৪.১৫ তিন কুলজী বিদ্যা-বিশারদের কাহিনী

ক্ষিতিশ সরকার

আরবের কোনও এক শহরে তিন বন্ধু বাস করতো। ওরা তিনজনেই কুলজী বিদ্যা বিশারদ। কারুরই কোনও চালচুলো ছিলো না। বাস করতো একটা সস্তার সরাইখানায়। সারাদিন লোক ঠকিয়ে যা সংগ্রহ করে আনতো তাই তারা ভাগ বাটোয়ারা করে নিত। রোজগারের যৎসামান্যই আহার ও বিহার এবং বেশবাসে খরচ করতো, বেশির ভাগই উড়িয়ে দিত গাঁজা ভাঙ্গ চরস খেয়ে।

সারাদিন পয়সার ধান্ধায় ঘুরে ঘুরে সন্ধ্যেবেলায় তিন বন্ধু ফিরে আসতো সরাইখানায়। সেখানে বসতো মৌতাতের আসর। রাত যত বাড়তে নেশাও তত চড়তে থাকতো, আর সেই সময় সবাই মনের দরজা খুলে দিত দিলদরিয়া মেজাজে।

একদিন রাতে চরসের মাত্রাটা একটু বেশি মাত্রা চড়িয়ে ছিলো ওরা। তার অবশ্যম্ভাবী ফল হাতে হাতে ফলে গিয়েছিলো। প্রথমে হাসি-মস্করা, পরে তা থেকে তর্ক বিতর্ক, এবং শেষ পর্যন্ত হাতাহাতিতে পর্যবসিত হয়েছিলো তাদের সেদিনকার সান্ধ্যসভা। বেদম নেশায় কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে তিন বন্ধু বন্যজন্তুর মতো হিংস্র হয়ে এ ওকে তাড়া করতে করতে এক সময় সুলতানের প্রাসাদসংলগ্ন ফুলবাগিচার ভিতরে ঢুকে পড়েছিলো।

সে সময়ে সুলতান নৈশ-বিহারে বেরিয়েছিলেন। তিন বেয়দপ বদমাইশের কাণ্ডকারখানা  দেখে তিনি বিরক্ত হয়ে সঙ্গের প্রহরীদের হুকুম করলেন, ওদের ধরে আজ ফাটকে রেখে দাও, কাল সকালে আমার দরবারে হাজির করবে।

পরদিন দরবার শুরু হতে ঐ তিন কুলজী বিদ্যাদিগগজকে হাজির করা হলো সুলতানের সামনে। ওদের দেখেই তিনি ক্রোধে ফেটে পড়লেন, পাজি বদমাশ, কে তোমরা? এতো বড় দুঃসাহস তোমাদের, নেশায় মাতাল হয়ে আমার প্রাসাদের পাশে এসে মাতলামি আরম্ভ করেছিলে?

—আপনি মহানুভব সম্রাট, আমরা কোনও অসৎ লোক নই, আমাদের তিনজনেরই একই পেশা-কুলজী বিদ্যাবিশারদ আমরা।

—কুলজী বিদ্যাবিশারদ? সে কি রকম?

—জী, কুলজী বিদ্যা মানে, কোনও বস্তু বা প্রাণীর উৎপত্তি বা জন্মবৃত্তান্ত সব বলে দিতে পারি আমরা।

সুলতান ঠিক অনুধাবন করতে পারলেন না ব্যাপারটা, বললেন, যথা।

চরসখোরদের একজন এগিয়ে এসে বললো, আমি গ্রহরত্ন বিশারদ। হীরে চুনী পান্না বা অন্য যে-কোনও মণিরত্ন রাখুন আমার সামনে, আমি চোখ বন্ধ করে শুধুমাত্র বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুল স্পর্শ করে তার গুণাগুণ ঠিকুজী কুষ্ঠি সব বিচার করে বলে দেব।

সুলতান বললেন, তোমার কথা যদি ঠিক হয় তবে যথাযোগ্যই ইনাম পাবে, কিন্তু যদি মিথ্যে বলো তবে গর্দান যাবে, মনে থাকে যেন?

—তাই হবে জাঁহাপনা।

দ্বিতীয় জন এগিয়ে এসে বললো, আমি পশুদের বংশ কুলজী বিশারদ। আপনি আমার সামনে একটা ঘোড়া এনে দাঁড় করান, আমি তার গতি, মা বাবা চৌদ্দপুরুষের সব খবর বলে দেব।

-আর যদি তা ঠিক না হয়?

—তবে জাঁহাপনার যা অভিরুচি সাজা দেবেন আমাকে।

তৃতীয় জনকে সুলতান জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন্ বিদ্যায় বিশারদ।

—আমি, জাঁহাপনা, মানুষের জন্ম কুলজী সব বলতে পারি।

সুলতান বললেন, ঠিক আছে, তোমাদের তিনজনের কথাই শুনলাম। যথাসময়ে আমি যাচাই করে দেখবো। কিন্তু পরীক্ষায় যদি দেখি তোমরা ধোঁকা দিয়েছ আমাকে, তা হলে রক্ষা থাকবেনা। ফাঁসীতে ঝুলাবো।

এর কয়েকদিন পরে পাশের এক বন্ধুদেশের কাছ থেকে নানারকম উপহার ভেট-এর মধ্যে একটি বিরাট বড় আকারের হীরে পেলেন। সুলতান প্রথম জনকে ডেকে বললেন, এই যে হীরেটা দেখছ, এটা পরীক্ষা করে বলতে হবে আসল অথবা নকল।

হীরেটা হাতে তুলে দিতে গেলেন সুলতান। কিন্তু সে হাতে না নিয়ে বললো, আপনি মেহেরবানী করে টেবিলের ওপরে রাখুন, আমি শুধু আমার বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুলটা একবার স্পর্শ করবো মাত্র।

দুই চোখ বন্ধ করে সে অতি আলগোছে কনিষ্ঠা দিয়ে ছুঁয়েই তড়িতাহতের মত হাতখানা টেনে নিয়ে কাতরাতে কাতরাতে বললো, ওফ, পুড়ে গেল-পুড়ে গেলো।

সুলতান চমকে উঠলেন, কী, কি হলো?

—জাঁহাপনা, একদম ঝুটা মাল। একেবারে কাঁচ।

সুলতান রোষে ফেটে পড়লেন, কী এতো বড় কথা! আমার দোস্ত শাহেন শাহ আমাকে উপহার পাঠিয়েছেন, ঝুটা জিনিস? এই, কে আছি, এই লোকটার গর্দান নিয়ে নে।

ঘাতক এগিয়ে এসে তাকে হাতকড়া পরিয়ে দিয়ে টানতে টানতে হাড়িকাঠের কাছে নিয়ে গেলো।

উজির দেখলেন, সুলতানের হুকুমে এখুনি ছেলেটির প্রাণনাশ হয়ে যাবে। তার কথার সত্যাসত্য যাচাই হলো না।

–জাঁহাপনা, আমার একটা নিবেদন আছে।

-বল।

—এই যুবক বলেছে হীরেটা ঝুটা। কিন্তু ওর কথাই যে মিথ্যে তার কি প্রমাণ আছে? আপনি কি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন, সে মিথ্যে বলেছে?

সুলতান আমতা আমতা করে বলতে থাকেন, তা বটে, কিন্তু এটা বুঝছো না কেন, এ জিনিসটা এসেছে আমার বন্ধুর কাছ থেকে। জেনে শুনে তিনি আমাকে নকল জিনিস পাঠাবেন, তা কি হতে পারে?

উজির বললো, জেনে শুনে তিনি নকল জিনিস পাঠাবেন না, এ কথা আমি একশোবার মানি, কিন্তু যার কাছ থেকে কিনেছেন বা পেয়েছেন সে তো তাকে ঠকাতে পারে। আর জহরত চেনার মতো বিদ্যে যে তার থাকবেই তা আপনি কি করে আশা করেন, জাঁহাপনা?

—হুম, তুমি ঠিকই বলেছ উজির। আমি তো ওদিকটা তেমন ভেবে দেখিনি। যাই হোক, হীরেটা কি করে পরীক্ষা করা যায় বলতো?

উজির বললো, ঠিকমতো জানতে গেলে হীরেটার মায়া আপনাকে ত্যাগ করতে হবে জাঁহাপনা।

-কেন?

—না ভাঙ্গলে এর আসল গুণাগুণ যথার্থভাবে নির্ণয় করা শক্ত। হীরেটাকে দ্বিখণ্ডিত করে হাতে ধরলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। যদি টুকরোগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তবে নকল। আসল হীরেয় যত আঘাত ঘর্ষণই করুন তা কখনও গরম হবে না।

সুলতান বললেন, ঠিক আছে, ভেঙ্গেই ফেলো। একটা হীরের চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

উজির বললো, আমারও তাই মনে হয় জাঁহাপনা, নির্দোষকে নিহত করে পাপের দায় ঘাড়ে না নেওয়াই ধর্মাবতারের কাজ।

সুলতান ঘাতককে বললেন, এই হীরেটাকে এক কোপে দু’খানা করে ফেলো দেখি।

তরবারীর এক ঘায়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেলো হীরেটা। উজির হাতে নিয়ে সুলতানের হাতে তুলে দিতে দিতে বললেন, ছেলেটি ঠিকই বলেছে, জাঁহাপনা দেখেন কি গরম হয়ে উঠেছে—

সুলতান অবাক হয়ে তাকালেন ছেলেটির দিকে, এসো, আমার কাছে এসো বৎস। আচ্ছা, সত্যি করে বলতো, কোন্ যাদুবলে এই অলৌকিক জ্ঞান তুমি আয়ত্ত করেছ।

ছেলেটি বললো, আমার এই আঙ্গুলটার এক অদ্ভুত স্পর্শশক্তি আছে ছোঁয়ালেই আমি বুঝতে পারি।

সুলতান খুশী হয়ে উজিরকে নির্দেশ দিলেন, আজ থেকে এর বাদশাহী মর্যাদায় খানা-পিনার ব্যবস্থা করবে।

কয়েকদিন পরে সুলতান একটি চমৎকার বাদামী রঙের আরবী ঘোড়া কিনলেন। এবার ডাক পড়লো দ্বিতীয় যুবকের।

সুলতান বললেন, ভালো করে তাকিয়ে দেখ, এই ঘোড়াটার বংশ পরিচয় তোমাকে বলতে হবে। যদি পার ঠিক ঠিক বাতলাও, না হলে, আলতু ফালতু কিছু বলবে না। তা হলে কিন্তু গর্দান যাবে।

ছেলেটি ঘোড়াটার দিকে এক নজর তাকিয়ে বললো, আমার দেখা হয়ে গেছে, জাঁহাপনা।

—কি দেখলে?

এই সময় রাত্রি শেষ হয়ে এলো। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

 

আটশো আটাশতম রজনীতে আবার সে বলতে থাকে–

ছেলেটি বলে : জাঁহাপনা, ঘোড়াটা সত্যিই বড় চমৎকার জানোয়ার। এর অঙ্গ-সৌষ্ঠব এবং তাগদ-এর তুলনা মেলা ভার। সারা আরবে খুঁজলেও এর জুড়ি পাওয়া যাবে না, এ কথা আমি মুক্ত-কণ্ঠে বলবো।রূপে গুণে একে ঘোড়ার বাদশা বললেও অত্যুক্তি হবে না, তবে সামান্য একটু দোষ আছে এই আর কি।

এতক্ষণ প্রশংসা শুনে খুব খুশি হয়ে উঠছিলেন সুলতান। কিন্তু সামান্য একটু দোষের কথা শুনে তিনি অকস্মাৎ ক্ষেপে উঠে বললেন, তুমি একটা জোচ্চোর, শয়তান, বেল্লিক। একটা সাচ্চা, সবচেয়ে সেরা তেজি ঘোড়ার মধ্যে খুঁত ধরছো! আমি তোমার গর্দান নেব।

উত্তেজনায় কাঁপতে লাগলেন সুলতান। উজির বোঝালো, ছেলেটা যা বলছে হয়তো তা মিথ্যে হতে পারে। কিন্তু যথার্থ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া কি উচিত হবে জাঁহাপনা?

-হুম, উজিরের কথায় চুপসে গেলেন তিনি, বললেন, ঠিক আছে, কি দোষ তুমি দেখলে, খুলে বলো আমার কাছে।

ছেলেটি বলে, বাবার দিক থেকে ঘোড়াটা সাচ্চা আরবী বংশের। কিন্তু ওর মা ম্লেচ্ছ। এর পরের টুকু আমি আর বলতে চাই না, জাঁহাপনা।

সুলতান গর্জে ওঠেন, আলবাৎ তোমাকে বলতে হবে, এবং এক্ষুনি। তা না হলে ঐ যে ঘাতকের তলোয়ার দেখছ, তোমার গর্দানে বসে যাবে।

–ওরে বাবা, না না, আমি বলছি। জাঁহাপনা, এর মা সিন্ধুঘোটকের ঔরসজাত এক মাদী ঘোড়া।

সুলতান ক্রোধে আরক্ত হয়ে ঘামতে থাকলেন, উজির এক্ষুনি সহিস-সর্দারকে ডাক।

সহিস-সর্দার আসতে তিনি জানতে চাইলেন। এই ঘোড়াটা কোথা থেকে কেনা হয়েছে, সে লোকটাকে ধরে নিয়ে এসো এক্ষুনি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সে লোককে নিয়ে হাজির হলো সহিস-সর্দার। সুলতান জিজ্ঞেস করলেন, এ ঘোড়াটা তুমি কোথায় পেয়েছিলে?

লোকটি কাঁপতে কাঁপতে বলে, ভালো জাতের ঘোড়ার বাচ্চা পয়দা করিয়ে বিক্রি করাই আমার ব্যবসা জাঁহাপনা।

—তাহলে সাফ সাফ বাতাও, এর বাবা কে আর মা-ই বা কে? লোকটি এক মুহূর্ত কি যেন ভাবলো। তারপর বললো, জাঁহাপনা, এর বাবা সম্পর্কে আমি বড় মুখ করে বলতে পারি আরবের সেরা এক তাজির ঔরসে জন্ম হয়েছে। কিন্তু এর মা সাচ্চা তাজি নয়।

-সাচ্চা তাজি নয়?

সুলতান গর্জে ওঠেন। লোকটি বিনীত হয়ে কড়জোড়ে বলে, না, হুজুর, সিন্ধুঘোটকের ওরসজাত এক মাদী ঘোড়া। সাধারণত এই সব মাদীগুলো জারজ হলেও আসল আরবী মাদীর চাইতে ঢের বেশি তাগড়াই হয়। এবং সেই কারণেই তার এই বাচ্চাও এমন জব্বর দেখতে। হয়েছে। দো-তরফা আসল হাতের আরবী ঘোড়া কখনই এরকম দর্শনধারী, টগবগ, হবে না। আরব সাগরের কিনারে ঘোড়া ব্যবসায়ীরা তাঁবু খাটিয়ে মাদী ঘোড়া বেঁধে রাখে জায়গায় জায়গায়। দরিয়া থেকে সিন্ধুঘোটকরা মাদী ঘোড়ার গায়ের গন্ধ পেয়ে ওপরে উঠে এসে উপগত হয়ে আবার দরিয়ার পানিতে পালিয়ে যায়। তখন ব্যবসায়ীরা ঘোড়াগুলোকে নিয়ে দেশে ফিরে আসে। যথাসময়ে তাদের বাচ্চা হয়। এবং সেই সব টাট্ট বাচ্চা চড়া দামে বাজারে বেচে দেয় তারা। আর মাদী বাচ্চাগুলোকে পালন করে সাচ্চা তাজি ঘোড়ার সঙ্গে পাল খাওয়ায়। এদের গর্ভজাত বাচ্চাগুলোর বাজার দর অনেক বেশি। আসল তাজি ঘোড়ার তিন চারগুণ দাম পাওয়া যায়।

সুলতান মুগ্ধ হয়ে যুবককে বললেন, তোমার বিচার নিখুঁত। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি, কি করে তুমি বুঝতে পারলে যে ঘোড়াটি জারজ?

ছেলেটি হাসলো, সে কথা বুঝানো শক্ত।তবে জেনে রাখুন জাঁহাপনা, এই-ই আমার একমাত্র ধ্যান জ্ঞান, এই চর্চা করেই আমি খাই।

সুলতান উজিরকে বললেন, এর জন্যেও থাকা খাওয়ার এলাহী ব্যবস্থা করবে আজ থেকে। এমন গুণীজনের সমাদরে যেন কোনও ত্রুটি না হয়।

এরপর সুলতান ভাবলেন এবার তৃতীয় জনের বিদ্যা যাচাই করে দেখতে হবে। একদিন তাকে ডেকে বললেন, ওহে বাপু, তুমি যা বলেছিলে মনে আছে তো?

ছেলেটি সবিনয়ে বলে, সে-কথা ভুলবো কি করে, জাঁহাপনা। ওটাই তো আমার একমাত্র পেশা।

-ঠিক আছে, এসো আমার সঙ্গে।

সুলতান ওকে সঙ্গে নিয়ে সোজা চলে গেলেন হারেমে। সাধারণতঃ কেন, কোনও কারণেই বাইরের কোনও পুরুষের প্রবেশাধিকার নাই হারেমে। একমাত্র হাকিমরা প্রয়োজন হলে সুলতানের সঙ্গে যেতে পারেন। তবু কোনও বেগম বাদীর মুখদর্শন করতে পারবেন না তারা। পর্দার আড়াল থেকে রোগের বিবরণ শুনে দাওয়াই পত্রের ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন। কিন্তু সুলতান আজ সব নিয়ম বিধি তছনছ করে ছেলেটিকে নিয়ে একেবারে হারেমের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন।

সুলতানের সর্বাধিক প্রিয়তমা বাঁদীর ঘরে এসে দাঁড়ালেন। অসময়ে সুলতানকে দেখে খোজা নফর দাসী বাঁদীরা সবাই তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। সুলতান-প্রিয়া আভূমি আনত হয়ে কুর্ণিশ জানিয়ে আসন গ্রহণের আর্জি রাখলো। সুলতান সেদিকে বিশেষ ভ্রূক্ষেপ না করে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বললো, তুমি যদি চাও, আমি ওকে বোরখা খুলে দাঁড়াতে বলতে পারি, ভালো করে পরীক্ষা করে দেখ একে।

ছেলেটি বলে, না তার দরকার হবে না। আমার যা দেখার দেখা হয়ে গেছে জাঁহাপনা।

-তাহলে চলো বাইরে যাই। এখানে কোন কথা হবে না। দরবারে ফিরে এসে সবাইকে সভা ত্যাগ করে চলে যেতে নির্দেশ করলেন সুলতান। শুধু উজিরকে বললেন, তুমি থাক এখানে।

সকলে প্রস্থান করলে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললেন তিনি, আচ্ছা বিশারদ, এবার তোমার যা বলার বলতে পার আমাকে। আমি আমার বাঁদীর জন্ম কুলজী জানতে চাই।

ছেলেটি মাথা নিচু করে বলে, এমন নিখুঁত সুন্দরী আমি কখনও দেখিনি জাঁহাপনা। কিন্তু আপনি আমাকে ওঁর জন্মবৃত্তান্ত বলতে হুকুম করবেন না।

সুলতান গর্জে ওঠেন, এই সব বুজরুকি শোনার জন্যে তোমাকে ডাকিনি আমি। এখুনি তোমাকে বলতে হবে। এবং তার মধ্যে যদি কোনও মিথ্যাচার থাকে তবে তোমার গর্দান নেব আমি।

ছেলেটি বলে, আমি যা বলবো তা আপনার শুনতে ভালো লাগবে না জাঁহাপনা।

—তা হোক, তুমি বলো।

এই মেয়ের বাবা সত্বংশ সস্তৃত। কিন্তু এর মা বারবনিতার গর্ভজাত ছিলো। সুলতান চঞ্চল হয়ে উঠলেন। উজিরকে বললেন, বাঁদীর বাবাকে হাজির কর।

একটু পরে এক বৃদ্ধ এসে কুর্ণিশ জানিয়ে দাঁড়ালো। সুলতান প্রশ্ন করলেন, তোমার মেয়ের প্রকৃত পরিচয় কী?

বৃদ্ধ কম্পিত কণ্ঠে বলে, বিশ্বাস করুন জাঁহাপনা, আমার বংশমর্যাদা খানদানী সম্বন্ধে আপনাকে যা বলেছি তার মধ্যে এতোটুকু মিথ্যে নাই।

সুলতান অধৈর্য হয়ে বলেন, তা আমি শুনেছি। সে সম্বন্ধে জানতে চাই না। তোমার বিবি, যার গর্ভে তোমার কন্যা হয়েছে, তার বংশ কুলজী কিছু জান।

বৃদ্ধ ক্ষণকালের জন্য নীরব হয়ে রইলো। সুলতান হুঙ্কার ছাড়লেন, চুপ করে থাকলে চলবে। সাফ সাফ সত্যি কথা বলো, তা না হলে জ্যান্ত কবর দেব তোমাকে।

—জাঁহাপনা, একসময়ে আমি মক্কায় যাচ্ছিলাম হজ করতে। দুস্তর মরুভূমির মধ্য দিয়ে চলেছি। পথের মাঝখানে একদল মজরোওরালী মেয়েদের সঙ্গে দেখা হলো। তারাও মক্কায় চলেছিলো। পথের মাঝখানে মুসাফিরদের মনোরঞ্জন করাই তাদের পেশা। একদিন সন্ধ্যায় একটি মরুদ্যানে আমরা তাঁবু গেড়ে রাত্রিটা কাটাবো স্থির করলাম। যাত্রীরা যে যার মতো তবু ফেলে খানা-পিনা গান-বাজনা নিয়ে মেতে উঠলো। ঐ মেয়েগুলো তাঁবুতে যাত্রীদের চিত্তবিনোদন করতে থাকলো।

এমন সময় ঝড় উঠলো। বালীর ঝড়ে চারদিক উত্তাল হয়ে উঠলো। সেই নিদারুণ মরুঝঞাবাত্যায় কে যে কোথায় ছিটকে চলে গেলাম কিছুই ঠাওর হলো না।

শেষ রাতে ঝড় থামলো। আমি পড়েছিলাম বালীর উপর মুখগুজে। সকাল হতে তাকিয়ে দেখি, আমাদের সঙ্গী সাথী বা তাঁবুগুলোর কোনও চিহ্নমাত্র নাই। ঝড়ের তোড়ে কে যে কোথায় ভেসে গেছে তা আর হদিশ করতে পারলাম না। এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেলাম একটা গাছের গুড়ির কোটরের মধ্যে গুটিসুটি মেরে বসে আছে একটি ফুটফুটে কচি বালিকা। নেহাতই শিশু। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কে তুমি? তোমার মা বাবাই বা কোথায়?

সে আমার কথার জবাব দিতে পারলো না। পরে বুঝেছিলাম, কথা বোঝার মতো বয়স এবং বুদ্ধি তখনও তার হয়নি। সেই শিশুকে সঙ্গে নিয়ে আমি দেশে ফিরে আসি। আমার বাড়িতে আর পাঁচটা বালবাচ্চাদের সঙ্গে হেসে খেলে যে মানুষ হতে থাকে।

এইভাবে দিন কাটছিলো। একদিন তার দেহে কিশোরীর উন্মেষ লক্ষ্য করলাম। এবং স্বভাবতই তার মনমোহিনী রূপ-যৌবনে আমি আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিধি-সম্মতভাবে শাদী করে আমার বিবি বানিয়েছিলাম। জাঁহাপনার বাদী তারই প্রথম ফল। ধর্মাবতার বিচার করুন, আমার কি অপরাধ।

সুলতান বললেন, যাক আমি শুনে নিশ্চিন্ত হলাম।

সুলতান উজিরকে বললেন, একে খুব আদর যত্ন করে রাখবে।

সুলতানের অবাক লাগলো, কি করে এরা তিনজন এমন অসম্ভব বিদ্যা অর্জন করতে পেরেছে! পরদিন তিনি তৃতীয় ছেলেটিকে ডেকে বললো, এবার তোমাকে আমার জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য জানাতে হবে।

ছেলেটি বললো, অবশ্যই বলবো, কিন্তু আমাকে অভয় দিতে হবে, জাঁহাপনা। অপ্রিয় সত্য বললে, আপনি কুপিত হয়ে আমাকে সাজা দেবেন না, কথা দিন।

সুলতান বললো, তোমার কথা যদি সত্য প্রমাণিত হয় তবে সাজার বদলে ইনাম পাবে অনেক, তুমি নির্ভয়ে বলল।

ছেলেটি বললো, তা হলে দরবারের সবাইকে চলে যেতে হুকুম করুন। এ কথা শুধু মাত্র আপনাকেই বলতে চাই আমি।

সুলতানের নির্দেশে উজিরসহ সকলে দরবার কক্ষ ছেড়ে বাইরে চলে গেলো।

ছেলেটি তখন সুলতানের কানে কানে ফিস ফিস করে বললো, জাঁহাপনা, আপনি একটি জারজ সন্তান।

এই সময় রাত্রি প্রভাত হয়ে এলো। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

 

আটশো তিরিশতম রজনীতে আবার সে বলতে থাকে–

ছেলেটির কথা কানে যেতেই সুলতানের শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে। কে যেন তার টুটিটা চেপে ধরলো সেই মুহূর্তে। বেশ কিছুক্ষণ তিনি মুখে কোনও আওয়াজ বের করতে পারলেন না। সারা শরীর ঘেমে ভিজে গেলো। নিঃশ্বাস দ্রুততর হতে থাকলো।

এক সময়ে তিনি নিজেকে সামলে নিতে পারলেন। বললেন, কিন্তু তোমার এ-কথার প্রমাণ কী?

ছেলেটি বললো, এখনও তো আপনার বৃদ্ধামাতা জীবিত আছেন। মেহেরবানী করে তাকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখুন। তিনি যদি সত্যিই আপনাকে স্নেহ করেন, আমার মনে হয়, কোনও কথা গোপন করবেন না।

—ঠিক বলেছ, তখুনি সুলতান তলোয়ার বাগিয়ে ধরে হারেমের দিকে ছুটলেন। আজ আমাকে এর একটা ফয়সালা করতে হবে।

ছেলেকে চণ্ডমূর্তিতে এসে দাঁড়াতে দেখে মায়ের প্রাণ কেঁপে ওঠে। কী হয়েছে বেটা, হঠাৎ তলোয়ার হাতে করে ছুটে এলে কেন?

সুলতান দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, সত্যি করে বলল, আমার বাবা কে? মিথ্যা বলার চেষ্টা করবে না মা, তাতে আখেরে তোমার ভালো হবে না। কিন্তু সত্যি কথা যদি খুলে বলল, তবে আমি তোমাকে রেহাই দিতে পারি।

বৃদ্ধা কেঁদে ফেললো, তুই আমাকে জানের ভয় দেখাস নি, বাবা। বাঁচার কোনও সাধ নাই আমার। তবে প্রশ্ন যখন করেছিস, সত্যি কথাই বলবো আজ। তবে শোন্ :

তোর বাবা আমাকে যখন বেগম করে এই হারেমে এনেছিলো, তখন আমার ভরা যৌবন! খুব হৈ-হল্লা, আনন্দস্ফুর্তির মধ্যে দিন কাটতে লাগলো। আমার রূপের মোহে তোর বাবা প্রায় সব সময়ই আমার ঘরে পড়ে থাকতো। কিন্তু একটা বছর কেটে গেলেও আমার গর্ভে কোনও সন্তান এলো না। আমার শাশুড়ি তোর ঠাকুমা চিন্তিত হলো। আমি তাকে বোঝালাম, আমার চেষ্টার কোনও কসুর নাই। আরও একটা বছর কেটে গেলো। তোর বাবার সঙ্গে প্রতি রাতেই আমার সহবাস হতো।কিন্তু দু’বছরের মাথায় এসেও বুঝতে পারলাম আমি সন্তান-সম্ভবা হতে পারিনি।

আমার শাশুড়ি আর ধৈর্য ধরতে পারলো না। আমাকে বাঁজা বন্ধ্যা বলে দূর ছাই, দূর ছাই করতে লাগলো। আমারও মনে কেমন খটকা লাগলো! হয়তো শাশুড়ির কথাই ঠিক!

কিছুদিনের মধ্যে হারেমে নতুন বেগম এলো। পরমাসুন্দরী ডাগর যুবতী ছিলো সে-ও। আমার কপাল পুড়লো। তোর বাবা দিন-রাত সেই নতুন বেগমকে নিয়ে পড়ে থাকে। ভুলেও আমার মহলে আসে না।

কিন্তু একটা বছর কেটে যাওয়ার পর শাশুড়ি তার ওপরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো। এর কয়েম মাস বাদে আরও এক সুন্দরী বেগম এসেছিলো এই হারেমে। শাশুড়ির বড় আশা ছিলো, এই ছোট বেগম বংশ রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু পুরো দু’টি বছর হয়ে গেলো, সে অন্তঃসত্ত্বা হতে পারলো না।

এবার আমি নিঃসংশয় হলাম, দোষ আমাদের কারো নয়, অক্ষমতা তোর বাবার। তার মরা বীর্যে সন্তান পয়দা হতে পারবে না। একথা জানার পর আমি আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম। সর্বনাশ! এতো বড় সলনিয়ত—যদি তার কোনও উত্তরাধিকার না থাকে—সব ছারখার হয়ে যাবে যে! সেইদিনই আমি ঠিক করলাম, যেভাবেই হোক বংশ রক্ষা করতে হবে। মসনদ যাতে অন্য লোকের হাতে চলে না যায়, তারজন্যে আমার নিজের সতীত্ব আমি বিসর্জন দেব।

হারেমে পরপুরুষের প্রবেশ অধিকার নাই। খোজা নফর আর দাসী বাঁদীরাই হারেমের সব কাজ দেখাশুনা করে। ভাবতে লাগলাম, কী ভাবে একটা জোয়ান মরদ জোগাড় করা যায়।

ইচ্ছে থাকলে উপায় একটা হয়ই। একদিন কায়দা করে হারেমের বাবুটিকে মহলে ডেকে আনলাম। লোকটার শরীর স্বাস্থ্য ছিলো পাথরে কুঁদা। আমার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে তাকে দিয়ে। সুতরাং সেইদিনই আমি তার সঙ্গে সঙ্গম করলাম। যাতে তোক জানাজানির কোনও আশঙ্কা না থাকে সেজন্য সেই রাতেই তাকে আমি নিজে হাতে খুন করে মাটি খুঁড়ে গোর দিয়েছিলাম। আমার একান্ত বিশ্বস্ত কয়েকজন সহচরী ছাড়া এব্যাপারটা আর কেউই জানতে পারেনি আজ পর্যন্ত। তুমি বিশ্বাস কর বাবা, এভাবে তোমার বাবার বংশ রক্ষা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিলো আমার সামনে।

সুলতান একটি কথাও উচ্চারণ করতে পারলেন না। চোখের জল মুছতে মুছতে দরবার কক্ষে ফিরে এলেন। ছেলেটি তখনও সেখানে একাই বসেছিলো।সুলতান এসে সিংহাসনে না বসে তার সামনে একটা কুর্শিতে বসে পড়ে অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন।

এইভাবে অনেকক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেছে, এক সময় সুলতান জিজ্ঞেস করলেন, কি করে এই বিদ্যা তুমি আয়ত্ত করেছ, বেটা।

ছেলেটি বলে, ভাষায় ব্যক্ত করে তা বোঝানো সম্ভব নয়, জাঁহাপনা। এটা অনুভব করার জিনিস। আমিও জানি না, কি করে বলতে পারি। আপনা থেকেই আমার মনে এসে যায় সব।

সুলতান তার বাদশাহী অঙ্গবাস খুলে ফেলে দিলেন। ছেলেটিকে মসনদে বসিয়ে দিয়ে বললেন, এ তখতে আমার কোনও অধিকার নাই—লোভও নাই। এ ভার আমি আর বইতে পারবো না। তাই আজ থেকে তোমাকেই সুলতান পদে অভিষিক্ত করে ফকিরের বেশে আমি এ শহর পরিত্যাগ করে অন্য কোনও দূর অজ্ঞাত দেশে চলে যাচ্ছি।

সেইদিনই উজির ও আমির ওমরাহ এবং দরবারের অন্যসব সভ্যসদদের ডেকে সুলতান ঘোষণা করে দিলেন, আজ থেকে এই কুলজীবিদ্যা-বিশারদ যুবকই তোমাদের সুলতান হচ্ছে। আমি আশা করবো, একে যথাযোগ্য সম্মান মর্যাদা দেখাবে তোমরা।

এই সময় রাত্রি শেষ হয়ে এলো। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

দুনিয়াজাদ দিনে দিনে রূপে রসে টইটম্বুর হয়ে উঠছে। আগে সে বাচ্চাদের মজাদার কিসসা শুনতেই বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু এখন তার দেহে যৌবনের ঢল নেমেছে, মনে বসন্তের রং ধরেছে, এখন সে বড়দের কাহিনী শুনতেই আগ্রহী হয়ে উঠছে। দিদির গলা জড়িয়ে ধরে সে বললো, তারপর কি হলো দিদি। সেই জারজ সুলতান মসনদ ছেড়ে কোথায় চলে গেলেন?

সুলতান শারিয়ার এবার মুখ খুললো, তাহলে একথা তো জান শাহরাজাদ। আমি প্রত্যেক রাতে একটি করে মেয়েকে শাদী করে ভোরবেলায় তাকে আবার কেন মেরে ফেলতাম। আসলে মেয়েমানুষকে বিশ্বাস করবে যে সেই ঠকবে। বলল, ঠিক বলছি কিনা?

শাহরাজাদ বলে, সত্যি মিথ্যা আপনার কাছে, জাঁহাপনা। আমি গল্প শোনাবো ওয়াদা করেছি, নিছক গল্পই শোনাচ্ছি আপনাকে। বিচারের ভার আপনার। তবে মেহেরবানী করে কালকের রাত পর্যন্ত যদি বাঁচিয়ে রাখেন, তবে এ গল্পের শেষটুকু শোনাতে পারবো আপনাকে।

 

আটশো একত্রিশতম রজনীতে আবার সে বলতে থাকে–

তৃতীয় কুলজীবিদ্যা-বিশারদকে মসনদে বসিয়ে নিজেকে ফকির দরবেশের বেশে সাজিয়ে সুলতান নিরুদ্দেশের পথে রওনা হলেন।

বেশ কয়েকদিন পরে একদিন তিনি কাইরো শহরে এসে পৌঁছলেন। কাইরো তখন দুনিয়ার এক সেরা শহর। সেখানকার সুলতান মাহমুদ তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুজন! মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তিনি তার প্রাসাদে গিয়ে পৌঁছলেন।

সুলতান মাহমুদ তাকে চিনতে পারলেন না। সুলতান যদি ফকিরের বেশ ধারণ করে কেইবা তাকে চিনতে পারে?

সুলতান মাহমুদ দরবেশকে খুব খাতির যত্ন করে বসালেন। সাধুজনের সঙ্গ তার বড় প্রিয় ছিলো। মাহমুদ বললেন, আপনাদের মতো আল্লাহর পীরদের দেখা পেলে আমি ধন্য হই ফকিরসাহেব। আপনি যদি মনে কোনও দ্বিধা না রেখে আপনার আগমনের উদ্দেশ্য জানান কৃতার্থ হবো আমি।

ফকিরবেশি সুলতান বললেন, আপনার অমায়িক আদর অভ্যর্থনায় আমি মুগ্ধ হয়েছি। বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে আমি আসিনি আপনার কাছে। আমি ফকির মানুষ বিষয়-আসয়েরও কোনও বাসনা নাই।

সুলতান মাহমুদ বললেন, তাহলে আপনার সংসার ত্যাগের কাহিনীই শোনান আমাকে। ঘরবাড়ি আপনজন পরিত্যাগ করে কেনই বা এই ফকির দরবেশ হয়ে দেশে দেশে ঘুরছেন। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

সুলতান বললেন, ঠিক আছে, আপনি এখন দরবারের কর্তব্য সমাধা করুন। পরে নিভৃত আলাপের সময় আমার কাহিনী শোনাবো আপনাকে।

সুলতানের কাহিনী শুনে মাহমুদের প্রাণ মথিত হলো। দু’হাত বাড়িয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন তাকে। বললেন, আপনার সঙ্গে চাক্ষুষ দেখা সাক্ষাৎ হয়নি এতকাল। কিন্তু পাশাপাশি দেশের সুলতান হিসাবে আমরা বহুকালের বন্ধু। আজ থেকে আমাদের সে বন্ধুত্ব আরও পাকা মজবুত হলো। আপনি আমার প্রাসাদে আমারই সমমর্যাদায় সুলতানের মতো বসবাস করতে থাকুন। আজ থেকে আপনি শুধু আমার বন্ধুই নন, আমার অগ্রজপ্রতিম বড় ভাইও বটে। আমার

জীবনেও অনেক চমকপ্রদ ঘটনা আছে। আপনাকে সময়ান্তরে শোনাবো সে-সব।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ বাদশাহ শারিয়ার ও তার ভাই বাদশাহ শাহজামানের কাহিনী
২. ১.০২ গাধা, বলদ আর গৃহস্বামীর উপাখ্যান
৩. ১.০৩ সওদাগর আর আফ্রিদি দৈত্য
৪. ১.০৪ প্রথম শেখের কাহিনী
৫. ১.০৫ দ্বিতীয় শেখের কাহিনী
৬. ১.০৬ তৃতীয় শেখের কাহিনী
৭. ১.০৭ ধীবর আর আফ্রিদি দৈত্যের কাহিনী
৮. ১.০৮ উজির, সুলতান য়ুনান হেকিম রায়ানের কিসসা
৯. ১.০৯ সিনবাদ আর বাজপাখি
১০. ১.১০ শাহজাদা আর রাক্ষসী
১১. ১.১১ শাহজাদা আর রঙিন মাছ
১২. ১.১২ কুলি-ছেলে আর তিন কন্যা
১৩. ১.১৩ প্রথম কালান্দার ফকিরের কাহিনী
১৪. ১.১৪ দ্বিতীয় কালান্দর ফকিরের কাহিনী
১৫. ১.১৫ তৃতীয় কালান্দর ফকিরের কাহিনী 
১৬. ১.১৬ বড় বোন জুবেদার কাহিনী
১৭. ১.১৭ মেজো বোন আমিনার কাহিনী
১৮. ১.১৮ একটি স্ত্রীলোকের খণ্ডিত দেহ, তিনটি আপেল ও নিগ্রো রাইহান
১৯. ১.১৯ উজির সামস অল-দিন তার ভাই নূর অল-দিন ও হাসান বদর অল-দিন
২০. ১.২০ দর্জি, কুঁজো, ইহুদি হেকিম, বাবুর্চি, খ্রীস্টান দালাল
২১. ১.২১ খ্ৰীষ্টান দালালের কাহিনী
২২. ১.২২ বাবুর্চির কাহিনী
২৩. ১.২৩ ইহুদী হেকিমের কাহিনী
২৪. ১.২৪ দর্জির কাহিনী
২৫. ১.২৫ নাপিতের কাহিনী
২৬. ১.২৬ মধুমিতা আর আলী নূর-এর কাহিনী
২৭. ১.২৭ ঘানিম আইয়ুব আর কুৎ-অল-এর কাহিনী
২৮. ১.২৮ উমর অল-নুমান, তার পুত্র সারকান ও দু-অল মাকানের কাহিনী
২৯. ১.২৯ আজিজ আর আজিজার কাহিনী
৩০. ১.৩০ শাহজাদা তাজ অল-মূলক ও শাহজাদী দুনিয়া
৩১. ১.৩১ দু-অল মাকানের পুত্র কান মা-কানা
৩২. ১.৩২ চরস খোরের কাহিনী
৩৩. ১.৩৩ রাজহাঁস ও ময়ূর-ময়ূরী
৩৪. ১.৩৪ মেষপালক রাখাল আর একটি মেয়ে
৩৫. ১.৩৫ কচ্ছপ ও বকের কাহিনী
৩৬. ১.৩৬ নেকড়ে আর খেঁকশিয়ালের কাহিনী
৩৭. ১.৩৭ ইঁদুর আর নেউলের গল্প
৩৮. ১.৩৮ কাক ও কাঠবেড়ালীর কাহিনী
৩৯. ১.৩৯ আলী-ইবন বকর ও সুন্দরী সামস আল-নাহারের কাহিনী
৪০. ১.৪০ শাহজাদা কামার আল-জামান আর শাহজাদী বদর-এর প্রণয় কাহিনী
৪১. ১.৪১ খুশ বাহার ও খুশ নাহারের কাহিনী
৪২. ১.৪২ আলা অল-দিন আবু সামাতের কাহিনী
৪৩. ১.৪৩ বিদূষী হাফিজার কাহিনী
৪৪. ১.৪৪ কবি আবু নবাসের দুঃসাহসিক কীর্তি
৪৫. ২.০১ সিন্দাবাদের প্রথম সমুদ্র-যাত্রা
৪৬. ২.০২ সিন্দাবাদের দ্বিতীয় সমুদ্র-যাত্রা
৪৭. ২.০৩ সিন্দাবাদের তৃতীয় সমুদ্র-যাত্রা
৪৮. ২.০৪ সিন্দাবাদের চতুর্থ সমুদ্র-যাত্রা
৪৯. ২.০৬ সিন্দাবাদের ষষ্ঠ সমুদ্র-যাত্রা
৫০. ২.০৭ সিন্দাবাদের সপ্তম ও শেষ সমুদ্রযাত্রা
৫১. ২.০৮ সুন্দরী জুমুর‍্যুদ এবং আলী শার-এর কাহিনী
৫২. ২.০৯ নানা রঙের ছয় কন্যার কাহিনী
৫৩. ২.১০ তাম্র নগরীর কাহিনী
৫৪. ২.১১ ইবন আল-মনসুর এবং দুই নারীর কাহিনী
৫৫. ২.১২ কসাই ওয়াঁর্দার ও উজির-কন্যার কাহিনী
৫৬. ২.১৩ জামালিকার কাহিনী
৫৭. ২.১৪ বুলুকিয়ার কাহিনী
৫৮. ২.১৫ খুবসুরৎ নওজোয়ান সাদ-এর কাহিনী
৫৯. ২.১৬ হাসি-তামাশায় হারুন অল-রসিদ
৬০. ২.১৭ ছাত্র ও শিক্ষকের কাহিনী
৬১. ২.১৮ অদ্ভুত বটুয়ার কাহিনী
৬২. ২.১৯ হারুন অল রসিদের মহব্বতের কাহিনী
৬৩. ২.২০ কে ভালো—উঠতি বয়সের ছোকরা, না—মাঝ-বয়সী মরদ
৬৪. ২.২১ শসা-শাহজাদা
৬৫. ২.২২ পালিত কেশ
৬৬. ২.২৩ সমস্যা-সমাধান
৬৭. ২.২৪ আবু নবাস আর জুবেদার গোসলের কাহিনী
৬৮. ২.২৫ আবু নবাসের কবির লড়াই
৬৯. ২.২৬ গাধার গল্প
৭০. ২.২৭ আইনের প্যাঁচে জুবেদা
৭১. ২.২৮ স্ত্রী না পুরুষ
৭২. ২.২৯ বখরা
৭৩. ২.৩০ মাদ্রাসার মৌলভীর কিসসা
৭৪. ২.৩১ মেয়েদের সেমিজের কারুকর্মের কথা
৭৫. ২.৩২ পেয়ালার বাণী
৭৬. ২.৩৩ মসুলের বিখ্যাত কালোয়াতী গায়ক ইশাকের কাহিনী – বাক্সের মধ্যে খলিফা
৭৭. ২.৩৪ মুদ্যোফরাশ
৭৮. ২.৩৫ সুর্মার কাহিনী
৭৯. ২.৩৬ ছেলে অথবা মেয়ে
৮০. ২.৩৭ আজব খলিফা
৮১. ২.৩৮ গুলাবী এবং রোশন এর কাহিনী
৮২. ২.৩৯ কালো ঘোড়ার আশ্চর্য যাদু কাহিনী
৮৩. ২.০৫ সিন্দাবাদের পঞ্চম সমুদ্র-যাত্রা
৮৪. ৩.০১.১ ধূর্ত ডিলাইলাহ ও তার জালিয়াৎ কন্যা জাইনাবের কাহিনী
৮৫. ৩.০১.২ সওদাগর সিদি মুসিন আর খাতুনের কথা
৮৬. ৩.০১.৩ সেয়ানা চোর আলীচাঁদ-এর কিসসা
৮৭. ৩.০২ ধীবর যুদর অথবা আশ্চর্য যাদু-থলের কাহিনী
৮৮. ৩.০৩ আবু কাইর আর আবু শাইর-এর মজাদার কাহিনী
৮৯. ৩.০৪ দুই আবদাল্লার উপকথা
৯০. ৩.০৫ পীতাম্বর যুবকের কাহিনী
৯১. ৩.০৬ আনারকলি এবং বদর বাসিমের কিসসা
৯২. ৩.০৭ মিশরের ফাল্লাহ ও তার ফর্সা ছেলেমেয়েরা
৯৩. ৩.০৮ খলিফা ও জেলের কাহিনী
৯৪. ৩.০৯ বসরাহর হাসানের দুঃসাহসিক অভিযান
৯৫. ৩.১০ স্ত্রীলোকের চাতুরী
৯৬. ৩.১১ আবু অল হাসানের কাহিনী
৯৭. ৩.১২ জাইন মাওয়াসিফের মহম্মতের কিসসা
৯৮. ৩.১৩ কুঁড়ের বাদশার কাহিনী
৯৯. ৩.১৪ নওজোয়ান নূর এবং এক লড়াকু মেয়ের কিসসা
১০০. ৩.১৫ সপ্তম হীরক কন্যার কাহিনী
১০১. ৩.১৬.১ আলা অল-দিন ও আশ্চর্য চিরাগ বাতি
১০২. ৩.১৬.২ আলাদিনের চেরাগ (পার্ট ২)
১০৩. ৩.১৬.৩ আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ (পার্ট ৩)
১০৪. ৩.১৬.৪ আলাদিনের দৈত্য (পার্ট ৪)
১০৫. ৩.১৬.৫ আলাদিনের জাদুর চেরাগ (পার্ট ৫ / শেষ পর্ব)
১০৬. ৪.০১ হিতোপদেশের গল্প
১০৭. ৪.০১ হিতোপদেশের গল্প
১০৮. ৪.০২ গোলাপ-সুন্দরী ফারিজাদের কাহিনী
১০৯. ৪.০৩ কামর ও হালিমার কাহিনী
১১০. ৪.০৪ হারাম-আকিলের কাহিনী
১১১. ৪.০৫ সুলতান মহম্মদের ন্যায় বিচার
১১২. ৪.০৬ শেখ হাসান আবদাল্লার কাহিনী
১১৩. ৪.০৭ আবু কাশেমের অঙ্গবাস
১১৪. ৪.০৮ চরসের নেশায়
১১৫. ৪.০৯ ভ্রষ্টা নারী এবং তার নওজোয়ান নাগর
১১৬. ৪.১০ বৃদ্ধ কাজীর তরুণী বিবি
১১৭. ৪.১১ সুন্দরীর নূরের পাণিপ্রার্থীরা
১১৮. ৪.১২ মুতাবাকিল আল্লাহর বিত্ত বৈভব
১১৯. ৪.১৩ সুলতান মামুদের কাহিনী
১২০. ৪.১৪ বসরাহর আবু কাশেম
১২১. ৪.১৫ তিন কুলজী বিদ্যা-বিশারদের কাহিনী
১২২. ৪.১৬ সুলতান মাহমুদের বাঁদর
১২৩. ৪.১৭ তিন পাগলের কাহিনী
১২৪. ৪.১৮ আলিবাবা ও চল্লিশ চোর
১২৫. ৪.১৯ বাগদাদের বড় সেতুর উপরে অল-রসিদ
১২৬. ৪.২০ সিদি নুমানের কাহিনী
১২৭. ৪.২১ কাঠুরিয়া যুবরাজ
১২৮. ৪.২২ বৃদ্ধ শেখের কাহিনী
১২৯. ৪.২৩ খঞ্জ মাদ্রাসা শিক্ষকের কাহিনী
১৩০. ৪.২৪ অন্ধ ভিক্ষারীর কাহিনী
১৩১. ৪.২৫ গবেটচন্দরের কাহিনী
১৩২. ৪.২৬ তিন বোনের কাহিনী
১৩৩. ৪.২৭ তিন কন্যার কাহিনী
১৩৪. ৪.২৮ ফেরিওয়ালার তিন কন্যা
১৩৫. ৪.২৯ দামাসকাসের রূপবান সওদাগর
১৩৬. ৪.৩০ হাবিব হাবিবার কাহিনী
১৩৭. ৪.৩১ সর্দারের নষ্টাচরিত্রা বিবি
১৩৮. ৪.৩২ নফর ফিরুজের বিবি ও সুলতান
১৩৯. ৪.৩৩ অপরিণামদর্শী সিরিয়া সওদাগরের শিক্ষা
১৪০. ৪.৩৪ হারুন অল রসিদের গ্রন্থপাঠ
১৪১. ৪.৩৫ শাহজাদা হীরার কাহিনী
১৪২. ৪.৩৬ গোহা ও তার ইয়ার-বন্ধুরা
১৪৩. ৪.৩৭ তুফা অল কুলবের কাহিনী
১৪৪. ৪.৩৮ অল মালিক বাইবারসের দরবারে – দ্বাদশ সর্দারের কাহিনী
১৪৫. ৪.৩৯ চীন শাহজাদীর বাগানের সমুদ্র-গোলাপ
১৪৬. ৪.৪০ দজ্জাল বিবির অত্যাচারে দেশত্যাগী মারুফ-মুচির ভাগ্য-বিবর্তন
১৪৭. ৪.৪১ আলেকজান্দ্রা শহরের ধনী যুবকের কাহিনী
১৪৮. ৪.৪২ ফিন্দের দুই বীরাঙ্গনা কন্যা
১৪৯. ৪.৪৩ ফতিমার কাহিনী
১৫০. ৪.৪৪ কিণ্ডাইটের সম্রাট হজর ও তার স্ত্রী হিন্দের গল্প
১৫১. ৪.৪৫ আয়েশা কথিত কাহিনী
১৫২. ৪.৪৬ খলিফা ওমর ইবন অল-খাতাবের কাহিনী
১৫৩. ৪.৪৭ কুফার কবি মহম্মদ কথিত কাহিনী
১৫৪. ৪.৪৮ পরান্নভোজী তুফেনের কাহিনী
১৫৫. ৪.৪৯ খলিফা অল হাদীর অন্তিম দশা
১৫৬. ৪.৫০ অভিশপ্ত কণ্ঠহার
১৫৭. ৪.৫১ মশুলের গায়ক ইশাকের রোজনামচা
১৫৮. ৪.৫২ অল মামুন ও জুবেদা বেগমের কাহিনী
১৫৯. ৪.৫৩ জাফরের অন্তিম দশা
১৬০. ৪.৫৪ শাহজাদা জুঁই আর শাহজাদী বাদামের প্রেম উপাখ্যান

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন