রসিকতার উৎস সন্ধানে

তারাপদ রায়

(এক) পাঠিকা ঠাকুরানি

‘যা দেবী সর্বভূতেষু

পাঠিকারূপেন সংস্থিতা

নমঃ তস্মৈ নমঃ তস্মৈ

নমঃ তস্মৈ নমো নমো।

মধ্যযুগের কবিরা, এমনকী গত শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত কবিকুল তাঁদের রচনা শুরু করতে নারায়ণ, সরস্বতী, কিংবা গণেশের বন্দনা করে।

আমার নারায়ণ-নারায়ণী, লক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক-গণেশ সবই ওই পাঠিকা ঠাকুরানি। তাঁর রাতুল চরণে এই দেহ নিবেদিত, তার কোমল হৃদয়ে এই প্রাণ বিসর্জিত।

বেশি ভণিতা করে সময় এবং স্থান নষ্ট করতে চাই না। আসল কথাটা বলি। আসল কথা মানে আসল সমস্যা।

আসল সমস্যা ভুলো মন দিয়ে। বিস্মরণ নিয়ে।

আমরা কত কী ভুলে যাই। সেই যে দম্পতি ছুটিতে বেড়াতে যাবে বলে রেলস্টেশনে উপস্থিত হয়েছিল সতেরোটা বাক্স, এগারোটা ব্যাগ, আটটা খুচরো মাল, চারটে বেডিং (স্বামী-স্ত্রী দুজনের যুগ্ম এবং বিচ্ছিন্ন সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা ব্যবস্থাসহ) এবং একটা জলের কুঁজো, একটা চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে—

ভালই চেনেন তাদের পাঠিকাকর্মী (আমার রচনাকে সর্বভারতীয় করতে চাই, অন্যথায় পাঠিকা. ঠাকুরানিই আমার পছন্দ, অবশ্য বধূ ঠাকুরানির পরে)।

রেলস্টেশনে পৌঁছনোর পর স্ত্রীরত্ন স্বামীরত্নকে কী বলেছিল মনে আছে—

স্ত্রীরত্ব—ওগো এত জিনিস আনলাম, যদি ফ্রিজটাকেও আনতাম।

স্বামীরত্ন—ফ্রিজ নিয়ে কেউ ট্রেনে যায়?

স্ত্রীরত্ন—কিন্তু সেই ফ্রিজের উপরে যে আমাদের ট্রেনের টিকিট দুটো ফেলে এলাম।

এর পরের ঘটনার দায়িত্ব আমাদের নয়। কিন্তু অন্য একটা গোলমেলে গল্প মনে পড়ছে।

গল্পটা একেবারেই জটিল নয়, বরং বেশি সোজা। এক অনিদ্রার রোগী প্রচুর ওষুধ খেয়ে অবশেষে স্মৃতিভ্রংশের অসুখে পড়ল। এবং তারপর পরিণতি হল ভয়াবহ।

সে লোকটি ভুলে গেল যে সে অনিদ্রা রোগী। এরপর থেকে সে সারা দিনরাত ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোতে লাগল।

স্যার ওয়ালটার স্কটের বিস্মৃতিশক্তি ছিল অনন্যসাধারণ। একদা তিনি একটি কবিতা লর্ড বায়রনের রচনা বলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। মজার কথা এই যে ওই কবিতাটি মোটেই লর্ড বায়রনের লেখা ছিল না। তার চেয়েও বড় কথা ওই কবিতাটি স্যার ওয়ালটার স্কট নিজেই লিখেছিলেন।

আমার অবস্থা এখন স্যার ওয়ালটার স্কটের চেয়েও করুণ। এখন পর্যন্ত আমার রম্যরচনার সংখ্যা সহস্রাধিক এক কিংবা তারও বেশি। এই এক সহস্র এক রচনার প্রত্যেকটিতে যদি আমি গড়ে পাঁচটা করেও রসিকতা করে থাকি, তা হলে এ যাবৎ লিখিত রসিকতার সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশি।

আমি এখন হাল ছেড়ে দিয়েছি। আমার রসিকতার দোদুল্যমান তরণী এখন স্বেচ্ছায় ভেসে যাচ্ছে।

হায়! কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতো আমার তো সাহস নেই। আমি তো জোর গলায় বলতে পারি না, ‘আমি স্বেচ্ছাচারী।’ সর্বদা ভয়ে ভয়ে, সদাসংকোচে থাকি এই বুঝি নিজের করা পুরনো রসিকতা আবার করে ফেললাম, এই বুঝি ধীমতী, স্মরণসম্ভবা পাঠিকা ঠাকুরানি ঠোঁট উলটিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছেন, তারাপদবাবু? এই রসিকতাটা আর ক’বার করবেন?’

ক্ষমা চাই।

হে মুখরা পাঠিকা, তোমার কাছেও ক্ষমা চাই। তুমি আছ বলেই আমি আছি। তুমি পড়ো বলেই আমি লিখি। আমার লেখা ছাপা হয়। তুমি কেননা বলেই আমার বই বিক্রি হয়। আগে তোমাকে খুশি করার জন্য অন্যের লেখা থেকে চুরি করতাম, বিলিতি বই থেকে টুকতাম, এখন ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়িয়ে গেছে ইচ্ছা-অনিচ্ছায়, জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে, নিজের লেখা থেকেই চুরি করছি, নিজের রচনা থেকে টুকছি।

সুতরাং আরেকবার সেই পুরনো কথাটা স্মরণ করি।

এক নদীতে দু’বার ডুব দেওয়া যায় না। একই বিছানায় দু’বার শোয়া যায় না। একই মুখের ছায়া যেমন মুকুরে দু’বার পড়ে না। তেমনি একই রসিকতা দু’বার করা যায় না।

মার্কিন দেশের লুইসানিয়ার নিউ আরলিনস শহরের প্রাচীন পৃথিবী মানে ওল্ড ওয়ার্লড (Old World) ক্লাবের ভাইস চেয়ার-পার্সন (Vice Chair person) শ্রীমতী থুরি এম এস (MS) লিওনা কার্পেন্টার শুধু প্রাচীন পৃথিবীর নয়, বর্তমান পৃথিবীরও সবচেয়ে সুরসিকা পাঠিকা (তিনি বাংলা জানেন না তাই আমার রক্ষা, না হলে সব ধরে ফেলতেন)।

জগৎ সংসারে এমন কোনও রসিকতা নেই যা লিওনা কার্পেন্টার পাঠ করেননি বা শোনেননি, কিন্তু সকলের সেটা খেয়াল থাকে না। থাকার কথাও নয়। এমনকী এই যে এই অধমাধম, শ্রীল শ্ৰীযুক্ত তারাপদ রায়, এই আমাকেও এমন সব রসিকতা অহরহ শুনতে হয় যেসব আমি নিজেই একাধিকবার লিখেছি।

এসব আলোচনা থাক। লিওনা মেমসাহেবের গল্প বলি।

মেমসাহেবের বয়েস হয়েছে মার্কিনিদের কৈশোর পেরোয় পঞ্চাশে, সে হিসেবে মধ্য পঞ্চাশের লিওনার এখন পূর্ণ যৌবন। তাঁর চেহারা এখন টইটম্বুর, ভরা বর্ষার দিঘির মতো। ফলে তাঁর স্তাবক-অনুস্তাবকের কোনও অভাব নেই। এর মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাঁরা তাঁকে রসিকতা শোনানোর চেষ্টাও করেন, মজার গল্প বলে আনন্দ দিতে চান। আমি মহিলার রসবোধ এবং রসিকতা জ্ঞান দেখে স্তম্ভিত হয়েছিলাম। আমার সঙ্গে যদিও সামান্য পরিচয় হয়েছিল মেমসাহেবের। একদিন এক মহোৎসাহী যুবক টাটকা রসিকতা ভেবে দুয়েকটা পচা গল্প বলল লিওনাকে। লিওনা শুনে খুব হাসলেন।

কিছুক্ষণ বাদে যুবকটি চলে যাওয়ার পরে লিওনাকে আমি বললাম, ‘আচ্ছা আপনি যে এই রদ্দি গল্প শুনে হাসলেন, এ গল্প তো আপনি অনেক আগে থেকেই জানেন। নিজেও বলেছেন, নিশ্চয় দু’-চারবার।’

মৃদু হেসে বুদ্ধিমতী লিওনা বললেন, ‘জানি কিন্তু ও যেভাবে বলেছিল তাতে আরও বেশি মজা পাচ্ছিলাম।’

আমি বললাম, ‘কীসের মজা?’

লিওনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর মধুর হেসে বললেন, ‘মজা নষ্ট হওয়ার মজা।’

এই বিলিতি গল্পটির এখানে হয়তো উপস্থাপন করার তেমন প্রয়োজন ছিল না কিন্তু নিজের সুবিধের এবং আত্মরক্ষার জন্যে এই আখ্যানটি আমি বললাম।

মোটকথা, আমার প্রতিপাদ্য বিষয় হল শ্রীযুক্তা লিওনা কার্পেন্টারের মতো সুরসিকা যদি পুরনো অখাদ্য হাসির গল্প, যা কিনা বহুত এবং যাকে সাদা বাংলায় বলা চলে ‘বস্তাপচা’ তাই শুনে হাসতে পারেন তবে তুমি কেন হাসবে না।

গল্পটা যদি ধরতেও পারো, যদি মনে হয় চেনা চেনা, তুমি নিজেই হয়তো এ গল্প, এই রসিকতা অন্যদের কাছে করেছ তবু আরেকবার হাসো।

হাসতে দোষ নেই।

হাসো। তারাপদ রায়ের সঙ্গে হাসো।

আরেকবার হাসো।

(দুই) নস্যির কৌটো

‘He must not laugh

at his own wheeze

A snuffbox has

no right to sneeze’.

ইংরেজি এই শ্লোকটির রচয়িতার নাম আমি জানি না তবে সাদা বাংলায় এর তরজমা করলে দাঁড়ায়—

নস্যির কৌটোর যেমন

নিজের হাঁচবার অধিকার নেই

তেমনি যে রসিকতা করে

তার অধিকার নেই হাসবার।

শ্লোকটি খারাপ নয় কিন্তু এর মর্মার্থ সর্বগ্রাহ্য নয়।

আমি নিজে দু’জন কালোত্তর মহারসিককে দেখেছি, একজন পরশুরাম এবং দ্বিতীয়জন শিবরাম। দু’জনেই আমার মহাগুরু। দু’জনের কাছেই আমার ঋণ অপরিসীম।

পরশুরাম অর্থাৎ রাজশেখর বসুর মতো গল্প বাংলা ভাষায় আর কেউ লেখেনি। এ রকম সহজ ও সরাসরি মন্তব্য করার পরে পরশুরামের গল্প নয়, গল্পের মধ্যের দুটো শ্লোক স্মরণ করছি।

প্রথমটিতে পাখোয়াজের তাল, চৌতাল, ছ’মাত্রা, চার তাল, দুই ফাঁক—

ধাধা ধিন তা কৎ তাগে, গিন্নি ঘা দেন কর্তাকে

ধরে তাড়া করে খিটখিটে কথা কয়

ধূর্তা গিন্নি কর্তা গাধারে।

ঘাড়ে ধরে ঘন ঘন ঘা কত ধূমধূম দিতে থাকে

টুটি টিপে ঝুঁটি ধরে উলটে পালটে ফ্যালে

গিন্নি ঘুঘুটির ক্ষমতা কম নয়;

ধাক্কা ধুক্কি দিতে ত্রুটি ধনী করে না

নগণ্য নিধন কর্তা গাধা—’

অথবা একই গল্পে ঠিক এরই বিপরীতে

‘ধনী শুনছ কিবা আনমনে,

ভাবছ বুঝি শ্যামের বাঁশি

ডাকছে তোমায় বাঁশবনে

ওটা যে খ্যাঁকশিয়ালী,

দিও না কুলে কালি

রাত-বিরেতে শ্যাল কুকুরের

ছুঁচো প্যাঁচার ডাক শুনে।’

পাশাপাশি শিবরামকেও একটু স্মরণ করা যাক।

একটি নাটক রচনার ব্যাপারে নটশ্রেষ্ঠ আচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ীর ওপর অভিমানভরে তিনি লিখেছিলেন,

‘শিশির ভাদুড়ী নহ।

তুমি বোতলের।’

বলাবাহুল্য, আমার এই বর্তমান লেখায় পরশুরাম এবং শিবরামের এই শ্লোকগুলি নিতান্তই প্রক্ষিপ্ত। শুধু রসিকতার আবহ রচনা করার জন্যে স্মৃতি থেকে এগুলো উদ্ধার করলাম।

আসল জিজ্ঞাসা হল, নস্যির কৌটো হাঁচবে কি না? এইসব কাব্যকৌতুকী কিংবা নিজেদের অন্য কোনও রসিকতা পাঠ করে বা স্মরণ করে পরশুরাম এবং শিবরাম নিজের মনে হাসতেন কি না? অথবা যখন তাঁরা আড্ডায় যেতেন, গল্পগুজব করতেন, সরস কথাবার্তা বলতেন নিজেদের রসিকতায় তাঁরা হাসতেন কি না? যেমন আমি হাসি, আমি আমার অনেক রসিকতা শেষ করার আগে উত্তুঙ্গ আড্ডায় গল্পের মধ্যপথে কতবার যে নিজের রসিকতায় নিজেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়েছি, সে গল্প আর শেষ করা হয়নি—এ রকম নজিরের অন্ত নেই।

আমার নিজের কথা এখানে থাক।

পরশুরাম সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি বিশেষ কিছু নেই। একবার কলেজের কী একটা অনুষ্ঠানের জন্যে তাঁকে নিমন্ত্রণ করতে গিয়েছিলাম। তিনি অত্যন্ত গম্ভীরভাবে নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আমাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

পরশুরামের পরিচিত মহলের লোকদের মুখে শুনেছি এবং লেখায় পড়েছি—তিনি সুরসিক হলেও স্বভাব-গম্ভীর প্রকৃতির লোক ছিলেন। নিজের রসিকতায় নিজে হাসার লোক ছিলেন না।

শিবরাম চক্রবর্তী কিন্তু হাসতেন। রীতিমতো প্রাণ খুলে হাসতেন। একবার সরকারি কাজে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় কিছুদিন ছিলাম। এর অব্যবহিত পরে শিবরাম চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তাঁকে বলেছিলাম, ‘দেখুন কুলপি গিয়ে মালাই বরফের খোঁজ করলাম। কিন্তু বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, কুলপিতে এক ছটাক মালাই বরফ পাওয়া গেল না। কুলপির পোক মালাইয়ের নামই শোনেনি।

শিবরাম একচোট প্রাণ খুলে হাসলেন, তারপর বললেন, ‘দ্যাখো একবার আমারও খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল।’

আমি বললাম, ‘কোথায়?’

শিবরাম বললেন, ‘ওই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাতেই আক্রার বাজারে।’

আমি বললাম, ‘কেন আক্রার বাজারে কী হল?’

শিবরাম বললেন, ‘আক্রার বাজারে গিয়ে দেখি জিনিসপত্র ভারি সস্তা। এত দাম কম যে পিলে চমকে গিয়েছিল।’ নিজের রসিকতায়, আক্ৰা শব্দের ব্যবহারে, নিজেই হাসতে লাগলেন শিবরাম।

স্পষ্ট মনে আছে, একবার গাড়ি করে কলকাতার বাইরের এক সাহিত্য অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলাম। শিবরাম এবং সেইসঙ্গে এক প্রধান অধ্যাপক ছিলেন।

ওঁরা কথাবার্তা বলছিলেন, কথায় কথায় শিবরাম অধ্যাপককে বললেন, ওঁর এক ভাগ্নে আছে, সে একটা জানোয়ার।

অধ্যাপক বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘জানোয়ার কেন?’

শিবরাম হো হো করে হেসে বললেন, ‘জানোয়ার হবে না? বোন থেকে এসেছে যে।’

শিবরামের পানে (Pun) বোন আর বন একাকার।

রাজশেখর বসু নিশ্চয় এ ধরনের রসিকতা করতেন না। যতদূর জানি তাঁর ছিল মাপা কথাবার্তা সংক্ষিপ্ত টিপ্পনি এবং কথাবার্তায় সংযত শব্দ ব্যবহার।

এঁরা দু’জনে আমার মহাগুরু। আমার রসিকতার প্রাথমিক শিক্ষা এবং উৎস হলেন এই দুই মহারথী।

অবশ্য গত শতকের ত্রৈলোক্যনাথ কিংবা এই শতকের অপ্রতিরোধ্য সৈয়দ মুজতবা আলিকে এই সূত্রে স্মরণ না করা মহাপাপ হবে। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় এবং বনফুলও অবশ্যই স্মরণীয়। আর সেইসঙ্গে সহযাত্রী ইন্দ্রমিত্র, সঞ্জীব, নবনীতা কিংবা হিমানীশকেও বাদ দেওয়া যাবে না।

শিবরামের ভাষায় বলা যেতে পারে, ‘এদের বাদ দিলে বাদানুবাদ হবে।’

তরল রচনায় বাদানুবাদ কে চায়?

(তিন) তিমিঙ্গিল

হরির উপরে হরি

হরি বসে তায়

হরিরে দেখিয়া হরি

হরিতে লুকায়।

(তৃতীয় পঙক্তিতে ‘দেখিয়া’ না ‘হেরিয়া’ মনে পড়ছে না।)

উপরে উদ্ধৃত ছড়াটি আসলে একটি ধাঁধা। একালের পাঠক-পাঠিকা সম্ভবত এ জাতীয় ধাঁধার সঙ্গে পরিচিত নন।

এটা একটি আভিধানিক ধাঁধা। ‘হরি’ শব্দের বহু রকমের অর্থ, হরির বহু মানে—জল, পদ্ম, ব্যাঙ, সাপ ইত্যাদি। এই ধাঁধাটির ব্যাখ্যা হল—

জলের ওপরে পদ্ম

পদ্মের ওপরে ব্যাঙ বসে আছে

এমন সময় সাপ দেখে

ব্যাঙ জলের মধ্যে লুকাল।

রসিকতার নিবন্ধে এই ছড়াটি কেন এল তা বলার আগে তিমিঙ্গিলকে একবার স্মরণ করি।

তিমিঙ্গিলের কথা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন।

মহাসমুদ্রে তিমি হল সবচেয়ে বড় প্রাণী। কিন্তু সেই তিমিকে গিলে খায় এমন প্রাণীও আছে । তার নাম হল তিমিঙ্গিল। তবু ব্যাপারটা এখানে শেষ নয়, এর পরেও আছে তিমিঙ্গিলগিল যে তিমিঙ্গিলকে গিলে খায়, তারপরে তিমিঙ্গিল গিলগিল রয়েছে এবং এইভাবে গিল, গিল, গিল । ..গিল, গিল একের পর এক রয়েছে, এর কোনও অন্ত নেই।

রসিকতার কাহিনীও তাই, তার কোনও অন্ত নেই। গল্পের পর গল্প। এক গল্পের মধ্যে আরেক গল্প, আরেক গল্পের মধ্যে অন্য এক গল্প। বাঁধাকপির কিংবা পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো কিংবা ওই ‘হরির ওপরে হরি, হরি বসে তায়’ ধাঁধার মতো এক আখ্যান জড়িয়ে আরেক আখ্যান। তারই এ রকমের এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায়, একসময় থেকে অন্য সময়, এক শহর থেকে অন্য শহরে, এক আড্ডাধারীর জবানি থেকে অন্য এক আড্ডাধারীর রচনায়। পরতে পরতে রসকাহিনীর সাবলীল বিস্তার, অবাধ গতিবিধি, এক গল্পের পিঠে আরেক গল্প, তার পিঠে আরেক গল্প—কোথায় সে আখ্যানের আরম্ভ, কোথায় তার উৎস—কবে কোন রসিকতাটি কে প্রথম করেছিল তার অনুসন্ধান অসম্ভব।

বিড়লা তারামণ্ডলে এক ভুবন বিখ্যাত সৌরবিজ্ঞানী পৃথিবীর জন্মরহস্য ও সৌরমণ্ডলে পৃথিবীর অবস্থান নিয়ে বক্তৃতা করছিলেন। মাধ্যাকর্ষণ এবং কক্ষপথে পৃথিবীর আবর্তন আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি ইত্যাদি বিষয়ে প্রাঞ্জল ব্যাখ্যার পর ভদ্রলোক অবশেষে শ্রোতাদের কাছে জানতে চাইলেন তাঁদের কারও কোনও প্রশ্ন আছে কিনা।

এক বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়ালেন। ভদ্রলোক তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার কী প্রশ্ন?’

বৃদ্ধা মহিলা বললেন, ‘আপনার কথা ঠিক নয়।’

ভদ্রলোক বিস্মিত হলেন, প্রশ্ন করলেন, ‘কেন?’

বৃদ্ধা জোর দিয়ে বললেন, ‘ওসব আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি, কক্ষপথ-টক্ষপথ সব বাজে কথা।’

বিস্মিততর ভদ্রলোক পুনরায় প্রশ্ন করলেন, ‘কেন?’

বৃদ্ধা বললেন, ‘আপনি জানেন না। পৃথিবীর কোনও কক্ষপথ নেই। একটা অতিকায় কচ্ছপের পিঠে অবস্থান করছে পৃথিবী। ঘাস-মাটি, সোনা-দানা, হিরে-কয়লা এইসবের একটা পুরু আস্তর সেই কচ্ছপের পিঠের ওপরে আর সেটাই হল আমাদের পৃথিবী।’

বৃদ্ধার এই আনাড়ি জগতের মধ্যে একটা ফাঁক খুঁজে পেলেন বুদ্ধিমান সৌরবিজ্ঞানী। ফস করে প্রশ্ন করে বসলেন, ‘কিন্তু সেই কচ্ছপ এই মহাকাশে, অনন্ত শূন্যে কী করে দাঁড়িয়ে আছে।’

বৃদ্ধা গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘ঠিক ওইরকম অন্য একটা কচ্ছপের পিঠে।’

সৌরবিজ্ঞানী অতঃপর হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, (তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কী উত্তর পাবেন তবু তাঁর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা তাঁকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করল)। ‘ওই দ্বিতীয় কচ্ছপটা কী করে মহাশূন্যে ভাসবে?’

বৃদ্ধা বললেন, ‘এখনও বুঝতে পারছেন না? ওই কচ্ছপটা ঠিক ওইরকম আরেকটা কচ্ছপের পিঠে বসে আছে।’

মানে? কচ্ছপের পিঠে কচ্ছপ। দ্বিতীয় কচ্ছপ তৃতীয় কচ্ছপের পিঠে, ততীয় চতুর্থের এইভাবে অর্থাৎ ক্রমাগত কচ্ছপ।

মানে সেই হরির ওপরে হরি। রসিকতার পিঠে রসিকতা, রসিকতার ওপরে রসিকতা অর্থাৎ সেই হরির ওপরে হরি।

গোপনে পাঠক মহোদয়দের নিবেদন করছি, আমি জানি, আপনারা কেউ ভুলেও আমার লেখা কখনও পড়েননি। আমার ভাল হয়েছে না খারাপ হয়েছে সেই আমি জানি না, আপনি ইচ্ছে হলে আপনাদের জননী-জায়া বা কন্যকার কাছে জেনে নেবেন—

তবে আপাতত এই রসিকতাগুলো আমি করছি শুধু জায়াদের জন্যে। কারণ এই আখ্যানগুলো জায়ামুখী।

বেশি আড়ম্বর না করে এক-দুই-তিন করে সাজিয়ে দিচ্ছি।

(১) রসময়বাবুকে তাঁর স্ত্রী রসময়ী দেবী খুব বিরক্ত করছিলেন। বিরক্ত করছিলেন বললে অবশ্য খুব কম বলা হবে, বলা উচিত যাচ্ছেতাই করছিলেন। নানাপ্রকার কটু মন্তব্য, গঞ্জনা, তিক্ত জ্বালাধরা বাক্যবাণ রসময়বাবুকে ক্ষতবিক্ষত, জর্জরিত করছিল।

অবশেষে রসময়বাবু থাকতে না পেরে দাঁত কিড়মিড় করে স্ত্রীকে বললেন, ‘দ্যাখো এখনও সাবধান হও। তুমি খুঁচিয়ে আমার ভেতরের থেকে জানোয়ারটাকে বার করে এনো না।’

রসময়ীদেবী ঝঙ্কার দিয়ে বললেন, ‘সে আমি থোড়াই কেয়ার করি। তোমার ওই জানোয়ার ধরার জন্যে আমি একটা ইঁদুরের কল কিনে রেখেছি।’

(২) স্বামী-স্ত্রীর কলহে ও লড়াইয়ে কে জেতে?

আপাতদৃষ্টিতে এক রাউন্ডে স্ত্রী আবার অন্য রাউন্ডে হয়তো স্বামী জিতেছে বলে মনে হতে পারে। আবার কখনও হয়তো স্বামী ভাবছেন তিনি জিতেছেন আবার ঠিক সেইসময়ে স্ত্রীও ভাবেন তিনি জিতেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই লড়াইয়ে কেউ জেতে না এবং কেউ হারেও না।

এ বিষয়ে এক স্বামী তাঁর বন্ধুদের কাছে গর্ব করেছিলেন যে তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করতে গেলে তাঁর স্ত্রীকে হামাগুড়ি দিতে হয়।

সবাই অবাক। স্ত্রী বেচারির কেন হামাগুড়ি দিতে হয়?

স্বামী বললেন, ‘ঝগড়া আরম্ভ হওয়া মাত্র আমি খাটের নীচে লুকোই। আমার বউকে তখন ঝগড়া করতে গেলে হামাগুড়ি দিতেই হবে। উবু হয়ে বসে চেঁচাতে হবে।

(৩) একবার এক জনপ্রিয় প্রসাধন নির্মাতা তাঁর প্রচার-সচিবকে বললেন, ‘দ্যাখো, গৃহিনীরাই সংসার চালায়। আমি তাদের কাছে আমার পণ্যের সংবাদ সরাসরি পৌঁছে দিতে চাই। টিভিতে সিনেমায় বিবিধ ভারতীতে, খবরের কাগজে, পত্রিকায় অনেক তো বিজ্ঞাপন দিলাম। মা লক্ষ্মীদের কাছে এবার থেকে চিঠি মারফত যোগাযোগ করতে চাই।’

প্রাচীন ও বিচক্ষণ প্রচার-সচিব বললেন, ‘আজ্ঞে।’

প্রসাধন নির্মাতা বললেন, ‘আজ্ঞে-টাজ্ঞে নয়, আজ্ঞে ঢের হয়েছে। এবার বলো মা লক্ষ্মীদের নাম ঠিকানা জোগাড় করবে কী উপায়ে আর তারপর চিঠি পাঠালেও সে চিঠি তারা পড়বে তার কি নিশ্চয়তা আছে?’

প্রচার সচিব সারাজীবন ধরে অনেক দেখেছেন, অনেক শুনেছেন, অনেক ঘাটের জল খেয়েছেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাঁর। তিনি বহুরকম চিন্তা করে তারপর মালিককে বললেন, ‘দেখুন স্যার । টেলিফোন ডিরেকটরি থেকে কর্তাদের নাম ঠিকানা ধরে চিঠি দিলেই চলবে।’

‘তা হলেই হয়েছে।’ খেঁচিয়ে উঠলেন মালিক। ‘কর্তারা সে চিঠি পড়তে যাবেন কেন? গিন্নিদের কাছে সে চিঠি পৌঁছাবেই না। কর্তারা পাওয়ামাত্র সে চিঠি বাজে জঞ্জাল ভেবে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দেবে।’

প্রচার-সচিব বললেন, ‘চিঠি তো ডাকবাক্সে যায় দুপুরবেলায়। কর্তারা তখন অফিসে। বাড়ির ডাকের চিঠি গিন্নিদের হাতেই প্রথম পৌঁছয়।’

মালিক বলেন, ‘তা না হয় পৌঁছাল কিন্তু কর্তার নামে চিঠি গিন্নিরা পড়বে কেন?’

এতক্ষণে প্রচার-সচিব মৃদু হাসলেন এবং বললেন, ‘আলবাত পড়বে স্যার। শুধু একটা কায়দা করতে হবে।’

বিস্মিত মালিক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী কায়দা?’

প্রচারসচিব বললেন, ‘খুব সোজা আর পুরনো কায়দা স্যার, চিঠিগুলো নীলরংয়ের খামে সেন্ট মাখিয়ে পাঠাতে হবে। ঠিকানা লেখা হবে মেয়েলি হরফে আর খামের ওপরে লেখা থাকবে ‘একান্ত ব্যক্তিগত’। একটু মুচকি হেসে প্রচার-সচিব যোগ করলেন, ‘আপনিই বলুন স্যার, এ চিঠির খাম খুলে না পড়ে মা লক্ষ্মীরা থাকতে পারবেন?’

জায়াজড়িত এই গল্পক্রয় শুধু পাঠিকারাই পড়লেন? কিন্তু এমন কোনও পাঠক যদি কেউ পাঠ করে থাকেন এই মেয়ে হাসানো কথিকা তাঁর দয়া ও শ্রমের জন্যে আমি তাঁকে একটি পুরস্কার দিতে চাই।

পুরস্কার আর কিছুই নয় একটি উপদেশ—

‘যদি আপনার গৃহিনীর কখনও কোনও কারণে ঠান্ডা লেগে বা সর্দিতে গলা বসে যায়, মহিলা যদি কথা বলতে না পারেন, দয়া করে ডাক্তার দেখাতে যাবেন না, এই দুর্মূল্যের বাজারে ডাক্তার দেখিয়ে পয়সা খরচ করে লাভ নেই। বরং সেদিন খুব আড্ডা-টাড্ডা দিয়ে, তাস-টাস খেলে পারলে কিঞ্চিৎ মদ্যপান করে একটু বেশি রাতে বাড়ি ফিরবেন। দেখবেন আপনার গৃহিনীর কণ্ঠস্বর কেমন সতেজ ফিরে এসেছে।

(চার) উৎস সন্ধানে

Here is to the joke, one good old joke

The joke that our fathers told…

When Adam was young it was on his tongue

And Woah got in the swim…

We will hear it again to night.

তিমিঙ্গিলি অধ্যায়কে সরস করতে গিয়ে কিঞ্চিৎ অপ্রাসঙ্গিক গল্প বলা হয়ে গেল। শুধু বলা হল এই কারণে যে এইসব গল্পের কোনও দেশ কাল জাতিধর্ম নেই। তবে কোনও হাসির গল্পই বোধহয় শেষ পর্যন্ত অপ্রাসঙ্গিক নয়।

সেই গল্পটি মনে আছে?

দোতলায় শোয়ার ঘরে দুই বোন খেলা করছে। হঠাৎ খেলা থামিয়ে বড় বোন ছোট বোনকে বলল, ‘দ্যাখ, আমার মনে হচ্ছে, নীচের বসবার ঘরে বাইরের কোনও লোক বেড়াতে এসেছেন।’

জীবন অনভিজ্ঞ ছোট বোন প্রশ্ন করল, ‘কী করে বুঝতে পারলি দিদি?’

‘শুনতে পাচ্ছিস না?’ দিদি প্রশ্ন করল।

‘কী শুনতে পাচ্ছি?’ বোন বলল।

এবার দিদি বোঝাল, ‘কেন শুনতে পাচ্ছিস না বাবা মজার গল্প বলছে আর মা হাসছে। বাবার গল্প শুনে মা কখনও হাসে? বাইরের লোক রয়েছে বলেই না।’

বিগত তিমিঙ্গিল পর্বে স্বামী-ঘটিত যে কয়টি সরস কথিকার উল্লেখ করেছি সেগুলির একটিও যে আমার মৌলিক রচনা নয় সেটা নিশ্চয় সবাই ধরতে পেরেছেন।

কিন্তু তার জন্যে আমার কিছু আসে যায় না। আমি মোটেই লজ্জিত বা সংকুচিত নই একথা স্বীকার করতে যে আমার লেখার অন্তত চার আনা অংশ কখনওই আমার নয়।

তবে এগুলো কার লেখা বা কার বলা কিংবা মোটামটি বলা যায় কার রচনা সেটা আমি জানি না, কেউ জানে না।

এসব গল্প স্থান-কালের সীমানা মানে না। দেশে দেশে কালে কালে ঘুরে বেড়ায় এই সরস গল্পগুলো। লোকমুখে, আড্ডায়-আড্ডায়, চায়ের দোকানে, সরাবখানায়, বার লাইব্রেরিতে, টিচারস রুমে, খবরের কাগজের ডেস্কে এমনকী পাড়ার রকে, কলেজের লাস্ট বেঞ্চে এই গল্প একেকজন একেকভাবে বলে। মুখে মুখে একটু রদবদল হয়, গল্পের নায়িকা গাউনের বদলে শাড়ি পরে আসে। দজ্জাল গৃহিনী হতভাগ্য স্বামীর কখনও টাই ধরে, কখনও টিকি ধরে, কখনও দাড়ি ধরে আবার অশ্লীল রঙ্গকথায় অন্য কোনও অকথ্য জিনিস ধরে টানে।

কিন্তু অন্তর্নিহিত গল্পটা একই।

একবার ভারতীয় এক আদালতে এক ডাকসাইটে উকিল সওয়াল করছিলেন। জটিল ও সুদীর্ঘ সেই সওয়াল, তিনি বড় বড়, মোটা মোটা আইনের বই খুলে একটার পর একটা নজির নিজের স্বার্থে দেখাচ্ছিলেন।

এই নজিরগুলির অধিকাংশই বিলেতের প্রিভি কাউন্সিলের। অবশেষে মাননীয় আদালত বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘উকিলবাবু, আপনি ভুলে যাচ্ছেন এ দেশটা বিলেত নয়, ভারত। বিলিতি নজর দেখিয়ে এখানে সুরাহা হবে না।’

উকিলবাবু বিনীতভাবে বললেন, (কেই বা আদালতকে চটাতে চায়), ‘কিন্তু, ইয়োর অনার, আইনের মূল কথা, অন্তর্নিহিত বক্তব্য শেষ পর্যন্ত তো একই।’

বিচারক মহোদয় অধৈর্য হয়ে বললেন, ‘তা হলে আপনি বলতে চান, প্যান্ট আর ধুতি এক জিনিস!’

উকিলবাবু একটু থমকে গিয়ে তারপর খুব সাবধানে জবাব দিলেন, ‘ইয়োর অনার, ধুতি আর প্যান্ট হয়তো এক জিনিস নয়, কিন্তু, কিন্তু ইয়োর অনার, যদি দোষ না ধরেন বলি…’

ইয়োর অনার গর্জে উঠলেন, ‘কী দোষ ধরব? কী বলতে চান আপনি?’

উকিলবাবু শান্তকণ্ঠে বললেন, ‘আজ্ঞে যা বলতে চাই, মোদ্দা কথাটা হল ধুতি আর প্যান্ট হয়তো, হয়তো কেন নিশ্চয় এক না, কিন্তু ইয়োর অনার, আমরা সবাই তো জানি যে ধুতি আর প্যান্টের অন্তর্নিহিত ব্যাপারটা এক, একেবারে এক।’

সকল অধ্যায়

১. চুরিবিদ্যা
২. নৈশকাহিনী
৩. কালীঘাটের পাখা
৪. ডাকাতের হাতে
৫. পদ্মাসন
৬. শিশুশিক্ষা (১)
৭. ঘুম (১)
৮. পাগলের কাণ্ডজ্ঞান
৯. পদবি ও নাম
১০. ছারপোকার এপিটাফ
১১. ভাগ্যফল
১২. বিশেষজ্ঞ
১৩. ছাতা
১৪. র‍্যাডিস উইথ মোলাসেস
১৫. ঘড়ি
১৬. দরজি
১৭. সংখ্যাতত্ত্ব
১৮. মাতালের কাণ্ডজ্ঞান
১৯. ভূতের কাণ্ডজ্ঞান
২০. বানরের কাণ্ডজ্ঞান
২১. কিঙ্কর-কিঙ্করী
২২. ডাক্তার-ডাক্তার
২৩. দাঁত
২৪. টেলিফোন
২৫. আমি কীরকমভাবে
২৬. মন মোর মেঘের সঙ্গী
২৭. ভ্রমণকাহিনী (১)
২৮. প্রসূতি সদন
২৯. নিজের ওজন নিজে বুঝুন
৩০. জীবজন্তুর কথা
৩১. গোরু (১)
৩২. প্রিয়তমাসু
৩৩. অভিনয় নয়
৩৪. ইঁদুর ও মদিরা
৩৫. টর্চলাইট
৩৬. রং
৩৭. লিফট
৩৮. মদমত্ত
৩৯. সুচিকিৎসা
৪০. অচলার প্রেম
৪১. শেষ পরকীয়া
৪২. তালা
৪৩. কুকুর-কুকুর
৪৪. গোপাল ভাঁড়
৪৫. জগৎপারাবারের তীরে
৪৬. হিন্দি
৪৭. রেফ্রিজারেটর
৪৮. কৃষ্ণকান্ত এবং…
৪৯. মাতাল রহস্য
৫০. আবার মনে মনে
৫১. শেষের সেদিন
৫২. ভবসিন্ধু
৫৩. রবীন্দ্রনাথ
৫৪. …বাচ্চা
৫৫. কুকুর কুণ্ডলী
৫৬. হে মাতাল, অমোঘ মাতাল
৫৭. শিশুপাল
৫৮. ভোজনালয়
৫৯. বাড়ি ভাড়া
৬০. হায় ছবি
৬১. জীবনবিমা
৬২. কোন বাণিজ্যে
৬৩. ডাক্তারের হাতে
৬৪. অঘটন আজও ঘটে
৬৫. সুপরামর্শ
৬৬. পুলিশ
৬৭. ফাঁদ পাতা ভুবনে
৬৮. ধরা পড়েছে দু’জনে
৬৯. রুপোলি পর্দার অন্তরালে
৭০. পিয়ো হে পিয়ো
৭১. ও চাঁদা চোখের জলে
৭২. দামদর
৭৩. মিথ্যা কথা
৭৪. কে কোথা ধরা পড়ে
৭৫. সময়
৭৬. হায় কবি, তুমি শুধু কবি
৭৭. রোগীর বন্ধু
৭৮. রসুন
৭৯. রসিকতা
৮০. স্বর্গ
৮১. দুর্ঘটনার আগে ও পরে
৮২. পণ্ডিত
৮৩. সমস্যা
৮৪. স্বেচ্ছাসেবক
৮৫. বক্তা ও বক্তৃতা
৮৬. আবার বক্তৃতা
৮৭. কলিংবেল
৮৮. ঈশ্বর সমীপে
৮৯. জীব জগতের আজব কথা
৯০. তামাক
৯১. আবার তামাক
৯২. রোগী কাহিনী
৯৩. নরখাদকের কাহিনী
৯৪. আয় শীত, যায় শীত
৯৫. ঘটি-বাঙাল
৯৬. চিড়িয়াখানায়
৯৭. সমান-সমান
৯৮. স্মৃতির খেয়া
৯৯. অচলপত্র
১০০. সচিত্র ভারত
১০১. রাম ও রামকৃষ্ণ
১০২. কৃষ্ণ ও রামকৃষ্ণ
১০৩. স্বপ্ন ও রমণী
১০৪. অবাঞ্ছিত আতিশয্য
১০৫. যা দেবী সর্বভূতেষু
১০৬. মরণ রে
১০৭. ধৈর্যের পরীক্ষা
১০৮. ভুল (১)
১০৯. গল্পের গোরু
১১০. কাজের মেয়ে
১১১. বইমেলা
১১২. স্ত্রী
১১৩. প্রথম কোকিল
১১৪. দ্বিতীয় কোকিল
১১৫. তৃতীয় কোকিল
১১৬. অমল ধবল পালে
১১৭. স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি
১১৮. চিকিৎসা
১১৯. ভূত ও রিপোর্টার
১২০. হাঁচির গল্প
১২১. ভাষা-ভাষা
১২২. বালুকা ডাকিনী
১২৩. ফুটবল
১২৪. প্রশ্নোত্তর
১২৫. অসম্ভব
১২৬. রসিকতার উৎস সন্ধানে
১২৭. ডাক্তারবাবু নমস্কার
১২৮. আত্মনেপদী
১২৯. ভাগলপুরের পাঞ্জাবি
১৩০. পুজোর বাজার
১৩১. অপমান
১৩২. জীবজন্তু (১)
১৩৩. পুজোর ছুটি
১৩৪. ক্রিমিনাল
১৩৫. রবিবারের মহাভারত
১৩৬. আইনের আঙিনায়
১৩৭. বুদ্ধি
১৩৮. শাশুড়ি
১৩৯. দেয়া-নেয়া
১৪০. হে হিসাব
১৪১. মাছ (১)
১৪২. কুসংস্কার
১৪৩. জুয়া (১)
১৪৪. এসো বসি আহারে
১৪৫. শুভ নববর্ষ
১৪৬. রমণী সমাজে
১৪৭. স্বপ্ন
১৪৮. কলকাতা তিনহাজার তিনশো
১৪৯. আবার বইমেলা
১৫০. এক সর্দারের গল্প (১)
১৫১. এক সর্দারের গল্প (২)
১৫২. এক সর্দারের গল্প (৩)
১৫৩. জল
১৫৪. শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন
১৫৫. গাধা
১৫৬. হাওয়াই
১৫৭. সুনন্দর জার্নাল
১৫৮. সরস কলকাতা
১৫৯. সরস কবিতা
১৬০. স্টুপিডেস্ট
১৬১. অবনী, বাড়ি আছো?
১৬২. জুয়া (২)
১৬৩. সময়ের হিসেব
১৬৪. কেনাকাটা: জুতো
১৬৫. ভেজা চপ্পল
১৬৬. জয়বাবা শান্তিনাথ
১৬৭. টেলিফোন
১৬৮. পরিশেষে
১৬৯. জনগণের জোক!
১৭০. মকারান্ত
১৭১. কয়েকটি প্রশ্ন
১৭২. খাওয়া-দাওয়া
১৭৩. বলাবাহুল্য
১৭৪. শরৎচন্দ্র এবং রসিকতা
১৭৫. পৃথিবী
১৭৬. সুখের লাগিয়া
১৭৭. অন্দর মহলে
১৭৮. জোক বুক
১৭৯. সান্টা, বান্টা
১৮০. সরল শৈশব
১৮১. কথা বলার বিপদ
১৮২. সিগারেট
১৮৩. পাটিগণিত
১৮৪. গ্রন্থবার্তা
১৮৫. প্রেমিক-প্রেমিকা
১৮৬. ডাক্তারবাবু
১৮৭. বধূমাতা
১৮৮. কেনাবেচা
১৮৯. বালিশ
১৯০. আপ রুচি খানা
১৯১. কাণ্ডজ্ঞান
১৯২. দুর্ঘটনা
১৯৩. বিজনের রক্তমাংস
১৯৪. বিলিতি বিয়ার-পাব
১৯৫. রাজনীতি
১৯৬. চপলতা
১৯৭. বাগ্বিধি
১৯৮. মশা ও লবণহ্রদ
১৯৯. যদ্দৃষ্টং
২০০. বয়েস বাড়ছে
২০১. ধানাই-পানাই
২০২. আমপাতা জোড়া-জোড়া
২০৩. ভ্রমণকাহিনী (২)
২০৪. হাস্যকবি সম্মেলন
২০৫. মুড়ি-মিছরি
২০৬. গণ্ডারের দুধ
২০৭. তৈজসপত্র
২০৮. পুলিশ
২০৯. গোরু
২১০. অণুনাটিকা
২১১. যদিদং হৃদয়ং
২১২. এমন বাদল দিনে
২১৩. ফাঁসি
২১৪. লেপ
২১৫. ব্যাটবল
২১৬. স্বপ্ন
২১৭. বড়দিন
২১৮. ধনীরাম
২১৯. ব্যাঙ্ক
২২০. জাহান্নাম
২২১. ইতিহাস
২২২. লুঙ্গি
২২৩. সেই বই
২২৪. ধ্বংসের মুখোমুখি
২২৫. ফুরসতনামা
২২৬. পোড়া বই
২২৭. বার্তাকু ভক্ষণ বিল
২২৮. অ্যালেন গিনসবার্গ
২২৯. প্যাঁচ
২৩০. শিশুশিক্ষা (২)
২৩১. লেখাপড়া
২৩২. ডেটলাইন শান্তিনিকেতন
২৩৩. যেভাবে গল্প তৈরি হয়
২৩৪. হায় ভীরু প্রেম
২৩৫. মাতালের গল্প
২৩৬. মনের কথা
২৩৭. চিনা-অচিনা
২৩৮. কয়েকটি অবিশ্বাস্য রসিকতা
২৩৯. মনের চিকিৎসা
২৪০. কান্তকবি
২৪১. জ্যোতিষী
২৪২. আবার জ্যোতিষী
২৪৩. পথের ভিখিরি
২৪৪. গুরু-শিষ্য সংবাদ
২৪৫. ভুলোমন স্বামী
২৪৬. বই চুরি
২৪৭. ফিলমি-ফিলমি
২৪৮. চার্চিল
২৪৯. পঞ্জিকা
২৫০. নিমন্ত্রণ
২৫১. মাছ (২)
২৫২. জানোয়ার
২৫৩. তুমি যে আমার
২৫৪. সৈয়দ মুজতবা আলি
২৫৫. ধারদেনা
২৫৬. শিবরাম চক্রবর্তী
২৫৭. যাচ্ছেতাই লেখা লিখছি
২৫৮. দুর্বৃত্তের শাসানি
২৫৯. নিজের কোট খুলতে পারে না
২৬০. ভোজসভা শেষে বক্তৃতা
২৬১. শুধু পাঠিকারা চিঠি লেখে
২৬২. পাসপোর্ট ফোটোর মতো
২৬৩. আগে পাঁচ ডলারে, এখন?
২৬৪. এত বুড়ো হব নাকো
২৬৫. অপ্রত্যাশিত
২৬৬. গরমের পাখা মাঘ মাসে
২৬৭. বাংলায় কেন হয় না
২৬৮. মধ্যযুগ
২৬৯. শিলিগুড়ি
২৭০. সেদিন বেঙ্গল ক্লাবে
২৭১. বেয়ারা
২৭২. এত কঠিন অঙ্ক
২৭৩. বাড়িওয়ালা
২৭৪. সুনীলের সঙ্গে
২৭৫. পুলিশ এবং রবীন্দ্রসংগীত
২৭৬. দিশি-বিলিতি পুলিশের বৃত্তান্ত
২৭৭. রসলক্ষ্মীর সাধনা
২৭৮. জানলা পড়ল মাথায়
২৭৯. সেদিনের চুম্বনের পরে
২৮০. হাসির উপন্যাস
২৮১. ভুল (২)
২৮২. মহিলা কবিরা
২৮৩. পুরনো কলকাতা
২৮৪. প্রথমেই পঞ্চম সংস্করণ
২৮৫. ঘুষ
২৮৬. আইনমাফিক
২৮৭. বাঁকা কথা
২৮৮. শিশু বিষয়ে
২৮৯. শব্দকল্পদ্রুম
২৯০. জামাইষষ্ঠী
২৯১. আইরিশ রসিকতা
২৯২. পূজা ও রমণী
২৯৩. প্রতিযোগিতা
২৯৪. টকটক গন্ধ
২৯৫. যানবাহন
২৯৬. রস ও রমণী
২৯৭. অনুভব অথবা ভাল লাগা
২৯৮. রেডিয়ো
২৯৯. রিকশা
৩০০. পরিবার পরিকল্পনা
৩০১. মহিলা মহল
৩০২. লালিমা পাল স্মরণে
৩০৩. বোকার মা
৩০৪. স্থূল ও অস্থূল
৩০৫. দম্পতি, দম্পতী
৩০৬. সাদা রাস্তা কালো বাড়ি
৩০৭. লক্ষপতি
৩০৮. গল্পের গতি
৩০৯. পাকিস্তান
৩১০. ইঁদুর
৩১১. এ হর্স ফর মাই কিংডম
৩১২. হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি
৩১৩. প্রজাপতয়ে
৩১৪. একটি উড়ো কাহিনী
৩১৫. সময়জ্ঞান
৩১৬. আমাদের কলের গান
৩১৭. থানা পুলিশ
৩১৮. ভ্রমণকাহিনী (৩)
৩১৯. বয়স বাড়ছে
৩২০. ভুল, ভূল
৩২১. জীবজন্তু
৩২২. ব্যবসা-বাণিজ্য
৩২৩. বিজ্ঞাপন
৩২৪. কবিতার ভাল-খারাপ
৩২৫. জোচ্চোর
৩২৬. বলাই বাহুল্য
৩২৭. গোলমাল
৩২৮. সিনেমা হল
৩২৯. বাসাবাড়ি
৩৩০. তবুও মাতাল
৩৩১. ঢাকঢাক-গুড়গুড়
৩৩২. জলাঞ্জলি
৩৩৩. টাকাপয়সা
৩৩৪. ঘুম (২)
৩৩৫. ওগো বধূ সুন্দরী
৩৩৬. প্রবাসে দৈবের বশে
৩৩৭. তিন পুলিশের গল্প
৩৩৮. দুই শ্রাদ্ধের গল্প
৩৩৯. দুই বাঘের গল্প
৩৪০. ঢাকাই রসিকতা
৩৪১. ওয়ার্ক কালচার
৩৪২. আমি কবি হয়েছিলাম গায়ের জোরে
৩৪৩. যাহা পাই, তাহা চাই না
৩৪৪. পথে পথে কবিতা
৩৪৫. হাং সাং টাঙ্গাইল
৩৪৬. পত্রের উত্তর
৩৪৭. আবার উত্তর
৩৪৮. বিদূষক
৩৪৯. মশা
৩৫০. খাদ্য সমস্যা
৩৫১. বউ কথা কও
৩৫২. শেফালি
৩৫৩. ভালবাসার সন্ধানে
৩৫৪. স্বর্গ যদি কোথাও থাকে
৩৫৫. তারি লাগি যত
৩৫৬. জাহাজ
৩৫৭. স্ত্রী রত্ন
৩৫৮. আদ্যনারায়ণ
৩৫৯. আমার ভাগ্য
৩৬০. পরোপকার
৩৬১. অফিস
৩৬২. ভদ্রলোক
৩৬৩. কাকের মাংস
৩৬৪. স্বর্গ নরক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন