যাটা সত্যিই এর চারমাসের মাথায় সমাধান হলো। তবে এভাবে যে তা আমাদের সবারই কল্পনার বাইরে। লিখেছি অন্যত্র, তবু একটু বলি— মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে প্রসটেট অপারেশন করতে গিয়ে মারা গেলেন দুলাভাই। আর তারই কারণে দুই পক্ষের মুরুব্বিরা বিয়েটা হুড়োহুড়ি করে দিয়ে দিলেন-সেটা ১৯৭০-এর ৪ ফেব্রুয়ারি। আকদ হলো আমাদের দুলাভাইয়ের কুলখানির পরদিন।

পরদিন ঢাকা চলে আসতে হলো চাকরিগত কারণে। কয়েক মিনিটের জন্যে নববধূকে একলা পেয়েছিলাম আমার বড় আপার বাসায় একান্তে। জানালায় দরজায় উঁকির চোটে একটা ইয়েও কোনো রকমে—বড়ই দুর্ভাগ্য।

৫ জুলাই ট্রেনে চড়ে খুলনায় হাজির হলাম আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে। ৬ তারিখে রকেট সার্ভিসে ফিরে এলাম নারায়নগঞ্জ ঘাটে। ও হ্যাঁ, ফুলশয্যাটা করেই এসেছি-খুলনার খালিশপুরে আমার প্রিয় বন্ধু ওয়ালিউলের প্রজেক্টের residence-এ। ও তখন cable কোম্পানির কাজে নিয়োজিত। প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার।

৮ জুলাই মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার বাসার পাশেই এক নতুন খালি বাড়িতে হলো বৌভাত। ব্যাস, এরপর শিরী নেমে গেল কোমার বেঁধে নতুন সংসারে। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম-যে মেয়ে ভাই ভাবির আদরের দুলাল-অমন ব্রিটিশ কোম্পানির ম্যানেজারের বাসায় যার কুটোটি কোনোদিন ভেঙ্গে খেতে হয়নি— সে নেমে গেল হেঁসেল সামলাতে, ঘর বাড়ি নতুন করে সাজাতে।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে নিল অনায়াসে। আমি নিশ্চিত হলাম, কারণ ভয় একটু ছিল— এই মধ্যবিত্ত পরিবারে সে মানিয়ে নিতে পারে কিনা। দুই বোন, আর ছোট ভাগ্নে কাজলও তার ভক্ত আগেই ছিল। এবার বেশ ন্যাওটা হয়ে গেল ওর। মমতাজ পুতুল এখনও শিরীর আদরের ননদিনী— প্রায় প্রতিদিনই ফোন চলে ওদের-কতবার আমাকে বলেছে, ভাবী না থাকলে ভাই আমাদের হয়তো চিনতেও পারতো না। কাজল সেই ক্যানাডার সাচকাটন থেকে প্রায় ফোন করে মামীর সাথে কথা বলে দীর্ঘসময়-মামাকে না হলেও তাদের অসুবিধা নেই।

তখন আম্মাও এক সময় অর্থকড়ির ভারমুক্ত হলেন শিরীর হাতে দায়িত্ব দিয়ে। কিছুদিন পর দেখা গেল মাস শেষে ৫৬৫ টাকা বেতন থেকে ৪০/৫০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, তাতে সবাই মিলে সিনেমা দেখা বা চাইনিজ খাওয়া চলছে। মমতাজ কলেজে, পুতুল স্কুলে— কাজলও স্কুলে— সব সামলিয়েও সাশ্রয়-চিন্তার বাইরে!

এরপর তো নেমে এল জাতীয় জীবনের মহা দুর্যোগ— বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন-মুক্তিযুদ্ধ। এসব কথাও লেখা হয়েছে। বিপাশা এল ২৩শে মার্চ। সেদিন তরুণ নেতারা বাংলাদেশের পাতাকা উড়ালো। তারপর তিন দিনের বাচ্চা কোলে নিয়ে পাঁচ মাইল হেঁটে গ্রামে যাওয়া, তিন চারমাস গ্রামে বাস করা। যুদ্ধশেষে সব কিছু আবার নতুন করে গুছিয়ে নেয়া— সব সবকিছুর কৃতিত্ব শিরীর।

আমি ছোটবেলা থেকেই ভীরু। আহ্লাদের সন্তান বলে সবসময় একটা মানসিক দুর্বলতা কাজ করে আমার ভেতরে। এইটা সামাল দেয়াও তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ালো, সার্থকতার সাথে প্রতি বিপর্যয়েই উদ্ধার করে আমাকে আজও।

মমতাজের বিয়ের সব ব্যবস্থা সেই করলো। আম্মা আর আমি শুধু মাথা নেড়ে, হ্যাঁ, না করলাম। সে আসলে বিজ্ঞ একজন ব্যবস্থাপক, দিনে দিনে সেটা বুঝতে পারা গেল। আমার লিবিয়ায় যাওয়ার কথাই যদি বলি-আমার টানাটানির সংসার, পুতুলের বিয়েটা ও দিয়ে দিল কি সুন্দর ম্যানেজ করে, আম্মা চলে গেলেন— হঠাৎই তার প্রস্তাব, বিদেশে চাকরি নাও না, কতজনই তো যাচ্ছে এমন।

তার কথাতেই গেলাম, তিন বছর থেকে এসে যতটুকুই হোক স্বচ্ছল হয়েছি, মানসিকভাবে সরকারি চাকরি ছাড়ার মত শক্তি অর্জন করে জীবনের ধারাই পাল্টে ফেললাম। এক সময় ব্যবসায়ও নামলাম তার সম্মতিতে। সেটা ছেড়ে আবার চাকরি। আবার সিনেমা-শেষমেষ প্যাকেজ প্রোগ্রামের পেশা, সেটা এখনও চলছে— সবকিছুতেই তার সাথে পরামর্শ করেই এগিয়েছি।

নিজের স্ত্রী সম্বন্ধে এত কিছু বলছি, সবাই ভাববে আমি বাড়িয়ে বলছি। কিন্তু বিশ্বাস করেন এতটুকু নয়। আমি অভিনয় করি সে বিয়ের আগেই জানতো-সে মেয়েদের লেখাপড়ার সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছে এবং সার্থকভাবে তাদের গড়ে তুলেছে— তাদের গান শিখিয়েছে, নাচ শিখিয়েছে। আবার দুজনকেই মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়ার মত যোগ্য করেছে এবং তাদের পছন্দের পাত্রের সাথেই বিয়ে দিয়েছে। আমার কৃতিত্ব এইটুকই যে আমি আমার এনালাইসিস দিয়ে শুধু তাকে অনুমোদন দিয়েছি— হ্যাঁ, এটা করতে পারো!

মানুষের সাথে মিশতে পারে সহজে, দান করতে বা উপহার দিতে পছন্দ করে। সামর্থের মধ্যেই এসব হয়ে যাচ্ছে। আমি অনেক সময় বুঝতেও পারি না। মাঝে মাঝে আপসোস করে— লেখাপড়াটা অনেকদুর করার সব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও শেষ করা হয়নি সে জন্যে। মিডিয়া জগতে কোনো কাজ করেনি— কিন্তু সে সকলের পরিচিত একজন মানুষ। প্ৰায় সবাই তার কাছে আপন-তারাও সহজে তাকে গ্রহণ করতে পারে সে জন্যে।

পোশাক আশাকের ব্যাপারে খুবই চুজি! অন্যের পছন্দে তার পছন্দ হয়ই না প্রায়। নিজেরটা তো বটেই, আমার বা মেয়েদের সবই তার পছন্দেই হয়। ঘর গোছানো, ঘর সাজানো, ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বা ইত্যাকার সবকিছুই তার নিজস্ব স্টাইলে চলে।

বিয়ের আগে যে রান্নাঘরে ঢোকেনি সে কিনা রান্নায়ও ওস্তাদ। মেয়েদের বোধহয় এটা সহজাত গুণ একটা। বাসায় যে সব নারী কর্মীরা কাজ করতে আসে তারা তার বড় আপন। যারা কাজ করে চলে গেছে ১০-১৫ বছর আগে— তাদের সাথে মোবাইল যোগাযোগ এখনও বিদ্যমান। আমাদের প্রধান গৃহকর্মী মুন্নি আজ প্রায় ছত্রিশ বছর এখানে কাজে রত, আর ড্রাইভার বাবুল যাকে আমার ম্যানেজারও বলা যায় সে আছে ২৬ বছর। এটা কিন্তু শিরীরই কারণে-কার বেতন কবে বাড়বে বা কত বাড়বে, তাদের কখন কিছু অতিরিক্ত সাহায্য লাগবে এ সব সিদ্ধান্ত তারই।

নাহ, স্ত্রীকে নিয়ে বেশি বলা হয়ে যাচ্ছে বোধ করি। অনেকে আমাকে স্ত্রৈন বলে— আমি বলি স্ত্রৈনর জীবন যদি এমন হয়— এর চেয়ে সুখ আর শান্তি আর কিছুতে নেই। হ্যাঁ, ভাই, আমি স্ত্ৰৈন।

এত গুণ গাইলাম, একটু অন্য দিকও বলি— কোনো কারণে যদি একটু মন কষাকষি হয়, ব্যাস, হাসি বন্ধ। কথা কম, প্রেশারও বেড়ে যায় তার। এ সময় অভিমান ভাঙ্গানোটা আমার কাজ। পদ্ধতি জানা আছে আমার-এক গোছা ফুলের তোড়া এনে সামনে ধরি-ব্যাস মিনিটে শেষে, সব ধোঁয়া। ফুল তার অতি পছন্দের বস্তু। আমার মত রবীন্দ্র সংগীতের সেও ভক্ত। প্রিয় শিল্পীর তালিকায় বহুজন— তবে দেশের মধ্যে ফাহিম হোসেন, বন্যা তো আছেই তবে মিতা হক বিশেষ প্রিয়। বেলির মৌসুমে সন্ধেয় বাড়ি আমি কখনো বেলির মালা ছাড়া ফিরি না। সেই বিয়ের পর থেকে আজ অবধি।

এবার বলি ওর এক সমস্যার কথা। পিতামাতার দেয়া নাম হলো মাহফুজা খাতুন। ডাক নাম শিরী। কেউ কেউ আদর করে ডাকতো শিরীণ। আমিও আমার লেখাটেখার মধ্যে শিরীণ নামটাই ব্যবহার করতাম। তবে কেন যেন ও মাহফুজা নামটা পছন্দ করে না-যদিও লিবিয়াতে দেখেছি ওর মাহফুজা নাম শুনে ওরা খুব পছন্দ করতো আর ইয়া মাহ্‌ফুজা বলে কি সুন্দর করে ডাকতো। মানেটা ওদের কাছ থেকে শিখেছিলাম। হেফাজ‍ থেকে মাহফুজ, মাহফুজা-মানে আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন, সেই মাহফুজ বা মাহফুজা, তারপরও নামটা সে বদলে ফেলে পরবর্তীকালে পাসপোর্টে— করে ফেলে শিরী হায়াত। ওই নামেই সে পরিচিত সব স্থানে।

ভোটার কার্ড যখন হলো তখন একটু ভেবে সিদ্ধান্ত নিল শিরী হায়াত নামেই কার্ড হবে। হলোও তাই, তবে এই কার্ডের নাম নিয়ে যে এত ঝামেলা হবে, তা আমরা ভাবিনি। সমস্যা হলো তার নামের জমি বিক্রি করতে গিয়ে— কারণ সেটা মাহফুজা খাতুন নামে রেজিস্ট্রি করা— কিন্তু এখন NID তে শিরী হায়াত। মহাঝঞ্ঝাটের ব্যাপার। আমাকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে-এটা প্রমাণ করতে যে মাহফুজা খাতুনই শিরী হায়াত। আমার একটিই স্ত্রী, এবং ইনিই তিনি।

সমস্যার একটা সমাধান হয়েছে। এরপরও একটা ঝুলছে, জানি না সেই জন্য কী করতে হবে! আমার বই গুলোতে স্বত্ব দেয়া আছে শিরীণ হায়াত নামে-এগুলোর ভবিষ্যত ভেবে আমি রীতিমত চিন্তিত। তাই এখন লিখি— শিরী হায়াত (শিরীণ)।

যতকিছুই হোক সে আমার কাছে প্রাণসখা। ৫৪ বছর যৌথ জীবন যাপিত হয়েছে, নানান সুখ, দুঃখ, আনন্দ বেদনায়। এখনও হাসিমুখে মেয়ে জামাই, নাতি নাতনি নিয়ে জীবনের আলো বাতাস উপভোগ করছি, মহান আল্লার কাছে হাজার শুকরিয়া।

আগেই বলেছি আমি বড়ই দুর্বল মনের মানুষ। অসুখ বিসুখে সহজে কাবু করে ফেলে আমাকে এই কারণে। এসব ক্ষেত্রে শিরীই আমার সাহসদাতা। কখনো তার আদরে কখনো ধমকে সোজা হই আমি।

হঠাৎই বেশ বড় ধাক্কা এলো জীবনের, সেই ১৯৭১ এ। জীবন মরণের মাঝখান থেকে ফিরে এসেছিলাম। তখনো আমার সেবাটা প্রধানত সেই করেছিল, তবে তার সাথে ছিলেন আম্মা আর আমার ছোট বোনেরা। কিন্তু আজ আবার এই বয়সে এসে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা এলো আমাদের জীবনে। যখন সে একাই আমার সেবক।

২০২১ ডিসেম্বরে জানতে পারলাম আমি কর্কট রোগে আক্রান্ত। দোষী আমি, নিজের শরীরের প্রতি অবহেলা, ঠিক অবহেলা বলব কিনা জানিনা, ভয়, হ্যাঁ ভয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হইনি সময় মতো। শেষ বেলায় যখন গেলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। রোগটা বিস্তৃতি লাভ করেছে ইচ্ছা মতো।

মনে পড়ছে সেই রাতটার কথা। রোগের কথাটা ডাক্তার নিশ্চিত করে বলে দেওয়ার পর। আমি নিশ্চুপ। শিরী, নাতাশা, শাহেদ, তৌকির ওরাই কথা যা বলার বলেছে ডাক্তারের সাথে। বিপাশা তখন বিদেশে। বাড়ি ফেরার পথটাতে আমার মুখ থেকে সরেনি একটি কথাও। কিন্তু শিরী সারা পথ সান্তনাবাক্য বর্ষণ করে গেছে আমার উদ্দেশ্যে। আশ্চর্য মানসিক শক্তি ওর, একটুও ভেঙে পড়েনি।

বারবার বলছিল, ভেঙে পোড়ো না, এ রোগতো আজকাল অনেকেরই হয়, আমরা চিকিৎসা করাবো, যতটুকু প্রয়োজন, যতটুকু সামর্থ্য সব করব, তুমি নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যাবে। আরো কত কিছু বলছিল, কিন্তু শোনার মতো মন আমার ছিল না তখন। একসময় রাত এলো। দিনের বাদবাকি সময়ের কথাটুকু আর নাইবা বললাম, আমি প্রায় বোবার মতো হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু শিরী ছিল শান্ত আর স্বাভাবিক।

অন্ধকার ঘরে আমি একা শুয়ে অশ্রুপাত করছি, এক সময় শিরী এসে নিঃশব্দে শুলো আমার পাশে।

নীরব কিছু মুহূর্ত, জীবনে অনেক নাটকে যেমন অভিনয় করেছি ঠিক তেমনি। সহসা ওর একটা হাত এসে পড়লো আমার গায়ে, ফুঁপিয়ে উঠলাম আমি, সঙ্গে সঙ্গে সেও। আমি থাকতে আল্লাহতালা এরোগ তোমাকে কেন দিলেন?

বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

এ কথার উত্তরে সে সময় আমার বলার কোনো ভাষা ছিল না।

কয়েক বছর কেটে গেছে এরপর। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি কাজ করছি, আর যুদ্ধ করছি মরণব্যাধির বিরুদ্ধে। আর এতে প্রধান সহযোদ্ধা শিরী। ছায়ার মতো সে আমার সাথে থেকে প্রতি পদক্ষেপে উজ্জীবিত করছে আমাকে। অনুপ্রাণিত করছে প্রতি মুহূর্তে যুদ্ধ করার জন্য। হ্যাঁ ওর কারণেই এখনো আমি যুদ্ধরত।

তুমি আমাকে বানিয়েছ একজন চৌকস যোদ্ধা, হ্যাটস অফ টু ইউ শিরী॥

সকল অধ্যায়

১. ১. দিনগুলি মোর সোনার খাচায় রইল না
২. ২. তেলের শিশি ভাঙলো বলে খুকুর পরে রাগ করো
৩. ৩. জীবন যখন শুকায়ে যায়
৪. ৪. মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি
৫. ৫. আসা-যাওয়ার পথ চলেছে
৬. ৬. শৈশব হারিয়ে গেছে সময়ের স্রোতে
৭. ৭. নদী বহে যায় নূতন নূতন বাঁকে
৮. ৮. আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো
৯. ৯. রেলগাড়ি ঝমাঝম, পা পিছলে আলুর দম
১০. ১০. পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে হারে
১১. ১১. দিগবলয়ে নব শশী লেখা
১২. ১২. ছেলে আমার মস্ত মানুষ মস্ত অফিসার
১৩. ১৩. নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়
১৪. ১৪. দূর কোন পরবাসে তুমি চলে যাইবারে
১৫. ১৫. এলেম নতুন দেশে
১৬. ১৬. নীড়ে ফেরা পাখি
১৭. ১৭. মিলিটারি ॥ আপকা নাম কিয়া?
১৮. ১৮. চল চল চল ভাই আজি শুভদিনে পিতার ভবনে
১৯. ১৯. মাগো মা ওগো মা আমারে বানাইলা তুমি দিওয়ানা
২০. ২০. আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ দহন লাগে
২১. ২১. একজন অভিনেতা হবে ভাল এবং সৎ মানুষ
২২. ২২. মার্কনীর বেতার তরঙ্গে আমি
২৩. ২৩. আমি সিনেমা নির্মাণ করি গল্প বলার জন্য-সত্যজিৎ রায়
২৪. ২৪. বোকার বাক্স
২৫. ২৫. বিজ্ঞাপন একটি সৃজনশীল শিল্পকলা
২৬. ২৬. আমি কি লেখক?
২৭. ২৭. পুরস্কার
২৮. ২৮. মাঠে প্রান্তরে
২৯. ২৯. আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ
৩০. ৩০. ছানাপোনার কাহিনি
৩১. ৩১. সারমেয় সমাচার
৩২. ৩২. পায়ের তলায় সর্ষে
৩৩. ৩৩. কোন আলো লাগলো চোখে
৩৪. ৩৪. সুন্দরের কোন মন্ত্রে মেঘে মায়া ঢালে
৩৫. ৩৫. তামাম শোধ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন