যানবাহন

তারাপদ রায়

বৎসরান্তে মা দুর্গা যখন পিত্রালয়ে মানে আমাদের এই মরুভূমিতে আসেন, শূন্যে উড়ে কিংবা পায়ে হেঁটে আসেন না, বছর বছর বিচিত্ররকম যান ব্যবহার করেন তিনি।

পঞ্জিকায় নির্দিষ্ট পৃষ্ঠায় অর্থাৎ শারদ শুক্লাষষ্ঠীর পাতায় দেখা যাবে এ বছরে জগজ্জননী কেমন যানে আসেন। জগজ্জননীর রুচিবৈচিত্র্য একালের অতি আধুনিকাদেরও হার মানায়, তিনি প্রত্যেক বছর একইরকম যান ব্যবহার করেন না। কোনও বছর যদি ঘোড়ার পিঠে চড়ে এলেন তো তার আগের বছরের পঞ্জিকা খুললে দেখা যাবে গতবার নৌকায় এসেছিলেন আবার পরের বছরে হয়তো দেখা যাবে যে দেবী হাতির পিঠে চড়ে আসছেন।

অবশ্য এই প্রত্যেকটি যানের আলাদা আলাদা ব্যঞ্জনা আছে পঞ্জিকাকারদের কাছে। সংক্ষেপে বলা যাবে ফলং মহামারী কিংবা মন্বন্তর।

আমাদের এই রম্য নিবন্ধ যানবাহন নিয়ে। এখানে অবশ্য মা দুর্গার ওইসব হাতি-ঘোড়া ইত্যাদি প্রাচীনপন্থী যান নিয়ে আলোচনা করা সংগত হবে না।

যানবাহনের নানা রকমফের-জলযান, স্থলযান, আকাশযান বা বায়ুযান। ছোট ছেলে ঠাকুরদার কাঁধে চড়ে মেলায় যায়, শ্রীকৃষ্ণ গোরুর পিঠে বসে বাঁশি বাজাতেন, মেয়েরা কলসি বুকের নীচে রেখে নদী সাঁতরায়—চুলচেরা বিচারে এসবই যানবাহনের পর্যায়ে পড়ে। যেমন পড়ে কুকুরে টানা শ্লেজ গাড়ি, বলগা হরিণের এক্কা কিংবা খাড়া পাহাড়ের রোপওয়ের দোদুল্যমান্য চেয়ার।

আসলে যানবাহনের বৈচিত্র্যের অন্ত নেই। তার মধ্যে লিফট বা এলিভেটরকেও ফেলা উচিত কিনা সেটাও ভাবা যেতে পারে। একটি বাচ্চা ছেলে তো নিজে ভেবেই নিয়েছিল যে লিফট স্বর্গে যায়।

ছেলেটি বাবার সঙ্গে কলকাতায় বেড়াতে এসেছিল। তার বাবা তাকে চৌরঙ্গিতে জাদুঘর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ইত্যাদি দেখানোর পরে চৌরঙ্গি রোডের পাশে একটি বহুতল বাড়িতে নিয়ে গিয়ে লিফটে ওঠেন। বালকটির জীবনে এই প্রথম লিফট যাত্রা। লিফট-দর্শনও তার এর আগে কখনও ঘটেনি।

সুতরাং দরজা বন্ধ করে লিফটম্যান যখন হুল-হুল করে ওপরের দিকে রওনা করিয়ে দিল উদ্বিগ্ন বালকটি তার পিতৃদেবকে প্রশ্ন করলেন, ‘বাবা কী হচ্ছে?’

বাবা উত্তর দিলেন, ‘আমরা ওপরে উঠছি।’

বালকটি উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘বাবা, ভগবান জানে তো যে আমরা যাচ্ছি।’

এই বালকটি আমার চেয়ে ভাগ্যবান। মফস্বলি কৈশোর-শেষে পনেরো বছর বয়েসে আমি কলকাতায় এসে প্রথম লিফট দেখি। চড়ার সুযোগ হয় এরও দু’বছর পরে।

তবে যানবাহনের ব্যাপারে আমার বাল্য অভিজ্ঞতা খুব বর্ণাঢ্য। জলযান বলতে আমি ভেলায় চড়েছি, ডিঙিতে চড়েছি, লঞ্চে চড়েছি, স্টিমারে চড়েছি, নৌকোতে তো চড়েইছি। আর সে নৌকোও কতরকম, ঢাকাই নৌকো, গয়নার নৌকো, পানসি, বজরা—আমরা ছিলাম নৌকোর জগতের মানুষ।

শুধু নৌকো নয়, কৈশোর বয়সে আমি মোষের পিঠে চড়ে জলে ভেসেছি, ঘোড়ার পিঠে ডাঙায় ছুটেছি। স্থলযানে চড়েছি ডুলিতে, পালকিতে, গোরুর গাড়িতে, ঘোড়ার গাড়িতে। তবে কোনও সুযোগ ছিল না রেলগাড়িতে বা মোটরগাড়িতে চড়ার।

অনেকে এখনকার সময়কে বলেন অটোমোবিল সভ্যতার যুগ, যেমন প্রাচীন গ্রামীণ সময়কে কৃষি সভ্যতা বলে চিহ্নিত করা হয়।

অটোমোবিল সভ্যতার সঙ্গে এসেছে নতুন অটোমোবিল সংস্কৃতি। সাবেকি ঘর-গৃহস্থী সমাজের সঙ্গে তার বিস্তর ফারাক। যার গাড়ি আছে সে দমদমে আর বেহালায় একই সন্ধ্যায় দুটো বিয়েবাড়ি সেরে, তারপর হাওড়ায় একটা শ্রাদ্ধবাড়ি ঘুরে তারপরেও ক্লাবে গিয়ে মধ্যরাত অতিক্রান্ত করে আড্ডা দিতে পারে। ফেরার পথে বাঁয়ে ডাইনে দু’-চারজনকে নামিয়ে দিয়েও আসে। সে আধুনিক সামাজিক জীব।

কিন্তু যার গাড়ি নেই, তার সামাজিকতা করার ঢের বাধা। এক সন্ধ্যায় একটি বিয়ের নিমন্ত্রণ সারতে ট্যাক্সি-মিনিবাসে তার কালঘাম বেরিয়ে যায়।

অনেকদিন আগে বিখ্যাত প্রবন্ধকার বিনয় ঘোষ (কালাপ্যাঁচা) অটোমোবিল সংস্কৃতি নিয়ে অতি বিদগ্ধ নিবন্ধ রচনা করেছিলেন। ‘কালপ্যাঁচার বঙ্গদর্শন’খ্যাত লেখকের মৃত্যুর আগে সেটিই বোধহয় শেষ রচনা।

বড় বেশি প্রবন্ধ-প্রবন্ধ হয়ে যাচ্ছে রচনাটা। হয়তো গুরুগম্ভীর হলে এডিটর সাহেব খুশি হবেন, দু’-চার পয়সা বেশি দেবেন। কিন্তু সে আমার পোষাবে না, বরং এবার একটু হালকা হই। মোটর গাড়ির দুয়েকটা পুরনো গল্প বলি।

প্রথম দুটো গল্প প্রায় একই রকম। দুটোই পুরনো গাড়ি সংক্রান্ত।

প্রথম গল্পটি এক পুরনো ফোর্ড গাড়ির সুরসিক মালিককে নিয়ে। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য এক সুপ্রাচীন মডেলের ফোর্ড গাড়ি নিয়ে ভদ্রলোক নাজেহাল। প্রতিদিনই গাড়িটির কিছু না কিছু অংশ খারাপ হয়। হয় স্টার্ট নেয় না, না হয় টায়ার পাঞ্চার। কোনওদিন চলতে চলতে স্টিয়ারিং শক্ত হয়ে আটকে যায়, অন্যদিন গিয়ার গোলমাল করে। ব্যাটারি, ইলেকট্রিকের ঝাঞ্ঝাট তো সর্বক্ষণ লেগেই আছে।

ভদ্রলোক গাড়িটি ঘাড় থেকে নামাতে চান। কিন্তু আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বাধা দেয়, ‘ও কাজ করতে যেও না—এমন বনেদি গাড়ি, ফোর্ড গাড়ি বলে কথা! এ-গাড়ি এখন কয়জনের আছে?’

কথাটা সত্যি, কিন্তু গাড়ি যে মোটেই চলমান নয়, অবশেষে বিরক্ত হয়ে ভদ্রলোক একজোড়া শক্তসমর্থ ষাঁড় কিনলেন। সে দুটো গাড়ির সঙ্গে জুতে দিয়ে গাড়ি চালাবেন এই তাঁর বাসনা।

ভদ্রলোকের কান্ড দেখে বন্ধুবান্ধব হতবাক। ভদ্রলোক বুঝিয়ে বললেন, ‘ অত অবাক হওয়ার কিছু নেই। আগে আমার ছিল ফোর্ড গাড়ি, এখন ষাঁড় জুতে সেটা হয়ে যাবে অক্সফোর্ড গাড়ি।’

এই অক্সফোর্ড গাড়ির বৃত্তান্তের মতোই করুণ এক পুরনো মরিস মাইনর গাড়ির কাহিনী। সে গল্পটাও সংক্ষেপে বলি।

কাগজে বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল, মরিস গাড়ি বিক্রি আছে। সেই গাড়ি কিনতে গিয়েছিলেন এক ভদ্রলোক। অতি লজঝরে সেই গাড়িটা যথেষ্ট খুঁটিয়ে দেখার পর ক্রেতা জিজ্ঞাসা করায় বিক্রেতা বললেন, ‘এটা মরিস মেজর গাড়ি।’

ক্রেতা বললেন, ‘যদিও এত বেশি জোড়াতালি, ফুটোফাটা, ঝালাই—তবুও আমার তো দেখেশুনে মনে হচ্ছে ‘এটা মরিস মাইনর’।

বিক্রেতা বললেন, ‘ঠিকই বলেছেন। আগে মরিস মাইনরই ছিল। কিন্তু আঠারো বছর পূর্ণ হয়ে আরও আঠারো বছর হয়ে গেছে। এখনও কি মাইনর থাকবে, কবে মেজর হয়ে গেছে।’

আমি যদি বলি যে ওই গাড়িটার ক্রেতা ছিলাম আমি স্বয়ং, জানি কেউই বিশ্বাস করবেন না। আমি যদি বলি যে ওই গাড়িটা এখন লিটারে কুড়ি কিলোমিটার যায়, সেটাও নিশ্চয় অবিশ্বাস্য।

তাই বিশ্বাসযোগ্য করার জন্যে সত্যি কথাটা বলছি। গাড়িটা সত্যিই লিটারে কুড়ি কিলোমিটারই যায়, তবে তার মধ্যে দু’ কিলোমিটার তেলে আর বাকি আঠারো কিলোমিটার ঠেলে।

যার গাড়ি যত খারাপ, যার গাড়ি যত ঠেলতে হয় তিনি চেষ্টা করেন পরিচিত অপরিচিত আপামর জনসাধারণকে লিফট দিতে, কারণ একটাই, গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে ঠেলার লোক লাগবে তো!

আমার গাড়ির ব্যাপার আরও দুঃখের। একদিন বাড়ি থেকে বেরনোর সময় দেখি আমার প্রতিবেশী খুব ব্যস্তভাবে হনহন করে হেঁটে যাচ্ছেন, নিশ্চয় খুব তাড়া আছে। আমি গাড়িটা থামিয়ে তাঁকে তুলতে চাইলাম, কিন্তু তিনি উঠলেন না, বললেন, ‘হেঁটেই যাই। আমার খুব তাড়াতাড়ি আছে।’

****

আমাদের শৈশবে বিমান এখনকার মতো এত সহজলভ্য ছিল না। তখন আকাশে এত উড়োজাহাজ উড়ত না।

আমরা শৈশব থেকে কৈশোরে অতিক্রান্ত হয়েছিলাম দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে। তখন যাত্রীবাহী বিমান আকাশপথে খুব একটা দেখা যেত না, বিশেষ করে মধ্যবাংলার আমাদের সেই সমতল মফস্বলের অসীম গগনে।

প্রথম যেসব বিমান আমরা দেখি সেসবই যুদ্ধের প্লেন, বোমারু বিমান। সেগুলো ঝাঁক বেঁধে উড়ে যেত বার্মা সীমান্তের দিকে, সেখানে তখন জাপানিরা এগিয়ে এসেছে।

পাড়াগাঁয়ের শান্ত নিস্তরঙ্গ জগৎ আন্দোলিত করে বিহঙ্গকুলকে সচকিত করে বিমানগুলি চলে যেত। নতুন প্রজন্মের বিহঙ্গেরা আকাশের বিমানকে বুঝে ও মেনে নিয়েছে, কিন্তু তখন এমন ছিল, না। দূরাকাশের প্লেন পাখিদের চঞ্চল করে তুলত।

(শহরের রাস্তার কুকুর বা গোরুদের মোটর গাড়ি সম্পর্কে যেমন কোনও ভাববৈকল্য নেই, কিন্তু পাড়াগাঁয়ের রাস্তায় একটা মোটরগাড়ি ঢুকলেই কেলেঙ্কারি ব্যাপার, গোরু দড়ি ছিঁড়ে ছুটছে, দলবেঁধে কুকুরকুল নিরাপদ ব্যবধানে থেকে তাড়া করছে।)

প্রসঙ্গে প্রত্যাবর্তন করি। বিমান সম্পর্কে আমাদের সহজপাঠ প্রথমভাগ ওই যুদ্ধের প্লেন বোমারু বিমান দিয়ে। গ্রামবাংলার রসবোধ সেই যুদ্ধ ও মন্বন্তরের বাজারেও অক্ষুণ্ণ ছিল। সেই সময় জনপ্রিয় গান ছিল,

‘আমি বনফুল গো।’

যতদূর মনে পড়ে, ‘শেষ উত্তর’ সিনেমায় কাননবালার গলায় এই গানটি গাওয়া। তার চমৎকার প্যারোডি হয়েছিল,

‘আমি জাপানি বিমান গো।’

পঞ্চাশ বছর আগের কথা বলে সুবিধে বা লাভ নেই। নতুন যুগের একটা রসিকতা দিয়ে শুরু করি।

ব্রেকফাস্ট দিল্লিতে, লাঞ্চ কলকাতায় আর লাগেজ মাদ্রাজে। ঠাট্টাটি বিমান পরিষেবা নিয়ে।

ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন বিমানযাত্রায় যথাস্থানে মাল ফেরত পাওয়া খুব সহজ নিয়ে। জলখাবার খেয়ে দিল্লি থেকে প্লেনে উঠলেন, লাঞ্চের সময় কলকাতায় পৌঁছালেন, কিন্তু ইতিমধ্যে আপনার লাগেজ ভুল বিমানে চলে গেছে মাদ্রাজে।

মার্কিনি রসিকতা আছে ‘Two rights (= Wrights) make a wrong’। এর মানে কিন্তু এই নয় যে দুটো ঠিক বা দুটো শুদ্ধে একটা বেঠিক বা একটা ভুল। এই রসিকতা রাইট ব্রাদার্সকে নিয়ে, সেই যাঁরা প্রথম বিমান বানিয়েছিলেন, আকাশযানের আবিষ্কর্তা। মোদ্দা কথা হল, রাইট ভ্রাতৃদ্বয় একটা বেঠিক জিনিস, ভুল জিনিস বানিয়েছিলেন।

ভুল-শুদ্ধ জানি না। আমি নিজে বিমানে চড়তে ভালবাসি৷ বিমানের বিনিপয়সায় খাবার ভালবাসি। যদিও জানি টিকিটের দামের মধ্যেই দশগুণ করে ওই খাবারের দাম ধরা আছে। অবশ্য বিদেশি বিমানে আন্তর্জাতিক যাত্রাতেই খাদ্যের মান ভাল হয়। সেও সবসময় নয়, একবার কলকাতা থেকে ঢাকা যেতে বাংলাদেশ বিমানে মাত্র দুটো লজেন্স এবং এক চামচে মৌরি দিয়েছিল।

সে যা হোক, আমার প্রথম বিমানভ্রমণের হাস্যকর অভিজ্ঞতার কথা একটু বলি। এই অভিজ্ঞতার কথা আগেও কোথাও লিখেছি, তা হোক।

জীবনে সেই প্রথম প্লেনে উঠেছি, অকুস্থল দমদম বিমানবন্দর। প্লেনের দরজা বন্ধ হল, সোঁ সোঁ শব্দ করে বিমান আকাশে উড়ল, অতি দ্রুত এত উঁচুতে উঠে গেল যে আমি জানলার পাশে বসে কাচের মধ্য দিয়ে দেখছি নীচের মানুষজনকে একদম পিঁপড়ের মতো দেখাচ্ছে। পরমোৎসাহে পাশের যাত্রীকে বললাম, ‘দেখুন, মানুষগুলোকে কেমন পিঁপড়ের মতো দেখাচ্ছে!’

ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘ধুর মশায়! প্লেন এখনও ছাড়েইনি, সবে স্টার্ট নিচ্ছে। জানলায় ওগুলো সত্যিকারের পিঁপড়ে দেখছেন!’

অতঃপর ট্রেনের প্রসঙ্গ।

শিবরাম চক্রবর্তীকে মনে আছে?

বাংলা সাহিত্যের সেই অপরাজেয় হাস্যশিল্পী, যে কোনও ঘটনাকে জটিল করে তোলার সরস ক্ষমতা ছিল তাঁর।

শিবরাম চক্রবর্তীর একটি বিখ্যাত গল্পে একই ট্রেনেই একই কামরার ওপরের বার্থ এবং নীচের বার্থ দুটি দু’দিকে যাচ্ছে। একটি বোধহয় যাচ্ছে মুম্বাই, অন্যটি দিল্লি। সে যুগে শিবরাম অবশ্য লিখেছিলেন বোম্বাই।

বলাবাহুল্য, এ রকম সম্ভব নয়, আসল ঘটনা হল, এক মুম্বাই যাত্রী ভুল করে দিল্লির ট্রেনে উঠে বসেছেন। পরে যখন শুনছেন ওই কামরাতেই তাঁর সহযাত্রী দিল্লিগামী, তিনি ভাবছেন, বিজ্ঞানের কী অপার মহিমা, একই গাড়িতে ওপরের বার্থে আমি মুম্বাই যাচ্ছি, আর নীচের বার্থে ইনি যাচ্ছেন দিল্লি!

এই যাত্রীটি তাঁর অলীক ধারণা থেকে নিশ্চয় পস্তেছিলেন, কিন্তু রেলগাড়ির ব্যাপারে আরও নানাভাবে পস্তানো যায়।

টাইম টেবিলের কথাই ধরা যাক। ট্রেন কদাচিৎ ঠিক সময়ে আসে। এ শুধু আজকের কথা নয়। আজ থেকে পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে পথের পাঁচালির লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবধারিতভাবে সবসময় ট্রেন ছাড়ার ঘন্টা দুয়েক আগে স্টেশনে চলে যেতেন। এত আগে গিয়ে লাভ কী? এ প্রশ্ন করলে বিভূতিভূষণ বলতেন, ‘ট্রেন যেমন দেরি করে আসে, তেমনি আগেও তো আসতে পারে। এর তো কিছুই স্থির নেই।’ এ বক্তব্য যুক্তিহীন নয়।

একদা এক মারকুট্টে প্যাসেঞ্জার ট্রেন নিয়মিত লেট হওয়ায় রেলের হেড অফিসে চিঠি দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘গাড়ি যদি ঠিক সময়েই না আসে, তবে টাইম টেবিল ছাপান কেন? টাইম টেবিল বিক্রি করেন কোন কারণে, লজ্জা করে না?’

রেল কোম্পানির সুরসিক বড়সাহেব নাকি জবাব দিয়েছিলেন—

‘মাননীয় যাত্রী মহোদয়,

টাইম টেবিল না থাকলে কী করে বুঝতেন যে ট্রেন লেট আছে! ট্রেন লেট করলে শুধু যে যাত্রীদের খুব অসুবিধে হয় তা নয়, রেল কোম্পানির বিপদও কম হয় না।’

একবার এক পাড়াগাঁয়ের মানুষ রেল অফিসে তাঁর গোরুর জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে গিয়েছিলেন।

ক্ষতিপূরণ আধিকারিক সেই ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলেন, ‘আপনার গোরু কি রেলে কাটা পড়েছে?’

ক্ষতিপূরণ-প্রার্থী বললেন, ‘না হুজুর, আমি একজন গোয়ালা, আমার চারটে দুধেল গাই রেললাইনের পাশে আমার খেতে চরছিল, আপনার রেলগাড়ি এত আস্তে আস্তে চলছিল যে প্যাসেঞ্জাররা ঘটি-গেলাস নিয়ে নেমে আমার গোরুগুলোর সব দুধ দুয়ে নিয়ে গেছে।’

রেলগাড়ির গল্প একটু বেলাইনে চলে গেছে, একটু বড়ও হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ট্রেন ফেল করার বৃত্তান্ত বাদ দিলে রেলগাড়ি নিয়ে কিছু লেখা অনুচিত।

খুব সংক্ষিপ্তভাবে দুটি ঘটনা বলছি:

১) বাগনানের আনোয়ার হোসেন এক নম্বরের লেট লতিফ। নতুন গভর্নমেন্ট বলেছেন, ঠিক সময়ে না এলে মন্ত্রীরা হাজিরা খাতা দেখবেন। সরকারি চাকুরে আনোয়ার বিপদে পড়ে গেছেন।

বাড়ি থেকে স্টেশন প্রায় পনেরো মিনিটের হাঁটাপথ। একটা শর্টকাট আছে, তাতে পনেরো মিনিট কমে বারো মিনিট হয়। প্রথম দু’-তিনদিন আনোয়ারদা পনেরো মিনিট আগেই বের হচ্ছিলেন, দীর্ঘসূত্রী মানুষ, কিন্তু আজ দেরি হয়ে গেল।

হনহন করে স্টেশনের দিকে যাচ্ছেন, সামনে ডানদিকে গোপাল চক্রবর্তীর ঢ়্যাঁড়শ ক্ষেত। এটাই শর্টকাট। ঢ়্যাঁড়শ গাছগুলোর মধ্যে দিয়ে কোনাকুনি যেতে পারলে মিনিট তিনেক সাশ্রয় হয়।

আনোয়ারদা দেখলেন গোপাল চক্রবর্তী নিজে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ঢ়্যাঁড়শ খেতে তদারকি করছেন। গোপালবাবুর কাছে গিয়ে আনোয়ারদা বললেন, ‘গোপালদা, আপনি যদি বলেন আমি আপনার ঢ়্যাঁড়শ ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে একটু শর্টকাট করি। অফিসে যা অত্যাচার শুরু করেছে, পৌনে এগারোটার মধ্যে পৌঁছাতেই হবে। শর্টকাট করতে পারলে ন’টা পনেরোর ট্রেনটা ধরতে পারতাম।’

গোপালদা বললেন, “আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু একটা পাগলা ষাঁড় আমার ঢ়্যাঁড়শ ক্ষেতে ঢুকেছে, সে যদি তোমাকে দেখতে পায় তা হলে হয়তো তুমি ন’টা পনেরো কেন ন’টা দশের ট্রেনটাও ধরতে পারবে আনোয়ার।’

২) অতঃপর প্রকৃত ট্রেন ফেল করার গল্প।

ভুবন অগ্রবাল, হাতে ব্যাগ, কাঁধে ব্যাগ, ঘাড়ে ব্যাগ—ছুটতে ছুটতে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢুকে সামনের চা-ওলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ভাই, রাজস্থান এক্সপ্রেস কি ধরতে পারব?’

চা-ওয়ালা বললেন, ‘সেটা নির্ভর করে শুধু আপনার ওপর।’

ভুবনবাবু বললেন, ‘ভাই বুঝতে পারছি না।’

চা-ওয়ালা বললেন, ‘বুঝতে হবে না। আপনি দৌড়নো শুরু করেন। যদি চল্লিশ কিলোমিটার স্পিডে দৌড়াতে পারেন সামনের স্টেশনে ট্রেনটাকে ধরতে পারবেন, দু’মিনিট আগে সেটা ছেড়ে গেছে। কিন্তু তিরিশ কিলোমিটার স্পিডে দৌড়ালে দশ-বারো স্টেশনের আগে ধরতে পারবেন বলে মনে হয় না।’

আমি জন্মেছিলাম রেললাইন-বর্জিত মধ্যবঙ্গের এক প্রত্যন্ত মহকুমায়, সেইজন্যেই হয়তো এই চক্রযানের প্রতি আমার দুর্বলতা খুব বেশি।

কিন্তু শুধু আমারই বা কেন? স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,

‘এ প্রাণ রাতের রালগাড়ি’,

এবং ‘সকাল বিকেল ইস্টেশন আসি’।

আর কবির সেই হঠাৎ দেখা রেলগাড়ির কামরাতেই সম্ভব হয়েছিল একদিন।

রেলগাড়িতে শরৎচন্দ্ৰও অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন। তাঁর উপন্যাসের মহীয়সী পাত্রী রেলগাড়ির কামরা রিজার্ভ করে ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত লোকজন তুলেছিলেন, যা রেল আইনে সম্ভব নয়।

এদেশে প্রথম রেলগাড়ি চালু হওয়ার পর এক শতক বহুদিন আগে অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। রেলগাড়ি আমাদের জীবনের মর্মমূলে পৌঁছে গেছে, বিমান ও অটোমোবিল আগামী শতকেও রেলগাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। একশো বছরের পুরনো বাংলা শিশু ভোলানো ছড়ায় চলে গেছে,

রেলগাড়ি ঝমাঝম

পা পিছলে আলুর দম।

বিমান কিংবা মোটরগাড়ি নিয়ে এমন সর্বগামী ছড়া এখনও রচিত হয়নি, হয়তো কখনও হবেও না।

এবার অযান্ত্রিক যানবাহনের কিছু কথা বলা যেতে পারে। অনেক পুরনো গ্রাম্য শ্লোক আছে,

‘পরের নায়ে গমন,

পরের হাতে ধন,

জোচ্চোরের বাড়িতে নিমন্ত্রণ।

না আঁচালে বিশ্বাস নাই।’

একালের নগরবাসীরা পুরো শ্লোকটা জানেন না, তবে সবাই এটা জানেন যে, ‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই।’

আমরা অবশ্য এই শ্লোকের প্রথম পঙ্‌ক্তিটির সঙ্গে আপাতত জড়িত। ‘পরের নায়ে গমন’ কথাটার অর্থ একালে বোঝা কঠিন। নদীনালার দেশে নৌকোই যেখানে প্রধান যান, সেখানে যার নিজের নৌকো নেই, তাকে অন্যের নৌকোর ওপর নির্ভর করতে হত। কিন্তু যার নৌকো সে যদি না যায় অথবা যাওয়ার সময় না জানায় তা হলে যাওয়া যাবে না। তাই পরের নায়ে গমনের ওপর কোনও ভরসা নেই।

তা ছাড়া পরের নায়ে যাওয়ার কিছু আনুমানিক ঝামেলাও আছে। মোটর গাড়ির মতোই অল্পজলে আটকিয়ে গেলে সে নৌকো ঠেলতে হয়, আবার বাতাস অনুকূল না হলে এবং স্রোত বিপরীতমুখী হলে গুন টানতে হয়। গুন টানা মানে নদীর পার ধরে দড়ি দিয়ে নৌকো টেনে নিয়ে যাওয়া। এ দুটোই কঠিন কাজ। অন্যের নায়ে গমনে এ দুটোর ভয় আছে।

অবশ্য ভাড়াটে নৌকোও ছিল আর ছিল গয়নার বা গহনার নৌকো। গহনার নৌকো হল পাবলিক ভিহিকল—একটা নির্দিষ্ট স্থান থেকে অন্য একটা নির্দিষ্ট স্থান অবদি মাথা প্রতি ভাড়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা।

এর মধ্যেও অলিখিত ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস ইত্যাদি ছিল। ভাড়া বেশি দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে যেতে চাও, সেটা প্রথম শ্রেণী। এর চেয়ে একটু কম, যদি চিতল মাছের মতো সর্বদা কাত হয়ে শুয়ে যাও। আরেকটা ছিল জুতোর বাক্সের মতো, পাশাপাশি শুয়ে যাওয়া, জোড়ায় জোড়ায়, এর মাথার দিকে ওর পা, ওর মাথার দিকে এর পা।

জলযানের প্রসঙ্গে ভেলার কথাও লিখে রাখা উচিত। আমি শুধ ভেলায় চড়েছি তা নয়, ভেলা বানাতেও জানতুম। বাড়ির কলাগাছ কেটে কয়েক টুকরো বাঁশ দিয়ে গেঁথে ভেলা বানানো হত, যেমন ভেলায় একদা বেহুলা-লখিন্দর ভেসে গিয়েছিল। ভেলায় আবার উলটো-সোজা নেই, জলের মধ্যে উলটে গেলেও কোনও অসুবিধে হয় না।

নিবন্ধ দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। এবার জল থেকে ডাঙায় উঠি। সুন্দরবনে যেমন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ, আমাদের কৈশোরে ছিল জলে ভেলা, ডাঙায় সাইকেল।

সাইকেল-সূত্রে একটা পুরনো ঘটনা বলব। সে আমার সাইকেল চালনার গল্প নয়, সাইকেল চড়া শেখার গল্প।

আমরা সাইকেল চড়া শিখতাম বাড়ির কাছে খালের ধারে সাঁকো ঘেঁষা একটা ঢালু জায়গায়। উঁচুতে উঠে প্যাডেলে দু’ পা দেওয়ার পর একটু থিতু হতেই সাইকেলের পেছনে যে ধরে থাকত সে ছেড়ে দিতেই আমিও হড় হড় করে নেমে যেতাম। শিক্ষানবিশির সময় নামার পথে মাঝেমধ্যে আছড়িয়ে পড়তাম মাটিতে।

সুবিধে ছিল, ওখানে লোকজন যাতায়াত বিশেষ ছিল না। তবে এক বুড়ির বাড়ি ছিল। বুড়ি সাঁকোর বাঁধানো দেয়ালে ঘুঁটে দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত।

সাইকেল শিক্ষানবিশরা কখনও-সখনও বুড়িকে চাপা বা ধাক্কা দিত। বুড়ি বিশেষ কিছু বলত না। নাতির বয়সি চালকদের প্রতি তারও একটু দুর্বলতা হয়তো ছিল। ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর নির্বিকার চিত্তে গায়ের ধুলো ঝেড়ে উঠে পড়ত।

কিন্তু আমার কপাল মন্দ। আমি একই দিনে বুড়িকে পরপর তিনবার চাপ দিলাম। তৃতীয়বারে বুড়ি কপাল চাপড়িয়ে চেঁচাতে লাগল, ‘ওগো, তোমরা সবাই দেখে যাও গো, একই খোকা আমাকে পরপর তিনবার চাপা দিল।’

***

যানবাহন নিয়ে কোনও আলোচনা সহজে শেষ হওয়ার নয়। ইচ্ছে করলে হাজার পৃষ্ঠা লেখা যায়। সে যাক, যানবাহন বিষয়ে কিছু লিখলে দুর্ঘটনার কথাও লেখা উচিত। দুর্ঘটনার গল্প দিয়েই শেষ করি।

নবকৃষ্ণবাবু একটি নতুন গাড়ি কিনেছেন। কেনার পর থেকে তাঁর মনটা খুঁতখুঁত করেছে। গাড়িটা কিনতে এত টাকা খরচ হল, তার ওপরে নানা খরচা তেল, মবিল, ড্রাইভার, ট্যাক্স, ইন্সিওরেন্স।

গাড়ি কেনার পনেরো দিনের মাথায় গাড়িটা একটা বড়রকম দুর্ঘটনা করে বসল। কেউ হতাহত হয়নি ভাগ্যক্রমে, কিন্তু গাড়ির দফারফা।

মনে মনে কিন্তু খুশিই হলেন নবকৃষ্ণবাবু। ঠিক করলেন ইন্সিওরেন্স থেকে পুরো টাকা নেবেন, আর গাড়ি কিনতে যাবেন না।

কিন্তু সেটা সম্ভব হল না। বিমা কোম্পানি বলল, ‘না, নগদ টাকা নয়—ঠিক ওই মডেলের একইরকম আরেকটা গাড়ি আপনাকে দেওয়া হবে।’

নবকৃষ্ণবাবু গভীর ধন্দে পড়েছেন। ঠিক আছে, গাড়ির বদলে গাড়ি আসবে। কিন্তু তাঁর স্ত্রীরও তো জীবনবিমা করা আছে। কোনও দুর্ঘটনায় যদি তাঁর স্ত্রী তখন মারা যান, বিমা কোম্পানি কি তা হলে একইরকম বিকল্প ব্যবস্থা করবে? তাঁর স্ত্রীর মতো একই বয়েসি একইরকম দেখতে কোনও মহিলাকে তাঁর ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে?

সকল অধ্যায়

১. চুরিবিদ্যা
২. নৈশকাহিনী
৩. কালীঘাটের পাখা
৪. ডাকাতের হাতে
৫. পদ্মাসন
৬. শিশুশিক্ষা (১)
৭. ঘুম (১)
৮. পাগলের কাণ্ডজ্ঞান
৯. পদবি ও নাম
১০. ছারপোকার এপিটাফ
১১. ভাগ্যফল
১২. বিশেষজ্ঞ
১৩. ছাতা
১৪. র‍্যাডিস উইথ মোলাসেস
১৫. ঘড়ি
১৬. দরজি
১৭. সংখ্যাতত্ত্ব
১৮. মাতালের কাণ্ডজ্ঞান
১৯. ভূতের কাণ্ডজ্ঞান
২০. বানরের কাণ্ডজ্ঞান
২১. কিঙ্কর-কিঙ্করী
২২. ডাক্তার-ডাক্তার
২৩. দাঁত
২৪. টেলিফোন
২৫. আমি কীরকমভাবে
২৬. মন মোর মেঘের সঙ্গী
২৭. ভ্রমণকাহিনী (১)
২৮. প্রসূতি সদন
২৯. নিজের ওজন নিজে বুঝুন
৩০. জীবজন্তুর কথা
৩১. গোরু (১)
৩২. প্রিয়তমাসু
৩৩. অভিনয় নয়
৩৪. ইঁদুর ও মদিরা
৩৫. টর্চলাইট
৩৬. রং
৩৭. লিফট
৩৮. মদমত্ত
৩৯. সুচিকিৎসা
৪০. অচলার প্রেম
৪১. শেষ পরকীয়া
৪২. তালা
৪৩. কুকুর-কুকুর
৪৪. গোপাল ভাঁড়
৪৫. জগৎপারাবারের তীরে
৪৬. হিন্দি
৪৭. রেফ্রিজারেটর
৪৮. কৃষ্ণকান্ত এবং…
৪৯. মাতাল রহস্য
৫০. আবার মনে মনে
৫১. শেষের সেদিন
৫২. ভবসিন্ধু
৫৩. রবীন্দ্রনাথ
৫৪. …বাচ্চা
৫৫. কুকুর কুণ্ডলী
৫৬. হে মাতাল, অমোঘ মাতাল
৫৭. শিশুপাল
৫৮. ভোজনালয়
৫৯. বাড়ি ভাড়া
৬০. হায় ছবি
৬১. জীবনবিমা
৬২. কোন বাণিজ্যে
৬৩. ডাক্তারের হাতে
৬৪. অঘটন আজও ঘটে
৬৫. সুপরামর্শ
৬৬. পুলিশ
৬৭. ফাঁদ পাতা ভুবনে
৬৮. ধরা পড়েছে দু’জনে
৬৯. রুপোলি পর্দার অন্তরালে
৭০. পিয়ো হে পিয়ো
৭১. ও চাঁদা চোখের জলে
৭২. দামদর
৭৩. মিথ্যা কথা
৭৪. কে কোথা ধরা পড়ে
৭৫. সময়
৭৬. হায় কবি, তুমি শুধু কবি
৭৭. রোগীর বন্ধু
৭৮. রসুন
৭৯. রসিকতা
৮০. স্বর্গ
৮১. দুর্ঘটনার আগে ও পরে
৮২. পণ্ডিত
৮৩. সমস্যা
৮৪. স্বেচ্ছাসেবক
৮৫. বক্তা ও বক্তৃতা
৮৬. আবার বক্তৃতা
৮৭. কলিংবেল
৮৮. ঈশ্বর সমীপে
৮৯. জীব জগতের আজব কথা
৯০. তামাক
৯১. আবার তামাক
৯২. রোগী কাহিনী
৯৩. নরখাদকের কাহিনী
৯৪. আয় শীত, যায় শীত
৯৫. ঘটি-বাঙাল
৯৬. চিড়িয়াখানায়
৯৭. সমান-সমান
৯৮. স্মৃতির খেয়া
৯৯. অচলপত্র
১০০. সচিত্র ভারত
১০১. রাম ও রামকৃষ্ণ
১০২. কৃষ্ণ ও রামকৃষ্ণ
১০৩. স্বপ্ন ও রমণী
১০৪. অবাঞ্ছিত আতিশয্য
১০৫. যা দেবী সর্বভূতেষু
১০৬. মরণ রে
১০৭. ধৈর্যের পরীক্ষা
১০৮. ভুল (১)
১০৯. গল্পের গোরু
১১০. কাজের মেয়ে
১১১. বইমেলা
১১২. স্ত্রী
১১৩. প্রথম কোকিল
১১৪. দ্বিতীয় কোকিল
১১৫. তৃতীয় কোকিল
১১৬. অমল ধবল পালে
১১৭. স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি
১১৮. চিকিৎসা
১১৯. ভূত ও রিপোর্টার
১২০. হাঁচির গল্প
১২১. ভাষা-ভাষা
১২২. বালুকা ডাকিনী
১২৩. ফুটবল
১২৪. প্রশ্নোত্তর
১২৫. অসম্ভব
১২৬. রসিকতার উৎস সন্ধানে
১২৭. ডাক্তারবাবু নমস্কার
১২৮. আত্মনেপদী
১২৯. ভাগলপুরের পাঞ্জাবি
১৩০. পুজোর বাজার
১৩১. অপমান
১৩২. জীবজন্তু (১)
১৩৩. পুজোর ছুটি
১৩৪. ক্রিমিনাল
১৩৫. রবিবারের মহাভারত
১৩৬. আইনের আঙিনায়
১৩৭. বুদ্ধি
১৩৮. শাশুড়ি
১৩৯. দেয়া-নেয়া
১৪০. হে হিসাব
১৪১. মাছ (১)
১৪২. কুসংস্কার
১৪৩. জুয়া (১)
১৪৪. এসো বসি আহারে
১৪৫. শুভ নববর্ষ
১৪৬. রমণী সমাজে
১৪৭. স্বপ্ন
১৪৮. কলকাতা তিনহাজার তিনশো
১৪৯. আবার বইমেলা
১৫০. এক সর্দারের গল্প (১)
১৫১. এক সর্দারের গল্প (২)
১৫২. এক সর্দারের গল্প (৩)
১৫৩. জল
১৫৪. শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন
১৫৫. গাধা
১৫৬. হাওয়াই
১৫৭. সুনন্দর জার্নাল
১৫৮. সরস কলকাতা
১৫৯. সরস কবিতা
১৬০. স্টুপিডেস্ট
১৬১. অবনী, বাড়ি আছো?
১৬২. জুয়া (২)
১৬৩. সময়ের হিসেব
১৬৪. কেনাকাটা: জুতো
১৬৫. ভেজা চপ্পল
১৬৬. জয়বাবা শান্তিনাথ
১৬৭. টেলিফোন
১৬৮. পরিশেষে
১৬৯. জনগণের জোক!
১৭০. মকারান্ত
১৭১. কয়েকটি প্রশ্ন
১৭২. খাওয়া-দাওয়া
১৭৩. বলাবাহুল্য
১৭৪. শরৎচন্দ্র এবং রসিকতা
১৭৫. পৃথিবী
১৭৬. সুখের লাগিয়া
১৭৭. অন্দর মহলে
১৭৮. জোক বুক
১৭৯. সান্টা, বান্টা
১৮০. সরল শৈশব
১৮১. কথা বলার বিপদ
১৮২. সিগারেট
১৮৩. পাটিগণিত
১৮৪. গ্রন্থবার্তা
১৮৫. প্রেমিক-প্রেমিকা
১৮৬. ডাক্তারবাবু
১৮৭. বধূমাতা
১৮৮. কেনাবেচা
১৮৯. বালিশ
১৯০. আপ রুচি খানা
১৯১. কাণ্ডজ্ঞান
১৯২. দুর্ঘটনা
১৯৩. বিজনের রক্তমাংস
১৯৪. বিলিতি বিয়ার-পাব
১৯৫. রাজনীতি
১৯৬. চপলতা
১৯৭. বাগ্বিধি
১৯৮. মশা ও লবণহ্রদ
১৯৯. যদ্দৃষ্টং
২০০. বয়েস বাড়ছে
২০১. ধানাই-পানাই
২০২. আমপাতা জোড়া-জোড়া
২০৩. ভ্রমণকাহিনী (২)
২০৪. হাস্যকবি সম্মেলন
২০৫. মুড়ি-মিছরি
২০৬. গণ্ডারের দুধ
২০৭. তৈজসপত্র
২০৮. পুলিশ
২০৯. গোরু
২১০. অণুনাটিকা
২১১. যদিদং হৃদয়ং
২১২. এমন বাদল দিনে
২১৩. ফাঁসি
২১৪. লেপ
২১৫. ব্যাটবল
২১৬. স্বপ্ন
২১৭. বড়দিন
২১৮. ধনীরাম
২১৯. ব্যাঙ্ক
২২০. জাহান্নাম
২২১. ইতিহাস
২২২. লুঙ্গি
২২৩. সেই বই
২২৪. ধ্বংসের মুখোমুখি
২২৫. ফুরসতনামা
২২৬. পোড়া বই
২২৭. বার্তাকু ভক্ষণ বিল
২২৮. অ্যালেন গিনসবার্গ
২২৯. প্যাঁচ
২৩০. শিশুশিক্ষা (২)
২৩১. লেখাপড়া
২৩২. ডেটলাইন শান্তিনিকেতন
২৩৩. যেভাবে গল্প তৈরি হয়
২৩৪. হায় ভীরু প্রেম
২৩৫. মাতালের গল্প
২৩৬. মনের কথা
২৩৭. চিনা-অচিনা
২৩৮. কয়েকটি অবিশ্বাস্য রসিকতা
২৩৯. মনের চিকিৎসা
২৪০. কান্তকবি
২৪১. জ্যোতিষী
২৪২. আবার জ্যোতিষী
২৪৩. পথের ভিখিরি
২৪৪. গুরু-শিষ্য সংবাদ
২৪৫. ভুলোমন স্বামী
২৪৬. বই চুরি
২৪৭. ফিলমি-ফিলমি
২৪৮. চার্চিল
২৪৯. পঞ্জিকা
২৫০. নিমন্ত্রণ
২৫১. মাছ (২)
২৫২. জানোয়ার
২৫৩. তুমি যে আমার
২৫৪. সৈয়দ মুজতবা আলি
২৫৫. ধারদেনা
২৫৬. শিবরাম চক্রবর্তী
২৫৭. যাচ্ছেতাই লেখা লিখছি
২৫৮. দুর্বৃত্তের শাসানি
২৫৯. নিজের কোট খুলতে পারে না
২৬০. ভোজসভা শেষে বক্তৃতা
২৬১. শুধু পাঠিকারা চিঠি লেখে
২৬২. পাসপোর্ট ফোটোর মতো
২৬৩. আগে পাঁচ ডলারে, এখন?
২৬৪. এত বুড়ো হব নাকো
২৬৫. অপ্রত্যাশিত
২৬৬. গরমের পাখা মাঘ মাসে
২৬৭. বাংলায় কেন হয় না
২৬৮. মধ্যযুগ
২৬৯. শিলিগুড়ি
২৭০. সেদিন বেঙ্গল ক্লাবে
২৭১. বেয়ারা
২৭২. এত কঠিন অঙ্ক
২৭৩. বাড়িওয়ালা
২৭৪. সুনীলের সঙ্গে
২৭৫. পুলিশ এবং রবীন্দ্রসংগীত
২৭৬. দিশি-বিলিতি পুলিশের বৃত্তান্ত
২৭৭. রসলক্ষ্মীর সাধনা
২৭৮. জানলা পড়ল মাথায়
২৭৯. সেদিনের চুম্বনের পরে
২৮০. হাসির উপন্যাস
২৮১. ভুল (২)
২৮২. মহিলা কবিরা
২৮৩. পুরনো কলকাতা
২৮৪. প্রথমেই পঞ্চম সংস্করণ
২৮৫. ঘুষ
২৮৬. আইনমাফিক
২৮৭. বাঁকা কথা
২৮৮. শিশু বিষয়ে
২৮৯. শব্দকল্পদ্রুম
২৯০. জামাইষষ্ঠী
২৯১. আইরিশ রসিকতা
২৯২. পূজা ও রমণী
২৯৩. প্রতিযোগিতা
২৯৪. টকটক গন্ধ
২৯৫. যানবাহন
২৯৬. রস ও রমণী
২৯৭. অনুভব অথবা ভাল লাগা
২৯৮. রেডিয়ো
২৯৯. রিকশা
৩০০. পরিবার পরিকল্পনা
৩০১. মহিলা মহল
৩০২. লালিমা পাল স্মরণে
৩০৩. বোকার মা
৩০৪. স্থূল ও অস্থূল
৩০৫. দম্পতি, দম্পতী
৩০৬. সাদা রাস্তা কালো বাড়ি
৩০৭. লক্ষপতি
৩০৮. গল্পের গতি
৩০৯. পাকিস্তান
৩১০. ইঁদুর
৩১১. এ হর্স ফর মাই কিংডম
৩১২. হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি
৩১৩. প্রজাপতয়ে
৩১৪. একটি উড়ো কাহিনী
৩১৫. সময়জ্ঞান
৩১৬. আমাদের কলের গান
৩১৭. থানা পুলিশ
৩১৮. ভ্রমণকাহিনী (৩)
৩১৯. বয়স বাড়ছে
৩২০. ভুল, ভূল
৩২১. জীবজন্তু
৩২২. ব্যবসা-বাণিজ্য
৩২৩. বিজ্ঞাপন
৩২৪. কবিতার ভাল-খারাপ
৩২৫. জোচ্চোর
৩২৬. বলাই বাহুল্য
৩২৭. গোলমাল
৩২৮. সিনেমা হল
৩২৯. বাসাবাড়ি
৩৩০. তবুও মাতাল
৩৩১. ঢাকঢাক-গুড়গুড়
৩৩২. জলাঞ্জলি
৩৩৩. টাকাপয়সা
৩৩৪. ঘুম (২)
৩৩৫. ওগো বধূ সুন্দরী
৩৩৬. প্রবাসে দৈবের বশে
৩৩৭. তিন পুলিশের গল্প
৩৩৮. দুই শ্রাদ্ধের গল্প
৩৩৯. দুই বাঘের গল্প
৩৪০. ঢাকাই রসিকতা
৩৪১. ওয়ার্ক কালচার
৩৪২. আমি কবি হয়েছিলাম গায়ের জোরে
৩৪৩. যাহা পাই, তাহা চাই না
৩৪৪. পথে পথে কবিতা
৩৪৫. হাং সাং টাঙ্গাইল
৩৪৬. পত্রের উত্তর
৩৪৭. আবার উত্তর
৩৪৮. বিদূষক
৩৪৯. মশা
৩৫০. খাদ্য সমস্যা
৩৫১. বউ কথা কও
৩৫২. শেফালি
৩৫৩. ভালবাসার সন্ধানে
৩৫৪. স্বর্গ যদি কোথাও থাকে
৩৫৫. তারি লাগি যত
৩৫৬. জাহাজ
৩৫৭. স্ত্রী রত্ন
৩৫৮. আদ্যনারায়ণ
৩৫৯. আমার ভাগ্য
৩৬০. পরোপকার
৩৬১. অফিস
৩৬২. ভদ্রলোক
৩৬৩. কাকের মাংস
৩৬৪. স্বর্গ নরক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন