বিষাদবৃক্ষ – ৯

মিহির সেনগুপ্ত

নয়

আমাদের পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম। নাম বাউলকান্দা। সেখানকার অধিবাসীরা সবাই মুসলমান। তথাপি গ্রামের নাম কেন যে বাউলকান্দা সে এক প্রশ্ন। সেখানকার একজন প্রতাপশালী মিঞা, নাম গাজি। গাজি সাহেবের সম্পর্কে খ্যাতি ছিল তিনি দাঙ্গাবিরোধী এবং হিন্দুপ্রেমী। একান্নর দাঙ্গার সময় গাজি একটি বাহিনী গঠন করেছিলেন, একথা আমার মনে আছে। লাঠিধারী এই বাহিনীর সংখ্যা ছিল নাকি এক হাজার। গাজি সাহেব আমার পিতৃদেবকে ‘গুরুদেব’ বলে ডাকতেন এবং পিতৃদেব তাকে ‘শিষ্য’ বলে। এই গুরু-শিষ্যে বেশক্ দিলচপী আমি দেখেছি। এ বিষয়ে একটি গল্পকথা, যা ডাক্তারজ্যাঠার কাছে শুনেছিলাম, এই সুযোগে বলে নিই। বাবা এবং গাজি কেন পরস্পরের গুরু-শিষ্য, তার কার্যকারণ সেই গল্পকথায় নিহিত আছে। গাজি যৌবনে নাকি একটু বেশি বেপরোয়া ছিলেন। বাউলকান্দার পার্শ্ববর্তী অন্য একটি গ্রাম রণমতিতে নীলঠাকুর নামে একজন ব্রাহ্মণ তাঁর এক শাগরেদকে নাকি একবার বেধড়ক ঠেঙিয়েছিল। তার অপরাধ, সে এক ডাকাতদল তৈরি করে এদিক-ওদিকে কিছু উলটোপালটা কাজ করেছিল। এই ব্যাপারটা আমাদের ওখানকার রীতি অনুযায়ী অনৈতিক। নিজেদের চৌহদ্দির মধ্যে ডাকাতির হাঙ্গামা করা কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য নয়। করতে হয় অন্যত্র করো। নীলু বিশেষ সূত্র ধরে ব্যাপারটা জেনে তাকে ঠ্যাঙায়। কেন? না, তুই নিজ এ্যালাকায় ক্যান হুইজ্জত করবি? তোর এট্টা কাগুজ্ঞেয়ান নাই। তার কাণ্ডজ্ঞানের অভাব কেন হয়েছিল, অতটা জানবার সময় এবং ধৈর্য নীলুর ছিল না। কিন্তু এ কারণে গাজি তাকে এক ‘রণলন্কার’ দিয়ে বসে। রণলন্কার বলতে রণহুংকার। নীলু বাবার কাছে এসে জানায় যে, গুরুদেব যদি ‘এ্যার এট্টা বিহিত না করেন, তয় নীলু ওই গাজাইয়ার গোয়ায় আস্থা একখান খাজুর গাছ হান্দাইয়া–তিমুনির মাতায় খাড়া করইয়া রাখফে।’

ডাক্তারজ্যাঠা বলেছিলেন যে, এ বিষয়ে একটা সালিশি সভা নাকি বসেছিল আমাদের বড় খালপারের রেনট্রি গাছটার নিচে। বড় খালপারের সেই দুটো রেনট্রি গাছ যার একটা খালের মধ্যে ঝুঁকে তার গোছাটা ফুলিয়ে পথিকজনের বসার স্থান করে রেখেছিল। আর একটা খাল থেকে একটু পারের দিকের বেশ কিছুটা জায়গাজুড়ে শদুয়েক বছর ধরে বোধহয় ছায়াবিস্তারী এক ব্যাপক ব্যবস্থাপনায় তাবৎ পথিক মনুষ্যদের শোয়া, আরাম, বিশ্রাম এবং সভাসমিতি ইত্যাদির নিমিত্ত এক আচ্ছাদন তৈরি করে রেখেছিল যার আভাস আগেই দিয়েছি। তো ওই রেনট্রির নিচে নাকি সালিশির ব্যবস্থা। বিরোধের নিষ্পত্তিকল্পে বাবাকে মুরুব্বি করলে বাবা খুব সহজ সমাধানে বিবাদের নিষ্পত্তি করেন।

ডাক্তারজ্যাঠা বলেছেন, হে এক কাণ্ড। তোমার বাবায় তো দুইজনেরই গুরু। অথচ হ্যারগো মইদ্যে বিরোদ। তো আমাগো এই তিন গেরামের তিনজোন বুজুর্গেরে বিচারে নেওয়া অইলে। মোরা ভাবি, এই বুজি দাঙ্গা লাগে। না হেয়া লাগলে না। তোমার বাবা এট্টা নিয়মবন্দো করলেন কায়দা করইয়া। হেহানেই আসল ফ্যাচাংডা মারইয়া রাখলেন। তয় এট্টু বেশি ঝুঁকিও নেছেলেন, একতা কমু। বাবা নাকি নিয়মবন্দ করেছিলেন যে, রণাঙ্গনে পরপর শায়িত তিনগাছা লাঠি থাকবে। দুই বিরোধী প্রথম একে অন্যের সঙ্গে লড়বে। পরে তারা আলাদা আলাদা গুরুর সঙ্গেও লড়বে এবং সর্বশেষ উভয়ে একসঙ্গে গুরুকে স্পর্ধা জানাবে। যদি তাদের কেউ ব্যক্তিগতভাবে অথবা যৌথভাবে গুরুকে পরাজিত করতে পারে তবে আখেরি বিজয়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গুরু জারি করবে। আর গুরু যদি উভয়কেই পরাস্ত করেন, তবে তিনি যা বলবেন তা উভয়কেই মানতে হবে।

পরস্পর স্পর্ধায় নীলু হারে। বাবা গাজিকে ‘উল্লাস’ দেন। দ্বিতীয় লড়াইয়ে গাজি আলি আলি বলে গুরুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার মুহূর্তকালের মধ্যেই হাতের লাঠি খোয়ায়। লাঠি তখন প্রায় চৌদ্দ হাত দূরে পড়ে মাটি খায়। গাজি লাঠি তুলতে যাওয়ার মুহূর্তে গুরুর লাঠি দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় তার সামনে। তখন নীলু বিপুল বিক্রমে গুরুর পশ্চাৎ থেকে আক্রমণ করতে গিয়ে বাঁ-কাঁধে বেদম আঘাত পায় প্ৰায় এক অজ্ঞাত প্রহারে। তথাপি দুই শিষ্য একযোগে এক অসম আক্রমণে গুরুকে ‘তমেচা’ করলে গুরু অবহেলায় তাদের ‘শিব’ নিয়ে নেন। ফলত গাজি আর নীলু গুরুর পা ছুঁয়ে কসম খায় যে, আর কোনোদিন তারা বেয়াদবি করবে না।

বাবার সঙ্গে গাজির নাকি এরপর থেকেই গুরুশিষ্য সম্বন্ধটি পাকা হয়। গাজি বলেছিলেন, গুরুদেব, এছলামে আল্লাহপাক ছাড়া ‘কদমবুছি’ নাজায়েজ। ক্যান? না, ‘লাহুকমা ইল্লাহ লিল্লাহ।’ আল্লার কোনো শরীক মোরা মানি না। আল্লাহ ছাড়া কাউরেই মোরা সেজদা করি না। কিন্তু গুরুদেবরে য্যান কদমবুঝি না করাডা গুনার ঠেহে। বাবা বলেছিলেন নিজের ইমান বজায় রাকফি। আমার আঙুর নিচে হাত দিবি না। আমি এ্যামনেই তোরে আশীর্বাদ করমু। গাজি বাবাকে সম্মান জানাতেন হাঁটু ছুঁয়েই।

এই সময় পোস্ট অফিসের একজন পোস্টমাস্টার এসে স্থায়ী হয়েছিলেন আমাদের ওখানে। আমাদের খানাবাড়ির মধ্যেই এই পোস্ট অফিসটি। তাঁর নাম ছিল কাসেম মাস্টার। পশ্চিম পাকিস্তানি সিন্ধিজাতীয় মানুষ। উর্দু এবং ফারসিতে দখল ছিল তাঁর। বাবার শখ হয়েছিল কাসেম মাস্টারের কাছে উর্দু-ফারসি শিখবেন। তো, কিছুকাল শিখলেনও। যখন পিছারার খালের চৌহদ্দির মানুষ নানা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে কম্পমান, তখনও কাসেম বাবাকে উর্দু তালিম দিচ্ছেন, বলছেন, এইসব তুচ্ছতার পাশ কাটিয়ে আপনি শুনুন শায়ের বুজুর্গরা কী গেয়েছেন। আপনি কি এই হিংস্রতার জন্য দুশ্চিন্তিত হচ্ছেন? তাহলে শুনুন বলি, এ কিছু নতুন নয়। মানুষের মধ্যে মহব্বত থাকলে এ সবকিছুই তুচ্ছ হয়ে যেত। মানুষের কোনো দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা থাকত না। কিন্তু তামাম হিন্দুস্থান-পাকিস্তানের কোথাও মানুষের মধ্যে প্রেম-মহব্বত কিচ্ছু নেই। এরা সবাই, আপনি, আমি ধ্বংসের মুখে পড়েছি। দুশ্চিন্তা করে এর কোনোই সুরাহা হবে না। বরং আমি একটি শের বলছি শুনুন

বাহার আয়ি গুলো গুলফার লেকর
হাম ঝুমে উও তুমহারা নাম লেকর।
ঘটাকালি যো ছায়ি
হাম ইয়ে সমঝে
উও আয়া হ্যায় তেরা গ্যায়গম লেকার।
বড়া রুতবা মিলা হামকো জাঁহামে
তেরা প্যার কা ইলজাম লেকর।

কাসেম মাস্টার হরবখত এইসব শের বলতেন। এই শেরটি আবৃত্তি করে তিনি বাবাকে বলেছিলেন, আপনি হয়তো ভাবছেন এরকম এক সংকটকালে এই প্রেমের কবিতা কেন। আপনি এ ক্ষেত্রে শুধু নারী-পুরুষের মহব্বতের তাৎপর্যটি না ধরে ব্যাপক মানুষের ভালোবাসার ব্যাপ্তিতে এর অর্থ করুন। সেখানেও, আমাদের মানুষের প্রতি ভালোবাসার জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার মিলেছে বদনাম। ‘প্যারকা ইলজাম’ প্রেমের বদনামি। আপনি হিন্দু আমি মুসলমান। আপনাকে যদি আমি মহব্বত করি তার জন্য আমার সমাজ আমার বদনাম করে। আপনার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই হয়। জনাব, এ এক ধরনের ‘জাহিলিয়াত’, অন্ধকার। এই ‘জাহিলিয়াত’ মানুষকে ধ্বংস করে। গাজি কাসেম মাস্টারকে খুব সম্মান করতেন। বলতেন, আপনে এলহা থাহেন, রান্ধইয়া খায়েন। মোর বাড়িতে আইয়া থাহেন, মোরা আপনের দেখভাল করুম। কিন্তু কাসেম রাজি হতেন না। বলতেন, আমার একটাই শখ। সারাদিন সরকারি কাজকাম খেদমত। অবসরে জনাবালির সঙ্গে একটু শের শায়েরি নিয়ে আলাপ-বৈঠক। কাসেম মাস্টার বাবাকে জনাবালি (জনাব আলি) বলে সম্বোধন করতেন। একা মানুষ, বিবাহাদি করেননি। নিজের কাজ আর পড়াশোনা নিয়ে থাকতেন। চমৎকার বাংলা বলতেন এবং তার মধ্যে আমাদের ওখানকার আঞ্চলিক টান বা শব্দবন্ধ থাকত না। মার্জিত পরিশীলিত মানুষ। জীবনে যেটুকু শিখেছেন, বড় যত্ন করে ভালোবেসেই শিখেছেন। ধর্ম নিয়ে কোনো বাতিক ছিল না তাঁর। বাবাকে বলতেন, আপনাদের সোহং তত্ত্বের মতোই ইসলামের বিকাশে একতত্ত্ব বা বিশ্বাস এসেছিল। একজন মানুষ বলেছিলেন—’আনঅলহক’। এই অপরাধে তাঁকে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল। কিন্তু প্রবাদ এই যে, তার প্রতিটি টুকরোই চিৎকার করে বলেছিল আনঅলহক, আনঅলহক। আমিই সেই, আমিই সেই। জনাব, আমারও মনে হয় সব মানুষই সেই অর্থাৎ চূড়ান্ত সত্তা। কিন্তু এ কথা প্রকাশ্যে বলার মতো সাহস আমার নেই। আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত আপনারা কেউ এখানে আর থাকতে পারবেন না। হায় আফসোস।

এই সময়েই ওই ঘটনাটি, যে কথা বলছিলাম, তা ঘটে এবং গাজিকে ‘প্যারকা ইলজাম’-এর ভাগী হতে হয়। বাবাকেও। এবার ঘটনাটি বলি, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তখন দাঙ্গা, ধর্ষণ, খুন এবং অগ্নিসংযোগের সব ভয়াবহ কাহিনি লোকমুখে প্রচারিত হচ্ছে। সংখ্যালঘুরা ত্রস্ত, ভীত, আতঙ্কিত। এমতো এক পরিবস্থায় যদি গাজি তাঁর হাজার আনসারকে নিয়ে অকস্মাৎ ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে কোনো হিন্দু এলাকায় হাজারও টর্চের আলোয় উদ্ভাসিত করে ব্যাপক কোলাহলে প্রবেশ করেন এবং তাঁরা যে সংহার বা ধ্বংসের জন্য নয়, বরং রক্ষকের ভূমিকায়ই এমতো কার্যে এসেছেন, এ কথা যদি পূর্বাহ্নে কারও জানা না থাকে, তবে ওই পরিবেশে মানুষের অবস্থা কী হয়? এ দৃশ্য যদিও আমি অনেক ছোট বয়সেই দেখেছি, কিন্তু আজও ভুলিনি।

তখনও বেশ কিছু পরিবার আমাদের ওই পিছারার খালের পৃথিবীতে ছিল। যারা দেশ ছাড়বে কি ছাড়বে না, ছাড়লেও কোথায় গিয়ে ঠাঁই পাবে, এরকম এক দোদুল্যমানতায় ছিল। সবাই মধ্যবিত্ত ভদ্র গৃহস্থ। কারও পেশা চিকিৎসা, কেউ-বা স্কুলমাস্টার, আবার কেউ-বা যজন-যাজন নিয়ে আছেন। প্রত্যেকের বাড়িতেই এক আধটা যুবতী অথবা আধা যুবতী কন্যা রয়েছে। আমাদের বড় খালের ব্রিজটার ওপর থেকে এক হাজার টর্চের তীব্র দ্যুতি এবং তৎসহ ব্যাপক ধ্বনি ‘আল্লাহু আকবর’ যদি শোনা যায়, এলাকার অন্দর-কন্দরের কারওই সন্দেহ থাকে না যে, ‘শত্রু’ আক্রমণ করেছে। কেননা তখন যারা দাঙ্গাকারী, তারাও ‘পরম করুণাময় আল্লাহতায়লার’ নামেই ‘নারায়ে তকবির আল্লাহু আকবর’ এই ধ্বনি সহযোগেই ব্যাপক সন্ত্রস্ততা সৃষ্টি করত। তাদের জন্য এ ছিল এক জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধ। কিন্তু এ তো ধর্মযুদ্ধ বা কোনো যুদ্ধই ছিল না। যুদ্ধ হয় দুই দলে। এখানে সশস্ত্র একদল নিরস্ত্র দলকে ‘কোতল’ করছে। এটা তো যুদ্ধ নয়, গণহত্যা। গাজির দল এক নিশীথে এরকমই একটা মহড়ার ব্যবস্থা করলে সব পাড়া-প্রতিবেশী বিপন্ন আতঙ্কে ঊর্ধ্বশ্বাসে আমাদের বাড়ির দিকে ছুটে আসতে থাকে। প্রতিবেশী পুরুষেরা তাদের গৃহসম্পদ আগলে থাকেন এবং মেয়েদের সুরক্ষিত করার জন্য আমাদের বাড়ির দোতলায় তাদের জমায়েত করেন। এখন বাড়িতে পুরুষ বলতে এক বাবা, আর বাবাকে যিনি বাল্যে দেখাশোনা করার জন্য এসে গোটা জীবন এখানেই যাপন করেছিলেন, সেই মানুষটি, যাঁকে আমরা জ্যাঠা বলে ডাকতাম। নাম পতাকি দাস। সবাই বলত পতাকি সাধু। জ্যাঠা চিরকুমার হিসেবেই কুলদা ব্রহ্মচারির আদলে জীবন কাটিয়ে একসময় তাঁর সাধনোচিত ধামে প্রয়াণ করেন। তিনি কুলদা ব্রহ্মচারির শিষ্য ছিলেন। বাড়ির যারা চাকরবাকর ছিল তারা কোথায় যে গা-ঢাকা দিয়েছিল তার হদিস করতে পারিনি। তবে জ্যাঠা বলেছিলেন, আমি দোতলায় যামু না। কেউ যদি কাটতেই আয়, আগে আমারে কাটতে অইবে, হ্যার পর যা করার করবে। বাবা সবাইকে ওপরে তুলে দিয়ে, একখানা রামদা নিয়ে, নিচের দরদালানে পায়চারি করছিলেন। টর্চের দ্যুতি যতই নিকটবর্তী হচ্ছিল এবং কোলাহল তীব্রতা পাচ্ছিল, বাবা বুড়িপিসিমার চেঁচামেচিতেই হোক বা শেষ প্রতিরোধের খাতিরেই হোক, একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির পথে রামদা হাতে দাঁড়িয়েছিলেন, এ চিত্র এখনও আমার স্মৃতিতে অম্লান। বুড়িপিসিমা তখন গোঁসাই গোঁসাই নারায়ণ মধুসূদন জনাদ্দন ইত্যাদি মন্ত্রোচ্চারণরতা, তথা বাবার উদ্দেশে ‘ও নসু তুই উপরে আয়, ওরে তুই একলা কী করবি’ ইত্যাদি বচনরতা। আনসারবাহিনী তখন আমাদের উঠোন ছেয়ে ফেলেছে। টর্চের আলো সারা বাড়ি আলোকিত করেছে। দোতলায় তাবৎ মহিলাকণ্ঠের আর্তনাদ। কেউ কারও কথা পর্যন্ত বুঝতে পারছে না। বাবার বক্তব্য, ওপরে উঠে কী হবে? বড়জোর ঘটনাটা একটু আগে-পরে হবে, এই তো।

এরই মধ্যে একটা আওয়াজ শোনা গেল, ‘গুরুদেব’। সমবেত কণ্ঠে তখন মহিলাদের আর্তনাদ—’নাআআ—তুমি যাবা না। তোমারে ওরা কাডইয়া ফ্যালাইবে।’ বাবা খুবই স্থির শান্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘যদি কাটতেই আইয়া থাকে তো গেলেও কাটবে, না গেলেও কাটবে, তয় মনে অয় হেসব কিছু না, গলাডা য্যান গাজির লাগতে আছে।’ এরপর বাবা দরদালান পেরিয়ে নেমে গিয়েছিলেন আমাদের বিস্তীর্ণ উঠোনে, হাতে রামদা। অন্দরের দোতলায় তখন পরিত্রাহি চিৎকার। হঠাৎ তার মধ্যে বাবার উচ্চকণ্ঠে তিরস্কার শোনা গিয়েছিল। তিনি ওই মুহূর্তে একটি অত্যন্ত আপত্তিকর শব্দও ব্যবহার করেছিলেন, হারামজাদা বেইমান এবং তৎসহ একটি প্রচণ্ড চড়ের শব্দও শোনা গিয়েছিল। বাবা তাঁর অনুগামীদের অনেক সময়েই আহ্লাদ করেও হারামজাদা বলতেন। এ এক সামন্তরীতিও বটে। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে কোনো মুসলমানকে হারামজাদা বা বেইমান বলা যে কী পর্যন্ত হঠকারিতা, তা যারা ওই সমাজের রীত-কানুন জানেন, তারা সম্যক বুঝবেন। বাবাকে গাজি ভালোই জানতেন, তাই এ নিয়ে কোনো উত্তেজনা হয়নি। তিনি শুধু আফসোস করে বলেছিলেন, আগে খবর দেয়া সম্ভব অয়নায় গুরুদেব, এ কসুর মাফ করেন। তয় মুই কৈলম বেইমানি করতে আই নাই। খবর পাইছেলাম আইজ গাবখানের ওপার থিকা একদল জালিম এ বাড়িতে হামলা করবে। হেয়ার মোকাবিলা করতেই আইছেলাম। আপনেগো এই তকলিফের লইগ্যা মোরে মাফ করেন। সবাইকে আশ্বস্ত করে গাজি সদলে চলে গিয়েছিলেন। ব্যাপারটা মধুরেণ সমাপয়েৎ হলেও আমাদের বাড়ির ওগাঁয়ের সম্মিলিত ভীতাত্রস্তা নারীকুল এবং সাধারণ পুরুষেরা কিছুতেই এ কথা বিশ্বাস করল না যে, এরা প্রকৃতই আমাদের সংরক্ষণের জন্য এসেছিল। সবাই বাবাকে বলেছিল, গাজি হউক আর যে হউক, আপনে যে গেলেন—যদি এট্টা কোপ দিয়া বইথে? বাবা বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, অরা কিন্তু কোপটা দেয় নায়।

কিন্তু ঘটনাটা অবিশ্বাসকে আরও তীব্রই করেছিল। এই ঘটনার পর পিছারার খালের আশপাশে আবার ব্যাপক দেশত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে। দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতির প্রভাবও আমার পিছারার খালের বিশ্বকে চূড়ান্ত ‘ভেদে’র অন্ধকারে নিক্ষেপ করে। তখন সেখানে প্রকৃতই ‘আইয়ামে জাহিলিয়াত’ বা অন্ধকার যুগ কায়েম হয়। যারা এই নতুন জাহিলিয়াত কায়েম করছিল তাদেরকে বহু-বহুকাল আগে নবি মোহাম্মদ সতর্ক করে দিয়েছিলেন। একদল মানুষ পৌত্তলিক বা অংশীবাদী বলেই তাদেরকে শাসন বা হত্যা করার অধিকার যে আল্লাহ নবি বা অপর কাউকে দেননি, আল কোরানে তার সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে। ‘আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে তারা অংশী স্থাপন করত না এবং তোমাকে তাদের জন্য রক্ষক নিযুক্ত করিনি। আর তাদের অভিভাবক তুমি নও। এবং তারা আল্লাহকে ছাড়া যাদের ডাকে, তাদের তোমরা গালি দেবে না, কেননা তারা (তা হলে) আল্লাহকেও গালি দেবে।’ এর পরেও ধর্মের নামে, জিহাদের নামে ‘জাহিলিয়াত’ কায়েম করা হয়েছিল এবং গাজির মতো মানুষ থাকা সত্ত্বেও তারাই প্রভুত্ব কায়েম করেছিল। এ কথার ব্যত্যয় নেই।

বাবা গাজির আন্তরিকতায় এবং সদিচ্ছায় সন্দেহ করেনি। তথাপি তাঁর অহমিকায় আঘাত লেগেছিল। এতদিন যাদের রক্ষা করেছেন, শাসন করেছেন, অনুগ্রহ করেছেন, আজ যদি তাদেরই ভরসায় প্রাণ, মান, ইজ্জত রক্ষা করার কথা ভাবতে হয় তবে তার থেকে অসম্মানের আর কী-বা থাকে। এর থেকে গাজি বোধহয় এ কাজটা না করলেই ভালো হতো, এরকম একটা বিচার বাবার ছিল। তাঁর দিক থেকে সদর্থক হলেও গাজির এই কাণ্ডটি আমার পিছারার খালের জগতে এক ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। ওই সময়টাতে আমাদের ওখানের কোনো হিন্দুই মনে করত না যে, কোনো মুসলমান দাঙ্গাবিরোধী, হিন্দু-উচ্ছেদবিরোধী হতে পারে। তাদের বিশ্বাসে ওখানকার তাবৎ মুসলমানকেই তারা শত্রুর পর্যায়ে বিবেচনা করত। হিন্দুদের মুসলমানদের প্রতি অপ্রীতি আমি শিশুকাল থেকেই দেখেছি। এইসব মুসলমান কোনো উচ্চবর্ণীয় বা বর্গীয় নয়। এরা বেশির ভাগ সাধারণ চাষি শ্রেণির। সবাই সামন্ত সংস্কৃতির মানুষ। অতএব কি মুসলমান, কি নমশূদ্র সকলকেই উচ্চবর্ণীয় হিন্দুসমাজ সমবিচারে নিয়েছিল। আমাদের ওখানের মুসলমান এবং নিম্নবর্ণীয় মানুষেরা উচ্চবর্ণীয়দের কাছে কোনোদিনই ভালো ব্যবহার পায়নি। তারা সকলেই চাষা এবং সে কারণে তুচ্ছ, এই ছিল তাদের পরিচয়। তবে নমশূদ্ররা নিজস্ব গোষ্ঠীবদ্ধতায় একসময় নিজস্ব জমি স্বশাসনে রেখে, সচ্ছল গার্হস্থ্যজীবনের সুখ ভোগ করতে সক্ষম হয়েছিল। মুসলমান সাধারণেরা আমাদের ওখানে বেশির ভাগই ভূমিহীন চাষি হিসেবেই জীবনযাপন করত। তাদের তেমন কোনো গোষ্ঠীবদ্ধতা বা সংহতি ছিল না যে তারা সাধারণ চাষি-গৃহস্থের মতো স্বাভাবিক সচ্ছলতার ভোগী হয়। ইসলাম এ দেশে কায়েম হওয়ার পরে তারা যখন সেই ধর্মে আশ্রয় নেয়, তখন শুধু ধর্মীয় সাম্যই তারা পেয়েছিল। অন্য কিছু নয়। এসবই শিকড়ের ঘুণের ব্যাপার। ব্রাহ্মণ্য ভেদাচারের প্রতি বিদ্বেষবশত তারা একদা বৌদ্ধ আশ্রয়ে গিয়েছিল। সেই আশ্রয়কে যখন ব্রাহ্মণ্যতা গ্রাস করে তখন ইসলাম তাদের ত্রাণের অঙ্গীকার দিয়েছিল। কিন্তু একসময় দেখা গেল তারাও ব্রাহ্মণ্যতার ভেদাচার রপ্ত করে তাদেরকে অন্ত্যজই করে রাখল। কিন্তু ধর্মের সাম্য নামক মাদকটি তাদেরকে সম্মোহিত করেই রেখে দিল অনির্দিষ্টকাল ধরে। আজও সেই মাদকের প্রভাব কাটেনি। পাকিস্তান কায়েম হবার পর এই মাদকতার তীব্রতা রাষ্ট্রীয় মদতে ব্যাপক প্রসার লাভ করলে তারা একটা রাস্তা অবশ্য পেয়েছিল। যদিও সেই রাস্তাই তাদের প্রকৃত মুক্তির পথ আদৌ ছিল না। আমার পিছারার খালের আশপাশের বিপর্যয়ের কারণ সেটিই। তারা ভেবেছিল এভাবেই হয়তো তাদের মুক্তি হবে, তারা জমি-জিরেত সাচ্ছল্য গার্হস্থ্য পাবে। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখেছি তা তারা পায়নি। তারা এখনও যেই তিমিরে সেই তিমিরেই।

হিন্দুদের জমি-জিরেত-বাগান পেয়েছিল তারাই, যাদের কিছু ছিল। যারা ভূমিহীন, তারা পায়নি, তারা তাদের শ্রম ব্যয় করেছিল, যেমন বহু আগের কাল থেকে তারা করে এসেছিল এখানের ভূমি হাসিল করার জন্য। হিন্দুদের পরিত্যক্ত ভূমি আবাদ করার কাজও তাদেরই করতে হয়েছে, তবে মালিক তারা হতে পারেনি। এরা সাময়িকভাবে কিছুটা বখরা পেয়েছিল, কায়েমিস্বত্ব কিছুই পায়নি।

পিছারার খালের ওই অঞ্চলের বিনষ্ট হওয়ার পেছনে দাঙ্গা, লুট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ব্যাপারের কোনো ভূমিকা ছিল না। ছিল এইসব সংঘটনের বিভীষিকা। গাজির কাজটি এ ব্যাপারে একদল স্বার্থান্বেষীর কাজেই লেগেছিল শুধু। আতঙ্কের কারণে দেশ ছেড়ে সবাই তখন পলায়মান। তাদের মনে ভীতি শুধু প্রাণের জন্য নয়। যদি মেয়েদের বেইজ্জত হতে হয়। তাদের যদি টেনে নিয়ে যায়। দাঙ্গা না ঘটিয়ে দাঙ্গার ভীতিকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থপূরণের কায়দা নিয়েছিল আমার পিছারার খালের প্রতিবেশী সম্পন্ন জালিম পরিবারগুলো। আমার এরকম মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে, যে দাঙ্গার জন্য যত হিন্দু পূর্ববাংলায় তাদের সম্পত্তি হারিয়েছে—তার থেকে অনেক বেশি সম্পত্তি বেহাত হয়েছে তাদেরই হাতে, যারা দাঙ্গাকারী নয় এবং বিপদে এখানকার হিন্দুদের ত্রাতার ভূমিকায় ছিল, তাদের কারুকার্যে।

দাঙ্গার বিষয়ে এসব পাঁচকাহন এ কারণে যে, বড় ইতিহাসকারেরা অনেক ব্যাপকতায় দেশভাগ এবং দাঙ্গাজনিত অনেক কাহিনি বলেছেন, লিখেছেন, ছবিতে ধরে রেখেছেন, এবং ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। কিন্তু তার বেশির ভাগই শহর নগর এবং বন্দরের কাহিনি। পিছারার খালের মতো জগতের কথা তাঁরা খুব কমই জানতেন এবং তাদের লেখাতেও তা স্থান পায়নি তেমন। আমরা যেমন তখন বাইরের খবর পেতাম না, বাইরের লোকেরাও আমাদের খবর জানত না। ছেচল্লিশের ষোলোই আগস্টের কলকাতায় ডাইরেক্ট অ্যাকশনজনিত দাঙ্গার খবর আমার স্মৃতিতে থাকার কথা নয়। পরে বড় হয়ে জেনেছি। তার পালটা কার্যক্রমে ঢাকা, নোয়াখালি এবং বিহারের দাঙ্গা বিষয়ে শোনা কথাই পুঁজি। কিন্তু সেসব ঘটনা আমার উজানিখালের জীবনকে স্তব্ধ করেনি বলে তখনও আমরা দিব্য ছিলাম। পঞ্চাশ-একান্নর দাঙ্গাই এখানে এক বীভৎস কাঁপন ধরিয়ে দিলে, প্রায় পাঁচশ বছরের পুরনো সামাজিক ভিতে ফাটল ধরল। এতকাল ভেদ-বিভেদ নিয়ে আমরা একটা বিকাশের স্তরে ছিলাম। হয়তো সেটা একটা সময় স্বাভাবিকক্রমে সাম্যে আসতেও পারত। কিন্তু দেশভাগের দুর্মর প্রহারে তা স্তব্ধ হয়ে গেল।

যা হোক, গাজির ঘটনা আর একটা জিনিস খুবই পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে দিল যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আর নিজেদের সংরক্ষণের শক্তি নেই। কোনো আকস্মিক আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করার ক্ষমতা তাদের নেই। যারা সামন্তবর্গী, তাঁরা হয়তো তাদের পাইক, লাঠিয়াল বরকন্দাজদের সাহায্যে কিছু করতেও পারেন, তবে সাম্প্রদায়িক বিভেদের জন্য সেইসব মানুষ সবসময় সঠিক ভূমিকা পালন করবে কি না, সে সন্দেহও থাকে। প্রসঙ্গত মনে পড়ে যে, দাঙ্গার শুরুতে আমার পিছারার খালের তীরবর্তী হিন্দু যুবকেরা একটি শান্তিবাহিনী তৈরি করেছিল। এদের মধ্যের কেউ কেউ পশ্চিমবঙ্গে চাকরিজীবী অথবা পড়ুয়া। কখনো-সখনো গ্রামে আসে ছুটিতে-পার্বণে। তারা আমাদের ছাতের ওপর প্রচুর ইট, কাচের ভাঙা বোতল, কিছু পুরনো ল্যাজা, রামদা, সুপারিগাছের বল্লম এবং কিছু লঙ্কা গুঁড়োর বস্তা জড়ো করে একটি আপৎকালীন প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, যেন আপৎকালে বাড়িটিকে দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করে তারা মহড়া নেবে আক্রমণকারীদের। কিছুকাল তারা রাত জেগে পাহারাদারি করল। তাতে লাভের মধ্যে হলো এই যে, গেরস্তবাড়ির ফলন্ত পেঁপের গাছসুদ্ধ কেটে, পাঁঠাখাসির খোঁয়াড় ভেঙে এবং পুকুর থেকে পালন্ত মাছ তুলে তাদের পাহারাদারির মাশুল উশুল করল। তারপর শহুরে চাকরিদারেরা ছুটির পর কর্মস্থলে প্রস্থান করলে সব চুপচাপ হয়ে গেল। এ সময় তারা গ্রাম পরিক্রমা করে চোঙা ফুঁইয়ে ধ্বনি দিত, দাঙ্গা চাই না, শান্তি চাই। হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই। কিন্তু তারা এই ধ্বনির মাধ্যমে শুধু তাদের হীনম্মন্যতা এবং অসহায়তাই প্রকট করত। তারা নিজেরাই হিন্দু-মুসলমান ভাই-ভাই এই তত্ত্বে আন্তরিক ছিল না। তাদের আদর্শে এবং বোধে কোনোদিনই এই ভাই-ভাই ব্যাপারটি বাস্তব ছিল না।

হিন্দুদের মধ্যে, যাদের পশ্চিমবঙ্গে কিছু সহায়-সম্পদ ছিল, অথবা যাদের ছেলেপুলেরা সেখানে চাকরি করত তাঁরা অচিরাৎ বসতবাটি, জমি-জিরেতের কিছু ব্যবস্থাপনা করে সেদিকে পাড়ি দিলেন। পরে, আমার মনে হয়েছে, ওই সময়কার স্লোগানগুলোই যেন প্রকারান্তরে এই কথা প্রকট করে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছিল, হিন্দু-মুসলমান আদৌ ভাই-ভাই নয়, আর দাঙ্গার বিভীষিকার জন্যই শান্তি চাই এই ধ্বনি।

আমার অভিজ্ঞতায় আমি যেমন দেখেছি, পরে ইতিহাসচর্চায়ও আমার এরকম বিশ্বাস জন্মেছে যে, যখনই আমাদের এই দুই সম্প্রদায় কাছাকাছি এসেছে, তখনই এক প্রবল আঘাত তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। নিতান্তই উদাহরণের জন্য আমি আউল-বাউল, দরবেশ-ফকির বা সুফিদের কথা, তাঁদের প্রয়াস এ ক্ষেত্রে ইঙ্গিত করছি। এই আঘাতকারীরা যে হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের, এ কথার সাক্ষী ইতিহাস। কিন্তু তথাপি বড় খালপারের মহাবৃক্ষ দুটি যেন আমাদের রক্ষা করছিলেন।

সকল অধ্যায়

১. বিষাদবৃক্ষ – ১
২. বিষাদবৃক্ষ – ২
৩. বিষাদবৃক্ষ – ৩
৪. বিষাদবৃক্ষ – ৪
৫. বিষাদবৃক্ষ – ৫
৬. বিষাদবৃক্ষ – ৬
৭. বিষাদবৃক্ষ – ৭
৮. বিষাদবৃক্ষ – ৮
৯. বিষাদবৃক্ষ – ৯
১০. বিষাদবৃক্ষ – ১০
১১. বিষাদবৃক্ষ – ১১
১২. বিষাদবৃক্ষ – ১২
১৩. বিষাদবৃক্ষ – ১৩
১৪. বিষাদবৃক্ষ – ১৪
১৫. বিষাদবৃক্ষ – ১৫
১৬. বিষাদবৃক্ষ – ১৬
১৭. বিষাদবৃক্ষ – ১৭
১৮. বিষাদবৃক্ষ – ১৮
১৯. বিষাদবৃক্ষ – ১৯
২০. বিষাদবৃক্ষ – ২০
২১. বিষাদবৃক্ষ – ২১
২২. বিষাদবৃক্ষ – ২২
২৩. বিষাদবৃক্ষ – ২৩
২৪. বিষাদবৃক্ষ – ২৪
২৫. বিষাদবৃক্ষ – ২৫
২৬. বিষাদবৃক্ষ – ২৬
২৭. বিষাদবৃক্ষ – ২৭
২৮. বিষাদবৃক্ষ – ২৮
২৯. বিষাদবৃক্ষ – ২৯
৩০. বিষাদবৃক্ষ – ৩০
৩১. বিষাদবৃক্ষ – ৩১
৩২. বিষাদবৃক্ষ – ৩২
৩৩. বিষাদবৃক্ষ – ৩৩
৩৪. বিষাদবৃক্ষ – ৩৪
৩৫. বিষাদবৃক্ষ – ৩৫
৩৬. বিষাদবৃক্ষ – ৩৬
৩৭. বিষাদবৃক্ষ – ৩৭
৩৮. বিষাদবৃক্ষ – ৩৮
৩৯. বিষাদবৃক্ষ – ৩৯
৪০. বিষাদবৃক্ষ – ৪০
৪১. বিষাদবৃক্ষ – ৪১
৪২. বিষাদবৃক্ষ – ৪২
৪৩. বিষাদবৃক্ষ – ৪৩
৪৪. বিষাদবৃক্ষ – ৪৪
৪৫. বিষাদবৃক্ষ – ৪৫
৪৬. বিষাদবৃক্ষ – ৪৬

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন