সন্দেশের দেশে – মণীন্দ্রলাল বসু

পরোনো সব বাড়ি, ভেঙে যে নতুন রাস্তাটা হচ্ছে, তার একদিকে লাল শাদা হলদে নানা রঙের কত শিল্পকার্যভরা নতুন বড় বড় বাড়ি, আর একদিকে ইঁট-বের-করা বালিখসা ভাঙা কালো পুরানো বাড়ির সারি। নতুন বাড়িদলের মধ্যে একখানা খুব বড় সুন্দর বাড়ি আবীরের মত লাল ইঁটে গড়া, তার মাথায় শাদা গম্বুজ, আর হাতীর পায়ের মত মোটা রূপার মত শাদা থামওয়ালা। এই বাড়িতে থাকত সাত বছরের মেয়ে শোভনা। শোভনার বাবা কালো কয়লার ব্যবসা করে রাশ রাশ সোনা জমিয়েছেন। শোভনা তাঁর এক মা-হারা মেয়ে। সেই সমস্ত বাড়ির ওপর রাজত্ব করত-দরওয়ান, খানসামা, চাকর থেকে বাবা, মিনি-বেড়াল, বিলি-কুকুর, পুতুল লিলি, সবাই তার হুকুমে চলত, তার ভয়ে জড়সড়, তার মন একটু পেলে ভারী খুশি।

এই বাড়ির ঠিক সামনে ওদিকের ফুটপাথে যে কালো ভাঙা বাড়ি ছিল, সেই বাড়িখানা ওই পুরানো বুড়ো বাড়িগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বুড়ো। বয়সে তার ছাতটা নুয়ে পড়েছে, চুন বালি সব খসে পড়ে ইঁটের হাড়গুলো সব দেখা যাচ্ছে। সেই বুড়ো বাড়িতে থাকত আট বছরের ছেলে,—প্রভাত। প্রভাতের বাবার সেই ভাঙাবাড়িতে এক খাবারের দোকান ছিল। সে সেই দোকানের সব দেখাশুনো করত।

প্রভাত প্রায়ই ময়লা ছেঁড়া জামা প’রে খাবারের ঠোঙা নিয়ে শোভনাদের বড় বাড়ির সামনে দিয়ে যায়। দূর থেকে প্রভাতকে আসতে দেখলেই শোভনা জানালার আড়ালে লুকোয়, যেন কোন লুকোচুরি খেলা খেলছে, আর প্রভাত অবাক হয়ে লাল বাড়ির দিকে চেয়ে থাকে। কোনও কোনও দিন প্রভাত অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে দেখলে শোভনা দুষ্টুমি করে জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে, শোভনার দিকে চাইতেই প্রভাতের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তার পরেই সে লাল মুখ লজ্জায় কালো করে ছুটে পালায়।

শোভনা ঠিক বুঝতে পারত না প্রভাত কোন ঘরটার দিকে চেয়ে থাকে। তার ঘরের জানলার দিকে, না তার ঘরের পাশে যে খাবার ঘরে বিস্কুট, কেক, মাখন সব সাজানো থাকত, সেই ঘরটার দিকে। তার ভারী ইচ্ছে হ’ত প্রভাতকে ডাকে, কিন্তু ডাকতে পারত না; কেননা সে বুঝত ডাকলে প্রভাত ছুটে পালাবে, কিছুতেই আসবে না।

কিছুদিন শোভনার অসুখ হওয়ায় তার রাজ্যে ভারী অরাজকতা হয়েছে। এখন ডাক্তার-বাবু থেকে আয়া পর্যন্ত সবাই তার ওপর হুকুম চালায়, ঘর থেকে তার বার হওয়া বন্ধ; চানাচুর, ঘুনি-দানা কিছু কেনবার যো নেই; তাই সে রাজত্ব দেখা একেবারেই ছেড়েই দিয়েছে।

রাস্তার দিকে ক্লান্ত করুণ নয়নে চেয়ে বিছানায় চুপচাপ সে শুয়ে ছিল। পথ দিয়ে স্কুলের ছেলের দল হল্লা করে চলে গেল, তার ভারী ইচ্ছে করছিল তাদের সঙ্গে ছুটে চলে যায়। নোংরা-কাপড়-পরা ময়লা কালো মুসলমান ছেলেগুলো যখন গুলিডাণ্ডা মার্বেল খেলছিল, সে সতৃষ্ণ নয়নে তাকিয়ে ছিল। তারাও চলে গেল। প্রভাত দোকানে বসে গরম কচুরি জিলিপি ভাজছিল। তার ইচ্ছে করছিল মাছির মত সে যদি ওই দোকানে উড়ে চলে যেতে পারত! শোভনার জন্যে তার বাবা কত রকমের বিস্কুট লজঞ্চুস্ এনে দিয়েছেন, সে রাগ করে কিছুই খায়নি। সে সেই দোকানের সাজানো খাবারগুলোর দিকে চেয়ে রইল। সেগুলো যে ঠিক খেতে ইচ্ছে করছিল তা নয়, কারণ অসুখে তার মোটেই ক্ষিধে ছিল না। সে ভাবছিল খাবারগুলো যদি চলতে বা কথা কইতে পারে, তবে সে তাদের সঙ্গে বেশ ভাব করে। একা তার মোটেই ভাল লাগছিল না।

তখন দুপুর। বাইরে রোদের তেজ বেড়ে উঠছে। চাকর এসে সামনের জানলা বন্ধ করে দিল। শোভনার ইচ্ছে করছিল ওই খাবারের দোকানের দিকে চেয়ে চেয়ে শুয়ে থাকে, কিন্তু এখন অসুখ, তার হুকুম কেউ শুনবে না।

ভাল লাগে না সারাক্ষণ শুয়ে থাকতে, সবার অলক্ষ্যে ধীরে সে বাড়ি ছেড়ে বাহির হ’ল। গেট্ পেরিয়ে সেই খাবারের দোকানের দিকে যাচ্ছে, হঠাৎ মধ্যপথে যেতেই কি ভয়ঙ্কর একটা শব্দ হ’ল, পথটা খসে গেল; ভয়ে সে চোখ বুজে রইল।

চোখ মেলে চাইতেই দেখে, বাঃ! কী সুন্দর জায়গায় এসে হাজির হয়েছে, এ কী আশ্চর্য দেশ! পাশ দিয়ে শাদা এক নদী বয়ে চলেছে, তার ওপর চাঁদের আলো প’ড়ে হিরের মত ঝক্‌ঝক্ করছে। এমন সুন্দর জ্যোৎস্না সে কখনও দেখেনি। সামনে রুপোর মত শাদা নগরের দেওয়াল, কিন্তু কোথাও কেউ নেই। কী করবে ভাবছে, এমন সময় দ্যাখে, এক মস্ত বড় শাদা বল গড়িয়ে, তার দিকে আসছে, যেন একটা মস্ত বড় কামানের গোলা তাকে মারতে ছুটে আসছে। শোভনার ভারী ভয় হ’ল, নদীর তীর দিয়ে সে ছুটতে আরম্ভ করলে, গোলাটাও তার পেছনে পেছনে ছুটে আসতে আসতে চেঁচিয়ে বললে, দাঁড়াও! দাঁড়াও! ভয় নেই! ভয় নেই!

কিছুদূর ছুটে হাঁপিয়ে পড়ে যখন শোভনা দাঁড়াল, দেখে গোলটা তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাসছে। একটা জালার মত সেই সোনালি গোলাটাকে হাসতে দেখে শোভনার ভারী আমোদ হ’ল। সে বললে, ‘কে তুমি?’ বিকট হেসে গোলা বললে, আমায় চিনতে পারছ না, আমি যে রসগোল্লা! তার হাসির চোটে অনেকখানি রস ছিটকে এসে শোভনার সুন্দর ফিরোজা রঙের জামাটা মাটি করে দিলে! আশ্চর্য হয়ে শোভনা বললে, রসগোল্লা? এত বড়! তুমি কোন্ দোকানের রসগোল্লা? —বাগবাজারের, না বৌবাজারের না—? তাকে বাধা দিয়ে রসগোল্লা বললে, দেখছ না, তুমি আর মানুষের দেশে নেই, এ খাবারের দেশে এসে পড়েছ,—ওই দেখ, পাশ দিয়ে দুধের নদী বয়ে চলেছে, আর তুমি মাটিতে ধুলোর ওপরে দাঁড়িয়ে নেই দেখছ? তোমাদের নদীর ধারে যেমন বালি, আমাদের নদীর ধারে তেমনি চিনি।

পথে হাত দিয়ে শোভনা দেখে তাই তো; এ তো ধুলো নয়, এ সব চিনি! সে আগে এ দিকে খেয়ালই করেনি।

রসগোল্লা বললে, তোমাকে দেখে ভারী আনন্দ হচ্ছে। অনেকদিন আমাদের দেশে কোনও ছেলেমেয়ে আসে নি। যারা আমাদের খায়নি, অথচ খুব ভালবাসে, তারাই আমাদের দেশে আসতে পারে। এ দেশ তোমার ভারী অদ্ভুত ঠেকছে বটে, তোমাদের দেশে দেখেছ আমরা তিন ইঞ্চি চার ইঞ্চি লম্বা, এখানে এক-একখানা আবার তিনফুট চারফুট লম্বা-চওড়া।

ছুটে ছুটে শোভনার বড় তেষ্টা পেয়েছিল। সে রসগোল্লাকে বলতেই সে বললে, ওই নদীতে নেমে একটু দুধ খেয়ে নাও।

আঃ, কী মিষ্টি, কী ঠাণ্ডা সে দুধ, যেন অমৃত! রসগোল্লা তার গা থেকে খানিকটা ভেঙে শোভনাকে খেতে দিল। এমনি মিষ্টি জিনিস সে কখনও খায়নি।

খাওয়া শেষ হ’লে শোভনা বললে, চলো, তোমাদের দেশ দেখব। আচ্ছা, এখন ত রাত, সবাই ঘুমুচ্ছে?

রসগোল্লা গা থেকে যা ভেঙে দিয়েছিল তা তখনই আপনা-আপনি ভরে গেল। সে আবার পেট ফুলিয়ে হেসে বললে, ‘তোমরা যেমন দিনে জাগো রাত্রে ঘুমোও, আমরা তেমনি রাতে জাগি দিনে ঘুমুই; দিনে সূর্যের আলো লাগলেই আমরা মরে যাই।’

ছানার তৈরি শহরের দেওয়ালের কাছে এসে রসগোল্লা সজোরে এক ধাক্কা দিলে, একটা ফুটো হয়ে গেল; তার ভিতর দিয়ে শোভনা ও সে শহরে ঢুকতেই ফুটো আপনি বুজে গেল। শহরে প্রবেশ করেই শোভনা অবাক হয়ে গেল। বাঃ, কী আশ্চর্য অদ্ভুত জায়গা! আমাদের মত সেখানকার পথ মাটির নয় সব ময়দার, রাস্তায় ধুলো নেই, সব ময়দার গুঁড়ো। আমাদের যেমন সিমেন্ট দিয়ে ফুটপাত বাঁধানো, সেখানে তেমনি শক্ত ছানা দিয়ে পথ বাঁধানো। সেই আলোর মত শাদা পথের দু’ধারে বড় বড় ছানার বাড়ি রূপার মত ঝক্‌ক্‌ করছে। কোনো কোনো বড়লোক আবার ক্ষীরের বাড়িও করেছে; মাঝে মাঝে দুধের, দইয়ের, ক্ষীরের পুকুর। কত রকমের খাবারে রাস্তায় কী ভিড়! শোভনা ঢুকতেই কতকগুলো খাবার তাকে ঘিরে দাঁড়ালো। লাল-পাগড়িওয়ালা পান্তুয়া হচ্ছে শহরের পুলিস। সে হেসে বললে, ‘সেলাম’। একদল গজা একদল বোঁদের সঙ্গে কি একটা তর্ক করতে যাচ্ছিল, শোভনাকে দেখে তাদের তর্ক থামিয়ে ঘিরে দাঁড়াল, বললে, ‘তুমি এসেছ, ভারী খুশি হলুম।’

রসগোল্লা তাদের হাত থেকে শোভনাকে ছাড়িয়ে রাজপুরীর দিকে নিয়ে চলল। এ দেশের রাজা হচ্ছেন সন্দেশ, এখন আবার খাবো’ সন্দেশবংশ রাজত্ব করছেন। রসগোল্লা তাঁর সেনাপতি, কেন না, যুদ্ধ করতে জোরে ছুটে গিয়ে ঢুঁ মারতে তার মত কেউ পারে না। সাড়ে সাত-পাকওয়ালা জিলিপির বুদ্ধি নাকি ভারী প্যাঁচালো, তাই সে রাজার মন্ত্রী হয়ে আপন খেয়ালমত কু সু মন্ত্রণা দেয়।

গজা-পাড়া, বোঁদে-পাড়া পেরিয়ে তারা দুজনে মস্ত লবণের মাঠে এসে উপিস্থিত হ’ল, একদিকে তেলের একটা দিঘি আর একদিকে ছানার পাহাড়। এখানে এক মস্ত সভা হচ্ছে। শোভনা বললে, এত হৈ চৈ কী হচ্ছে?

রসগোল্লা বললে, ওরা সব ছোট জাত; কী সভা করছে। আশ্চর্য হয়ে শোভনা বললে, ‘খাবারদের ভেতর আবার জাত আছে নাকি?’

রসগোল্লা বললে, ‘হ্যাঁ আছে বৈ কি? এই কচুরি, সিঙাড়া, নিমকি—ওই সব। ওরা আমাদের ঘর তৈরি করে, পথ সাফ রাখে, খাবারের জোগাড় করে।’

শোভনা জিজ্ঞেস করলে, ওরা এখন জটলা বেঁধে কী করছে?

রসগোল্লা বিদ্রূপের সঙ্গে হেসে বললে, ওদের সভা হচ্ছে।

তাদের বক্তৃতা শুনতে শোভনার ভাবী ইচ্ছা হ’ল। সভায় কাছে আসতেই শোভনা দেখলে, হাজার হাজার কচুরি, সিঙাড়া, লবণের মাঠে বসে গেছে। ছানার পাহাড়ে দাঁড়িয়ে লম্বা ছিপছিপে এক নিমকি তিড়িং তিড়িং লাফিয়ে খুব বক্তৃতা দিচ্ছে, কচুরি-সিঙাড়া নিমকি ভাইগণ, আমরা আর সন্দেশের প্রভুত্ব মানব না; এসো, আমরা ধর্মঘট করি। আর সবাই হাততালি দিয়ে সমস্বরে বলছে, নিশ্চয়, নিশ্চয়! সবাই এমন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে দেখে শোভনার ভারী ভয় হ’ল; সে রসগোল্লাকে বললে, সত্যি যদি ওরা তোমাদের মেরে ফেলে?

রসগোল্লা হেসে বললে, পাগল! এক্ষুনি একদল পান্তুয়া পাঠিয়ে দিলে মারের চোটে সবাই চুপ করে মুখ বুজে কাজে লেগে যাবে।

শোভনাকে নিয়ে রসগোল্লা রাজবাড়িতে এসে পৌঁছল। সোনার মত রাঙা ক্ষীরের তৈরি রাজবাড়ি, তাতে হিরা-মাণিক্যের মত কত লাল, নীল পেস্তাবাদাম বসানো, চাঁদের আলোয় কী সুন্দরই দেখাচ্ছিল! শ্বেতপাথরের মত শাদা ছানার থামওয়ালা বড় সভায় ক্ষীর-মাখনের সিংহাসনে সন্দেশ মহারাজ মাথায় সরের সোনার মুকুট পরে বসে আছেন। পাশে লাল রঙের সাজ পরে জিলিপি মন্ত্রী বসে। সভার ডানদিকে অন্য সব রাজ্যের প্রতিনিধিরা বসে। ফলের রাজ্য থেকে সোনা রঙের পাকা আম রসিক বুড়োর মত বসে; তার সঙ্গে তার সাঙ্গোপাঙ্গ—লাল কমলালেবু যেন ভোরবেলার সূর্যি; কপি একগাদা সবুজ চোগাচাপকান পরে খুব মোটা হয়ে বসে আছে; নীল তরমুজ, সবুজ ডাব আসর জমিয়ে রয়েছে। সব চেয়ে সুন্দর দেখাচ্ছিল, ফুলের দেশের প্রতিনিধিদের। রক্তগোলাপ, রক্তপদ্ম, শুভ্রবেলা, হাসুহানা সবাই সভার এক কোণ আলো করে বসেছিল। আর সভার বাঁদিকে রাজপুত্র রাজপরিবারের সবাই কতরকম সাজ করে বসে আছে। কেউ ত্রিকোণ মন্দিরের মত, কেউ বা এক চাকার মত, কেউ বা একটা ছোট বল।

শোভনা ঢুকে সন্দেশরাজকে প্রণাম করতে তিনি তাকে বসতে বললেন, এক ক্ষীরমোহন এসে হাত ধরে তাকে মাখনের নরম গদিতে বসিয়ে দিলে। শোভনা বসতেই দেখে, চিনির লাল নীল অলঙ্কার পরা এক হলদে বিস্কুট সাইকেলের চাকার মত গড়াতে গড়াতে এসে তাকে ডাকছে,—শোভনা, আমায় চিনতে পারছ না? আমি কেকরাজ্যের প্রতিনিধিরূপে এসেছি!

রাজা এতক্ষণ সেনাপতির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেনাপতিকে দেখে বললেন, আমি ত বলি যুদ্ধ!

রসগোল্লা আশ্চর্য হয়ে বললে, কীসের যুদ্ধ মহারাজ?

সন্দেশরাজ গলা চড়া করে বললেন, জান না, আমার দূত দরবেশকে কেকরাজা অপমান করে পাঠিয়েছে।

দরবেশ তার পাকা দাড়ি নেড়ে বলে উঠল, শুধু অপমান মহারাজ, চপ-সেনাপতি বলেছে, এবার রসগোল্লাকে দেখে নেব, সে কত যুদ্ধ করে!

শোভনা ধীরে বিস্কুটকে জিজ্ঞেস করলে, ব্যাপার কী?

বিস্কুট গম্ভীরভাবে বললে, ব্যাপারটা গুরুতরই, আমাদের দেশের সঙ্গে এদের লড়াই বাধাবার চেষ্টা হচ্ছে। এই শাদা দুধের নদীটা দেখছ, তার ওপারে আমাদের দেশ। আমাদের প্লামকেক্ রাজবংশের সঙ্গে এ-দেশের রাজবংশের যুদ্ধ চলছে। এ-রাজার কোন্ পিতৃপুরুষ ও-রাজ্যের রাজকন্যাকে বিয়ে করতে চায়, আমাদের দেশের রাজা রাজি হলেন না, লাগাও যুদ্ধ। সে যুদ্ধ তিনপুরুষ চলে। তার পরে এ-রাজার প্রপিতামহের আমলে ভীষণ যুদ্ধ লাগে; ওই যে দুধের নদীটা

দেখছ, তার অর্ধেক এ-রাজার, অর্ধেক আমাদের রাজার; এখন ঠিক নদীর মাঝখানটা যে কোথায় তা আর মীমাংসা হল না। তাই নিয়ে দু-পুরুষ যুদ্ধ চলল। এ-যুদ্ধে একলাখ কচুরি, দুলাখ সিঙাড়া-নিম্‌কি, পাঁচলাখ চপ্‌-কাটলেট মরেছিল। এখন এ-রাজার আবার যুদ্ধ করবার সখ হয়েছে। আসল কি জান এই যে জিলিপি মন্ত্রীটিকে দেখছ, ওঁর বুদ্ধি যেমন প্যাঁচালো, লোকটিও তেমনি। ওঁর মতলব এই কড়া রাজাকে সরিয়ে নতুন রাজবংশ বসিয়ে আপনিই রাজত্ব করেন। অবশ্য আরও কারণ আছে। চিজ কেকের এক সুন্দরী বোন আছেন পুডিং; তাঁকে উনি বিয়ে করবেন ব’লে দরবেশকে ঘটকালি করতে পাঠিয়েছিলেন। তারা দরবেশকে যে খেয়ে ফেলেনি এই ভাগ্যি। আরও কি জানো, আমাদের দেশে অনেক চিজের সরোবর, ডিমের কুসুমের পুকুর, জ্যাম-জেলির ছোট ছোট নদী আছে,—এই খালি ক্ষীর, দই ছানা খেয়ে এদের অরুচি হয়ে গেছে, নতুন খাবার চাই—।

রাজা মাথায় মুকুট নেড়ে বললেন, তা’হলে মন্ত্ৰী, কী বল?

জিলিপি কথা পাকিয়ে পাকিয়ে বললে, মহারাজের যা আদেশ, আমরা ত আজ্ঞা পালনকারী, ভৃত্যমাত্র।

সহসা সভার দ্বারে এক ভীষণ গোলমাল শোনা গেল। তারপর একদল ক্ষিপ্তপ্রায় কচুরি, সিঙাড়া, নিমকি যেন-গরম খোলা থেকে লাফিয়ে উঠে এসে ছুটে সভার মাঝে দাঁড়াল। মহারাজ রক্তনেত্রে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কে তোমরা?

আমরা মহারাজের দীন প্রজা।

জিলিপি মুচকে হেসে বললে, তোমরা না বিদ্রোহ করে মহারাজের মুণ্ড কাটবে?

সন্দেশরাজ ক্রুদ্ধ হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কী চাও?

আমরা সমান অধিকার চাই। আমরা তেলের ডোবায় স্নান করি, কেন ঘিয়ের পুকুরে নামলে জেলে যেতে হবে? আমাদের গ্রামের পথে খালি লবণ, আর রসগোল্লা-পাওয়ার নগরে চিনি! কেন এ প্রভেদ? আমরাও খাবার, তারাও খাবার!

রাজা মুচকে হেসে বললেন, সে হবে পরে। এখন কেক্ রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে চলো।

কচুরি-দলপতি লাফিয়ে বললে, মহারাজ, আর আমার যুদ্ধ করব না। আমাদের পিতৃপুরুষেরা অকারণে রাজাদের খেয়াল মেটাতে যুদ্ধ করে মরেছে—আপনাদের একটা খুশি, একটা মতলবে কত শত মরেছে,—আর আমরা ভুলছি না-এ অত্যাচার আর সইব না।

রাজা একটু ভীত হয়ে মন্ত্রীর দিকে চাইলেন।

জিলিপি তার লাল-পোষাক ফুলিয়ে বাঁকা বাঁকা কথায় বলতে লাগল, আরে মূর্খের দল এ-যুদ্ধ কী তোদের স্বার্থের জন্য, তোদের সুখবৃদ্ধির জন্য নয়? তোদের মঙ্গল ভেবে আমার চুল পেকে গেলে, আর তোরা কী অকৃতজ্ঞ! সাধে কি তোদের ছোট জাত বলে! এ যুদ্ধ যদি জয়ী হই, তবে কেক্-চপের দেশে যত মাংসের পাহাড়, যত চর্বির পুকুর, সে-সব কাদের হবে?—তোদের হবে বোকা!

নতুন খাবার লাভের আশায় সবাই জয়ধ্বনি করে বললে, যুদ্ধ চাই! যুদ্ধ!

শুধু তাদের তিন বীর সর্দার ম্লান হাসি হেসে বললে, আর যত পনীরের সরোবর, যত মদের পুকুর, সেগুলো কাদের হবে মন্ত্রী? বুঝেছি জিলিপিমন্ত্রী, এখন এদেশে থেকেই তোমাদের জন্যে খাবার বয়ে আনতে হয়, তখন সে দেশ থেকেও বয়ে আনতে হবে।

জিলিপি তখন ক্রোধে লাল হয়ে বললে, এ বিদ্রোহীর সমুচিত শাস্তি দিতে হবে।

খাবার-সঙ্ঘ বলে উঠল, মহরাজ, ওরাই আমাদের ক্ষেপিয়েছে, আমরা আপনার চির-রাজভক্ত প্রজা।

একদল লাল পান্তুয়া বিদ্রোহী দলপতিদের ধরে নিয়ে গেল। সমস্ত সভা মুখরিত ক’রে সবাই চেঁচিয়ে উঠল, যুদ্ধ চাই! যুদ্ধ!

কেক্ ও বিস্কুট প্রতিনিধি যুদ্ধ ঘোষণার বার্তা নিয়ে তাদের দেশের দিকে ছুটল। চারিদিকে লাফালাফি চেঁচামেচি পড়ে গেল। কচুরি, সিঙাড়া, নিমকি, গজা, বোঁদে, পাওয়া সবাই নেচে সেই ক্ষীরে গড়া সভাকে ভেঙ্গে ফেলে আর কি! শুধু রসগোল্লা চুপে চুপে শোভনাকে নিয়ে যুদ্ধের মন্ত্রণাগার থেকে চলে গেল!

যে দুধের নদীতীরে রসগোল্লার সঙ্গে শোভনার দেখা হয়, তার পরপারে কেক্রাজার দেশ। তখন প্লাম-কেক্-রাজবংশ সিংহাসনে বসে রাজত্ব করছিলেন। এ দেশের পথ ময়দার বটে, তবে তার স!ে প্রায়ই মাংস মেশানো; আমাদের পথে যেমন মাটির স!ে খোওয়া ভরা। বাড়িগুলো প্রায়ই শক্ত লাল মাংসের। মাঝে মাঝে পনীরের, চায়ের কফির পুকুর। তখন সে রাজ্যে খুব নাচগান হচ্ছে। চপের হাত ধরে মিসেস্ পুডিং, কাটলেটের সঙ্গে ফ্রেঞ্চ বিস্কুট, মিস্টার পাঁউরুটির স!ে মিস্ প্লাম্‌কেক নাচতে আরম্ভ ক’রে দিয়েছে। কোকোর দিঘির ধারে চিজের সরের মাঠে কত রকমের কেক্ পুডিং বেড়াচ্ছে, গল্প করছে। হঠাৎ একটা বাঁশি বেজে উঠল, নাচ গান সব থেমে গেল, সবাই বাড়ি ছেড়ে পথে বেরিয়ে এল, যুদ্ধের ডাক এসেছে।

মুহূর্তের মধ্যে পথে দলে দলে সেনা দাঁড়িয়ে গেল। কেক্-পাড়া থেকে দশ হাজার কেক্ বেরিয়ে এল; চপ-নগর থেবে বিশ হাজার কালো কালো চপ্ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে এল। কালেট্‌-গাঁ থেকে পঁচিশ হাজার কালে চাকার মত ঘুরতে ঘুরতে বেরিয়ে এল!

দুধের নদীর দুই ধারে দেশের সেনাদল এসে গর্জন করতে লাগল। পান্তুয়া বলে, আজ সব কেক্রংশ ধ্বংস করব। চপ্ অমনি গর্জ্জন করে বলে, খবরদার! রসগোল্লাকে দেখে নেব, চলে এসো।

এক হাজার রসগোল্লা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তারা জলে কিছুতেই ডোবে না। এপার হ’তে ওপার সারি বেঁধে শুয়ে তারা এক মস্ত সাঁকো বেঁধে ফেলল। সেই পোলের ওপর দিয়ে দশ হাজার কচুরি, বিশ হাজার সিঙাড়া, ত্রিশ হাজার নিম্‌কি, পঞ্চাশ হাজার গজা মার্চ করতে করতে ওপারে গিয়ে উঠল! ওদিকে কালো কালো দৈত্যের মত হাজার হাজার চপ-কাটলেট সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে, কচুরি-সিঙাড়াবাহিনী তীরে উঠতেই তারা তাদের ঠেলে নদীর জলে ফেলে দিতে লাগল। তাদের রাশ রাশ দেহে নদী বুজে যায় আর কি! তখন শোভনা এক পরামর্শ দিলে, এদিকের যুদ্ধটা চলুক, আর কিছুদূর গিয়ে একদল সেনা শত্রুপক্ষের অলক্ষ্যে নদী পার হোক, তারপর হঠাৎ পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে সবাইকে ঠেলে নদীতে ফেললেই হবে। রসগোল্লা-সেনাপতি পরামর্শটা ভালো ভেবে তাই করলে।

এদিকে যখন নিমকির সঙ্গে বিস্কুটের খুব যুদ্ধ চলছে, খখন্ আওয়াজ হচ্ছে, সিঙাড়া তার তিন ধারালো শি দিয়ে প্যাটিসগুলোকে গুঁতোতে শুরু করেছে, কচুরির দল কাটলেটের সঙ্গে জড়াজড়ি করে খুব লড়াই বাঁধিয়েছে, আর লম্বা পান্তুয়ারা কেবংশ ধ্বংস করবার জন্য উদ্যত হয়ে উঠেছে, রসগোল্লার সঙ্গে চপেদের ঘাতাঘাতে আগুন ছুটছে—হঠাৎ পেছন থেকে দমদম-বুলেটের মত বোঁদেবাহিনী এসে

এসে আক্রমণ করলে। খ্রীস্টমাসের কেগুলির ন্যায় মন্দিরের রথের মত প্লামকেগুলো সব সেনাকে উৎসাহিত করে ফিরছিল, তারাও ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। ব্যাপার গুরুতর, লজঞ্চুস ব্রিগেডের ডাক হ’ল।

অমনি লাল নীল হলদে কত রকমের লজঞ্চুস বন্দুকের গুলির মত আগুনের ফুলকি ছুটিয়ে কচুরি-সিঙাড়ার পেট ছেঁদা ক’রে সবাই-এর দেহে হুলের মত ছুটে ছুটে গিয়ে বিঁধতে লাগল। যুদ্ধটা এতক্ষণে বেশ জমে উঠল।

যুদ্ধে দুপক্ষেরই হাজার হাজার খাবার মরছে দেখে শোভনার ভারী দুঃখ হ’ল। সে তাড়াতাড়ি রসগোল্লা-পোল দিয়ে নদী পার হ’ল। কি ক’রে যুদ্ধ থামানো যায় ভাবছে, দেখে হঠাৎ সামনে সেই খাবারের দোকানের ছেলেটি দাঁড়িয়ে। চাঁদের আলোয় ধোওয়া কালো কোঁকড়ানো চুলে ঘেরা তার সুন্দর মুখের দিকে চেয়ে সে হাসছে। প্রভাত শোভনার দিকে চেয়ে বলে উঠল, যুদ্ধ থামাও।

দুপক্ষ যুদ্ধ থামিয়ে চুপ করে দাঁড়াল। শুধু সন্দেশ-রাজবংশের কয়েকজন সন্দেশ প্রতিবাদ করল, কেন যুদ্ধ থামাব? মরি আর জিতি, চালাও যুদ্ধ, চালাও

শোভনা কি বলবে ঠিক করে উঠতে পারছিল না। প্রভাত হেসে বললে, আচ্ছা কীসের জন্য যুদ্ধ, কীসের জন্য সব যুদ্ধ করছ? কচুরির সঙ্গে কাটলেটের, নিমকির সঙ্গে বিস্কুটের কি ঝগড়া, কি শত্রুতা আছে? কিছুই না, কেন মিছামিছি এমন করে সব মরবে?

সবাই ভাবল, তাইত! যুদ্ধের কারণ যে কী তা কেউ জানে না। নিম্‌কি ঠেলে সিঙাড়াকে, সিঙাড়া ঠেলে গজাকে, গজা বোঁদেকে ঠেলে বলে, কী যুদ্ধের কারণটা ঠিক কী? প্যাটিস জিজ্ঞাসা করে চপকে, চপ কালেটের গা ঠেলে বলে বাস্তবিক কীসের জন্য এত মারামারি, কেন এ ঝগড়া? কেক্রাজার আত্মীয়-বন্ধুরা দেখলে, বেগতিক! একখানা প্লামকেক্ গলাবাজি ক’রে বললে, রাজার জন্য যুদ্ধ, দেশের জন্য।

অমনি সবাই চেঁচিয়ে উত্তর দিলে, হাঁ ঠিক, ঠিক, রাজার জন্যে, দেশের জন্যে যুদ্ধ।

শোভনা তখন বললে, আচ্ছা, কচুরি-সিঙাড়া-নিম্‌কি! তোমরা কি এই চপ কাটলেটের দেশ জয় করতে চাও?

তার চেঁচিয়ে বললে, না আমরা চাই না, রাজা আমাদের জোর করে পাঠিয়েছে।

শোভনা আবার বললে, তবে চলো, আর মারামারি ক’রে লাভ নেই, নিজেদের দেশে চলো।

দরবেশ দেখলে মুশকিল হল। যদি যুদ্ধটা জিতুম, এতক্ষণ কেপুরীর সেই সুন্দরীকে বিয়ে ক’রে ফেলতে পারতুম। সে চারদিকে জিলিপির খোঁজ করতে লাগল। কিন্তু রণক্ষেত্রে জিলিপি-মন্ত্রীকে পাবে কোথায়? সেখানে তার টিকিও দেখা যায় না। ও-সব মারামারির মাঝে যেখানে

প্রাণ হারাবার ভয় আছে, এমন জায়গায় সে ভুলেও পা দেয় না। সে যুদ্ধক্ষেত্রের আড়ালে থেকে পরামর্শ দিতে, দেশে দেশে রাজায় রাজায় অকারণে যুদ্ধ বাধিয়ে মজা দেখতে মজবুৎ।

যুদ্ধটা বেশ জমছিল, হঠাৎ এমন থেমে গেল রসগোল্লা-সেনাপতিরও ভারী খারাপ লাগছিল। সে আপন মনে সৈন্যচালনা করে শত্রু-খাবার মেরে ভারী আনন্দ পাচ্ছিল; মারবার আনন্দটা এমন ভাবে বন্ধ হয়ে গেল! সে সৈন্যদের আবার ক্ষেপাতে চেষ্টা করে বিফল হ’ল।

প্রভাত ও শোভনা সবাইকে ভালো করে বুঝিয়ে দিলে, বাস্তবিকই দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ করবার কোন সঙ্গত কারণ নেই, তাদের কোন শত্রুতা নেই; তারা ত সব খাবার-ভাই। তাদের এক রাজা খেয়াল ক’রে আর এক রাজার ওপর রেগে উঠেছেন আর তারা লড়ে মরছে।

সবাই বলে উঠল, ঠিক ঠিক!

প্রভাত ও শোভনা দুজনে হাসিমুখে হাত ধরাধরি করে দাঁড়াল, তাদের ঘিরে যত খাবার নাচতে গাইতে আরম্ভ ক’রে দিলে। কচুরি-সিঙ্গাড়াদের সঙ্গে কেকের বিবিরা, নিমকি-গজার সঙ্গে চপ-কাটলেটের রানিরা, পান্তুয়াদের সঙ্গে সব মিস্ লজঞ্চুস্ হাত ধরাধরি করে নাচতে আরম্ভ ক’রে দিল।

শোভনার যখন ঘুম ভাঙল তখন সন্ধ্যা। অবাক হয়ে চোখ মেলে দেখে, খোলা জানলার পাশে ময়রার দোকানের ছেলেটা এক ঠোঙা খাবার নিয়ে তার মুখের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে হেসে তার দিকে চাইল! এবার প্রভাত পালাল না, শুধু হাত বাড়িয়ে খাবারের ঠোঙা দিতে চেষ্টা করলে। তার হাসিভরা চোখ যেন বলতে চাইল—আমি তোমার জন্যে এই সন্দেশ রসগোল্লা জিলিপি গজা সব এনেছি—তুমি আমাকে তোমার বিস্কুট কেক্ কিছু দাও। শোভনা তাকে আপনার ঘরে ডেকে এনে কত নতুন মজার খাবার খাওয়ালে।

সেইদিন থেকে শোভনার সব অসুখ সেরে গেল। এতদিন ডাক্তারবাবু এত ওষুধ দিয়ে যা সারাতে পারেননি, একদিন সন্দেশ-রাজার দেশ বেড়িয়ে এসে তা সেরে গেল।

সকল অধ্যায়

১. নিখুঁত মানুষ – লালবিহারী দে
২. রানি কঙ্কাবতী – ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়
৩. বানর রাজপুত্র – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
৪. ছোট চোর ও বড় – যোগীন্দ্রনাথ সরকার
৫. ভুতো আর ঘোঁতো – সুখলতা রাও
৬. চুনির জন্ম – ত্রিভঙ্গ রায়
৭. ভোঁদড় বাহাদুর – গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
৮. সন্দেশের দেশে – মণীন্দ্রলাল বসু
৯. মনোবীণা – নরেন্দ্র দেব
১০. দুধ পাহাড় দধিসায়র – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১১. অস্তপাহাড়ে মানুষের মেয়ে – নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়
১২. মায়া আয়না – প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
১৩. সেলাইবুড়ি ও আশ্চর্য ছুঁচ – শৈল চক্রবর্তী
১৪. বন্দিনী রাজকন্যার গল্প – রাধারানী দেবী
১৫. রামধনুকের রাজপুত্তুর – স্বপনবুড়ো
১৬. রাজশ্রী – ইন্দিরা দেবী
১৭. কাঠকন্যা – মৌমাছি
১৮. কাক্কাবোক্কার ভুতুড়ে কাণ্ড – শৈলেন ঘোষ
১৯. নতুন দিনের আলো – মনোজকান্তি ঘোষ
২০. আশ্চর্য আমগাছ – প্রণবকুমার পাল
২১. কী ভালো মেঘ – উত্থানপদ বিজলী
২২. যাদুশ্রেষ্ঠ বীরমাণিক্য – অমিতাভ রায়
২৩. সোনার চাঁপা ফুল – পুণ্ডরীক চক্রবর্তী
২৪. রাজকুমার বৃষস্কন্ধ আর শ্রীময়ী – নবনীতা দেবসেন
২৫. একটা আইসকীরিম একটা কাঠবেড়ালীর গল্প – কার্তিক ঘোষ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন