বিভিন্ন দেশে হাদীস চর্চা

সপ্তম, অষ্টম ও উহার পরবর্তী শতকসমূহে মুসলিম জাহানের বিভিন্ন অঞ্চলে হাদীসের চর্চা, শিক্ষাদান ও প্রচার সাধিত হইয়াছে। এই সময়ে মাগরেবী দেশসমূহেই (উত্তর পশ্চিম আফ্রিকায়) ইহার প্রসারতা সর্বাধিক ছিল। কিন্তু উহার পর দুইটি বিরাট মুসলিম দেশে হাদীস চর্চার ব্যাপকতা পরিলক্ষিত হয়, একটি মিসর এবং অপরটি হিন্দুস্থান (ভারতবর্ষ)। বাগদাদে তাতারী আক্রমণের ফলে আব্বাসীয় খিলাফতের পতন মুসলিম মনীষা ও ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এক মর্মান্তিক ঘটনা। তাতারগণ বাগদাদের ইসলামী গ্রন্হাগার হইতে লক্ষ লক্ষ গ্রন্হ হরণ করিয়া লইয়া দজলা নদীতে নিক্ষেপ করে ও উহার উপর এই গ্রন্হস্তুপ দ্বারা পুল নির্মাণ করিয়া দেয়- যেন তাহাদের সৈন্যবাহিনী সহজেই নদী অতিক্রম করিতে পারে। ইহার পরই জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎসকেন্দ্র বাগদাদ হইতে অন্যত্র স্থানান্তরিত হইয়া যায়। প্রথমে মিসর ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান- বিশেষত ইলমে হাদীসে সমৃদ্ধ ও ফুলে-ফলে সুশোভিত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে। এই সময়ে মিসরে হাদীসের যেরূপ চর্চা ও প্রসার হয় তাহাকে অনায়াসেই তৃতীয় হিজরী শতকের হাদীস চর্চার সহিত তুলনা করা যাইতে পারে। কিন্তু অতঃপর এখানেও হাদীস চর্চার এই প্রচণ্ড মার্তণ্ড অস্তোন্মুখ হইয়া পড়ে। হাদীসের জ্ঞান-চর্চা অতঃপর অন্যান্য দেশের দিকে প্রবাহিত হয়। দেখা যায়, হাদীস জ্ঞানের সূর্য মিসরে অস্তমিত হইয়া ভারতের আকাশে উদিত ও ভাস্বর হইয়া দেখা দিয়াছে। ভারতে তখন প্রকৃতপক্ষেই হাদীস-চর্চার স্বর্ণযুগের সূচনা হয়। ( বিস্তারিত আলোচনার জন্য এই গ্রন্হের ‘পাক ভারতে ইলমে হাদীস’ শীর্ষক অধ্যায় দ্রষ্টব্য।)

মিসরের এই পতন যুগেও হাদীসের চর্চা মোটেই হয় নাই, একথা বলা যায় না। বরং ইতিহাস আমাদের সম্মুখে এই সময়ও ইলমে হাদীসের বিরাট ও অবিস্মরনীয় খেদমতের দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত করে। মিসরে তখন মামলুকদেরই রাজত্ব কায়েম ছিল। এই মামলূক বাদশাহদের মধ্যে অনেকেই জ্ঞান-স্পৃহা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্মরণীয় হইয়া রহিয়াছে। বহু বাদশাহ ছাত্র হিসাবে একালের মুহাদ্দিসদের সম্মুখে আসন গাড়িয়া বসিয়াছেন। রাজ ভাণ্ডার উজাড় করিয়া ঢালিয়া দিয়াছেন হাদীস শিক্ষার বিরাট প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে।

এই সময়ও মিসরে কয়েকজন হাদীসের ইমাম বর্তমান ছিলেন। হাদীসসমূহ উহার পূর্ণ ও বিশুদ্ধ সনদসহ তারা মুখস্থ করিয়াছেন। পিপাসুরা তাঁহাদের নিকট হইতেই হাদীস শিক্ষা করিতেন এবং হাদীস শ্রবণের উদ্দেশ্যে লোকেরা তাঁহাদের সম্মুখেই ভীড় জমাইত।

তাঁহাদের মধ্যে নিম্নলিখিত হাদীসবিদগণ উল্লেখযোগ্যঃ

১. জাহের বরকুক

২. ইমাম আকমালূদ্দীন আল-বাবরতী

৩. ইবনে আবুল মজদ

৪. আল-মুয়াইয়িদ

৫. শামসুদ্দীন আদ-দেয়ারী আল-মুহদ্দিস।

[********************]

সকল অধ্যায়

১. হাদীসের সংজ্ঞা ও পরিচয়
২. হাদীস শব্দের অর্থ
৩. হাদীস ও সুন্নাত
৪. হাদীসের বিষয়বস্তু
৫. বিষয়বস্তুর দৃষ্টিতে হাদীসের প্রকারভেদ
৬. হাদীসে কুদসী
৭. সনদ ও মতন
৮. জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল সূত্র
৯. ওহী
১০. হাদীসের উৎস
১১. কুরআন ও হাদীসের পার্থক্য
১২. ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় হাদীসের গুরুত্ব
১৩. হাদীসের অপরিহার্যতা
১৪. হাদীস ও রাসূলের ইজতিহাদ
১৫. হাদীসের উৎপত্তি
১৬. হাদীস সংরক্ষণ
১৭. হাদীস সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য রাসূলের নির্দেশ
১৮. পারস্পরিক হাদীস পর্যালোচনা ও শিক্ষাদান
১৯. হাদীসেন বাস্তব অনুসরণ
২০. ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব পালন
২১. সাহাবীদের হাদীস প্রচার ও শিক্ষাদান
২২. হাদীস বর্ণনায় সতর্কতা
২৩. হাদীস লিখন
২৪. নবী (ﷺ) কর্তৃক লিখিত সম্পদ
২৫. সাহাবীদের লিখিত হাদীস সম্পদ
২৬. হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীদের শ্রেণীবিভাগ
২৭. হাদীস বর্ণনায় সংখ্যা পার্থক্যের কারণ
২৮. তাবেয়ীদের হাদীস সাধনা
২৯. কয়েকজন প্রখ্যাত তাবেয়ী মুহাদ্দিস
৩০. হাদীস লিখনে উৎসাহ দান
৩১. হাদীস সংগ্রহের অভিযান
৩২. হাদীস গ্রন্থ সংকলন
৩৩. খুলাফায়ে রাশেদুন ও হাদীস গ্রন্থ সংকলন
৩৪. হিজরী দ্বিতীয় শতকে হাদীস সংকলন
৩৫. হিজরী তৃতীয় শতকে হাদীস চর্চা
৩৬. তৃতীয় শতকের হাদীস সমৃদ্ধ শহর
৩৭. তৃতীয় হিজরী শতকের কয়েকজন বিশিষ্ট মুহাদ্দিস
৩৮. মুসনাদ প্রণয়ন
৩৯. হাদীস সংকলনের চূড়ান্ত পর্যায়
৪০. ইলমে হাদীসের ছয়জন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি
৪১. ছয়খানি বিশিষ্ট হাদীসগ্রন্হ
৪২. চতুর্থ শতকে ইলমে হাদীস
৪৩. চতুর্থ শতকের পরে হাদীস-গ্রন্থ প্রণয়ন
৪৪. সপ্তম ও অষ্টম শতকে হাদীস চর্চা
৪৫. বিভিন্ন দেশে হাদীস চর্চা
৪৬. হাদীস গ্রন্হসমূহের পর্যায় বিভাগ
৪৭. হাদীস বর্ণনায় রাসূল (ﷺ)-এর নৈকট্য
৪৮. হাদীস জালকরণ ও উহার কারণ
৪৯. হাদীস সমালোচনার পদ্ধতি
৫০. হাদীস বর্ণনাকারীদের শ্রেণী বিভাগ (গুণগত)
৫১. হাদীস সমালোচনার সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি
৫২. উপমহাদেশে ইলমে হাদীস
৫৩. আরব উপনিবেশসমূহে হাদীস প্রচার
৫৪. উপমহাদেশে ইলমে হাদীসের রেনেসাঁ যুগ
৫৫. বঙ্গদেশে ইলমে হাদীস
৫৬. ইলমে হাদীস বনাম অমুসলিম মনীষীবৃন্দ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন