উপমহাদেশে ইলমে হাদীসের রেনেসাঁ যুগ
নবম শতকে উপমহাদেশে ইলমে হাদীসের রেনেসাঁ যুগ সূচিত হয়। গুজরাটের অধিপতি আহমদ শাহ আরব ও ভারতের সামুদ্রিক বাণিজ্য পথ নূতন করিয়া উম্মক্ত করেন। ফলে আরবদেশ হইতেবহু হাদীদবিদ ভারতবর্ষে আগমন করেন। প্রতিবেশী ইরান সরকার এই সময় শিয়া ধর্মমত গ্রহণ করেন। এই কারণে হাদীস-বিজ্ঞানে পারদর্শী একটি বিরাট জামা’আত সেখানে হইতে ভারতে হিজরত করিয়া আসিতে বাধ্য হন। সঙ্গে তারা বিপুল পরিমাণ হাদীস সম্পদ এখানে লইয়া আসেন। অপরদিকে মিসরেও এই সময় ইলমে হাদীসের প্লাবন সৃষ্টি হয় এবং তথা হইতে বড় বড় মুহাদ্দিস ভারত আগমন করেন। এই সময় যেসব মুহাদ্দিস ভারতে আসেন, তাঁহাদের মধ্যে নিম্নলিখিত দুইজন মুহাদ্দিসের নাম সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্যঃ
১. বদরউদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে আবী বকর দামায়নী (মৃঃ ৮২৭ হিঃ)। তিনি ইয়েমেনের জামে জাবীদ-এ হাদীসের অধ্যাপক ছিলেন। এখানে তিনি বুখারী শরীফের একখানি ভাষ্য (Commentary) রচনা করেন। উহার নাম ‘মাসাবীহুল জামে’ (*********************)। তিনি ৮২০ সনের শাবান মাসে ভারতের গুজরাটে আগমন করেন। এখানে নিম্নলিখিত তিনখানি গ্রন্হ রচনা করেনঃ (ক) তা’লীকুল ফরায়েয (*********************) (খ) ‘তুহফাতুল গরীব, শরহে আল-মুগনীউল লবীব’ এবং (গ) ‘আইনুল হায়াতফী খুলাসাতে হায়াতুল হাইয়ান’।
২। আবুল ফুতুহ নুরউদ্দীন আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ শিরাজী তয়ূসী (মৃঃ ৮৫০ হিঃ)।
তিনি সম্ভবত ৮১৪-৮৪৪ সনে গুজরাটে আসনে। তিনি মাজদুদ্দীন ফিরোজাবাদী, শামসউদ্দীন জাজারী, সাইয়েদ শরীফ জুরজানী ও বাবা ইউসুফ হারাভীর ছাত্র।
মিসরের ইবনে হাজার আসকালানী প্রতিষ্ঠিত হাদীস শিক্ষাকেন্দ্র হইতে যাঁহারা ভারতে আসেন, তাঁহাদের মধ্যে নিম্নলিখিত দুইজন মুহাদ্দিস উল্লেখযোগ্যঃ
১. ইয়াহইয়া ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবুল খায়ের হাশেমী (মৃঃ ৮৪৩ হিঃ)
২. খাজা ইমাদ সাখাভী প্রতিষ্ঠিত হাদীস কেন্দ্র হইতে নিম্নলিখিত মুহাদ্দিসগণ ভারতে আসেনঃ
১) আবুল ফাতাহ আর-রাযী আল-মক্কী (মৃঃ ৮৮৬ হিঃ)
২) আহমদ ইবনে সালেহ মালভী
৩) উমর ইবনে মুহাম্মদ দামেশকী (মৃঃ ৯০০ হিঃ)
৪) আবদুল আযীয ইবনে মাহমুদ তুসী (মৃঃ ৯১০ হিঃ)
৫) অজীহুদ্দীন মুহাম্মদ মালাকী (মৃঃ ৯১৯ হিঃ)
৬) হুসাইন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আওলিয়া কিরমানী (মৃঃ ৯৩০ হিঃ)
৭) জামালুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে উমর হাজরানী (মৃঃ ৯৩০ হিঃ)
৮) রফীউদ্দীন সাকাভী (মৃঃ ৯৫৪ হিঃ)
যাকারিয়া আল-আনসারী প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্র হইতে আগত মুহাদ্দিসগণের নামঃ
১) আবদুল মু’তী হাজরানী ( মৃঃ ৯৮৯ হিঃ)
২) শিহাবুদ্দীন আব্বাসী (৯৩২ হিঃ)
ইবনে হাজার হায়সামী প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্র হইতে আগত মুহাদ্দিসগণের নামঃ
১) শায়খ ইবেন আবদুল্লাহ আইদরুসী (মৃঃ ৯৯১ হিঃ)
২) আবূ সায়াদাত মুহাম্মদ আল ফকহী (মৃঃ ৯৯২ হিঃ)
৩) মীর মুরতাযা শরীফ শিরাজী (মৃঃ ৯৭৪ হিঃ)
৪) মীর কাঁলঅ মুহাদ্দিস আকবারাবাদী (মৃঃ ৯৮৩ হিঃ)
মিশকাত শরীফের প্রসিদ্ধ ভাষ্য ‘মিরকাত’- এর গ্রন্হকার মুল্লা আলী কারী এই কাঁলাই ছাত্র।
অতঃপর পাক-ভারতের নিম্নলিখিত স্থানসমূহে হাদীস শিক্ষার কেন্দ্র গড়িয়া উঠে।
১) দাক্ষিণাত্যে- এখানে বহু সংখ্যক মুহাদ্দিসের আগমন হয়।
(২) গুজরাট
(৩) মালওয়া
(৪) খান্দেশ
(৫) সিন্ধু- পাঁচ শত বৎসর পর দশম হিজরী শতকে এখানে নূতনভাবে ইলমে হাদীস শিকা ও প্রচারকার্য শুরু হয়।
(৬) লাহোর- মওলানা মুহাম্মদের (মৃঃ ১০০০ হিঃ) নেতৃত্বে এই শহর হাদীস শিক্ষার কেন্দ্রে পরিণত হয়।
(৭) ঝাঁসী ও কালপী- সাইয়েদ মুহাম্মদ ইবরাহীম নামক এক বাগদাদী মুহাদ্দিস ১০ম হিজরী শতকে এখানে আগমন করেন ও হাদীস শিক্ষা দান শুরু করেন।
(৮) আগ্রা- এখানে এক সঙ্গে তিনটি হাদীস কেন্দ্র স্থাপিত হয়ঃ
ক. রফীউদ্দীন সাফাবীর মাদ্রাসা
খ. হাজী ইবরাহীম মুহাদ্দিস আকবরাবাদীর (মৃঃ১০১০ হিঃ) মাদ্রাসা এবং
গ) সাইয়েদ শাহমীর (মৃঃ ১০০০হিঃ) মাদ্রাসা
(৯) লক্ষ্ণৌ- দশম শতকের শেষার্ধে এই শহর হাদীসশাস্ত্র আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়, যখন মদীনা হইতে শায়খ যিয়াউদ্দীন মুহাদ্দিস এখানে আসিয়া বসবাস ও হাদীস শিক্ষা দান শুরু করেন।
(১০) জৌনপুরী-সম্ভবত ইমাম সাখাভীর ছাত্র মুহাযযহাব জৌনপুরীরর মাধ্যমে এখানে হাদীস প্রচার হয়।
(১১) বিহার- অষ্টম শতকে শরফূদ্দীন মুনীরীর ছাত্র সাইয়েদ মিনহাজুদ্দীন রাস্তীর মাধ্যমে বিহারস্থ ফুলওয়ারী শরীফে ইলমে হাদীস পৌঁছায়। দশম শতকে ইহা বিকাশ ও উন্নতি লাভ করে।
৮২০ হিজরী হইতে ৯৯২ হিজরীর (ইং ১৪১৭- ১৫৮৪) মধ্যে উপমহাদেশে বিদেশী মুহাদ্দিসগণের আগমনে হাদীস শিক্ষার ক্ষেত্রে এক নব জোয়ারের সূচনা হয় এবং তখন হইতেই এই দেশের বিদ্যোৎসাহী ও জ্ঞান পিপাসু ব্যক্তিগণ হাদীস শিক্ষার মহান উদ্দেশ্যে বিদেশ সফরে বহির্গত হইতে শুরু করেন। তাঁহাদের এই বিদেশ যাত্রা কেবল ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হইয়া থাকে নাই- সুদূর মক্কা-মদীনা পর্যন্ত তারা ইলমে হাদীসে উচ্চ শিক্ষা লাভ করার উদ্দেশ্যে সফর করেন। এই যুগেও তারা উত্তাল তরঙ্গ মুখর সমুদ্র পরিক্রমার ঝুঁকি গ্রহণ করিতে এক বিন্দু কুণ্ঠিত বা ভীত হন নাই। এই যুগের মুহাদ্দিস আবদুল আউয়াল আল-হুসাইনী (মৃঃ ৯৮৬ হিঃ) হইতে শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (মৃঃ ১১৭২ হিঃ) পর্যন্ত প্রায় সকল হাদীসবিদই হাদীস শিক্ষার উদ্দেশ্যে এইরূপ সফর করিয়াছেন।
এই পর্যন্ত সর্বপ্রথম এই দুর্গম সফরে গমন করেন জামালুল্লাহ গুলবাগী। তিনি মক্কায় হাদীস শিক্ষা করেন। অতঃপর আরো বহু লোক হাদীস শিক্ষার উদ্দেশ্যে মক্কা ও মদীনা গমন করেন এবং এইরূপ সফর অব্যহতভাবে চলিতে থাকে। ভারতের প্রথম হাদীস শিক্ষাকেন্দ্র দেওবন্দ ও সাহারানপুর মাদ্রাসা স্থাপিত হওয়ার সময় পর্যন্ত।
এই সময় নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ হাদীস-বিজ্ঞানে বিশেষ পারদশিতা লাভ করেনঃ
১. আবূ বকর ইবনে মুহাম্মদ আল-বহরুজী (মৃঃ ৯১৫ হিঃ)। তিনি আল-জাজারী সংকলিত ‘হিসনে হাসীন’ গ্রন্হের ফারসী অনুবাদ এবং উহার টীকা রচনা করেন। ‘আইনুল ওফা ফী তরজমায়ে শিফা’ নামে কাজী ইয়াযের গ্রন্হেরও তিনি ফরাসী অনুবাদ করেন।
২. মীর সাইয়েদ আবদুল আউয়াল আল-হুসাইনী গুজরাটী জৌনপুরী (মৃঃ ৯৮৬ হিঃ)। তিনি মুহাদ্দিস আবুল ফাতাহর সমসাময়িক। মক্কা মদীনায় হাদীস শিক্ষা লাভ করেন। তিনি হাদীসের উচ্চলিক্ষা লাভের জন্য বিশেষ কষ্ট ও শ্রম স্বীকার করেন এবং ‘ফায়যুলবারী ফী শরহিল বুখারী’ ও ‘মুন্তাখাবে কিতাবে সাফরুস সায়াদাত’ নামে দুইখানি গ্রন্হ রচনা করেন। খান-খানান আকবরের আমলের প্রাথমিক যুগে তাঁহাকে গুজরাট হইতে দিল্লী আমন্ত্রণ করেন।
৩. খাজা মুবারক ইবনে মখদুম আর রাজানী বানারসী (মৃঃ ৯৮১ হিঃ)। তিনি ‘মাদরিজুল আখবার’ নামে একখানি হাদীসগ্রন্হ সংকলন করেন।
৪. শায়খ ভিকারী কাকুরী (৮৯০-৯৮১ হিঃ)। তাঁহার আসল নাম ছিল নিজামুদ্দীন ইবনে আরম সাইফুদ্দীন।তিনি খ্যাতনামা মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি হাফেজ সাকাভীর নিকট হাদীস শ্রবণ ও অধ্যায়ন করেন। হাদীসের খেদমতে তিনি জীবন উৎসর্গ করেন। সহীহ বুখারী তাঁহার সম্পূর্ণ মুখস্থ ছিল।
৬. জামালুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে তাহের ইবনে আলী ফাত্তানী (মৃঃ ৯১৪ হিঃ)। তিনি ‘মালেকুল মুহাদ্দিসীন’ (মুহাদ্দিসদের বাদশাহ) নামে খ্যাত হইয়াছিলেন। মক্কা শরীফে আলী মুত্তাকীল হাদীস শিক্ষা কেন্দ্রে ৯৪৪ হিজরী সনে হাদীস শিক্ষার জন্য ভর্তি হন এবং দীর্ঘ ছয় বৎসর পর্যন্ত তথায় হাদীস অধ্যায়ন করেন। তিনি তাঁহার নিম্নলিখিত গ্রন্হাবলীর কারণে চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবেন।
ক) মাজমাউল বিহারুল আনওয়ার (********************)
খ) তাযকরিাতুল মওজুয়াত
গ) কানুনূল মওজুয়াত অজজয়ীফ
ঘ) আসমাউর-রিজাল
ঙ) আলমুগীনী ফী জাবতির রজাল
৭. শায়খ তাইয়েব সিন্ধী (মৃঃ ৯৯৯ হিঃ)। তিনি তা’লিকাতে মিশকাতুল মাসাবীহ’ নামে একখানি গ্রন্হ রচনা করেন।
৮. শায়খ আবদুল্লাহ আনসারী সুলতানপুরী (মৃঃ৯৯০ হিঃ)। সম্রাট আকবরের আমলে তিনিই ভারতের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আলিম ছিলেন। তাঁহার উল্লেখযোগ্য দুইখানি গ্রন্হের নাম এইঃ
৯) শরহে আলা শামায়েলুন্নবী গাংগুহী (মৃঃ ৯৯০ হিঃ)। তিনি ইবনে হাজার হায়সামীর নিকট হাদীসের শিক্ষা লাভ করেন। আকবরের আমলে তিনি ইসলামের জন্য বিপ্লবাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করেন।
হাদীস সম্পর্কে তাঁহার নিম্নলিখিত গ্রন্হাবলী উল্লেখযোগ্যঃ
ক) সুনানুল হুদা-ফী-মুতাবিয়াতিল মুস্তফা
খ) আযায়েফুল ইয়াওম আল্লাইল
১০. শায়খ অজীহুদ্দীণ আলাভী গুজরাটী (মৃঃ ৯৯০ হিঃ)। তিনি অন্যূন ২৩ খানা গ্রন্হ রচনা করেন। শরহে জামী, তাফসীরে বায়যায়ী, নুজহাতুন্নযার ফী শরহে মুখবাতুল ফিকর প্রভৃতি তাঁহার বিখ্যাত রচনা।
১১. শায়খ তাহের ইবনে ইউসুফ সিন্দী বুরহানপুরী (মৃঃ ১০০৪ হিঃ)। তাঁহার রচিত গ্রন্হের সংখ্যা চারঃ
ক) তালখীস শরহে আসমাউর-রিজাল আল-বুখারী কিরমানী
খ) মুলকাত জামেউল জাওয়ামি
গ) শরহুল বুখারী
ঘ) রিয়াযুস সালেকীন
১২. শায়খ ইবনে হাসান সায়ফী কাশ্মীরী (মৃঃ ১০০৩ হিঃ)। তিনি শায়খ আহমদ সরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফেসানীর উস্তাদ। তাঁহার গ্রন্হাবলীর নামঃ
ক) শরহে সহীহুল বুখারী
খ) তফসীরুল কুরআন
গ) রিসালায়ে আযকার
ঘ) মাগাযীউন্নাবুয়্যাত।
১৩. হাজী মুহাম্মদ কাশ্মীরী (মৃঃ ১০০৬ হিঃ)। হাদীস সম্পর্কে তাঁহার নিম্নোক্ত গ্রন্হাবলী উল্লেখযোগ্যঃ
ক) শরহে শামায়েলুন্নবী
খ) শরহে মাশারিকুল আনওয়ার
গ) কিতাব খুলাসাতুল জামে ফী জামেউল হাদীস
ঘ) শরহে হিসনে হাসীন
১৫. শায়খ মুনাওয়ার ইবনে আবদুল মজীদ ইবনে আবদুস শকুর লাহোরী (মৃঃ ১০১০ হিঃ) তিনি আকবরের আমলে একজন বিপ্লবী আলিমের ভূমিকা অবলম্বন করেন। এইজন্য তিনি কারাবরণ করিতেও বাধ্য হন এবং কারাগারে থাকিয়া তিনি তাঁহার গ্রন্হ ‘দুরুন্নাজম ফী তরতীবিল আওয়ায়েলুস সুয়রুল করীম’ সম্পূর্ণ করেন ও কাজী শিহাবুদ্দীনের ‘আল বহরুল মাওয়াজ’ নামক তাফসীর মুখস্থ করেন। তিনি সাগানীর ‘মাশারিকুল আনওয়ার’ ও জাজারীর হিসনে হাসীনেরও ব্যাখ্যা লিখেনে।
১৬. মুহীউদ্দীন আবদুল কাদের ইবনে শায়খ ইবনে আবদুল্লাহ (মৃঃ ১০৩৭ হিঃ)। তিনি বহু গ্রন্হ প্রণয়ন করেন। হাদীস সম্পর্কে তাঁহার পাঁচখানি গ্রন্হ উল্লেখযোগ্যঃ
ক) আল মিনহুল বারী বি-খাতমে সহীহিল বুখারী
খ) ইকদুল লাইল ফী ফাযায়েলিল লায়াল
গ) রিসালা ফী মানাকিবিল বুখারী
ঘ) আল কাওলুল জামে ফী বয়ানে ইলমুন নাফে
ঙ) কিতাবুল আনফুসেল্লাতীফ ফী আহলি বদরিশ শরীফ।
১৭. আবদুন্নবী শাত্তারী (মৃঃ ১০৩৯ হিঃ)। হাদীস সম্পর্কে তাঁহার নিম্নোক্ত পাঁচখানি গ্রন্হ উল্লেখযোগ্যঃ
ক) জাহরিয়াতুন নাজাত ফী শারহীল মিশকাত (মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা)
খ) শরহে নুখবাতুল ফিকর
গ) শরহে হাদীস ********************
ঘ) শরহে হাদীস ********************
ঙ) লাউমীউল আনওয়ার ফী মানাকীবিস সায়াদাতিল আতহার।
মুজাদ্দিদে আলফেসানীর নাম শায়খ আহমদ ইবনে আবদুল আহাদ ফারুকী সরহিন্দী (মৃঃ ১০৩৪ হিঃ)। তিনি শায়খ ইয়াকুব সাইফীর নিকট হাদীস শিক্ষা লাভ করেন এবং বুখারী শরীফ, তাবরিজীর মিশকাত ও সুয়ূতীর জামেউস-সগীর শিক্ষা দেওয়ার অনুমতি লাভ করেন। কাযী বহলূল বদখাশানীর নিকট হইতে সিহাহ সিত্তাহ বর্ণনা করার অনুমতি লাভ করেন। তিনি হাদীস সম্পর্কে ‘হাদীসে আরবায়ীন’ গ্রন্হ ব্যতীত অপর কোন গ্রন্হ রাখিয়া যান নাই। তিনি কুরআন-হাদীসের ভিত্তিতে মুসলিম সমাজ সংস্কার ও সংশোধনের এক বিরাট আন্দোলন পরিচালনা করেন। তাঁহার ‘মকতুবাত’ গ্রন্হে কুরআন-হাদীস শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। ফলে বহু লোক ইলমে হাদীস শিক্ষা করিয়া উহাতে পারদর্শিতা লাভ করিতে উদ্বুদ্ধ ও আগ্রহান্বিত হন। এই সময়কার কয়েকজন মুহাদ্দিসের নাম উল্লেখ করা যাইতেছেঃ
১. শায়খ সায়ীদ ইবনে আহমদ সরহিন্দী (মৃঃ ১০৭০ হিঃ)
২. শায়খ সায়ীদের পুত্র ফরুখ শাহ (মৃঃ ১১১২ হিঃ)
৩. সিরাজ আহমদ মুজাদ্দেদী (মৃঃ ১২৩০ হিঃ) । তাঁহার তিনখানি গ্রন্হ উল্লেখযোগ্যঃ
ক) মুসলিম শরীফের ফারসী তরজমা
খ) জামে তিরমিযীর ফারসী তরজমা
গ) খাদ্য ও পানীয় সম্পর্কিত হাদীসসমূহের সমষ্টি।
৪. শায়খ মা’সুম ইবনে আহমদ সরহিন্দী (মৃঃ ১০৮০ হিঃ)
৫. খাজা আজম ইবনে সায়ফুদ্দীন সরহিন্দী (মৃঃ ১১১৪ হিঃ)।
তিনি বাদশাহ আলমগীরের আমলে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ছিলেন। ‘ফায়যুল বারী শারহে সহীহিল বুখারী’ নামে তিনি বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্হ রচনা করেন।
৬. শাহ আবূ সায়ীদ ইবনে সাফিউল কাদর মুজাদ্দেদী (মৃঃ ১২৫০)
৭. শাহ আবদুল গনী ইবনে সায়ীদ মুজাদ্দেদী (মৃঃ ১২৯৬ হিঃ)
তিনি ‘ইনজাহুল হাজা শরহে ইবনে মাজাহ’ নামে ইবনে মাজা হাদীস গ্রন্হের রচনা করেন।
শায়খ আবদুল হক মক্কা শরীফে শায়খ আবদুল ওহাব মুত্তাকীর (মৃঃ ১০১০ হিঃ) নিকট হাদীস অধ্যায়ন করেন ও তাঁহার নিকট হইতে সিহাহ সিত্তা সম্পর্কে ‘অনুমতি’ লাভ করেন। হাদীস সম্পর্কে তাঁহা নিম্নলিখিত গ্রন্হাবলী চিরস্থায়ী ও মহামূল অবদানঃ
ক) ‘আততারীকুল কাভীম ফী শরহে সিরাতিল মুস্তাকীম। ‘সফরুস সায়াদাত’ গ্রন্হের ফারসী ব্যাখ্যা।
খ)আশরাতুল-লুময়াত ফিল মিশকাত (মিশাকত শরীফের ফারসী ব্যাখ্যা)।
গ) ‘লাময়াতুত-তানকীহ ফী শরহে মিশকাতিল মাসাবীহ’।
ঘ) আল-ইকামাল ফী আসমাইর রিজাল
ঙ) জামেউল বরাকাত মুনতাখাব শরহিল-মিশকাত
চ) ‘মা সাবাতা বিস সুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ
ছ) ‘আল-হাদীসুল আরবায়ীন’
জ) ‘তরজুমাতুল আহদীসিল আরবায়ীন’
ঝ) ‘দস্তুরে ফায়যুন নূর’
১০. ‘যিকরুল ইজাজাতিল হাদীস ফিল কাদীম আল-হাদীস’
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী তাঁহার এই বিরাট হাদীস সাধনা এবং গ্রন্হজগতে তাঁহার এই অবিস্মরণীয় অবদানের ফলে এদেশের হাদীস শিক্ষা ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা হয়।
‘তারীখে উলামায়ে হিন্দ’ গ্রন্হ প্রণেতা তাঁহার সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
ভারতে ইলমে হাদীসের বীজ তিনিই সর্বপ্রথম বপন করেন।
তিনি স্থায়ীভাবে হাদীসের দারস দানের কাজ করেন। তাঁহার বংশধরদের মধ্যে বহু ব্যাক্তি শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিসাবে মর্যাদা পাইবার অধিকারী হন। এখানে তাঁহাদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা যাইতেছেঃ
১. শায়খ নূরুল হক (মৃঃ ১০৭৩ হিঃ)। তিনি তাঁহার পিতার নিকটই ইলমে হাদীস শিক্ষা লাভ করেন। তাঁহার হাদীস সম্পর্কীয় গ্রন্হ দুইখানিঃ
ক) তাইসীরুল কারী ফি শরহে সহীহিল বুখারী
খ) শরহে শামায়েলুন্নবী
২. হাফেজ আবদুর সামাদ ফখরুদ্দীন ইবনে মুহিব্বুল্লাহ (মৃঃ ১১৬০ হিঃ)। তাঁহার গ্রন্হাবলী এইঃ
ক) মানবাউল ইলম ফী শারহে সহীহিল মুসলিম। মূলত ইহা তাঁহার পিতার লিখিত গ্রন্হ; তিনি ইহার সম্পাদনা করেন মাত্র।
খ) শরহে আইনুল ইলম
গ) শরহে হিসনে হাসীন
৩. শায়খুল ইসলাম ইবনে হাফেজ ফখরুদ্দীন (মৃঃ ১১৮০ হিঃ)। তাঁহার হাদীস গ্রন্হ তিনখানিঃ
ক) শরহে সহীহুল বুখারী
খ) রিসালা কাশফুল গিতা-আম্মা লাজিমা লিল মাওতা অল আহইয়া (মুয়াত্তা গ্রন্হের ব্যাখ্যা)।
রিসালা তরদুল আওহাম আন আসরিল ইমামূল হুমাম।
৪. সালামুল্লাহ ইবনে শায়খুল ইসলাম মুহাদ্দিস (মৃঃ ১২২৯ )। তিনি ‘মুহাদ্দীসে রামপুরী’ নামে খ্যাত। হাদীস সম্পর্কে তাঁহার নিম্নলিখিত গ্রন্হাবলী উল্লেখযোগ্য
১) আল মুহাল্লাহ বি আসরারিল মুয়াত্তা।
২) তরজমায়ে ফারসী সহীহিল বুখারী
৩) তরজমায়ে ফারসী শামায়েলুন্নবী
৪) রিসালা ফী উসুলিল হাদীস
৫. শায়খ সাইফুল্লাহ ইবনে নূরুল্লাহ বিন নূরুল হক। তিন সম্রাট আলমগীরের আমলে ‘আশরাফুল অসায়েল ফী শারহিশ শামায়েল’ নামে একখানি গ্রন্হ রচনা করেন।
১) খাজা খারেন্দ মুয়ীনুদ্দীন (মৃঃ ১০৮৫ হিঃ),
(২) খাজা হায়দার পাতলু (মৃঃ ১০৫৭ হিঃ),
(৩) বাবা দায়ুদুল মিশতাকী কাশ্মীরী,
(৪) শায়খ এনায়েতুল্লাহ মাহাদ্দিসে কাশ্মীরী (মৃঃ ১১৯৫ হিঃ),- ইনি ৩৬ বৎসর পর্যণ্ত হাদীসের দারস দিয়াছেন।
(৫) মীর সাইয়েদ মুবারক বিলগিরামী (মৃঃ ১১১৫ হিঃ),- তিনি শামায়েলুন্নবী ও হিসনে হাসীনের ফারসী ব্যাখ্যা লিখেন।
(৬) মীর আবদুল জলীল বিলগিরামী (মৃঃ ১১৩৮ হিঃ),- তিনি আসমাউল রিজাল বিষয়ে পারদর্শী মুহাদ্দিস ছিলেন,
(৭) মীর আযাদ বিলগিরামী (মৃঃ ১২০০ হিঃ),- তাঁহার হাদীস সম্পর্কিত গ্রন্হাবলীর নামঃ
ক) আজ জুয়ুদ্দরারী শরহে সহীহিল বুখারী
খ) শামামাতুল আম্বর ফী মা আরাদা ফিলহিন্দে মিন সাইয়েদিল বাশার
গ) সুবহাতুল মুরজান ফী আসারে হিন্দুস্থান।
ঘ) মখদুম সায়াদ ফী হুসনে খাতিমাতুল সায়াদা।
নিম্নলিখিত মুহাদ্দিসগণ হিজরী একাদশ শতকের মধ্যভাগ হইতে দ্বাদশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত খ্যাতি লাভ করেনঃ
১) মুহাম্মদ সিদ্দীক ইবনে শরীফ (মৃঃ ১০৪০ হিঃ),
২) শায়ক হুসাইনুল হুসাইনী (মৃঃ ১০৪৩ হিঃ)
৩) সাইয়েদ জা’ফর বদরে আলম (মৃঃ ১০৮৫ হিঃ)- তিনি ‘আল ফায়জুততারী ফী শরহে সহীহিল বুখারী’ ও ‘রাওজাতুশ-শাহ’ নামে দুইখনি গ্রন্হ রচনা করেন,
৪) আবুল মাজদ মাহবুবে আলম (মৃঃ১১১১ হিঃ)- তিনি ‘ যীনাতুন নুকাত ফী শারহিল মিশকাত’ নামে একখানি গ্রন্হ রচনা করেন,
৫) শায়খ ইয়াকুব বানানী লাহোরী (মৃঃ১০৯৮ হিঃ)- তিনি নিম্নলিখিত তিনখানি গ্রন্হ রচনা করেনঃ
ক) আল খায়রুল জারী ফী শরহে সহীহিল বুখারী
খ) আল মু’লিম ফী শরহে সহীহিল মুসলিম
গ) কিতাবুল মুসাফফা ফী শরহে মুয়াত্তা
৬) মওলানা নয়ীম সিদ্দীকী (মৃঃ ১১২০ হিঃ)- তিনি মিশকাতুল মাসাবীহর একখানি ব্যাখ্যাগ্রন্হ রচনা করেন,
(৭) শায়খ মুহাম্মদ আকরাম ইবনে আবদুর রহমান (মৃঃ ১১৩০ হিঃ)।
(৮) শায়খ ইয়াহইয়া ইবনে আমীর আল-আব্বাসী (মৃঃ ১১১৪ হিঃ)- ইনি
(ক) ‘ইয়ানাতুল কারী শরহে মুলাসীয়াতে বুখারী
(খ) আরবায়ীন
(গ) তাযকিরাতুল আসহাব প্রভৃতি গ্রন্হ রচনা করেন,
(৯) শায়খ মুহাম্মদ ফাখের ইলাহবাদী (মৃঃ ১১৬৪ হিঃ)- তিনি হাদীস বিষয় নিম্নলিখিত ৪ খানা গ্রন্হ রচনা করেনঃ
ক) কুররাতুল আইন ফী ইসবাতে রাফয়ে ইয়াদাইন
খ) রিসালায়ে নাজাতীয়া দর আকায়েদে হাদীসীয়া
(গ) নজমে ইবরাতে সফরুস সায়াদ
(ঘ) মসনভী দর তা’রীফে হাদীস।
(১০) মওলানা আমীনুদ্দীন মুহাম্মদ উমারী (মৃঃ ১১৪৫ হিঃ),
(১১) মওলানা নূরুদ্দীন ইবনে সালেহ আহমদাবাদী (মৃঃ ১১৫৫ হিঃ)- তিনি ‘নূরুল কারী শরহে সহীহিল বুখারী’ নামে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা রচনা করেন,
(১২) মীর্যা মুহাম্মদ ইবনে রুস্তাম বাদাখশী (মৃঃ ১১৯৫ হিঃ)। তাঁহার নিম্নলিখিত হাদীস গ্রন্হাবলী উল্লেখযোগ্যঃ
ক) মিফতাহুন নাজা ফী মানকিবিল আবা
খ) তারাজিমুল হুফফাজ
গ) নুযুলুল আবরার বিমা সাহহা মিন মানাকিবে আহলিল বায়তিল আতহার
ঘ) তুহফাতুল মুহিব্বীন ফী মানাকিবে খুলাফায়ে রাশেদীন।
(১৩) মীর্যা জান জলন্ধরী বিরাকী (মৃঃ ১১০০ হিঃ)- তিনি ‘নজমুদ দরার অল মরজান’ নামে একখানি গ্রন্হ রচনা করেন।
(১৪) মুহাম্মদ সিদ্দীক লাহোরী (মৃঃ১১৯৩ হিঃ)- তিনি ‘ইযালাতুল ফাসাদাত ফী শরহে মানাকিবিস সায়াদাত’ নামে একখানি গ্রন্হ রচনা করেন।
(১৫) শায়খ হাশেম ইবনে আবদুল গফুর সিন্দী। তিনি সহীহ বুখারী শরীফকে সাহাবাদের ক্রমিক পর্যায় পরম্পরানুযায়ী নূতনভাবে সজ্জিত ও সুবিন্যাস্ত করেন।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভীর যুগে উপমহাদেশে হাদীস শাস্ত্রের চরম বিকাশের অধ্যায় সূচিত হয়। এই সময়ই ইহা একটি উন্নত বিজ্ঞান হিসাবে মর্যাদা লাভ করে। ইহার পশ্চাতে যুগ-ইমাম শাহ ওয়ালীউল্লাহর দান অপরিসীম ও অতুলনীয়। তিনি ১১১৪ হিজরী সনের ১৪ই শাওয়াল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার ইন্তেকাল হয় ১১৭৬ হিজরীতে। তিনি হাদীসে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য মক্কা ও মদীনায় গমন করেন। হাদীস সম্পর্কে তাঁহার নিম্নলিখিত গ্রন্হাবলী উল্লেখযোগ্যঃ
ক) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা
খ) আরবায়ীন
গ) অসীকাতুল আখইয়ার
ঘ) আদদুররুস সামীন ফী মুবাশশরাতিন্নবীয়িল আমীন
ঙ) আল ফযলুল মুবীন ফিল মুসালসাল মিন হাদীসিন্নবীয়িল আমীন
চ) আল ইরশাদ ইলা মুহিম্মাতিল ইসনাদ
ছ) তারাজিমুল বুখারী
জ) শরহে তারাজীমে আবওয়াবিল বুখারী
ঝ) মুসাফফা শরহে মুয়াত্তা
ঞ) মুসাওয়া শরহে মুয়াত্তা
ট) আসারূল মুহাদ্দিসীন।
শাহ ওয়ালীউল্লাহর প্রভাবাধীন যেসব মুহাদ্দিসের আবির্ভাব হয়, তাঁহাদের নাম নিম্নে দেওয়া গেলঃ
১) কাযী সানাউল্লাহ পানিপতি (মৃঃ১২২৫ হিঃ)। তিনি ‘আল-লুবাব’ নামে একখানি হাদীস গ্রন্হ প্রণয়ন করেন।
২) শাহ আবদুল আযীয ইবনে ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (মৃঃ ১২৩৬ হিঃ)। তিনি প্রায় ষাট বৎসর পর্যন্ত হাদীস শিক্ষাদানে ব্যাপৃত থাকেন। ফলে তাঁহার অসংখ্য ছাত্র ভারতের বিভিন্ন স্থানে হাদীস শিক্ষা ও প্রচারে নিযুক্ত হন। তাঁহাদের কয়েকজনের নাম এখানে উল্লেখ করা যাইতেছেঃ
১) শাহ রফী উদ্দীন দেহলভী (মৃঃ ১২৪৯ হিঃ)
(২), শাহ মুহাম্মদ ইসমাঈল শহীদ (শাহাদাতঃ ১২৪৬ হিঃ)
(৩) শাহ মুহাম্মদ মকসুদুল্লাহ (মৃঃ ১২৭৩ হিঃ)
(৪) মুন্সী সদরুদ্দীন দেহলভী (মৃঃ ১২৫৮ হিঃ)
(৫) হাসান আলী মুহাদ্দিস লখনভী,
(৬) হুসাইন আহমদ (মৃঃ ১২৭৫ হিঃ)
(৭) শাহ রউফ আহমদ মুজাদ্দেদী (মৃঃ ১২৪৯ হিঃ)
(৮) শাহ ফজলূর রহমান গঞ্জ মুরাদাবাদী (মৃঃ ১৩১৫ হিঃ),
(৯) খুররম আলী বলহারী (মৃঃ ১২৭১ হিঃ) তিনি আসসাগীনার ‘মুশারিকুল আনওয়ার’ ও শাহ ওয়ালীউল্লাহর ‘আরবায়ীন’ গ্রন্হের উর্দূ অনুবাদ করেন।
(১০) শাহ আবূ সায়ীদ (মৃঃ ১২৫০ হিঃ)
(১১) মুহাম্মাদ শকুর (মৃঃ ১৩০০ হিঃ)
(১২) শাহ যহুরুল হক ফুলওয়ারী,
(১৩) আওলাদ হুসাইন,
(১৪) করম উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (মৃঃ ১২৫৮ হিঃ)
(১৫) আলামাতুল্লাহ বদায়ীনী।
শাহ আবদুল আযীযের হাদীস সম্পর্কীত গ্রন্হাবলী মাত্র দুইখানি। তাহা এইঃ
ক) বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন (ফার্সী),
খ) উজালায়ে নাফেয়া।
৩) শাহ ইসহাক ইবনে আফযাল ফারূকী দেহলভী (মৃঃ ১২৬২)- তিনি ২০ বৎসর পর্যন্ত হাদীস শিক্ষাদানে নিযুক্ত থাকেন। সমগ্র ভারতে তাঁহার ছাত্রগণ ছড়াইয়া পড়েন।
(৪) মাযহাব নানুতুবী (মৃঃ ১৩২০ )।
(৫) আহমাদ আলী সাহারানপুরী (মৃঃ ১২৯৭)- তিনি মক্কা ও মদীনায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। তিনি তা’লীকাতে বুখারী, মুকাদ্দামায়ে বুখারী ও তিরমিযী শরীফের হাশিয়া (Marginal notes) ইত্যাদি রচনা্ করেন।
(৬) মওলানা কাসেম নানুতুবী (মৃঃ ১২৯৭)
(৭) মিয়া সাহেব সাইয়েদ নযীর হুসাইন (মৃঃ১৩২০)।
(৮) মওলাবী নওয়াব মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন মুহাদ্দিস-ই দেহলভী- শাহ ইসাহক দেহলভীর নিকট তিনি ইলমে হাদীস শিক্ষা করেন। অতঃপর মক্কা ও মদীনায় গমন করিয়া হাদীসের উচ্চতর সনদ লাভ করেন। হাদীস সম্পর্কে তাঁহার নিম্নলিখিত গ্রন্হদ্বয় উল্লেখযোগ্যঃ
ক) মাজাহিরে হক- মিশকাত শরীফের উর্দূ অনুবাদ ও ভাষ্য
খ) তরজমা হিসনে হাসীন।
শাহ ইসহাক সাহেবের পর হাদীস শিক্ষাদানের বিভিন্ন কেন্দ্র গড়িয়া উঠে। পূর্বোক্ত মনীষীগণেরই ছাত্রগণ পাক-ভারতের বিভিন্ন স্থানে নিজস্বভাবে ইলমে হাদীসের শিক্ষাদান ও প্রচারাকর্য শুরু করেন। শাহ আবূ সায়ীদ মুজাদ্দিসীর উত্তরাধিকারী শাহ আবদুল গনীর নিকট বহু লোক হাদীস শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ হাদীস বিজ্ঞানের পারদর্শী মনীষীরূপে খ্যাতিলাভ করেন।
১) মওলানা আবদুল হাই লখনভী (মৃঃ ১৩০৪), মওলানা রশীদ আহমদ গংগুহী, মওলানা কাসেম, মওলানা ইয়াকুব, মওলানা আবদুল হক ইলাহাবাদী, শায়খ হাবিবুর রহমান রুদোলভী, মওলানা মুহাম্মদ হুসাইন ইলাহাবাদী, শায়খ মুহাম্মদ মা’সুম মুজাদ্দিদি, মওলানা জাফরী, মওলানা আলীমুদ্দীন বলখী, শায়খ মঞ্জুর আহমদ হিন্দী।
মওলানা আবদুল হাই মরহুম ফিরিঙ্গী মহলে হাদীস শিক্ষাদান কেন্দ্র স্থাপন করেন। তাঁহার নিকট শিক্ষাপ্রাপ্ত লোকেরা হাদীসশাস্ত্রে যথেষ্ট পারদর্শিতা লাভ করেন। এই পর্যায়ের কয়েকজন মুহাদ্দিসের নাম এখানে উল্লেখ করা যাইতেছেঃ
(১) মওলানা জহীর আহমদ ‘শওক’। তিনি আ-সা-রিস-সুনান (********************) নামে একখানি হাদীসগ্রন্হ প্রণয়ন করেন।
(২) মওলানা আবদুল হাদী আজীমাবাদী
(৩) মওলানিা মুহাম্মদ হুসাইন ইলাহাবাদী,
(৪) হাফেজে হাদীস মাওলানা ইদরীস সাসরামী
(৫) মওলানা আবদুল গফুর রমযানপুরী
(৬) মওলানা আবদুল করীম পাঞ্জাবী
(৭) শাহ সুলায়মান ফুলওয়ারী – তিনি এককালে কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসার হেড মাওলানা ছিলেন।
(৮) মওলানা আবদুল হাই
(৯) মওলানা আবদুল ওয়াহাব বিহারী
(১০) মওলানা আবদুল বারী – তিনি ‘আ-সা-রিস-সুনান গ্রন্হের’ ব্যাখ্যা রচনা করেন।
মওলানা সাইয়েদ নজীর হুসাইন দেহলভীর (মৃঃ ১৩২০ হিঃ) মারফতে এই উপমহাদেশে ইলমে হাদীস ব্যাপক প্রচার লাভ করে। তিনি আহলে হাদীস জামায়াতের নেতা ছিলেন। শত সহস্র ছাত্র তাঁহার নিকট ইলমে হাদীস শিক্ষা লাভ করিয়া উপমহাদেশের বিভিন্ন দিকে ছড়াইয়া পড়েন। এই পর্যায়ে মুহাদ্দিসগণের মধ্য হইতে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা যাইতেছেঃ
(১) মওলানা শামসুল হক দাহানূভূ। তিনি ‘গায়াতুর মকসুদ’ নামে একখানি গ্রন্হ রচনা করেন।
(২) মওলানা আশরাফ আলী। তিনি ‘আইনুল মা’বুদ নামে গ্রন্হ রচনা করেন।
(৩) মওলানা আবদুর রহমান মুবারকাপুরী- তিনি ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ নামে তিরমিযী শরীফের একখানি বিরাট শরাহ কিতাব লিখেন।
(৪) মওলানা সায়াদাত হুসাইন- তিনি কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসার ইলমে হাদীসের অধ্যাপক ছিলেন।
(৫) মওলানা আমীর আলী মলীহাবাদী- তিনি হিদায়া (ফিকাহ গ্রন্হের) টিকা রচনা করিয়াছেন।
(৬) মওলানা জমীল আনাসারী- তিনি কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় হাদীসের দারস দিতেন।
(৭) মওলানা আহমদুল্লাহ (মৃঃ ১৩৬২)- তিনি দিল্লীর রহমানিয়া মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস ছিলেন।
(৮) মওলানা আলম আলী নগীনুভী, রামপুরে হাদীস শিক্ষাদানে সাইয়েদ আবূ মুহাম্মদ বরকত আলী শাহ, মওলানা হাসান শাহ, মওলানা মুনাওয়ার আলী এবং তাঁহার ছাত্র মাওলানা বেলায়েত হুসাইন প্রমুখ বড় বড় মুহাদ্দিস আবির্ভূত হন।
মওলানা শাহ আবদুল গনীর ছাত্র মওলানা মুহাম্মদ কাসেক ও মওলানা রশীদ আহমদ দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বিগত কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান হইতে কয়েক সহস্র মুহাদ্দিস পাক-ভারতের দিকে দিকে ছড়াইয়া পড়িয়াছেন। মওলানা খলীল আহমদ সাহেব এই পর্যায়ের বড় মুহাদ্দিস। তিনি ‘বযলুল মজহুদ’ নামে আবূ দাঊদ শরীফের এক উচ্চমানের জ্ঞানগর্ভ ব্যাখ্যা-গ্রন্হ রচনা করেন।
মওলানা মাহমুদুল হাসান (শায়খুল হিন্দ) দীর্ঘকাল পর্যন্ত দেওবন্দ মাদ্রাসার শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিস ছিলেন ও বহুশত লোক তাঁহার নিকট হলমে হাদীসের শিক্ষালাভ করেন। মওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী এ যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস। তিনি বুখারী ও তিরমিযী শরীফ পড়াইবার সময় যে ভাষণ দিয়াছেন তাহা তাঁহার ছাত্রদের কর্তৃক লিপিবদ্ধ হইয়াছে এবং যথাক্রমে ‘ফয়যুলবারী’ শরহে বুখারী ও ‘আল-আরফুশ-শাযী শরহে তিরমিযী ‘ নাম প্রকাশিত হইয়াছে।
মওলানা আহমদ আলী সাহারানপুরীর নিকট হইতে হাদীস শিক্ষা করিয়া বহু লোক বাংলা-আসামে হাদীসের দারস দানে ব্যাপৃত হন। তাঁহার ছাত্রদের মধ্যে মুফতী আবদুল্লাহ টুংকী ও মওলানা নাজের হাসান দেওবন্দী সর্বাধিক খ্যাতিলাভ করেন। পূর্ব বাংলা ও আসাম এলাকায় তাঁহাদের ছাত্র এবং এই গ্রন্হকারের খাস উস্তাদ মওলানা মুহাম্মদ হুসাইন সিলহটী ও মওলানা মুমতাযদ্দীন সাহেবান বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
[এই পর্যায়ের আলোচনা সুসংবদ্ধভাবে খুব বেশমী সংখ্যক গ্রন্হে পাওয়া যায় না। এই আলোচনারঞ্জ যাবতীয় গ্রন্হ নিম্নলিখিত গ্রন্হাবলী হইতে গৃহীত। (1) জনাব ডাঃ ইসহাক সাহেবের গবেষণামূলক গ্রন্হ Indian’s Contribution to the Study of Hadith Literature, (২) মওলানা মুফতী আমীমুল ইহসান লিখিত ******************** (৩)******************** (৪)******************** মওলানা আবদুল গফফার হাসান সংকলিত ******************** এর ভূমিকা ইত্যাদি। ‘মানের-এর বিখ্যাত হাদীসবিদ শায়খ মাখদুমুল মূলক তাঁহার নিকট সুদীর্ঘ ২২ বৎসর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ইলমে হাদীস ও অন্যান্য জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা লাভ করিয়াছিলেন। (মানাকিবুল আসফিয়া) (Islamic Culture, vol-xxvll- No-1]
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন