১.২২ বাবুর্চির কাহিনী

ক্ষিতিশ সরকার

বাবুর্চির কাহিনী

বাবুর্চি তার কাহিনী শুরু করলো। শুনুন জাঁহাপনা :

গত রাতে আমার এক বন্ধুর বাড়িতে শাদীর নিমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, অনেক গুণী-জ্ঞানী লোকের সমাগমে আসর। জমজমাট। কোরান পাঠ শেষ হলে খানার টেবিল সাজানো হলো। নানারকম মাংসের হরেক রকম মুখোরোচক খানা, সজীর বিরিয়ানী হালওয়া ফল ইত্যাদি। এর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু একটা খানা ছিলো রসুনের বিরিয়ানী। যাকে আমরা বলি ‘জিরবাজা’। রসুনের সঙ্গে নানারকম মশলা পাতি ও শাকসব্জী দিয়ে চালের তৈরী এই বিরিয়ানী বিয়ে শাদী উৎসবের এক বাহারী খানা। আমরা—অভ্যাগত নিমন্ত্রিতরা সবাই খুব তৃপ্তি করে খেতে লাগলাম। শুধু একজন বললো, আমাকে মাফ করবেন, আমি ঐ রাসুনের ‘জিরবাজা’ খাবো না।

আমরা বার বার অনুরোধ করলাম, একটু খেয়ে দেখুন, অপূর্ব হয়েছে।

—আমি জানি, খেতে খুব ভালো হয়। কিন্তু আমি খাবো না, তার কারণ আছে। এই ‘জিরবাজা’ খাওয়ার জন্যে আমাকে একবার অনেক আক্কেল সেলামী দিতে হয়েছে। না, আপনারা খান, আমি খাবো না!

আমরা আর তাকে খাবার জন্যে পীড়াপীডি করলাম না। শুধু জানতে চাইলাম, কী হয়েছিলো, কী কারণে তাকে আক্কেল সেলামী দিতে হয়েছিলো।

যুবকটি বললো, আমি হলফ করেছি, ‘জিরবাজা’ কখনও খাবো না আমি। আর যদি কখনো খাই, তার আগে এবং পরে চল্লিশবার সোডা, চল্লিশবার পটাশ এবং চল্লিশবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

গৃহস্বামী হেসে বললো, এ আর এমন কি কথা, এই কে আছিস, সাহেবের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা কর।

সঙ্গে সঙ্গে নফর। চাকররা জল, সোডা, সাবান ইত্যাদি নিয়ে এলো।

আমরা অবাক হলাম। প্রথমতঃ খুব ধীর মন্থর গতিতে খাচ্ছিলো সে, এতৎসত্ত্বেও, অন্যান্য সবই খেলো, কিন্তু ঐ রাসুনের ‘জিরবাজায় হাত দিলো না। অথচ আমরা বুঝলাম, খাওয়ার লোভটা ষোল আনা আছে।

আমরা অবাক হলাম। প্রথমতঃ খুব ধীর মন্থর গতিতে খাচ্ছিলো সে, আর দ্বিতীয়তঃ তার বুড়ো আঙুলটা কাটা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হায় আল্লাহ, আপনার বুড়ো আঙুলটা কাটা কেন? না জন্মের থেকেই ঐ রকম? না কোন দুর্ঘটনা ঘটেছিলো?

যুবকটি বললে, তা এক রকম দুর্ঘটনাই বলতে পারেন? তবে কোন রকম যন্ত্রে কেটে যায়নি।

বাঁহাতটা তুলে দেখালো। দেখলাম, সে হাতের বুড়ো আঙুলটাও একই ভাবে কাটা। এরপর পা দু’খানা দেখালো সে। কি আশ্চৰ্য্য, পায়ের বুড়ো আঙুল দু’টোও কাঁটা। এইসব দেখে তখন খানাপিনা আমাদের মাথায় উঠেছে। হাঁ করে চেয়ে আছি। ওর দিকে? একজন জিজ্ঞাসা করলো, কী ব্যাপার? কী করে আপনার হাত পায়ের বুড়ো আঙুলগুলো কাটা গেছে? আর কেনইবা খানা খেতে বসার আগে এতোবার করে হাত ধুলেন। জানতে ইচ্ছে করছে। যদি আপত্তি না থাকে, বলুন।

আমার বাবা খলিফা হারুন-অল রসিদের সময় বাগদাদের এক নামজাদ সওদাগর ছিলো। সুরারসিক হিসাবে বাবার খুব নাম ডাক। দুনিয়ার যেখানে যতো সেরা সরাব তৈরি হতো, বাবা আনাতেন, এবং ইয়ার দোস্ত নিয়ে মৌজ করতেন। গান-বাজনার শখ ছিলো খুব। দেশ বিদেশের নামকরা বাঈজীরা আসতো মুজরো করতে। বাবা এসব ব্যাপারে দরাজদিলের মানুষ ছিলো। কিন্তু তার ফলে যা হয়, তার মৃত্যুর পর দেখলাম, পৰ্ব্বত-প্রমাণ ঋণের বোঝা এসে চেপেছে আমার ঘাড়ে। বাবার শেষকৃত্য সমাধা হতে না হতেই দরজায় এসে দাঁড়ালো পাওনাদাররা। আমি তাদের প্রত্যেককে বললাম, পিতৃঋণ রাখবো না। যেমন করে হোক পরিশোধ করবোই। তবে ভাই, সময় দিতে হবে। তোমরা প্রতি সপ্তাহে আসবে। ব্যবসায় যা লাভ হবে, নিয়ে যেও।

কেনা বেচার ব্যবসা শুরু করলাম। প্রতি সপ্তাহে যা লাভ হয়, খরচ খরচা বাদ দিয়ে দেনা শোধ করি। এইভাবে একদিন সব দেনা শোধ করে দিলাম। এর পর থেকে যা লাভ হতে লাগলো তা দিয়ে মূলধন বাড়িয়ে কারবারটা আরও বড় করে ফেললাম।

একদিন আমার দোকানে বসে আছি, দেখলাম জমকালো সাজে। সেজে এক পরমা সুন্দরী মেয়ে একটা খচ্চরের পিঠে চেপে এসে দাঁড়ালো আমার দোকানের পাশে। খ্রিস্তার সামানু পিছনে দু’জন খোজা পাহারাদার। বাজারে ঢোকার জন্যে সে খচ্চরের পিঠ থেকে নেমে দাঁড়ালো। একজন খোজাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে ঢুকতে যাবে এমন সময় খোজাটা বললো, মালকিন, বাজারের এই পথটা দিয়ে ঢুকবেন না। জায়গাটা ভালো না। কিন্তু তার কথা কানে তুললো না সে। হন হন করে ভিতরে ঢুকে গেলো। একটার পর একটা দোকান ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলো। কিন্তু কারো দোকানই আমার দোকানের মতো তেমন সাজানো গোছানো নয়। শেষে আমার দোকানোর সামনে এসে দাঁড়ালো সে। বললো, দামী দামী শাড়ি কি আছে, দেখান তো।

কি মিষ্টি কণ্ঠ। কি অপূর্ব চেহারা। চোখ ফেরানো যায় না। আমি শশব্যস্ত হয়ে দোকানের সেরা সেরা কাপড় দেখাতে থাকি। কিন্তু একটাও পছন্দ হলো না তার। বললো, আর কিছু নাই।

আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন, এখুনি পাশের দোকানগুলো খুলবে। ওদের যা আছে তাও এনে দেখাবো। যদি পছন্দ হয়, নেবেন।

অন্য দোকান না খোলা পর্যন্ত আমার দোকানেই বসে রইলো সে। স্বভাবতই দুচারটে কথাবার্তাও হলো। মেয়েটি বেশ রসালো কথাবার্তা বলতে পারে।—তা মেয়েদের পোশাকের দোকান করেছেন, আর মেয়েরা কি পছন্দ করে কি চায় তা জানেন না?

আমি বিনীতভাবে বলি, জী আমার বয়স অল্প, অভিজ্ঞতা কম, পুঁজিপাটা তেমন নাই—তাছাড়া মেয়েদের সঙ্গে তো মেলামেশা করিনি কখনও, কি করে জানবো তারা কি চায়। চোখের বাণ ছুঁড়লো সে।—কেন, বিয়ে শাদী করেননি?

—জী না, তেমন সময় সুযোগ এখনও হয়ে ওঠেনি।

এই সময় পাশের দোকানগুলো খুলে গেলো। অনেক দামী দামী বাহারী শাড়ি এনে দেখলাম তাকে। তার থেকে বেছে বেছে খান কয়েক শাড়ি পছন্দ করলো সে। প্ৰায় পাঁচ হাজার দিরহাম দাম হবে। সে বললো, এগুলো বেঁধে দিন।

কাপড়গুলো বেঁধে তার খোজা নফরের হাতে দিতেই দোকান থেকে বেরিয়ে খচ্চরের পিঠে চেপে চলে গেলে সে। আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। টাকার কথা বলতে পারলাম না। সেও দিলো না, বা বললো না, কবে দিয়ে যাবে। অথচ অন্য দোকানের মাল। তাদের বলে এলাম, এক সপ্তাহ বাদে টাকা দেবো।

এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলো। কিন্তু না এলো মেয়েটি, না পাঠালো দাম। অথচ চেহারা-চরিত্র, বেশভুষা, আদব কায়দা দেখে মনে হয়েছিলো বড়ঘরের দুলালী। কিন্তু আমার টাকাটার কি হবে? ঠিকানাপত্রও কিছু জানি না যে গিয়ে তাগাদা করবো। পাশের দোকানদাররা টাকার তাগাদ করলো। আমি আর এক সপ্তাহের সময় নিলাম।

আমার জোর বরাত, পরের সপ্তাহের শেষ দিনে সে আবার এলো আমার দোকানে। আমার হাতে একটা সোনার অলঙ্কার তুলে দিয়ে বললো, স্যাকরার কাছে এটা বেচে আপনার দামটা নিয়ে নিন। আর আমাকে আরও কয়েকটা কাপড় দেখান।

সোনার জিনিসটা বেচে আমার কাপড়ের দাম হয়ে গেলো। টাকাটা দিয়ে পাশের দোকান থেকে আরও দামী দামী কতকগুলো কাপড় এনে দেখালাম তাকে। কতগুলো শাড়ি পছন্দ করলো। দশ হাজার দিরহাম দাম হলো। কিন্তু সেদিনও সে দাম দিয়ে গেলো না। বা কবে দিয়ে যাবে তাও বলে গেলো না। আমিও বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। দাম চাইতে পারলাম না। এতো ভারি মুসকিল হলো। গতবারে ছিলো পাঁচ হাজার এবারে বাকী বেড়ে হলো দশ হাজার। আর যদি না আসে? যদি না দিয়ে যায় দাম? তাহলে? তাহলে তো দেনার দায়ে আমার দোকান-পাট লাটে উঠবো!

রাতে শুয়ে ঘুম আসে না। যদি মেয়েটা আর না আসে? গল্প কাহিনী শুনেছি, ঠগদের কত বিচিত্রভাবে প্রতারণা করার কায়দা। মেয়েটা তার সুন্দর রূপ যৌবন আর বাদশাহী চালবোল দিয়ে আমার হাতে হারিকেন ধরিয়ে গেলো না তো?

এক এক করে চার সপ্তাহ কেটে গেলো। টাকার তাগাদায় অস্থির করে তুলেছে আমাকে। আর পারা যায় না। রূপের মোহে ভুলে একি করলাম আমি। এখন আমার দোকানের মাল জলের দামে বেচে দেনাশোধ করতে হবে। এবং সেই ভাবেই নিজেকে তৈরি করছি, এমন সময় মেয়েটি একদিন এলো। আমি হাতে স্বৰ্গ পেলাম। একটা থলে আমার সামনে এনে রাখলো। বললো, দাডি-পাল্লা নিয়ে এসে। ওজন করে দেখুন, কত আছে।

হিসেব-পত্র করে দেখলাম, যা দাম তারচেয়ে বেশ বেশী আছে। আমাকে বললো, ওটা আপনার কাছে রাখুন। খুশিতে ভরে গেলো মন। আহা, এই মেয়েটাকে আমি ঠগ জোচ্চোর ভেবেছিলাম! এমন সুন্দর রূপ যৌবন—এমন নবাবী চালচলন আর কখনও দেখিনি কোন মেয়ের। বুকের মধ্যে কি যেন অভাব বোধ করতে লাগলাম। মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো, বিয়ে শাদী করবেন না?

আমি বলি, তেমন ভাগ্য কি আর করে এসেছি।

—কেন, আপনার এমন সুন্দর চেহারা-মেয়েরা দেখে তো পাগল হয়ে যাবে।

কিন্তু আপনি ছাড়া কোন মেয়েই তো এমন আপন করে কথাবার্তা বলে নি কখনও!

মেয়েটি মুখ টিপে হাসলো। আমার বুকে আগুন ধরে গেলো। ওর রূপের এক দারুণ আকর্ষণ আমাকে টানতে লাগলো। নিজেকে আর বুঝি ধরে রাখতে পারি না।

দোকান ছেড়ে উঠে বাইরে এলাম। মেয়েটি বসে রইলো। ওর খোজা নফরটাকে আড়ালে ডেকে এনে এক মুঠো দিনার গুজে দিলাম ওর হাতে। বললাম, তোমার মালকিনকে আমার খুব ভালো লেগেছে। ভালোবেসে ফেলেছি। এখন তোমাকে আমার হয়ে তার কাছে মহব্বৎ জানতে হবে।

সে খুব হাসলো। বললো, আমাদের মালকিন আপনার প্রেমে মশগুল হয়ে পড়েছে! আপনাকে দেখার জনো, আপনার সঙ্গে দু’টো কথা বলার জন্যেই শুধু সে আসে আপনার কাছে। এতো যে শাড়ি কাপড় কেনা, সে সবই অছিলা। যা শাড়ি গহনা আছে তার, রোজ একখানা করে পরলে, সারা জীবনে একবারের বেশী দু’বার পরতে হবে না কোন শাড়ি। শুধু আপনাকে দেখতেই সে আসে এখানে।

আমি যখন খোজাটার সঙ্গে কথা বলছিলাম, মেয়েটি বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে গেলো একবার। একটু পরে যখন আবার দোকানে এলাম মেয়েটি হেসে জিজ্ঞেস করলো, কী শলাপরামর্শ হলো?

—শলাপরামর্শ কিছু না। আপনার নফরটাকে জিজ্ঞেস করছিলাম, কোথায় থাকেন। আপনারা?

–তার জন্যে অতোগুলো পয়সা দিতে হলো?

খোজাটাকে যে বকশিস দিয়েছি, তাও ওর চোখ এড়ায়নি। আমি বললাম, ও কিছু না। ওকে একটু খুশি রাখার জন্যে দিলাম। আপনি আমার এতো বড় খদ্দের। সে যাতে অন্য দোকানের পয়সা খেয়ে ভাগিয়ে নিয়ে না যায়।

মেয়েটি এবার ভুরু কুঁচকে হাসলো।-কেন, আমি চলে গেলে আপনার খুব ক্ষতি হবে নাকি?

—ক্ষতি না হোক, লাভতো কিছু হবে না। লাভ করার জন্যেই তো দোকান সাজিয়ে বসা।

মেয়েটি এবার উঠে দাঁড়ালো।—অনেক দেরি হয়ে গেছে, আজ চলি। পরে আর একদিন আসবো।

আমি বললাম, একটা কথা বলবো বলবো করেও বলার সাহস হয়নি। আপনার খোজাকে বলেছি। আমার হয়ে সে আপনাকে বলবে। আপনি যেন তার কোন অপরাধ নেবেন না।

—ঠিক আছে। কিন্তু এমন কি কথা যা সামনাসামনি বলতে পারলেন না?

মেয়েটি আর জবাবের জন্যে দাঁড়ালো না খচ্চরের পিঠে চেপে চলে গেলো।

রোজই ভাবি, সে অথবা তার নফর আসবে। কিন্তু কেউ এলো না। কি জানি কি হলো অহরহ তার কথাই ভাবি। রাতে শুয়ে ঘুম হয় না। কিছু খেতে ভালো লাগে না। কাজ কমে মন বসতে চায় না।

আরও কয়েক দিন পরে খোজাটা এসে খবর দিলো, তার মালকিন অসুস্থ। আমি জানতে চাইলাম, কিন্তু তোমার এই মালকিনিটি কে?

-খলিফা হারুন-অল-রাসিদের পেয়ারের বেগম জুবেদার পালিত কন্যা সে। বেগমসাহেবা তাকে দত্তক নিয়ে মানুষ করেছে। বড়, আদরের দুলালী। তার কোন আদর আব্দারই এড়াতে পারে না। কিছুদিন আগে সে তার মাকে বলেছিলো, মা, এইভাবে এক-একা ঘরের মধ্যে বন্দী থাকতে আর ভালো লাগছে না, তুমি যদি মত করো। তবে খোজাদের নিয়ে একটু বাইরে বেরিয়ে আসতে পারি।’ বেগমসাহেবা মেয়ের কথা ঠেলতে পারেনি। প্রথম দিন বাজারে এসে আপনার কাছ থেকে পোশাক আশাক কেনাকাটা করে নিয়ে গেলো। মা মেয়ের পছন্দসই সওদা দেখে খুব খুশি হলো। তারপর থেকে বাইরে বেরুনোর আর কোন বাধা রইলো না। কয়েকদিন আগে শাহজাদী বেগমসাহেবকে তার মনের ইচ্ছার কথা বলেছে। আপনাকে দেখে তার খুব পছন্দ হয়েছে জেনে বেগমসাহেবা বলেছে, আমি নিজে ছেলেকে দেখবো। আগে-আমার যদি পছন্দ হয় তবেই শাদী দিয়ে দেবো। এখন সাহেব, আপনি বলুন, বেগমসাহেবার সঙ্গে দেখা করতে চান কিনা?

আমি বললাম, আমি তো পা বাড়িয়েই আছি। এখন বলো, কিভাবে, কবে, কোথায় তার সঙ্গে দেখা হতে পারে।

খোজা বললো, আজি সন্ধ্যায় আপনি টাইগ্রীসের ধারে বেগম জুবেদা সাহেবার যে বড় মসজিদ। —ওখানে নামাজ পড়তে যাবেন। নামাজ শেষ করে ওখানেই গুয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন। তারপর যা করার আমি করবো।

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বললাম, ঠিক আছে।

খোজা বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।

সন্ধ্যাবেলায় টাইগ্ৰীসের উপকূলের সেই মসজিদে গেলাম নামাজ পড়তে। নামাজ শেষ করে রাতের মতো। ওখানেই শুয়ে পড়লাম। ভোর হতে দেখি একটা ছোট্ট পানসি নৌক এসে ভিড়লো মসজিদের ঘাটে। বাক্স আর খোজা ক্রীতদাসে ভর্তি নৌকা থেকে কয়েকটা বাক্স নামানো হলো ঘাটে। ক্রীতদাসেরা সেগুলো নিয়ে গিয়ে রাখলো মসজিদের এক পাশে। একটু পরে দেখলাম, আমার পরিচিত সেই খোজা এবং তার পাশে আমার মানসী সেই শাহজাদী। আমার পাশে বসলো। তার ফন্দী মতলব সব বুঝিয়ে বললে আমাকে। তারপর আদর করলো অনেক। অনেকক্ষণ ধরে। পরে বললো, এবার তোমাকে বাক্সে পুরে তালা বন্ধ করে নিয়ে যাবো।

আমি বাক্সের ভিতরে গিয়ে বসলাম। আমাকে তালা বন্ধ করে নৌকায় নিয়ে গিয়ে তুললো খোজা। আবার যখন বাক্স খুলে বার করা হলো, দেখলাম, আমি এসে পড়েছি প্রাসাদের হারেমে। দামী পোশাক আশাক এনে দিলো সেই খোজা। নতুন সাজে সাজিলাম। একটা সোফায় বসানো হলে আমাকে। এমন সময় ঘন্টা বেজে উঠলো। দেখলাম, হারেমের কুড়িজন ক্রীতদাসী দুটি সারিতে ভাগ হয়ে মাথা হোঁট করে দাঁড়িয়ে পড়লো। সবারই বয়স কুড়ির কাছাকাছি। সুন্দরী স্বাস্থ্যবতী। ক্ষীণ কটি উন্নত বক্ষা।

দুই সারি ক্রীতদাসীদের মাঝখান দিয়ে ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে এলো বেগম জুবেদা। চোখ ঝলসানো সাজপোশাক-এ সজ্জিতা। রত্নালঙ্কারের ভারে নুয়ে পড়েছে তার দেহ।

আমি উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার কাছে এসে ইশারায় বসতে বললে আমাকে। তারপর আমার নাম, ধাম, বংশগোত্র, পেশা সব এক এক করে জেনে নিলো। আমার জবাবে খুশি হলো সে। বললো, তাহলে আর সময় নষ্ট করে লাভ নাই। দশ দিনের মধ্যে শাদীর সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেলবো।

তারপর আমার দিকে চেয়ে জুবেদা বললো, শোনো, সাহেব, মেয়ে আবার বড় আদরের দুলালী। তোমার সঙ্গে তার শাদী দেবো। কিন্তু একটা কথা, তাকে কোন কষ্টদিও না। সে আমি সহ্য করতে পারবো না। দশ দিন পরে তোমাদের শাদী হবে। এই দশ দিন তুমি এই প্রাসাদেই থাকবে। দশ দিন ধরে প্রাসাদের এক মনোরম কক্ষে আরামেই কাটালাম। এর মধ্যে আমার মানসীর সঙ্গে দেখা হলো না একবারও। কিন্তু পরিচারিকারা আমার দেখাশুনা করতো। তাদের মারফতে সব খবরাখবর পেতে থাকলাম।

জুবেদা খলিফার সম্মতি পেলো। তিনি যৌতুক হিসাবে দশ হাজার সোনার মোহর পাঠালেন আমাকে। জুবেদা দিলো পঞ্চশ হাজার দিনার। কাজী এবং সাক্ষী এলো। শাদীর কবুলনামা লেখা হলো। সারা প্রাসাদ আনন্দ মুখর হয়ে উঠলো। শাহজাদীর সঙ্গে শাদী হয়ে গেলো আমার।

উজির আমির ওমরাহরা সবাই আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলো সেদিন। প্রকাণ্ড সামিয়ানায় খানাপিনার সে কি বিরাট আয়োজন। এরে আগে কখনও চোখে দেখিনি। কত সব সুন্দর সুন্দর খাবার, বিরিয়ানী, মাংস, চাপ, হালওয়া, ফল, মিষ্টি, সরবৎ-এলাহী ব্যাপার। আমিও ওদের পাশে বসে খেলাম। নানারকম খানার মধ্যে আমার অত্যন্ত প্রিয় জিরাবাজা দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। খেলাম খুব তৃপ্তি করে। বোধ হয় লোভে লোভে বেশ কিছুটা বেশীই খেয়ে ফেলেছিলাম। খানাপিনা শেষ করে রুমালেই হাতটা পুছে ফেললাম। এতো খাওয়া হয়ে গিয়েছিলো যে, উঠে গিয়ে হাত মুখ ধোয়ার কষ্টটা আর স্বীকার করতে মন চাইলো না তখন।

রাত্ৰি গম্ভীর হতে থাকে। উৎসবের আসর তখন জমজমাট। হাজার খানেক মোমবাতি জুলানো হলো। আমাকে ঘিরে শুরু হলো নাচ গান। সাতবার সাতরকম জমকালো সাজে। সেজে এসে পাত্রী প্রদক্ষিণ করলো শাদীর বাসর। উপস্থিত অভ্যাগতরা সোনার মোহর দিতে লাগলো থালায়। সারা বাসরকক্ষ তখন পরিপূর্ণ। শাদীর অনুষ্ঠান পর্বশেষ হলো এক সময়! গুলাব জলের পিচকারী করা হলো সবাইকে। এবার এক এক করে বিদায় নেবার পালা। আসর। ফাকা হয়ে আসে। আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো পাশের কামরায়। মনোহর করে বাসর শয্যা রচনা করা হয়েছে। এইখানে আমাদের মধু যামিনী হবে। পরিচারিকারী পাত্রীকে নিয়ে এলো। শাদীর প্রথামত বিবস্ত্রা করা হলো তাকে। তারপর আমার পাশে পালঙ্কে শুইয়ে রেখে চলে গেলো তারা।

দেখলাম, সবাই চলে গেছে—শুধু আমি আর সে শুয়ে আছি পাশাপাশি। গভীর আলিঙ্গনে তাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু সেই মুহুর্তে আমাকে প্রচণ্ড এক ধাক্কা মেরে ঠেলে দিয়ে সে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।–তুমি রসুন খেয়েছ। ওঃ কি বিশ্ৰী গন্ধ! বাবা, মরে গেলাম।

আর্তনাদ করে উঠলো সে। সঙ্গে সঙ্গে পাশের কামরা থেকে ছুটে এলো দাসীরা।–কি হলো, শাহজাদী?

শাহজাদী তখন হাত পা ছুড়ছে, এই অসভ্য জংলী জানোয়ারটা রসুন খেয়েছে। কি বিশ্ৰী গন্ধ, আমার বমি আসছে। আমি কি আগে জানতাম, লোকটা এমন একটা বনমানুষ! তোরা আমাকে এই গাধার বাচ্চার হাত থেকে বাঁচা। ওর কাছে থাকলে আমি নির্ঘাত মরে যাবো। হায় আল্লা আমার একি হলো, এমন শয়তান বদমাইস একটা জানোয়ারকে শাদী করলাম আমি।

শাহজাদী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি কি একটা কথা বলতে যাচ্ছিলাম, আমাকে বাধা দিয়ে থামিয়ে দিলো, চুপ করো, তোমার কোন কথা শুনতে চাই না। কেন তুমি রসুন খেয়েছে? কেন ভালো করে হাত সাফা করোনি? তুমি কি ভেবেছো, এর পরেও তোমার কোলে শোেব আমি?

রাগে গরগর করতে করতে ঘরের এক পাশ থেকে একখানা বেতের চাবুক এনে সপাংসপাং করে এলোপাথাড়ী পেটাতে লাগলো আমাকে। যন্ত্রণায় ছটফট করে পালাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। চাবুকের একটাবাড়ি এসে লাগলো আমার দুই জঙ্ঘার মাঝখানে। সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে গালিচার উপর লুটিয়ে পড়ে গেলাম।

অনেকবাদে জ্ঞান হলো আমার। চোখ খুলে দেখলাম, শাহজাদী তখন চাবুক হাতে পালঙ্কে বসে রয়েছে। একেবারে রণরঙ্গিণী মূর্তি। চারপাশে ক্রীতদাসীরা ঘিরে আছে আমাকে। শাহজাদী হুকুম করলো, ওকে নিয়ে যাও। কোটালের হাতে তুলে দিয়ে বলো, লোকটা রসুন খেয়ে হাত সাফা করেনি। আমার নাকে গন্ধ লেগেছে। কোটাল ফোন ওর হাতখানা।–যে হাত দিয়ে ও ‘জিরাবাজা’ খেয়েছিলো—কেটে ফেলে।

শাহজাদীর রায় শুনে তখন আমার বুকে কাঁপুনি ধরে গেলো। শাহজাদীর সহচরীরা আমার ওপর দয়াপরবশ হয়েই বোধহয়, অনুরোধ জানাতে লাগলো, এবারের মতো। ওঁকে মাফ করে দিন! এবার তো প্রথমবার। পরে আবার যদি কখনও এমন হয়, তখন যা খুশি সাজা দেবেন।

আমার তো আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেছে। এতো লঘু দোষে এমন গুরু দণ্ড? ‘জিরাবাজা’ খেয়ে হাত না ধোয়ার জন্যে এই সাজা?

শাহজাদী বললো, ঠিক আছে, তোমরা যখন বলছে এবারের মতো। ওর হাতখানা না হয় কাটবো না। কিন্তু তা বলে বেকসুর ছেড়ে দিতে পারবো না। এমন একটা চিহ্ন করে দেবো। যার ভয়ে, বাছাধন আর জীবনে ‘জিরবাজা’ খেতে চাইবে না।

এই বলে সহচর। দাসীদের সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সে। শাদীর প্রথম রাতে, বাসর শয্যায়। আমি পড়ে রইলাম একা।

দশদিন পরে ফিরে এলো আমার কাছে। সঙ্গে সহচরী ও দাসীবৃন্দ। তর্জনী নাচিয়ে নাচিয়ে বলতে লাগলো, কি, কেমন? আর জিরাবাজা’ খাবে কখনও? দাঁড়াও, আজ তোমাকে এমন শিক্ষা দেবো যাতে আর রসুনে কখনও হাত না ঠেকাও।

তারপরইশারা করতেই ক্রীতদাসীরা আমাকে জাপটে ধরে জোর করে গালিচার উপর শুইয়ে ফেললো। শাহজাদী হুকুম করলো, রসি দিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলো ওর।

আমার হাত পা বাঁধা হলো। একজন একখানা চকচকে ধারালো ছুরি দিয়ে আমার হাতের আর পায়ের বুড়ো আঙুলগুলো কেটে ফেললো। তাই আপনারা আজ আমাকে এইরকম দেখছেন।

আমি সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। সে আমার ক্ষতস্থানে রক্ত বন্ধ করার ঔষুধপত্র লাগিয়ে বেঁধে দিয়েছিলো। যখন জ্ঞান ফিরে এলো আমি চিৎকার করে উঠলাম, আল্লাহ সাক্ষী আর কখনও ‘জিরবাজা’ খাবো না। আর যদি কখনও খাই, খাওয়ার আগে এবং পরে চল্লিশবার সোডা, চল্লিশবার পটাশ আর চল্লিশবার সাবান দিয়ে হাত সাফ করবো।

সুতরাং বন্ধুগণ, আপনারা আমার অপরাধ নেবেন না।

আপনারা যখন আমাকে বার বার অনুরোধ করতে লাগলেন, আমি তখন খুব বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। কারণ আমি তার কাছে হলফ করেছি। যদিও আজ সে বেঁচে নাই, তবু আল্লাহর নামে কসম খেয়েছি-আমি ও জিনিস আর মুখে তুলবো না। এই জিরাবাজার’ জন্যে আমার বুড়ো আঙ্গুলগুলো হারিয়েছি একদিন।

বাবুর্চি বলতে থাকে, শুনুন জাঁহাপনা, এরপর সেই বাগদাদের তরুণ সওদাগরকে প্রশ্ন করলাম, এর পর আপনার বিবির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কিরকম রইলো?

যুবকটি বললে, আমি যখন আল্লাহর নামে দিব্যি করলাম, আর কখনও জিরাবাজা’ খাবো না, তখন সে বেশ নরম হলো। আমাকে ক্ষমার চোখে মেনে নিলো। এর পর আমরা একসঙ্গে সহবাস করেছি। অনেক দিন-রজনী।

এইভাবে প্রাসাদ পরিবেশে কাটলো বহুদিন। শাহজাদী—আমার বিবি বললো, এখানে তো অনেকদিন কটালে। ঘরজামাই হয়ে থাকবে নাকি চিরকাল? তার চেয়ে বাইরে কোথাও একটা ইমারাৎ কিনে নাও। আমি টাকা দিচ্ছি।

পঞ্চশ হাজার সোনার মোহর দিয়ে একটা বিরাটবাড়ি কিনলাম। শাহজাদীর ব্যক্তিগত ব্যবহারের সামানপত্র এবং তার যাবতীয় বিষয়সম্পদ নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে। সুচারু সুন্দর করে সাজালাম সারা বাড়িটা। কিন্তু এত সুখ আমার কপালে সইলো না। বছর না ঘুরতেই সে মারা গেলো। শোকে দুঃখে ভেঙে পড়লাম। উদাসী মন বিবাগী হলো।বাড়ি ঘরদোর, বিষয় সম্পত্তি সব বেচে দিয়ে একদিন পথে বেরিয়ে পড়লাম। দেশে দেশে ঘুরে বেড়াই। কোথাও মন টিকে না। অবশেষে সুদূর পরবাসে আপনাদের এই দেশে এসে বাসা বেঁধেছি। আল্লাহ জানেন, এখানেই বা কতদিন থাকবো।

জাঁহাপনা, বাবুর্চি বললো, এই হলো সেই বাগদাদের তরুণ সওদাগরের কাহিনী। এর পর সেই নিমন্ত্রণবাড়ি থেকে বেরিয়ে সবাই যে যার ঘরের দিকে চললাম। আমি ফিরে গেলাম আমার বাড়ি। রাত্রি তখন দ্বিতীয় প্রহর পার হয়ে গেছে। তারপর এই কুঁজোটার মরা লাশ নিয়ে যা যাকাণ্ড ঘটে গেছে সে তো আপনার সবই জানা।

চীনের বাদশাহ গভীর মুখে বললো, হুম, তোমার গল্প কিন্তু এমন কিছু আহা মারি নয় হে, বাপু। এর চেয়ে এই কুঁজোর মরার ব্যাপারটা আরও অনেক বেশী অদ্ভুত। তোমাদের দু’জনের কারো কাহিনীই আমাকে অবাক করতে পারেনি। কিন্তু কুঁজোর মরার ঘটনা শুনে আমি তাজ্জব বনে গেছি! সুতরাং তোমাদের কারো নিস্কৃতি নাই। সবাইকে ফাঁসীতে ঝুলাবো।

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ বাদশাহ শারিয়ার ও তার ভাই বাদশাহ শাহজামানের কাহিনী
২. ১.০২ গাধা, বলদ আর গৃহস্বামীর উপাখ্যান
৩. ১.০৩ সওদাগর আর আফ্রিদি দৈত্য
৪. ১.০৪ প্রথম শেখের কাহিনী
৫. ১.০৫ দ্বিতীয় শেখের কাহিনী
৬. ১.০৬ তৃতীয় শেখের কাহিনী
৭. ১.০৭ ধীবর আর আফ্রিদি দৈত্যের কাহিনী
৮. ১.০৮ উজির, সুলতান য়ুনান হেকিম রায়ানের কিসসা
৯. ১.০৯ সিনবাদ আর বাজপাখি
১০. ১.১০ শাহজাদা আর রাক্ষসী
১১. ১.১১ শাহজাদা আর রঙিন মাছ
১২. ১.১২ কুলি-ছেলে আর তিন কন্যা
১৩. ১.১৩ প্রথম কালান্দার ফকিরের কাহিনী
১৪. ১.১৪ দ্বিতীয় কালান্দর ফকিরের কাহিনী
১৫. ১.১৫ তৃতীয় কালান্দর ফকিরের কাহিনী 
১৬. ১.১৬ বড় বোন জুবেদার কাহিনী
১৭. ১.১৭ মেজো বোন আমিনার কাহিনী
১৮. ১.১৮ একটি স্ত্রীলোকের খণ্ডিত দেহ, তিনটি আপেল ও নিগ্রো রাইহান
১৯. ১.১৯ উজির সামস অল-দিন তার ভাই নূর অল-দিন ও হাসান বদর অল-দিন
২০. ১.২০ দর্জি, কুঁজো, ইহুদি হেকিম, বাবুর্চি, খ্রীস্টান দালাল
২১. ১.২১ খ্ৰীষ্টান দালালের কাহিনী
২২. ১.২২ বাবুর্চির কাহিনী
২৩. ১.২৩ ইহুদী হেকিমের কাহিনী
২৪. ১.২৪ দর্জির কাহিনী
২৫. ১.২৫ নাপিতের কাহিনী
২৬. ১.২৬ মধুমিতা আর আলী নূর-এর কাহিনী
২৭. ১.২৭ ঘানিম আইয়ুব আর কুৎ-অল-এর কাহিনী
২৮. ১.২৮ উমর অল-নুমান, তার পুত্র সারকান ও দু-অল মাকানের কাহিনী
২৯. ১.২৯ আজিজ আর আজিজার কাহিনী
৩০. ১.৩০ শাহজাদা তাজ অল-মূলক ও শাহজাদী দুনিয়া
৩১. ১.৩১ দু-অল মাকানের পুত্র কান মা-কানা
৩২. ১.৩২ চরস খোরের কাহিনী
৩৩. ১.৩৩ রাজহাঁস ও ময়ূর-ময়ূরী
৩৪. ১.৩৪ মেষপালক রাখাল আর একটি মেয়ে
৩৫. ১.৩৫ কচ্ছপ ও বকের কাহিনী
৩৬. ১.৩৬ নেকড়ে আর খেঁকশিয়ালের কাহিনী
৩৭. ১.৩৭ ইঁদুর আর নেউলের গল্প
৩৮. ১.৩৮ কাক ও কাঠবেড়ালীর কাহিনী
৩৯. ১.৩৯ আলী-ইবন বকর ও সুন্দরী সামস আল-নাহারের কাহিনী
৪০. ১.৪০ শাহজাদা কামার আল-জামান আর শাহজাদী বদর-এর প্রণয় কাহিনী
৪১. ১.৪১ খুশ বাহার ও খুশ নাহারের কাহিনী
৪২. ১.৪২ আলা অল-দিন আবু সামাতের কাহিনী
৪৩. ১.৪৩ বিদূষী হাফিজার কাহিনী
৪৪. ১.৪৪ কবি আবু নবাসের দুঃসাহসিক কীর্তি
৪৫. ২.০১ সিন্দাবাদের প্রথম সমুদ্র-যাত্রা
৪৬. ২.০২ সিন্দাবাদের দ্বিতীয় সমুদ্র-যাত্রা
৪৭. ২.০৩ সিন্দাবাদের তৃতীয় সমুদ্র-যাত্রা
৪৮. ২.০৪ সিন্দাবাদের চতুর্থ সমুদ্র-যাত্রা
৪৯. ২.০৬ সিন্দাবাদের ষষ্ঠ সমুদ্র-যাত্রা
৫০. ২.০৭ সিন্দাবাদের সপ্তম ও শেষ সমুদ্রযাত্রা
৫১. ২.০৮ সুন্দরী জুমুর‍্যুদ এবং আলী শার-এর কাহিনী
৫২. ২.০৯ নানা রঙের ছয় কন্যার কাহিনী
৫৩. ২.১০ তাম্র নগরীর কাহিনী
৫৪. ২.১১ ইবন আল-মনসুর এবং দুই নারীর কাহিনী
৫৫. ২.১২ কসাই ওয়াঁর্দার ও উজির-কন্যার কাহিনী
৫৬. ২.১৩ জামালিকার কাহিনী
৫৭. ২.১৪ বুলুকিয়ার কাহিনী
৫৮. ২.১৫ খুবসুরৎ নওজোয়ান সাদ-এর কাহিনী
৫৯. ২.১৬ হাসি-তামাশায় হারুন অল-রসিদ
৬০. ২.১৭ ছাত্র ও শিক্ষকের কাহিনী
৬১. ২.১৮ অদ্ভুত বটুয়ার কাহিনী
৬২. ২.১৯ হারুন অল রসিদের মহব্বতের কাহিনী
৬৩. ২.২০ কে ভালো—উঠতি বয়সের ছোকরা, না—মাঝ-বয়সী মরদ
৬৪. ২.২১ শসা-শাহজাদা
৬৫. ২.২২ পালিত কেশ
৬৬. ২.২৩ সমস্যা-সমাধান
৬৭. ২.২৪ আবু নবাস আর জুবেদার গোসলের কাহিনী
৬৮. ২.২৫ আবু নবাসের কবির লড়াই
৬৯. ২.২৬ গাধার গল্প
৭০. ২.২৭ আইনের প্যাঁচে জুবেদা
৭১. ২.২৮ স্ত্রী না পুরুষ
৭২. ২.২৯ বখরা
৭৩. ২.৩০ মাদ্রাসার মৌলভীর কিসসা
৭৪. ২.৩১ মেয়েদের সেমিজের কারুকর্মের কথা
৭৫. ২.৩২ পেয়ালার বাণী
৭৬. ২.৩৩ মসুলের বিখ্যাত কালোয়াতী গায়ক ইশাকের কাহিনী – বাক্সের মধ্যে খলিফা
৭৭. ২.৩৪ মুদ্যোফরাশ
৭৮. ২.৩৫ সুর্মার কাহিনী
৭৯. ২.৩৬ ছেলে অথবা মেয়ে
৮০. ২.৩৭ আজব খলিফা
৮১. ২.৩৮ গুলাবী এবং রোশন এর কাহিনী
৮২. ২.৩৯ কালো ঘোড়ার আশ্চর্য যাদু কাহিনী
৮৩. ২.০৫ সিন্দাবাদের পঞ্চম সমুদ্র-যাত্রা
৮৪. ৩.০১.১ ধূর্ত ডিলাইলাহ ও তার জালিয়াৎ কন্যা জাইনাবের কাহিনী
৮৫. ৩.০১.২ সওদাগর সিদি মুসিন আর খাতুনের কথা
৮৬. ৩.০১.৩ সেয়ানা চোর আলীচাঁদ-এর কিসসা
৮৭. ৩.০২ ধীবর যুদর অথবা আশ্চর্য যাদু-থলের কাহিনী
৮৮. ৩.০৩ আবু কাইর আর আবু শাইর-এর মজাদার কাহিনী
৮৯. ৩.০৪ দুই আবদাল্লার উপকথা
৯০. ৩.০৫ পীতাম্বর যুবকের কাহিনী
৯১. ৩.০৬ আনারকলি এবং বদর বাসিমের কিসসা
৯২. ৩.০৭ মিশরের ফাল্লাহ ও তার ফর্সা ছেলেমেয়েরা
৯৩. ৩.০৮ খলিফা ও জেলের কাহিনী
৯৪. ৩.০৯ বসরাহর হাসানের দুঃসাহসিক অভিযান
৯৫. ৩.১০ স্ত্রীলোকের চাতুরী
৯৬. ৩.১১ আবু অল হাসানের কাহিনী
৯৭. ৩.১২ জাইন মাওয়াসিফের মহম্মতের কিসসা
৯৮. ৩.১৩ কুঁড়ের বাদশার কাহিনী
৯৯. ৩.১৪ নওজোয়ান নূর এবং এক লড়াকু মেয়ের কিসসা
১০০. ৩.১৫ সপ্তম হীরক কন্যার কাহিনী
১০১. ৩.১৬.১ আলা অল-দিন ও আশ্চর্য চিরাগ বাতি
১০২. ৩.১৬.২ আলাদিনের চেরাগ (পার্ট ২)
১০৩. ৩.১৬.৩ আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ (পার্ট ৩)
১০৪. ৩.১৬.৪ আলাদিনের দৈত্য (পার্ট ৪)
১০৫. ৩.১৬.৫ আলাদিনের জাদুর চেরাগ (পার্ট ৫ / শেষ পর্ব)
১০৬. ৪.০১ হিতোপদেশের গল্প
১০৭. ৪.০১ হিতোপদেশের গল্প
১০৮. ৪.০২ গোলাপ-সুন্দরী ফারিজাদের কাহিনী
১০৯. ৪.০৩ কামর ও হালিমার কাহিনী
১১০. ৪.০৪ হারাম-আকিলের কাহিনী
১১১. ৪.০৫ সুলতান মহম্মদের ন্যায় বিচার
১১২. ৪.০৬ শেখ হাসান আবদাল্লার কাহিনী
১১৩. ৪.০৭ আবু কাশেমের অঙ্গবাস
১১৪. ৪.০৮ চরসের নেশায়
১১৫. ৪.০৯ ভ্রষ্টা নারী এবং তার নওজোয়ান নাগর
১১৬. ৪.১০ বৃদ্ধ কাজীর তরুণী বিবি
১১৭. ৪.১১ সুন্দরীর নূরের পাণিপ্রার্থীরা
১১৮. ৪.১২ মুতাবাকিল আল্লাহর বিত্ত বৈভব
১১৯. ৪.১৩ সুলতান মামুদের কাহিনী
১২০. ৪.১৪ বসরাহর আবু কাশেম
১২১. ৪.১৫ তিন কুলজী বিদ্যা-বিশারদের কাহিনী
১২২. ৪.১৬ সুলতান মাহমুদের বাঁদর
১২৩. ৪.১৭ তিন পাগলের কাহিনী
১২৪. ৪.১৮ আলিবাবা ও চল্লিশ চোর
১২৫. ৪.১৯ বাগদাদের বড় সেতুর উপরে অল-রসিদ
১২৬. ৪.২০ সিদি নুমানের কাহিনী
১২৭. ৪.২১ কাঠুরিয়া যুবরাজ
১২৮. ৪.২২ বৃদ্ধ শেখের কাহিনী
১২৯. ৪.২৩ খঞ্জ মাদ্রাসা শিক্ষকের কাহিনী
১৩০. ৪.২৪ অন্ধ ভিক্ষারীর কাহিনী
১৩১. ৪.২৫ গবেটচন্দরের কাহিনী
১৩২. ৪.২৬ তিন বোনের কাহিনী
১৩৩. ৪.২৭ তিন কন্যার কাহিনী
১৩৪. ৪.২৮ ফেরিওয়ালার তিন কন্যা
১৩৫. ৪.২৯ দামাসকাসের রূপবান সওদাগর
১৩৬. ৪.৩০ হাবিব হাবিবার কাহিনী
১৩৭. ৪.৩১ সর্দারের নষ্টাচরিত্রা বিবি
১৩৮. ৪.৩২ নফর ফিরুজের বিবি ও সুলতান
১৩৯. ৪.৩৩ অপরিণামদর্শী সিরিয়া সওদাগরের শিক্ষা
১৪০. ৪.৩৪ হারুন অল রসিদের গ্রন্থপাঠ
১৪১. ৪.৩৫ শাহজাদা হীরার কাহিনী
১৪২. ৪.৩৬ গোহা ও তার ইয়ার-বন্ধুরা
১৪৩. ৪.৩৭ তুফা অল কুলবের কাহিনী
১৪৪. ৪.৩৮ অল মালিক বাইবারসের দরবারে – দ্বাদশ সর্দারের কাহিনী
১৪৫. ৪.৩৯ চীন শাহজাদীর বাগানের সমুদ্র-গোলাপ
১৪৬. ৪.৪০ দজ্জাল বিবির অত্যাচারে দেশত্যাগী মারুফ-মুচির ভাগ্য-বিবর্তন
১৪৭. ৪.৪১ আলেকজান্দ্রা শহরের ধনী যুবকের কাহিনী
১৪৮. ৪.৪২ ফিন্দের দুই বীরাঙ্গনা কন্যা
১৪৯. ৪.৪৩ ফতিমার কাহিনী
১৫০. ৪.৪৪ কিণ্ডাইটের সম্রাট হজর ও তার স্ত্রী হিন্দের গল্প
১৫১. ৪.৪৫ আয়েশা কথিত কাহিনী
১৫২. ৪.৪৬ খলিফা ওমর ইবন অল-খাতাবের কাহিনী
১৫৩. ৪.৪৭ কুফার কবি মহম্মদ কথিত কাহিনী
১৫৪. ৪.৪৮ পরান্নভোজী তুফেনের কাহিনী
১৫৫. ৪.৪৯ খলিফা অল হাদীর অন্তিম দশা
১৫৬. ৪.৫০ অভিশপ্ত কণ্ঠহার
১৫৭. ৪.৫১ মশুলের গায়ক ইশাকের রোজনামচা
১৫৮. ৪.৫২ অল মামুন ও জুবেদা বেগমের কাহিনী
১৫৯. ৪.৫৩ জাফরের অন্তিম দশা
১৬০. ৪.৫৪ শাহজাদা জুঁই আর শাহজাদী বাদামের প্রেম উপাখ্যান

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন