৪.৪৯ খলিফা অল হাদীর অন্তিম দশা

ক্ষিতিশ সরকার

শোনা যায়, আব্বাসের তৃতীয় বংশধর খলিফা মাহদী তার মৃত্যুকালে প্রিয়তম জ্যেষ্ঠ পুত্র অল হাদীকে মসনদের উত্তরাধিকারী করে গিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি একটি শর্ত রেখে গিয়েছিলেন। তা হলো, অল হাদী মারা যাবার পর মাহদীর কনিষ্ঠ পুত্র হারুণ অল রসিদ মসনদ পাবে, কিন্তু জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অল হাদীর মৃতদেহে তার কোনও অধিকার বর্তাবে।

অল হাদী ধর্মাবতার হয়ে মসনদে বসার পর থেকে সে অনুজ অল রসিদের ওপর দারুণ হিংসুটে হয়ে উঠলো। দিনে দিনে মিথ্যা সন্দেহের দানা বাঁধতে লাগলো তার মনে। নানা ছল ছুতো খুঁজতে লাগলো, কী উপায়ে রসিদকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায়।

কিন্তু হারুনের মা খাইজারান অত্যন্ত বুদ্ধিমতী বিচক্ষণ রমণী ছিলেন। প্রতি পদেই তিনি হারুনকে সম্ভাব্য বিপদ থেকে আগলে রাখতেন। খলিফা মা-সুদ্ধ ছোট ছেলেকে সাবাড় করে দেবার মতলব ভঁজতে লাগলো।

একদিন খলিফা অল হাদী তার নন্দন-কাননে প্রিয়তমা বাদী ঘদিরকে সঙ্গে নিয়ে আনন্দ বিহার করছিলো।

ঘদিরকে আজ মাত্র চল্লিশ দিন হলো হারেমে আনা হয়েছে। এই চল্লিশ দিনের মধ্যে একটা মুহূর্তের জন্য খলিফা তাকে চোখের আড়াল করতে পারেনি। তার রূপ-সুধা পান করে করে অলস দিন কাটাচ্ছে সে।

বাগানের ঠিক মাঝখানে গালিচা পাতা হয়েছে। বিখ্যাত ওস্তাদ ইশাক এসেছে গান শোনাতে।

প্রথমে ঘদির গান গাইলো। যে গানের মূৰ্ছনায় তন্ময় হয়ে রইলো ইশাক। অল হাদীও মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে সুন্দরী বাঁদী ঘদিরের মুখের দিকে।

হঠাৎ যেন কি ঘটে গেলো, খলিফা অল হাদী আর্তনাদ করে উঠলো। নিজের মনেই বিড় বিড় করে বলতে লাগলো, প্রত্যেকেরই সময়সীমা বাঁধা আছে। তার এক মূহুর্ত বেশি এখানে কাটাতে পারবে না কেউ। একদিন সময় ফুরালে সবাইকে সেখানে চলে যেতে হবে।

এরপর একটুক্ষণ গুম মেরে বসে থাকলো খলিফা। তারপর চিৎকার করে হাঁকতে লাগলো, মাসরুর। জলদি মাসরুরকে এখানে পাঠিয়ে দাও।

তক্ষুণি খলিফার দেহরক্ষী মাসরুর এসে হাজির হলো, বান্দা হাজির জাঁহাপনা।

এই যে মাসরুর, তুমি এসেছ, হাঁপাতে হাঁপাতে অল হাদী বললো, এক্ষুণি যাও, অল রসিদের কাটা মুণ্ডু এনে হাজির কর আমার সামনে।

মাসরুর অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো একটুক্ষণ। ছোটবেলা থেকে অল। রসিদকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে সে। এ দুনিয়ায় তার চেয়ে প্রিয় বস্তু আর কিছু নাই। সেই প্রাণাধিক প্রিয় অল রসিদকে নিজের হাতে হত্যা করতে হবে আজ? ইয়া আল্লাহ, এ কি অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে ঠেলে দিলে আমায়। অল হাদী এখন স্বয়ং ধর্মাবতার। তার হুকুম অমান্য করা শুধু ঘোরতর অপরাধ নয়, মহা অধর্ম, মহা পাপও বটে। কিন্তু জগতে পাপ ও পুণ্য, ধর্ম ও অধর্মর চেয়ে বড় কি আর কিছুই নাই।নফর। মাসরুর এ প্রশ্নের উত্তর পাবে কোথায়?

কী দাঁড়িয়ে রইলে কেন? আমার হুকুম শুনতে পাওনি?

গর্জে উঠলো অল হাদী।

—জী হ্যাঁ, জাঁহাপনা।

এই বলে সে হারেমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে স্বগতভাবে শুধু বললো, আমরা সবাই আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি। আবার মেয়াদ ফুরালে তার চরণেই ফিরে যাবো। তারপর এক বদ্ধ মাতালের মতো টলতে টলতে গিয়ে হাজির হলো সুলতান জননী খাজিরানের মহলে।

এই সময় রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

 

নয়শো তিরাশিতম রজনী।

আবার সে বলতে শুরু করে :

মাসরুরকে অস্বাভাবিক ভাবে টলতে টলতে আসতে দেখে খাইজারান অবাক হয়ে কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, কী ব্যাপার, অমন টলমল করছিস কেন মাসরুর?

মাসুরুর বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না, মা জননী! আপনার গর্ভের সন্তান আমার প্রভু খলিফা হুকুম করেছেন তাঁর সহোদর ভাই অল রসিদের শির কেটে নিয়ে যেতে।

এই কথা শোনা মাত্র বিধবা বেগমসাহেবার চোখে অন্ধকার নেমে আসে।

-সর্বনাশ, কী উপায় হবে? সে আমার গর্ভজাত সন্তান হতে পারে, কিন্তু এখন তো সে বাগদাদের খলিফা ধর্মাবতার। তার হুকুম অমান্য বা রদ করার সাধ্য তোইহ দুনিয়ায় কারো হতে পারে না। পুত্রের এই আক্রোশ থেকে রসিদকে সে কী করে প্রাণে বাঁচাবে?

কিন্তু বিপদে অধীর হলে চলবে না। মাসরুরকে বললেন, যা শিগ্নির, হারুনকে আমার কাছে নিয়ে আয় এক্ষুণি।

হারুন অল রসিদ নিজের ঘরে বিশ্রাম করছিলো। মাসুরুর ছুটে গিয়ে তাকে ঠেলে তুললো, মালিক, শিগ্নির চলুন, মা জননী আপনাকে তলব করেছেন।

হারুন কিছুই আন্দাজ করতে পারে না। তাড়াতাড়ি সে সাজগোজ করে মায়ের মহলে এসে দাঁড়ায়। খাইজারান আকুল হয়ে ছুটে এসে পুত্রকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। মুখে কোনও কথা বলতে পারেন না।

একটু পরে একটা ছোট্ট কুঠরীতে গিয়ে ছেলেকে নিয়ে বসেন তিনি।

—শোনো বাবা, তোমার মাথার ওপর খাড়া ঝুলছে, এক্ষুণি তোমার গর্দান যাবে। তোমার বড় ভাই এই হুকুমই দিয়েছে মাসরুরকে। তোমার কাটা মুণ্ডু সে দেখতে চায় আজই। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এই গুপ্ত কুঠরিতেই লুকিয়ে থাক। কিছুতেই বাইরে বেরুবে না।

এরপর সুলতান-জননী বাইরে এসে মাসরুরকে বললো, যাও, এখনও হয়তো সবাই ঘুম থেকে ওঠেনি, দরবারের আমিরদের বাড়িতে গিয়ে খবর দাও আমি তাদের সঙ্গে এই মুহূর্তে দেখা করতে চাই।

কিছুক্ষণের মধ্যে খাইজারানের মহলে আমিরদের দরবার বসলো। বিধবা বেগমসাহেবা সকলকে উদ্দেশ করে বলতে থাকলেন, আপনারা তো হারুনকে ভালো করেই জানেন। সে কি করে, কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে কিছুই আপনাদের অজানা নয়। আপনারাই বলুন, আজ পর্যন্ত সে কখনও তার বড় ভাই-এর বিরুদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে? অথবা প্রজা ক্ষেপিয়ে বিদ্রোহ করার চেষ্টা করেছে কোনও অঞ্চলে?

সকলে সমস্বরে বললো, না না, এ সব কী বলছেন, মহামান্য বেগম সাহেবা? শাহজাদা হারুন অল রসিদের মতো ভালো ছেলে হয় না। তার মনে কোনও পাপ নাই। সে জ্ঞানত কারো বিন্দুমাত্র অনিষ্ট করতে পারে এ আমরা বিশ্বাস করি না।

—তবে কোন্ অপরাধে খলিফা তার কনিষ্ঠ ভাই-এর গর্দান নেবার হুকুম করেছে? সে মাসরুরকে পাঠিয়েছে হারুনের শির কেটে নিয়ে গিয়ে তার সামনে হাজির করতে। কিন্তু কেন এই প্রাণদণ্ড? কী তার অপরাধ? আপনারা এর বিহিত করুন।

আমির অমাত্যরা হতবাক হয়ে মাথা নত করলো সকলে। ভয়ে কাঁটা দিয়ে উঠতে লাগলো সারা শরীর।

এই সময় উজির রাবিয়াহ উঠে দাঁড়িয়ে মাসরুরকে ইশারায় ডেকে কাছে এনে ফিসফিস করে বললো, খলিফা তোমাকে হুকম তামিল করতে পাঠিয়েছেন, অথচ তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কালক্ষেপ করছে, তাতে তো কোনও সুরাহা হবে না।

মাসরুর সানয়নে বলে, কিন্তু কী করবো হুজুর! এ হুকুম আমি তামিল করবো কী উপায়ে? তার চেয়ে আমারই গর্দান নিক খলিফা।

উজির বললো, বিপদে অধৈৰ্য্য হতে নাই, কথা শোনো, তুমি খলিফার সামনে গিয়ে বলল, সুলতান-মাতা সন্তানকে বুকে আঁকড়ে ধরে আছেন, সেই কারণে তুমি তাকে বধ করতে পারছে না। মাসরুর অল হাদীর সামনে হাজির হতে সে হুঙ্কার ছাড়ে, কই, কোথায় তার কান্না? আমার হুকুম অমান্য করার সাজা কি জানিস না নরাধম?

—জানি জাঁহাপনা, আমার গোস্তাকি মাফ করবেন, আমি ধর্মাবতারের গোলাম, তাঁর আজ্ঞাবহ দাস, কিন্তু কি করবো মালিক, হারুন অল রসিদকে মাজননী বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। তাকে বার বার মিনতি করে বলেছি, ওকে ছেড়ে দিন মা, আমাকে খলিফার হুকুম তামিল করতে দিন। কিন্তু তার এক কথা, আমাকে হত্যা না করে হারুনকে হত্যা করতে পারবি না তোরা।

মাসরুরের কথা শুনে ক্রোধে আরক্ত হয়ে মাইফিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে অল হাদী। বাদী ঘদির আর ওস্তাদ ইশাককে বলে তোমরা যেও না, অপেক্ষা কর, আমি এখুনি ফিরে আসছি।

গটগট করে সে সোজা মায়ের মহলে ঢুকে পড়ে। এপাশে ওপাশে তারই দরবারের আমির অমাত্যরা সকলে দণ্ডায়মান। অথচ সেদিকে ভুলেও ভূক্ষেপ করলো না সে। সোজা মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কৈফিয়ত তলব করলো, তোমার এতবড় স্পর্ধা, আমার শাসন কার্যে ব্যাঘাত ঘটাতে চাও?

মা বলে, না ধর্মাবতার, আমি পাপিষ্ঠা নই। বাগদাদের খলিফা ন্যায়মূর্তি, ধর্মাবতার। তার বিচারের সমালোচনায় মহাপাপ হয়।

শুধু আমি জানতে ইচ্ছা করি বাবা, কেন তুমি তোমার কনিষ্ঠ সহোদরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছ? কী তার অপরাধ, সে কী তোমাকে গদীচ্যুত করার জঘন্য ষড়যন্ত্র করেছে? অথবা প্রজা ক্ষেপিয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে?

-না। সে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নাই।

-তবে? তবে আর এমন কী গুরুতর ব্যাপার ঘটতে পারে, যার জন্য তাকে খাঁড়ার নিচে মাথা পেতে দিতে হবে?

খাইজারানের প্রশ্নবাণে কাবু হয়ে পড়ে অল হাদী। একটুক্ষণ গুম হয়ে থেকে বলে, সাক্ষ্য প্রমাণ কিছু নাই, তবে আজ রাতে স্বপ্নের ঘোরে তাকে আমি এক অপকর্ম করতে দেখেছি। আমি দেখলাম, হারুন আমার প্রাণাধিক প্রিয়া বাঁদী ঘদিরকে নিয়ে আদর সোহাগ করছে। এরপরই আমার তন্দ্রা ছুটে যায়। আমি মাসরুরকে ডেকে পাঠিয়ে বলি, এখুনি হারুনের শির কেটে আন। আমার কাছে আমার বাঁদী ঘদির আর আমার মসনদ দুই-ই সমান প্রিয়। কোনওটাকে ছেড়েই আমি জীবন ধারণ করতে পারবো না। সেই প্রিয়তমাকে যে ভাগিয়ে বেহাত করে নিতে চায়, তার চেয়ে বড় শত্রু আমার আর কেউ নয়, মা।

—অবাক করলে বেটা, তোমার মতো বিচক্ষণ বুদ্ধিমান নরপতির মুখে এহেন অবোধ বালকের মতো বাক্য শোভা পায় না। স্বপ্নের কতটুকু সত্য হয়ে ফুটে ওঠে মানুষের জীবনে? আমরা অবচেতন মনে যা চিন্তা ভাবনা করি তারই কিছু কিছু স্বপ্নে প্রতিফলিত হয়ে সামনে ধরা দেয়। কিন্তু তার মধ্যে সত্য কতটুকু? ছিঃ ছিঃ, এই তুচ্ছ মিথ্যা কারণে তুমি তোমার আদরের ভাইকে হত্যা করতে চাইছো?

আমির অমাত্যরাও খলিফাকে বোঝালো, স্বপ্নের ওপর ভিত্তি করে কোনও কাজ করা কোনও বুদ্ধিমানের উচিত নয়।

এবার অল হাদী নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভীষণ লজ্জিত হয়ে হারেম ত্যাগ করে বাগানে চলে যায়।

সেইদিনই সন্ধ্যাবেলায় জলকেলী করতে নেমে অল হাদী বাঁ পায়ে একটু চোট পায়। সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটা ফুলেও ওঠে। এবং আবের মতো একটা ঢিবি বেঁধে যায়। তারপর শুরু হয় অসহ্য যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণা ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেহে। এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।

এই সংবাদ মাসরুর নিয়ে আসে খাইজারানের কাছে। পুত্রশোকে তিনি শোকাতুর না হয়ে – স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলেন, যাক, আল্লাহর অসীম কৃপা, তাকে এই পাপকর্ম থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এখুনি তুই হারুনকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে আয়। ওকে কিছু বলার দরকার নাই।

মাসরুর অল রসিদের ঘরে গিয়ে দেখে সে ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। ঠেলা দিয়ে জাগিয়ে তুলে সে বলে, মালিক, শিগগির চলুন, মা জননী আপনাকে ডাকছেন।

-কেন রে বান্দা, কী ব্যাপার? আবার কোনও নতুন পরোয়ানা এসেছে নাকি বড় ভাই-এর কাছ থেকে?

মাসরুর বলে, সে আমি বলতে পারবো না, হুজুর। আপনি আর দেরি করবেন না। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিন।

খাইজারান পুত্র হারুনের মাথায় হাত রেখে বলে, বাবা ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। অধর্ম সয় না, তাই তার নিধন হয়েছে। তোর বড় ভাই আজ দেহ রেখেছে। এখন তুই-ই হবি আইনতঃ খলিফা। শাসনদণ্ড হাতে নিয়ে এখনি মসনদে গিয়ে বোস। আমি উজির আমির সবাইকে এত্তেলা পাঠাচ্ছি। আজই তোর অভিষেক হবে।

এই সময় রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

 

নয়শো চুরাশিতম রজনী :

আবার সে বলতে শুরু করে :

একদিকে শোকের মিছিল, অন্যদিকে বর্ণাঢ্য অভিষেক উৎসব। দেশবাসীরা খলিফার অকাল বিয়োগে যেমন শোকাহত হলো অন্যদিকে হারুন অল রসিদকে নতুন খলিফা রূপে পেয়ে আনন্দে নেচে উঠলো। সেইদিন থেকেই শুরু হলো সারা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম সুলতানের হুকুমত কাল।

এবার আসুন আমরা ঘদিরের কথা বলি।

সাড়ম্বরে মসনদে আরোহণ করার পর সন্ধ্যাবেলায় খলিফা হারুন অল রসিদ হারেমে ঘদিরের কাছে সংবাদ পাঠালেন, ঘদির যেন অবিলম্বে বিলাস সজ্জায় সজ্জিত হয়ে তাকে সঙ্গদান করার জন্য নন্দনকাননের প্রমোদ বিহারে চলে আসে।

ঘদির এই রকমই একটা আশঙ্কা করছিলো। খলিফার নির্দেশ অমান্য করার শক্তি কারো নাই। ঘদির শোকের কালো পোশাক খুলে জমকালো সাজপোশাক পরে তৈরি হয়ে প্রমোদ বিহারে এসে হাজির হয়।

খলিফা এগিয়ে এসে ঘদিরকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমি আশা করবো, প্রতিদিন তুমি যেমন এখানে এসে বড় ভাইকে তোমার মধুর সঙ্গীত শোনাতে সেই রকম আমাকে শোনাবে আজ থেকে!

ঘদির কুর্ণিশ জানিয়ে বলে, ধর্মাবতার আমি আপনার আজ্ঞাবহ বাঁদী। আপনি যা হুকুম করবেন আমি তাই করবো।

ঘদির অতি সহজেই বশ্যতা স্বীকার করবে তা কিন্ত, ভাবেননি খলিফা। সে যে ভাবে অল হাদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলো তাতে হারুন অল রসিদের ডাকে সাড়া না দিলেও তিনি বিস্মিত হতেন না। বরং এতো সহজে পোষ মেনে গেলো দেখেই তিনি অস্বস্তির মধ্যে পড়লেন।

-তোমার গান শুনে নাকি বনের হিংস্র জানোয়াররাও পোষ মানে। তা আমাকে শোনাবে একখানা?

ঘদির লাস্য হেসে বলে, কেন নয়, জাঁহাপনা? এখন থেকে শুধুমাত্র আপনাকেই তা শোনাবো আমার গান।

পর পর দু’খানা গান গাইলো ঘদির। বলা বাহুল্য, গান দু’খানির সুর ছিলো বেহাগ করুণ রসের। তা হোক, বড় ভালো গায় সে। সুরের মূর্ঘনা ঝঙ্কৃত হতে থাকে সারা দেহের রক্তকণিকায়। মথিত করতে থাকে হৃদয়।

আসরটাকে বেশ জমজমাট করার জন্য হারুন অল রসিদ বলেন, সঙ্গীতের সঙ্গে সুরা না হলে কী জমে ঘদির? তুমি কি বলো?

কিন্তু জাঁহাপনা, এই মাইফিলে ওস্তাদ ইশাক না থাকলে শুধু সুরায় কিছু জমবে না।

খলিফা বলেন, তার জন্য চিন্তা কী! এক্ষুনি তাকে হাজির হতে বলছি এখানে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইশাক এসে কুর্ণিশ জানিয়ে আসন গ্রহণ করে।

মদের পাত্র পূর্ণ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা গড়িয়ে না যাওয়া অবধি সমানে সুরাপান চলতে থাকে। এক সময় ইশাক মাতোয়ালা হয়ে ওঠে।

—এই চাদিনী রাত, ঝর্ণার কলতান, পাখীর কূজন, ফলের সৌরভ—সব মিলে ন এক অপূর্ব পরিবেশ তৈরি হয়েছে জাঁহাপনা। এখন তো গান ছাড়া আর কিছুই

মানায় না। অল রসিদ বলেন, তা হলে গানই হোক। ইশাক বলে, মহামান্যা মালকিনই গান ধরুন আগে।

ঘদির গাইতে শুরু করে। চোখ বুজে তন্ময় হয়ে শুনতে থাকে খলিফা আর ইশাক। হঠাৎ একটা শব্দে চমকে ওঠে দুজনে। ঘদির গাইতে গাইতে পড়ে গেছে মেঝের উপর।

সুলতান ছুটে গিয়ে ধরে তোলেন ঘদির-এর নিষ্প্রাণ দেহখানা। কী ভাবে ঘদির মারা গিয়েছিলো সে কথা কোনদিনই জানা যায়নি। অল হাদীর কবরের পাশে ঘদিরের মৃতদেহকে সমাহিত করা হয়েছিলো। এরপর যুবকটি আর এক কাহিনী বলতে আরম্ভ করে–

সকল অধ্যায়

১. ১.০১ বাদশাহ শারিয়ার ও তার ভাই বাদশাহ শাহজামানের কাহিনী
২. ১.০২ গাধা, বলদ আর গৃহস্বামীর উপাখ্যান
৩. ১.০৩ সওদাগর আর আফ্রিদি দৈত্য
৪. ১.০৪ প্রথম শেখের কাহিনী
৫. ১.০৫ দ্বিতীয় শেখের কাহিনী
৬. ১.০৬ তৃতীয় শেখের কাহিনী
৭. ১.০৭ ধীবর আর আফ্রিদি দৈত্যের কাহিনী
৮. ১.০৮ উজির, সুলতান য়ুনান হেকিম রায়ানের কিসসা
৯. ১.০৯ সিনবাদ আর বাজপাখি
১০. ১.১০ শাহজাদা আর রাক্ষসী
১১. ১.১১ শাহজাদা আর রঙিন মাছ
১২. ১.১২ কুলি-ছেলে আর তিন কন্যা
১৩. ১.১৩ প্রথম কালান্দার ফকিরের কাহিনী
১৪. ১.১৪ দ্বিতীয় কালান্দর ফকিরের কাহিনী
১৫. ১.১৫ তৃতীয় কালান্দর ফকিরের কাহিনী 
১৬. ১.১৬ বড় বোন জুবেদার কাহিনী
১৭. ১.১৭ মেজো বোন আমিনার কাহিনী
১৮. ১.১৮ একটি স্ত্রীলোকের খণ্ডিত দেহ, তিনটি আপেল ও নিগ্রো রাইহান
১৯. ১.১৯ উজির সামস অল-দিন তার ভাই নূর অল-দিন ও হাসান বদর অল-দিন
২০. ১.২০ দর্জি, কুঁজো, ইহুদি হেকিম, বাবুর্চি, খ্রীস্টান দালাল
২১. ১.২১ খ্ৰীষ্টান দালালের কাহিনী
২২. ১.২২ বাবুর্চির কাহিনী
২৩. ১.২৩ ইহুদী হেকিমের কাহিনী
২৪. ১.২৪ দর্জির কাহিনী
২৫. ১.২৫ নাপিতের কাহিনী
২৬. ১.২৬ মধুমিতা আর আলী নূর-এর কাহিনী
২৭. ১.২৭ ঘানিম আইয়ুব আর কুৎ-অল-এর কাহিনী
২৮. ১.২৮ উমর অল-নুমান, তার পুত্র সারকান ও দু-অল মাকানের কাহিনী
২৯. ১.২৯ আজিজ আর আজিজার কাহিনী
৩০. ১.৩০ শাহজাদা তাজ অল-মূলক ও শাহজাদী দুনিয়া
৩১. ১.৩১ দু-অল মাকানের পুত্র কান মা-কানা
৩২. ১.৩২ চরস খোরের কাহিনী
৩৩. ১.৩৩ রাজহাঁস ও ময়ূর-ময়ূরী
৩৪. ১.৩৪ মেষপালক রাখাল আর একটি মেয়ে
৩৫. ১.৩৫ কচ্ছপ ও বকের কাহিনী
৩৬. ১.৩৬ নেকড়ে আর খেঁকশিয়ালের কাহিনী
৩৭. ১.৩৭ ইঁদুর আর নেউলের গল্প
৩৮. ১.৩৮ কাক ও কাঠবেড়ালীর কাহিনী
৩৯. ১.৩৯ আলী-ইবন বকর ও সুন্দরী সামস আল-নাহারের কাহিনী
৪০. ১.৪০ শাহজাদা কামার আল-জামান আর শাহজাদী বদর-এর প্রণয় কাহিনী
৪১. ১.৪১ খুশ বাহার ও খুশ নাহারের কাহিনী
৪২. ১.৪২ আলা অল-দিন আবু সামাতের কাহিনী
৪৩. ১.৪৩ বিদূষী হাফিজার কাহিনী
৪৪. ১.৪৪ কবি আবু নবাসের দুঃসাহসিক কীর্তি
৪৫. ২.০১ সিন্দাবাদের প্রথম সমুদ্র-যাত্রা
৪৬. ২.০২ সিন্দাবাদের দ্বিতীয় সমুদ্র-যাত্রা
৪৭. ২.০৩ সিন্দাবাদের তৃতীয় সমুদ্র-যাত্রা
৪৮. ২.০৪ সিন্দাবাদের চতুর্থ সমুদ্র-যাত্রা
৪৯. ২.০৬ সিন্দাবাদের ষষ্ঠ সমুদ্র-যাত্রা
৫০. ২.০৭ সিন্দাবাদের সপ্তম ও শেষ সমুদ্রযাত্রা
৫১. ২.০৮ সুন্দরী জুমুর‍্যুদ এবং আলী শার-এর কাহিনী
৫২. ২.০৯ নানা রঙের ছয় কন্যার কাহিনী
৫৩. ২.১০ তাম্র নগরীর কাহিনী
৫৪. ২.১১ ইবন আল-মনসুর এবং দুই নারীর কাহিনী
৫৫. ২.১২ কসাই ওয়াঁর্দার ও উজির-কন্যার কাহিনী
৫৬. ২.১৩ জামালিকার কাহিনী
৫৭. ২.১৪ বুলুকিয়ার কাহিনী
৫৮. ২.১৫ খুবসুরৎ নওজোয়ান সাদ-এর কাহিনী
৫৯. ২.১৬ হাসি-তামাশায় হারুন অল-রসিদ
৬০. ২.১৭ ছাত্র ও শিক্ষকের কাহিনী
৬১. ২.১৮ অদ্ভুত বটুয়ার কাহিনী
৬২. ২.১৯ হারুন অল রসিদের মহব্বতের কাহিনী
৬৩. ২.২০ কে ভালো—উঠতি বয়সের ছোকরা, না—মাঝ-বয়সী মরদ
৬৪. ২.২১ শসা-শাহজাদা
৬৫. ২.২২ পালিত কেশ
৬৬. ২.২৩ সমস্যা-সমাধান
৬৭. ২.২৪ আবু নবাস আর জুবেদার গোসলের কাহিনী
৬৮. ২.২৫ আবু নবাসের কবির লড়াই
৬৯. ২.২৬ গাধার গল্প
৭০. ২.২৭ আইনের প্যাঁচে জুবেদা
৭১. ২.২৮ স্ত্রী না পুরুষ
৭২. ২.২৯ বখরা
৭৩. ২.৩০ মাদ্রাসার মৌলভীর কিসসা
৭৪. ২.৩১ মেয়েদের সেমিজের কারুকর্মের কথা
৭৫. ২.৩২ পেয়ালার বাণী
৭৬. ২.৩৩ মসুলের বিখ্যাত কালোয়াতী গায়ক ইশাকের কাহিনী – বাক্সের মধ্যে খলিফা
৭৭. ২.৩৪ মুদ্যোফরাশ
৭৮. ২.৩৫ সুর্মার কাহিনী
৭৯. ২.৩৬ ছেলে অথবা মেয়ে
৮০. ২.৩৭ আজব খলিফা
৮১. ২.৩৮ গুলাবী এবং রোশন এর কাহিনী
৮২. ২.৩৯ কালো ঘোড়ার আশ্চর্য যাদু কাহিনী
৮৩. ২.০৫ সিন্দাবাদের পঞ্চম সমুদ্র-যাত্রা
৮৪. ৩.০১.১ ধূর্ত ডিলাইলাহ ও তার জালিয়াৎ কন্যা জাইনাবের কাহিনী
৮৫. ৩.০১.২ সওদাগর সিদি মুসিন আর খাতুনের কথা
৮৬. ৩.০১.৩ সেয়ানা চোর আলীচাঁদ-এর কিসসা
৮৭. ৩.০২ ধীবর যুদর অথবা আশ্চর্য যাদু-থলের কাহিনী
৮৮. ৩.০৩ আবু কাইর আর আবু শাইর-এর মজাদার কাহিনী
৮৯. ৩.০৪ দুই আবদাল্লার উপকথা
৯০. ৩.০৫ পীতাম্বর যুবকের কাহিনী
৯১. ৩.০৬ আনারকলি এবং বদর বাসিমের কিসসা
৯২. ৩.০৭ মিশরের ফাল্লাহ ও তার ফর্সা ছেলেমেয়েরা
৯৩. ৩.০৮ খলিফা ও জেলের কাহিনী
৯৪. ৩.০৯ বসরাহর হাসানের দুঃসাহসিক অভিযান
৯৫. ৩.১০ স্ত্রীলোকের চাতুরী
৯৬. ৩.১১ আবু অল হাসানের কাহিনী
৯৭. ৩.১২ জাইন মাওয়াসিফের মহম্মতের কিসসা
৯৮. ৩.১৩ কুঁড়ের বাদশার কাহিনী
৯৯. ৩.১৪ নওজোয়ান নূর এবং এক লড়াকু মেয়ের কিসসা
১০০. ৩.১৫ সপ্তম হীরক কন্যার কাহিনী
১০১. ৩.১৬.১ আলা অল-দিন ও আশ্চর্য চিরাগ বাতি
১০২. ৩.১৬.২ আলাদিনের চেরাগ (পার্ট ২)
১০৩. ৩.১৬.৩ আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ (পার্ট ৩)
১০৪. ৩.১৬.৪ আলাদিনের দৈত্য (পার্ট ৪)
১০৫. ৩.১৬.৫ আলাদিনের জাদুর চেরাগ (পার্ট ৫ / শেষ পর্ব)
১০৬. ৪.০১ হিতোপদেশের গল্প
১০৭. ৪.০১ হিতোপদেশের গল্প
১০৮. ৪.০২ গোলাপ-সুন্দরী ফারিজাদের কাহিনী
১০৯. ৪.০৩ কামর ও হালিমার কাহিনী
১১০. ৪.০৪ হারাম-আকিলের কাহিনী
১১১. ৪.০৫ সুলতান মহম্মদের ন্যায় বিচার
১১২. ৪.০৬ শেখ হাসান আবদাল্লার কাহিনী
১১৩. ৪.০৭ আবু কাশেমের অঙ্গবাস
১১৪. ৪.০৮ চরসের নেশায়
১১৫. ৪.০৯ ভ্রষ্টা নারী এবং তার নওজোয়ান নাগর
১১৬. ৪.১০ বৃদ্ধ কাজীর তরুণী বিবি
১১৭. ৪.১১ সুন্দরীর নূরের পাণিপ্রার্থীরা
১১৮. ৪.১২ মুতাবাকিল আল্লাহর বিত্ত বৈভব
১১৯. ৪.১৩ সুলতান মামুদের কাহিনী
১২০. ৪.১৪ বসরাহর আবু কাশেম
১২১. ৪.১৫ তিন কুলজী বিদ্যা-বিশারদের কাহিনী
১২২. ৪.১৬ সুলতান মাহমুদের বাঁদর
১২৩. ৪.১৭ তিন পাগলের কাহিনী
১২৪. ৪.১৮ আলিবাবা ও চল্লিশ চোর
১২৫. ৪.১৯ বাগদাদের বড় সেতুর উপরে অল-রসিদ
১২৬. ৪.২০ সিদি নুমানের কাহিনী
১২৭. ৪.২১ কাঠুরিয়া যুবরাজ
১২৮. ৪.২২ বৃদ্ধ শেখের কাহিনী
১২৯. ৪.২৩ খঞ্জ মাদ্রাসা শিক্ষকের কাহিনী
১৩০. ৪.২৪ অন্ধ ভিক্ষারীর কাহিনী
১৩১. ৪.২৫ গবেটচন্দরের কাহিনী
১৩২. ৪.২৬ তিন বোনের কাহিনী
১৩৩. ৪.২৭ তিন কন্যার কাহিনী
১৩৪. ৪.২৮ ফেরিওয়ালার তিন কন্যা
১৩৫. ৪.২৯ দামাসকাসের রূপবান সওদাগর
১৩৬. ৪.৩০ হাবিব হাবিবার কাহিনী
১৩৭. ৪.৩১ সর্দারের নষ্টাচরিত্রা বিবি
১৩৮. ৪.৩২ নফর ফিরুজের বিবি ও সুলতান
১৩৯. ৪.৩৩ অপরিণামদর্শী সিরিয়া সওদাগরের শিক্ষা
১৪০. ৪.৩৪ হারুন অল রসিদের গ্রন্থপাঠ
১৪১. ৪.৩৫ শাহজাদা হীরার কাহিনী
১৪২. ৪.৩৬ গোহা ও তার ইয়ার-বন্ধুরা
১৪৩. ৪.৩৭ তুফা অল কুলবের কাহিনী
১৪৪. ৪.৩৮ অল মালিক বাইবারসের দরবারে – দ্বাদশ সর্দারের কাহিনী
১৪৫. ৪.৩৯ চীন শাহজাদীর বাগানের সমুদ্র-গোলাপ
১৪৬. ৪.৪০ দজ্জাল বিবির অত্যাচারে দেশত্যাগী মারুফ-মুচির ভাগ্য-বিবর্তন
১৪৭. ৪.৪১ আলেকজান্দ্রা শহরের ধনী যুবকের কাহিনী
১৪৮. ৪.৪২ ফিন্দের দুই বীরাঙ্গনা কন্যা
১৪৯. ৪.৪৩ ফতিমার কাহিনী
১৫০. ৪.৪৪ কিণ্ডাইটের সম্রাট হজর ও তার স্ত্রী হিন্দের গল্প
১৫১. ৪.৪৫ আয়েশা কথিত কাহিনী
১৫২. ৪.৪৬ খলিফা ওমর ইবন অল-খাতাবের কাহিনী
১৫৩. ৪.৪৭ কুফার কবি মহম্মদ কথিত কাহিনী
১৫৪. ৪.৪৮ পরান্নভোজী তুফেনের কাহিনী
১৫৫. ৪.৪৯ খলিফা অল হাদীর অন্তিম দশা
১৫৬. ৪.৫০ অভিশপ্ত কণ্ঠহার
১৫৭. ৪.৫১ মশুলের গায়ক ইশাকের রোজনামচা
১৫৮. ৪.৫২ অল মামুন ও জুবেদা বেগমের কাহিনী
১৫৯. ৪.৫৩ জাফরের অন্তিম দশা
১৬০. ৪.৫৪ শাহজাদা জুঁই আর শাহজাদী বাদামের প্রেম উপাখ্যান

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন