বিষাদবৃক্ষ – ৪১

মিহির সেনগুপ্ত

একচল্লিশ

এই ঘটনার দিনকয়েক পরেই একদিন কলেজে গিয়ে দেখলাম রফিকুল ইসলাম সাহেব ছাত্র এবং অধ্যাপকদের নিয়ে একটি সভা ডেকেছেন। জেনারেল প্রেসিডেন্টের সফরের পর স্থানীয় প্রশাসন বেশ কিছুটা উন্মার্গগামী আচরণ শুরু করেছিল। কানাঘুষা শুনতে পাচ্ছিলাম বরিশাল টাউন হলটির নাম আইয়ুব খান টাউন হল রাখা হবে। এই প্রচেষ্টা কিছুকাল আগেও একবার হয়েছিল। তদানীন্তন জেলাশাসক ছিলেন তার উদ্যোক্তা। কিন্তু তখন ছাত্ররা পরিবর্তিত নামটি ভেঙে পুনরায় বরিশাল টাউন হল রাখে। সবাই জানেন এই টাউন হলটি বরিশালের স্বনামধন্য অশ্বিনী দত্ত মশাইয়ের অবদান, যেমন এই কলেজটি এবং শহরের আরও অনেক কিছু। এখন আবার হুজুগ উঠেছে যে, হলটির নাম অবশ্যই এ কে টাউন হল রাখতেই হবে।

কলেজে গিয়ে বুঝলাম অবস্থা বেশ ঘোরালো। দু-একজন ছাড়া বেশির ভাগ অধ্যাপকই উপস্থিত হয়েছেন। একমাত্র লিগপন্থি দু-একজন অধ্যাপক এবং লিগের অনুগামী ছাত্র ইউনিয়নের সভ্যরা আসেননি। সভায় অনেকেই বক্তৃতা করলেন। তাঁরা জানালেন শিক্ষক এবং ছাত্ররা সক্রিয় রাজনীতিতে থাকুন এটা তাঁদের পছন্দ নয়। তবে এই শহরের ঐতিহ্যের ওপর যদি কেউ আঘাত হানতে চায় সে ক্ষেত্রে অবশ্য বিরোধিতা করতে হবে, ফল যাই হোক। তা ছাড়া যে মনীষীর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অর্থে এই শহরের স্কুল, কলেজ, টাউন হল ইত্যাদি তৈরি হয়েছিল, তাঁর স্মৃতির প্রতি এ ধরনের অসম্মান করা অন্যায় এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আদৌ কোনো রাজনীতি করা নয়, বরং এই সংগ্রামকে নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার সংগ্রাম বলা ভালো।

সর্বশেষ ভাষণ ছিল রফিকুল ইসলাম সাহেবের। তিনি বললেন, জঙ্গি সরকার ঐতিহ্যপূর্ণ টাউন হলের নাম আইয়ুব খাঁ হল বা এ কে টাউন হল রাখতে চায়। ইতিপূর্বে সে চেষ্টা একবার হয়েও ছিল এবং তার প্রতিকারও আমরা করেছিলাম। আজ আবার যদি আমরা এই চক্রান্ত ব্যর্থ না করতে পারি তবে হয়তো কালই দেখবেন, আমাদের এই কলেজের নামও ব্রজমোহন দত্ত কলেজের পরিবর্তে অমুক খান কলেজ রাখর উদ্যোগ হবে। ছাত্রদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা সর্বতোভাবে এর বিরোধিতা করুন, জবরদস্তি করা হলে আন্দোলন করুন। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।

কিন্তু অত্যুৎসাহী মুসলিম লিগ এবং স্থানীয় প্রশাসন অতি দ্রুত টাউন হলের নাম পালটে এ কে টাউন হল রাখল। হলের প্রবেশপথের মাথার ওপর সিমেন্ট প্লাস্টার করে তা পাকাও করে ফেলল। সংবাদ ছড়িয়ে পড়তে ছাত্ররা এক বিশাল মিছিল করে জেলাশাসকের অফিসে তাদের প্রতিবাদ জানাতে গেল। কিন্তু তাতে কোনো ফল হলো না। উলটো পুলিশ তাড়া করল। ছাত্ররা তখন টাউন হলের সামনে জড়ো হয়ে হাতুড়ি বাটালি দিয়ে এ কে অক্ষর দুটি ভেঙে ফেলল। এই সময় পুলিশ এবং মুসলিম লিগপন্থিদের সঙ্গে আন্দোলনকারী ছাত্রদের বেশ একচোট মারপিট হলো। আমিও আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে ছিলাম। এইসব ব্যাপারে আমার বা আমার মতো ছেলেদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় আক্রমণের মুখে আমরা বেশ দিশেহারা হয়ে পড়লাম। বস্তুত আমার মতো রংরুটদের সংখ্যাই বেশি ছিল ওই জমায়েতে। ফলে মারপিট শুরু হতেই আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লাম। বস্তুত আমরা কেউই এরকম একটা আক্রমণ তথা মারপিটের কথা চিন্তাই করিনি। আমাদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন যাঁরা, তাঁরাও না। আমাদের ছত্রভঙ্গতার সুযোগে সরকারপন্থিরা আবার লেখাটি মেরামত করে নিল। এই ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েক দিন হাঙ্গামা চলল। একবার আমরা ভাঙি, আবার ওরা সারিয়ে দেয়। সে এক চোর-পুলিশ খেলার মতো ব্যাপার। শুধু যখন উভয়পক্ষ সামনাসামনি, তখন মারপিট লেগে যায় ধুন্ধুমার। প্রথমবার হঠাৎ, আক্রমণে মার খেয়ে আমরাও মার দেবার কায়দাটা বুঝে গিয়েছিলাম বলে আর ব্যাপারটা একতরফা হয় না। যা হোক, একসময় ব্যাপারটি স্তিমিত হয়ে গেল। টাউন হলের নাম এ কে টাউন হল রাখা হলো বটে, কিন্তু সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো এ কে অর্থে আইয়ুব খান নয়, অশ্বিনীকুমার বুঝতে হবে।

দেখতে দেখতে টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। আমি কয়েক দিন কলেজ কামাই করে অহীনের ঘরে বসে গোপনে পড়াশোনাটা করে যাচ্ছিলাম। যা হোক টেস্ট খারাপ হলো না। ফল বেরোনোর তখন বেশ কিছু দিন বাকি। ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে আমাদের বলে দেয়া হয়েছিল যে, টেস্টের পরই যেন আমরা গ্রামে ফিরে না যাই। এই সময় কলেজে কিছুদিন ছুটি থাকে। এরকম এক আবেদনের উদ্দেশ্য ভাষা আন্দোলনের শহিদ দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে বিশেষ প্রস্তুতি। একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে প্রতিবছর পালিত হয়। এবার যেহেতু টাউন হল সংক্রান্ত আন্দোলন সদ্য সংঘটিত হয়েছে, সে কারণে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি একটি বিশেষ সভা ডেকেছিল, সভাটি টাউন হলে হবে এরকম সিদ্ধান্ত। টাউন হলের ওপর আমাদের অধিকার কায়েম রাখার জন্যই এরকম স্থান নির্বাচন। নতুবা কলেজ প্রাঙ্গণেই সাধারণত এ ধরনের সভা আয়োজিত হয়। সিদ্ধান্ত হলো সভার দিন কলেজ থেকে একটি মিছিল টাউন হল পর্যন্ত যাবে এবং সভা শেষ হলে মিছিলটি শহর পরিক্রমা করে আবার কলেজ প্রাঙ্গণেই এসে শেষ হবে। বিভিন্ন স্কুলের ছাত্ররাও এই মিছিলে যোগদানের জন্য আমন্ত্রিত হলো। ভাষা আন্দোলন সমর্থনকারী কয়েকজন অধ্যাপকও এই সভায় যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। রফিকুল ইসলাম সাহেবও, বলাবাহুল্য অগ্রণী ভূমিকায় থাকলেন।

সিদ্ধান্ত মতো সেই দিন সকালে আমরা যখন মিছিল করে বের হবার জন্য কলেজ প্রাঙ্গণে সমবেত হচ্ছিলাম, রফিকুল ইসলাম সাহেব দ্রুতবেগে একটি মোটর সাইকেলে এসে খবর দিলেন যে একটি বেশ বড়সড় পুলিশবাহিনী মিছিলে বাধা দেয়ার জন্য কলেজের দিকে আসছে। আমরা যেন কৌশলে সামনাসামনি সংঘর্ষ এড়িয়ে অন্য পথে টাউন হলে যাই। আর যাই হোক টাউন হলের মধ্যে ঝামেলা করতে এরা সাহস পাবে না। কিন্তু এইসব কথাবার্তা শেষ হতে-না-হতে পুলিশবাহিনী এসে অতর্কিতে আক্রমণ করে বসল। লিগপন্থিরাও পুলিশের সহায়তায় হাজির। ‘রাষ্ট্রভাষা উর্দু চাই পন্থি কিছু স্থানীয় গুণ্ডাও এদের সঙ্গে এলো এবং কোনোরকম প্ররোচনা ছাড়াই লাঠি চালাতে শুরু করল। জনৈক ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম সাহেবকে কোনোক্রমে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হলো। যাবার সময় তিনি বলে গেলেন, যে করেই হোক সবাই যেন টাউন হলে পৌঁছোয়। তাঁকে ওখান থেকে সরানো নিতান্ত প্রয়োজন ছিল। প্রথম তিনি সরকারের সুনজরে ছিলেন না। গ্রেপ্তার হলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। সময়টা ১৯৬২ সালের হেমন্তকাল। ভারতীয় ভূখণ্ডে ভারত-চীন যুদ্ধের জন্য চিনপন্থি কম্যুনিস্টদের ওপর দমননীতি চলছে জোরদার। পাকিস্তান চীনের মিত্ররাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও ওখানকার কম্যুনিস্টদের ওপর কিছুমাত্র সদয় নয়। ফলে রফিকুল ইসলাম সাহেবের নিরাপত্তার বিশেষ প্রয়োজন ছিল।

আমরা অর্থাৎ মিছিলগামী ছাত্ররা ময়দান ছেড়ে একসময় হোস্টেলগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলাম। কিন্তু পুলিশ হোস্টেলের দরজা ভেঙে ছাত্রদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করলে ছাত্ররা প্রতি-আক্রমণ করতে বাধ্য হলো। লাঠির জবাবে লাঠি এবং ইট পাটকেল পড়তে লাগল। ডিগ্রি ক্লাসের দাদারা পতাকা টানাবার বাঁশটি কোনোক্রমে এনে পাঁচিলের একটা জায়গায় রেখে পোলভল্টের সাহায্যে পাঁচিল টপকে যাবার নির্দেশ দিলেন। সেইমতো পুলিশের নজর এড়িয়ে অনেকেই পাঁচিল টপকে যেতে লাগল। কলেজের প্রধান ফটকটি পুলিশ দখল করে রেখেছিল। এখন ছাত্ররা প্রতি-আক্রমণ করায় পুলিশকে সেখান থেকে হটতে হলো এবং সামনের দিকের ছাত্ররা ব্যাপকভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল। আমি পাঁচিলের দিকে ছিলাম। সেখান থেকে প্রধান ফটকের দূরত্ব অনেকটাই। ব্যূহ ভেদ করে অতদূর যাওয়া অদৌ সম্ভব ছিল না। আবার পোলভল্ট ইত্যাদি ব্যাপারে আমার পটুত্ব প্রায় বিশ্ব ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মতো। তখন ব্যাপক হুড়োহুড়ি, মারপিট এবং স্লোগান, পালটা স্লোগান চলছিল। সে এক ভয়ানক বিশৃঙ্খল অবস্থা। সাথীরা জানত, যে মুষ্টিমেয় হিন্দু ছাত্ররা এ ব্যাপারে অংশ নিয়েছে, তারা গ্রেপ্তার হলে সমস্যা গুরুতর হবে। সুতরাং তাদের সরে যেতে হবেই। অগত্যা আগুপিছু না ভেবেই আমি একটি ভল্টের প্রয়াস পেলাম। কিন্তু হা হতোস্মি! আমি পার হতে পারলাম না। আমার দুই ঠ্যাং দুই দিকে পড়ল। সে একেবারে ন যযৌ-ন তস্থৌ অবস্থা। একদিকে পুলিশ এসে আমার একটি ঠ্যাং ধরে ফেলেছে, অপর ঠ্যাংটি ছাত্রদের দখলে। সে এক টাগ-অব-ওয়ার। মাঝখানে আমার সাধারণ মার্কিন কাপড়ের পাজামা আমার নিম্নাঙ্গকে কিছুমাত্র নিরাপত্তা দিতে পারছিল না। দুই ঊরুর চামড়া ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হবার উপক্রম। যাই হোক, এই টানাটানিতে আমার সঙ্গীরাই জিতল, কেননা তারাই সংখ্যাধিক ছিল। কিন্তু আমার অবস্থা তখন সাংঘাতিক। দুই উরু বেয়ে রক্তের ধারা নেমেছে। অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে। ওদিকে পিঠেও বেশ কয়েক-ঘা লাঠি পড়ায় সেখানেও বেশ টনটনে ব্যথা। অথচ থামার উপায় নেই। টাউন হলে পৌঁছোতেই হবে।

প্রাচীরের উলটোদিকে সাধারণ বসতির এলাকা। অতএব পেছনে তাড়া করার জন্য পুলিশ সেখানে নেই, এই যা রক্ষে। তখন বেলা প্রায় দুপুর পেরিয়ে যায়-যায়। আমরা জনা চল্লিশেক ‘ভাষাসৈনিক’ টাউন হলের দিকে চলেছি। অন্যদের খবর কিছুই জানি না। তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে, না টাউন হলের দিকে পাড়ি দিয়েছে, কিছুই জানা নেই।

টাউন হলের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম অনেকেই সেখানে পৌঁছে গেছে। একদল পুলিশও অস্ত্রবর্মে সজ্জিত হয়ে ‘যুদ্ধং দেহি’ ভঙ্গিতে উপস্থিত। মুহুর্মুহু স্লোগান উঠছে, ‘মাতৃভাষা বাংলা যখন রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।’ ‘নুরুল আমিন বেইমান নুরুল আমিনের রক্ত চাই।’ নুরুল আমিন নামক একদার পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের রক্ত ভাষা আন্দোলনের দিন থেকেই আকাঙ্ক্ষিত ছিল। কেননা সেই শয়তানজাদাই ‘রাষ্ট্রভাষা উর্দু হোক’ এমন এক নাপাক হিসেবকিতেব তার পশ্চিমি বুজুর্গদের সঙ্গে করেছিল। তখন থেকেই তার রক্ত ভাষাসৈনিকদের এক দাবি হিসেবে ‘নারায়’ বাঁধা হয়েছিল। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনে তারই প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় সালাম, বরকত ইত্যাদিদের ফ্যাসিস্টরা ঢাকার রাস্তায় গুলি করে মারে। সেই সময় থেকেই প্রতিবছর মাতৃভাষাপ্রেমী ছাত্ররা তার রক্তের দাবি জানিয়ে এই শহিদদের স্মৃতিতর্পণ করত। দীর্ঘ দশ বছর বাদেও সেই স্লোগান আমরা উচ্চারণ করেছিলাম, কারণ তখনও সেই দুশমন সহিসলামত তথা সম্পূর্ণ বাদশাহিপনায় স্বীয় জিন্দিগির তামাম রোশনি উপভোগ করার জন্য জিন্দা ছিল। আমি এ ক্ষেত্রে এতগুলো উর্দু শব্দ এ কারণেই ব্যবহার করলাম যে উর্দুকে ওই সমস্ত আন্দোলনের সময়ও আমরা অন্ত্যজ মনে করতাম না। ওই ভাষা এবং ওই ভাষাভাষি মানুষদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কোনো বিরোধ ছিল না। বিরোধ ছিল ওই ভাষাটিকে যারা জবরদস্তি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায় তাদের সঙ্গে।

শাসকেরা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের একটি সুসমৃদ্ধ ভাষাকে উপভাষা হিসেবে চিহ্নিত করে একটি স্থানীয় ভাষাকে তার স্থলাভিষিক্ত করতে উদ্যোগী হলে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। এ ক্ষেত্রে উর্দু না হয়ে চাপিয়ে দেয়া ভাষাটি যদি সংস্কৃত বা আরবিও হতো তা হলেও পরিস্থিতি কিন্তু অন্যরকম হতো না। এ কারণেই ওই দুশমনের রক্ত চাওয়া হয়েছিল।

স্লোগানের গতি ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হলে পুলিশ আবার লাঠিচার্জ শুরু করল এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার করতে লাগল। এর মধ্যে উত্তেজিত ছাত্ররা আবার টাউন হলের ওই আগের শিরোনাম থেকে এ কে কথাটি ভেঙে দিয়ে জানাল যে, কথাটি অতঃপর অশ্বিনীকুমার টাউন হলই থাকবে, এ কে শিরোনাম থাকবে না, যেহেতু তাতে আইয়ুব খানও বোঝানো হয়। যা হোক, সেই দিন আমরা পুলিশি তাণ্ডবের জন্য সভা করতে পারলাম না। আমাদের পর্যুদস্ত করে বেশির ভাগ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে সদর থানায় স্থানাভাবের জন্য সদর জেলখানার চত্বরে নিয়ে যাওয়া হলো। লাঠিচার্জের সময় ছাত্ররাও প্রতি-আক্রমণ করেছিল, ফলে একসময় লাঠিবাজি বন্ধ করতে তারা বাধ্য হলো। আমরা সংখ্যায় অনেক ছিলাম বলে জেলখানা চত্বরে তারা মারধর করতে সাহসী হয়নি। আমাদের বিষয়ে কর্তব্যাকর্তব্য নির্ণয়ে স্থানীয় প্রশাসন খুবই বিলম্ব করছিল। ইতোমধ্যে ছাত্ররা জেলের ওই চত্বরে খানিকটা বাধ্য হয়ে এবং খানিকটা ইচ্ছাকৃতভাবে পেচ্ছাব করে এক দূর্বিষহ অবস্থা তৈরি করল। দুর্গন্ধে গোটা জেলখানায় হুড়োহুড়ি পড়ে গেলে কর্তৃপক্ষ নিরুপায় হয়ে আমাদের তাড়িয়ে দিল, আমরাও যে যার বাড়ি চলে গেলাম।

পায়খানা-পেচ্ছাব করাটাও যে সময় বিশেষে অস্ত্র হতে পারে, তারও একটা কিংবদন্তি অতঃপর তৈরি হয়ে গেল। বস্তুত এই লড়াইয়ে আমরাই জয়ী হয়েছিলাম। এই সময় ঢাকাও আন্দোলনের তুঙ্গে। মওলানা ভাসানী সদ্য কারামুক্ত হয়ে সারা দেশে সভা করে বেড়াচ্ছেন। ফলে দেশজুড়ে খুবই তৃপ্ত আবহাওয়া। আমরা অনুভব করলাম, এভাবেই আইয়ুবশাহির পতনের বীজ উপ্ত হলো। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

সকল অধ্যায়

১. বিষাদবৃক্ষ – ১
২. বিষাদবৃক্ষ – ২
৩. বিষাদবৃক্ষ – ৩
৪. বিষাদবৃক্ষ – ৪
৫. বিষাদবৃক্ষ – ৫
৬. বিষাদবৃক্ষ – ৬
৭. বিষাদবৃক্ষ – ৭
৮. বিষাদবৃক্ষ – ৮
৯. বিষাদবৃক্ষ – ৯
১০. বিষাদবৃক্ষ – ১০
১১. বিষাদবৃক্ষ – ১১
১২. বিষাদবৃক্ষ – ১২
১৩. বিষাদবৃক্ষ – ১৩
১৪. বিষাদবৃক্ষ – ১৪
১৫. বিষাদবৃক্ষ – ১৫
১৬. বিষাদবৃক্ষ – ১৬
১৭. বিষাদবৃক্ষ – ১৭
১৮. বিষাদবৃক্ষ – ১৮
১৯. বিষাদবৃক্ষ – ১৯
২০. বিষাদবৃক্ষ – ২০
২১. বিষাদবৃক্ষ – ২১
২২. বিষাদবৃক্ষ – ২২
২৩. বিষাদবৃক্ষ – ২৩
২৪. বিষাদবৃক্ষ – ২৪
২৫. বিষাদবৃক্ষ – ২৫
২৬. বিষাদবৃক্ষ – ২৬
২৭. বিষাদবৃক্ষ – ২৭
২৮. বিষাদবৃক্ষ – ২৮
২৯. বিষাদবৃক্ষ – ২৯
৩০. বিষাদবৃক্ষ – ৩০
৩১. বিষাদবৃক্ষ – ৩১
৩২. বিষাদবৃক্ষ – ৩২
৩৩. বিষাদবৃক্ষ – ৩৩
৩৪. বিষাদবৃক্ষ – ৩৪
৩৫. বিষাদবৃক্ষ – ৩৫
৩৬. বিষাদবৃক্ষ – ৩৬
৩৭. বিষাদবৃক্ষ – ৩৭
৩৮. বিষাদবৃক্ষ – ৩৮
৩৯. বিষাদবৃক্ষ – ৩৯
৪০. বিষাদবৃক্ষ – ৪০
৪১. বিষাদবৃক্ষ – ৪১
৪২. বিষাদবৃক্ষ – ৪২
৪৩. বিষাদবৃক্ষ – ৪৩
৪৪. বিষাদবৃক্ষ – ৪৪
৪৫. বিষাদবৃক্ষ – ৪৫
৪৬. বিষাদবৃক্ষ – ৪৬

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন