রতনতনু ঘাটী
ঝিকমিকপল্লিতে ডোরাদের দোতলা টালির বাড়ি। তার পিছন দিকের কানাচের কাছে এসে অনেক দিন ধরে থমকে আছে কদম গাছের একটা ডাল। তখন শীত যাই যাই করছে। একদিন ডোরার বাবা কী কাজে যেন ওদিকে গিয়েছিলেন। এসে ডোরাকে বললেন, ‘‘জানিস তো, দেখে এলাম, একটা মস্ত বড়ো বোলতা কদম গাছের ডালটা কুরে কুরে মোমের মতো কী একটা জিনিস মাখাচ্ছে। এবার ওখানে চাক করল বলে!’’
সত্যি কবে কবে সেখানে গড়ে উঠল মস্ত একটা বোলতার চাক, কেউ আর খেয়াল করেনি। চাকটা দেখতে ঠিক যেন থালার মতো। বিট্টু বলে থালা নয়, ওটা পুর্ণিমার চাঁদ। তারপর কবে কবে চারটে সোনালি রঙের কুঠরি তৈরি করে ফেলল সেই বড়ো বোলতাটা, কে তার খোঁজ রেখেছে? বাবা বলেছিলেন, ওটাই নাকি রানি-বোলতা!
বোলতাদের আবার রাজা-রানি থাকে নাকি? কে জানে!
তারপর সেই চাকে শ-য়ে শ-য়ে বোলতা হল। এবার তো একটা বোলতা-রাজ্য তৈরি হয়ে গেছে। তা হলে তার একটা জুতসই নাম না হলে কি চলে? ‘নাম চাই, নাম চাই’ বলে খবর ছড়াল গোটা বোলতা চাকে। একদিন বুড়ো মতো একটা কর্মী-বোলতা খুটুস খুটুস করে হাঁটতে হাঁটতে রানি-বোলতার দরবারের সামনে এসে গাঁট্টাগোট্টা এক প্রহরীকে বলল, ‘‘আমি রাজ্যের একটা নাম নিয়ে এসেছি! রানিমার কাছে নিবেদন করতে চাই!’’
প্রহরী চাপা গলায় বলল, ‘‘হুট বলতে দেখা করতে চাইলে কি রাজা-রানিদের সঙ্গে দেখা করা যায়? তুমি কেমনধারা বোলতা? রানিমার এখন সাজগোজের সময়। কত দাসদাসী সেখানে। থরে থরে কত রূপচর্চার জিনিস সাজানো রানিমার সামনে। যখন টইটই করে সাজানো হয়ে যায়, তখন রানিমাকে দুগ্গা প্রতিমার মতো দেখতে লাগে! আমি এমন সময় তোমার নাম বলতে গিয়ে বকুনি খেয়ে মরি আর কী!’’
‘‘ঠিক আছে। তবে আমি আমার বেছে দেওয়া নামটা তোমাকেই বলে যাই? তুমি রানিমার অবসর হলে সুযোগ মতো বোলো? বোলতার আর-একটা নাম তো ‘বল্লা’! এই ‘বল্লা’ শব্দ দিয়ে রানিমাকে একটা নাম বানিয়ে নিতে বোলো!’’
বলেই চলে গেল বুড়ো বোলতাটা। সেদিনই সন্ধের আগে বুড়ো বোলতার বেছে দেওয়া নামটা রানিমাকে শুনিয়ে এল প্রহরী। সেদিনই রাতে মিটিং ডাকলেন রানিমা তাঁর রানিদরবারে। একচাক বোলতার কি আর জায়গা হয় রানিদরবারে? কেউ ভিতরে ঢুকল। কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে চুপটি করে শুনল রানিমার কথা। রানিমা বললেন, ‘‘এক বৃদ্ধ বোলতা একটা সুন্দর নাম বেছে দিয়েছেন ‘বল্লা’। তিনি আমার বঁা-দিকে বসে আছেন। লোকে বোলতাকে আগে ‘বল্লা’ বলত। আমি ওই শব্দটার সঙ্গে ‘গড়’ শব্দটা জুড়ে দিতে চাই। এখন তোমরা সকলে একমত হয়ে বলো!’’
সকলেই তক্ষুনি একমত হয়ে গেল। তাদের বোলতা-রাজ্যের নাম হয়ে গেল বল্লাগড়।
বল্লাগড়ে কোনো অভাব নেই কারো। কেউ কাজে ফাঁকি দেয় না। সুখ আর আনন্দ যেন আর ধরে না সেই বোলতা-রাজ্যে! কারো মন খারাপও হয় না কোনোদিন। সকলে যে-যার কাজ হাসিমুখে করে। মন খারাপ হবে? যে রাজ্যের রানিমা অমন দয়াময়ী, সেরাজ্যে মন খারাপ ঢুকতেই পারবে না!
বল্লাগড়ে কত কত পুরুষ বোলতা আছে। তাদের কোনো কাজ করার নিয়ম নেই। তারা খাবে, বসে বসে আরাম করবে। কর্মী-বোলতা তাদের গা-হাত-পা টিপে দেবে। নয়তো মন হলে তারা খানিক বেড়াতে যাবে। ব্যস! না হলে সারাদিন-রাত পড়ে পড়ে ঘুমোবে। কাজ না করার জন্য উপরওয়ালার কাছ থেকে তাদের কাছে নাকি নোটিস এসেছে।
একটা ছোট্ট কর্মী-বোলতা পায়ে চোট পেয়েছিল। সেই থেকে তার একটা পা নেই। রানি-বোলতা বলে দিয়েছেন, ‘‘আমাদের খঞ্জ টিটুইকে কেউ কখনো কাজ করতে বলবে না, কেউ বকবেও না কোনোদিন! সেআমাদের বড়ো আদরের!’’ তার কাছে কিন্তু কাজ না করার উপরওয়ালার নোটিস আসেনি।
কর্মী-বোলতারা সারাদিন খেটে খেটে মরে, আর দম ফেলে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ভাবে, এই উপরওয়ালাটা যে কে, একদিন সময় পেলে তাকে দেখতে যাবে। তাহলে তার কাছে সুপারিশ করে অন্তত সপ্তাহে একটা দিন ছুটির রাজিনামা আদায় করে আনবে।
একদিন ছোকরা মতো একটা কর্মী-বোলতা, তার নাম অবুদ্ধিমান, সব কাজটাজ ফেলে সেবেরিয়ে পড়ল উপরওয়ালার কাছে যাওয়ার জন্যে। তার বুদ্ধি বড্ড কম বলে টুটুই-বোলতা তার অমন নাম রেখেছে। কথাটা কিন্তু অবুদ্ধিমান-বোলতা কাউকে কিচ্ছু বলেনি। তার যে অমন গলায় গলায় বন্ধু টুটুই-বোলতা, তাকেও না। তবে সেজানে, একটু পরে সব জানাজানি হতে কতক্ষণ? ওকে দেখতে না পেলে এক্ষুনি খোঁজ পড়ে যাবে। চাইলে হয়তো রানি-বোলতার কানেও উঠে যেতে পারে কথাটা। কানে কথা তুলবার বোলতার তো অভাব নেই বল্লাগড়ে! তা উঠুক, তবু উপরওয়ালা যে কে, একবার দেখে আসা দরকার।
অবুদ্ধিমান-বোলতাটা উড়ে উড়ে যায়, যায়, যায়; এই টুম্পিদের দোপাটির বাগান পেরোলো, তো এই টুরাদের রজনীগন্ধার বাগান টপকে গেল। সারাদিন ওড়ার পর একটা লঙ্কা জবার গাছে বসে খানিক জিরিয়ে নিচ্ছিল অবুদ্ধিমান-বোলতাটা। এতখানি পথ উড়ে এসেছে তো, কোথাও পলকের জন্যে থামেনি। ডানা দুটো ব্যথায় টনটন করছে। একটু পরেই সন্ধে নামবে মেঘের ডানায় ভর করে। এখনও তো উপরওলার সঙ্গে তার দেখাই হল না!
হাঠাৎ তার মনে পড়ল, এই যা:! উপরওয়ালা যে কোনদিকে থাকে, সেটাই তার জেনে আসা হয়নি! উপরওয়ালার বাড়িটাই বা কোনো দিকে? তারপর ভাবল, যে উপরওয়ালা, যার এত ক্ষমতা, ইচ্ছে করলে সেএকজন বোলতার নাম সারাজীবন খাটুনির লিস্টি থেকে বাদ দিতে পারে, তার তো বাড়ি থাকতে পারে না! থাকবে সাতমহলা প্রাসাদ। সেখানে অনেক পাহারাদার থাকবে, কত না দাসদাসী থাকবে! মন্ত্রী? হ্যাঁ, তাও থাকা বিচিত্র কিছু নয়। কিচ্ছু খোঁজখবর না নিয়ে তার এতটা পথ খামোখা উড়ে আসা বেজায় বোকামি হয়েছে! সন্ধের মুখে মুখে তাই অবুদ্ধিমান-বোলতা বল্লাগড়ে ফিরে আসছিল বনবন করে।
এমন সময় টুলটিদের বাতাবি লেবুর গাছের কাছটায় বল্লাগড়েরই এক পুরুষ-বোলতার সঙ্গে দেখা। মুখটা খানিক উলটো দিকে ঘুরিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসছিল অবুদ্ধিমান-বোলতা। যেন সেঅন্য রাজ্যের বোলতা। তার অনেক কাজ পড়ে আছে। কিন্তু পুরুষ-বোলতার তো সারাদিন কাজকর্ম নেই। সেএকটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে সারাদুপুর ধরে বেড়াতে বেরিয়েছে। কখনো মন হলে একটু ফুলের মধু খাবে। নয়তো না। বিকেলের ফিকে হয়ে আসা আলোয় ওকে দেখে ঠিক চিনে ফেলল সে। চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, ‘‘ওহে, দাঁড়াও, দাঁড়াও! তোমাকে কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছে? তুমি আমাদের বল্লাগড়ের অবুদ্ধিমান-বোলতা না?’’
সেমনে ভাবল, উত্তর না দিয়ে চলে আসাটা ঠিক হবে কি? যতই হোক, রানি-বোলতার খুব কাছেরজন। ফট করে রানি-বোলতার কানে কথাটা উঠেও যেতে পারে। তাই বেঁা করে মাথাটা ঘুরিয়ে অবুদ্ধিমান-বোলতাটা বলল, ‘‘আজ্ঞে স্যার!’’
‘‘এদিকে কোথায় গিয়েছিলে? তুমিও এমন করে কাজকর্ম ফেলে ঘুরে বেড়ানোর নোটিস পেয়েছ নাকি?’’
‘‘আজ্ঞে, তা না! মনটা ভালো ছিল না। তাই ভাবলাম, খানিক ঘুরে-টুরে এলে…’’
‘‘তাই বলো! তা বেশ, তা বেশ! একটা কাজ করো দেখি! এই আমি চালতা পাতার উপর ঠায় হয়ে বসলাম। দাও দিকিনি আমার গা-হাত-পা একটুখানি ম্যাসাজ করে!’’
তা না করে উপায় কী? উনি কত উঁচু পদে কাজ করেন! পাশে বসে পুরুষ-বোলতাটার গা-হাত-পা ম্যাসাজ করে দিচ্ছিল অবুদ্ধিমান-বোলতা। পুরুষ-বোলতা আরামের আবেশে ফিসফিস করে ওর কানের কাছে মুখ এনে বলল, ‘‘এই মাত্র খবর এল, ওদিকে বল্লাগড়ে যে তুমুল কান্ড ঘঠে গেছে গো!’’
কথাটা ঠিকমতো বুঝে উঠেই চমকে সেপ্রশ্ন করল, ‘‘বল্লাগড়ে কী হয়েছে স্যার? আপনার কি মোবাইল ফোন আছে নাকি? নাকি কোনো অদৃশ্য ই-মেলে জানলেন? কী করে খবর পেলেন?’’
পুরুষ-বোলতাটার তখন হাতে-পায়ে আর বল নেই। আরামের আবেশে সেঘুমিয়ে কাদা! ওর কথার উত্তর দিতেই পারল না। শব্দ না করে সরে এল অবুদ্ধিমান-বোলতা। তারপর সাঁইসাঁই করে বল্লাগড়ের পথে উড়াল দিল।
যেই বল্লাগড়ে পৌঁছেছে, অমনি দ্যাখে কী, সেএক হইহই রইরই কান্ড! গোটাটা ধোঁয়ায় ধোঁয়াক্কার! ডোরার বাবা বল্লাগড়কে আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে দিয়েছেন। কে নাকি তাঁকে বলেছে, বাড়ির লাগোয়া বোলতার চাক রাখতে নেই। আগুনে পুড়ে গেছেন সবচেয়ে বড়ো রানি-বোলতা। আরও যে সাতজন মাঝারি রানি-বোলতা ছিল, কেউ বাদ যাননি! রোজকার মতো পুরুষ-বোলতারা সাতসন্ধেবেলা ঘুমোতে গিয়েছিল। তারাও কেউ বঁাচেনি। একটাই পুরুষ-বোলতা, যে বেড়াতে গিয়েছিল, সে-ই শুধু বেঁচে গেছে। কর্মী-বোলতাদের ক-জনই বা বেঁচেছে? সকলেই বল্লাগড় আর রানি-বোলতাকে বঁাচাতে প্রাণ দিয়েছে। সাত-সাতজন কর্মী-বোলতার দুটো ডানাই পুড়ে গেছে আগুনে। তারা আর উড়তেই পারছে না।
সেই আপদরাত্রি পেরিয়ে ভোর হল। যে ক-জন কর্মী-বোলতা বেঁচেছিল, তারা পোড়া চাক থেকে একটু দূরে কদম গাছের ডালে মিটিং ডাকল, ‘বল্লাগড় বঁাচাও মিটিং’। সেখানে ঠিক হল, দিনরাত খেটে ফের বল্লাগড়কে সকলে মিলে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে।
শুরু হয়ে গেল নতুন বল্লাগড় তৈরির কাজ। সব কর্মী-বোলতা চাকের এক-একটা গর্তে মুখ ঢুকিয়ে দেখতে লাগল, ছোটো-বোলতারা ঠিক আছে তো! তখনও অনেক ডিম আর বাচ্চা আগুনের হাত থেকে বেঁচে গেছে। ডিম ফোটানোর আয়োজন করতে লাগল। ব্যস্ততায় পলক ফেলার সময় নেই তাদের। আবারও যদি বিপদ আসে, তাই কয়েকটা কর্মী-বোলতা ডানা মেলে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করবে বলে রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। তাদের পাশে অবুদ্ধিমান-বোলতাও কিছু না ভেবে থিতু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। ওদিকে দিনরাত কাজ করছে সকলে, এদিকে ডিম ফুটে বেরিয়ে পড়ছে নতুন নতুন বোলতার ঝাঁক।
যেসব কর্মী-বোলতা, যারা কখনো রানি-বোলতার ঘর দেখার অনুমতি পায়নি, তারা সেখানে পৌঁছে দেখল, রানির হলদে রঙের সেই অন্দরমহল অনেকটাই পুড়ে গেছে। ক-দিনেই সকলে মিলে প্রাণপণে সারিয়ে ফেলল রানি-বোলতার ঘর। মোম দিয়ে সাজানো হয়ে গেল ঘরের ভিতরটা। তৈরি হল মোমের নরম কারুকাজ করা পালঙ্ক, ফুলের পাপড়ি দিয়ে পেতে দেওয়া হল সুখশয্যা, রাখা হল মোমের বাহারি আতরদান, মোমের আরামকেদারা, আগদুয়ারে মোতায়েন করা হল পাঁচজন সবচেয়ে দক্ষ কর্মী-বোলতা। ফুলের পরাগ ছড়িয়ে সাজানো হয়ে গেল ঘরময় রঙিন জাজিম। ততদিনে অগুনতি বোলতায় টইটই করে উঠেছে ফের বল্লাগড়ের বোলতা-রাজ্য।
কিন্তু হলে কী হবে, রানি না হলে কি রাজ্য মানায়? নাকি অন্য বোলতা-রাজ্যের কাছে সেরাজ্যের কোনো মান থাকে? কী করে যেন খবর গেল সেই ঘুরে বেড়ানো পুরুষ-বোলতার কাছে। একদিন সকাল সকাল সেএসে হাজির হল নতুন করে গড়ে ওঠা বল্লাগড়ে। সঙ্গে এলেন পরমাসুন্দরী এক বোলতা। সকলে চোখের ইশারায় সেই পুরুষ-বোলতাটার কাছে জানতে চাইল, ‘‘কে ইনি?’’
সেকোনো কথার উত্তরই দিল না। সটান ঢুকে গেল একেবারে চাকের ভিতরে, রানিমার ঘরের সামনে। পাঁচজন প্রহরী তাকে দেখে সরে দঁড়াল মাথা নীচু করে। তারপর নতুন রানিমা ঢুকলেন। পুরুষ-বোলতা বিনয়ের সঙ্গে নিবেদন করল, ‘‘বোলতার চাকের সমস্ত গোড়ার কাজ আপনারই একা হাতে করার নিয়ম। কোথায় চাক করবেন, সেতো আপনার নির্বাচন ছাড়া হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমাদের বল্লাগড়ের মহাবিপদের কথা সব আপনাকে বলেছি। এখন আপনি আমাদের এই বোলতা-রাজ্যের রানিসিংহাসন গ্রহণ করুন! সকলে মিলে সব আয়োজন পূর্ণ করে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে।’’
নতুন রানি-বোলতা মাথা সামান্য দুলিয়ে গটগট করে হেঁটে গিয়ে বসলেন তাঁর রানিসিংহাসনে। তারপর বললেন, ‘‘আমি তোমাদের সমবেত চেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে এ রাজ্যের রানি হতে রাজি হলাম! তোমাদের জয় হোক!’’
কখন থেকে খঞ্জ টিটুই-বোলতাটা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে রানিমা-র পালঙ্কে হেলান দিয়ে, কেউ খেয়ালই করেনি। তার হাতে একটা এইটুকুনি কদম ফুলের পাপড়ির টুকরো। রানিমার চোখে চোখ পড়তেই সেরানিমার দিকে এগিয়ে গিয়ে বাড়িয়ে ধরল তার সামান্য উপহার। রানি-বোলতা টিটুইকে কোলে টেনে নিলেন।
আর সেই যে পাঁচজন কর্মী-বোলতা, আগুনে যাদের দুটো ডানাই পুড়ে গিয়েছিল, তারা ভিড় ঠেলে রানিমার কাছে আসতেই পারছে না। গুটুস গুটুস করে হেঁটে আসতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। তারাও চোখ এড়াল না রানিমার। রানি-বোলতা সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সকলকে পথ করে দিতে বললেন। তারা কাছে আসতে তাদের মুখে সব কথা শুনলেন। তারপর রানি-বোলতা দু-চোখ ভরা জল নিয়ে বললেন, ‘‘কর্মী-বোলতারা শোনো। আমার ঘরের ভিতর ওদের জন্যেও আর-একটা পালঙ্কের আয়োজন করে দাও! ওরা আজ থেকে আমার ঘরেই থাকবে। তোমরা না থাকলে আমার আবার কীসের রানিসিংহাসন?’’
চাক-ভরতি বোলতার ডানার ফরফর শব্দে বেজে উঠল নতুন রানি-বোলতার বন্দনা গান!
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন