হাদীস বর্ণনাকারীদের শ্রেণী বিভাগ (গুণগত)

হাদীস বর্ণনাকারীদের শ্রেণী বিভাগ (গুণগত)

হাদীস বর্ণনাকারী লোক গুণগত দিক দিয়াচার শ্রেণীতে বিভক্ত। এই শ্রেণী-পার্থক্যের দৃষ্টিতেই তাঁহাদের বর্ণিত হাদীসের পর্যায় ও মর্যাদা নির্ণীত হইয়া থাকে।

প্রথম শ্রেণীর হাদীস বর্ণনাকারী তারা, যাঁহারা অত্যন্ত মুত্তাকী, শরীয়াতের পাবন্দ, তীক্ষ্ণ স্মরণশক্তিসম্পন্ন, ইসলামের বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞাননে পারদর্শী, সূক্ষ্ম বুদ্ধিমান, সুবিবেচক, মুখস্থ করা হাদীসসমূহের পূর্ণ হেফাজতকারী এবং বিদয়াত-বিরোধী।

দ্বিতীয় শ্রেণীর বর্ণনাকারী তারা, যাঁহাদের গুণ সর্বদিক দিয়াই প্রথম শ্রেণীর বর্ণনাকারীদের সমান। কিন্তু কেবল স্মরণশক্তির দিকদিয়া প্রথম শ্রেণী অপেক্ষা কম। এই পর্যায়ে দুই ধরনের লোক পাওয়া যায়। এক ধরনের লোক- যাঁহারা হাদীস লিখিয়া রাখিতেন, কেবলমাত্র স্মরণশক্তির উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল ছিলেন না। আর দ্বিতীয় ধরনের লোক- যাঁহারা হাদীস লিখিয়া রাখিতেন না। ফলে মূল হাদীসের কোন কোন শব্দ ভূলিয়া যাওয়ার কারণে বর্ণনা করার সময় উহার সম-অর্থবোধক শব্দ তদস্থলে ব্যবহার করিতেন।

তৃতীয় শ্রেণীর বর্ণনাকারী তারা, যাঁহারা শরীয়াতের অনুসরণকারী মুত্তাকী ছিলেন; জ্ঞান-বুদ্ধি, বোধশক্তি ও অন্তর্দৃষ্টির দিক দিয়া দ্বিতীয় শ্রেণীর বর্ণনাকারীদের সমান নহেন। যাহা তাঁহাদের স্মরণে রক্ষিত আছে, কেবল তাহাই মূলধন; যাহা ভুলিয়া গিয়াছেন, সেদিকে তাঁহাদের কোন ভ্রূক্ষেপ নাই। ভুলিয়া যাওয়ার অংশকে তারা কল্পনার সাহায্যে পুরণ করিয়া দিতেন।

চতুর্থ শ্রেণীর বর্ণনাকারী, যাঁহারা দ্বীন-ইসলামের অনুসরণকারী ও শরীয়াত পালনকারী বটে; কিন্তু বুদ্ধি-বিবেচনা ও দূরদৃষ্টির দিক দিয়া তারা পশ্চাৎপদ। লোকদিগকে নসীহত করা, পরকালীন শান্তির আশ্বাস এবং আযাবের ভয় প্রদর্শনের জন্য হাদীস রচনা করাকে তারা জায়েয মনে করিতেন। এই লোকদের আবার চারটি পর্যায় রহিয়াছে। প্রথম তারা, যাঁহারা বৈষয়িক মান-সম্মান লাভের উদ্দেশ্যে হাদীসসমূহের রদ-বদল কিংবা নূতন হাদীস রচনা করিতে দ্বিধাবোধ করিতেন না। দ্বিতীয়, তারা, যাঁহারা নিজেদের খুঁটিনাটি মাসলা সম্পর্কিত মতের সমর্থনে উস্তাদের নিজস্বভাবে প্রয়োগকৃত শব্দ হাদীসের মধ্যে শামিল করিয়া দিতেন। তৃতীয় তারা যাঁহারা বৃদ্ধি-বিবেচনা কম হওয়ার কারণে উস্তাদের উল্লিখিত ব্যাখ্যাদানকারী শব্দসমূহকে মূল হাদীসেরই অংশ মনে করিতেন। চতুর্থ হইতেছে ইসলামের সেইসব দুশনম লোক, যাহারা মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে দলাদলি, বিভেদ-বিচ্ছেদ ও কোন্দল সৃষ্টি এবং উহাতে ইন্ধন যোগাইবার অসদুদ্দেশ্যে হাদীস রচনা করিয়া প্রচার করিতে বিন্দুমাত্র ভয় পাইত না।

[*********************]

হাদীস গ্রহণের শর্তাবলী

কোন ধরনের হাদীস গ্রহণ করা হইবে এবং কোন ধরনের হাদীস গ্রহণ করা যাইবে না, তাহা নির্ধারণ ও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ইলমে হাদীসের ইমামগণ বিভিন্ন শর্ত নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন। পূর্বেই বলা হইয়াছে, কেবলমাত্র সহীহ হাদীস ছাড়া অপর কিছুই গ্রহণ করা হইবে না, এই কথায় হাদীসের সকল ইমামই সম্পূর্ণ একমত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। কিন্তু কি কি গুণে একটি হাদীস ‘সহীহ হাদীস’ নামে অভিহিত হইতে পারে, এই পর্যায়ে হাদীসের প্রত্যেক ইমাম নিজস্বভাবে চিন্তা ও গবেষণা পরিচালনা করিয়াছেন। তবে যেহেতু এই গবেষণা ও চর্চা এবং হাদীস-বিজ্ঞানের উন্নয়ন একই সময় ও সকল মুহাদ্দিসের একত্র উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয় নাই, বরং বিভিন্ন সময়ে হাদীস-বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ-ধারার বিভিন্ন স্তরে ইহা অনুষ্ঠিত হইয়াছে, সেই কারণে ইহাতে বিভিন্ন পর্যায়ে সম্প্রসারণ সূচিত হইয়াছে। ফলে বাহ্যদৃষ্টিতে ইহাতে কিছু মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হইতেছে। আমরা এখান বিভিন্ন ইমামের আরোপিত শর্তাবলীর উল্লেক করিতেছি।

ইমাম আজম (র)

ইমাম আজম আবূ হানীফা (র) হাদীসের ‘সহীহ’ হওয়ার জন্য যে শর্ত আরোপ করিয়াছেন, তাহা অপরাপর মুহাদ্দিসের আরোপিত শর্তের তুলনায় অত্যন্ত কঠিন বলিয়া মনে হয়। আর প্রকৃতপক্ষে তিনি এই দিক দিয়া বড়ই কঠোর প্রকৃতির লোক ছিলেন। ইমাম বুখারীর উস্তাদ শেখ অকী বলেনঃ ইমাম আজমের ন্যায় কঠিন শর্ত সাধারণভাবে আরোপিত হইলে সহীহ হাদীসের সংখ্যা হ্রাস পাইয়া যাওয়ার আশংকা রহিয়াছে।

[*********************]

ইমাম আবূ হানীফার শর্তাবলী নিম্নরূপঃ

১. হাদীস বর্ণনাকারীকে অবশ্যই প্রথম শ্রেণীর বর্ণনাকারীদের অন্তভূক্ত হইতে হইবে।

২. হাদীসের বর্ণনা শাব্দিক- রাসূলের ব্যবহৃত শব্দসমূহ হুবহু উল্লেখ সহকারে (*********************) হইতে হইবে। মূল হাদীসের অর্থ বা নিজস্ব ভাষায় বর্ণনা করিলে (*********************) তাহা গ্রহণ করা যাইবে না।

৩. হাদীস-দরসের বৈঠকে নিয়োজিত উচ্চ ঘোষণাকারীর (*********************) মুখে হাদীস শ্রবণ করিয়া থাকিলে এই শ্রবণকারিগণ পরবর্তীদের নিকট ********************* (অমুকে আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন) বলিয়া হাদীস বর্ণনা করিতে পারিবেন না। (করিলে সে হাদীস গ্রাহ্য হইবে না।)

৪. যেসবমুহাদ্দিসদেরনিকটলিখিতভাবেহাদীস-সম্পদসুরক্ষিতরহিয়াছে, হাদীসেরপ্রতিটিশব্দযদিতাঁহাদেরস্মরণেথাকে, তবেতাঁহাদেরমৌখিকবর্ণনাকবুলকরাযাইবে। অন্যথায়উক্তলিখিতহাদীসসম্মুখেরাখিয়াইহাদীসবর্ণনাকরিতেহইবে। (এইরূপনাকরিয়াথাকিলেসেহাদীসগ্রহণযোগ্যহইতেপারেনা)।

৫. এইসময়পর্যন্তযেসবহাদীসের (*********************) অর্থ ও ভাব বর্ণিত হইয়াছে, শব্দগতভাবে বর্ণিত হয় নাই, তবে উহাদের বর্ণনাকারী যদি ফিকাহ-পারদর্শী হন অন্তত বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য, সত্যবাদী ও সুবিবেচক এবং ‘দিরায়তের’ দৃষ্টিতেও যদি তাঁহার বর্ণিত কথা নির্ভূল হয়, তবে তাহা ‘সহীহ হাদীস’ রূপে কবুল করা যাইবে।

৬. নিত্য-নৈমিত্তিক কাজ কারবার, লেন-দেন ও ইবাদত সম্পর্কে যদি কোন ‘খবরে-ওয়াহিদ’ বর্ণিত হয়, তবে উহার সমর্থনে ও অনুকুলে সাক্ষী হিসাবে অপর বর্ণনা সূত্র বা সনদ পেশ করিতে হইবে। গ্রহণযোগ্য ‘সাক্ষী’ না পাওয়া গেলে অন্তত দিরায়াতের বিচারে মূল হাদীসটিকে অবশ্যই বিশুদ্ধ ও সহীহ হইতে হইবে।

সিহাহ-সিত্তাহ সংকলকদের শর্তাবলী

‘সিহাহ-সিত্তাহ’ গ্রন্হাবলী সংকলকগণও হাদীস গ্রহণের ব্যাপারে নিজস্বভাবে বহু জরুরী শর্ত আরোপ করিয়াছেন। এখানে প্রত্যেকের আরোপিত শর্তাবলী স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা যাইতেছে।

ইমাম বুখারী (র)

১. হাদীসের বর্ণনাসূত্রের পরস্পরা (*********************) ধারাবাহিক, সংযুক্ত ও অবিচ্ছিন্ন (*********************) হইবে। হাকেম আবূ আবদুল্লাহ নিশাপুরূ (র) লিখিয়াছেনঃ

******************************************************

প্রথম শ্রেণীর সহীহ হাদীস সেইটি, যাহাকে প্রখ্যাত সাহাবী রাসূলে করীমের নিকট হইতে বর্ণনা করিবেন এবং সেই হাদীসের অন্তত আরো দুইজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী থাকিবেন। অতঃপর সেই সাহাবীর নিকট হইতে এমন একজন তাবেয়ী উহার বর্ণনা করিবেন, যিনি সাধারণত সাহাবীর নিকট হইতেই হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে প্রখ্যাত এবং এই পর্যায়েরও উহার উপর দুইজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী থাকিবেন। তাহার পর এমন তাবে-তাবেয়ীন উহার বর্ণনা করিবেন, যাঁহারা হাদীসের হাফেজ ও অতিশয় সতর্ক। এক পর্যায়ে বর্ণনাকারীদের মধ্যে গণ্য। তাহার পর হইবেন ইমাম বুখারীর উস্তাদ- হাদীসের হাফেজ ও হাদীস বর্ণনায় বিশ্বস্ততা রক্ষা করার দিক দিয়া প্রখ্যাত।

[*********************]

২. হাদীসের বর্ণনাকারীকে তাহার উস্তাদদের সাহচর্যে অধিক দিন বসবাসকারী হইতে হইবে।

৩. বর্ণনাকরীকে প্রথম শ্রেণীর বর্ণনাকারীদের মধ্যে গণ্য, প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য হইতে হইবে।

৪. যিনি যাঁহার নিকট হইতে হাদীস বর্ণনা করিবেন, তাঁহাদের পরস্পরের সহিত বাস্তব সাক্ষাৎ প্রমাণিত হইতে হইবে।

ইমাম মুসলিম (র)

শায়খ আবূ আমর ইবনুস সালাহ লিখিয়াছেনঃ

******************************************************

ইমাম মুসলিম তাঁহার সহীহ গ্রন্হে হাদীস গ্রহণের জন্য এই শর্ত করিয়াছেন যে, হাদীসের সনদসূত্র অবশ্যই ‘মুত্তাসিল’ পরস্পর সংযুক্ত ও অবিচ্ছিন্ন হইবে, একজন ‘সিকাহ’ ব্যক্তি অপর ‘সিকাহ’’ ব্যক্তির নিকট হইতে বর্ণনা করিবেন, প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত এই অবস্থাই হইবে এবং উহা ‘শায’ (*********************) ও ‘ইল্লাত’ (*********************) হইতে বিমুক্ত হইবে।

২. হাদীস যিনি যাঁহার নিকট হইতে বর্ণনা করিবেন, তাঁহাদের উভয়ের একই যুগের ও একই সময়ের লোক হইতে হইবে।

৩. হাদীসের কোন বর্ণনাকারীই ‘মজহুল’ (*********************) অজ্ঞাত পরিচয় হইবেন না। তাহাদের সর্বজন পরিচিত হইতে হইবে।

৪. মূল হাদীসে কোন দোষক্রটির অস্তিত্ব থাকিবে না।

হাদীস গ্রহণের শর্তে ইমাম বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য রহিয়াছে। এই কারণে বহু হাদীস ইমাম বুখারীর নিকট সহীহ কিন্তু ইমাম মুসলিমের নিকট সহীহ নয় বরং ইহার বিপরীত। এই কারণে যাঁহাদের নিকট হইতে ইমাম বুখারী হাদীস গ্রহণ করিয়াছেন, কন্তু ইমাম মুসলিম গ্রহণ করেন নাই, আর ইমাম মুসলিম গ্রহণ করিয়াছেন কিন্তু ইমাম বুখারী গ্রহণ করেন নাই- এমন শায়খ বা হাদীসের উস্তাদদের সংখ্যা ৬২৫ জন।

[]

ইমাম নাসায়ী ও ইমাম আবূ দাঊদ (র)

১. সহীহ হাদীসের প্রধান দুইখানি গ্রন্হ বুখারী ও মুসলিম শরীফে যেসব হাদীস সন্নিবেশিত হইয়াছে সেসব সনদসূত্রে; তাহা সবই এই ইমামদ্বয়ের নিকট অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।

২. প্রধান হাদীস-গ্রন্হদ্বয়ে হাদীস গ্রহণের যে শর্ত অনুসৃত হইয়াছে তাহাতে উত্তীর্ণ সকল হাদীসই গ্রহণযোগ্য।

৩. যেসব হাদীস সর্ববাদী সম্মতভাবে ও মুহাদ্দিসীনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরিত্যক্ত হয় নাই ও যে সবের সনদ ‘মুত্তাসিল’- ধারাবাহিক বর্ণনা পরম্পরাসূত্রে কোন বর্ণনাকারীই উহ্য নহে, তাহা অবশ্যই গ্রহণ করা হইবে। মূল হাদীস সহীহ হইলে এবং ‘মুরসাল’ (*********************) কিংবা ‘মুনকাতা’ (*********************) না হইলে তাহাও গ্রহণযোগ্য।

৪. চতুর্থ পর্যায়ের বর্ণনাকারীদের মধ্যে উত্তম বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিত হাদীও গ্রহণযোগ্য।

৫. প্রকৃত সহীহ হাদীসের সমর্থন পাওয়া গেলে ইমাম আবূ দাঊদ এমন হাদীসও গ্রহণ করেন, যাহার বর্ণনাকারী যঈফ, দুর্বল ও অজ্ঞাতনামা।

এইসব শর্ত ইমাম নাসায়ী ও ইমাম আবূ দাঊদের নিকট সমভাবে গৃহীত। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে ইমাম নাসায়ীর আরোপিত শর্ত ইমাম আবূ দাঊদ অপেক্ষা অধিক উন্নত এবং কড়া। ইমাম নাসায়ী হাদীস গ্রহণের ব্যাপারে বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করিয়াছেন। তাঁহাদের অবস্থা সম্পর্কে অধিকতর খোঁজ-খবর লওয়ার প্রয়োজন মনে করিয়াছেন। এই কারণেই ইমাম নাসায়ী এমন অনেক বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেন নাই, যাঁহাদের নিকট হইতে ইমাম আবূ দাঊদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীস গ্রহণ করিয়াছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আল-আসকালানী (র) এই সম্পর্কে বলিয়াছেন, তাঁহাদের বর্ণিত হাদীসও গ্রহণযোগ্য।

******************************************************

এমন অনেক বর্ণনাকারীই আছেন, যাঁহাদের নিকট হইতে ইমাম আবূ দাঊদ ও তিরমিযী হাদীস গ্রহণ করিয়াছেন; কিন্তু ইমাম নাসায়ী তাঁহাদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ হইতে বিরত রহিয়াছেন। বরং বুখারীও মুসলিম শরীফে যাঁহাদের হাদীস গৃহীত হইয়াছে এমন এক বিরাট সংখ্যক বর্ণনাকারীরও হাদীস গ্রহণ করিতে ইমাম নাসায়ী প্রস্তুত হন নাই।

[*********************]

ইমাম তিরমিযী (র)

১. প্রথম দুইখানি সহীহ গ্রন্হ বুখারী ও মুসলিমে উদ্ধৃত সমস্ত হাদীসই গ্রহণযোগ্য।

২. প্রধানত মুহাদ্দিস ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের আরোপিত শর্তে আর যেসব হাদীসই উত্তীর্ণ ও সহীহ প্রমাণিত হইবে তাহা গ্রহণীয়।

৩. ইমাম আবূ দাঊদ ও ইমাম নাসায়ী যেসব হাদীস গ্রহণ করিয়াছেন ও উহাদের দোষ-ক্রটি দূর করিয়া দিয়াছেন, তাহাও গ্রহণীয়।

৪. ফিকাহবিদগণ যেসব হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন, তাহাও গ্রহণীয়।

৫. যেসব হাদীসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হইবে এমন এক নির্দেশ, যাহা সব সময়ই কার্যকর হইয়াছে, তাহা ও গ্রহণীয়।

৬. যেসব সিকাহ বর্ণনাকারীর সমালোচনা করা হইয়াছে এবং তাঁহাদের সম্পর্কে সবকিছু সুস্পষ্টরূপে প্রকাশিত হইয়াছে, তাঁহাদের হাদীসসমূহও গ্রহণীয়।

৭. যেসব বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসসমূহের সমালোচনা করা হইয়াছে এবং তাঁহাদের বিশ্বস্ততাও প্রমাণিত হইয়াছে তাঁহাদের বর্ণিত হাদীসও গ্রহণযোগ্য।

ইমাম ইবনে মাজাহ (র)

১. প্রথমোক্ত পাঁচজন মুহাদ্দিস যেসব হাদীস গ্রহণ করিয়াছেন তাহা তাঁহার নিকটও গ্রহণীয়।

২. পূর্বোক্ত পাঁচজনের আরোপিত শর্তে অন্যান্য যেসব হাদীস উত্তীর্ণ হইতে পারে তাহাও গ্রহণীয়।

৩. বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য আলেমগণ যেসব হাদীস অনুযায়ী আমল করেন তাহাও গ্রহণযোগ্য।

৪. চতুর্থ পর্যায়ের উত্তম বর্ণনাকারীদের বর্ণিত সেইসব হাদীসও গ্রহণীয়, যাহা যাচাই ও পরীক্ষা করার পর সহীহ প্রমাণিত হইয়াছে।

বস্তুত ইলমে হাদীসের ইমামগণের আরোপিত শর্তসমূহ ও হাদীস সমালোচনার পদ্ধতির গুরুত্ব এবং যথার্থতা ইসলামের দুশমনগণও স্বীকার করিতে বাধ্য।

[*********************]

দিরায়াত বা মূল হাদীস যাচাই করার পন্হা

কেবলমাত্র সনদের দিক দিয়া হাদীসের যাচাই, ওজন ও পরীক্ষা করার নিয়ম পূর্ববর্তী পৃষ্ঠাসমূহে আলোচিত হইয়াছে। ইহার দ্বিতীয় কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য পন্হা হইতেছে মূল হাদীসের (*********************)- যথার্থতা যাচাই করা। হাদীস-বিজ্ঞানের পরিভাষায় ইহাকে বলা হয় ‘দিরায়ত’। এই প্রকিয়ার বিভিন্ন দিক রহিয়াছে। তবে ইহার সারকথা এই যে, ইহাতে হাদীস বর্ণনাকারীদের সমালোচনা ও যাচাই না করিয়া মূল হাদীসটিকে যুক্তিবাদের কষ্টিপাথরে ওজন করিয়া দেখা হয়। ‘রওয়ায়েত’ বা সনদ যাচাই করার প্রক্রিয়া কেবলমাত্র হাদীস বর্ণনাকারীদের ব্যক্তিগত গুণ-চরিত্র ও পারস্পরিক সম্পর্ক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু হাদীসের মর্মকথায় কোন ভূল, অসত্য, অবস্তবতাএবং কুরআন ও সহীহ হাদীসের পরিপন্হী কিছু থাকিলে এই পন্হার যাচাই-পরীক্ষায় তাহা ধরা পড়িতে পারে না। অতএব কেবলমাত্র এই পদ্ধতিতে যাচাই করিয়া কোন হাদীস উত্তীর্ণ পাইলেই তাহা গ্রহণ করা যাইতে পারে না। এই কারণে মূল হাদীস (*********************)- হাদীসের মর্মবাণীটুকু তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও বিবেচনার মানদন্ডে যাচাই করার উদ্দেশ্যে এই ‘দিরায়াত’ প্রক্রিয়ার প্র য়োগ করা হইয়া থাকে। হাদীস যাচাই-পরীক্ষার ব্যাপারে ‘দিরায়াত’ নীতির প্রয়োগ ‘রওয়ায়েত’ নীতির মতই কুরআন ও হাদীস সম্মত। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলাই কেবলমাত্র ‘রওয়ায়েতের’ উপর নির্ভরশীল কোন ‘কথা’ গ্রহণ বা বর্জনের সিদ্ধান্ন করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

হযরত আয়েশা (রা) সম্পর্কে মদীনার মুনাফিকগণ দুর্নাম রটাইয়া দিলে কিছুসংখ্যক মুসলমানও তাহাতে প্রভাবান্বিত হইয়া পড়েন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাহাদের সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেনঃ

******************************************************

তোমরা যখন সে কথা শুনিতে পাইয়াছিলে, তখন তোমরা (শুনিয়াই) কেন বলিলে না যে, এই ধরনের কথা বলা আমাদের কিছুতেই উচিত নহে। তখন বলা উচিত ছিল যে, আল্লাহ পবিত্র মহান, ইহা এক সুস্পষ্ট মিথ্যা কথা ও বিরাট দোষারোপ ছাড়া আর কিছুই নহে। (ইহা সত্য হওয়া কিছুতেই সম্ভবপর নহে)।

[*********************]

অর্থাৎ মূল সংবাদটি শ্রবণমাত্রই একথা মনে করা উচিত ছিল যে, ইহা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। অতএব তখনই ইহার প্রচার ও প্রসার বন্ধ করিয়া দেওয়া কর্তব্য ছিল। এই ‘দোষারোপ’ শ্রবণের সঙ্গে সঙ্গেই উহাকে মিথ্যা বলিয়া বাতিল করার এই খোদায়ী তাগীদ ‘দিরায়াত’ প্রয়োগেরই নির্দেশ।

বস্তুত হাদীস যাচাইয়ের ব্যাপারে দিরায়াত রীতি এক সর্বোন্নত ও সর্বাধিক তীক্ষ্ণ শাণিত হাতিয়ার। এই পর্যায়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি রাখা হয়ঃ

১. যে ঘটনা শত-সহস্র লোকের সম্মুখে সংঘটিত হইয়াছে- যে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময়ই বিপুল সংখ্যক লোকের গোচরীভূত না হইয়া পারে না, সেই ঘটনা কিংবা অনুরূপ কোন ঘটনার কথা যদি মাত্র একজন বর্ণনাকারী কর্তৃক বর্ণিত হইয়া থাকে, তবে উহার সত্যতা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহের উদ্রেক হইবে। এইরূপ ঘটনা বহু সংখ্যক সাহাবী হইতে বর্ণিত না হইলে এই একজন ব্যক্তির বর্ণনাকে কিছুতেই ‘সহীহ হাদীস’ মনে করা ও নিঃশংকচিত্তে উহাকে গ্রহণ করা যাইতে পারে না।

২. যে ঘটনা এমন লোকদের হইতে বর্ণিত হইয়াছে, যাঁহাদের মূল ঘটনা বা উহার ক্ষেত্রের সহিত সাক্ষাৎ সম্পর্কে থাকার কোন কারণ নাই কিংবা তাহা অসম্ভব, এইরূপ বর্ণনার সমর্থন যদি মূল ঘটনা ও ঘটনাস্থলের সহিত নিকট-সম্পর্কশীল লোকদের বর্ণনা হইতে না পাওয়া যায় অথবা তাহাদের হইতে যদি উহার বিপরীত বর্ণনা পাওয়া যায়, তাহা ইলে প্রথমোক্ত বর্ণনাকারীদের বর্ণিত হাদীস ‘সহীহ হাদীস’ রূপে গ্রহণ করা যাইবে না। তাহাদের পরিবর্তে মূল ঘটনার সহিত নিকটতর সম্পর্কশীল লোকদের বর্ণিত হাদীসই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে। যেমন নবী করীম (ﷺ)-এর দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে যদি কোন হাদীস প্রথমত এমন লোক হইতে বর্ণিত হয়, যে লোক কোন দিক দিয়াই হযরতের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ নয় কিংবা কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তির নিকট শ্রবণও করে নাই, তবে তাহার বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। কিন্তু এইরূপ হাদীস যদি রাসূলের এই জীবনাংশের সহিত কোন না কোন দিক দিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির- যেমন রাসূলের কোন স্ত্রী কিংবা নিকটাত্মীয়ের- তরফ হইতে বর্ণিত হয় অথবা এই ধরনের কোন ব্যক্তির নিকট হইতে শ্রবণ করিয়া বর্ণনা করা হয়, তবে তাহা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে।

৩. যে হাদীসের বর্ণনাকারী হাদীসের ব্যবহারিক মূল্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তাঁহার বর্ণিত হাদীস অন্য ধরনের হাদীসের ব্যবহারিক মূল্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নহেন এমন বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদীসের তুলনায় অধিক গ্রহণযোগ্য। এমনকি, কাহারো কাহারো মতে ফকীহ তাবেয়ী যদি সাহাবীর নাম উল্লেখ না করিয়াই রাসূল হইতে সরাসরি হাদীস বর্ণনা করেন, তবে তাহাও উপরোক্ত নীতি অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য হইবে। সাহাবীদের যুগে হাদীস যাচাই করার এই দিরায়াত পদ্ধতির নিয়ম-কানুন বিস্তারিতরূপে রচিত হয় নাই। তবে সে যুগে এই প্রকিয়ার দৃষ্টিতে হাদীস যাচাইয়ের কয়েকটি দৃষ্টান্ত পশ করা যাইতেছেঃ

১। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) কৃর্তক বর্ণিত হাদীসঃ

******************************************************

আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, আগুনে উত্তপ্ত জিনিস গ্রহণ করার পর (নামায পড়ার জন্য) অযু কর।

এই হাদীস শুনিয়া হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলিয়া উঠিলেনঃ ‘তবে তো অযু থাকা-অবস্থায় গরম পানি ব্যবহার করিলেও আবার অযু করিতে হইবে?

[তিরমিযী- কিতাবুত তাহারাত] অন্য কথায় ‘দিরায়াত’ প্রক্রিয়ায় এই হাদীস সহীহ বলে প্রতিপন্ন হয় না।

২। অপর এক হাদীসে উল্লিখিত হইয়াছেঃ

******************************************************

জুময়ার দিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোন মুসলিম যদি নামায পড়িতে থাকা অবস্থায় আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণের প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাহাকে তাহা বিশেষভাবে দান করেন।

এই চরম মুহূর্তটি যে ঠিক কখন, তাহা নিশ্চিতরূপে জানিবার জন্য সাহাবায়ে কিরাম বিশেষ আগ্রহান্বিত হন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা) জানিতে পারিলেন যে, জুমুয়ার দিনের শেষ মুহূর্তেই এই চরম সময়টি অবস্থিত। কিন্তু হযরত আবূ হুরায়রা (রা) ইহা শুনিয়া বলিলেনঃ ‘তাহা কিরূপে হইতে পারে? রাসূল তো বলিয়াছেনঃ নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় যদি কেহ আল্লাহর নিকট দোয়া করে তবে তাহা তিনি মঞ্জুর করিবেন। কিন্তু দিনের শেষ মুহূর্তে তো কোন নামায পড়া জায়েয নহে। কাজেই এই হাদীস হইতে এইরূপ সময় নির্ধারণ যুক্তিসঙ্গত নহে।

[আবূ দাউদ-কিতাবুস সালাত]

প্রথমোক্ত হাদীসে মূল কথায় যথার্থতা ‘দিরায়াত’- এর ভিত্তিতে যাচাই করা হইয়াছে, আর দ্বিতীয় হাদীসে হাদীসের বিশেষ ব্যাখ্যার যাচাই করা হইয়াছে।

‘দিরায়াত’-এর ভিত্তিতে হাদীস যাচাই করার কাজে হযরত আয়েশার বিশেষ দক্ষতা ও প্রতিভা ছিল। তিনি ইহার ভিত্তিতে কতকগুলি হাদীস সম্পর্কে আপত্তি তুলিয়াছেন এবং তাঁহার আপত্তির ভিত্তিতে দিরায়াতের কতকগুলি মূলনীতি নির্ধারণ করা সম্ভব হইয়াছে। যেমন-

১. তাঁহার সম্মুখে যখন রাসূলের কথা বলিয়া নিম্নোক্ত বাক্য উল্লেখ করা হইলঃ

******************************************************

মৃত ব্যক্তির জন্য তাহার পরিবাবর্গেল কান্নাকাটির কারণে তাহাকে আযাব দেওয়া হইবে।

তখন তিনি বলিলেনঃ ইহা সত্য বলিয়া স্বীকার করা যায় না। কেননা কুরআন মজীদ সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করিয়াছেঃ

******************************************************

কোন লোকই অপর কাহারো গুনাহর বোঝা বহন করিবে না।

ইহা হইতে দিরায়াতের দৃষ্টিতে হাদীস যাচাই করার এই মূলনীতি প্রমাণিত হইল যে, কুরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণার বিপরীত কোন হাদীস গ্রহণ করা যাইতে পারে না।

[*********************]

২. সাহাবীদের যুগে জনসাধারণের মধ্যে এই হাদীস প্রচারিত হইয়া পড়ে যে, মি’রাজের রাত্রে নবী করীম (ﷺ) আল্লাহর প্রত্যক্ষ সাক্ষাত লাভ করিয়াছেন। হযরত আয়েশা (রা) ইহা শুনিয়া বলিলেনঃ এই হাদীসের বর্ণনাকারী সুস্পষ্ট মিথ্যাবাদী। কেননা কুরআন মজীদ স্পষ্ট বলিয়াছেঃ

******************************************************

কোন সৃষ্টি আল্লাহকে আয়ত্ত করিতে পারে না, তিনিই সমস্ত সৃষ্টি আয়ত্ত করিয়া থাকেন।

পূর্বের বিস্তারিত আলোচনা হইতে দিরায়াত প্রক্রিয়ার যে কয়টি মূলনীতি প্রকাশিত হয়, তাহা এখানে একত্রে উল্লেখ করা যাইতেছেঃ

১। হাদীস কুরআনের সুস্পষ্ট দলীলের বিপরীত হইবে না।

২। হাদীস মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত সুন্নাতের বিপরীত হইবে না।

৩। হাদীস সাহাবায়ে কিরামের সুস্পষ্ট ও অকাট্য ইজামার বিপরীত হইবে না।

৪। হাদীস সুস্পষ্ট বিবেক-বুদ্ধির বিপরীত হইবে না।

৫। হাদীস শরীয়াতের চির সমর্থিত ও সর্ব-সম্মত নীতির বিপরীত হইবে না।

৬। কোন হাদীস বিশুদ্ধ ও নির্ভূলভাবে গৃহীত হাদীসের বিপরীত হইবে না।

৭। হাদীসের ভাষা আরবী ভাষায় রীতি-নীতির বিপরীত হইবে না। কেননা নবী করীম (ﷺ) কোন কথাই আরবী রীতি-নীতির বিপরীত ভাষায় বলেন নাই।

৮। হাদীস এমন কো অর্থ প্রকাশ করিবে না, যাহা অত্যন্ত হাস্যকর, নবীর মর্যাদা বিনষ্টকারী।

উসূলে হাদীস-এর গ্রন্হসমূহে এই পর্যায়ে আরো অনেক মূলনীতির উল্লেখ করা হইয়াছে।

হাদীস যাচাই করা এবং সহীহ কি গায়বে সহীহ পরখ করার জন্য উপরে বর্ণিত দুইটি পন্হা- ‘রেওয়ায়াত’ ও ‘দিরায়াত’- প্রয়োগ করার ব্যাপারে হাদীস-বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। এক শ্রেণীর লোক কেবলমাত্র রেওয়ায়াত- প্রক্রিয়া বা সনদ যাচাইর উপর গুরুত্ব আরোপ করিয়া থাকেন। তাঁহাদের দৃষ্টিতে সনদ ঠিক থাকিলেই এবং উহার ধারাবাহিকতা ও সুস্থাতা-বিশুদ্ধতা যথাযথভাবে রক্ষিত হইলেই হাদীস নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য হইতে পারে। আরি অপরদের মতে সনদ ঠিক হওয়ার তুলনায় মূল হাদীসটি যুক্তিসংগত হওয়া-দিরায়াত-প্রক্রিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। এই দিক দিয়া কোন হাদীস সঠিকরূপে উত্তীর্ণ না হইলে তাহা গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। এমনকি সনদ ঠিক হইলেও এবং সনদ বিচারে তাহা গ্রহণযোগ্য প্রমাণিত হইলেও তাহা গ্রহণ করা যাইতে পারে না।

কিন্তু প্রকৃত মুহাক্কিক আলিমের দৃষ্টিতে এককভাবে এই দুইটি পন্হাই ভারসাম্যহীন। উহার একটি একান্তভাবে সনদ নির্ভর, সনদ ছাড়া সেখানে আর কিছুই বিচার্য নহে। আর সনদ ঠিক ও নির্ভরযোগ্য হইলেও সে হাদীস একান্তই গ্রহণীয়। দ্বিতীয়টি নিরংকুশভাবে বুদ্ধিভিত্তিক। সাধারণ বুদ্ধি ও যুক্তির দৃষ্টিতে মূল হাদীসটি গ্রহণযোগ্য হইলে উহার সনদ বিচারের কোন প্রয়োজনই মনে হয় না। অথচ প্রকৃতপক্ষে কেবলমাত্র সনদ কোন কথাকে সত্য ও সঠিক প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট হইতে পারে না, যেমন যথেষ্ট নয় কেবলমাত্র বুদ্ধি ও যক্তি-বিচার! এই কারণে এই দুইটি প্রক্রিয়ার মাঝে পূর্ণ সামঞ্জস্য স্থাপন ও ভারাসাম্য রক্ষা করা অপরিহার্য।

সকল অধ্যায়

১. হাদীসের সংজ্ঞা ও পরিচয়
২. হাদীস শব্দের অর্থ
৩. হাদীস ও সুন্নাত
৪. হাদীসের বিষয়বস্তু
৫. বিষয়বস্তুর দৃষ্টিতে হাদীসের প্রকারভেদ
৬. হাদীসে কুদসী
৭. সনদ ও মতন
৮. জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল সূত্র
৯. ওহী
১০. হাদীসের উৎস
১১. কুরআন ও হাদীসের পার্থক্য
১২. ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় হাদীসের গুরুত্ব
১৩. হাদীসের অপরিহার্যতা
১৪. হাদীস ও রাসূলের ইজতিহাদ
১৫. হাদীসের উৎপত্তি
১৬. হাদীস সংরক্ষণ
১৭. হাদীস সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য রাসূলের নির্দেশ
১৮. পারস্পরিক হাদীস পর্যালোচনা ও শিক্ষাদান
১৯. হাদীসেন বাস্তব অনুসরণ
২০. ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব পালন
২১. সাহাবীদের হাদীস প্রচার ও শিক্ষাদান
২২. হাদীস বর্ণনায় সতর্কতা
২৩. হাদীস লিখন
২৪. নবী (ﷺ) কর্তৃক লিখিত সম্পদ
২৫. সাহাবীদের লিখিত হাদীস সম্পদ
২৬. হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীদের শ্রেণীবিভাগ
২৭. হাদীস বর্ণনায় সংখ্যা পার্থক্যের কারণ
২৮. তাবেয়ীদের হাদীস সাধনা
২৯. কয়েকজন প্রখ্যাত তাবেয়ী মুহাদ্দিস
৩০. হাদীস লিখনে উৎসাহ দান
৩১. হাদীস সংগ্রহের অভিযান
৩২. হাদীস গ্রন্থ সংকলন
৩৩. খুলাফায়ে রাশেদুন ও হাদীস গ্রন্থ সংকলন
৩৪. হিজরী দ্বিতীয় শতকে হাদীস সংকলন
৩৫. হিজরী তৃতীয় শতকে হাদীস চর্চা
৩৬. তৃতীয় শতকের হাদীস সমৃদ্ধ শহর
৩৭. তৃতীয় হিজরী শতকের কয়েকজন বিশিষ্ট মুহাদ্দিস
৩৮. মুসনাদ প্রণয়ন
৩৯. হাদীস সংকলনের চূড়ান্ত পর্যায়
৪০. ইলমে হাদীসের ছয়জন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি
৪১. ছয়খানি বিশিষ্ট হাদীসগ্রন্হ
৪২. চতুর্থ শতকে ইলমে হাদীস
৪৩. চতুর্থ শতকের পরে হাদীস-গ্রন্থ প্রণয়ন
৪৪. সপ্তম ও অষ্টম শতকে হাদীস চর্চা
৪৫. বিভিন্ন দেশে হাদীস চর্চা
৪৬. হাদীস গ্রন্হসমূহের পর্যায় বিভাগ
৪৭. হাদীস বর্ণনায় রাসূল (ﷺ)-এর নৈকট্য
৪৮. হাদীস জালকরণ ও উহার কারণ
৪৯. হাদীস সমালোচনার পদ্ধতি
৫০. হাদীস বর্ণনাকারীদের শ্রেণী বিভাগ (গুণগত)
৫১. হাদীস সমালোচনার সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি
৫২. উপমহাদেশে ইলমে হাদীস
৫৩. আরব উপনিবেশসমূহে হাদীস প্রচার
৫৪. উপমহাদেশে ইলমে হাদীসের রেনেসাঁ যুগ
৫৫. বঙ্গদেশে ইলমে হাদীস
৫৬. ইলমে হাদীস বনাম অমুসলিম মনীষীবৃন্দ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন