এক গ্রামে থাকত এক বুড়ি। তার নাম সেলাইবুড়ি। অনেকদিন আগে তার ছেলেমেয়ে ছিল। তারা সব বুড়ো হয়ে মারা গেছে।
নাতি-নাতনিরাও চলে গেছে দূরে দূরে। কে যে কোথায় আছে বুড়ি তাদের ঠিকানাও জানত না।
বুড়ি সেলাই করতে খুব ভালবাসত। তার কাছে ছিল সরু মোটা কত রকমের ছুঁচ আর সুতো। সে পাড়ার সকলের জামা সেলাই করে -দিত।
কারও যদি কাপড় ছিঁড়ে যায় সে আসত বুড়ির কাছে। বুড়ি তা সেলাই করে দিত। কারও মেয়ের ফ্রক দরকার, সে-ও আসত বুড়ির কাছে। বুড়ির কাছে এলেই সে তা সেলাই করে দিত। এর জন্যে সে একটি পয়সাও নিত না।
পাড়ার সব লোকই ভালবাসত বুড়িকে। কেন ভালবাসবে না? বুড়ি ত তাদের সবকিছু সেলাই করে দিত। আর তারা করত কী? তারা এসে বুড়ির রান্নাবান্না কাজকর্ম করে দিত।
এই ভাবে দিন যায়। বুড়ি আরো বুড়ি হল। সে আর চোখে দেখতে পায় না। চোখে দেখতে না পেলে সেলাই করবে কী করে? ছুঁচই সে ভাল করে দেখতে পায় না। ছুঁচে সুতো পরাবে কী করে?
তাই বুড়ির মনে ভারী দুঃখ। সে ভাবে, আহা, পাড়ার লোকের জামাকাপড় কে সেলাই করে দেবে? তারা ত গরিব, শহরে গিয়ে পয়সা দিয়ে ত সেলাই করাতে পারে না। তাই ত আসে আমার কাছে।
মনের দুঃখে বুড়ি একদিন রাত্তিরলো বসে বসে গালে হাত দিয়ে ভাবছে আর তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে।
হঠাৎ কে যেন ডাকল।
বুড়ি দরজা খুলে দেখে একটি ফুটফুটে মেয়ে। ঠিক যেন পরীর মতো রূপ।
মেয়েটি বলল, “বুড়ি মা, তুমি বুঝি সেলাই করতে পার না?”
বুড়ি বলল, “না গো বাছা, চোখে ত ভাল দেখতে পাই না, কেমন করে ছুঁচ চালাব? কেমন করে সুতো পরাব! কেন, তোমার কি কিছু সেলাই করতে হবে?”
মেয়েটি বলল, “আমি তোমায় একটা ছুঁচ দিচ্ছি, এ এমন ছুঁচ যে আপনিই সেলাই করে দেবে। শুধু কাপড়ের কাছে নিয়ে বলতে হবে “ছুঁচ এবার চলতো।’ বাস, আর তোমায় কিছু করতে হবে না। সেলাই হয়ে গেলে বলতে হবে, ‘হুঁচ এবার তুমি থামো”।
বুড়ি ত শুনে অবাক। আনন্দে তার চোখ দিয়ে আরও জল পড়তে থাকে। সে হাতে করে ছুঁচটি নিল। ভাল করে দেখতে লাগল। তারপরে মেয়েটিকে আদর করতে যাবে, দেখে মেয়েটি নেই। ওমা! কোথা গেল? এই যে ছিল!
বুড়ি ভাবল, ও নিশ্চয়ই স্বর্গের কোনও পরী হবে।
পাড়ার লোক আবার আসে তাদের কাপড়চোপড় নিয়ে। বুড়ির এখন আর কষ্ট হয় না। সে সেই ছুঁচকে শুধু বলে, ‘হুঁচ এবার চলতো!’ অমনি চোখের নিমেষে সেলাই হয়ে যায়। সেলাই হয়ে গেলে বুড়ি থামার মন্ত্র বলে। আর ছুঁচ আবার যেমন চুপচাপ তেমনি হয়ে যায়।
.
সেই গ্রাম থেকে অনেক দুরে থাকত দুই দর্জি। তাদের একজনের ছিল এক জোড়া গোঁফ আর একজনের মাথায় ঝাঁকড়া চুল। তারা দর্জির ব্যবসা করে। সেলাই করে আর বেশি পয়সা নেয়।
বেশি না নিলে তাদের চলে না। তারা যে ভীষণ কুঁড়ে। একটু সেলাই করে আর একটু জিরিয়ে নেয়। একজন ত কাজ করতে বসলেই কেবল হাই তোলে। দিনের মধ্যে তারা যতক্ষণ কাজ করে তার চেয়ে বেশিক্ষণ গল্প করে আর তার চেয়ে বেশিক্ষণ ঘুমোয়। তাই তাদের অভাবও ঘোচে না। ঘরে যদি চাল থাকে ত ডাল থাকে না। ডাল থাকে ত আলু নেই। আলু আছে ত তেলের ভাঁড় খালি।
একদিন এই দর্জির দোকানে এসে দাঁড়াল রাজার গোমস্তা,সঙ্গে জমকালো পোশাকপরা পেয়াদা বরকন্দাজ। গোমস্তা এক বোঝা কাপড় নামিয়ে বলল, ‘ওহে দর্জি, এক হপ্তা পরে রাজার মেয়ের বিয়ে। অনেক পোশাক লাগবে। .সেই সব তোমাদের বানিয়ে দিতে হবে। এই নাও কাপড়,
রেশম, সাটিন, ভেলভেট, জরী, সব আছে এর মধ্যে। সব পোশাক বানিয়ে দিলে পাঁচশো টাকা পাবে। আর কিছু বকশিসও পেতে পারো। ভাল সেলাই চাই কিন্তু।”
গুঁপো বলে উঠল, “হুজুর, মোটে এক হপ্তা সময়!” গোমস্তা বলল, “হ্যাঁ সাতদিন। বিয়ের দিন ত বদলানো যায় না। তোমাদের তৈরি করে দিতেই হবে। যদি না পার তাহলে কি হবে জান ত? তোমাদের খুব একটা ভাল হবে না।”
দর্জিরা ত এমনিই ভয়ে জড়সড়।
ঝাঁকড়াচুল বলল, “হুজুর, কাপড়গুলো একটু দেখে নিই।”
সে কাপড়গুলো দেখতে লাগল।
গুঁপো বলল, “কনের গায়ের মাপ চাই যে।”
গোমস্তা তার ব্যাগ থেকে রাজকন্যার গায়ের পুরোনো জামা একটা দিয়ে বলল, “এই নাও গায়ের মাপ।”
গোমস্তা ও রাজার লোকজন চলে গেল। দর্জি দুজন ঘরের দরজা বন্ধ করে খুব একবার নেচে নিল। কী আনন্দ তাদের! একসঙ্গে পাঁচ পাঁচশো টাকা পেয়ে যাবে। সোজা কথা! খুব মেঠাই মণ্ডা খাওয়া যাবে আর ঘুমোনো যাবে!
একজন বসে গেল তামাক খেতে।
আর একজন বলল, “সাতদিন ত অ-নে-ক সময়। তাই না? একটু গড়িয়ে নিই!”
সে শুয়ে পড়ল। সেদিনটা তাদের কাটল শুয়ে বসে আর গল্প করে।
পরদিন তারা বসল কাঁচি আর ফিতে নিয়ে। কাপড়গুলো মাপ করে কেটে ফেলল। খুব সাবধান হয়েই কাটল তারা।
কাটা হয়ে গেলে দুজনে ভয়ানক হাঁপিয়ে উঠল।
“অনেক কাজ করেছি আজ। কী বলিস?” বলল একজন।
আর একজন বলল, “বাব্বা! এক দিনে আমি দশ দিনের কাজ করেছি।”
অন্যজন বলল, “দশ দিন কী! আমি বিশ দিনের কাজ করেছি। এবার একটু ঘুমোনো যাক।”
সেদিনও গেল ঘুমিয়ে।
পরদিন সেলাই নিয়ে বসেছে। দুচার ফোঁড় সেলাই করে
আর চোখ ঢুলে আসে ঘুমে।
গুঁপো বলল, “এই ঘুমুস না।”
ঝাঁকড়াচুল বলল, “না না, ঘুমুইনি ত। আমি ভাবছিলুম সেলাই বুড়ির সেই আশ্চর্য ছুঁচটা যদি পেতুম–”
“কী ছুঁচ?”
“আরে সে এক মজার ছুঁচ। সে ছুঁচকে শুধু বললেই হল। সে আপনিই সেলাই করে যাবে—”
“যাঃ, এ আবার হয় নাকি? তুই স্বপ্ন দেখছিস।”
“না রে না। আমি সত্যি সত্যি বলছি। আমার এক দিদিমার কাছে গল্প শুনে-ছিলাম। দিদিমার এক বোনের আছে এই ছুঁচ।
আহা! অ্যাদ্দিন যদি মনে পড়ত রে! তাহলে আর এত খেটে মরতে হত না।”
চোখ বড় বড় করে গুঁপো বলল, “তুই একটা হদ্দ বোকা! এমন জিনিস ভুলে বসেছিলি? চল, আজই যাই সেই বুড়ির বাড়ি।”
“না রে, দুজনে গেলে হবে না। আমিই যাব নাতি সেজে। বুড়ি ত আর আমাকে চিনতে পারবে না। তারপর ঠিক হাত সাফাই করে নিয়ে আসব, বুঝলি।” বলে সে খুব হেসে নিল। ঝাঁকড়া-চুল দর্জি অনেক ঘুরে অনেক পথ ভুলে অনেক খুঁজে গিয়ে পড়ল কাটিমপুরে। এই গাঁয়েই থাকতো সেই বুড়ি।
বুড়ি ত ওকে দেখে চিনতে পারে না। সে বলল, “কে তুই?”
তোমার নাতি গো দিদিমা। তুমি আমায় চিনতে পারবে না। অনেক ছোট বেলায় দেখেছ ত। বলো, দিদিমা, তোমার কি কাজ করে দিতে হবে। আহা, তুমি বুড়ি হয়ে গেছ, তোমার কি খাটবার বয়েস আছে? তুমি এখনও সেলাই করো?”
বুড়ি ভাবল, হতেই পারে, তারই কোনও নাতি হবে।
বুড়ি বলল, “দ্যাখ না, আমি ত সেলাই করতে পারি না, আমার ছুঁচই সব সেলাই করে দেয়।”
“সে কী দিদিমা? ছুঁচ সেলাই করে দেয় কী?”
“হ্যাঁ রে। এই দ্যাখ না একটা আশ্চর্য ছুঁচ আছে। একে যদি বলি, ‘ছুঁচ এবার চলতো’, অমনি সে নিজে নিজেই সব সেলাই করে দেয়।’
বুড়ি একটা কৌটা থেকে বার করে সেই ছুঁচ দেখালো দর্জিকে। ঝাঁকড়া-চুল দর্জি চালাকি করে সেটা হাতে নিয়েই সেটার মত অন্য একটা ছুঁচ বদলে দিয়ে বুড়ির কৌটোতে রাখল।
তারপর নানান কথার পর দর্জি বলল, “আজ আসি, দিদিমা, আবার আসব একদিন।”
বাড়িতে এসে দুই দর্জির খুব ফূর্তি। এবার আর কী! আমাদের আর খাটতে হবে না।
গুঁপো দর্জি বললে, “দাঁড়া, একবার পরীক্ষা করে দেখা যাক।”
তারা কাটা কাপড়ের ধারে ছুঁচ লাগিয়ে বলল, “ছুঁত এবার চলতো।” বলতে না বলতেই ছুঁচ আপনি সেলাই করে চলল। কোথায় সুতো, কোথায় কী! কিন্তু কী সুন্দর সেলাই হয়ে যাচ্ছে।
চোখ বড় বড় করে দর্জিরা দেখতে থাকে। তাদের আনন্দ আর ধরে না। “কী মজা! কী মজা! এবার আমাদের আর ভাবনা নেই রে! আর খাটতে হবে না। এবার তোফা আরামে বসে থাকব।”
তারা খাওয়াদাওয়া করল। ছুঁচ ঠিক নিজের মনে সেলাই করে যাচ্ছে। সাটিনের একটা জামা হয়ে গেল। এইবার আর একটা কাপড় ধরেছে সে। এক মুহূর্তও থামছে না।
দর্জিরা জামার কাপড়গুলো পর পর সাজিয়ে রাখল। আর ছুঁচ একটার পর একটা সেলাই করে চলেছে।
“আমরা আর বসে থাকি কেন?” বলল ঝাঁকড়া চুল। গুঁপো হাই তুলতে তুলতে বলল, “আমার ত ভীষণ ঘুম পেয়েছে।”
তারা দুজনেই বিছানায় শুয়ে পড়ল লেপ চাপা দিয়ে। আর একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়ল নাক ডাকিয়ে।
মিটমিট করে আলো জ্বলছে আর সেই আশ্চর্য ছুঁচ একটার পর একটা সেলাই করে যাচ্ছে। সাটিনের কাপড় শেষ হল। তারপর জরিদার কাপড় ধরল। কিছুক্ষণের মধ্যে তাও শেষ হয়ে গেল। ভেলভেট হয়ে গেল। রেশম তাও হয়ে গেল।
এবার ছুঁচ কী করবে? আর তো কাপড় নেই।
দর্জিদের গায়ে দেবার একটা শাল পাট করা ছিল আলনায়। ছুঁচ গিয়ে পড়ল তার ওপর। আষ্টেপিষ্টে সেটা সেলাই হয়ে গেল।
এদিকে দর্জিদের তখন নাক ডাকছে। রাত অনেক।
পাশে ছিল একটা গামছা আর বালিশের ঢাকা। সে দুটোও সেলাই হয়ে গেল। এবার?
জানালায় ঝুলছিল পর্দা। ছুঁচ লাফিয়ে পড়ল তার ওপর। ভাঁজে ভাঁজে পর্দা সেলাই হয়ে গেল। এবার?
ঐ ত পাশেই দর্জিদের বিছানা। বিছানার গায়ে ঝুলছিল মশারি। ছুঁচ গিয়ে ধরল তাকে। মশারি ছেড়ে ছুঁচ গিয়ে ধরল বিছানার চাদরকে। চাদর শেষ হতে না হতেই লেপ। লেপের এফোঁড় ওফোঁড় সেলাই করে চলেছে ছুঁচ। চাদরের সঙ্গে লেপ জুড়তে লাগল সে। তার মধ্যে দর্জি দুজন আষ্টেপিষ্টে সেলাই হয়ে গেল।
ঘরের মধ্যে যখন এই কাণ্ড চলছে বাইরে তখন সকাল হয়ে গেছে। গাছে গাছে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। দর্জিদের ঘুম ভাঙ্গল। তারা বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে কিন্তু উঠতে পারছে না।
একী হল? উঠতে পারছি না কেন? গুঁপো ভাবে ঝাঁকড়া চুল তাকে ধরে রেখেছে বুঝি। আর ঝাঁকড়া ভাবে গুঁপো বুঝি তাকে আটকে রেখেছে। দুজনের তখন টানাটানি চলল। তারপর ঝটাপটি করতে করতে ওরা গড়িয়ে পড়েছে খাট থেকে নীচে।
তারপর রোদের আলো ফুটতে ওরা দেখে, আরে বিছানার চাদর লেপ সব জুড়ে গেছে যে! কে এমন কাণ্ড করলো? তারা যে হাত নাড়তেই পারছে না। সৰ্বনাশ!
তখন ওরা ভাল করে তাকিয়ে দেখে সেই ছুঁচ তখনও চলেছে সেলাই করে। সব সেরে সে ধরেছে বালিশ আর তোশককে। তোশকের সঙ্গে প্যাটপ্যাট করে ফোঁড় দিয়ে জুড়ছে বালিশকে।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ! এমন বিপদও হয় মানুষের!
চুঁচকে ওরা কত করে থামতে বলে, তোর পায়ে পড়ি, এবার থাম! কিন্তু সে থামে না। আসল মন্ত্ৰ ত বলছে না ওরা, ছুঁচ থামবে কেন?
সৰ্বনাশ!
তারা ভাবে ছুচের সুতো কি আর ফুরোবে না? সুতো ফুরোক, তখন ঠিক থামবে ও। কিন্তু কই? কোথা থেকে যে আসছে অদৃশ্য সুতো ওরা বুঝবে কী করে!
তখন ওরা কেঁদে ফেলে আর কি!
শুয়ে থাকতে আমরা ভালবাসি সত্যি, কিন্তু এভাবে জড়ভরত হয়ে কি থাকা যায়! হায়, হায়, ভগবান! কী হবে এখন?
ওরা চিৎকার করে ওঠে। “ওগো, কে আছ, আমাদের বাঁচাও!”
এমন সময় ওরা শুনতে পেল দরজায় টুকটুক্ শব্দ। কেউ ডাকছে নিশ্চয়!
রাজার লোক নয়ত?
অতি কষ্টে ওরা জোড়া অবস্থায় জড়াজড়ি করেই গেল দরজা খুলতে।
দেখে এক বুড়ি দাঁড়িয়ে। ওমা, এ যে দেই সেলাইবুড়ি। ঝাঁকড়া চুল সহজেই চিনতে পারে বুড়িকে। সেলাইবুড়ি ঠিক খুঁজে খুঁজে এসেছে ওদের বাড়ি। নাতি যে তাকে ফাঁকি দিয়ে ছুঁচ নিয়ে পালিয়ে এসেছে তা বুঝতে তার বেশি দেরি হয়নি। তাই তার খোঁজে এসেছে সে।
ওদের ঐ অবস্থা দেখে বুড়ি তোবড়া গালেও হেসে ফেলল। বলল, “যা ভেবেছি ঠিক তাই। ছুঁচ ঠিক তোদের জব্দ করেছে। বেশ হয়েছে! আমার ছুঁচ কোথা? শিগগির বল্!”
ঝাঁকড়াচুল বলল, “ঐ যে দিদিমা, দেখ তোমার ছুঁচ আমাদের কী দুর্দশা করেছে, দেখ একবার।”
বুড়ি দেখে ঘরের মধ্যে কোথাও আর আস্ত কাপড় নেই। সব সেলাই হয়ে গেছে। এখনও সে তোশক বালিশ ফুঁড়ে ফুঁড়ে যাচ্ছে।
বুড়ি বলল, “ছুঁচ, এবার থাম ত।”
বলতেই ছুঁচ চুপচাপ। তার কাজ বন্ধ হয়ে গেল।
ঝাঁকড়াচুল দর্জি ভাবে, ওঃ-কী, বোকামিই হয়েছে আমার। থামানোর মন্ত্রটা শেখা হয়নি ত!
সেলাই বুড়ি ওদের অবস্থা দেখে হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায় না। সে বলল, “তোদের উপযুক্ত শাস্তিই হয়েছে। যেমন কর্ম তেমনি ফল। ফাঁকি দিয়ে সব কাজ করিয়ে নিতে চেয়েছিলি, তাই না?”
দর্জি দুজন কান্নাকাটি করে বলল, “আমাদের উদ্ধার কর দিদিমা। আর কোনও দিন এমন কর্ম আমরা করব না। দিবি গিলে বলছি আর কোনও দিনও না।”
বুড়ি তখন সেলাই খোলার মন্ত্র বলল,
“যত সেলাই খুলে যাক
যেমন কাপড় তেমনি থাক।”
ওমা, আশ্চর্য ব্যাপার! মন্ত্রটি বলা মাত্রই ভুশ ভুশ করে সব সেলাই খুলে গেল। দর্জিদের গা থেকে চাদর আর লেপ খুলে পড়ল মাটিতে। আর যেখানে যত সেলাই হয়েছিল সব খুলে গেল।
বুড়ি তার আশ্চর্য ছুঁচ নিয়ে চলে গেল। যাবার সময় বললে, “শোন, এ ছুঁচ তোদের জন্যে নয়। বুঝলি ত! তোদের দু’ দুটো হাত রয়েছে, চোখের জোর রয়েছে, খেটেখুটে কাজ করবি না ত কী বসে থাকবি?”
সত্যিই ওরা খুব শিক্ষা পেয়েছে। তারপর থেকে রাতদিন ধরে খেটে কাজ করতে লাগল। রাজবাড়ির পোশাকও তৈরি করল ওরা।
তারপর থেকে ওরা খেটে কাজ করতে লাগল। তাই আর কোনও অভাব রইল না ওদের।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন