২.৩৭ আজব খলিফা

ক্ষিতিশ সরকার

একদিন রাতে খলিফা হারুন-অল রসিদ-এর চোখে আর কিছুতেই ঘুম আসছিলো না। উজির জাফর অল বারম্যাকীকে ডেকে তিনি বললেন, আমার বুকে যেন একটা পাথর চেপে বসে আছে, জাফর। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছি না। আমি এখন বাগদাদের পথে পথে একটু ঘুরবো। তারপর চলো টাইগ্রিসের ধারে যাবো। বাকী রাতটুকু এইভাবে কাটানো ছাড়া আর উপায় নেই।

জাফর তখুনি খলিফাকে এক সওদাগরের ছদ্মবেশ পর্যালো। নিজেও আর এক সওদাগরের ছদ্মবেশ পরে মসরুর-দেহরক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে প্রাসাদের খিড়কীর দরজা দিয়ে পথে বেরিয়ে পড়লো। চলতে চলতে একসময় তারা টাইগ্রিসের উপকূলে এসে পড়ে।

নদীর ঘাটে একখানা ছোট্ট নৌকা। তার মাঝি এক বৃদ্ধ। খানাপিনা শেষ করে কম্বল মুডি দিয়ে নৌকার ছৈ-এর ভিতরে সে শোবার তোড়জোড় করছিলো। জাফর এগিয়ে গেলো, ও মাঝি ভাই, তোমার নৌকায় করে একটু বেডিয়ে নিয়ে আসবে? আঃ এই চাঁদনী রাত, এমন সুন্দর ফুরফুরে হাওয়া, তোফা লাগবে, কি বল, বুড়ো কত্তা? বেশিক্ষণ তোমাকে কষ্ট দেবো না, একটু হাওয়া খেয়েই ফিরে আসবো, এই নাও ধরে এই দিনারটা রাখো— এই রাতে এত তখলিফ হবে তোমার-

এ আপনি কি বলছেন সাহেব, বৃদ্ধ মাঝি ভীত চকিত হয়ে বলে, আপনারা কী সরকারের হুকুম জানেন না? ঐ যে দেখতে পাচ্ছেন না, খলিফা নৌকা-বিহারে বেরিয়েছেন। এখুনি এদিকে এসে পড়বেন।

খলিফা হারুন অল রসিদ জিজ্ঞেস করেন, তুমি সত্যিই জান, ঐ নৌকায় খলিফা নিজে আছেন?

বৃদ্ধ বলে, আল্লাহ সাক্ষী, তামাম বাগদাদে এমন একজনও কী কেউ আছে, একথা জানে না? ঐ দেখুন, খলিফা তার উজির জাফর এবং দেহরক্ষী মসরুরকে নিয়ে নৌকাখানা। এখানে এসে পড়লো বলে। এ ছাড়া নৌকায় আছে চাকর নকর বাঁদী এবং গাইয়ে, বাজিয়ে, নর্তকীরা। ঐ শুনুন, খলিফার ফরমান জারী করছে তাঁর সচিব; যে যেখানে আছো নদীর ভেতর থেকে বেরিয়ে যাও। তা-সে যেই হোক, ধনী, নির্ধন, ছোট বড়, জ্ঞানী বা নির্বোধ যে-ই এই হুকুম অমান্য করবে, তাকে নৌকার মাস্তুলে ঝুলিয়ে ফাঁসী দেওয়া হবে। সুতরাং যে যেখানে আছে। শিগ্‌গির কূলে উঠে পড়।

এই সময়ে রাত্রি শেষ হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

 

তিনশো চুরানব্বাইতম রজনী :

আবার সে বলতে শুরু করে।

খলিফা অবাক হয়ে জাফরকে বলেন, এ কী তাজ্জব ব্যাপার! এরকম কোন ফরমান তো আমি জারি করিনি। তাছাড়া গত এক বছরের মধ্যে নৌকাবিহারেও বের হইনি। কখনও।

জাফরও হতবাক হয়ে পড়ে। কী ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারে না। মাঝির হাতে সে দুটো দিনার গুঁজে দিয়ে বলে, নাও, নৌক খোলো। চলো, ঐ যে দেখছো, নদীর ভিতরে কতগুলো প্রায় ডুবুডুবু খিলান, ওর আড়ালে নিয়ে চলো নৌকাখানা। ওখানে থেকে খলিফার নৌকার সবকিছুই দেখতে পারবো আমরা। কিন্তু ওদের কেউ আমাদের দেখতে পারবে না।

খানিকক্ষণ না না করে শেষ পর্যন্ত রাজি হলো বুড়ো। তিনজনকে নৌকায় তুলে বেশ চতুর্যের সঙ্গে নৌকাটাকে ধীরে ধীরে ঐ খিলানের আড়ালে নিয়ে গিয়ে থামালো। একখানা কালো কাপড় এনে ঢেকে দিলো। ওদের সারা শরীর। এর ফলে একেবারেই আর দেখে ফেলার কোন আশঙ্কা রইলো না।

কিছুক্ষণেরর মধ্যেই সেই অজ্ঞাত। খলিফার বজরাখানা আরও নিকটতর হয়ে এলো। সঙ্গে সঙ্গে আলোয় আলোময় হয়ে উঠলো চারপাশ। বজায়ার পাটাতনে অসংখ্য ক্রীতদাস। লাল আর হলুদ রঙের উর্দি-পরা ছোট ছোট নফরগুলো বজরার ওপর সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ওদের মাথায় সাদা মসলিনের পাগড়ী। কতকগুলো বজরার চারপাশে চিরাগ হাতে পাহারা রত কয়েকজন। নদীর মাঝখানে নিরীক্ষণ করার চেষ্টা করছে–ধারে কাছে কোনও কেউ আছে কিনা।

এরা তিনজন খিলানের আড়ালে ঘাপটি মেরে সব দেখতে থাকে। তাদের অনুমান, নফর চাকর, ক্রীতদাসের সংখ্যা নেহাত কম করে হলেও দুশোর কম হবে না। বজরার পাটাতনের ঠিক মাঝখানে একটা বিরাট মঞ্চ। সেই মঞ্চকে বৃত্তাকারে ঘিরে তারা সারিবদ্ধ ভাবে দণ্ডায়মান। মঞ্চের ওপরে সোনার তখন্তু। সেই স্বর্ণ সিংহাসনে আসীন এক সুদৰ্শন যুবক। সাজে পোশাকে কায়দা-কেতায় সে যেন পুরোদস্তুর এক বাদশাহ। তার একপাশে ঠিক জাফর-এরই মতো চেহারার একটা মানুষ এবং অন্যপাশে একজন দেহরক্ষী তার হাতে খোলা তারোয়াল—মসরুরের কথা মনে করিয়ে দেয়।

খলিফা উত্তেজিত হয়ে বলেন, জাফর মনে হচ্ছে, এ আমাদেরই খানদানের কোনও ছেলে। হয় সে অল মামুন না হয় অল আমিন। আর দুজনের একজনকে কিন্তু বিলকুল তোমারই মতো দেখতে—না? আর ঐ লোকটা—আরে হ্যাঁ, ও তো মসরুরই মনে হচ্ছে! তাজ্জব কাণ্ড! আর দ্যাখ, জাফর ওই যে মাইফেল বসেছে-ঠিক যেন আমার জলসাঘরে গাইয়ে বাজিয়েরা গান বাজনা করছে, তাই না?

জাফর বলে, ইয়া আল্লাহ, এতো বিলকুল একই রকম সব। আমি তৃে কোনই ফারাক দেখতে পাচ্ছি না, ধর্মাবতার।

আস্তে আস্তে সেই আলো ঝলমল বজরাখানা ওদের সামনে দিয়ে আরও আগে এগিয়ে যায়। ক্রমে ক্রমে তার দৃষ্টিপথের দূর সীমাও অতিক্রম করে এক সময়। বুড়ো মাঝিটা এতক্ষণ শ্বাস রোধ করে পড়েছিলো। এবার সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচালো, বাকবা, বঁচা গেলো।

নৌকাটা আবার এনে ঘাটে ভেড়ালো মাঝি। ওরা তিনজন নৌকা থেকে নেমে কুলে দাঁড়ালো। খলিফা মাঝিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আচ্ছা মাঝি, এই দৃশ্য কী রোজই দেখ তোমরা? রোজ রাতেই এই খলিফা নৌকা বিহারে আসেন এইদিকে?

–একদম ঠিক; মালিক। রোজ রাতেই খলিফা তার সঙ্গী সাখী দলবল নিয়ে এই নৌকা বিহার করেন। এবং এই কারণে রাতের বেলায় কোনও নৌকা নদীর মাঝে থাকতে পারে না। এই ফরমান গত এক বছর ধরে চলছে।

খলিফা বলেন, আমরা বিদেশী-মুসাফির, এতসব খবর তো কিছু জানতাম না। যাইহোক, তোমার জন্যে আজ এক নতুন জিনিস চোখে দেখলাম। এসব দেখতে পাওয়া সাধারণ মানুষের কাছে তো সৌভাগ্যের ব্যাপার। আচ্ছা মাঝি আমরা কাল আবার আসবো, তোমাকে যদি গোটাদশেক দিনার ইনাম দিই, আমাদের জন্য একটু কষ্ট করবে?

মাঝির চোখ নেচে ওঠে, একশোবার মালিক, কষ্ট আর কী? কাল ঠিক সময় আমি নৌকা নিয়ে এই ঘাটে তৈরি হয়ে থাকবো। আপনারা নিশ্চিন্ত হয়ে চলে যান।

জাফর আর মসরুরকে সঙ্গে নিয়ে খলিফা প্রাসাদে ফিরে আসেন। তারপর বাকী রাতটা তিনি এই অদ্ভুত অজ্ঞাত খলিফার কাণ্ডকারখানা নিয়ে জাফরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কাটালেন।

পরদিন সারাদিন ধরে খলিফা উজির আমির অমাত্য আমলা এবং সেনাপতি পরিবৃত হয়ে দরবারের বিচার আচার প্রভৃতি নানা কাজে ব্যস্ত ব্যাপৃত থেকে সন্ধ্যার পর আবার সেই সওদাগরের ছদ্মবেশ পরে তৈরি হয়ে নিলেন। তারপর যথাসময়ে উজির জাফর এবং দেহরক্ষী মসরুরকে সঙ্গে নিয়ে টাইগ্রিসের দিকে রওনা হয়ে গেলেন। নদীর ঘাটে মাঝি তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। আর দেরি না করে তারা নৌকায় চেপে বসলে মাঝি তাদের নিয়ে সেই খিলানের পাশে গিয়ে লুকিয়ে রইলো। কখন সেই আলো ঝলমল বজরাটা আবার তাদের দৃষ্টিগোচরে আসবে তারই প্রতীক্ষা করতে থাকলো তারা।

এইভাবে অধীর আগ্রহে অনেকক্ষণ কেটে যায়। হঠাৎ তারা কান পেতে শুনলো, এক মধুর সঙ্গীত আর নূপুর নিক্কনের আওয়াজ ভেসে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নদীর এদিকটায় আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেলো সেই বজরা। তেমনি ভাবে সাজানো গোছানো ঠিক যেমনটি দেখেছিলো তারা গতকালে রাতে। সেই শ-দুই সুসজ্জিত নফর চাকর ক্রীতদাস পরিবেষ্টিত মঞ্চোপরি স্বর্ণসিংহাসনে উপবিষ্ট অজ্ঞাত খলিফা আর তার দুই পার্শ্বচর। সেই একই কায়দায় মাইফেল বসেছে মঞ্চের ওপর।

খলিফা বললেন, নিজের চোখে না দেখলে, কেউ আমাকে এই আজব কাহিনী শোনালে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারতাম না; জাফর। এখনও আমি আমার নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছি না!

এরপর মাঝির হাতে দশটা দিনার গুঁজে দিয়ে খলিফা তাকে বললেন, এই নাও ধর। এবার তোমার নৌকাখানা ঐ বজরার পাশে নিয়ে চলো দেখি, কত্তা। তোমার কোনও ভয় নাই, আমরা আছি। ওরা আমাদের নজরই করতে পারবে না। কারণ আমরা অন্ধকারে আছি। আর ঝলমলে আলোয় ওদের চোখ এখন ধাঁধিয়ে গেছে। আজ আমরা আরও কাছে থেকে দেখবো।

রাত্রি শেষ হয়ে আসছে দেখে শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

 

তিনশো পঁচানব্বইতম রজনীতে আবার সে বলতে শুরু করে :

বুড়ো মাঝি দিনারগুলো হাত পেতে নিলো। কিন্তু বজরার একেবারে কাছে ঘেঁষতে প্রথমে খানিকটা গররাজিই হয়েছিলো কিন্তু বারবার অভয় পাওয়ার পর সে ভয়ে ভয়ে এগিয়ে নিয়ে গেলো নৌকাখানা। বজরার পিছনে পিছনে চলতে থাকলো।

কিছুক্ষণ পরে ওরা একটা বাগানের পাশে এসে পড়ে। এইখানে নদীর পাড় ঢালু হয়ে নেমে গেছে। একটা ঘাট। বজরা ভিড়লো সেই ঘাটে। অজ্ঞাত। খলিফা তার সঙ্গী সাখী দল বল নিয়ে নেমে কুলে উঠে এলো।

একটু পরে বুড়ো মাঝিও ভিডিয়ে দিলো তার নৌকাখানা। খলিফাও জাফর আর মসরুরকে সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়লেন।

খলিফা দেখলেন অজ্ঞাত। খলিফার দলবলের লোকেরা মিছিল করে চলেছে। তাদের পুরোভাগে সেই অজ্ঞাত। খলিফা! ওরাও তিনজন ওদের অনুসরণ করে চলতে থাকে।

হঠাৎ কয়েকজন সিপাই তাদের দিকে তেড়ে আসে, এ্যাই, কোন হ্যায়? এখানে কেন এসেছে তোমরা? চালো; খলিফার কাছে চলো।

তিনজনকেই পাকড়াও করে নিয়ে যায় সেই খলিফার কাছে। সে প্রশ্ন করে, কে তোমরা?

জাফর জবাব দেয়, আমরা বিদেশী বণিক। এদেশে সবে এসেছি। পথঘাট সবই আমাদের অচেনা। তাই এলোপাথাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমরা তো বুঝতে পারিনি, খলিফার এই বাগিচা এখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ? আমরা পথ হারিয়ে এখানে ঢুকে পড়েছি। তারপরই আপনার সেপাইরা আমাদের পাকড়াও করেছে।

যুবকটি বলে, ঠিক আছে তোমরা যখন বিদেশী মুসাফির, তোমাদের কোনও ভয় নাই। তোমরা যদি মুসাফির না হতে তোমাদের গর্দান নিতাম আমি। যাক, এবার তোমরা আমার মেহেমান, আমাদের সঙ্গে এসো, আজকে রাতটা আমরা একসঙ্গেই খানাপিনা, আনন্দ ফুর্তি করবো।

ওরা তিনজন ওদের মিছিলের সামিল হয়ে চলতে চলতে একসময় এক বিশাল প্রাসাদের আঙ্গিনায় এসে পড়লো। খলিফা হারুন অল রসিদ অবাক হয়ে দেখলে, এ প্রাসাদ তার টাইগ্রিস তীরের বিলাস মহল-এর চেয়ে কোনও অংশে খাটো নয়। সদর দরজায় খোদাই করে লেখা একটি শায়ের :

একদিন ঝলমল করতো। এই প্রাসাদ
রঙে আর বাহারে,
আজ রং ফিকে হয়ে গেছে,
বাহার নিয়েছে বিদায়।
তবু এর খানদানের জৌলুস কমেনি একটুও,
মেহমান আর মালিকের মধ্যে ফারাক নাই কোনও।

একখানা বিরাট প্রশস্ত মহল। সারা ঘর। হলুদ রেশমের গালিচায় মোড়া। তার ঠিক মাঝখানে একখানা সোনার তখত। নকল খলিফা গিয়ে বসলো। সবাইকে চারপাশে নিচে গালিচায় বসতে বললো।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই খানাপিনার আসর জমে উঠলো। নানারকম লোভনীয় মুখোরোচক খাবারদাবার এসে গেলো। সকলেই হাতমুখ ধুয়ে বেশ পরিতৃপ্তি করে আহারাদি শেষ করলো। এরপর পরিবেশন করা হলো সরোব। সবারই সামনে পেয়ালা পূৰ্ণ করে দিয়ে গেলো বাঁদীরা। কিন্তু খলিফার সামনে মদের পাত্র ধরতেই তিনি ঘাড় নেড়ে বললেন, ‘আমার এসব চলে না।’ বাঁদী তখন জাফরকে, দিতে যায়। নকল খলিফা জাফরকে উদ্দেশ করে বললো, আপনার দোস্ত নিলেন না কেন?

জাফর বললো, উনি এসব অনেক কাল আগেই ছেড়ে দিয়েছেন।

—তা হলে, অন্য কিছু খান তিনি!–

সঙ্গে সঙ্গে নকল খলিফার ইশারাতে পিস্তার শরবৎ এনে দেওয়া হলো খলিফাকে। এবার আর তিনি আপত্তি করলেন না। বেশ রসিয়ে রসিয়ে চুমুক দিতে থাকলেন।

যখন মেীতাত বেশ জমে উঠেছে, নকল খলিফা তার হাতের ছডিখানা তিন বার নিচে ঠুকলো। আর সঙ্গে সঙ্গে সামনের দেওয়ালের একটা বন্ধ দরজা খুলে গেলো। একটি হাতীর দাঁতের ছোট্ট একটি সিংহাসন কাঁধে করে নিয়ে এলো দুজন নিগ্রো ক্রীতদাস। নকল খলিফার সিংহাসনের পাশে নামিয়ে রাখলো। খলিফা আবার তাকিয়ে দেখলেন, সেই সিংহাসনে উপবিষ্ট এক পরমাসুন্দরী শ্বেতাঙ্গিনী বাঁদী। তার সারা অঙ্গ থেকে বিচ্ছরিত হচ্ছে ভকেত সূর্যকিরণমালা। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো সে। হাতে তুলে নিলো একখানা ভারতীয় তারের বাদ্যযন্ত্র। মধুর কণ্ঠে সে গান ধরলো :

দূরে আমায় সরিয়ে রেখে কেমন করে শান্তি ছিলে প্রিয়?
বাঁচবো বলো কিসের টানে, মাঝে মাঝে সঙ্গ-সুধা দিও।
আতর দানী শূন্য আমার গুল বাগিচায় শুকিয়ে গেছে ফুল
হারিয়ে গেছে প্রেমের বাঁশি, তাইতো আমি পাইনে কোন কূল।

গান শেষ হতে না হতে নকল খলিফা বিকট আওয়াজ তুলে আর্তনাদ করে ওঠে। নিজের দেহের বাদশাহী সাজ-পোশাক কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলতে থাকে। দেহের দামী দামী রত্নাভরণ ছত্রাকারে ছড়িয়ে পড়লো চার ধারে। যুবকটি জ্ঞানশূন্য হয়ে লুটিয়ে পড়লো নিচে।

প্রহরীরা শশব্যস্ত হয়ে ছুটে আসে। নিজেদের গায়ের লাল কুর্তা খুলে তার নগ্ন দেহে চাপা দিয়ে ঢাকে।

খলিফা ও জাফর দু’জনেই বিস্ময়ে হতবাক! একি কাণ্ড! ছেলেটার সর্বাঙ্গে কী সাংঘাতিক চাবুকের দাগ? সোনার বর্ণ শরীর কষাঘাতের কালো-কালো দাগে দাগে ছয়লাপ হয়ে গেছে! খলিফা জাফরের কানে কানে ফিস ফিস করে বললেন, আমার মনে হচ্ছে, দাগী ফেরারী আসামী। না হলে সারা গায়ে অত চাবুকের দাগ কেন?

জাফর একটা কিছু বলতে যাবে এমন সময় তারা দেখলো, আবার নতুন। একপ্রস্থ শাহী সাজ-পোশাক এনে নফররা তাকে নতুন করে খলিফার সাজে-সাজালো। তারপর যথা পূর্বং আবার তাকে সিংহাসনে বসিয়ে দিলো। দিব্যি আবার সে সহজ স্বাভাবিক হয়ে গেলো। এমন যেন কিছুই ঘটেনি।

খলিফারা তিনজনে মিলে তখন ফিস ফিস করে কী সব বলাবলি করছিলেন। তাই দেখে নকল খলিফা জিজ্ঞেস করে, কী ব্যাপার, কানাকানি করে কী সব কথাবার্তা হচ্ছে?

বাদশাহও দেখেছেন, তাদের শাখ-শৌখিনতা বিলাস-বাসনও কম দেখেননি। তিনি। কিন্তু আজকের মতো এমন বিলাসিত তিনি দেখেন নি কখনও। আপনি এক পলকের মধ্যে আপনার যে সাজ-পোশাক ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করলেন কমসে কম তার ইনাম দশ হাজার দিনার হবে। অথচ এই ক্ষতির জন্য আপনার কোনই ভাব-বৈলক্ষণ্য দেখা গেলো না। তাই, তিনি আমাকে একটা শায়ের শোনাচ্ছিলেন :

তোমার ভাঁড়ার অফুরান, রিক্ত হয় না প্রভু।
আমার যাহা যায়, আর ফেরে না কভু॥

এই তোষামুদে গলে গেলো যুবক। জাফরকে সহস্ব স্বর্ণমুদ্রা এবং দামী একটা বাদশাহী পোশাক বকশিস দেওয়ার জন্য তার লোককে হুকুম দিলো সে।

এরপর আবার পান, গান এবং আলাপনের পর্ব চলতে থাকে।

রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

 

তিনশো ছিয়ানকবইতম রজনীতে আবার গল্প শুরু হয় :

কিন্তু খলিফা হারুন-অল-রাসিদ। সেই চাবুকের দাগের কথা কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারেন না। যতই তিনি ভাবেন, এই মোহিনী মধুর পরিবেশে ওসব কথা মনে করবেন না। কিন্তু কিছুতেই মন মানে না। বার বার ঘুরে ফিরে ঐ একটা কথাই তাকে কুরে কুরে বলতে থাকে। জাফরকে সে আবার ফিস ফিস করে বলে, জাফর, ওকে একবার জিজ্ঞেস করে জানো তো—দাগগুলো কীসের, কীজন্য?

জাফর, বলে, আমার মনে হয়, এখন ওসব কথা না তোলাই ভালো। একটু ধৈর্য ধরে থাকুন।

খলিফা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বড় বড় করে বলেন, এই মুহূর্তে, এখনই তুমি যদি তাকে সে-কথা জিজ্ঞেস না কর, জাফর, তবে আমার মাথা আর আববাসের তাজিয়ার কসম খেয়ে বলছি, প্রাসাদে ফিরে গিয়ে তোমার ধড়ে আর কাল্লা থাকবে না।

নকল খলিফা আবার নজর করলো, ওরা ফিস ফিস করছে।

–কী ব্যাপার, আবার কী গোপন শলা-পরামর্শ হচ্ছে?

জাফর বলে, না, তেমন খারাপ কিছু নয়, জাঁহাপনা।

—যাই হোক, আল্লাহর নাম নিয়ে বলুন, সত্যিই কী কথা বলছিলেন আপনারা?

জাফর বলতে থাকে, আমার দোস্ত বলছিলেন, আপনার সারা দেহে কালো কালো কীসের অত দাগ? কোনও ডান্ডা অথবা চাবুকের কী? দেখার পর থেকে তিনি অবাক হয়ে গেছেন। আসল ব্যাপারটা কী জািনবার জন্য আমার বন্ধু বিশেষ ব্যগ্র হয়ে উঠেছেন। তাঁর ধারণা, নিশ্চয়ই কোনও দুঃসাহসিক ব্যাপারে আমাদের জাঁহাপনা জড়িয়ে পড়েছিলেন।

যুবক হাসলো। —এই ব্যাপার! আপনারা মুসাফির মেহেমান, আপনাদের খুশি রাখাই আমার কাজ। সেই কারণে আপনাদের আজ শোনাবো। আমার সেই অদ্ভূত অভিজ্ঞতার কাহিনী।

সে বলতে থাকে :

আজ। আপনারা আমার মেহেমান, আমার মালিক। তা হলে সত্যি কথা শুনুন, আসলে আমি ধর্মাত্মা খলিফা হারুন-অল-রাসিদ নই। আমার পিতৃদত্ত নাম মহম্মদ আলী। আমার বাবা এই বাগদাদ শহরের এক সম্ভ্রান্ত সওদাগর– তিনি জহুরী সমিতির শাহবানন্দর ছিলেন।

আমার বাবা মারা যাওয়ার সময় প্রচুর ধন সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলেন আমার জন্য। সোনা চাঁদী, হীরে, চুনী, পান্না, মুক্তোয় বোঝাই করে রেখে গিয়েছিলেন সিন্দুক। এ ছাড়া অনেক ঘরবাড়ি ইমারৎ, জমি-জিরেৎ, বাগিচা, বাগান, দোকান গুদাম এবং এই বাদশাহী ঢংএর প্রাসাদখানার মালিক হলাম আমি। এই যে দেখছেন দাসী বাঁদী চাকর নফর পেয়াদা বীরকন্দাজ এ সবই তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি।

একদিন আমি আমার দোকানে বসে আছি—এমন সময় দেখলাম একটি সুসজ্জিত খচ্চরের পিঠে চেপে এক পরমাসুন্দরী কন্যা তিনটি সখি সহচরী সঙ্গে করে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। তাকে স্বাগত জানাতে আমি শশব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। সে নেমে আমার দোকানে এসে বসলো।

—আপনিই জহুরী মহম্মদ আলি?

—আমি শুধু মহম্মদ আলিই নই—আপনার বান্দাও।

মেয়েটি মধুর হাসি হেসে বললো, আপনার দোকানে খুব বাহারী ছোট মানতাসা আছে?

আমি বললাম, আমার দোকানে যা আছে সবই আপনাকে দেখাচ্ছি; যেটা পছন্দ, নিন। নিলে আমি খুব খুশি হবো। আর যদি আপনাকে খুশি করতে না পারি সে দুঃখ আমার জীবনে যাবে না।

সে-সময় আমার দোকানে সত্যিই খুব সুন্দর সুন্দর গহনাপত্র থাকতো। এক এক করে সব তাকে বের করে দেখলাম। সে-ও খুব আগ্রহ নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো সব। তারপর আমাকে বললো, আমি আরও ভালো কিছু খুঁজছিলাম। এর থেকে কিছু চলবে না!

আমার বাবা তার শেষ বয়সে এককোনা হীরে বসানো সুন্দর কাজ করা মানতাসা কিনেছিলেন, মনে পড়লো। সেই সময়ে তার দাম নিয়েছিলো একলক্ষ দিনার। অলঙ্কারখানা আমি সিন্দুকে যত্ন করে তুলে রেখে দিয়েছিলাম। সিন্দুক খুলে সে-খানা বের করে দেখলাম তাকে। খুব একটু গর্বের ভাব করেই বললাম, দেখুন দেখি, পছন্দ হয়। কিনা। অনেক সুলতান বাদশাহর ঘরেও এ বস্তুর জোড়া খুঁজে পাবেন না।

সুন্দরী দেখেই আনন্দে নেচে উঠলো, এই জিনিসই আমি জিন্দগীভর খুঁজে বেড়াচ্ছি—কত प्र?

-আমার বাবা এটা এক লক্ষ দিনার দিয়ে খরিদ করেছিলেন। আপনার যদি পছন্দ হয় আমি ধন্য হবো। দাম কিছু দিতে হবে না।

সে আমার দিকে গভীর আয়ত চোখ মেলে। অর্থবহ দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু সে মুহূৰ্তমাত্র। তারপর হো হো করে হেসে বললো, পুরো দাম দিয়েই আমি কিনতে চাই। আপনি যা দিয়ে কিনেছেন, তার চেয়ে আরও পাঁচহাজার বেশি দেবো আমি। এটা আপনার টাকার সুদ অথবা নাফা হিসেবেও ধরতে পারেন।

আমি বলি, এই অলঙ্কার এবং এর বর্তমান মালিক আজ থেকে দুই-ই আপনার হলো। এর বেশি কিছু আমার বলার নাই।

মেয়েটি আবার মধুর করে হাসলো, আমি তো দাম ঠিক করেই দিয়েছি আপনাকে। এর ট্রীট বাইরে কিছু হলে আমি আপনার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো। কিন্তু তা আমি চাই না।

সে আর তিলমাত্র অপেক্ষা না করে উঠে দাঁড়িয়ে দোকান থেকে নেমে সোজা গিয়ে খচ্চরে চেপে বসে চলে গেলো! যাওয়ার আগে সে বেশ একটু গলা চড়িয়েই বলে গেলো, মেহেরবানী করে গহনাখানা নিয়ে আপনি আমার প্রাসাদে আসুন, আমি আপনার দাম মিটিয়ে দেবো। আজ আমার এতদিনের সাধ পূর্ণ হতে চলেছে—তা সে শুধু আপনারই কল্যাণে।

আমি আর তার কথার ওপরে কোনও কথা বলতে সাহস করলাম না। কর্মচারীদের বললাম, দোকান বন্ধ করে মেয়েটিকে অনুসরণ করে যাও, দেখে এসো তার প্রাসাদ।

রাত্রি শেষ হতে থাকে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

 

তিনশো সাতানব্বইতম রজনীতে আবার সে শুরু করে :

পরদিন আমি তাকে অলঙ্কারটা দিলাম। সে আমাকে তার বসার ঘরে একটা টুলের ওপর বসতে অনুরোধ করে অন্দরে চলে গেলো।

আমি বসে আছি, একটুক্ষণ পরে অন্য একটি মেয়ে এলো। মালিক, আপনি যদি কিছু মনে না করেন, একটু ভেতরের ঘরে আসুন। অবশ্য আপনার মতো মানুষকে নিয়ে যাওয়ার মতো আমাদের ঘরদের তেমন নাই।

তাকে অনুসরণ করে পাশের আর একটা ঘরে গিয়ে আর একটা টুলে বসলাম। সে চলে গেলে।

তার কিছুক্ষণ পরে অন্য একটা মেয়ে এসে বললো, মালিক আপনি আমার সঙ্গে পাশের ঘরটায় আসুন। একটু বিশ্রাম করুন। তার মধ্যে আপনার টাকা তৈরি হয়ে যাবে।

সবে সে-ঘরে আমি ঢুকেছি, এমন সময় সামনের দরজার পর্দা ঠেলে চারটি কচি বাঁদী একখানা সোনার সিংহাসন বয়ে নিয়ে এসে আমার সামনে রাখলো। সেই সিংহাসনে উপবিষ্ট সেই মেয়েটি। গলায় গহনাটি পরে এসেছে।

বোরখা না-পরা অবস্থায় এই তাকে প্রথম প্রত্যক্ষ করলাম। আমার বুকের মধ্যে ধড়াস ধড়াস করতে লাগলো। মনে হলো, তখুনি বুঝি আমি পাগলের মতো চিৎকার দিয়ে উঠবো।

সুন্দরী তার দাসীদের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে ইশারা করতেই তারা পর্দার ওপারে অদৃশ্য হয়ে গেলো। তখন সে উঠে এসে দাঁড়ালো আমার সামনে।

—তুমি আমার চোখের মণি, তোমার মতো সুন্দর আর কাউকেই দিখিনি আমার জীবনে। আমি তোমাকে দেখামাত্র মন প্ৰাণ সঁপে দিয়েছি। আর তুমি কিনা নিষ্ঠুরের মতো আমাকে দূরে দূরে রাখতে চাইছো?

আমি কোনও রকমে বলতে পারি, দুনিয়ার সব রূপই তো তোমার দেহে বাধা পড়ে আছে, সুন্দরী। তুমি নিজে জানো না কী ঐশ্বর্যের মালকিন তুমি। আমি তো এমন রূপ। কখনও চোখে দেখিনি।

তারপর সে বললে, মহম্মদ আলি, আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। প্রথম যখন দেখেছি তখনই। তোমার দোকানে যা বলেছি, সে-সবই আমার ছল—তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে আসার কৌশলমাত্র।–

সে আমার আরও কাছে সরে আসে। দু’হাত বাড়িয়ে ۔۔ টেনে নেয় আমাকে। আমি তার বুকের কাছে বুক পেতে অধরে অধর রেখে তার চোখের অতলান্তি নীল সমুদ্রে অবগাহন করতে থাকি। বাহুর বন্ধনে তাকে আরও নিবিড় করে নিঃশেষ করে চেপে ধরি আমার বুকে। চুম্বনে চুম্বনে ভরে দিই ওর অধর কপোল চিবুক। সে-ও আমার দেহের সঙ্গে আরও একাত্ম হতে চায়। তার সুডৌল স্তন দুটি নির্মমভাবে নিষ্পেষিত করে ফেলতে চায় আমার বুকে। ওর দেহের স্পন্দন আমি অনুভব করতে পারি আমার রক্তচঞ্চলধমনীতে। ওর মুখে তখন কোনও ভাষা নাই। কিন্তু আমি আমার সকল সত্ত্বা দিয়ে ওর না-বলা কথার প্রতিটি শব্দ বুকের মধ্যে শুনতে পাই। সে বলছে, আমি তোমারই—ওগো আমি একান্তভাবেই তোমার। আমার এই সুতানুকা দেহ, সে-তে এতকাল ধরে তিল-তিল করে একমাত্র তোমার জন্যেই গড়ে তুলেছি। আমার এই জাগ্বত যৌবনের উদ্দাম উচ্ছল কামনার তরঙ্গ, সে তো তোমারই যৌবন-সৈকতে আছাড় খেয়ে খান খান হতে চায়—তা কি তুমি জান না?

আমি এখন, এই অবস্থায়, আমার এবং তার দেহমান যা একান্তভাবেই কামনা-আকুল-তা থেকে বঞ্চিত হওয়া বা করা, কোনওটাই সঙ্গত মনে করি না।

মুহূর্তের মধ্যে আমরা দু’জনে উত্তাল তরঙ্গ মালায় উথাল-পাথাল হতে হতে কোথায় কেমন করে তলিয়ে যাই-বুঝতে পারি না।

কতক্ষণ কী ভাবে কেটে গেছে, জানি না। চোখ মেলে দেখলাম, আমরা জড়োজডি করে পাশের পালঙ্কে শুয়ে আছি। ওর দেহটা আমার দেহে লেপটে রয়েছে তখনও। সেও চোখ মেলে তাকালো, বাকবা কী মায়ের দুধই তুমি খেয়েছিলে, মহম্মদ আলি। আমার শরীরের আর কিছু নাই। আমার এত সাধের কুমারী যৌবন, আজ তোমার কাছে সঁপে দিয়ে সার্থক হলো। এর আগে আমি কখনও কোনও পুরুষের ছায়া মাড়াই নি। তুমিই আমার প্রথম পুরুষ—প্রথম ভালোবাসা।

আমি বলি, আমার জীবনেও তুমিই প্রথম মেয়ে—আমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলে-ভালোবাসা করতে শেখালে

—কিন্তু আমি কে? কী আমার পরিচয়, কই কিছুই তো জানতে চাওনি মহম্মদ? তুমি কি ভেবেছো, আমি বাগদাদের এক বোরখা পরা বেবুশ্যা-ইশারায় ডাকলেই যাদের অঙ্ক-শায়িনী করা যায়? অথবা ভারী পর্দার আড়ালের যে-সব কাম-কাতর বিবি–বেগম মালিকের অনুপস্থিতির মওকায় খিড়কীর দরজা খুলে জোয়ান মরদকে ঘরে ঢোকায়-তাদের কেউ একজন? না গো না, আমায় তুমি তেমন খারাপ ভেবো না। আমি তোমায় শুধু দেহ নয়, মন-প্ৰাণ দিয়ে ভালোবাসি। আজ সোধে তোমায় ঘরে ডেকে এনে স্বেচ্ছায় দেহ-দান করলাম বলে আমাকে খাটো করে দেখোনা, সোনা। আমি কোনও দিক থেকেই ছোটো নই। আমার বাবা-ইয়াহিয়া ইবন খালিদ আল-বারিমাকী! আমি খলিফার উজির জাফরের ছোট বহিন।

এই কথা শোনামাত্র আমার সারা শরীর হীম হয়ে আসে। চোখে সর্ষেফুল দেখতে থাকি। ভয়ে বুক কাঁপতে থাকে। নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপে জ্বলে পুড়ে মরি। হায় আল্লাহ, একি করলাম। আমি? কেন তার ডাকে চঞ্চল হয়ে ছুটে এলাম। এখন কী করে আমি জান। বঁচাই। এমন খানদানী ঘরের ইজৎ আমি নষ্ট করেছি-এ পাপ আমি কোথায় রাখবো?

দারুণ দুঃসহ যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠি আমি, এ তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে? আমি তো চাই নি? আমার কোনও দোষ নাই, কিন্তু! তুমিই আমাকে এই পথে নামালে

মেয়েটি হাসে, কে তোমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে? সব দায় আমার। তোমাকে যা বলেছি, তুমিই তাই করেছ। এতে তোমার কোনও গোস্তাকি নাই। আমি তোমাকে শাদী করবো-তোমার আপত্তি আছে?

আমি কেমন ভেবাচেকা খেয়ে যাই, শাদী? আমার সঙ্গে? আপত্তি? না না, আমার কেন ষ্টীয় আপত্তি থাকবে? আমি রাজি। কিন্তু তুমি? তুমি নিজে তোমার শাদী দিতে পারো নাকি?

—হ্যাঁ পারি। আমি নিজেই আমার মালিক। আমার মতামতের উপরে কারো কোনও কথা বলার এক্তিয়ার নাই। আমার কথাই শেষ কথা। এখন তুমি বলো, রাজি কি, না?

আমি তৎক্ষণাৎ ঘাড় নেড়ে বলি, বললাম তো আমি রাজি-রাজি-রাজি।

তক্ষুণি কাজী এলো। শাদী নামা তৈরি হলো। আমার হবু বিবি কাজী এবং সাক্ষীদের বললো, এ হচ্ছে, মহম্মদ আলী, এই শহরের পূর্বতন শাহবানন্দরের ছেলে, একটি এক লক্ষ টাকার অলঙ্কার দিয়ে আমাকে শাদী করার প্রস্তাব করেছে। আমি তাতে রাজি।

সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষীরা শাদী নামায় সই-সবুদ করে নিজেদের পাওনা-গণ্ডা নিয়ে বিদায় হলো।

আমরা তখন সেই নিভৃত নিরালা কক্ষে দুজনে একা। মুখোমুখি বসে রইলাম-অনেকক্ষণ। অনেক মনের কথা বললাম আমরা। এইভাবে আরও ঘনিষ্ট আরও নিবিড় হতে থাকলাম আমরা। আরও মনের কাছাকাছি হয়ে এলাম।

দাসীরা সুরাপত্ব এনে বসিয়ে দিলো আমাদের সামনে। পেয়ালা পূর্ণ করে আমার অধরে ধরে সে। আঙুরের মতো টসটসে রসে ভরা তার বিম্বাধর এগিয়ে আসে। আমি সুরাও পান। করি, সুধাও খাই। একই সঙ্গে।

দুনিয়াটা আমার চোখের সামনে নানা রঙের ফুল হয়ে ফুটে ওঠে। যা দেখি যা ভাবি—সবই মধুর সবই সুন্দর মনে হয়।

নেশোটা যখন বেশ জমে ওঠে, সে বীণা তুলে নিয়ে গাইতে থাকে। তার গানের মূৰ্ছনায় হৃদয়ে বসন্তের ছোয়া লাগে।

গান শেষ হলে খানা-পিনা শেষ করে আমরা বাসর-শয্যায় শুয়ে পড়ি।

রাত্রি শেষ হতে চলেছে দেখে শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

 

তিনশো আটানব্বইতম রজনীতে আবার সে বলতে শুরু করে :

এক এক করে তার দেহের সব আবরণ আমি খুলে দিই। অবাক নয়নে আমি তার মুক্তোর মতো নগ্ন নিটোল নিখুঁত সুন্দর শরীরখানা দেখে মুগ্ধ হই। আহা, বিধাতার একি অপূর্ব যাদু!

সেদিনের সে মধু-যামিনীর স্মৃতি আমার জীবনে আজও অক্ষয় 戟 হয়ে আছে। শুধু সেই একটি রোতই নয়, তারপর আরও অনেক রাত্রি মধুময় হয়ে উঠেছিলো—তার হাসি, গানে, আদর, সোহাগ, আর সুরত-রঙ্গে।

এইভাবে পুরো একটা মাস কেটে গেলো। আমরা দুজনে দুজনকে এক পলকের জন্যও ছেড়ে থাকলাম না। সারা রাত শুধু নয়, সারাদিনও ছিলো সে আমার শয্যাসঙ্গিনী। আমার ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকান-পাট, খন্দের-মহাজন, কেনা-বেচা সব ভুলে তাকে বুকে করে পড়ে রইলাম। সেই পালঙ্ক-শয্যায়।

এরপর একদিন সকালে সে আমাকে বললো, আজ আমি হামামে যাবো। গোসল করবো। কিন্তু প্রিয়তম, তোমাকে চোখের আড়াল করে আমি এক মুহুৰ্তও বাঁচতে পারবো না।

আমি বললাম, আমারও সেই দশা। যাইহোক, হামাম থেকে তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে এসো। আমি তোমার জন্যে অধীর হয়ে বসে থাকবো।

সে আমাকে বলে গেলো, আমি যাবো। আর আসবো। তুমি সোনা, এখানে ঠিক এমনিভাবে চুপটি করে বসে থাকে। এক-পা কোথাও যাবে না। আমি এসে যদি দেখি, তুমি নাই, তুলাকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দেবো কিন্তু।

আমি বললাম, তোমার ভাবনার এত কী দরকার। নিশিচন্ত মনে গোসল করতে যাও। ফিরে এসে দেখবে, বান্দা এখানে ঠিক এমনি করেই বসে আছে তোমার পথ চেয়ে।

আমার বিবি হামামে চলে যেতেই ও-পাশের দরজার পর্দা সরিয়ে এক বৃদ্ধ ঘরে ঢুকলো। আমার সামনে এসে বিনীতভাবে বললো, খলিফার বেগম জুবেদা আপনাকে তলব করেছেন। এখুনি আপনি একবার তার সঙ্গে দেখা করুন। এই তার ইচ্ছা!

আমি বললাম, কিন্তু এখন তো আমি এখান থেকে যেতে পারবো না কোথাও। আমার বিবি হামামে গেছেন, তিনি ফিরে না। আসা পর্যন্ত আমার নড়ার উপায় নাই।

বৃদ্ধা শঙ্কিত হয়ে উঠলো, সর্বনাশ, আপনি তবে যাবেন না? বেগম জুবেদা একথা শুনলে আপনার গর্দান যাবে যে! আপনি কী তার মেজাজের কথা জানেন না কিছু?

আমি বললাম, আমি কেন, সারা বাগদাদের সবাই জানে বেগম জুবেদা ভীষণ জেদী একরোখা। তার জবান দিয়ে একবার যা বের হবে তা অক্ষরে অক্ষরে পালিত না হয়ে কোনও উপায় নাই। কিন্তু এ অবস্থায়, আমি আমার বিবির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, সে ফিরে না। আসা পর্যন্ত আমার কী যাওয়া সঙ্গত হবে?

বৃদ্ধ বলে, নিজের ঘরের বিবি তাকে যা হোক করে বোঝালে ঠান্ডা হবে, কিন্তু বেগম জুবেদা কুপিত হলে জানে বঁচা মুসকিল হবে। এখন আপনিই ভেবে দেখুন, কী করবেন? যদি যেতে চান আমি আপনাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো। আর যদি না যান, আমি একই ফিরে যাবো তার কাছে। আমার যা বলার বলবো তাকে। তারপর.

আমার তখন হৃদিকম্প শুরু হয়ে গেছে। আমি বললাম, ঠিক আছে চলুন, আমি যাবো।

বেগম জুবেদা আমাকে স্মিত হেসে স্বাগত জানালেন। একটি আসন দেখিয়ে বসতে ইশারা করলেন।

ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেছি আমি। কলের পুতুলের মতো একটি গদী আঁটা কুর্শিতে বসলাম। তাঁর মুখের দিকে সোজাসুজি তাকাবার মতো দুঃসাহস আমার ছিলো না। আড়চোখে তাকিয়ে একবার দেখে নিলাম তাকে। মুচকি মুচকি হাসছিলেন তিনি। হঠাৎ তার কণ্ঠস্বরে চমকে উঠলাম আমি।

-হ্যাঁ গো চোখের মণি, তুমিই নাকি আমাদের উজির-ভগ্নীর নাগর?

—আমি আপনার বান্দা, বেগমসাহেবা।

—আহা! চুক চুক, ওরা তবে এক বিন্দু বাড়িয়ে বলে নি দেখছি। যেমন তোমার গলার মিঠে আওয়াজ, তেমনি তোমার আদব কায়দা। নাঃ, জাফরের বোনের পছন্দ আছে বলতে হয়। বেছে বেছে আসলি হীরাই জোগাড় করেছে! তোমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু আরও খুশি করতে গেলে একটা গান শোনাতে হবে যে!

আমি বললাম, তেমন জানি না, তবে যা জানি তাই শোনাচ্ছি।

সেতার হাতে তুলে নিয়ে একটা ছোট্ট দেখে গান গাইলাম। ভালোবাসার গান। বেগম জুবেদা খুব খুশি হয়ে বললেন, আল্লাহ তোমাকে কোনও দিকেই বঞ্চিত করেন নি। যেমন রূপ তেমনি গুণ! এবার যাও, তোমার জনের কলিজা, প্ৰাণের বিবি হয়তো এতক্ষণে হামাম থেকে ফিরে তোমাকে দেখতে না পেয়ে বিরহে মূৰ্ছা গেছে। এখন যাও, পরে আবার সময় মতো ডেকে পাঠাবো। তখন এসো। যাও, তাড়াতাড়ি যাও তার কাছে। হয়তো সে ভাবছে, আমি তার ভালোবাসায় ভাগ বসাতে তোমাকে ভাগিয়ে এনেছি। এখানে।

লজ্জায় আরক্ত হয়ে ওঠে আমার গাল। আমি আর তাঁর মুখের দিকে তাকাতে পারি না। প্রায় ছুটেই বেরিয়ে যাই মহল থেকে।

আমি যখন আবার ফিরে এলাম আমার বিবি তখন মুখ গুঁজে পড়েছিলো বিছানায়। আমি ভয়ে ভয়ে তার পায়ের কাছে বসি। মৃদু কণ্ঠে ডাকি, ওগো শুনছো? সে উত্তর দেয় না। আবার ডাকি, শুনছো, আমি এসেছি। তবু সে কথা বলে না। আমি ওর পায়ের পাতায় ঠোঁট রেখে চুমু খাই— আদর করতে থাকি।

প্রচণ্ড জোরে সে একটা লাথি ছোঁড়ে। আমি ছিটকে মেজেয় পড়ে যাই। গর্জে ওঠে সে। তুমি একটা ঠগ প্রতারক। ভালোবাসা তোমার প্রাপ্য নয়। মহব্বতের মর্যাদা তুমি দিতে শেখোনি। কথার খেলাপ করে, ভালোবাসাকে পায়ে দলে তুমি গিয়েছিলে বেগম জুবেদার মনোরঞ্জন করতে? আল্লা কসম, তোমার মতো একটা অপদার্থ নির্লজ্জ বেহায়া মানুষের সঙ্গে আমি আমার গাঁটছড়া বেঁধে আর থাকবো না। তা সে লোকে যে যাই বলুক। আমার ভাবতেই ঘেন্না করছে, তোমার মতো একটা নষ্ট-চরিত্রের লম্পটকে শাদী করেছি। আমি এক্ষুণি যাবো বেগম। জুবেদার কাছে। মুখের ওপর আমি শুনিয়ে দিয়ে আসবে; অন্য মেয়ের ভাতারকে নিয়ে অত ফষ্টি নিষ্টি করা তার সাজে। না।

এই বলে সে রাগে। কাঁপতে কাঁপতে হাতে তুডি বাজায়। সঙ্গে সঙ্গে সামনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে হাবাসী নিগ্রো সাবাব। হাতে তার খোলা তরোয়াল।

—এই বিশ্বাসঘাতকের গর্দান চাই।

সে চিৎকার করে ওঠে। সাবাব এগিয়ে এসে আমার চোখে ফেটি বেঁধে ফেলে।

এই সময়ে রাত্রি প্রভাত হয়ে আসছে দেখে শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

 

তিনশো নিরানব্বইতম রজনীতে আবার গল্প শুরু হয় :

সেই সময় প্রাসাদের ছোট বড় কচি বুড়ো, সব দাস দাসী ছুটে আসে। এই এক মাস ধরে ওরা সবাই আমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলো। তারা সকলে একসঙ্গে করুণভাবে কাকুতি মিনতি জানাতে থাকলো, মালকিন এবারকার মতো মাফ করে দিন। আমাদের মালিকের কোনও দোষ নেই। তিনি বুঝতে পারেন নি, আপনি এত ক্ষিপ্ত হতে পারেন। মালিক তো আর জানতেন না, বেগম জুবেদা আপনার দুষমন। আপনার ক্ষতি করার জন্য তিনি রাতে ঘুমান না। আপনাদের এই হিংসা-হিংসীর খবর তিনি রাখবেন কী করে? সুতরাং তার কতটুকু দোষ? তাই আমরা সবাই মিলে আপনার কাছে তার প্রাণ-ভিক্ষা করছি।

-ঠিক আছে, আমার বিবি কিছুটা নরম হলো, তোমরা যখন বলছে, আমি ওকে জানে মারবো না। কিন্তু এমন সাজা দেবো, যা ওর জিন্দেগীভর ইয়াদ থাকে। আর যাতে সে কখনো জুবেদার ডাকে কুত্তার মতো ছুটে না যায় তার দরজায়, সেই ব্যবস্থা আমাকে করতে হবে।

এরপর আমার বিবির হুকুম মতো সাবাব তলোয়ার রেখে ডান্ডা তুলে নেয়। হাতে। সারা শরীরে পিটে পিটে আমার হাড়গোড় সব ভেঙ্গে চুর চুর করে দেয়। শুধু ডান্ডাই নয়, চাবুকের কষাঘাতেও জর্জরিত করে সে আমার সর্বাঙ্গ। তাও একটা দুটো নয়-পাঁচ পাঁচশো চাবুকের ঘা পড়েছিলো আমার এই দেহে।

এরপরে আমার কী অবস্থা হতে পারে নিশ্চয়ই আপনারা অনুমান করতে পারছেন। সারা শরীরটা আমার তালগোল পাকিয়ে একটা গোবরের ডেলার মতো হয়ে গিয়েছিলো। সেই অবস্থায় আমাকে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় জঞ্জালের বাক্সে ফেলে দিয়েছিলো সে।

আমার জ্ঞান ফিরে এলে কোন রকমে দু’পায়ে ভর করে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। অবশেষে হামাগুডি দিয়ে, ছেচড়ে কোনও রকমে আবার বাড়িতে এসে পৌঁছতে পেরেছিলাম।

বেদম জুরে বেহ্স হয়ে পড়ে রইলাম। ক’দিন। বাঁচার কোনও আশাই ছিলো না। একমাত্র তাঁর দয়াতেই প্ৰাণে বেঁচে গেলাম। দিক কয়েক পরে খানিকটা সুস্থ হয়ে একজন নাম করা হেকিমকে ডেকে আমার ভাঙ্গা হাড়-গোড়গুলো ঠিকঠাক করাতে পারলাম। তার মলম মালিশ আর দাওয়াই-এ আস্তে আস্তে সেরে উঠলাম একদিন।

অনেকদিন পরে আবার দোকান খুলে বসলাম। কিন্তু আমার মনে কোনও শান্তি ছিলো না। সারাক্ষণ শুধু আমার বিবির নিষ্ঠুর আচরণ আমাকে হনন করতে থাকলো। নিজেকে ভুলিয়ে রাখার জন্য আমি আমার দোকানের সব দামী দামী রত্নালঙ্কার বেচে সেই পয়সায় চারশো নফর চাকর ক্রীতদাস কিনে তাদের অসঙ্গে নিয়ে প্রতি রাতে টাইগ্রিসে বজরা ভাসিয়ে নৌকা বিহার করতে লাগলাম। এর ফলে আমার মনের দীনতা অনেক কমে আসতে থাকলো। নকল খলিফার সাজে সেজে লোক লস্কর নিয়ে প্রতি রাতে এই প্রমোদ বিহারে বেরিয়ে নিজেকে একজন কেউ-কেটা মনে হতে লাগলো। আস্তে আস্তে আমি ভুলে যেতে পারলাম আমার বিবির দুর্ব্যবহার।

এই আমার দুঃখের কাহিনী। আর এই কারণেই আমার সারা অঙ্গে ঐ কালো কালো দাগ।

যাইহোক, আজ রাতে আপনাদের সঙ্গ পেয়ে অন্য রাতের চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ পেয়েছি আমি।

সব শুনে খলিফা হারুন-অল-রাসিদ গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, আল্লাহই একমাত্র সত্য, তার ইচ্ছাতেই মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ হয়। আমাদের কার্য নসীবে কী যে তিনি লিখে রাখেন তা তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।

খলিফা উঠে দাঁড়ান, এবার তাহলে আমরা চলি।

জাফর এবং মসরুরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রসাদে ফিরে আসেন। জাফরকে প্রশ্ন করেন, আচ্ছা জাফর, বলতে পারো ঐ যুবকের এই দুর্ভাগ্যের জন্য প্রকৃতপক্ষে কোন নারীটি দায়ী?

জাফর বলে, আমার মতে আমার ভগ্নীর অন্যায় আচরণই এর জন্যে একমাত্র দায়ী।

পরদিন সকালে দরবারে প্রবেশ করে খলিফা জাফরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কাল রাতে যে ছেলেটি আমাদের আদর আপ্যায়ন করেছিলো তাকে এখানে হাজির করা।

উজির দরবার ত্যাগ করে কিছুক্ষণের মধ্যে সেই নকল খলিফাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলো। যুবক যথাবিহিত কুর্নিশ করে অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে রইল। খলিফার সামনে।

হারুন-অল-রাসিদ মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, এসো, আমার পাশে এইখানে এসে বসে। মহম্মদ আমি, আমি তোমাকে ডেকেছি কেন, জান? গতকাল রাতে তোমার প্রাসাদে তিনজন বিদেশী মুসাফিরকে তোমার জীবনের বড় অদ্ভুত এক করুণ কাহিনী নাকি শুনিয়েছিলে! সেই কাহিনী আমি তোমার নিজের মুখে শুনতে চাই।

যুবক বললো, বলার আগে আমি আপনার কাছ থেকে অভয় প্রার্থনা করি, জাঁহাপনা! আপনি আমাকে সাজা দেবেন না। সেই জন্যে মেহেরবানি করে আমাকে আপনার অভয়-রুমাল দিন।

খলিফা একখানা রুমাল ছুঁড়ে দিলো তার হাতে। এরপর যুবক তার জীবনের সেই সুখদুঃখের বিস্ময়কর কাহিনী আগাগোড়া খুলে বললো তার সামনে। এবং বলা শেষ হলে খলিফা প্রশ্ন করলেন, তোমার বিবির জন্য এখনও কী তোমার প্রাণ কাঁদে, আলি? আবার তাকে ফিরে পেতে চাও? তোমার প্রতি যে-দুর্ব্যবহার সে করেছিলো, সে-সব কী মন থেকে ধুয়ে মুছে ফেলে তাকে আবার আগের মতো করে গ্রহণ করতে পারবে?

যুবক বললো, এ ব্যাপারে ধর্মাবতার যা ভালো মনে করবেন তা-ই আমি মাথা পেতে নেবো।

খলিফা তখন জাফরকে বললেন, তোমার ভগ্নীকে নিয়ে এসে আমার কাছে!

‘যথা আজ্ঞা’ বলে জাফর দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায়। একটু পরে বোনকে সঙ্গে নিয়ে আবার দরবারে ফিরে আসে।

খলিফা বললেন, আমার সম্ভ্রান্ত আমির ইয়াহিয়ার কন্যা তুমি, ভালো করে এই যুবকের দিকে তাকিয়ে দেখ তো, একে চিনতে পারো কিনা?

ধর্মাবতার, সে বলে, মেয়েরা পরপুরুষকে দেখে চিনবে কী করে?

খলিফা মুচকি হেসে বলেন, ঠিক আছে, আমি ওর নাম বলছি—মহম্মদ আলি। ওরা বাবা এই শহরের এক সন্ত্ৰান্ত জহুরী ছিলেন। সে যাক, যা ঘটে গেছে তা ঘটে গেছে। এখন আমার ইচ্ছা, এই ছেলেটির সঙ্গে তোমার শাদী হোক।

মেয়েটি বললো, জাঁহাপনার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা। আপনি যা আদেশ করবেন। আমি তা শিরোধাৰ্য্য করে নেবো।

তৎক্ষণাৎ কাজী এবং সাক্ষী-সার্বুদদের ডেকে পাঠালেন খলিফা। তার সামনে আবার তাদের শাদী হলো।

মহম্মদ আলিকে খলিফা তার একান্ত প্রিয় এক আমির করে নিলেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মহম্মদ আলি খলিফার পাশে পাশে থেকে পরমানন্দে কালাতিপাত করেছিলো।

এই কাহিনী থেকে খলিফার আর একটা দিক আমরা জানতে পারলাম। বিচ্ছেদের মিলন ঘটিয়ে আবার সুখের জীবন ফিরিয়ে দিতে খলিফার চেষ্টার অন্ত ছিলো না। এইভাবে কত ভাঙা ঘর যে জোড়া লাগিয়ে ছিলেন তিনি তার সীমা সংখ্যা নাই।

শাহরাজাদ এক মুহূর্তের জন্য থামে। তারপর বলে, এ গল্পের এখানেই শেষ। এরপর আরও একটা ছোট কাহিনী শোনাবো আপনাকে। খুব চমৎকার গল্প–গুলাবী এবং রোশন এর কাহিনী বলছি শুনুন :

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ বাদশাহ শারিয়ার ও তার ভাই বাদশাহ শাহজামানের কাহিনী
২. ১.০২ গাধা, বলদ আর গৃহস্বামীর উপাখ্যান
৩. ১.০৩ সওদাগর আর আফ্রিদি দৈত্য
৪. ১.০৪ প্রথম শেখের কাহিনী
৫. ১.০৫ দ্বিতীয় শেখের কাহিনী
৬. ১.০৬ তৃতীয় শেখের কাহিনী
৭. ১.০৭ ধীবর আর আফ্রিদি দৈত্যের কাহিনী
৮. ১.০৮ উজির, সুলতান য়ুনান হেকিম রায়ানের কিসসা
৯. ১.০৯ সিনবাদ আর বাজপাখি
১০. ১.১০ শাহজাদা আর রাক্ষসী
১১. ১.১১ শাহজাদা আর রঙিন মাছ
১২. ১.১২ কুলি-ছেলে আর তিন কন্যা
১৩. ১.১৩ প্রথম কালান্দার ফকিরের কাহিনী
১৪. ১.১৪ দ্বিতীয় কালান্দর ফকিরের কাহিনী
১৫. ১.১৫ তৃতীয় কালান্দর ফকিরের কাহিনী 
১৬. ১.১৬ বড় বোন জুবেদার কাহিনী
১৭. ১.১৭ মেজো বোন আমিনার কাহিনী
১৮. ১.১৮ একটি স্ত্রীলোকের খণ্ডিত দেহ, তিনটি আপেল ও নিগ্রো রাইহান
১৯. ১.১৯ উজির সামস অল-দিন তার ভাই নূর অল-দিন ও হাসান বদর অল-দিন
২০. ১.২০ দর্জি, কুঁজো, ইহুদি হেকিম, বাবুর্চি, খ্রীস্টান দালাল
২১. ১.২১ খ্ৰীষ্টান দালালের কাহিনী
২২. ১.২২ বাবুর্চির কাহিনী
২৩. ১.২৩ ইহুদী হেকিমের কাহিনী
২৪. ১.২৪ দর্জির কাহিনী
২৫. ১.২৫ নাপিতের কাহিনী
২৬. ১.২৬ মধুমিতা আর আলী নূর-এর কাহিনী
২৭. ১.২৭ ঘানিম আইয়ুব আর কুৎ-অল-এর কাহিনী
২৮. ১.২৮ উমর অল-নুমান, তার পুত্র সারকান ও দু-অল মাকানের কাহিনী
২৯. ১.২৯ আজিজ আর আজিজার কাহিনী
৩০. ১.৩০ শাহজাদা তাজ অল-মূলক ও শাহজাদী দুনিয়া
৩১. ১.৩১ দু-অল মাকানের পুত্র কান মা-কানা
৩২. ১.৩২ চরস খোরের কাহিনী
৩৩. ১.৩৩ রাজহাঁস ও ময়ূর-ময়ূরী
৩৪. ১.৩৪ মেষপালক রাখাল আর একটি মেয়ে
৩৫. ১.৩৫ কচ্ছপ ও বকের কাহিনী
৩৬. ১.৩৬ নেকড়ে আর খেঁকশিয়ালের কাহিনী
৩৭. ১.৩৭ ইঁদুর আর নেউলের গল্প
৩৮. ১.৩৮ কাক ও কাঠবেড়ালীর কাহিনী
৩৯. ১.৩৯ আলী-ইবন বকর ও সুন্দরী সামস আল-নাহারের কাহিনী
৪০. ১.৪০ শাহজাদা কামার আল-জামান আর শাহজাদী বদর-এর প্রণয় কাহিনী
৪১. ১.৪১ খুশ বাহার ও খুশ নাহারের কাহিনী
৪২. ১.৪২ আলা অল-দিন আবু সামাতের কাহিনী
৪৩. ১.৪৩ বিদূষী হাফিজার কাহিনী
৪৪. ১.৪৪ কবি আবু নবাসের দুঃসাহসিক কীর্তি
৪৫. ২.০১ সিন্দাবাদের প্রথম সমুদ্র-যাত্রা
৪৬. ২.০২ সিন্দাবাদের দ্বিতীয় সমুদ্র-যাত্রা
৪৭. ২.০৩ সিন্দাবাদের তৃতীয় সমুদ্র-যাত্রা
৪৮. ২.০৪ সিন্দাবাদের চতুর্থ সমুদ্র-যাত্রা
৪৯. ২.০৬ সিন্দাবাদের ষষ্ঠ সমুদ্র-যাত্রা
৫০. ২.০৭ সিন্দাবাদের সপ্তম ও শেষ সমুদ্রযাত্রা
৫১. ২.০৮ সুন্দরী জুমুর‍্যুদ এবং আলী শার-এর কাহিনী
৫২. ২.০৯ নানা রঙের ছয় কন্যার কাহিনী
৫৩. ২.১০ তাম্র নগরীর কাহিনী
৫৪. ২.১১ ইবন আল-মনসুর এবং দুই নারীর কাহিনী
৫৫. ২.১২ কসাই ওয়াঁর্দার ও উজির-কন্যার কাহিনী
৫৬. ২.১৩ জামালিকার কাহিনী
৫৭. ২.১৪ বুলুকিয়ার কাহিনী
৫৮. ২.১৫ খুবসুরৎ নওজোয়ান সাদ-এর কাহিনী
৫৯. ২.১৬ হাসি-তামাশায় হারুন অল-রসিদ
৬০. ২.১৭ ছাত্র ও শিক্ষকের কাহিনী
৬১. ২.১৮ অদ্ভুত বটুয়ার কাহিনী
৬২. ২.১৯ হারুন অল রসিদের মহব্বতের কাহিনী
৬৩. ২.২০ কে ভালো—উঠতি বয়সের ছোকরা, না—মাঝ-বয়সী মরদ
৬৪. ২.২১ শসা-শাহজাদা
৬৫. ২.২২ পালিত কেশ
৬৬. ২.২৩ সমস্যা-সমাধান
৬৭. ২.২৪ আবু নবাস আর জুবেদার গোসলের কাহিনী
৬৮. ২.২৫ আবু নবাসের কবির লড়াই
৬৯. ২.২৬ গাধার গল্প
৭০. ২.২৭ আইনের প্যাঁচে জুবেদা
৭১. ২.২৮ স্ত্রী না পুরুষ
৭২. ২.২৯ বখরা
৭৩. ২.৩০ মাদ্রাসার মৌলভীর কিসসা
৭৪. ২.৩১ মেয়েদের সেমিজের কারুকর্মের কথা
৭৫. ২.৩২ পেয়ালার বাণী
৭৬. ২.৩৩ মসুলের বিখ্যাত কালোয়াতী গায়ক ইশাকের কাহিনী – বাক্সের মধ্যে খলিফা
৭৭. ২.৩৪ মুদ্যোফরাশ
৭৮. ২.৩৫ সুর্মার কাহিনী
৭৯. ২.৩৬ ছেলে অথবা মেয়ে
৮০. ২.৩৭ আজব খলিফা
৮১. ২.৩৮ গুলাবী এবং রোশন এর কাহিনী
৮২. ২.৩৯ কালো ঘোড়ার আশ্চর্য যাদু কাহিনী
৮৩. ২.০৫ সিন্দাবাদের পঞ্চম সমুদ্র-যাত্রা
৮৪. ৩.০১.১ ধূর্ত ডিলাইলাহ ও তার জালিয়াৎ কন্যা জাইনাবের কাহিনী
৮৫. ৩.০১.২ সওদাগর সিদি মুসিন আর খাতুনের কথা
৮৬. ৩.০১.৩ সেয়ানা চোর আলীচাঁদ-এর কিসসা
৮৭. ৩.০২ ধীবর যুদর অথবা আশ্চর্য যাদু-থলের কাহিনী
৮৮. ৩.০৩ আবু কাইর আর আবু শাইর-এর মজাদার কাহিনী
৮৯. ৩.০৪ দুই আবদাল্লার উপকথা
৯০. ৩.০৫ পীতাম্বর যুবকের কাহিনী
৯১. ৩.০৬ আনারকলি এবং বদর বাসিমের কিসসা
৯২. ৩.০৭ মিশরের ফাল্লাহ ও তার ফর্সা ছেলেমেয়েরা
৯৩. ৩.০৮ খলিফা ও জেলের কাহিনী
৯৪. ৩.০৯ বসরাহর হাসানের দুঃসাহসিক অভিযান
৯৫. ৩.১০ স্ত্রীলোকের চাতুরী
৯৬. ৩.১১ আবু অল হাসানের কাহিনী
৯৭. ৩.১২ জাইন মাওয়াসিফের মহম্মতের কিসসা
৯৮. ৩.১৩ কুঁড়ের বাদশার কাহিনী
৯৯. ৩.১৪ নওজোয়ান নূর এবং এক লড়াকু মেয়ের কিসসা
১০০. ৩.১৫ সপ্তম হীরক কন্যার কাহিনী
১০১. ৩.১৬.১ আলা অল-দিন ও আশ্চর্য চিরাগ বাতি
১০২. ৩.১৬.২ আলাদিনের চেরাগ (পার্ট ২)
১০৩. ৩.১৬.৩ আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ (পার্ট ৩)
১০৪. ৩.১৬.৪ আলাদিনের দৈত্য (পার্ট ৪)
১০৫. ৩.১৬.৫ আলাদিনের জাদুর চেরাগ (পার্ট ৫ / শেষ পর্ব)
১০৬. ৪.০১ হিতোপদেশের গল্প
১০৭. ৪.০১ হিতোপদেশের গল্প
১০৮. ৪.০২ গোলাপ-সুন্দরী ফারিজাদের কাহিনী
১০৯. ৪.০৩ কামর ও হালিমার কাহিনী
১১০. ৪.০৪ হারাম-আকিলের কাহিনী
১১১. ৪.০৫ সুলতান মহম্মদের ন্যায় বিচার
১১২. ৪.০৬ শেখ হাসান আবদাল্লার কাহিনী
১১৩. ৪.০৭ আবু কাশেমের অঙ্গবাস
১১৪. ৪.০৮ চরসের নেশায়
১১৫. ৪.০৯ ভ্রষ্টা নারী এবং তার নওজোয়ান নাগর
১১৬. ৪.১০ বৃদ্ধ কাজীর তরুণী বিবি
১১৭. ৪.১১ সুন্দরীর নূরের পাণিপ্রার্থীরা
১১৮. ৪.১২ মুতাবাকিল আল্লাহর বিত্ত বৈভব
১১৯. ৪.১৩ সুলতান মামুদের কাহিনী
১২০. ৪.১৪ বসরাহর আবু কাশেম
১২১. ৪.১৫ তিন কুলজী বিদ্যা-বিশারদের কাহিনী
১২২. ৪.১৬ সুলতান মাহমুদের বাঁদর
১২৩. ৪.১৭ তিন পাগলের কাহিনী
১২৪. ৪.১৮ আলিবাবা ও চল্লিশ চোর
১২৫. ৪.১৯ বাগদাদের বড় সেতুর উপরে অল-রসিদ
১২৬. ৪.২০ সিদি নুমানের কাহিনী
১২৭. ৪.২১ কাঠুরিয়া যুবরাজ
১২৮. ৪.২২ বৃদ্ধ শেখের কাহিনী
১২৯. ৪.২৩ খঞ্জ মাদ্রাসা শিক্ষকের কাহিনী
১৩০. ৪.২৪ অন্ধ ভিক্ষারীর কাহিনী
১৩১. ৪.২৫ গবেটচন্দরের কাহিনী
১৩২. ৪.২৬ তিন বোনের কাহিনী
১৩৩. ৪.২৭ তিন কন্যার কাহিনী
১৩৪. ৪.২৮ ফেরিওয়ালার তিন কন্যা
১৩৫. ৪.২৯ দামাসকাসের রূপবান সওদাগর
১৩৬. ৪.৩০ হাবিব হাবিবার কাহিনী
১৩৭. ৪.৩১ সর্দারের নষ্টাচরিত্রা বিবি
১৩৮. ৪.৩২ নফর ফিরুজের বিবি ও সুলতান
১৩৯. ৪.৩৩ অপরিণামদর্শী সিরিয়া সওদাগরের শিক্ষা
১৪০. ৪.৩৪ হারুন অল রসিদের গ্রন্থপাঠ
১৪১. ৪.৩৫ শাহজাদা হীরার কাহিনী
১৪২. ৪.৩৬ গোহা ও তার ইয়ার-বন্ধুরা
১৪৩. ৪.৩৭ তুফা অল কুলবের কাহিনী
১৪৪. ৪.৩৮ অল মালিক বাইবারসের দরবারে – দ্বাদশ সর্দারের কাহিনী
১৪৫. ৪.৩৯ চীন শাহজাদীর বাগানের সমুদ্র-গোলাপ
১৪৬. ৪.৪০ দজ্জাল বিবির অত্যাচারে দেশত্যাগী মারুফ-মুচির ভাগ্য-বিবর্তন
১৪৭. ৪.৪১ আলেকজান্দ্রা শহরের ধনী যুবকের কাহিনী
১৪৮. ৪.৪২ ফিন্দের দুই বীরাঙ্গনা কন্যা
১৪৯. ৪.৪৩ ফতিমার কাহিনী
১৫০. ৪.৪৪ কিণ্ডাইটের সম্রাট হজর ও তার স্ত্রী হিন্দের গল্প
১৫১. ৪.৪৫ আয়েশা কথিত কাহিনী
১৫২. ৪.৪৬ খলিফা ওমর ইবন অল-খাতাবের কাহিনী
১৫৩. ৪.৪৭ কুফার কবি মহম্মদ কথিত কাহিনী
১৫৪. ৪.৪৮ পরান্নভোজী তুফেনের কাহিনী
১৫৫. ৪.৪৯ খলিফা অল হাদীর অন্তিম দশা
১৫৬. ৪.৫০ অভিশপ্ত কণ্ঠহার
১৫৭. ৪.৫১ মশুলের গায়ক ইশাকের রোজনামচা
১৫৮. ৪.৫২ অল মামুন ও জুবেদা বেগমের কাহিনী
১৫৯. ৪.৫৩ জাফরের অন্তিম দশা
১৬০. ৪.৫৪ শাহজাদা জুঁই আর শাহজাদী বাদামের প্রেম উপাখ্যান

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন