মনে হয় হেমন্তের জ্যোৎস্নায়

জীবনানন্দ দাশ

মনে হয় হেমন্তের জ্যোৎস্নায়
 সাদা তাম্বুর মতো কুয়াশায়
 আজও ঢের লোক দূর—দূর প্রান্তরের ক্যাম্পে
 নারী মেষ গাভীযুথ লয়ে আদি পিতাদের মতো সন্নিবদ্ধ
হয়তো বা দীর্ঘ দেহ তাহাদের—জটায় ধবল;
 এখনও শৈশব প্রাণে
 কিংবা আরও শৈশবের সুর ভেসে আসে মাইক্রোফনে
 বালটিক সমুদ্রের তীর থেকে।

এইখানে হেমন্তের আসন্ন কুয়াশা রুষ্ট ফণার মতন
 সমাকুল গ্যাসালোকে হারায়েছে ফণিনীর ধন।
 লাল, নীল, ট্রামের প্রদীপ:
 ঘড়িধরা দুই কোয়ার্টার চেয়ে থেকে মনে হয়
 অচেতন আমাদের সাথে
 নেপথ্যের চেতনার যোগ;
 নিসর্গ ক’রেছে এসে নিজেরে প্রয়োগ
ইহাদের প্রতীকের মতো ভুলে সমাচ্ছন্ন নগরীর রাতে।

আধো চেনা—আধো নিমন্ত্রণ
 আমরাও;
 আমরাও বিসর্পিত গতির মতন
 বিজর, চেতন, অচেতন।
 তবু
 কোথাও রয়েছে নিয়ন্ত্রণ
 হয়তো বা কভু।

 যত জোরে চলি—তত দেরি;
 বিদ্যুৎ: কমঠের মতো মনে হয়
 গভীর সাহস চোখে—সজারুর মতো ভয় কণ্টকময়।
 তবুও আরাধ্য চোখে নিমগ্ন আঁধার।
 সূর্য এসে দেখে যায়—হেসে যায়—জীব পায় লয়।
 এখানে উল্কির হর্ষ—কয়লার গুঁড়ি, ফেনাময়
 সিন্ধুর কাকের মতো রাত্রির আগুলফ—লম্বনে জেগে রয়।
সে কোন সমুদ্র এত প্রীত, আধোমৃত, এত ভীত, এত বরাভয়।

হে আঁধার অগণন গলি,
কাহিনি গিয়েছে চ’লে অনেক আশ্চর্য গল্প বলি;
তারপর নেত্রবোগ—ইন্দ্রধনুরাশি
সূর্যগ্রহণের ঘোরে উঠিতেছে ভাসি
লক্ষ মূঢ় যতদূর চ’লে যায় তত
আরও রক্ত রবাহূত পেন্যুম্বার মতো।

সকল অধ্যায়

১. কোথাও নতুন বুদ্ধের যেন জন্ম হয়
২. জীবনের সাথে আমাদের রূঢ় পরিচয় হয়েছিল
৩. না জানি কী সব মঙ্গলের দিকে চেয়ে
৪. কোথাও অনেক দূর যেতে হবে
৫. হয়তো বা কোনো দূর পিরামিড দেখা যাবে
৬. আবার নতুন করে পৃথিবীরে বানাবার অধিকার আমাদের নেই
৭. আমাদের সাহস হারায়ে গেছে বহুদিন
৮. যদিও রয়েছি বেঁচে
৯. এই এত পুরোনো নগরী
১০. যেন কোনো যাদুঘরে ঘুমায়েছে
১১. ঢের দূর থেকে বন্ধুজনারে চেনা যায়
১২. মনে হয় যেন মূল চাহুনিতে দিনরাতগুলো ছেঁকে
১৩. সময়কে ধরে রাখা মহা দায়
১৪. সূর্যের আলো মেটায় খোরাক কার
১৫. রজনীর অন্ধকার এইরকম
১৬. অমোঘ আঁধার রাতে
১৭. কৃষ্ণ যজুর্বেদ যারা রচেছিল একদিন
১৮. আমার হৃদয়ে প্রেম কার্তিকের বটের মতন
১৯. কালো মখমল দস্তানার মতো ধীরে ধীরে আসে
২০. আমাদের প্রভু বীক্ষণ দাও
২১. অন্ধকারে আমাদের ইন্দ্রনীল খুঁড়িতেই পাওয়া গেল
২২. আমাদের অশ্রু শিশিরিত হলুদ পাতার থেকে নয়
২৩. আমার হৃদয়ে নব নব প্রত্যাশার দূত
২৪. আমার হৃদয়ে রক্ত থেকে কোনো এক প্রদীপকে জ্বালি আমি
২৫. হিমের কুয়াশা নাকে
২৬. আমিও তো মশাল ধরেছি
২৭. তখন সকল প্রেম মরে যাবে
২৮. ওইখানে বনানীর তৃণ
২৯. ঢের কবি মরে গেছে সচকিত হয়ে যেন নিশীথের ভূতের মতন
৩০. সেদিন—সারাটা দিন—অনেক শ্মশানে
৩১. কবে চণ্ডীদাস মরে গেছে
৩২. স্ট্রেচারের ‘পরে শুয়ে কুয়াশা ঘিরিছে বুঝি
৩৩. সান্ত্বনার কথা ঢের ভাবা গেছে আঁধার রভসে
৩৪. এইখানে কাকজ্যোৎস্না
৩৫. প্রথম যৌক্তিক জন্ম নিল
৩৬. যারা মরে গেছে তাহাদের কথা ভেবে
৩৭. প্রেম কি জাগায় সূর্যকে আজ ভোরে
৩৮. অনেক বেসেছি ভালো
৩৯. মনে হয় হেমন্তের জ্যোৎস্নায়
৪০. এই নগরীর সেই সব শতাব্দীর ধূসর পরিখা কই

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন