কৃষ্ণ যজুর্বেদ যারা রচেছিল একদিন

জীবনানন্দ দাশ

কৃষ্ণ যজুর্বেদ যারা রচেছিল একদিন
 আর যারা পিরামিড সৃষ্টি করেছিল—
 দিকে দিকে যারা মরুভূর বাদামি বালির পরে খরশান
 ক্যাম্প গড়ে—
 অবশেষে জন্ম, মৃত্যু, মৈথুনের খতিয়ানে তৃপ্ত হয়েছিল
 আর যারা নব নব জাতকের নক্ষত্রের তরে
 যাত্রা করেছিল সব একদিন ম্যাজিদের মতো
 বিষুবের অগ্নি থেকে জ্যোৎস্নাবিখণ্ডিত বরফের আভার উদ্দেশে
 আজ তারা সব ঢের দূরে।

 তবু আজিকার ঢের গভীর ঘর্মাক্ত নদী
 অশ্বামাংস, উটের গোবর
 ডোরাকাটা সারসের অট্টহাসি
 কালো ঢেউ, খাকির পাহাড়
 ভিত্তিপ্রস্তরের স্বাদ, টাটকা পনির
 কমে ক্রমে তবু তারা হতেছে পামির
 যারা সব শূন্য মাংস ঝলসায় অবিরাম গোলাপি আকাশে
লক্ষ সলতের মতো মৃত্যু পরিকীর্ণ হয়ে থাকে তাহাদের
 বাঁয়া তবলায়—গর্তে—বাথরুমে—ঘাসে—
 
 মনে হয় এইসব
 যেন সব মৃত নক্ষত্রের মুখ
 আজিকার মুমুক্ষার দূরবীনে ধরা দিতে আসে।
মনে হয় হেমন্তরাত্রির স্থির— স্থিরতর সংস্কারে জোনাকির জ্যোতির মতন
 নব নব জন্মের নক্ষত্রের তরে
 ম্যাজিরা পায় নি কিছু কোনোদিন,—পাবে নাক’ কিছু
 তবু চলিতেছে—মরু গমের ক্ষেত, মরুর ক্ষেতের এররুট
 কিছু নয়—বিক্রি ক’রে উট বিক্রেতার কাছে যে কয়টা বিদূষক উট
অন্ধকারে কিনেছিল—
 তারপর চলিতেছে—চলিতেছে—
 ম্যাজিরা পায় নি কিছু কোনোদিন—পাবে নাক’ কিছু
কখনও শীতের রাতে মনে হয় আকাশরেখার ওই নক্ষত্রেরা
 পরিচিত নারীদের ল্যাম্পের মতো যেন নিচু।

গভীর শীতের রাত—জোব্বার ভিতরে শীত—আকাশরেখায় আলো—
 ঘুম কেউ চায় নাক’
 চারিদিক মৃত পরিচিত সব হেঁয়ালির অস্পষ্ট আধেক গান
 পাথরের শিশিরে
 ধূসর মরুর শীত তুলোর বালিশে অবিরল
 কোনো সারমেয়—নিদ্রা নাই, সপ্ত ঘুমন্তেরা নাই
 কারা যেন পাতলা কাগজে হিম পনির জড়ায়ে
 মৃত বকুলের মতো ঘ্রাণ
 বিড়ালের থাবার মতন মৃদু গান।  

ম্যাজিরা পায় নি কিছু কোনোদিন—পাবে নাক’ কিছু
 কখনও শীতের রাতে মনে হয় আকাশরেখার ওই নক্ষত্রেরা
 পরিচিত নারীদের ল্যাম্পের মতো যেন নিচু।
 (হীরকের মাকড়ির মতো যেন নিচু।)

সকল অধ্যায়

১. কোথাও নতুন বুদ্ধের যেন জন্ম হয়
২. জীবনের সাথে আমাদের রূঢ় পরিচয় হয়েছিল
৩. না জানি কী সব মঙ্গলের দিকে চেয়ে
৪. কোথাও অনেক দূর যেতে হবে
৫. হয়তো বা কোনো দূর পিরামিড দেখা যাবে
৬. আবার নতুন করে পৃথিবীরে বানাবার অধিকার আমাদের নেই
৭. আমাদের সাহস হারায়ে গেছে বহুদিন
৮. যদিও রয়েছি বেঁচে
৯. এই এত পুরোনো নগরী
১০. যেন কোনো যাদুঘরে ঘুমায়েছে
১১. ঢের দূর থেকে বন্ধুজনারে চেনা যায়
১২. মনে হয় যেন মূল চাহুনিতে দিনরাতগুলো ছেঁকে
১৩. সময়কে ধরে রাখা মহা দায়
১৪. সূর্যের আলো মেটায় খোরাক কার
১৫. রজনীর অন্ধকার এইরকম
১৬. অমোঘ আঁধার রাতে
১৭. কৃষ্ণ যজুর্বেদ যারা রচেছিল একদিন
১৮. আমার হৃদয়ে প্রেম কার্তিকের বটের মতন
১৯. কালো মখমল দস্তানার মতো ধীরে ধীরে আসে
২০. আমাদের প্রভু বীক্ষণ দাও
২১. অন্ধকারে আমাদের ইন্দ্রনীল খুঁড়িতেই পাওয়া গেল
২২. আমাদের অশ্রু শিশিরিত হলুদ পাতার থেকে নয়
২৩. আমার হৃদয়ে নব নব প্রত্যাশার দূত
২৪. আমার হৃদয়ে রক্ত থেকে কোনো এক প্রদীপকে জ্বালি আমি
২৫. হিমের কুয়াশা নাকে
২৬. আমিও তো মশাল ধরেছি
২৭. তখন সকল প্রেম মরে যাবে
২৮. ওইখানে বনানীর তৃণ
২৯. ঢের কবি মরে গেছে সচকিত হয়ে যেন নিশীথের ভূতের মতন
৩০. সেদিন—সারাটা দিন—অনেক শ্মশানে
৩১. কবে চণ্ডীদাস মরে গেছে
৩২. স্ট্রেচারের ‘পরে শুয়ে কুয়াশা ঘিরিছে বুঝি
৩৩. সান্ত্বনার কথা ঢের ভাবা গেছে আঁধার রভসে
৩৪. এইখানে কাকজ্যোৎস্না
৩৫. প্রথম যৌক্তিক জন্ম নিল
৩৬. যারা মরে গেছে তাহাদের কথা ভেবে
৩৭. প্রেম কি জাগায় সূর্যকে আজ ভোরে
৩৮. অনেক বেসেছি ভালো
৩৯. মনে হয় হেমন্তের জ্যোৎস্নায়
৪০. এই নগরীর সেই সব শতাব্দীর ধূসর পরিখা কই

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন