৪.১৬ সুলতান মাহমুদের বাঁদর

ক্ষিতিশ সরকার

একদিন সুলতান মাহমুদ তার জীবনের এক কাহিনী শোনাতে লাগলেন।

আমার এ কাহিনী, আপনার থেকে একেবারেই আলাদা ধরনের দোস্ত। আপনি জন্মাবধি বাদশাহী পরিবেশে মানুষ হয়েছেন। কালক্রমে সুলতান হয়ে মসনদে বসে প্রজাপালন করেছেন। আর আমার কাহিনী ঠিক তার উল্টো। প্রথমে আমি দরবেশ দিয়ে জীবন শুরু করি। পরে ঘটনাচক্রে আমি আজ এই মসনদের অধিকারী সুলতান হয়েছি।

আমার বাবা অত্যন্ত দীনদরিত্র মানুষ ছিলেন। পথে পথে পানি দেওয়া কাজ করে অতি কায়ক্লেশে কোনরকমে দু’বেলার রুটির সংস্থান করতে পারতেন তিনি। আমি যখন বড় হলাম তখন আমার পিঠেও তিনি একটা ছাগলের চামড়ার ইয়া বড় এক মশক চাপিয়ে দিয়ে বললেন, যাও পানি ভরে নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে দোকানে দোকানে পানি ফিরি করে বেড়াও। খোদা মেহেরবান নিশ্চয়ই তিনি তোমার রুটির ব্যবস্থা করে দেবেন।

কিন্তু বাবার মতো তাগদ ছিলো না আমার। ছোটবেলা থেকেই আমি খুব দুবলা শীর্ণকায় ছিলাম। অতবড় মশক ভর্তি পানি, বাবা অবলীলায় বয়ে বেড়ালেও, আমি কিন্তু বইতে পারতাম না। কয়েক পা চলতেই হাঁপিয়ে পড়তাম।

শেষে ঠিক করলাম কায়িক পরিশ্রমের কাজ ছেড়ে দিয়ে আমি ফকির দরবেশ হয়ে আল্লাহর নামগান গেয়ে বেড়াবো। অনুগ্রহ করে যে যা দেয় তা দিয়েই কোনও রকমে জীবন ধারণ করবো।

একটা ভিক্ষাপাত্র সম্বল করে দোরে দোরে মেগে বেড়াই এবং চলতে চলতে ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে পড়লে এক মসজিদে প্রবেশ করে আল্লাহর পায়ে নিজেকে সঁপে দিয়ে শুয়ে খানিকটা ঘুমিয়ে নিই। সারাদিন ধরে সামান্য যা কিছু সংগ্রহ হয় তা দিয়ে রাত্রে একবার মাত্র আহার করি। যে-দিন কিছু জোগাড় করতে না পারি দু আঁজলা পানি খেয়েই পরিতৃপ্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

মাঝে মাঝেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকতাম কোনও মসজিদের এক প্রত্যন্তে। কেউ দয়াপরবশ হয়ে একটা দিরহাম দিয়ে গেলে তাই দিয়ে দু’একখানা রুটি কিনে খেতাম।

শুকনো রুটি চিবিয়ে চিবিয়ে জিভ একেবারেই ভোতা হয়ে গিয়েছিলো। আশায় আশায় থাকতাম, যদি কোনও পয়সাওলা মানুষ একটু দয়া দেখিয়ে গোটাকয়েক দিরহাম ছুঁড়ে দিয়ে যায় তবে ভালোমন্দ কিছু খেয়ে পরিতৃপ্ত হবো। তেমন ঘটনা যে আদপেই ঘটতো না তা নয়, মাঝে মাঝে মোটামুটি ইনামও জুটে যেত কপালে।

রাত্রি শেষ হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

 

আটশো বত্রিশতম রজনীতে আবার সে বলতে শুরু করে :

একদিন কিছু পয়সা হাতে পেয়েই বাজারের দিকে ছুটে চললাম অনেক দিন বাদে বেশ রসনা তৃপ্ত করে ভালোমন্দ কিছু খাবো পেটভরে। বাজারে এসে পৌঁছতে দেখলাম লোকে লোকারণ্য। একটা বাঁদরকে ঘিরে কয়েক শো মানুষ মজা দেখতে হুড়পাড় লাগিয়েছে।

ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে বুঝতে পারলাম বাঁদরটাকে দিয়ে নানারকম মজাদার তামাশা দেখিয়ে ওর মালিকটা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে। উদ্দেশ্য বাঁদরটাকে সে বিক্রি করতে চায়।

আমার হাতে তখন পাঁচটা চকচকে দিরহাম। ভালোমন্দ খাব বলে বাজারে এসেছি। সেই মুহূর্তে আমি ঠিক করলাম লোকটা যদি পাঁচ দিরহামে রাজি হয় তবে বাঁদরটা আমি কিনে নেব তার কাছ থেকে।

দর কষাকষি করতে শেষ পর্যন্ত সে ঐ পয়সাতেই বাঁদরটাকে দিয়ে দিলো আমাকে। বাঁদরটা সঙ্গে নিয়ে আমি মসজিদে ফিরে এলাম। কিন্তু আমার বা তার কারুরই জায়গা হলো না সেখানে। অগত্যা আমার পরিত্যক্ত ভাঙ্গাচোরা বাড়িটাতে এসেই আবার আস্তানা গাড়তে হলো।

রাতটা কোনও রকমে কাটালাম, কিন্তু ক্ষুধা বড় পীড়া দিতে লাগলো। বাঁদরটাকে নিয়ে তামাশা দেখিয়ে পয়সা রোজগার করবো ধান্দা করেছিলাম। কিন্তু পেটের জ্বালা বড় জ্বালা, সেই মুহূর্তে মনে হলো পয়সাগুলো দিয়ে খাবার-দাবার না কিনে ঐ বাঁদর কেনাটা যুক্তিযুক্ত হয়নি।

আমি যখন এই সব ভেবে পস্তাচ্ছি, সেই সময় লক্ষ্য করলাম, বাঁদরটা গা-ঝাড়া দিয়ে একটা প্রকাণ্ড বন্য জানোয়ার হয়ে গেলো। এবং আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে পলকের মধ্যে সে আশ্চর্য সুন্দর এক নওজোয়ান যুবকে রূপান্তরিত হলো।

অমন খুবসুরত ছেলে আমি খুব কমই দেখেছি। অত্যন্ত বিনয়াবনত হয়ে সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললে, মাহমুদ সাহেব, শেষ কপর্দক দিয়ে আপনি আমাকে কিনেছেন, এখন এমন অবস্থা, আমাদের আহারাদির কোনও সংস্থান নাই আপনার।

আমি বললাম, খোদা হাফেজ, তোমার কথা বর্ণে বর্ণে সত্য। কিন্তু তুমি কে? কোথায় তোমার দেশ? এবং কেনই বা আমার কাছে এলে এইভাবে?

ছেলেটি বললো, অধৈর্য হবেন না, একসঙ্গে অত প্রশ্ন করবেন না? ঘাবড়ে যাবে। তার চেয়ে এই দিনারটা ধরুন এটা দিয়ে আপাততঃ কিছু খাবার-দাবার সংগ্রহ করে আনুন। আগে খানাপিনা করা যাক। তারপর সব কথার জবাব দেব আপনাকে।

আমি আর কোনও বাক্য ব্যয় না করে দিনারটা হাতে নিয়ে বাজারে চলে গেলাম। যত রকম মুখরোচক খানাপিনা পাওয়া গেলো সবই কিনলাম। ফিরে এসে দু’জনে বসে প্রাণভরে তৃপ্তি করে খেলাম সব। দীর্ঘ সময় অনাহারে থাকার জন্যই বোধহয় আহারের পর নিদ্রায় চোখ বুজে আসতে লাগলো। মেঝের ওপর একটা ছেড়া মাদুর পেতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম দুজনে।

কিন্তু ঘুম ভাঙ্গতেই আবার অবাক হলাম আমি। কি আশ্চর্য, এতক্ষণ যে সুদর্শন যুবকটির সঙ্গে আহার নিদ্রা সারলাম সে আবার যথাপূর্ব সেই বাঁদর হয়ে গেছে।

একটু পরে বাঁদরটারও ঘুম ভাঙ্গালো৷ এবং অদ্ভুত কায়দায় গা ঝাড়া দিতেই আবার সে সেই সুন্দর সুঠামদেহী যুবকে রুপান্তরিত হয়ে গেলো।

-মামুদ সাহেব, সে বললো, আমাকে যখন পেয়ে গেছেন, আপনার আর কোনও দুঃখ দুর্দশা থাকবে না। আপনি ইচ্ছে করলেই অতুল ঐশ্বর্যের মালিক হতে পারবেন। যাই হোক, প্রথমে এই পড়ো বস্তির আস্তানা ছেড়ে শহরের এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় একটি প্রাসাদোপম ইমারত ভাড়া করতে হবে। আর আপনার ঐ ফকির দরবেশের সাজ-পোশাক ফেলে দিয়ে শাহজাদার সাজে সাজতে হবে। যান আগে হামাম থেকে গোসল সেরে আসুন। আমি আপনার সাজ-পোশাক আনছি।

স্নানাদি সেরে ডেরায় ফিরে দেখি এলাহী ব্যাপার। ছেলেটি আমার জন্য বাজারের সবচেয়ে মূল্যবান সেরা একটি পোশাক নিয়ে এসেছে। সে বললো, নিন চটপট সেজে নিন তো।

আমি তার হুকুম তালিম করলাম। ছেলেটি বললো, বাঃ, চমৎকার লাগছে।

একেবারে শাহজাদা। মিশরের সুলতানের দু’টি কন্যা ছাড়া কোনও পুত্র-সন্তান নাই। আপনি তার কাছে গিয়ে সালাম কুর্ণিশ জানান। তিনি যখন আপনার অভিপ্রায় জানাতে চাইবেন, তখন তার হাতে এই ভেটের বাক্সটা তুলে দেবেন।

আপনার উপহার সামগ্রী দেখে সুলতান মুগ্ধ হবেন সন্দেহ নাই। কারণ খুব কম সুলতান বাদশাহর ঘরেই আছে এ বস্তু। তিনি আপনাকে তার পরমাসুন্দরী কন্যাকে গ্রহণ করতে অনুরোধ জানাবেন। তখন আপনি কি বলবেন তাকে?

আমি বললাম, এ তো খুব আনন্দের কথা। আমি রাজি হয়ে যাব।

আমি আর দেরি না করে তখুনি সুলতানের প্রাসাদে চলে গেলাম। খোজা এবং প্রহরীরা আমার জমকালো সাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে আমার আগমনের উদ্দেশ্য জানতে চাইলো। আমি যখন বললাম, মহামান্য সুলতানের জন্য কিছু ভেট এনেছি, তখন তারা আমাকে সাদর অভ্যর্থনা করে দরবার-কক্ষে নিয়ে গিয়ে হাজির করলো। যথাবিহিত কুর্ণিশ সালাম জানিয়ে সুলতানের সামনে বাক্সটি স্থাপন করলাম আমি।

সুলতান মহানুভব, আর এই ক্ষুদ্র সেলামীটুকু গ্রহণ করে বান্দাকে কৃতার্থ করুন, জাঁহাপনা।

সুলতান তার উজিরকে বললেন, বাক্সটা খোলো দেখি।

উজির বাক্সটির ডালা উন্মুক্ত করে সুলতানের সামনে ধরলো। তিনি বিস্ময় বিস্ফারিত চোখে দেখলেন, অমূল্য মণিরত্নরাজি-খচিত এক দুর্লভ অলঙ্কার।

—বাঃ, চমৎকার! এবার বলো তোমার কি অভিপ্রায়? আমি তোমার মনঃস্কামনা পূর্ণ করবো।

আমি বিস্ময়ানত হয়ে প্রার্থনা জানালাম, মুক্তহস্ত শাহেনশাহর জগৎ জোড়া খ্যাতি, কিন্তু এ অধমের আকাঙ্ক্ষা বেশি।

সুলতান বললেন যাই হোক, অসঙ্কোচে বলো, আমি তোমার অভিলাষ পূর্ণ করবো।

আমি বললাম, শাহেনশাহর পরমাসুন্দরী প্রথমা কন্যার পাণিপ্রার্থী ৮ আমি।

সুলতান এ কথার কোনও জবাব দিলেন না। আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে রইলেন অনেকক্ষণ। প্রায় ঘন্টাখানেক পরে তিনি ছোট্ট করে বললেন, বেশ, তাই পাবে।

তারপর প্রধান উজিরের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই শাহজাদার দাবি সম্পর্কে তোমার কি অভিমত, উজির! আমার দিক থেকে কোনও আপত্তি নাই। ওর মুখের মধ্যে পরম সৌভাগ্যের ছবি দেখতে পেয়েছি। আমি।

উজির বললো, তা বটে, পাত্র হিসাবে অযোগ্য সে নয়, জাঁহাপনা। তবে জামাতা বলে কথা, আরও একটু ভেবে-চিন্তে দেখলে হয় না?

-কোন দিক থেকে ভাবার কথা বলছো?

—তার যোগ্যতার আরও কিছু নমুনা জানা দরকার। আপনি এক কাজ করুন জাঁহাপনা, ধনাগারের সমস্ত মণি-রত্নের মধ্যে সব থেকে যেটি সেরা সেটা দেখিয়ে ওঁকে বলুন, কন্যার দেনমোহর হিসাবে তার সমতুল্য একটি মূল্যবান রত্ন আপনার চাই। যদি তিনি তা এনে দিতে পারেন, নিঃসংশয়েই বলতে পারা যাবে, ইনিই আমাদের শাহজাদীর যোগ্যতম পাত্র।

উজিরের কথা শুনে আমার হৃম্প শুরু হয়ে গেলো। সুলতানের হুকুমে, কোষাগার থেকে সবচেয়ে বড় একটি হীরকখণ্ড এনে স্থাপন করলেন তার সামনে। সুলতান আমাকে আরও কাছে ডেকে বললেন, ভালো করে দেখ এই হীরেটি। শাহজাদীর শাদীর দেনমোহর হিসেবে এর তুল্য একটি হীরে আমি তোমার কাছ থেকে আশা করছি। যদি তুমি এনে দিতে পার, কথা দিচ্ছি, শাহজাদীকে তোমার হাতে সঁপে দেব তখুনি।

হীরেটাকে হাতে নিয়ে ভালো করে নেড়ে চেড়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখলাম। তারপর আগামীকাল আসবো বলে, দরবার ছেড়ে চলে এলাম আমার ডেরায়।

বাঁদরটা স্মিতমুখে জিজ্ঞেস করলো, কী, খবর শুভ?

আমি বিষণ্ণ মুখে বলতে পারলাম, নাঃ, কোনও আশা নাই। সুলতান দেনমোহর হিসাবে ইয়া বড় একটা হীরে চান। ও বস্তু মিলবে কোথায়?

বাঁদর বললো, ঘাবড়াবার কিছু নাই, হতাশ হবেন না। আমি সব ব্যবস্থা করে দেব। এমন জিনিস এনে দেব, সুলতানের চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যাবে। আজ রাত হয়ে গেছে, এখন আর বাইরে বেরুবো না। কাল আমি আপনাকে একটা কেন দশটা বড় বড় হীরে এনে দেব।

রাত্রি প্রভাত হয়ে এলো। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

 

আটশো তেত্রিশতম রজনীতে আবার সে বলতে থাকে :

পরদিন সকালে বাঁদর যুবকের রূপ ধরে সুলতানের বাগিচায় গিয়ে প্রবেশ করলো। এবং অল্পক্ষণ পরে ফিরে এসে পায়রার ডিমের মত প্রকাণ্ড আকারের দশটা হীরে তুলে দিলো আমার হাতে।

-দেখুন তো মালিক, সুলতানের হীরেটা এতো বড় ছিলো?

ঝলমলে হীরেগুলো দেখে আমি নেচে উঠলাম, না না, এগুলোর চেয়ে সেটা অনেক অনেক ছোট ছিলো।

দরবারে এসে যথাবিহিত কুর্ণিশাদি জানিয়ে বিনয়-বিগলিত কণ্ঠে আমি বললাম, জাঁহাপনা দুনিয়ার মালিক, আমি অতি দীন—আমার এই সামান্য প্রণামী গ্রহণ করে ধন্য করুন, বন্দেগী।

ছোট একটি মীনাকরা কৌটো তার সামনে রাখলাম। সুলতান উজিরকে ইশারা করতে সে কৌটোটা খুলে ধরলো তার সামনে।

সুলতান বিস্ময়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার মুখের দিকে। তারপর উজিরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এবার-এখন কী করণীয় উজির?

উজির বললো, আর কোনও সংশয় নাই জাঁহাপনা। সত্যিই উনি বহুত বড় ঘরের সন্তান। আপনি শাদীতে সম্মত হোন। শাহজাদী ওঁরই প্রাপ্য।

তৎক্ষণাৎ কাজী এবং সাক্ষীসাবুদদের ডাকা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যে শাদীনামা তৈরি করে আমার হাতে তুলে দিলো তারা। আমি তো লেখাপড়া শেখার সুযোগ পাইনি জীবনে তাই আমার পরম সুহৃদ বাঁদর-যুবককে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। শাদীনামাটা তার হাতে দিয়ে বললাম, কি লেখা আছে পড়ে শোনাও।

আমার হয়ে সে শাদীনামার বয়ান উচ্চ কণ্ঠে পাঠ করে সভাকে শুনিয়ে দিলো। তারপর গলা খাটো করে আমার কানে কানে বললো, একটা কথা দিতে হবে।

আমি বললাম, দরকার হলে জান দিতে পারি। সে বললো, আমি না বলা পর্যন্ত শাদীর পর কয়দিন আপনি শাহজাদীর সঙ্গে সঙ্গম করবেন না।

আমি বললাম, বেশ, তাই হবে।

যথা আড়ম্বরে শাদীপর্ব শেষ হলো। বাসরঘরে শাহজাদীর সঙ্গে আলাপ পরিচয় করলাম। নানা গল্প-গুজবের মধ্যে আমাদের শাদীর প্রথম রাত্রি অতিবাহিত হয়ে গেলো। বাঁদর-যুবকের কথামতো তার সঙ্গে সহবাস করলাম না। এর পরে আরও দুটি রাত্রি নির্জলা উপবাসেই কাটালাম।

প্রতিদিন সকালে শাহজাদীর মা বেগমসাহেবা এসেকন্যার খবরাখবর নিয়ে যান। কন্যার দেহ অক্ষত রয়েছে দেখে তিনি প্রসন্ন হতে পারেন না। চতুর্থ দিন সকালে এসেও যখন তিনি কন্যার মুখে শুনলেন, সেরাতেও তার কুমারীত্ব নষ্ট হয়নি তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দিলেন।

হায় হায়, একি সর্বনাশ হলো আমার মেয়ের! এখন পাঁচজনের কাছে মুখ দেখাব কি করে আমি?

বেগমসাহেবা সুলতানকে জানালেন মেয়ের দুর্ভাগ্যের কথা। ক্রোধে ফেটে পড়লেন সুলতান, কী, এইভাবে আমার মেয়ের জীবনটাকে বরবাদ করে দেবে সে? এ সব আমি বরদাস্ত করবো না, বেগমসাহেবা। আজকের রাতটা শুধু দেখব, আজও যদি সে আমার মেয়ের সঙ্গে সঙ্গম

করে তবে ওর মুণ্ডু কেটে ঝুলিয়ে দেব এই প্রাসাদের সিংহদরজায়।

সুলতানের এই হুঁশিয়ারী শাহজাদীকে জানিয়ে গেলেন বেগমসাহেবা। এবং তার কাছ থেকে যথাসময়ে আমি জানতে পেয়ে শিউরে উঠলাম। ছুটে গেলাম বাঁদর-যুবকের কাছে, এখন উপায়? আজ রাতে যদি শাহজাদীর সঙ্গে সহবাস না করি আমার গর্দান যাবে যে?

বাঁদর যুবক হাসলো, ঠিক আছে, কোনও ভয় নাই। এখন যা করতে হবে আমি বাৎলে দিচ্ছি। আপনি আপনার বেগমের কাছে যান। গিয়ে তাকে বলুন, শাহজাদী তোমার ডান হাতের বাজুবন্ধটা আমাকে দিতে হবে। বলা বাহুল্য, তৎক্ষণাৎ তিনি তোমাকে ওটা দিয়ে দেবেন। ঐ বাজুবন্ধটা এনে আমাকে দিয়ে আপনি আপনার বেগমের সঙ্গে যত পারেন সঙ্গম সহবাস করবেন। আর আমার কোনও বাধা-নিষেধ থাকবে না।

রাত্রে আহারাদি শেষ হয়ে গেলে শাহজাদীর সখী সহচরীরা বিদায় নিলো। এবার আমরা শুতে যাব। শাহজাদীকে নিভৃতে পেয়ে বললাম, শাদীর পর চারটে কুমারী রাত কাটিয়েছি আমরা। নিশ্চয়ই তুমি আমার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে আছ! কিন্তু কথা দিচ্ছি আজ আমরা আনন্দের সাগরে

ভেসে বেড়াব। কী, রাজি?

শাহজাদী আরক্তিম হয়ে উঠলো। মুখে কিছু বলতে পারলো না, ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।

এবার আমি বললাম, তোমার কাছে সামান্য একটা জিনিস চাই।

শাহজাদী কথার অর্থ বোঝার জন্য আমার মুখের দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাকালো। আমি বললাম, তোমার ডান হাতের ঐ বাজুবন্ধটা আমাকে দাও।

কোনও কথা না বলে তখুনি সে বাজুবন্ধটা খুলে আমার হাতে তুলে। দিলো। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা কর, আমি আসছি।

বাজুবন্ধটা নিয়ে সোজা চলে এলাম বাঁদর-যুবকের কাছে, এই যে, সেই বাজুবন্ধ।

বাজুবন্ধটা দেখে ওর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে নেচে। উঠলো, ঠিক আছে, এবার আপনি আপনার বেগমের। ঘরে চলে যেতে পারেন।

সে রাতে আমরা সত্যিকারের মধুযামিনী যাপন। করেছিলাম। সারারাত ধরে আমরা দুজনে দুজনের মধ্যে হারিয়ে যেতে পেরেছিলাম।

রতিরঙ্গ শেষ করে এক সময়ে পালঙ্কের দুপাশে দু’জনে ঢলে পড়েছিলাম।

কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম বলতে পারবো না; কিন্তু এক সময় বুঝতে পারলাম, কে যেন আমার দেহ থেকে শাহজাদার সাজ-পোশাক খুলে নিয়ে আবার সেই দীন ভিখারী ফকির দরবেশের শতছিন্ন আলখাল্লা পরিয়ে রেখেছে। ঘরের স্তিমিত আলোটা বাড়িয়ে দিলাম। না, আমার কোনও ভুল হয় নি, সত্যিই আমি আর শাহজাদা মামুদের শাহী সাজ-পোশাকে সজ্জিত নেই। কে যেন আমাকে ছোঁড়া ময়লা পোশাক পরিয়ে দিয়েছে। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না তখন। সত্যিই কি স্বচক্ষে দেখছি! না, এখন এসব স্বপ্নের ঘোর? কী এক অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম ঘরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত অবধি। অবশেষে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। রাত তখনও শেষ হতে কিছু বাকী ছিলো, আমি আর থাকতে না পেরে, শাহজাদীকে না জাগিয়ে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে প্রাসাদ ছেড়ে পথে নেমে পড়লাম।

তখন আমি উদ্ৰান্ত দিশাহারা। কোথায় চলেছি, কেন চলেছি কিছুই জানি না। এলোপাতাড়ি চলতে চলতে এক সময় এক মূর যাদুকরের বৈঠকখানার সামনে এসে দাঁড়ালাম। বৃদ্ধ মূর একটা টুলে বসেছিলো। আমাকে কাছে ডেকে বললো, কি ব্যাপার, এই সাত সকালে কোথায় চলেছ?

আমি তাকে আমার দুর্ভাগ্যের কাহিনী খুলে বললাম, ঐ সুদর্শন বাঁদর যুবকটি আসলে কোনও মানব-সন্তান নয়। ও হচ্ছে জীন। সুলতানের জ্যেষ্ঠ কন্যার ওপর লোভ ছিলো অনেক দিন ধরে। কিন্তু কিছুতেই কায়দা করতে পারছিলো না। তার কারণ, শাহজাদীর ডান হাতে একটা মন্ত্রঃপুত বাজুবন্ধ ছিলো। সেই পবিত্র কবজের দরুণ সে তার কাছে ঘেঁষতে পারছিলো না। তোমাকে দিয়ে অতি সুকৌশলে ঐ বাজুবন্ধটা সরিয়ে ফেলতে পেরেছে। এখন তার পোয়াবার। শাহজাদীকে কজায় পাওয়ার পক্ষে আর কোনও অন্তরায় রইলো না। তোমাকে দিয়ে তার উদ্দেশ্য হাসিল করার পর আবার তোমাকে দীন ভিখারী সাজিয়ে প্রাসাদ থেকে বের করে দিয়েছে। এখন সে শাহজাদীকে মনের সুখে ভোগ করবে।

যাই হোক, আমি আশা করি ঐ শয়তান জীনটাকে শায়েস্তা করতে পারবো। ঐ আফ্রিদিটা আমাদের পরমপিতা সুলেমানের বিদ্রোহী বান্দাদের একজনের বংশধর। ওকে আমি উচিত শিক্ষা দেব।

এই বলে সে একখণ্ড বহু বিচিত্র আঁকিবুকি কাটা তুলোট কাগজ আমার হাতে দিয়ে বললো, এটা ধর। ভালো করে মন দিয়ে শোনো, তোমাকে যা করতে বলছি, ঠিক ঠিক সেইমতো কাজটা সমাধা করে আসবে। সোজা এই পথ ধরে উত্তর মুখে চলে যাও। যেতে যেতে এক সময় দেখবে একদল ফৌজ নিয়ে এক ফৌজদার চলেছে। তুমি তাকে সালাম করে এই কাগজখানা তার হাতে তুলে দেবে। তারপর তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হলে তোমার যা প্রাণ চায় আমাকে দিয়ে যেও।

বৃদ্ধকে সেলাম জানিয়ে তার নির্দেশ মতো হেঁটে চললাম সোজা উত্তর দিকে। সারাদিন সারারাত ধরে হেঁটে চললাম। পরের দিনও চলতে থাকলাম। আরও একটা দিন একটা রাত কেটে গেলো। পথ চলা আর শেষ হয় না আমার। কত গ্রাম প্রান্তর পার হয়ে গেলাম।

তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় এক বিশাল বিস্তীর্ণ মরুভূমির মধ্যে এসে উপনীত হলাম। রাত্রের মতো কোথায় দেহ রাখবো ভাবতে ভাবতে অগ্রসর হচ্ছি, হঠাৎ নজরে পড়লো একখণ্ড মরূদ্যান। ঠিক করলাম ঐ গাছের তলাতেই শুয়েই রাতটা কাটিয়ে দেব।

কাছে যেতে বুঝতে পারলাম, যাকে দূর থেকে সুন্দর মরূদ্যান বলে মনে হয়েছিলো আসলে তা কাশ আর উলুখাগড়ার এক ঘন বনবাদাড়। যাই হোক, উপায় নাই, ওখানেই একটু জায়গা সাফ করে বসলাম।নানা জাতের রাতচরা পাখীদের বিচিত্র আওয়াজে কানে তালা ধরে গেলো। মাঝে মাঝে দু-একটা পাখী এমন বিদঘুটে শব্দ করতে লাগলো যেন মনে হয় মানুষ কিংবা দৈত্যরা মারামারি বা দাপাদাপি করছে। ভয়ে বুক শুকিয়ে গেলো। নির্ঘাৎ প্রাণটা এবার বেঘোরে যাবে। যাই হোক, আল্লাহ ভরসা করে চুপচাপ বসে রইলাম।

একটুক্ষণ পরে দেখি হাজার হাজার বাতির আলো আমার দিকেই ছুটে আসছে। আমি প্রমাদ গণলাম। হাত পা ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগলো। এবার মউ সামনে এসে গেছে।

ক্রমশঃ আলোগুলো আমার সামনে এসে আরও ঘেঁষাঘেষি হয়ে গেলো। সেই হাজার বাতির আলোকে তখন আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম, এক সিংহাসন অধিরূঢ় সুলতান আমার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কি যেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। ভয়ে হিম হয়ে গেছে রক্ত। পা দু’খানা ঠকঠক করে নড়ছে। সুলতান হাত বাড়িয়ে বললো, আমার সেই বৃদ্ধ মূর বন্ধুর কাগজখানা কোথায়?

আমি এবার খানিকটা ভরসা পেলাম। কাগজখানা তার হাতে তুলে দিতেই সে চটপট পড়ে নিয়ে তার সেনাপতিদের একজনকে হুকুম করলো, শোনো আতবাস, তুমি এক্ষুনি কাইরোয় চলে যাও।ঐ শয়তান জীনটাকে শিকলে বেঁধে আমার সামনে এনে হাজির কর।

এর প্রায় এক ঘণ্টা পরে সেই বাঁদর যুবকটিকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় এনে দাঁড় করালো সুলতানের সামনে। সুলতান কঠিন কণ্ঠে বললো, কেন এই মনুষ্য-সন্তানটির সঙ্গে প্রতারণা করেছ তুমি? বলল, কৈফিয়ত দাও? কেন তুমি তার মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছ? কেন? কী জবাব তোমার দেবার আছে এ সম্বন্ধে?

উদ্ধত জীনটি কিন্তু সুলতানের ধমকানিতে বিচলিত হলো না এতোটুকু। বললো, আমার হকের ধন আমি যেন তেন প্রকারেণ কজাগত করেছি। মনে করি না, তাতে কোনও অন্যায় হয়েছে আমার।

সুলতান বললো, ওসব কথা পরে শুনবো, আগে ঐ বাজুবন্ধটা একে ফিরিয়ে দাও তো।

বাঁদর যুবক বললো, আমি দেব না। ঐ শাহজাদীকে পাওয়ার জন্য আমি কত কষ্ট স্বীকার করেছি কতকাল ধরে। আমি কিছুতেই ফিরিয়ে দেব না বাজুবন্ধ। কারও ক্ষমতা নাই এটা ছিনিয়ে নেয় আমার কাছ থেকে।

এই বলে কোমর থেকে বাজুবন্ধটা বের করে গপ করে মুখে পুরে গিলে ফেললো।

কিন্তু সুলতানও ছাড়বার পাত্র নয়। বাঁদর যুবককে সে এক হাতে তুলে শূন্যে ছুঁড়ে দিলো। পাক খেতে খেতে সে পড়লো মাটিতে। আবার তাকে ছুঁড়ে দিলো, আবার সে আছাড় খেয়ে পড়লো মাটিতে। এইভাবে কয়েকটা আছাড় দিতেই হাড়গোড় ভেঙ্গে চুরচুর হয়ে অসাড় নিষ্প্রাণ হয়ে এলিয়ে পড়ে রইলো। আর উঠলো না। তখন সুলতান অদৃশ্য সেনাদের একজনকে বললো, ওর গলাটা চিরে বাজুবন্ধটা বের কর।

রাত্রি প্রভাত হয়ে এলো। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

 

আটশো চৌত্রিশতম রজনী :

আবার সে বলতে শুরু করে :

তারপর শুনুন ভাইসাহেব, ঐ বাজুবন্ধটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েই পলকের মধ্যে সেই সুলতান আর তার অদৃশ্য সৈন্যসামন্তরা কোথায় যে মিলিয়ে গেলো, আর দেখতে পেলাম না। এবং তখুনি সেই রাত্রির গাঢ় অন্ধকারে বেশ বুঝতে পারলাম, আমি আবার সেই শাহজাদার সাজ-পোশাকে সজ্জিত হয়ে গেছি। কি আশ্চর্য কাণ্ড! আরও অবাক হলাম, কোন্ যাদুবলে আমি আবার ফিরে এসেছি আমারই প্রিয়ার পালঙ্কশয্যায়। হাত বাড়িয়ে দেখলাম, রতিসুখ অবসাদে অসাড়ে নিদ্রামগ্ন হয়ে আছে সে। খুব সন্তর্পণে সযত্নে বাজুবন্ধটা পরিয়ে দিলাম ওর ডান। হাতে। কিন্তু সে জেগে উঠে আনন্দে জড়িয়ে ধরলো আমাকে।

পরদিন সকালে বেগমসাহেবা এবং সুলতানের মুখে হাসি ফুটলো। তাদের প্রাণাধিক কন্যার কুমারীত্ব নষ্ট করেছি শুনে আমাকে অনেক আদর সোহাগ জানালেন।

এরপর আমরা প্রেম ভালোবাসার সমুদ্রে গা ভাসিয়ে দিয়ে অনেক বছর কাটিয়ে দিলাম। তারপর একদিন আমার শ্বশুর দেহরাখলেন।মৃত্যুর আগে আমাকে তিনি মসনদে বসিয়ে সুলতান করে গেলেন। সেই থেকে আমি কাইরোর সুলতান হয়েছি, ভাইসাব। সবই আল্লাহর দোয়া।

সুলতান মামুদার কাহিনী শেষ করলেন। দরবেশ সুলতান মুগ্ধ বিস্ময়ে শুনছিলেন এতক্ষণ। বললেন, সত্যিই বিধাতা যার কপালে যা লিখে দিয়েছেন তা কেউ খণ্ডন করতে পারে না।

সুলতান মামুদের সৌহার্দ্য ও আতিথ্যে মুগ্ধ হয়ে কাইরোতেই বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিয়েছিলেন দরবেশ সুলতান।

শাহরাজাদ বললো, এরপর তিনটি পাগলের কাহিনী শুনুন, জাঁহাপনা।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ বাদশাহ শারিয়ার ও তার ভাই বাদশাহ শাহজামানের কাহিনী
২. ১.০২ গাধা, বলদ আর গৃহস্বামীর উপাখ্যান
৩. ১.০৩ সওদাগর আর আফ্রিদি দৈত্য
৪. ১.০৪ প্রথম শেখের কাহিনী
৫. ১.০৫ দ্বিতীয় শেখের কাহিনী
৬. ১.০৬ তৃতীয় শেখের কাহিনী
৭. ১.০৭ ধীবর আর আফ্রিদি দৈত্যের কাহিনী
৮. ১.০৮ উজির, সুলতান য়ুনান হেকিম রায়ানের কিসসা
৯. ১.০৯ সিনবাদ আর বাজপাখি
১০. ১.১০ শাহজাদা আর রাক্ষসী
১১. ১.১১ শাহজাদা আর রঙিন মাছ
১২. ১.১২ কুলি-ছেলে আর তিন কন্যা
১৩. ১.১৩ প্রথম কালান্দার ফকিরের কাহিনী
১৪. ১.১৪ দ্বিতীয় কালান্দর ফকিরের কাহিনী
১৫. ১.১৫ তৃতীয় কালান্দর ফকিরের কাহিনী 
১৬. ১.১৬ বড় বোন জুবেদার কাহিনী
১৭. ১.১৭ মেজো বোন আমিনার কাহিনী
১৮. ১.১৮ একটি স্ত্রীলোকের খণ্ডিত দেহ, তিনটি আপেল ও নিগ্রো রাইহান
১৯. ১.১৯ উজির সামস অল-দিন তার ভাই নূর অল-দিন ও হাসান বদর অল-দিন
২০. ১.২০ দর্জি, কুঁজো, ইহুদি হেকিম, বাবুর্চি, খ্রীস্টান দালাল
২১. ১.২১ খ্ৰীষ্টান দালালের কাহিনী
২২. ১.২২ বাবুর্চির কাহিনী
২৩. ১.২৩ ইহুদী হেকিমের কাহিনী
২৪. ১.২৪ দর্জির কাহিনী
২৫. ১.২৫ নাপিতের কাহিনী
২৬. ১.২৬ মধুমিতা আর আলী নূর-এর কাহিনী
২৭. ১.২৭ ঘানিম আইয়ুব আর কুৎ-অল-এর কাহিনী
২৮. ১.২৮ উমর অল-নুমান, তার পুত্র সারকান ও দু-অল মাকানের কাহিনী
২৯. ১.২৯ আজিজ আর আজিজার কাহিনী
৩০. ১.৩০ শাহজাদা তাজ অল-মূলক ও শাহজাদী দুনিয়া
৩১. ১.৩১ দু-অল মাকানের পুত্র কান মা-কানা
৩২. ১.৩২ চরস খোরের কাহিনী
৩৩. ১.৩৩ রাজহাঁস ও ময়ূর-ময়ূরী
৩৪. ১.৩৪ মেষপালক রাখাল আর একটি মেয়ে
৩৫. ১.৩৫ কচ্ছপ ও বকের কাহিনী
৩৬. ১.৩৬ নেকড়ে আর খেঁকশিয়ালের কাহিনী
৩৭. ১.৩৭ ইঁদুর আর নেউলের গল্প
৩৮. ১.৩৮ কাক ও কাঠবেড়ালীর কাহিনী
৩৯. ১.৩৯ আলী-ইবন বকর ও সুন্দরী সামস আল-নাহারের কাহিনী
৪০. ১.৪০ শাহজাদা কামার আল-জামান আর শাহজাদী বদর-এর প্রণয় কাহিনী
৪১. ১.৪১ খুশ বাহার ও খুশ নাহারের কাহিনী
৪২. ১.৪২ আলা অল-দিন আবু সামাতের কাহিনী
৪৩. ১.৪৩ বিদূষী হাফিজার কাহিনী
৪৪. ১.৪৪ কবি আবু নবাসের দুঃসাহসিক কীর্তি
৪৫. ২.০১ সিন্দাবাদের প্রথম সমুদ্র-যাত্রা
৪৬. ২.০২ সিন্দাবাদের দ্বিতীয় সমুদ্র-যাত্রা
৪৭. ২.০৩ সিন্দাবাদের তৃতীয় সমুদ্র-যাত্রা
৪৮. ২.০৪ সিন্দাবাদের চতুর্থ সমুদ্র-যাত্রা
৪৯. ২.০৬ সিন্দাবাদের ষষ্ঠ সমুদ্র-যাত্রা
৫০. ২.০৭ সিন্দাবাদের সপ্তম ও শেষ সমুদ্রযাত্রা
৫১. ২.০৮ সুন্দরী জুমুর‍্যুদ এবং আলী শার-এর কাহিনী
৫২. ২.০৯ নানা রঙের ছয় কন্যার কাহিনী
৫৩. ২.১০ তাম্র নগরীর কাহিনী
৫৪. ২.১১ ইবন আল-মনসুর এবং দুই নারীর কাহিনী
৫৫. ২.১২ কসাই ওয়াঁর্দার ও উজির-কন্যার কাহিনী
৫৬. ২.১৩ জামালিকার কাহিনী
৫৭. ২.১৪ বুলুকিয়ার কাহিনী
৫৮. ২.১৫ খুবসুরৎ নওজোয়ান সাদ-এর কাহিনী
৫৯. ২.১৬ হাসি-তামাশায় হারুন অল-রসিদ
৬০. ২.১৭ ছাত্র ও শিক্ষকের কাহিনী
৬১. ২.১৮ অদ্ভুত বটুয়ার কাহিনী
৬২. ২.১৯ হারুন অল রসিদের মহব্বতের কাহিনী
৬৩. ২.২০ কে ভালো—উঠতি বয়সের ছোকরা, না—মাঝ-বয়সী মরদ
৬৪. ২.২১ শসা-শাহজাদা
৬৫. ২.২২ পালিত কেশ
৬৬. ২.২৩ সমস্যা-সমাধান
৬৭. ২.২৪ আবু নবাস আর জুবেদার গোসলের কাহিনী
৬৮. ২.২৫ আবু নবাসের কবির লড়াই
৬৯. ২.২৬ গাধার গল্প
৭০. ২.২৭ আইনের প্যাঁচে জুবেদা
৭১. ২.২৮ স্ত্রী না পুরুষ
৭২. ২.২৯ বখরা
৭৩. ২.৩০ মাদ্রাসার মৌলভীর কিসসা
৭৪. ২.৩১ মেয়েদের সেমিজের কারুকর্মের কথা
৭৫. ২.৩২ পেয়ালার বাণী
৭৬. ২.৩৩ মসুলের বিখ্যাত কালোয়াতী গায়ক ইশাকের কাহিনী – বাক্সের মধ্যে খলিফা
৭৭. ২.৩৪ মুদ্যোফরাশ
৭৮. ২.৩৫ সুর্মার কাহিনী
৭৯. ২.৩৬ ছেলে অথবা মেয়ে
৮০. ২.৩৭ আজব খলিফা
৮১. ২.৩৮ গুলাবী এবং রোশন এর কাহিনী
৮২. ২.৩৯ কালো ঘোড়ার আশ্চর্য যাদু কাহিনী
৮৩. ২.০৫ সিন্দাবাদের পঞ্চম সমুদ্র-যাত্রা
৮৪. ৩.০১.১ ধূর্ত ডিলাইলাহ ও তার জালিয়াৎ কন্যা জাইনাবের কাহিনী
৮৫. ৩.০১.২ সওদাগর সিদি মুসিন আর খাতুনের কথা
৮৬. ৩.০১.৩ সেয়ানা চোর আলীচাঁদ-এর কিসসা
৮৭. ৩.০২ ধীবর যুদর অথবা আশ্চর্য যাদু-থলের কাহিনী
৮৮. ৩.০৩ আবু কাইর আর আবু শাইর-এর মজাদার কাহিনী
৮৯. ৩.০৪ দুই আবদাল্লার উপকথা
৯০. ৩.০৫ পীতাম্বর যুবকের কাহিনী
৯১. ৩.০৬ আনারকলি এবং বদর বাসিমের কিসসা
৯২. ৩.০৭ মিশরের ফাল্লাহ ও তার ফর্সা ছেলেমেয়েরা
৯৩. ৩.০৮ খলিফা ও জেলের কাহিনী
৯৪. ৩.০৯ বসরাহর হাসানের দুঃসাহসিক অভিযান
৯৫. ৩.১০ স্ত্রীলোকের চাতুরী
৯৬. ৩.১১ আবু অল হাসানের কাহিনী
৯৭. ৩.১২ জাইন মাওয়াসিফের মহম্মতের কিসসা
৯৮. ৩.১৩ কুঁড়ের বাদশার কাহিনী
৯৯. ৩.১৪ নওজোয়ান নূর এবং এক লড়াকু মেয়ের কিসসা
১০০. ৩.১৫ সপ্তম হীরক কন্যার কাহিনী
১০১. ৩.১৬.১ আলা অল-দিন ও আশ্চর্য চিরাগ বাতি
১০২. ৩.১৬.২ আলাদিনের চেরাগ (পার্ট ২)
১০৩. ৩.১৬.৩ আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ (পার্ট ৩)
১০৪. ৩.১৬.৪ আলাদিনের দৈত্য (পার্ট ৪)
১০৫. ৩.১৬.৫ আলাদিনের জাদুর চেরাগ (পার্ট ৫ / শেষ পর্ব)
১০৬. ৪.০১ হিতোপদেশের গল্প
১০৭. ৪.০১ হিতোপদেশের গল্প
১০৮. ৪.০২ গোলাপ-সুন্দরী ফারিজাদের কাহিনী
১০৯. ৪.০৩ কামর ও হালিমার কাহিনী
১১০. ৪.০৪ হারাম-আকিলের কাহিনী
১১১. ৪.০৫ সুলতান মহম্মদের ন্যায় বিচার
১১২. ৪.০৬ শেখ হাসান আবদাল্লার কাহিনী
১১৩. ৪.০৭ আবু কাশেমের অঙ্গবাস
১১৪. ৪.০৮ চরসের নেশায়
১১৫. ৪.০৯ ভ্রষ্টা নারী এবং তার নওজোয়ান নাগর
১১৬. ৪.১০ বৃদ্ধ কাজীর তরুণী বিবি
১১৭. ৪.১১ সুন্দরীর নূরের পাণিপ্রার্থীরা
১১৮. ৪.১২ মুতাবাকিল আল্লাহর বিত্ত বৈভব
১১৯. ৪.১৩ সুলতান মামুদের কাহিনী
১২০. ৪.১৪ বসরাহর আবু কাশেম
১২১. ৪.১৫ তিন কুলজী বিদ্যা-বিশারদের কাহিনী
১২২. ৪.১৬ সুলতান মাহমুদের বাঁদর
১২৩. ৪.১৭ তিন পাগলের কাহিনী
১২৪. ৪.১৮ আলিবাবা ও চল্লিশ চোর
১২৫. ৪.১৯ বাগদাদের বড় সেতুর উপরে অল-রসিদ
১২৬. ৪.২০ সিদি নুমানের কাহিনী
১২৭. ৪.২১ কাঠুরিয়া যুবরাজ
১২৮. ৪.২২ বৃদ্ধ শেখের কাহিনী
১২৯. ৪.২৩ খঞ্জ মাদ্রাসা শিক্ষকের কাহিনী
১৩০. ৪.২৪ অন্ধ ভিক্ষারীর কাহিনী
১৩১. ৪.২৫ গবেটচন্দরের কাহিনী
১৩২. ৪.২৬ তিন বোনের কাহিনী
১৩৩. ৪.২৭ তিন কন্যার কাহিনী
১৩৪. ৪.২৮ ফেরিওয়ালার তিন কন্যা
১৩৫. ৪.২৯ দামাসকাসের রূপবান সওদাগর
১৩৬. ৪.৩০ হাবিব হাবিবার কাহিনী
১৩৭. ৪.৩১ সর্দারের নষ্টাচরিত্রা বিবি
১৩৮. ৪.৩২ নফর ফিরুজের বিবি ও সুলতান
১৩৯. ৪.৩৩ অপরিণামদর্শী সিরিয়া সওদাগরের শিক্ষা
১৪০. ৪.৩৪ হারুন অল রসিদের গ্রন্থপাঠ
১৪১. ৪.৩৫ শাহজাদা হীরার কাহিনী
১৪২. ৪.৩৬ গোহা ও তার ইয়ার-বন্ধুরা
১৪৩. ৪.৩৭ তুফা অল কুলবের কাহিনী
১৪৪. ৪.৩৮ অল মালিক বাইবারসের দরবারে – দ্বাদশ সর্দারের কাহিনী
১৪৫. ৪.৩৯ চীন শাহজাদীর বাগানের সমুদ্র-গোলাপ
১৪৬. ৪.৪০ দজ্জাল বিবির অত্যাচারে দেশত্যাগী মারুফ-মুচির ভাগ্য-বিবর্তন
১৪৭. ৪.৪১ আলেকজান্দ্রা শহরের ধনী যুবকের কাহিনী
১৪৮. ৪.৪২ ফিন্দের দুই বীরাঙ্গনা কন্যা
১৪৯. ৪.৪৩ ফতিমার কাহিনী
১৫০. ৪.৪৪ কিণ্ডাইটের সম্রাট হজর ও তার স্ত্রী হিন্দের গল্প
১৫১. ৪.৪৫ আয়েশা কথিত কাহিনী
১৫২. ৪.৪৬ খলিফা ওমর ইবন অল-খাতাবের কাহিনী
১৫৩. ৪.৪৭ কুফার কবি মহম্মদ কথিত কাহিনী
১৫৪. ৪.৪৮ পরান্নভোজী তুফেনের কাহিনী
১৫৫. ৪.৪৯ খলিফা অল হাদীর অন্তিম দশা
১৫৬. ৪.৫০ অভিশপ্ত কণ্ঠহার
১৫৭. ৪.৫১ মশুলের গায়ক ইশাকের রোজনামচা
১৫৮. ৪.৫২ অল মামুন ও জুবেদা বেগমের কাহিনী
১৫৯. ৪.৫৩ জাফরের অন্তিম দশা
১৬০. ৪.৫৪ শাহজাদা জুঁই আর শাহজাদী বাদামের প্রেম উপাখ্যান

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন