অমরজ্যোতি মুখোপাধ্যায়
আজও শয্যায় শুয়ে ছটফট করছিল কমলিকা। তবে তার দৃষ্টির সামনে ভট্টরাইয়ের পরিবর্তে সম্রাটের অবয়ব। সম্রাটের চোখে সে বিস্ময়ের ছোঁয়া দেখেছে। মুগ্ধতা! নারী হয়ে কি সে তা চিনতে ভুল করবে?
চরক-গৃহিণী আজও জেগেছিলেন। হঠাৎ তিনি বললেন, “ভট্টরাই গিয়েছিল কি? এখানেও তো আসেনি।”
“ভট্টরাই!” যেন ঢোঁক গিলল কমলিকা।—”কই! দেখিনি তো!”
“তবে হয়ত যায়নি। যাক। ঘুমোবার চেষ্টা কর।”
কমলিকা বলল, “চেষ্টা তো করছি!” মনে মনে সে ভট্টরাইকেও দেখতে পেল। কেমন যেন করুণ তার মুখ। কমলিকার হঠাৎ কান্না পেল। “তুমি আমার সখা হয়ে থাক, ভট্ট। এর বেশি আশা করলে কষ্ট পাবে। আমার রূপ যৌবন- সৌন্দর্য তোমার জন্য নয়—সম্রাটের জন্য!”
নগরাধ্যক্ষ জাষ্ক এক অন্য ধাতের মানুষ। তিনি নারীরত্নে যতটা না আকৃষ্ট তার থেকে বেশি আকৃষ্ট প্রাকৃতিক রত্নে, ক্ষমতায়, অর্থে। স্বভাবগত ভাবে তিনি নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ। লোককে কষ্ট দিয়ে, অত্যাচার করে—হত্যা করে তিনি আনন্দ পান।
আজ তিনি অলসভাবে বসেছিলেন কার্যালয়ে—নিজের কক্ষে। তাঁর মনে পড়ছিল গতকালের কথা। চোখের সামনে ভেসে উঠল কমলিকার গলার সেই দুর্মূল্য রত্নহারটি। সঙ্গে সঙ্গে তার মনে পড়ে গেল কমলিকার কাছ থেকে শোনা রত্নপেটিকাটির কথা। পুরুষানুক্রমে সঞ্চিত কিছু রত্ন! মহার্ঘ নিশ্চয়। আর তা বহন করে বেড়াচ্ছে এক দস্যু! রত্নগুলি যেন ঝিলমিল করে উঠল।—”না! স্বখেদে তিনি বললেন, না! ঐ রত্নপেটিকা তাকে উদ্ধার করতেই হবে। ধরতে হবে দস্যুটিকে। কোথায় পালাবে সে? সাম্রাজ্যের যে কোন কোণায় তাঁর হাত ঠিক গিয়ে পৌঁছবে। ইতিমধ্যেই সাম্রাজ্যের সব বড় বড় নগর-গঞ্জে সংবাদ পৌঁছে গেছে। দস্যুটির পরিচয় তিনি সংগ্রহ করেছেন পুষ্কলাবতীর সেই সার্থবাহকের কাছ থেকে। এখন শুধু দস্যুটিকে ধরার অপেক্ষা।”
ঝিম লাগছিল জাষ্কের। তিনি ঝিমিয়ে নেবার জন্য চোখ বন্ধ করলেন। হঠাৎ একজন প্রহরী এসে ডাকল, “প্রভু!”
মুখ বিকৃত করে বিরক্ত জাঙ্ক চেঁচিয়ে উঠলেন, “কেন? কী হয়েছে? এত চেঁচাবার কী আছে? দেখছিস না…!”
“আজ্ঞে! সুমন্ত মণিকার একটি সংবাদ পাঠিয়েছেন!”
কী! মণিকার সুকান্ত…নগরের সবচেয়ে বড় মণিকার? কেন, তার দোকান লুঠ হয়েছে নাকি?
আজ্ঞে না। তিনি বলে পাঠিয়েছেন যে, একটি নিম্নশ্রেণির লোক একটি দামি পান্না বিক্রি করতে এসেছে।
দামি পান্না! কোথায়? কোথায় সে?
আজ্ঞে তিনি তাকে দোকানে ছল করে বসিয়ে রেখেছেন।
স্বগোতক্তি করলেন জাঙ্ক।—একটি মাত্র পান্না! তবে কি ওই হচ্ছে দস্যু বাকাটকি? পরখ করতে এসেছে? দেখা দরকার। সুকান্তের সন্দেহ হয়েছে অর্থাৎ সন্দেহ-যোগ্য লোক। বিষয়টি নিশ্চয় গুরুতর। দেখাই যাক, পুষ্কলাবতীর সার্থবাহ দলপতি ভল্লাটকের কথা মেলে কিনা। একমাত্র বোকারাই পুরো পেটিকাটি নিয়ে আসবে।জাঙ্ক দেরি না করে তাঁর অশ্ব-শকটে চারজন প্রহরী নিয়ে নগরের মণিরত্নের কেন্দ্রের দিকে ছুটলেন।
মণিকার কয়েকজন খরিদ্দারকে তাদের প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি দেখাবার ছুতো করে বিক্রেতাটিকে বসিয়ে রেখেছিলেন। ক্রেতারা চলে যাবার পর বিক্রেতাটি আর ধৈর্য রাখতে পারল না। বলল, “না, আপনি অযথা আমাকে বসিয়ে রেখেছেন। আমি অন্য জায়গায় যাই।”
মণিকারের সামনে একটি ছোট কাঠের বেদির ওপর পান্নাটি রাখা ছিল। বিক্রেতাটি তা তুলে নেবার আগেই সুকান্ত সেটি ছোঁ মেরে তুলে নিলেন। “আরে বোস, বোস! একটু দেখতে দাও।” তারপর পান্নাটিকে নিজের চোখের সামনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বলে উঠলেন—”একটি মাত্র রত্ন! দাম একশত কার্যাপণের বেশি হবে না।”
“আমাকে অন্য একজন দুইশত কার্যাপণ দেবে বলেছে। দিন ওটা। আমি উঠি। অনেক হয়েছে।”
সুকান্ত বললেন, “দেখ! তুমি বলছ বটে, এটা কুড়িয়ে পেয়েছ। কিন্তু কী করে বিশ্বাস করব যে তুমি এটা চুরি করে আনোনি? তা ছাড়া বেশি দাম দিয়ে আমরা এমন একটিমাত্র রত্ন ক্রয় করি না। সঙ্গে যদি দশ-কুড়ি-পঞ্চাশটা থাকত, তা হলে তোমার সঙ্গে একটি বোঝাপড়ায় আসা যেত। তোমারও যথেষ্ট থাকত—আমার কিছু। শুধুমাত্র ওই একটি পান্নার জন্য আমি নগরাধ্যক্ষ জাঙ্কের কবলে পড়তে প্রস্তুত নই। তুমি যাও। দুশো কার্যাপণের কথা মিথ্যে কথা। সবাই আমার কথাই বলবে। তুমি বরং সেখানেই যাও।”
বিক্রেতাটি এবার ওঠার নাম না করে সুকান্তের দিকে ঝুঁকে পড়ল। তারপর চারদিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আসলে একটি নয়, আমি একটি রত্নপেটিকাই কুড়িয়ে পেয়েছি। অজস্র রত্ন! যদি উচিত মূল্য দেন, তবে আমি সবকটাই আপনাকে বিক্রি করতে প্রস্তুত। কী নেই সেই পেটিকায়? পান্না, হিরে, মুক্তো, পোখরাজ…! দেখলে আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। পুরো জিনিসগুলো আপনার কেনার ক্ষমতা হবে কি না—তাতেও আমার সন্দেহ।”
নিঃশব্দে দোকানে পা রেখেছিলেন জাঙ্ক। শেষ কথাগুলি তাঁর কানে গিয়েছিল। তাঁর আর সন্দেহ ছিল না যে এই সেই দস্যু বাকাটকি।—সুকান্ত! দেখি পান্নাটি! মণিকারের হাত থেকে রত্নটি নিয়ে সেটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরখ করে জাঙ্ক বলে উঠলেন, “এটি সুবর্ণভূমির পান্না। কোথায় পাওয়া গেল—পুরুষপুরের ধুলোয়?”
বিক্রেতাটি এবার পান্নাটি রেখেই পালাবার উদ্যোগ করল। নগরাধ্যক্ষ জাঙ্ককে সে চেনে। মণিকারটিই তাকে বোকা বানিয়ে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিল—একথা বুঝতে তার ভুল হল না।
জাঙ্ক বিক্রেতাটিকে একটি লাথি মেরে প্রহরীদের বললেন, “এটাকে বেঁধে শকটে তোল। কার্যালয়ে গিয়ে একে দেখছি।—তার আগে বল, পেটিকাটি কোথায়?”
“কিসের পেটিকা? ওসব আমি জানি না।”
সুকান্ত বললেন, “এই যে বললে, একটি পেটিকা রয়েছে…!”
ক্রুদ্ধ মুখে দস্যু বাকাটকি বলল, “বিশ্বাসঘাতক। তোকে আমি দেখে নেব। তুই আমায় চিনিস না।”
জাঙ্ক বাকাটকিক গালে তীব্র একটি চড় কষিয়ে বললেন, “নিজে বেঁচে থাকলে তো! মৃত্যুদণ্ড তো তোর কম দণ্ড হবে। চল।”
পথে ভিড় জমে গিয়েছিল। জাঙ্ক হুংকার দিলেন, “কী চাই? যাও সবাই নিজের কাজে। নইলে সবাইকে ভরে দোব…।”
জনতা সভয়ে সরে গেল।
জাঙ্কের মনের মধ্যে এক বিশাল উত্তেজনা। তাঁর সন্দেহ নেই যে এই সেই দস্যু বাকাটকি। এর নোংরা হাতে রয়েছে সেই রত্ন-পেটিকাটি…! জাঙ্কের ইচ্ছে হল তলোয়ারের এক কোপে সে দস্যুটির হাত দুটি কেটে দেয়। জাঙ্ক দ্রুত চিন্তা করছিলেন, দস্যুটিকে সনাক্তকরণ করাতে হবে কমলিকাকে দিয়ে, ভট্টরাই একে দূর থেকে দেখেছিল—তাই চিনতে পারবে না। কিন্তু কমলিকা তাঁর পক্ষে বিপজ্জনক হবে। কারণ সে রত্ন-পেটিকাটি দাবি করবে। মহামিশ্রের আত্মীয়া সে। সুতরাং, বিষয়টিকে তখন আর চাপা দেওয়া যাবে না। ব্যাপারটা নিয়ে এখন হৈ চৈ না করাই ভাল।
জাঙ্ক দস্যুটিকে ঘাড় ধরে নিজের কক্ষে নিয়ে গেলেন। প্রহরীদের বললেন, “আশপাশের কেউ যেন উঁকি ঝুঁকি না দেয়।”
প্রহরীদের কাছে জাঙ্ক অপরিচিত নয়। তারা যা বোঝবার বুঝে সরে গেল। কথার অবাধ্যতা জাঙ্ক সহ্য করবে না—এ তারা জানে।
নিজের আসনে বসে জাঙ্ক নির্লিপ্তভাবে বলল, “দু-দুটো হত্যা-কাণ্ডের দায় তোর ওপর। এ ছাড়াও মণিকার-পুত্রীকে হত্যা করারও চেষ্টা করেছিস। তোর মৃত্যুদণ্ড কে ঠেকায়? তোর ঘাড়টা বেশ শক্তপোক্ত। জহ্লাদের খঙ্গটাকে একটু ৬২ ধার দিয়ে নিতে বলব!” ভয়ালভাবে হেসে উঠল জাঙ্ক! “প্রায় মাসখানেক তুই আমার নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছিস। তবু আমি ছিপ ফেলে বসে ছিলাম। আমার ভীষণ ধৈর্য—তা জানিস? তাই বলছি, মরে গেলে পেটিকাটি তো আর সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবি না। আমার দিয়ে দে। আমি বরং জহ্লাদকে বলব তোর ঘাড়ে একটু মালিশ করে নিতে—যাতে এক কোপে কাটা যায়। দুতিন কোপ বড় বিশ্রী ব্যাপার—তাই না?”
দস্যু বাকাটকির প্রতিরোধ ভেঙে গিয়েছিল। তবু সে বলল, “শুধু ঐটুকু কৃপার জন্য দুর্মূল্য রত্ন-পেটিকাটি কেন দোব? কুবার তীরে অনন্তকাল ধরে চাপা থাক। কেউ পাবে না।”
জাঙ্ক এবার একটু গম্ভীর হলেন, “তাহলে তোর কী চাই?”
“মুক্তি এবং রত্নের ভাগ।”
“মুক্তি অসম্ভব। আমি চাইলেও মহামিশ্র তা হতে দেবেন না। আর ভাগ? কে কাকে ভাগ দেয়?”
বাকাটকি এবার সত্যিই ভেঙে পড়ল।—”আমায় বাঁচান। কিছু রত্ন দিলেই আমি আমার দাবি ছেড়ে দোব।”
জাঙ্ক এবার বিরক্ত হয়ে বলল, “রত্ন-রত্ন করছিলি কেন? রত্ন নিয়ে তুই কী করবি? গলায় ঝুলিয়ে ঘুরবি?” তারপর একটু শান্ত হয়ে বললেন, “দেখ, রত্ন তুই সাম্রাজ্যের কোথায় বিক্রি করতে পারবি না। তোকে বিক্রি করতে দেখলেই সকলে সন্দেহ করবে। কারণ, তোর কীর্তি সবাই জেনে গেছে। তার চেয়ে তোকে আমি বাঁচিয়ে দোব। আর হ্যাঁ। আমি লোক খারাপ নই। তোকে স্মৃতি হিসেবে এই পান্নাটি দিয়ে দোব। তবে বিক্রি করার মতো বোকামি করিস নি। ওটাকে বরং আমার কাছেই নিরাপদে গচ্ছিত রাখতে পারিস। ইচ্ছে হলে একবার দুবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিবি। সেটাই বরং ভাল।”
“তাহলে আমি খাব কী করে? তার চেয়ে বরং মরাই ভাল।”
“আরে! খাওয়ার জন্য চিন্তা কী? তুই একটা জলজ্যান্ত দস্যু। দস্যুরা কি সব মরে গেছে! দস্যুবৃত্তি করে খাবি।”
হতাশ হয়ে বাকাটকি বলল, “সেই তো আবার ধরা পড়ার ভয়। আবার জহ্লাদের খা!”
জাঙ্ক যেন অনেকটাই শান্ত হয়ে এসছিলেন। বললেন, “শোন। তোকে একটা উপদেশ দিই। তুই এই নগরেই ছোটখাটো দস্যুতা কর। কিন্তু হত্যা করিসনি কাকেও। হত্যা করলে মহা ঝামেলা। এসব করে যা পাবি—আমার ৬৩ কাছে জমা করে যাবি প্রতি রাত্রে। আমার একটা ভাগ থাকবে-তোর একটা। তোকে হাতে হাতেই তোর ভাগ দিয়ে দোব। কেমন? বেঁচেও থাকবি। ধরাও পড়বি না!”
দস্যু বাকাটকি খুব একটা বোকা নয়। সে নগরাধ্যক্ষকে মোটামুটি পরিমাপ করে ফেলেছিল। সে স্পষ্টই বুঝতে পারছিল যে বাঁচতে গেলে নগরাধ্যক্ষের জালের মধ্যেই তাকে থাকতে হবে। বিনয়ের দিক দিয়ে বাকাটকি কম যায় না। এই বিনয় নিয়েই সে মণিকারের পরিবারের সঙ্গে আলাপ জমিয়েছিল। তাই বিনয়ে গলে গিয়ে বাকাটকি বলল, “আপনার তুলনা হয় না। আমি সব শর্তেই রাজি। মানুষ প্রথমে বেঁচে থাকতে চায়। আমিও তাই চাই।” একটু থেমে বাকাটকি বলল, “তাহলে এবার আমি আসি?”
“কোথায় যাবি? আমার কি মানসম্মান বলে কিছু নেই? তোকে অত লোকের চোখের সামনে দিয়ে ধরে আনলাম—তা হুট করে ছেড়ে দোব? লোকে বলবেটা কী? শোন, তুই আপাতত বন্ধনাগারে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত ঘুমো। আমি এখন নানান কাজে ব্যস্ত থাকব। সময় মতো তোকে ডেকে নিয়ে পেটিকাটি উদ্ধার করতে যাব। ওটি উদ্ধার না করা পর্যন্ত আমি কোন শর্তই মানব না। বুঝতে পেরেছিস?”
বাকাটকির মুখ ম্লান হয়ে গেল। সে ঘাড় হেলিয়ে বলল, “হ্যাঁ।”
জাঙ্ক মিথ্যা কথা বলেননি। নানান অভিযোগ ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করতে করতে মধ্যরাত এগিয়ে এল। তার ঘুম পাচ্ছিল। কিন্তু ঘুমোবার অবকাশ নেই। আসন ছেড়ে উঠে পড়ে তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙলেন। তারপর চেঁচিয়ে উঠলেন, “প্রহরী!”
শশব্যস্ত হয়ে একটি প্রহরী কক্ষে ঢুকে এসে বলল, “আজ্ঞা করুন, প্রভু!”
“সেই বন্দিটি কী করছে রে এখন?”
“আজ্ঞে, ঘুমোচ্ছে।”
“যা ওকে এখানে নিয়ে আয়। আর হ্যাঁ। হুং-চাকে বল, শকট প্রস্তুত করতে। আমি একটু বেরুব।”
অচিরেই হাই তুলতে তুলতে বাকাটকি উপস্থিত হল জাঙ্কের সামনে। জাঙ্ক হুংকার ছেড়ে বললেন, “হাই তোলা বন্ধ কর। চল, আমরা পেটিকাটি উদ্ধার করতে যাব। কোনো চালাকি করবার চেষ্টা করবি না।”
হুং-চা শকটটি প্রস্তুত করে রেখেছিল। জাঙ্ক আর বাকাটকি শকটে উঠে বসল। জাঙ্ক জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকিয়ে থাকা প্রহরীদের বললেন, “মনে রাখিস, ৬৪ আমি কোথাও যাইনি। কক্ষে বসে বিশ্রাম করছিলাম।”
“মনে থাকবে প্রভু।” প্রহরীরা বলল।
হুং-চা শকট চালনা শুরু করল।
সামনে হুং-চা-র পাশে বসেছিল বাকাটকি। পেছনের আসনে বসেছিলেন জাঙ্ক। তিনি তাঁর তলোয়ার বাকাটকির পিঠে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। নির্জন পথ দিয়ে কুবার দিকে এগিয়ে চলল শকট।
একসময় বাকাটকির নির্দেশ মতো কুবার তীরে একটি নির্দিষ্টস্থানে শকটটিকে দাঁড় করাল হুং-চা।
জাঙ্ক বাকাটকিকে প্রশ্ন করলেন, “কোথায়?”
“আজ্ঞে, ঐ গাছটির সামনে বালিতে পোঁতা আছে। আমি যাচ্ছি—নিয়ে আসছি।”
জাঙ্ক তলোয়ার না সরিয়েই বললেন, “হুঁ হুঁ। হুং-চা, তুই যা। তলোয়ার দিয়ে জায়গাটা খোঁড়। দেখ কিছু পাস কিনা।”
বাকাটকির দেখানো জায়গায় সামান্য খোঁড়াখুঁড়ি করতেই পেটিকাটি বেরিয়ে এল।—”একটা পেটিকা! দেখব, কী আছে?”
“না। আমার কাছে নিয়ে আয়।” জাঙ্ক আদেশ করলেন।
সুবোধ বালকের মতো হুং-চা পেটিকাটি জাঙ্কের হাতে তুলে দিল। খুশি মনে হাতে পেটিকাটির ওজন অনুভব করে জাঙ্ক আবার হুং-চাকে বললেন, “যা কটা নুড়ি পাথর নিয়ে আয়।” বাকাটকি যেন আর্তনাদ করে উঠল, “নগরাধ্যক্ষ! আমি কি কিছুই পাব না?”
চাপা গর্জন করে উঠলেন জাঙ্ক। “চুপ! তোর মাথাটাই যে যথাস্থানে পাচ্ছিস, এই ঢের।” জাঙ্ক পেটিকাটির ডালা খুলে ভেতরকার রত্নগুলি সঙ্গে আনা একটি থলির ভেতর ঢেলে নিলেন খুব দক্ষতার সঙ্গে। শব্দ শুনলেও পিঠে ঠেকিয়ে রাখা তলোয়ারের ভয়ে বাকাটকি পেছনে তাকাবার সাহস করল না।
হুং-চা কয়েকটি নুড়ি পাথর নিয়ে উপস্থিত হল। পেটিকাটি বাড়িয়ে দিয়ে জাঙ্ক বললেন, “পাথরগুলো এতে ভরে ফেলে পেটিকাটি যথাস্থানে রেখে দিয়ে বালি চাপা দিয়ে আয়।”
পেটিকাটি হাতে নিয়ে হুং-চা সবিস্ময়ে বলল, “আরে! এটা একদম খালি। কী ছিল এতে? কোথায় গেল?”
ক্রূরভাবে জাঙ্ক বললেন, “হুং-চা! এতে কিছুই ছিল না। এখন শুধু নুড়ি ৬৫ থাকবে। ঠিক?”
সভয়ে হুং-চা বলল, “ঠিক!”
“জেনে রাখ। আমরা এই পেটিকাটির খোঁজে এসেছিলাম। কিন্তু খুঁজে পাইনি। ঠিক?”
“আজ্ঞে, ঠিক!”
কাজ শেষ করে হুং-চা আবার শকটটিকে কার্যালয়ের দিকে চালনা করল। তার মনে প্রশ্ন, কী ছিল পেটিকাটিতে? কিন্তু প্রশ্ন করা নিরর্থক।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন