সৌভিক চক্রবর্তী
সাইকেলটা স্ট্যান্ড করেই ভাইঝি বলল, আজ একটা হারামিকে এমন চড় মেরেছি না, হারামজাদার পটকা ফেটে গেছে৷
আমরা হইহই করে উঠলাম, ভাইঝি বোসো বোসো৷ কেউ একজন উঠে বসতে দে না৷ এই নান্টু আর এক রাউন্ড চা দে৷ ভাইঝি বিস্কুট বলব? খাবে না? আচ্ছা তা হলে একটা কেক নাও অন্তত৷
খাতিরদারি দেখে আশা করি বোঝা যাচ্ছে ভাইঝি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ৷ আমাদের এই আড্ডায় আমরা ভাইঝির জন্য অপেক্ষা করে থাকি৷ ভাইঝি যেদিন আসে নান্টুর বিক্রি বেড়ে যায়৷
আমাদের এই সান্ধ্যকালীন ঠেকের ঠিকানা নান্টুর চায়ের দোকান৷ নেতাজিনগর মোড় থেকে বাঁ হাতে দুলকিচালে বিশ কদম হাঁটলেই নান্টুর দোকান৷ দোকানের পাশেই একটা ভাঙা বেঞ্চ এবং কয়েকটা চেয়ার জড়ো করে রোজ রাত আটটা-সাড়ে আটটা নাগাদ আমাদের আড্ডা জমে ওঠে৷ সবার আগে চলে আসে স্বপনদা৷ তারপর একে একে বাকিরা৷
স্বপনদা এসেই নান্টুর ওপর এক চোট হম্বতম্বি করে নেয়৷ তবে এমনি এমনি করে না৷ কারণ আছে৷ অত্যন্ত কুৎসিত চা বানায় নান্টু৷ বাজি রেখে বলতে পারি, সারা কলকাতা শহর ঢুঁড়ে ফেললেও এর থেকে খারাপ চা কোত্থাও পাওয়া যাবে না৷ আর সবচেয়ে দুঃখের কথা হল কুৎসিত চা বানালেও নান্টু সেটা মানতে চায় না৷ সে তার খারাপ চায়ের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেয় এবং বোঝানোর চেষ্টা করে ওই চা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী৷ তাই আমরা কেউই দু’-এক কাপের বেশি চা খাই না৷ কিন্তু ভাইঝি এলেই সেটা ন’-দশ কাপে গিয়ে দাঁড়ায়৷ নান্টুও তাই ভাইঝিকে আলাদা করে খাতির করে৷
চায়ে চুমুক দিয়ে ভাইঝি বলল, বুঝলে একেবারে পটকা ফাটিয়ে দিয়েছি৷
সুমনদা বলল, চড় দিয়ে ফাটালে?
হ্যাঁ কানচাপাটি৷
পটকা ফাটার শব্দ পেলে?
মাইরি৷ পুরো পট করে শব্দ হল৷
তা ভাল৷ কিন্তু চড় মারলে কেন ভাইঝি?
ভাইঝি সবিস্তারে ঘটনাটা বলল৷ তার সারসংক্ষেপ হল, ভাইঝি মেট্রো করে তার কোনও এক শাঁসালো ক্লায়েন্টের কাছে যাচ্ছিল৷ ভাইঝি একটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করে৷ বড় ক্লায়েন্টের কাছে যাওয়ার সময় সেজেগুজে যাওয়াই দস্তুর৷ তাই সে সদ্য ইস্তিরি করা শার্ট, প্যান্ট আর পালিশ করা ঝকঝকে জুতো পরেছিল৷ পাশে বসে একটা লোক ঢুলছিল আর থেকে থেকেই তার গায়ে পড়ে যাচ্ছিল৷ খুব বিরক্ত হলেও ভাইঝি চুপ করেই ছিল৷ কিন্তু লোকটা যখন তার চকচকে জুতো মাড়িয়ে দিল ভাইঝি আর ধৈর্য রাখতে পারেনি৷ লোকটাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলেছে, এক্ষুনি জুতো পালিশ করে দিন৷ না না কোনও অজুহাত শুনতে চাই না৷
লোকটা প্রথমে খুব ঘাবড়ে গেছিল৷ তার পর সরি চেয়েছিল এমনকী নিজের রুমালটা ভাইঝির দিকে বাড়িয়ে বলেছিল, ধুলোটা মুছে নিন৷
কিন্তু ভাইঝি নাছোড়৷ এক্ষুনি তার জুতো পালিশ করে দিতে হবে৷ এই দাবি শুনে মেট্রোর লোকজন হাসাহাসি করাতে ভাইঝির আরও রোখ চেপে গেছে৷ লোকটার কালীঘাট নামার কথা ছিল, ভাইঝি তারা জামা টেনে ধরে নামতে দেয়নি৷ এতে লোকটা ভাইঝিকে চোখ দেখিয়েছে আর তাতেই সে রেগে গিয়ে, আঁখ দিখাতি হ্যায় মাদারজাত, বলে কানচাপাটি দিয়ে লোকটার পটকা ফাটিয়ে দিয়েছে৷
আমরা ভাইঝির পিঠ চাপড়ে দিলাম৷ গোপাল জিকির দিল, যবতক সুরজ চাঁদ রহেগা… আমরা ধুয়ো দিলাম, ভাইঝি সেন কা নাম রহেগা৷ রঞ্জন দৌড়ে গিয়ে নান্টুর দোকানে বালক ব্রহ্মচারীর ফটোর মালাটা খুলে এনে ভাইঝিকে পরিয়ে দিল৷ স্বপনদা উঠে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বক্তৃতা শুরু করল, চড় মেরে পটকা ফাটানোর দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল৷ ভাইঝি সেনের বীরত্বে আজ সমস্ত নেতাজিনগরবাসী গর্বিত… ইত্যাদি ইত্যাদি৷ আবেগমথিত হয়ে নান্টু ভাইঝিকে একটা প্রণাম করার তাল করছিল৷ স্বপনদার চোখ দেখে সাহস পেল না৷
ভাইঝি আমাদের সবাইকে ডবল ডিমের অমলেট এবং আরও এক রাউন্ড চা খাওয়াল৷ ফাঁকতালে ভালই বাণিজ্য করে নিল নান্টু৷
ভাইঝি চলে যেতেই আমরা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লাম৷ আসলে ভাইঝি যা বলে তার সবটা সত্যি নয়৷ কিছুটা সত্যি আর কিছুটা কল্পনাপ্রসূত৷ এই পটকা ফাটানোর ঘটনাটাই যেমন, ভাইঝি জামা টেনে ধরে লোকটাকে নামতে দেয়নি এই পর্যন্ত সত্যি কিন্তু তার পরেরটা উল্টো৷ বরং লোকটাই রেগে গিয়ে ভাইঝিকে ঝেড়ে একটা থাপ্পড় কষিয়েছে৷ মার খেয়ে ভাইঝি চুপ করে গেছে তার পর ক্লায়েন্টের কাছে না গিয়ে সোজা বাড়ি চলে এসেছে৷ ছেলের গালে পাঁচ আঙুলের দাগ দেখে ভাইঝির মা চেঁচামেচি শুরু করেছিলেন৷ ভাইঝি তাঁকে গলা টিপে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চুপ করিয়েছে৷ ভাইঝিদের পাশের বাড়িতেই রঞ্জনের বোনের বিয়ে হয়েছে৷ ভাইঝির মা দুপুরে তার কাছে আইসব্যাগ চাইতে গেছিলেন৷ বিকেলে ভাগ্নেকে রংপেনসিল কিনে দিতে গিয়ে রঞ্জন তার বোনের কাছ থেকে সবই শুনে এসেছে৷
প্রথম প্রথম আমরা খুব ক্ষেপে যেতাম৷ ভাইঝি একদিন এসে বলেছিল, আমার মেসোর এত হাই প্রেশার যে প্রেশার মাপতে গিয়ে মেশিনের পাম্পটাই ফেটে গেছে৷ পরে জানা গেল, পাম্পটায় গোলমাল ছিল৷ সেটা সত্যিই ফেটেছে৷ কিন্তু ডাক্তার ভাইঝির মেসোকে লো প্রেশারের ওষুধ দিয়েছে৷
আমরা বলেছিলাম, গুলবাজটাকে আর আড্ডায় বসতে দেব না৷
সুমনদা আমাদের ভ্রম সংশোধন করে দিয়েছিল, ওরে ভাইঝি গুল দেয় না৷ ও যা বলে তা সত্য৷ কিন্তু অর্ধসত্য৷ আর ওর কথা শুনে মজা পাস কি পাস না?
মজা যে পাই তা খুব সত্যি৷ তাই আমরা ভাইঝির অর্ধসত্যগুলোকে মেনে নিতে শুরু করলাম এবং নিজেদের অজান্তেই কখন যেন সেগুলোর ভক্ত হয়ে উঠলাম৷ পরপর দু-তিনদিন ভাইঝির বাণী না শুনলে এখন আমাদের রাতে ঘুম আসতে চায় না৷ তা ছাড়া অর্ধসত্য শুনে অবাক হওয়ার ভান করলে কিংবা বাহবা দিলে অমলেট, কেক এসব তো আছেই৷ মিথ্যে কথা বলব না, অমলেটটা ভালই বানায় নান্টু৷
একদিন সন্ধেবেলা ভাইঝি হঠাৎ আমাদের সবার হাতে একটা করে কার্ড ধরিয়ে দিল৷ সে একেবারে ঝকঝকে কার্ড৷ খাম খুলে আমরা কার্ডের বয়ান দেখে ভেবলে গেলাম৷ কার্ডে লেখা, প্রজাপতির অভিরুচিতে আমার কনিষ্ঠ পুত্র কল্যাণীয় বিপ্লব সেন বাঁশদ্রোণী নিবাসী শ্রী পরিমল সাহার একমাত্র কন্যা কল্যাণীয়া ঊর্মিলার সহিত শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হবে… পত্রদ্বারা নিমন্ত্রণের ত্রুটি মার্জনা করিবেন৷ বিনীত শ্রী অর্ধেন্দু সেন৷
আমরা বললাম, কার বিয়ে ভাইঝি?
অভিমান ভরে ভাইঝি বলল, কার আবার? আমার৷ নাম লেখা আছে দেখতে পাচ্ছ না?
ভাইঝির ভাল নাম যে বিপ্লব সেটা আমাদের মনে ছিল না৷ মনে থাকবেই বা কী করে? দুনিয়াশুদ্ধু লোক তো বটেই, ভাইঝির বাবা-মা পর্যন্ত তাকে ভাইঝি বলেই ডাকেন৷ এমন একটা ডাকনাম যে সে কোথা থেকে জুটিয়েছিল কে জানে?
আমরা প্রথমটায় স্তম্ভিত হয়ে গেছিলাম৷ ভাইঝির বিয়ে! ব্যাপারটা যেন বিশ্বাস হতে চাইছিল না৷ তবে চোখের সামনে এমন প্রমাণ দেখে বিশ্বাস না করাও শক্ত৷ আমাদের চুপ করে যেতে দেখে ভাইঝিও খানিক অপ্রতিভ হয়ে পড়েছিল৷ পরিবেশটা হালকা করে দিল রঞ্জন৷ সে ভাইঝির সামনে গিয়ে মুখের কাছে হাত তুলে প্যাঁ প্যাঁ করে সানাই বাজাতে শুরু করল৷ আমরাও হইহই করে উঠলাম৷
চায়ে চুমুক দিয়ে স্বপনদা বলল, মেয়ে কী করে ভাইঝি?
বিউটি পার্লারে কাজ করে৷ ট্রেনিং আছে৷
বাঃ৷ যোগাযোগ হল কী ভাবে?
কাগজে অ্যাড দেখে৷
দেনাপাওনা কেমন হচ্ছে?
তিন লাখ ক্যাশ চেয়েছি৷ আর যা দেবে দেবে, না দেবে না দেবে৷ ওদের খুশি৷ কিন্তু একেবারে কিছু না চাইলে পেয়ে বসবে৷ তাই তিন চাইলাম৷
কোথাও কিছু নেই আমাদের সবার একসঙ্গে কাশি পেল৷ তিন লাখের গল্পটা অর্ধসত্য৷ এখন আমরা ভাইঝির অর্ধসত্যগুলো বুঝতে পারি৷
স্বপনদা বলল, সে ভাল করেছ৷ তোমার মতো জুয়েল ছেলে পাচ্ছে৷ না হে তিন লাখটা বড় সস্তা হয়ে গেল৷
ভাইঝি সস্তার ব্যাপারটায় পাত্তা না দিয়ে বলল, তাও আমার জেঠারা ভাঙচি দিয়েছিল৷ কী বলেছে জানো? বলেছে আমরা না কি তারকাটা৷ এসব শুনে মেয়ে গাঁইগুই করছিল৷ কিন্তু আমার বাবার কম সম্পত্তি বলো? মেয়েমানুষ কি আর গয়নাগাঁটির লোভ ছাড়তে পারে? রাজি হতে বাধ্য৷ তা একবার ঘরে তুলি গাঁইগুই করা বের করে দেব৷ আমাকে তো চেনে না৷ বিষ ঝেড়ে দেব একেবারে৷
আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম৷ ভাইঝি চলে যাওয়ার পর সুমনদা বলল, অর্ধসত্য৷ যা বলল সেটাও অর্ধসত্য হবে৷ তোরা মিলিয়ে নিস৷ হেনস্থা একজন হবে৷ তবে সেটা ভাইঝি৷ মেয়েটার হাতে ভাইঝির উস্তুমকুস্তুম হচ্ছে এ যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি৷ বিয়ে-থা না করলেই পারত৷ আর যাই হোক ভাইঝি ছেলে ভাল৷ মনটা নরম৷ কষ্ট পাবে৷ যাকগে কী আর করা যাবে? গু যে মানুষ আয়োজন করেই খায় এ তো আমি নিজেকে দিয়েই বুঝি৷ না উঠি, বউয়ের অনেকগুলো ফরমায়েশ আছে৷
ধুমধাম করে ভাইঝির বিয়ে হয়ে গেল৷ ভাইঝির বউ দেখে আমরা খুবই অবাক হয়ে গেলাম৷ দারুণ সুন্দর বউ৷ বউয়ের পাশে ভাইঝিকে অবিকল কলোবাস বাঁদরের মতো দেখাচ্ছে৷ ভাইঝি এরকম একটা বোমা তুলে ফেলেছে দেখে আমাদের একটু হিংসেই হল৷ ভাইঝি কোঁচা দুলিয়ে তদারক করছিল বটে কিন্তু তাকে দেখে বেশ ক্লান্ত লাগল৷ এমনটা তো হওয়ার কথা নয়৷ ফুলশয্যার সন্ধ্যায় জোয়ান ছেলে তাগড়া ঘোড়ার মতো দৌড়ে বেড়াবে তবেই না৷
আমি, রঞ্জন আর গোপাল শেষ ব্যাচ পর্যন্ত বসে ছিলাম৷ সব শেষ করে বেরিয়ে আসছি ভাইঝি হঠাৎ পথ আটকে দাঁড়াল, কোথায় চললে সব?
আমরা তো অবাক, কোথায় চললে মানে? বাড়ি যাচ্ছি৷ তুমি যাও ভাইঝি৷ বউয়ের সঙ্গে গল্পগাছা করো৷
ভাইঝি ফিসফিস করে আমাকে বলল, চলে যাস না দোস্ত৷ আমার কেমন যেন নার্ভাস লাগছে৷ তুই থেকে যা আমার সঙ্গে৷ ওদেরও থাকতে বল৷ বসে একটু বিড়িটিড়ি খাবি৷ চল না৷
ফুলশয্যার রাতে নবদম্পতির জন্য সাজানো বিছানার ওপরে বসে বরের বন্ধুরা ফকফক করে বিড়ি খাচ্ছে, দৃশ্যটা যতটাই অবাস্তব ততটাই কুৎসিত৷ পৃথিবীর কোনও সভ্য সমাজ এ জাতীয় ঘটনা অনুমোদন করে না৷ ভাইঝিকে কোনওরকমে বুঝিয়ে আমরা পালিয়ে এলাম৷ ভাইঝির দাম্পত্য জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সেদিন যে আমাদের একটু সংশয় হয়নি তা নয় কিন্তু সুমনদার ভবিষ্যদ্বাণী যে এমন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবে তা আমরা কল্পনাও করিনি৷
এর মধ্যে মাস আটেক কেটে গেছে৷ ভাইঝি আমাদের আড্ডায় আসা প্রায় ছেড়ে দিয়েছে৷ খারাপ লাগলেও মেনে নিয়েছি৷ অমন আগুনের খাপরা বউ ছেড়ে আমাদের শ্রীবদন দেখতে আসার সত্যিই কোনও সঙ্গত কারণ নেই৷ রঞ্জন তার বোনের কাছ থেকে শুনে এসেছে, ভাইঝি বউ অন্তপ্রাণ৷ বউকে না কি ভক্তিশ্রদ্ধাও করে খুব৷
কিন্তু হঠাৎই একদিন ঝড়ের মতো এসে উপস্থিত হল ভাইঝি৷ সাইকেলটা স্ট্যান্ড করেই বলল, সোজা ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছি বুঝলে৷ আমার সঙ্গে চালাকি? দিয়েছি ধুদ্ধুড়ি নেড়ে৷
অনেকদিন পর খোরাকের গন্ধ পেয়ে আমরা হইহই করে উঠলাম, ভাইঝি বোসো বোসো৷ কেউ একজন উঠে বসতে দে না৷ এই নান্টু আর এক রাউন্ড চা দে৷ ভাইঝি বিস্কুট বলব? খাবে না? আচ্ছা তা হলে একটা কেক নাও অন্তত৷
চায়ে চুমুক দিয়ে ভাইঝি বলল, একেবারে ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছি বুঝলে৷
সুমনদা বলল, কাকে বের করে দিলে ভাইঝি?
ভাইঝি বলল, আমার বউকে৷ মেয়েমানুষের রোয়াব ভাইঝি সেন সহ্য করে না৷
আমরা স্তম্ভিত হয়ে গেলাম৷ বলে কী ভাইঝি? বউকে বের করে দিয়েছে? গত হপ্তাহেই তো বউয়ের পেছু পেছু একগাদা ব্যাগ হাতে নিয়ে শপিং করে ফিরছিল৷ আমার সঙ্গে দেখা হওয়ায় প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেল৷ তার পর না চেনার ভান করে বউকে টপকে হন হন করে হাঁটা দিল৷ ভাইঝির বউই বরং আমাকে দেখে হাসল৷ বলল, কেমন আছেন? আমি আড্ডায় এসে ভাইঝিকে ‘বিপিবিসি’ (বউ পোন্দা ব্যাটাছেলে) বলে কত খিস্তি করলাম৷ নাঃ, ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য মনে হল না৷ আমি বললাম, এই ভাইঝি ঠিক করে বল কী হয়েছে?
ভাইঝি ফুঁসে উঠল, ঠিক করে বলার কী আছে? ধরে ফেলেছি একেবারে হাতে নাতে৷ আমার চোখকে ফাঁকি দেওয়া অত সোজা নয়৷ তাই বলি সারাদিন টুকুস টুকুস করে এত হোয়্যাটসঅ্যাপ করার কী আছে? ও মেয়ের চরিত্র ভাল না৷ বিয়ের আগে তিনটে ছেলের সঙ্গে লাভ অ্যাফেয়ার ছিল৷ এখন নতুন কাউকে একটা ধরেছে৷ জানতে পেরে সোজা বের করে দিয়েছি৷ সে এখন বাপের বাড়ি বসে ঘুনঘুন করে কাঁদছে৷ পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবে তবে আমি ঘরে তুলব৷ তোমরা সব সাক্ষী রইলে৷ ভাইঝি সেনের সঙ্গে চালাকি করেছ কি মরেছ৷
বীরদর্পে সাইকেল চালিয়ে চলে যাচ্ছে ভাইঝি৷ কিন্তু তাকে কেমন যেন কুঁজো কুঁজো দেখাচ্ছে৷
দিনকয়েক পরে ভাইঝির মা সুমনদার কাছে এসে খুব কান্নাকাটি করলেন, ছেলেটার পুরো মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷ তোমরা ওকে একটু বোঝাও৷ অফিস-টফিস যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে৷
ব্যাপারটা বোঝা গেল, ভাইঝি মোটেও তার বউকে বের করে দেয় নি৷ বউ নিজেই চলে গেছে৷ এমনি এমনি যায়নি৷ যাওয়ার আগে বলে গেছে, ছেলে তারকাটা৷ ছেলে পাগল৷ সারাক্ষণ পেছনে আঠার মতো সেঁটে থাকে৷ মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে বউয়ের মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে কী যেন দেখে৷ তিন-চারবার ঘুম ভেঙে ওই দৃশ্য দেখে বউ খুবই ভয় পেয়ে গেছে৷
এই পর্যন্ত হলে তাও ঠিক ছিল৷ কিন্তু ভাইঝির বউ এখানেই থেমে থাকেনি৷ সে একেবারে আটঘাট বেঁধেই নেমেছে৷ সে ডিভোর্স চেয়েছে, সঙ্গে খোরপোষশও৷ ভাইঝির বাড়ি থেকে পাল্টা কেস করতে বলেছিল কিন্তু অনেক বুঝিয়েও ভাইঝিকে রাজি করানো যায়নি৷ সে জেদ ধরে বসে আছে, কিছুতেই বউয়ের বিরুদ্ধে কিছু করবে না৷ বউ যা চাইবে দিয়ে দেবে৷
মাথা নিচু করে ভাইঝি হাঁটছিল৷ আমাকে দেখেই যেন চমকে উঠল৷ আমি হাত ধরে টানলাম, এদিকে আয় কথা আছে৷
ক্লান্ত গলায় ভাইঝি বলল, বল৷
রোজ রোজ বউয়ের বিউটিপার্লারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস কেন?
কই? দাঁড়াই না তো৷
মিথ্যে কথা বলিস না৷ তোর বউ তো তোর দিকে ফিরেও তাকায় না৷ বেরিয়ে গটগট করে চলে যায়৷ আমি সব শুনেছি৷ তুই যাস কেন? তোর মান-সম্মান নেই?
ভাইঝি কথা বলে না৷ মাথা নিচু করে থাকে৷ আমি বলি, তুই কেন খোরপোশ দিবি? তুই বরং ওর এগেনস্টে অ্যাডাল্টরির মামলা কর৷
পারব না রে দোস্ত৷
কেন?
ওকে কিছু বলতে গেলেই ওর ঘুমন্ত মুখটার কথা মনে পড়ে৷ ঘুমোলে ওকে বড় সুন্দর লাগে৷ দেখে দেখে আশ মিটত না৷
আমি খিঁচিয়ে উঠলাম, তাই বলে রাতে উঠে ভূতের মতো তাকিয়ে থাকবি? বেশ করেছে তোকে ছেড়ে চলে গেছে৷
ভাইঝি একটু গা ঝাড়া দিয়ে বলল, আরে রাগ করেছে৷ রাগ পড়লেই চলে আসবে৷ তোরা সবাই বাড়াবাড়ি করছিস৷
চলে আসবে তো ডিভোর্স চাইছে কেন রে ছাগল?
চাচ্ছে চাক না৷ ডিভোর্স দিলে পুরো ছাড়াছাড়ি হবে৷ তখনই তো বুঝবে কী জিনিস হারিয়েছে৷ দেখবি সুড়সুড় করে এসে পায়ে পড়বে৷
আমি হতাশায় ডুবে গেলাম৷ এ পাগলকে কে বোঝাবে৷ বললাম, চল চা খাই৷
ভাইঝি হঠাৎ উৎসাহিত হয়ে বলল, তবে আজ একটা দারুণ কাজ করে ফেলেছি৷ কেসটা মোটামুটি সালটে দিয়েছি বলতে পারিস৷
আবার কী করলি?
আমার বউ কার সঙ্গে প্রেম করছে জানিস তো?
না৷ কে?
ছেলেটা ওদের পাড়াতেই থাকে৷ মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ৷ নাম সুনন্দ৷ আজ তাকে এমন থ্রেট দিয়েছি যে ভয়ে তার বিচি শর্ট হয়ে গেছে৷
আমি অবাক হতেও ভুলে গেলাম৷ কিছুক্ষণ ভাইঝির মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম৷ আমাকে থতিয়ে যেতে দেখে ভাইঝি যেন খানিক আশ্বস্ত হল৷ আমার সব হিসেব গোলমাল হয়ে যাচ্ছিল৷ তবু তাকে খুশি করার জন্য বললাম, বেশ করেছিস থ্রেট দিয়েছিস৷ বউ তো তোর৷ ঠিক করেছিস৷ ফাটিয়ে দিয়েছিস৷
ভাইঝি খুশি হয়ে আমাকে জোর করে দু’টো বেগুনি খাওয়াল৷ বেগুনি ঠান্ডা হয়ে গেছিল৷ অম্বলে আমার গলা বুক জ্বলতে লাগল৷
সুনন্দকে আমি চিনি৷ চিনি বললে কম বলা হয়৷ খুব ভাল করে চিনি৷ সুনন্দের মতো ছেলে হয় না৷ সে পেট চালাতে মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ হয়েছে৷ আসলে কিন্তু শিল্পী৷ দারুণ ছবি আঁকে৷ যেমন সুন্দর দেখতে, তেমন সুন্দর স্বভাব৷ অ্যাকাডেমিতে একটা একজিবিশনে গিয়ে আলাপ হয়েছিল৷ তখনই সে বলেছিল, দাদা আমি আপনাদের বাড়ির কাছেই থাকি৷ বাঁশদ্রোণীতে৷ একদিন আসুন না৷ ছবি দেখাব৷
ছবি দেখতে গেছিলাম৷ খুব ভাল রঙের ব্যবহার৷ আমার কিছু চেনাশোনা ছিল৷ ওর একটা সোলো একজিবিশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম৷ খুব খুশি হয়েছিল সুনন্দ৷ নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলেও সে মাঝে মাঝেই আমাকে ফোন করে৷ সুনন্দর মতো একটা ছেলে কেন ভাইঝির বউয়ের পাল্লায় পড়ল এটা ভেবে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম৷
বাড়ি ফিরেই ফোন করলাম সুনন্দকে, তুমি ভাইঝিকে চেনো?
আগে চিনতাম না দাদা৷ দিন কয়েক হল চিনেছি৷
তুমি পুরো ব্যাপারটা জানো তো?
জানি দাদা৷
তা হলে?
লোকটা শুনেছি পাগল৷ তা ছাড়া আমি সত্যিই খুব ভালবেসে ফেলেছি ঊর্মিলাকে৷ আমার খারাপ লাগছে না তা নয়৷ কিন্তু কী করব বলুন তো?
তোমার কী মনে হয় ভাইঝি পাগল?
হ্যাঁ দাদা৷ আজকেই সন্ধেবেলা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল৷
শুনলাম৷ তোমাকে থ্রেট করেছে?
কই না তো৷ আমি তো ভেবেছিলাম থ্রেট দিতেই এসেছে৷ কিন্তু রাস্তার একপাশে নিয়ে গিয়ে আমাকে বলল, ঊর্মিলা চিংড়ি মাছ দিয়ে কচুর লতি খেতে ভালবাসে৷ আর পার্শে মাছ৷ তার পর আমার হাত দু’টো ধরে বলল, ওর খেয়াল রেখো৷ ঠিক মতো যত্নআত্তি কোরো৷ একে পাগল ছাড়া কী বলব বলুন?
আমি চুপ করে রইলাম৷ সুনন্দ বলল, ডিভোর্সের ঝামেলা মিটে গেলে আমি ঊর্মিলাকে বিয়ে করব৷ আপনি কিছু মনে করেননি তো? আমি জানাব আপনাকে৷ আসতে হবে কিন্তু৷
এর মধ্যে আরও বছর খানেক কেটে গেছে৷ ভাইঝির ডিভোর্স হয়ে গেছে৷ ভাইঝির মন মেজাজ এখন আগের থেকে অনেক ভাল৷ প্রায় নিয়মিতই আড্ডায় আসছে এবং মাঝে মধ্যেই কিছু অর্ধসত্য বলে আমাদের মনোরঞ্জন করছে৷ কিন্তু হঠাৎই একদিন একটা কাণ্ড হল৷ আমরা নান্টুর কুৎসিত চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখনই সুনন্দ ফোন করে জানাল, সামনের মাসে ওর আর ঊর্মিলার বিয়ে৷ খবরটা পেয়ে আমি সবাইকে জানালাম৷ ভেবেছিলাম, ভাইঝি ব্যাপারটাকে সহজ ভাবে নেবে কিন্তু বিয়ের কথাটা শুনেই ভাইঝির চোখ-মুখের চেহারা বদলে গেল৷ সে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে বলল, ও বিয়ে করছে?
ভাইঝির হাবভাব দেখে আমরা সবাই খুব ঘাবড়ে গেলাম৷ সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বোমার মতো ফেটে পড়ল, বিয়ে করবে? কিছু বলি না বলে খুব মজা পেয়ে গেছে তাই না? ওই বিয়ে আমি হতে দেব না৷ কিছুতেই হতে দেব না৷
সুমনদা ভাইঝিকে ধরে বলল, শান্ত হও৷ শান্ত হও৷ মাথা ঠান্ডা করো৷
সুমনদাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে ভাইঝি বলল, এখনও সে ভাইঝি সেনকে চেনেনি৷ আমি তোমাদের বলে রাখলাম, বিয়ে আমি ভেস্তে দেব৷ দশতলা থেকে রাস্তার ওপর আছাড় দিয়ে পড়ব৷ আছাড় খেয়ে সুইসাইড করব৷ এই দ্যাখো এই ভাবে পড়ব৷
ভাইঝি রাস্তায় শুয়ে পড়ল৷ শুয়ে শুয়েই চিৎকার করতে লাগল, এই দ্যাখো ডান পা এই ভাবে বেঁকে যাবে৷ ডান হাতটা ঢুকে যাবে বুকের তলায়৷ মাথা ফেটে ঘিলু বেরিয়ে আসবে৷ গ্যালগ্যালে রক্ত মাখা ঘিলু৷ প্যান্টে হাগা হয়ে যাবে৷ রক্ত হাগা হবে৷ আর একটা চোখ ছিটকে বেরিয়ে যাবে৷ কিন্তু সেটা কেউ খুঁজে পাবে না৷ কুত্তায় নিয়ে পালাবে৷ তখন ওকে খবর দিও৷ ও আসবে৷ নির্ঘাৎ আসবে৷ এসে কাঁদতে কাঁদতে পাগল হয়ে যাবে৷ পাগলকে তখন কে বিয়ে করবে? বের করছি ওর বিয়ে করা৷
ভাইঝি হাঁপাতে লাগল৷ তার ঠোঁটের কষে রাস্তার ধুলো লেগেছে৷ তাকে কোনও মতে তুলে বসিয়ে চোখে, মুখে, মাথায় জল দিলাম৷ স্বপনদা হাওয়া করতে শুরু করল৷ কিছুক্ষণ পর ভাইঝি ধাতস্থ হল৷
সুমনদা বলল, ভাইঝি ঠিক আছ?
ভাইঝি মাথা নাড়ল৷ তার পর বলল, সরি৷ হঠাৎ মাথা গরম হয়ে গেছিল৷ কিছু মনে কোরো না তোমরা৷
সুমনদা বলল, যা রঞ্জন ভাইঝিকে বাড়ি অবধি ছেড়ে দিয়ে আয়৷
ভাইঝির পাগলামোর দৃশ্যটা মনে পড়ে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল৷ বদ্ধ পাগল না হলে কেউ নিজের মৃত্যু ওরকম ভাবে অভিনয় করে দেখায়? বাপরে বাপ৷ আর কী সব বলছিল! কী ভয়ানক দৃশ্য! কী ভয়ানক অভিশাপ! ভালই করেছে বউটা পালিয়েছে৷ আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, সুমনদা কিছু হবে না তো?
সুমনদা বলল, ছাড় তো৷ ভাইঝি রাম ভীতু৷ এতক্ষণে দেখ ডাল আর বেগুনভাজা দিয়ে ভাত খেয়ে ঘুম দিচ্ছে৷ আর দশতলা বাড়ি পাচ্ছে কোথায়? ওদের বাড়িটা তো আড়াইতলা৷ শোন যারা বলে সুইসাইড করব তারা কখনওই করে না৷ ও সব বলে কয়ে করার জিনিস নয়৷
নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি চলে এলাম৷
রাত দেড়টা নাগাদ লেখালিখি শেষ করে শুতে যাব রঞ্জন ফোন করল, শিগগিরি আয়৷ ভাইঝি সুইসাইড করেছে৷ ওদের বাড়ির পাশের অ্যাপার্টমেন্টের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে৷
আমার হাত পা কাঁপতে লাগল৷ কোনওমতে জামাটা গায়ে চড়িয়ে রাস্তায় নেমে এলাম৷ কীভাবে ভাইঝির বাড়ি অবধি পৌঁছেছি মনে নেই৷ ততক্ষণে বেশ ভিড় জমে গেছে৷ কয়েকজন খুব কাঁদছে৷ ভিড় সরিয়ে দেখলাম, ভাইঝি উপুড় হয়ে পড়ে আছে৷ তার ডান পা বেঁকে গেছে৷ উপুড় হয়ে পড়ায় একটা হাত বুকের তলায় ঢুকে গেছে৷ মাথাটা ডান কাত হয়ে ফেটেছে৷ রক্তমাখা ঘিলু ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তা জুড়ে৷ প্যান্টটা নোংরা হয়ে গেছে৷ আর একটা চোখ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ মাথাটা ফাটার ধাক্কায় চোখটা ছিটকে পড়েছিল বাইরে৷ একটা কুকুর মুখে নিয়ে পালিয়েছে৷ অ্যাপার্টমেন্টের দারোয়ান কুকুরটাকে ধাওয়া করছিল৷ ধরতে পারেনি৷
ভাইঝির বউকে খবর দেওয়া হল৷ শেষ কথাটা অনেকটা ঠিকঠিক বললেও সবটা মেলাতে পারল না ভাইঝি৷ সেই অর্ধসত্যই হল৷ খবরটা শুনে ফোন কেটে দিল ঊর্মিলা৷
ঊর্মিলা আসেনি৷ ভাইঝির জন্য কেঁদেছিল কি না তাও জানা নেই৷ তবে সুনন্দ এসেছিল৷ ডেথ সার্টিফিকেট থেকে পোস্টমর্টেম সারাদিন আমাদের সঙ্গে ছিল৷ সৎকার হয়ে যাওয়ার পরও শ্মশানে বসে রইল চুপচাপ৷ আমি বললাম, যা হওয়ার হয়ে গেছে সুনন্দ৷ বাড়ি চলো৷
সুনন্দ বলল, আপনারা যান দাদা৷ আমার ভাল লাগছে না৷ আমি একটু বসি৷ পরে যাব৷
দেখলাম তার চোখে টলটল করছে জল৷ বড় মায়া হল ছেলেটার জন্য৷
দশ-বারো দিন পর খবর পেলাম সুনন্দ বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে৷ তাকে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছে৷ আমি দেখতে গেলাম৷ ঘরের জানালা খোলা ছিল৷ দেখলাম, খালি গায়ে একটা বারমুডা পরে মেঝেতে বসে ছবি আঁকছে সুনন্দ৷ এ ক’দিনে অনেকটা রোগা হয়ে গেছে৷ দাড়ি বেড়েছে৷ চোখ দু’টো অস্বাভাবিক রকমের জ্বলজ্বল করছে৷ বড় সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে৷ আমি কয়েকবার ডাকলাম, সে সাড়া দিল না৷ দেখলাম, সারা ঘর জুড়ে সে ছবি এঁকেছে৷
সবই কুকুরের ছবি৷ কুকুরগুলো দৌড়ে পালাচ্ছে৷ তাদের সবার মুখে একটা করে মানুষের চোখ৷
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন