মূল গল্প: Last Wave
ট্রম থার্নবাল্ড তাঁর যন্ত্রপর্দার উপরের বিরতির বাটনে আলতো করে হাত ছোঁয়ালেন। অডিও ফাইলটা সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল। ট্রম পেশায় একজন সফল প্রত্নতাত্ত্বিক। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকার ভঙ্গীতে তাঁকে যথেষ্ট ক্লান্ত ও হতবাক দেখাচ্ছিল। জানালা দিয়ে বাইরে অনেকটা নীচে সমুদ্র সৈকত দেখা যাচ্ছিল। অন্ধকার সৈকতে একমাত্র আলোর নিশানা অবিরাম ভেঙে পড়া সফেদ ফেনা যা ঢেউয়ের আনাগোনার সঙ্গে নতুন করে ফিরে আসছিল। সেই নিরন্তর ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে ট্রম ভাবলেন আজকে নিশ্চয়ই জোয়ার আসছে। ঠিক তখনই যেন তাঁর কথায় সায় দেয়ার জন্যেই মেঘের আড়াল থেকে চাঁদটা উঁকি দিল, সারা সমুদ্রের উপর যেন ছড়িয়ে দিল তার অপার্থিব সবজেটে নীল আভা। অন্যান্য দিনে এই দিগন্ত বিস্তৃত আলো-ছায়ার খেলা যথেষ্টই হত তার মনকে শান্ত করার জন্যে, কিন্তু একটু আগে তিনি যা শুনেছেন সেই কথাগুলো তার মনের মধ্যে ক্রমাগত ঘুরতে লাগল।
“আমি হামাদজিরিপি, শেষ মানব সন্তান। আমি যখন এই বার্তা রেকর্ড করছি, ডেলফিনিরা আসছে আমায় খুঁজতে। ওরা জানে আমি কোথায় আছি, সুতরাং সময় আর বেশি নেই। হয়তো ভবিতব্যের জন্যে অপেক্ষা করার মাঝে মানব সভ্যতার অন্তিম দিনগুলির কথা সম্প্রচার করে যাওয়াটাই আমার শেষ কাজ।”
“কেউ যদি আমার এই বার্তা পেয়ে থাকো, তোমাকে অভিনন্দন। আমরা যেখানে ব্যর্থ হয়েছি আমাদের সভ্যতাকে রক্ষা করতে, সেখানে তোমরা সফল হয়েছ। তোমরা হয়তো বুঝতে পেরেছ প্রত্যেকে সমষ্টির জন্যে না ভাবলে কারো পক্ষেই নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হয় না। জীবনের পরিকল্পনা অনেক দীর্ঘমেয়াদি। আমরা আমাদের চারিপাশ এবং নিজেদের ভিতরের নানা সঙ্কেত থেকে শিক্ষা নিতে পারিনি। আমরা ভুলে গিয়েছিলাম আমাদের ..অস্তিত্ব ..কতটাই ..না ..জটিল.. অথচ.. ঠুনকো কিছু শর্তের উপর নির্ভরশীল ছিল…”
ট্রম সঙ্কেতের রিসিভারগুলোর কথা ভাবছিলেন। প্রায় সাতচল্লিশ হাজার তিনশ সতেরো আলোকবর্ষ দূরে সেগুলো রাখা আছে। প্রত্যেকটি প্রায় নেবুলার সমান ন্যানো-জালের বিস্তার, ভাসছে মহাকাশের নিস্তব্ধতায়। যেন এক অকল্পনীয় বিশাল মাছধরা জালে কেউ কোনো গ্রহের আকারের মাছ ধরার চেষ্টা করছে। তবে গ্রহ নয়, এই পাঁচ হাজার নেট মহাকাশের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে তৈরি করা হয়েছে যাতে তারা বহু পুরোনো, ক্ষীণ একটি বিশেষ রেডিও সম্প্রচারকে ধরতে পারে। এই রিসিভারগুলো তৈরি করতে পঞ্চাশ বছরের হাড়ভাঙা খাটুনি গেছে, আর তারপরেও আরো বত্রিশ বছর কেটে গেছে নিস্তব্ধতার মধ্যে দিয়ে। অবশেষে সেই বহু প্রতীক্ষিত রেডিও সঙ্কেত এসে পৌঁছেছে এবং জালগুলি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা ধরে ফেলেছে। সেই রেডিও সঙ্কেত যা প্রথম পৃথিবী গ্রহের আবহাওয়া মণ্ডল কাটিয়ে মহাশূন্যের অভিমুখে যাত্রা করেছিল। মহাকাশের মহাশূন্যতায় সেই সঙ্কেত আলোর গতিতে ছুটে চলেছিল পৃথিবী থেকে আরো দূরে।
যেদিন প্রথম সঙ্কেত ধরা পড়তে শুরু করেছিল সেদিন তারা সবাই কতই না খুশি হয়েছিলেন! প্রথম দিকের সেই ফোঁটা ফোঁটা সঙ্কেত দশক ঘুরতেই তথ্যের বন্যায় পরিণত হল। গত দু’শ বছর ধরে ট্রম আর তার সহকারীরা সমস্ত তথ্য সাজিয়ে, আলাদা করে আর জোড়া লাগিয়ে পৃথক পৃথক তথ্যভাণ্ডারে নথিভুক্ত করেছেন। ট্রমের সারাজীবনের সাধনা এই কাজটিই আর এই অডিও রেকর্ডিং-এ তিনি যেন তাঁর সাধনার অন্তিম লগ্নের সূচনাই শুনতে পাচ্ছেন।
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ট্রম অডিও ফাইলটি আবার চালু করলেন। তাঁর দৃষ্টি তখনও জানালার বাইরেই।
“আমাদের সভ্যতার আকস্মিক পতনের আগে পর্যন্ত আমরা ছিলাম উদ্ধত এবং নির্বোধ জাতি। আমাদের প্রকৃতিক সম্পদ আমরা তছনছ করেছি এবং পৃথিবীর ভূমি, মহাসাগর এবং মনুষ্যত্বকে বলাৎকার করেছি। আমাদের জন্মই হয়েছে বেশ্যার শিশু হিসেবে, এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্রীতদাস হয়েছি আমরা যা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের বিশ্বের জনসংখ্যার এক শতাংশ।
“আমাদের ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের প্রথম পরিণতি যখন দেখা গিয়েছিল, ততদিনে.. পরিবেশগত.. ভারসাম্যের সূক্ষ্ম সবুজ রেখা মেরামতের অতীত হয়ে গিয়েছিল…”
ট্রমের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মসৃণ সুরহীন গলা অডিও লগটিকে ব্যাহত করল। “তথ্যপ্রবাহে বিরতি নিম্নে বর্ণিত স্থানে — ১০, ২৫, ০৮, ০৯৫১। পরবর্তী বিভাগ প্রধান প্রবাহে সংযুক্ত করা হল।”
চাঁদের আলো এবং সমুদ্রের বিক্ষিপ্ত আভা তাঁকে এবং অন্ধকার অফিসটিকে যেন কোনো গোপন ষড়যন্ত্রে অক্সিডাইজড তামার সবুজ, পুরানো ভাস্কর্যে পরিণত করেছিল। ট্রম তাঁর চেয়ার পিছিয়ে নিয়ে আবার ভিউস্ক্রিনের দিকে তাকালেন। স্ক্রিনে পরের অডিও লগের আঁকাবাঁকা লাইন দেখা যাচ্ছিল, আবার তা চলার জন্যে প্রস্তুত। ট্রম অন্যমনস্কভাবে জানালার দিকে চেয়ারটি ঘুরিয়ে বাইরের দিকে তাকালেন।
চাঁদের বায়ুমণ্ডলের ঘূর্ণায়মান মেঘের অনেক নীচে, সবুজ এবং নীলে ঢাকা বিস্তৃত জমির টুকরো আলাদা হয়ে আছে উঁচু, তুষারাবৃত পর্বতশ্রেণীর দ্বারা। ট্রম সেই দিগন্তবিস্তৃত সবুজ মাঠ এবং নিবিড় অরণ্যে গিয়েছিলেন। তিনি সেই সমৃদ্ধ, কালো মাটির গভীরে নিজের হাত ডুবিয়ে তাকে স্পর্শ করেছেন। গভীর এবং প্রসারিত মিঠে-জলের হ্রদের সৈকতে সাঁতার কেটেছেন তিনি। দেখতে দেখতে চাঁদের উপরিতল সরে যেতে থাকল, অবিচল গতিতে ঘুরন্ত এক মুখমণ্ডল যেন। ট্রম চিনতে পারলেন গাঢ় সবুজের উপর অমসৃণ, সাদা গোলাকার, প্রাচীন উল্কার আঘাতে তৈরি আর্টোবাসের উচ্চ পর্বতমালা।
প্রকল্পটির পরিকল্পনার স্তর থেকে শুরু করে প্রথম উদ্ভট এবং রোমাঞ্চকর রেডিও তথ্যপ্রবাহটি পাওয়া পর্যন্ত, এই প্রকল্পে চার শতাধিক বছর ধরে ট্রমের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সাফল্য। ট্রম অস্থির হয়ে পড়ছিলেন, এই মানুষরা এবং তাদের অদ্ভুত, ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্ব সম্পর্কে তিনি যা জানতে পেরেছিলেন তা যেন তাঁর মনকে বিষাক্ত করে তুলেছিল। যেন এই প্রাণীরা মাটির নীচে আটকে থাকা হাইড্রোকার্বন শক্তিকে মুক্ত করার জন্য এই জগতে আবির্ভূত হয়েছিল! আর তাতে সফল হওয়ার পরেই যেন তাদের সভ্যতার প্রয়োজন শেষ হয়ে গিয়েছিল। তিনি এই মানুষদের জন্য গভীর, বিষণ্ণতা এবং সহানুভূতি অনুভব করছিলেন। তারা সভ্যতার শিখরের কতটাই না কাছে পৌঁছেছিল, অথচ সেই শেষ রাস্তাটুকু ছিল তাদের জন্যে অগম্য, একটা বিবর্তনীয় কানাগলিতে তারা আটকে গেল।
পৃথিবীর শেষ মানুষটির মুখ দেখতে পাওয়ার জন্যে একটা আকুতি তাঁর মনের মধ্যে বাসা বাঁধল। ট্রম যন্ত্রপর্দার-এর দিকে তাকিয়ে বললেন, “প্রত্যেক উপলব্ধ প্রবাহ থেকে তথ্য নিয়ে কথকের মুখের আনুমানিক ছবি তৈরি করো।”
“আনুমানিক গণনা শুরু হয়েছে। ছবিটি সম্পূর্ণ হলে কি আপনাকে জানাব?”
“হ্যাঁ।” ট্রম ফিসফিস করে বললেন, ছবির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই, কিন্তু এখনও তিনি বাকি রেকর্ডটি শোনার জন্য প্রস্তুত নন।
প্রাথমিক প্রকল্পটি যে শেষ হতে যাচ্ছে তা বিশ্বাস করতে তাঁর এখনও অসুবিধা হচ্ছিল। নীরব রিসিভারগুলি তাদের উদ্দেশ্য সাধনের শেষে ধীরে ধীরে পারমাণবিক ধুলোতে মিশে যাচ্ছিল। মানুষ এবং তাদের তেলের মজুদের মতো, তিনিও প্রাচীন পৃথিবী থেকে আসা সম্প্রচারগুলির সম্পদ আহরণ করছিলেন এবং এই রেকর্ডিংটি ছিল তার শেষ বিন্দু।
প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যের এই সম্পদ, তাঁদের প্রজাতির ইতিহাসে ট্রমের নামের অমরত্বকে নিশ্চিত করবে। এখনও যে জানার মতো অনেক তথ্য আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই, তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হবে পরে। কিন্তু অকলঙ্ক বরফের উপর প্রথম বিস্ময়কর পদচিহ্ন আঁকা শেষ হয়ে গেছে। তিনি চেয়ারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলেন, সমুদ্রতরঙ্গ, বাতাস এবং ভেজা, কালো পাথরের চির-পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক দৃশ্য দুচোখ ভরে শুষে নিতে চাইলেন। যেন এগুলির পর্যবেক্ষণই তার জীবনে একমাত্র প্রয়োজনীয় কাজ।
“আনুমানিক গণনা শেষ হয়েছে।”
ট্রম ভিউস্ক্রিনের দিকে আগ্রহভরে ঘুরে তাকালেন। স্ক্রিনে স্পর্শ করে তিনি ছবির ফাইলটা খুললেন। ছবিটিতে একটি ত্রিমাত্রিক মুখের গঠন ধরা পড়েছে, অবশ্যই মানুষের মুখ, দৃষ্টি যেন স্ক্রিনের পর্দা থেকে বাইরে দিকে। এই হল হামাদজিরিপি, বিস্তৃত, গাঢ় বাদামি চোখের উপরে ভারী চোখের পাতা। ঘন, কালো ভুরু আর খাড়া নাক। বন্য কেশরের মত বিনুনি বাঁধা চুল ঢেকে রেখেছে তার প্রশস্ত, লালিত্যহীন, রুক্ষ এবং মধু-বাদামি মুখমণ্ডল।
“এই পুনর্নিমাণের শতকরা কতটা নির্ভুল?”
“চুরানব্বই দশমিক পাঁচ শতাংশ।”
ট্রমের.. দৃষ্টি ..ছিল.. হামাদজিরিপির.. ত্রিমাত্রিক অথচ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা মুখটির দিকে।
“ছবির সঙ্গে মানুষটির কন্ঠস্বরটি মিলিয়ে দাও, প্লিজ।”
যন্ত্রগণকের কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হামাদজিরিপির মুখের চেহারা বদলে গেল। মানুষটির মুখে একটি সামান্য, ক্লান্ত হাসি দেখা গেল যার প্রান্তগুলি তার রুগ্ন গালের গভীর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। তার চোখের পাতা দুটি আগের থেকেও নীচু, যা সতর্ক অভিব্যক্তির প্রকাশ, এবং কঠোর-অনুশাসনে প্রাপ্ত প্রজ্ঞার এক গভীর আভা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ট্রম ভিউস্ক্রিনে আঙুল ছোঁয়ালেন।
হামাদজিরিপি তার কড়া পড়া হাত দিয়ে চিবুক চুলকোচ্ছিল। মৃদু হাসিতে তার চোখ চকচক করছিল, যেন সে তার ভাবনার রাজ্যে মজার কিছুর সন্ধান পেয়েছে। কিছুক্ষণ পরে সে আবার মাথা তুলে তাকাল।
“কেউ আমাকে বলেছিল যে, নম্র, বিনীত মানুষেরা একদিন পৃথিবীর অধিকারী হবে। আমি তার সঙ্গে একমত হতাম, যদি সেই লোকগুলি ছয় ফুটের কবরে শোয়ার মতো যথেষ্ট সৌভাগ্যবান হত। আমি নম্র মানুষ, মেষের পাল এবং উপকূলীয় শহরগুলোয় ঘুরে বেড়ানো পরিযায়ী মানুষদের গল্প শুনেছি। সেই সুভদ্র মানুষগুলি কয়লা খনিতে বিষাক্ত গ্যাস সন্ধানী ক্যানারির মতো লাখে লাখে মারা গিয়েছিল। তবে পরিবেশ বিপর্যয় এত দ্রুত ঘটে গেল যে, কিছু বোঝার আগেই সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেল।”
হামাদজিরিপি যেন অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে, তার দৃষ্টি চলে গেছে বহুদূরে আর বহুযুগ আগের কোথাও। তবে আবার সে বাস্তবে ফিরে এলো আর বলতে শুরু করল।
“পৃথিবীর মনুষ্যেতর প্রাণীরা কিন্তু প্রতিবাদহীন নয়। এই জীবজগৎ অত্যন্ত কার্যকরভাবে সুযোগ সন্ধানী, নির্মম। এই জগত সমুদ্রের গভীরের উত্তপ্ত আগ্নেয় ফাটল থেকে মেরু অঞ্চলের হিমাঙ্কের নীচে পর্যন্ত প্রসারিত এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমাতেও সহজেই এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। জীবনের হিসাব নিতে গেলে, এই প্রাচীন অথচ সদা বিবর্তিত হতে থাকা জৈব যন্ত্রগুলো অনেক শক্তিশালী। আমি এখন বুঝতে পারি যে ঈশ্বরের চোখে মানুষ একটি অস্থায়ী ধূলিকণা মাত্র, এবং ঈশ্বরের চোখের পলক পড়তেই আমরা, সেই ধূলিকণা হারিয়ে গেছি এই পৃথিবী থেকে।”
হামাদজিরিপি যেন হঠাৎ আবেগের কাছে পরাস্ত হল। তার মুখ বিবর্ণ হয়ে উঠল এবং চোখের কোণা বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে গেল। যন্ত্রগণক ‘ক্লিক’ করে শব্দ করে উঠল।
“তথ্যপ্রবাহে বিরতি প্রায় ২০, ৪৫, ১৫, ০৯৫১ পর্যন্ত। পরবর্তী বিভাগের প্রধান প্রবাহ শুরু হচ্ছে, আমি কি ছবিটি বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেব?”
আবেগের অভিব্যক্তিতে হামাদজিরিপির সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া মুখটা পর্দায়  জমে আছে।
“হ্যাঁ,” ট্রম বললেন, হামাদজিরিপির এই অব্যক্ত যন্ত্রণাময় মুখ তিনি আর সহ্য করতে পারছিলেন না।
হামাদজিরিপির মুখ নির্জীব, আবেগহীন পর্যায়ে ফিরে গেল। এক মুহূর্ত পরে সেটি একটি ম্লান হাসি এবং ক্লান্ত, সতর্ক চোখ নিয়ে পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠল। ট্রম আবার রেকর্ডিংটা চালিয়ে দিলেন।
“আমাদের সভ্যতার অধঃপতন কতটা দ্রুত হয়েছিল তার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ২০১৫ সাল নাগাদ উত্তর মেরু গ্রীষ্মকালে বরফহীন হয়ে গিয়েছিল এবং ২০০৮ সালের তুলনায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও ত্রিশ সেন্টিমিটার বেড়ে গিয়েছিল। মাত্র দশ বছরের মধ্যে, শুধুমাত্র উত্তর মেরুই নয়, এমনকি গ্রিনল্যান্ডের বেশির ভাগ অংশ সারা বছরই বরফমুক্ত হয়ে গেল। গ্রিনল্যান্ডের মহাদেশীয় বরফের স্তরটি ২০০৮ সালে প্রায় তিন মিলিয়ন ঘন কিলোমিটার বরফের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। মাত্র দশ বছরে, এর সমগ্র ভরের সাত-অষ্টমাংশ গলে গেল। ২০১৮ সালের ইউরোপীয় গ্রীষ্মের শেষের দিকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বিশ মিটার বেড়েছে দেখা গেল। বিশ্বব্যাপী অভূতপূর্ব ক্রুদ্ধ এবং দীর্ঘস্থায়ী ঝড় দেখা দিল। পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নতুন ধরনের সমুদ্র স্রোত এবং পরিবর্তনশীল তাপমাত্রা ছিল এর কারণ। এই সব ঝড় ও সমুদ্র স্রোত মহাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলিকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে তুলল।
“২০১৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করা হয়েছিল যে প্রাক-শিল্পবিপ্লব পৃথিবীর তাপমাত্রার চেয়ে চার পয়েন্ট এক ডিগ্রী তাপমাত্রা বেশি হলেই জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ২০২৫ সাল নাগাদ, সমগ্র পশ্চিমী অ্যান্টার্কটিকের বরফের স্তর রস এবং আমুন্ডসেন সাগরে ভেসে যায় এবং গলে যায়। সম্পূর্ণ উত্তর মেরু এবং গ্রিনল্যান্ডের গলন্ত জলের সঙ্গে মিশে এটি পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠ আনুমানিক নব্বই মিটার বৃদ্ধি করেছিল। কথাটা মর্মান্তিক শোনাচ্ছে—এবং তা সত্যিই বিপজ্জনক ছিল— কিন্তু সমুদ্রতলের এই উচ্চতা বৃদ্ধি আসল সমস্যার একটি অংশমাত্র ছিল। তখনও টিকে থাকা মানুষগুলোকে এর থেকেও বেশি বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
গুরুতর জলবায়ু পরিবর্তনে ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র একেবারেই ধ্বসে পড়ল। শুধুমাত্র সবচেয়ে রুক্ষ, অদম্য এবং প্রধানত আদিম প্রাণীগুলি বেঁচে গেল। বেচারাদের উপর এরপর নিরবচ্ছিন্ন সৌর বিকিরণের বর্ষণ শুরু হল। উষ্ণ তুন্দ্রা এবং সমুদ্রতলের ফাটল থেকে থেকে প্রচুর পরিমাণে মিথেন নির্গত হয়ে পৃথিবীর প্রতিরক্ষামূলক ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।
এই মহাপ্রলয়ের অগ্নিপরীক্ষায় জিনগতভাবে পরিবর্তিত বহু নতুন ও ভয়ংকর জীবের মধ্যে ডেলফিনিদের জন্ম হয়েছিল। অথবা বলা যায় যে তারা মিউটেটেড হয়েছিল, বা সম্ভবত, তারা আসলে বিবর্তিত হয়েছিল? বিষাক্ত, মৃতপ্রায় সমুদ্র থেকে মরিয়া হয়ে পালাতে তাদের মাত্র সাত প্রজন্ম লেগেছিল। তারা ছিল এই নতুন পৃথিবীর রূপান্তরিত, বিবর্তিত এবং মানিয়ে নেওয়া আসল প্রভুজাতি…”
“থামো!” ট্রম চেঁচিয়ে উঠলেন। তিনি গভীরভাবে ভাবতে শুরু করলেন। এটাও কী হতে পারে? ডেলফিনি, ডেলফিনাইড, ডলফিন? এর উত্তর ডলফিন, বিশেষ করে টারসিওপস ট্রাঙ্কাটাসের উপর অপরিমেয় প্রভাব ফেলবে। কেনিয়ানথ্রপাস প্ল্যাটিওপস১ মানুষের কাছে যা ছিল, এরাও কি ট্রমের জাতির কাছে তাই হবে? ট্রমের অতি প্রাচীন পূর্বপুরুষেরাই কি মানব প্রজাতির অবশিষ্ট কয়েকজনকে শেষ করেছিলেন? এতদিন পর্যন্ত ট্রম অনুমান করছিলেন যে হামাদজিরিপির ডেলফিনি আসলে যে সমস্ত পরিবর্তিত প্রজাতি পৃথিবীতে বাঁচার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিল তাদের কারো অজ্ঞাত ডাকনাম।
ট্রম হতভম্ব হয়ে জানালায় তাঁর প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে রইলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ডলফিনসুলভ আকৃতি তার চোখে স্পষ্ট ধরা দিল। তিনি তাঁর দুটি স্ফীতিযুক্ত মসৃণ মাথার খুলি, ঘোড়ার নালের মত মণিসহ চওড়া কালো গোলাকার চোখ, নীচের চোয়ালের মোটা হাড়ের উপরে অবস্থিত ধনুকের মত ছড়ানো সরু নাসাটি তিনি পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। ট্রম তাঁর একটি পেশীবহুল হাত উপরে তুললেন। হাতের তিনটি আঙুল এবং বুড়ো আঙুল দিয়ে তিনি আলতো করে তাঁর খুলির পিছনে লোমশ, স্পন্দিত নাসারন্ধ্রটি স্পর্শ করলেন। তাঁকে দূর থেকে অনেকটা মানুষের মতোই দেখাচ্ছিল: সাধারণ দ্বিপদ আকৃতি, চারটি আঙুলবিশিষ্ট পা এবং পুরু, চিকন, ধূসর ত্বক।
বিদ্যুত চমকের মতো তাঁর মনে একটি উপলব্ধি এল। মানুষরা না থাকলে তাঁদের প্রজাতি কখনই হয়তো এইভাবে বিবর্তিত হত না। বিপর্যয় এবং বেঁচে থাকার প্রবৃত্তির দ্বারা তাড়িত না হলে, তারা পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে কখনই শক্ত মাটিতে উঠে আসতে পারত না। যেভাবেই দেখা হোক না কেন, এই মানুষগুলোই তাদের জন্ম দিয়েছে। আর তাঁর পূর্বপুরুষরাই এদের শিকার করে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে!
যাই হোক, এটা নিশ্চিত ভাবে বলাই যায় যে মানুষ নিজেদের তৈরি করা পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারলে ঠিক একই কাজটি করত। তাদের সংক্ষিপ্ত বিবর্তনের ইতিহাসে, তারা বিবর্তিত হোমিনিড পরিবারের অন্যান্য শাখার সদস্যদের সঙ্গেও তাই করেছিল। এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো বুদ্ধিমান প্রজাতির প্রাণীকে উদ্ভবের জন্যে জায়গা দিয়েছিল — এমনকি নিজস্ব প্রজাতির ভিন্ন জেনেটিক বৈচিত্র্যের শাখার মধ্যেই একসঙ্গে বসবাসের উপযুক্ত তারা ছিল না।
মানুষদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বিলীন হয়ে গিয়েছিল, বহু কোটি বছরের যুগের ওজনের নীচে সংকুচিত হয়ে পলির একটি সামান্য অংশ হয়ে, আরো অনেক প্রজাতির মতই। ট্রম এবং তার প্রজাতির জন্য, সেটি শুধুমাত্র শুরু ছিল। সেই শুরু যা সময়ের বুকে স্বর্ণখচিত পুরু জমি তৈরি করবে আগামী দিনে। প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর ভবিষ্যৎ থেকে আজ সেই নৃশংস সূচনার দিকে ফিরে তাকালে ট্রম দেখতে পান দুটি প্রজাতি প্রাণপণ সংঘর্ষে লিপ্ত, এবং বেঁচে যাবে শুধুমাত্র একটি।
ট্রমের দৃষ্টি তাঁর প্রতিবিম্ব পেরিয়ে আরো দূরে হারিয়ে গেল। পরিষ্কার, তারকাখচিত আকাশে পূর্ণ চাঁদটি উজ্জ্বল। নিজের অক্ষের উপর ঘুরতে ঘুরতে আবার সেই মুহূর্তে তার গায়ে আর্টোবাস বা মানুষেরা যাকে মন্টেস ককেশাস বলত তাকে দেখতে পাওয়া গেল। মানব সভ্যতা অনেক দিক থেকেই অসাধারণ ছিল। তাদের সভ্যতার বিকাশ থেকে চাঁদে অবতরণ করতে তাদের সময় লেগেছিল আট হাজার বছরেরও কম। ট্রমের নিজের প্রজাতির জন্য, এই কাজটি করতে লেগেছিল চল্লিশ হাজার বছর। যাই হোক, মানুষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিল: বেঁচে থাকা চিরকালই কোনো না কোনো মিথোজীবিতার উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে।
“আবার চালাও।” তিনি মৃদু স্বরে বললেন, তখনও তিনি সমুদ্রের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন।
“এই সম্প্রচারটি যে মানব অস্তিত্বের সম্ভবত শেষ প্রমাণ হবে এটা বিশ্বাস করা কঠিন। তবে আমিও তো কখনই কল্পনা করিনি যে আমি জীবিত শেষ মানুষ হব— এবং বিশ্বাস করো আমি সারা পৃথিবীতে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি আরেকজন মানুষের জন্যে। মহাকাশের বিশালতায় এমন একটি ক্ষীণ আহ্বান। অন্তত এই সম্প্রচারটি রইল আমরা না থাকলেও, কোথাও কোনোদিন কে জানে কে এটা শুনতে পাবে… একটি গৌরবময় যুগের এই সমাপ্তি। আমাকে ক্ষমা করো, আজ রাতে বড়োই বিষণ্ণ হয়ে উঠছি, আর আমার পুরোনো সিঙ্গল মল্ট হুইস্কির শেষ বোতলটা তাতে সাহায্য করছে…
দেখতেই পাচ্ছ এটিই শেষ সম্প্রচার হবে। এটি মানবজাতির… এবং আমার… চিরবিদায়। একমাত্র কর্মক্ষম উপগ্রহ স্টেশনটিতে, কয়েকদিন ধরেই বিদ্যুতের মাত্রা কমে এসেছে। আমি একটি সৌরশক্তিচালিত বহনযোগ্য হ্যাম রেডিও থেকে এই সম্প্রচারটি রিলে এবং বুস্ট করছি৷ উপগ্রহ স্টেশনটি প্রাক-দুর্যোগকালে নির্মিত একটি ছোটো পারমাণবিক চুল্লি থেকে শক্তি পায়। এটি এতদিন চলার কথা ছিল না, এবং আমি অবাক হয়েছি দেখে যে উপগ্রহটি এখনও আছে…”
“আমিও ক্লান্ত, অসম্ভব ক্লান্ত। আমার আত্মাও জীর্ণ হয়েছে, যদি আত্মা বলে কিছু থাকে। আমার জন্মের পর থেকে প্রতিদিন, আমি বেঁচে থাকার জন্য কোনো বিরাম ছাড়াই লড়াই করেছি। আমার জন্মের পর থেকে, আমি আমার প্রজাতিকে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যেতে দেখেছি, আমার চারপাশে যাদের ভালোবাসতাম তাদের সবাইকে মরতে দেখেছি। আমার বাবা-মা আমার নাম বড্ড যথাযত রেখেছিলেন। আমার মাতৃভাষা ‘সোনা’তে, হামাদজিরিপি মানে, ‘সবাই কোথায়?’ সম্ভবত তাঁরা জানতেন যে শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে, লোভী পূর্বপুরুষদের পাপের খেসারত আমাদেরই দিতে হবে।
“আমার শেষ বিচারের সময় এসে গেছে। ডেলফিনিরা আমার গন্ধ পেয়েছে। আমি আজ তাদের আগাম বাহিনীর পায়ের ছাপ দেখেছি। ওরা কখনই থামবে না, একবারও যদি ওরা তোমার গন্ধ পায়, যতক্ষণ না তোমার হাড়গুলো গুঁড়িয়ে না দিচ্ছে ওরা থামবে না।”
“সুতরাং, মানবজাতির শেষ কথার ভার আমার উপরই ন্যস্ত হল… আমি তোমাকে কীই বা বলব? হয়তো বলব যে বিশ্বের সব কিছুর মধ্যেই সৌন্দর্য খোঁজা উচিত? তোমাদের বাস্তুমণ্ডলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান করা উচিত? না, আমার মতে, সর্বোপরি তোমার মনে রাখা উচিত যে…”
“তথ্যপ্রবাহ শেষ। সংযুক্ত ফাইল ATT034, আংশিক পুনর্গঠন সম্ভব। আমার কি সংযুক্ত ফাইলটি চালানো উচিত?”
“হ্যাঁ।” ট্রম বললেন।
যান্ত্রিক শীৎকার এবং খণ্ডিত সঙ্কেতগুলির একটি মিশ্রণ চলতে শুরু করল যা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে নীরব হয়ে গেল। ট্রম জানালা থেকে সরে গেলেন, মাথা ঝুঁকিয়ে পর্দার কাছাকাছি এগিয়ে এলেন। অত্যন্ত ক্ষীণ শ্বাস-প্রশ্বাস শোনা যাচ্ছিল যেন যন্ত্র থেকে। হঠাৎ একটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দে ট্রম হতবাক হয়ে পিছু হটলেন। বিস্ফোরণের শব্দে তার কানে তালা লেগে গেলেও পরবর্তী চিৎকার তিনি স্পষ্ট শুনতে পেলেন।
“আয় বেজন্মা শয়তানের দল!”
“ফাইল ATT034 শেষ। তথ্যপ্রবাহের সমাপ্তি, আর কোনো তথ্য নেই।”
আতঙ্কে পাথরের মত হয়ে গিয়েছিলেন ট্রম। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর চেয়ারটি জানালার দিকে মুখ করে ফিরিয়ে বসলেন। ট্রমের হৃৎপিণ্ড তখনও সেই ভয়ানক বিস্ফোরণের তালে দৌড়াচ্ছে। জানালায় হামাদজিরিপির প্রতিফলন পড়েছিল, অনন্তকালের জন্যে অ্যাম্বারে আটকে পড়া মাছির মতো অসহায়, তবুও চিরকাল মানবতার শেষ উপেক্ষার গর্জন করে চলেছে সে।
টীকা
১। কেনিয়ানথ্রপাস প্ল্যাটিওপস- কেনিয়ার লেক টুর্কানা অঞ্চলে প্রাপ্ত আনুমানিক ৩৩ লক্ষ বছরের পুরোনো হোমিনিন গোষ্ঠীর প্রাকমানব। একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের প্রাকমানবদের মধ্যে এটি এক উল্লেখযোগ্য গোষ্ঠী। কিছু নৃতত্ববিদের বিশ্বাস এরাই আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ, যদিও বিষয়টি নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। 
লেখক পরিচিতি
ইভর ডাব্লিউ. হার্টম্যান জিম্বাবোয়ের লেখক, ভিস্যুয়াল আর্টিস্ট, সম্পাদক ও প্রকাশক। তাঁর লেখা গল্প মুনিয়োরি লিটারারি জার্নাল, আফ্রিকান রাইটিং, সামথিং উইকড, জালাডা আফ্রিকা, লিটরো সহ নানান পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, নির্বাচিত হয়েছে বিভিন্ন গল্প সঙ্কলনেও। ২০০৯ সালে তাঁর লেখা গল্প ‘Earth Rise’ ইউএমএ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়, সেই বছরেই ‘Mr. Goop’-এর জন্য তাঁকে গোল্ডেন বাওয়াব প্রাইজ দিয়ে সম্মানিত করা হয়। পরবর্তী সময়েও তাঁর একাধিক গল্প পুরস্কৃত হয়েছে। কিন্তু ইভর শুধু লেখালিখি করেই সন্তুষ্ট থাকেননি, বরং জিম্বাবোয়ে ও আফ্রিকায় স্পেকুলেটিভ ফিকশনকে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য তিনি একের পর এক উদ্যোগ নিয়েছেন। রাইটার্স ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক জিম্বাবোয়ের পরামর্শদাতা সমিতিতে থাকার পাশাপাশি তিনি স্টোরিটাইম বলে একটা মাইক্রোপ্রেস প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা। আফ্রিকার নবীন ও প্রতিশ্রুতিবান লেখকদের সঙ্গে পাঠকদের পরিচিত করানোর জন্য স্টোরিটাইম একাধিক সঙ্কলন প্রকাশিত করছে যার মধ্যে ‘African Roar annual anthologies’ আর ‘AfroSF’ উল্লেখযোগ্য।
অনুবাদক পরিচিতি
দীপ ঘোষকে পাঠকরা প্রধানত চেনে কল্পবিশ্ব পত্রিকার সম্পাদক ও কল্পবিশ্ব প্রকাশনের কর্ণধার হিসেবে। বাংলা কল্পবিজ্ঞানকে প্রাপ্তমনস্ক করার জন্য যে নিষ্ঠা ও পরিশ্রম সহকারে তিনি কাজ করছেন, তার তুলনা নেই। প্রতিশ্রুতিবান কলমদের এগিয়ে নিয়ে আসা, আন্তর্জাতিক স্তরে লেখক ও গবেষকদের সঙ্গে কাজ করা এবং সার্বিকভাবে বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যকে জনসাধারণের মাঝে নিয়ে যাওয়া, দীপ ঘোষ নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের এই ধারাটিকে ধারালো করে তোলার। কিন্তু তুখোড় সম্পাদক ও কল্পবিজ্ঞান আলোচক হওয়ার পাশাপাশি তিনি নিজে এক অসামান্য অনুবাদকও বটে, এবং তাঁর অনুবাদ পড়ে পাঠকরা বারবার মুগ্ধ হয়েছেন। সম্প্রতি জয়ঢাক প্রকাশন থেকে তাঁর সঙ্কলন ‘অনুতাপ করো সং’ প্রকাশিত হয়েছে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন