না জানি কী সব মঙ্গলের দিকে চেয়ে

জীবনানন্দ দাশ

না জানি কী সব মঙ্গলের দিকে চেয়ে
আমরা নেমেছি মাকড়সা—মৃত সিঁড়ির পথটি বেয়ে
কী যে হিম পথ—কোথায় যে যাব—জানি না তো তাহা কিছু
স্ফুরেছিল প্রাণ অনেক বইয়ের—ঢের মানুষের কঙ্কালগুঁড়ি খেয়ে
উঠেছিল জ্ব’লে একদিন যেন কেরোসিনভোজি লোল সলতের মতো
কাচের চিমনি আড়াল করিয়া বাইরে ঝড়ের দানোয় পাওয়ার পিছু।
কী যে এ নতুন পথের প্রকোপ—মৃগেল টোপ গিলে নিয়ে কেমন
 ক্ষোভ যে আহা
হে মৃত মানুষ—বইয়ের পৃথিবী কেমনে জানাব তাহা
তোমরা বুঝেছ অনেক বেদনা যেন বেলোয়ারি বর্তুল নীড়ে থেকে
জেনেছি তবুও সূর্যের নীচে—মাটির ভিতরে কৃমিও জানেনা যাহা
শানিত ক্ষুধায় বিমূঢ় সাপের দুমুখ নিজেরে গ্রাসে
উটপাখিদের গর ঠিকানা কি বালির আরামে চোখের কাঁপুনি ঢেকে?
ক্ষুরঘর্ষণ শুনি ঝামার সড়কে লোপাটের সারাদিন
অনার্য, জুলু, ভারতি, হাবসি, কাফির, নিগ্রো, চিন
মনে হয় যেন কোথাও নবীন পৃথুর জন্ম হবে?—
সাগর হানিছে। নীলিমার নীচে দোলনায় সমাসীন
সেও যেন রবে?—কিন্তু কোথায় সিন্ধুর পারে সোনালিখড়ের ভিড়
অন্তবিহীন তামাটে পথিক সাড়া দেয় শুধু জন্ম মৃত্যু মৈথুন জনরবে। ঘাসের শিষটি কেউ নয় তার—সেতু, টাগড়ার দেনাপাওনায় কলরব করে নদী
বিরামবিহীন ক্যারাভেনগুলো ধূম্রবালুতে অস্তসূর্য ক্ষোদি
হয়তো দাঁড়াবে নব ঊষালোকে নোনাধরা পথে চেরিফুলদের পাশে?
বহু ইতিহাস ডিঙায়ে তাহারা চলিতেছে নিরবধি
কৃষ্ণবর্ণ খোজা, ক্রীতদাস, তূণীররক্ত, শ্বাপদ, মালতিশব
মিলন ঘটাতে চেয়েছে হয়তো তবু একদিন খোঁদল ও নীলাকাশে।

সকল অধ্যায়

১. কোথাও নতুন বুদ্ধের যেন জন্ম হয়
২. জীবনের সাথে আমাদের রূঢ় পরিচয় হয়েছিল
৩. না জানি কী সব মঙ্গলের দিকে চেয়ে
৪. কোথাও অনেক দূর যেতে হবে
৫. হয়তো বা কোনো দূর পিরামিড দেখা যাবে
৬. আবার নতুন করে পৃথিবীরে বানাবার অধিকার আমাদের নেই
৭. আমাদের সাহস হারায়ে গেছে বহুদিন
৮. যদিও রয়েছি বেঁচে
৯. এই এত পুরোনো নগরী
১০. যেন কোনো যাদুঘরে ঘুমায়েছে
১১. ঢের দূর থেকে বন্ধুজনারে চেনা যায়
১২. মনে হয় যেন মূল চাহুনিতে দিনরাতগুলো ছেঁকে
১৩. সময়কে ধরে রাখা মহা দায়
১৪. সূর্যের আলো মেটায় খোরাক কার
১৫. রজনীর অন্ধকার এইরকম
১৬. অমোঘ আঁধার রাতে
১৭. কৃষ্ণ যজুর্বেদ যারা রচেছিল একদিন
১৮. আমার হৃদয়ে প্রেম কার্তিকের বটের মতন
১৯. কালো মখমল দস্তানার মতো ধীরে ধীরে আসে
২০. আমাদের প্রভু বীক্ষণ দাও
২১. অন্ধকারে আমাদের ইন্দ্রনীল খুঁড়িতেই পাওয়া গেল
২২. আমাদের অশ্রু শিশিরিত হলুদ পাতার থেকে নয়
২৩. আমার হৃদয়ে নব নব প্রত্যাশার দূত
২৪. আমার হৃদয়ে রক্ত থেকে কোনো এক প্রদীপকে জ্বালি আমি
২৫. হিমের কুয়াশা নাকে
২৬. আমিও তো মশাল ধরেছি
২৭. তখন সকল প্রেম মরে যাবে
২৮. ওইখানে বনানীর তৃণ
২৯. ঢের কবি মরে গেছে সচকিত হয়ে যেন নিশীথের ভূতের মতন
৩০. সেদিন—সারাটা দিন—অনেক শ্মশানে
৩১. কবে চণ্ডীদাস মরে গেছে
৩২. স্ট্রেচারের ‘পরে শুয়ে কুয়াশা ঘিরিছে বুঝি
৩৩. সান্ত্বনার কথা ঢের ভাবা গেছে আঁধার রভসে
৩৪. এইখানে কাকজ্যোৎস্না
৩৫. প্রথম যৌক্তিক জন্ম নিল
৩৬. যারা মরে গেছে তাহাদের কথা ভেবে
৩৭. প্রেম কি জাগায় সূর্যকে আজ ভোরে
৩৮. অনেক বেসেছি ভালো
৩৯. মনে হয় হেমন্তের জ্যোৎস্নায়
৪০. এই নগরীর সেই সব শতাব্দীর ধূসর পরিখা কই

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন