কালো মখমল দস্তানার মতো ধীরে ধীরে আসে

জীবনানন্দ দাশ

কালো মখমল দস্তানার মতো ধীরে ধীরে আসে
 অন্ধকার
 আমাদের শরীরের শীত তারে অবিশ্বাসে
 ঠেলে ফেলে নাক’
 আমাদের হিম—নিট—আঙুলের ধূর্ত মাডু
 সেও তারে ভালোবাসে
 জীবনের জ্যোতি ধূর্ততর? দ্রুততর, ধূর্ততর নয়
 মেঝের উপরে কার অগ্নি জ্বলে
 হে পুষা, তোমার
 মনে হয়
 শ্যাম দেশে এই অগ্নি বিড়ালের চোখ থেকে জ্বলে
 গোমেদ মণির মতো মায়াবীর মতো জাদুবলে—

অনেক যখন কাজ সূচনায় ন্যুব্জ ক’রে যেতেছে ঘুমায়ে
 আহ্নিক রৌদ্রের ক্ষোভ আর এক বার
 মদের মতন ক’রে জল খেলে নিখিলের মূল পিপাসার
 মানে বোঝা যায়
প্রেমের মতন ক’রে কালো চামড়ার গায়ে
 বীজ বুনে
 আবার প্রভাতে উঠে দেখিব কি নীলিমা দিয়েছি মোরা ধুনে
 অনেক ধবল মেঘে—

 এইসব খাড়া পাহাড়ের কোনো চূড়ার কোনায়
 খাড়া পাহাড়ের কোনো চূড়ার কোনায়
 দাঁড়ায়ে হয়তো বলা যায়
 কাকজ্যোৎস্নার থেকে কাকজ্যোৎস্নায়।

শিশুটির চোখে কোনো রোগ নাই—তবু তার সুগভীরে মূলে
কোনো স্পষ্ট নিদ্রা নাই—তবুও সে বহুদিন জেগে রবে হেঁয়ালির ভুলে
 ত্রিকোণ—পথের বাঁকে এসে
 উষ্ণু সমুদ্রের প্রিয় পাখির মতন দূর নীড়, দূর ডিম
 ভালোবেসে
 ত্রিজটার এই জট—অমোঘ, অসীম।

কত সাম্রাজ্যের রমণীরা ঘুমায়ে গিয়েছে অন্ধকারে
হাতে তাহাদের ববিনের সুতো আজও—বহুদিন যাপনের সূতিকার ভারে
ঢের শান্ত রাত্রির নির্জন মৃগয়ামাংসে—প্রেমে, অভিসারে
 সূচনা হল না কিছু
নগরীর সব ঘড়ি এক সাথে বেজে ওঠে যখন গভীর শীত রাতে
সব শেষ ট্যারা জাগরূকগুলো এইবার চেয়েছে ঘুমাতে
চারিদিকে উঁচু উঁচু গম্বুজের দ্রাঘিমায় দু—একটা নক্ষত্রের আলো।

খোড়া ঠ্যাঙে তৈমুরের মতো এসে ত্রিভঙ্গে দাঁড়াল
চেয়ে দেখে দেশ তার ভ’রে গেছে ছিন্ন ভিন্ন মগজের স্তূপে
‘নিঃশেষ হ’ল না কিছু’ বলিল সে কয়েকটা লোল মুণ্ডু লুফে
মোরগের মাথা যেন ছুটতেছে আজও তার রক্তিম ঝুঁটিটার পিছু
জীবনের জ্যোতি ধূর্ততর?—দ্রুততর;—ধূর্ততর নয়
 মেঝের উপরে কার অগ্নি জ্বলে
 হে পুষা, তোমার
 মনে হয়
শ্যাম দেশে এই অগ্নি বিড়ালের চোখ থেকে জ্বলে
 গোমেদ মণির মতো মায়াবীর মতো জাদুবলে।

এইসব খাড়া পাহাড়ের কোনো চূড়ার কোনায়
দাঁড়ায়ে হয়তো বলা যায়
কাকজ্যোৎস্নার থেকে কাকজ্যোৎস্নায়।

সকল অধ্যায়

১. কোথাও নতুন বুদ্ধের যেন জন্ম হয়
২. জীবনের সাথে আমাদের রূঢ় পরিচয় হয়েছিল
৩. না জানি কী সব মঙ্গলের দিকে চেয়ে
৪. কোথাও অনেক দূর যেতে হবে
৫. হয়তো বা কোনো দূর পিরামিড দেখা যাবে
৬. আবার নতুন করে পৃথিবীরে বানাবার অধিকার আমাদের নেই
৭. আমাদের সাহস হারায়ে গেছে বহুদিন
৮. যদিও রয়েছি বেঁচে
৯. এই এত পুরোনো নগরী
১০. যেন কোনো যাদুঘরে ঘুমায়েছে
১১. ঢের দূর থেকে বন্ধুজনারে চেনা যায়
১২. মনে হয় যেন মূল চাহুনিতে দিনরাতগুলো ছেঁকে
১৩. সময়কে ধরে রাখা মহা দায়
১৪. সূর্যের আলো মেটায় খোরাক কার
১৫. রজনীর অন্ধকার এইরকম
১৬. অমোঘ আঁধার রাতে
১৭. কৃষ্ণ যজুর্বেদ যারা রচেছিল একদিন
১৮. আমার হৃদয়ে প্রেম কার্তিকের বটের মতন
১৯. কালো মখমল দস্তানার মতো ধীরে ধীরে আসে
২০. আমাদের প্রভু বীক্ষণ দাও
২১. অন্ধকারে আমাদের ইন্দ্রনীল খুঁড়িতেই পাওয়া গেল
২২. আমাদের অশ্রু শিশিরিত হলুদ পাতার থেকে নয়
২৩. আমার হৃদয়ে নব নব প্রত্যাশার দূত
২৪. আমার হৃদয়ে রক্ত থেকে কোনো এক প্রদীপকে জ্বালি আমি
২৫. হিমের কুয়াশা নাকে
২৬. আমিও তো মশাল ধরেছি
২৭. তখন সকল প্রেম মরে যাবে
২৮. ওইখানে বনানীর তৃণ
২৯. ঢের কবি মরে গেছে সচকিত হয়ে যেন নিশীথের ভূতের মতন
৩০. সেদিন—সারাটা দিন—অনেক শ্মশানে
৩১. কবে চণ্ডীদাস মরে গেছে
৩২. স্ট্রেচারের ‘পরে শুয়ে কুয়াশা ঘিরিছে বুঝি
৩৩. সান্ত্বনার কথা ঢের ভাবা গেছে আঁধার রভসে
৩৪. এইখানে কাকজ্যোৎস্না
৩৫. প্রথম যৌক্তিক জন্ম নিল
৩৬. যারা মরে গেছে তাহাদের কথা ভেবে
৩৭. প্রেম কি জাগায় সূর্যকে আজ ভোরে
৩৮. অনেক বেসেছি ভালো
৩৯. মনে হয় হেমন্তের জ্যোৎস্নায়
৪০. এই নগরীর সেই সব শতাব্দীর ধূসর পরিখা কই

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন