দুধ পাহাড় দধিসায়র – প্রেমেন্দ্র মিত্র

দুধ পাহাড় দধিসায়র – প্রেমেন্দ্র মিত্র

অনেক কাল আগের কথা।

কত কাল জিজ্ঞেস করলে কিন্তু বলতে পারব না। তারিখ সাল জানতে হলে, ইতিহাসের পণ্ডিতের কাছে যেতে হবে।

মোট কথা, তখন পরী-হুরীদের যেখানে-সেখানে দেখা যেত। রাক্ষস-খোক্ষসেরা বনে-জঙ্গলে ভয় দেখাত। আর গহন বন কী তেপান্তর পেলেই ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী সেখানে গাছে বাসা বেঁধে বাউণ্ডুলে রাজপুত্রদের ভাল-ভাল মতলব দেবার জন্যে বসে থাকত।

রাজপুত্ররাও তখন কথায়-কথায় পক্ষিরাজে চড়ে দেশ-বিদেশ ঘুরতে বেরুত।

কিন্তু রাজপুত্র হলেই তো হয় না। দুবিঘে, দুকাঠা হোক—রাজ্য চাই। ছেঁড়া-খোঁড়া হোক—জরি মখমলের পোশাক চাই। মরচে-ধরা ভাঙা হোক—তলোয়ার একটা চাই। আর কানা হোক খোঁড়া হোক একটা পক্ষিরাজ হলে ভাল হয়। তার ওপর তিনবন্ধু—মন্ত্রীপুত্র, কোটালপুত্ৰ, সদাগরপুত্র হলে তো কথাই নেই।

আমাদের রাজপুত্র খুদকুমারের কিন্তু সে-সব কিছুই নেই।

রাজ্য ছিল, কিন্তু মন্ত্রীমশাই কুমতলব দিয়ে সেটিকে লাটে তুলেছেন। কোতল করবার মানুষ না পেয়ে কোটাল গেছেন ভিন-রাজ্যে চাকরি খুঁজতে, আর সদাগর লোকসানের ব্যবসা গুটিয়ে দোকান-পাট তুলে নিয়ে কোথায় গেছেন কেউ জানে না।

তাঁরাই নেই তো তাঁদের পুত্ররা আর থাকবে কোথায়? তাই রাজপুত্র একা-একা মনের দুঃখে কুঁড়েঘরের আশে-পাশে ঘুরে বেড়ায়। আর আকাশ যেখানে দূর পাহাড়ের পেছনে নুয়ে পড়েছে সেইদিকে তাকিয়ে তার চোখ ছলছল করে।

খুদকুমারের বড় সাধ, দেশ-ভ্রমণে যাবে। কিন্তু সাধই আছে, সাধ্য কোথায়? তবু দুখিনী মার আশীর্বাদ নিয়ে খুদকুমার একদিন বেরিয়ে পড়ল।

রাজ-পোশাক নেই, ছেঁড়া জামা মা দিয়েছেন সেলাই করে। তলোয়ার নেই, ফলা-ভাঙা ছুরিটা আছে ট্যাকে গোঁজা। পক্ষিরাজ নেই, রোঁ-ওঠা একটা রাস্তার কুকুর শুধু পেছু-পেছু চলেছে কিসের টানে সে-ই জানে। যাবার সময় মা শুধু চিঁড়ে-মুড়ি বেঁধে দিয়েছেন পথে খেতে, আর মনে রাখতে দিয়েছেন একটি শোলোক—’কান পাতবে বনে, শত্রুর মারবে মনে।’

মাঠ বন পেরিয়ে যায় খুদকুমার! খেয়ার কড়ি নেই, নদী-নালা পার হয় সাঁতরে। রোঁ-ওঠা কুকুরটা যায় সঙ্গে।

সূর্যি ডোবে যেখানে, সেখানে গহন অরণ্যে গিয়ে খুদকুমার থামে।

গাছের ডালে নিজের জায়গা করে নেয়, কিন্তু কুকুরটা থাকবে কোথায়?

কুকুরের ভাবনা ভাবতে হয় না। দেখা যায়, গাছের কোটরে ছেঁড়া লতা-পাতায় সে বেশ আরামে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়েছে।

রাত বাড়ে। গাছপালা অন্ধকারে একাকার হয়ে যায়। ঘন ডালপালা লতা-পাতার ফাঁকে একটা দুটো তারা যেন ভয়ে ভয়ে এক-আধবার উঁকি দেয়।

খুদকুমারের চোখে ঘুম নেই। একপহর, দুপহর, তিনপহর রাত কেটে যায়।

হঠাৎ খুদকুমারের কান খাড়া হয়ে উঠল। গাছের মাথায় যেন হাওয়ার শিস্!

হাওয়ার শিস্ না কাদের ফিস্ ফিস্?

ফিস্-ফিস্ই তো বটে?

‘বুক যে ফেটে গেল গো!’ কে যেন বলছে।

‘ফাটুক তবু রা না শুনি!’ কার যেন ধমক।

আবার খানিকক্ষণ চুপচাপ!

খুদকুমার তবু যেন শুধু দুটি কান হয়ে আছে।

আবার সেই ফিস্-ফিস্, ‘আর যে পারি না!’

তার জবাবে, ‘না পারিস তো মর্ না।’

আগেরটা যেন মেয়ে আর পরেরটা যেন পুরুষের গলা।

এরা আবার কারা?

ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী নয় তো?

হ্যাঁ, তাতে আর ভুল নেই। খানিক বাদেই ডানা ঝট-পট ক’রে ব্যাঙ্গমী শুধোয় ফিস্-ফিসিয়ে, ‘আচ্ছা সব না হয় একটু!’

‘একটু কেন সবই বল।’ ব্যাঙ্গমা এবার রেগে গলা ছেড়ে দেয়, ‘আর না বলেই-বা করবি কী? যেমন আমাদের কপাল! কত খুঁজে-পেতে এসে বাসা বাঁধলাম, কত নিশুতি রাত জেগে কাটালাম। কোথায় হেন-রাজপুত্তুর ঝলমলে সাজে, পক্ষিরাজে আসবে। আশ মিটিয়ে পেটের কথা বলব, শুলুক সন্ধান দেব। না, কোথাকার এক উইয়ে-খাওয়া, পুঁইয়ে-পাওয়া অখদ্দে রাজপুত্তুর এল রোঁ-ওঠা এক ঘেয়ো-কুকুর নিয়ে। বল্ বল্ ওকেই বল্। বললে কী শুনবে? হয়তো ঘুমেই ন্যাতা। শুনলে কী বুঝবে, হয়তো বুদ্ধিই ভোঁতা।’

‘আহা তবু বলি। শুনে না বুঝুক, বলে তো সুখ।’ ব্যাঙ্গমী যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। তারপর মিহি সুরে ধরে, ‘দিন রাত্তির দুয়ারে ঘা।’

ব্যাঙ্গমা মোটা গলায় বলে, ‘দুয়ার তবু খোলে না।’

ব্যাঙ্গমী মিহি গলায় আবার, ‘রাজকন্যা করেন কী?’

ব্যাঙ্গমার মোটা গলা, ‘সোনার অঙ্গ ভুঁয়ে লুটান, এখনও চুল বাঁধেননি।’

মিহি-সুরে, ‘চুল বাঁধবেন কবে?

মোটা-সুরে, ‘কাল-রাক্ষস ঘায়েল যেদিন হবে।’

এবার মিহি-মোটা একসঙ্গে

‘বনের শেষে তেপান্তর
তা ছাড়িয়ে নদীর চর।
নদীর ধারে দুধ-পাহাড়
সেথায় পুরী চার দুয়ার।
চার দুয়ারের একটি খিল
খুলবে তো তাল করো তিল।’

বুকের বোঝা হালকা করে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী বুঝি ঘুমোল। খুদকুমারের চোখে আর কী ঘুম আসে! রাতের আঁধার ফিকে হতে-না-হতেই সে বেরিয়ে পড়ে।

গহন বন ছাড়িয়ে তেপান্তর। তেপান্তর পেরিয়ে নদীর চর। নদীর পারে মেঘের রাশ। কিন্তু দুধ-পাহাড় কই?

এ-পারে দাঁড়িয়ে খুদকুমার আকুল-চোখে চারিদিক তাকায়। ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী কি তাহলে ভুল ঠিকানা দিয়েছে। কিন্তু তা তো হতে পারে না! রাজপুত্র বলে তাকে না হয় পছন্দই হয়নি, কিন্তু তাই বলে—মিথ্যে খবর! ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর তাহলে তো জাত যাবে। রূপকথার রাজ্যে মুখ দেখাতে পারবে না।

ভুল নয়, ঠিক।

আকাশের কোলে শাদা মেঘ নয়, দুধ-পাহাড়।

ঘেয়ো কুকুর সঙ্গে নিয়ে খুদকুমার দুধ-পাহাড়ে গিয়ে ওঠে। দুধ-পাহাড়ের মাঝে চার দুয়ার বিশাল পুরী। কিন্তু এ কী ব্যাপার?

বিশাল পুরীর চার দুয়ারে হৈ-হৈ হট্টগোল…থৈ থৈ ভিড়! খবর তো সে একা পায়নি, পুব-পশ্চিম উত্তর-দক্ষিণ যেখানে যত রাজপুত্র, কেউ আর আসতে বুঝি বাকি নেই।

কী তাদের চেহারা আর কী-সব সাজ-পোশাক। দুধ-পাহাড়ের গা ঝলমল করছে তাদের হিরে-মুক্তো চুনি-পান্নার জেল্লায়!

কিন্তু দুয়ার তো খোলে না। রাজপুত্রদের ঝকমকে ধারাল সব তরোয়াল ভোঁতা হয়ে গেল। দরজায় দাগ পড়ে না। দল বেঁধে বড় বড় গাছ-পাথর নিয়ে তারা চড়াও হল। দরজা নড়ে না। খুদকুমার কিন্তু করবে কী, হোমরা-চোমরাদের দলে সে পাত্তাই পায় না।

রাজপুত্রদের জরি-মখমলের সাজ ছিঁড়ল, মাথার ঘাম পায়ে পড়ল। দরজা যেমন তেমনি বন্ধ। হয়রান হয়ে সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়েছে, খুদকুমার ভয়ে ভয়ে গেল এগিয়ে।

চার দুয়ারের একটি খিল
খুলবে তো তাল করো তিল।

কিন্তু কোথায় তাল আর তিল-ই বা করবে কী?

অনেক খুঁজে পাথরের মতো নিরেট দরজায় চুলের মতো সরু একটি ফুটো যদি বা বেরুল তাও ধুলোয় ঢাকা।

কিন্তু ধুলো সরাতে এক ফুঁ যেমনি দেওয়া, অমনি কড়-কড় ঝনঝন করে চার দরজা একসঙ্গে গেল খুলে।

আর তখন রক্ষে আছে। পিলপিল করে রাজপুত্রেরা খুদকুমার আর তার ঘেয়ো কুকুরকে কোথায় ঠেলে সরিয়ে ফেলে মাড়িয়ে চার দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল পুরীতে।

খাঁ-খাঁ পুরী। কেউ কোত্থাও নেই।

দেউড়ি থেকে দালান, এ-মহল থেকে সে-মহল রাজপুত্রের দল খুঁজতে খুঁজতে একেবারে পুরীর মাথায় মণি-কোঠায় রাজকন্যার দেখা পেল।

কুঁচবরণ কন্যা—মেঘবরণ চুল মেলে ভুঁয়ের ওপর শুয়ে আছেন।

সকলকে দেখে কান্নায় ভেজা চোখ মুছে শুধোলেন, ‘কে খুললে দরজা?’

হাজার রাজপুত্র একসঙ্গে হাঁক দিয়ে উঠল, ‘আমি!’

দুঃখের মধ্যেও রাজকন্যে হাসলেন। বললেন, ‘শুধু দরজা খুললে তো হবে না। এ-পুরীর এমন দশা যে করেছে সেই কালরাক্ষস যে ঘায়েল করবে, তার জন্যেই গলার মালা আছে তোলা।’

‘কোথায় থাকে কালরাক্ষস?’ হাজার গলা গর্জে উঠল।

‘দুধপাহাড়ে দধিসায়র
তার মধ্যে কালরাক্ষসের গড়।’

কিন্তু দধিসায়র তো যেমন-তেমন নয়, নৌকো ভাসালে জলে গলে যায়, সাঁতরে পার হতে গেলে কালরাক্ষসের পোষা কুমিরে খায়।

কালরাক্ষসের নাগাল পাওয়াই দায়।’

‘আচ্ছা, কুছ পরোয়া নেই!’—হাজার রাজপুত্র এক দঙ্গলে দধিসায়রের পাড়ে গিয়ে হাজির।

কিন্তু জলে যে নামে সে আর ওঠে না।

সকাল থেকে দুপুর গিয়ে সন্ধ্যে হল। হাজার রাজপুত্তুরের কেউ তখন বুঝি কুমিরের ভোজ, কেউ ভয়ে নিখোঁজ।

সন্ধ্যে গিয়ে রাত হল।

ঘেয়ো কুকুর নিয়ে খুদকুমার দধিসায়রের ধারে গিয়ে দাঁড়াল। থকথক করছে দধিসায়র, তার মধ্যে থম্‌থম্ করছে চাঁদের আলোয় কালরাক্ষসের গড়।

ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর ছড়ার গুণে দরজা খুলেছে বিশাল পুরীর, কিন্তু দধিসায়র পার হবার হদিস মেলে কোথায়? হঠাৎ খুদকুমার চেঁচিয়ে উঠল, ‘আরে থাম্-থাম্!’

আর ‘থাম্-ধাম্!’ বলা নেই, কওয়া নেই, ঘেয়ো কুকুর হঠাৎ দধিসায়রে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ওদিকে কুমিরেরও টনক নড়েছে। হাঁ ক’রে এল তেড়ে, কুকুর বেচারার দফা বুঝি দিলে সেরে! এতদিনের সাথী, এই বিপদে কী ছাড়া যায়! খুদকুমার ফলা-ভাঙা ছুরি হাতেই সায়রে পড়ল লাফ দিয়ে 1

কিন্তু বাঁচাতে গেছে কাকে! কুকুর নয় যেন জলের মাছ! কুমিরকে চরকি-পাক খাইয়ে ঘেয়ো কুকুর যেন মজা দেখে। কুকুরের পেছনে কুমির ছোটে আর খুদকুমার নির্ঝঞ্ঝাটে কালরাক্ষসের গড়ে গিয়ে ওঠে। কুমিরকে কলা দেখিয়ে ঘেয়ো কুকুরও তার পিছু-পিছু গা-ঝাড়া দিতে-দিতে উঠে আসে।

কালরাক্ষসের গড়। তার কত গম্বুজ, কত খিলেন, কত সুড়ঙ্গ, কত সিঁড়ি। কিন্তু কোথাও কারুর সাড়াশব্দ নেই কেন?

এ-মহল থেকে ও-মহল, একতলা থেকে দোতলা, তা থেকে তেতলায় এক ঘর। ঢুকতে গিয়ে খুদকুমার থমকে দাঁড়ায়।

তারই মতো একটি ছেলে একটা ময়লা বিছানায় হাপুস নয়নে কাঁদছে।

আর কী বুঝতে কিছু বাকি থাকে? এ নির্ঘাৎ সেই কালরাক্ষসের কাজ। কোন অচিন দেশের কুমার হবে নিশ্চয়। বেচারাকে ধরে এনে কয়েদ করে রেখেছে মনের সুখে মারবার জন্যে।

‘কাঁদছ কেন ভাই! ভয় কী!’ কাছে গিয়ে খুদকুমার মিষ্টি গলায় সাহস দেয়।

অচিনকুমার চমকে উঠে বসে, কেমন হতভম্ব হয়ে তাকায়।

তারপর তার কান্না আবার যেন উথলে ওঠে নতুন করে।

খুদকুমার পাশে বসে পিঠে হাত দেয় এবার, ‘ছিঃ পুরুষমানুষ কি কাঁদে!’

‘না, কাঁদে না!’ অচিনকুমারের গলায় এবার ঝাঁঝ, ‘আমার মতো হতে তো বুঝতে। আর এসেছ যখন বুঝবে। কিন্তু তুমি কে! এখানে এলেই-বা কী করে আর কেন?”

খুদকুমার নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, ‘এসেছি কালরাক্ষসের দাপট ভাঙতে।’

কান্না ভুলে হেসে ওঠে অচিনকুমার, ‘এখানে এসেছ, কালরাক্ষস খুঁজতে?’

‘এখানে আসব না তো যাব কোথায়! খুদকুমার বেশ একটু অবাক।

‘কালরাক্ষস কোথায় থাকে তাও জান না?’ অচিনকুমার আবার হেসে ওঠে।

খুদকুমার এবার গরম। বলে ‘থাকে তো এইখানেই।’

‘না হে না, এখানে তো থাকি আমি। জন্ম থেকে আছি কালরাক্ষসের দাপটে কয়েদ হয়ে। তাইতো অমন ক’রে কাঁদি।’

‘তাহলে যে শুনলাম!’ খুদকুমার তাকায় অবাক হয়ে।

‘যা শুনেছ তা ভুল। ওই তো দধিসায়রের পারে চারদুয়ার বিশাল পুরী। ওই হল কালরাক্ষসের গড়।

এবার খুদকুমারের হাসবার পালা। ঠাট্টা করে বলে, ‘তুমি তো তাহলে খুব জানো দেখছি।’

‘তা আর জানিনা!’ অচিনকুমার একটু চটেই ওঠে, ‘সাতপুরুষ ধরে গড়বন্দী হয়ে আছি, আমি জানব না তো জানবে কে! ওই কালরাক্ষসের জন্যেই তো নিঝুমপুরীর এই হাল!’

খুদকুমারকে অনেক কষ্টে এবার সব বলে বোঝাতে হয়। কিন্তু বোঝাবুঝির পর দুজনেই দুজনের মুখে অবাক হয়ে চায়। এখানে নয় ওখানে নয় তো কালরাক্ষস থাকে কোথায়? ‘কোথাও না!’ ব’লে দু’জনে একসঙ্গে হেসে ওঠে। আর তক্ষুনি বানানো বুজরুকির ফাঁকি, দু-ফাঁক হয়ে মিথ্যের মায়া কুয়াশার মতো উবে যায়।

থমথমে নিঝুমপুরী গমগম্ হয়ে ওঠে খুশির হাসিতে। থকথকে দধিসায়র গলে টলটলে জল হয়ে ঝক্‌ করে ভোরের সোনালি আলোয়। কুমির হয়ে যায় কাঠের গুঁড়ি!

খুদকুমার আর অচিনকুমার হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে পড়ে। সঙ্গে ঘেয়ো কুকুর।

ঘেয়ো কুকুরের ঘা কই! সব সেরে গিয়ে রেশমের মত নরম লোমে গা গিয়েছে ঢেকে।

ওপারের বিশাল পুরী চার দুয়ার খুলে যেন সবাইকে ডাকছে।

কুঁচবরণ কন্যা, মেঘবরণ চুল শুধু বাঁধেনি….যজ্ঞির রান্না রাঁধতে বসেছে, হাজার রাজপুত্রকে নেমন্তন্ন খাওয়াতে।

কালরাক্ষস সত্যি আজ ঘায়েল।

কোথাও সে নেই, আবার আছেও বটে।

আছে প্রাণের লুকোনো হিংসের, মনের মধ্যে মিথ্যে ভয়ে। ঘর ছেড়ে বাইরে এসে, আপনার মতো পরকে ভালবেসে তাই তাকে বারবার হারিয়ে শূন্য-হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে হয়।

মা’র শেখানো ছড়াটার মানে যেন কিছুটা বুঝতে পারে, খুদকুমার।

সকল অধ্যায়

১. নিখুঁত মানুষ – লালবিহারী দে
২. রানি কঙ্কাবতী – ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়
৩. বানর রাজপুত্র – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
৪. ছোট চোর ও বড় – যোগীন্দ্রনাথ সরকার
৫. ভুতো আর ঘোঁতো – সুখলতা রাও
৬. চুনির জন্ম – ত্রিভঙ্গ রায়
৭. ভোঁদড় বাহাদুর – গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
৮. সন্দেশের দেশে – মণীন্দ্রলাল বসু
৯. মনোবীণা – নরেন্দ্র দেব
১০. দুধ পাহাড় দধিসায়র – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১১. অস্তপাহাড়ে মানুষের মেয়ে – নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়
১২. মায়া আয়না – প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
১৩. সেলাইবুড়ি ও আশ্চর্য ছুঁচ – শৈল চক্রবর্তী
১৪. বন্দিনী রাজকন্যার গল্প – রাধারানী দেবী
১৫. রামধনুকের রাজপুত্তুর – স্বপনবুড়ো
১৬. রাজশ্রী – ইন্দিরা দেবী
১৭. কাঠকন্যা – মৌমাছি
১৮. কাক্কাবোক্কার ভুতুড়ে কাণ্ড – শৈলেন ঘোষ
১৯. নতুন দিনের আলো – মনোজকান্তি ঘোষ
২০. আশ্চর্য আমগাছ – প্রণবকুমার পাল
২১. কী ভালো মেঘ – উত্থানপদ বিজলী
২২. যাদুশ্রেষ্ঠ বীরমাণিক্য – অমিতাভ রায়
২৩. সোনার চাঁপা ফুল – পুণ্ডরীক চক্রবর্তী
২৪. রাজকুমার বৃষস্কন্ধ আর শ্রীময়ী – নবনীতা দেবসেন
২৫. একটা আইসকীরিম একটা কাঠবেড়ালীর গল্প – কার্তিক ঘোষ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন