স্বাধীন উমাইয়া আমীরদের রাজত্ব
(৭৫৬-৯২৯ খ্রীঃ)
তৃতীয় অধ্যায়
(৭৫৬-৭৮৮)
খলিফার অধীনে মুসলিম সাম্রাজ্য ছিল এক শতাব্দীকাল। প্রতিষ্ঠা লগ্নে তিনি ছিলেন প্রকৃত ক্ষমতা ও শক্তির অধিকারী। সিন্ধু হইতে স্পেন পর্যন্ত ভূখণ্ডের সমস্ত প্রাদেশিক গভর্নরদিগকে তিনি নিজের ইচ্ছা মাফিক খলিফা নিযুক্ত ও অপসারণ করিতেন। কিন্তু সাম্রাজ্যের বিশাল বিস্তৃতি ইহাকে ঐক্যবদ্ধ রাখিবার পক্ষে অন্তরায় সৃষ্টি করে। আব্বাসীয় খলিফাদের ক্ষমতা সুসংহত করিবার পূর্বেই দামেস্কের উমাইয়া রাজবংশের জনৈক রাজপুত্র স্পেনে খলিফার ক্ষমতা অস্বীকার করেন।
জাব নদীর তীরে আব্বাসীয়দের হাতে দ্বিতীয় মারওয়ানের পরাজয়ের সাথে সাথে উমাইয়া খেলাফতের অবসান ঘটে এবং আব্বাসীয় রাজবংশ ৭৫০ খ্রীস্টাব্দের মার্চ মাসে খেলাফতে অধিষ্ঠিত হয়। আব্বাসীয়রা উমাইয়াদের সহিত নিষ্ঠুর ও নির্মম ব্যবহার করে। বহু উমাইয়াকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। প্যালেস্টাইন এবং বসরার একজন উমাইয়াও এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের হাত হইতে রক্ষা পায় নাই। এক হাত ও এক পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আবান বিন মুয়াবিয়া বিন হিশাম সিরিয়ার পল্লী ও শহরে ঘুরিয়া বেড়ায়। হিশামের পৌত্র আবদাহকে হত্যা করা হয়। প্রথম মুয়াবিয়া ও দ্বিতীয় ওমর ব্যতীত উমাইয়া খলিফাদের মৃত দেহগুলিকে কবর হইতে উঠাইয়া অবমাননা করা হয়। তথাপি কিছু সংখ্যক উমাইয়া আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হয় এবং তাহারা বাদাবী গোত্রীয়দের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করে। ইহাদের মধ্যে খলিফা হিশামের পৌত্র এবং মুয়াবিয়ার পুত্র আবদুর রহমান (জন্ম ১১৩ হিঃ/ ৭৩১ খ্রীস্টাব্দ) ছিলেন অন্যতম।
আবদুর রহমান ইউফ্রেতিসের নিকটবর্তী রাহতে পলায়ন করেন। সেখানে তাহার পরিবারের জীবিত সদস্যরাও তাহার সহিত মিলিত হয়। ইহাদের মধ্যে ছিলেন তাঁহার দুই কন্যা, তের বৎসর বয়স্ক তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা এবং চার বৎসর বয়স্ক তাহার পুত্র সুলায়মান। আফ্রিকার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ যাত্রার জন্য তিনি প্রস্তুতি গ্রহণ করিতে শুরু করেন। পূর্ব হইতেই আফ্রিকায় কিছু সংখ্যক উমাইয়া রাজপুত্র আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল। যেমন—জাজি বিন আবদুল আজিজ বিন মারওয়ান, আবদুল মালিক বিন ওমর বিন মারওয়ান, আছি বিন ওয়ালিদ, মুসা বিন ওয়ালিদ এবং হাবিব বিন আবদুল মালিক।
কিন্তু আব্বাসীয় অনুগামীদের অনুসরণের জন্য তাঁহার ভ্রাতাসহ তিনি অরণ্যে আত্মগোপন করিতে বাধ্য হন। স্বীয় আজাদকৃত দাস বদর এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সহিত মিলিত হইয়া তাহারা আত্মগোপনের জায়গা হইতে বাহির হইয়া ইউফ্রেতিস নদীর তীরে পৌঁছেন এবং সেখানে এক বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি আশ্রয়দাতার মাধ্যমে কিছু অশ্ব ও রসদ সংগ্রহের চেষ্টা করেন। আশ্রয়দাতার এক ক্রীতদাসের নিকট সংবাদ পাইয়া আব্বাসী সৈন্যগণ তাঁহাকে এক বাগানের মধ্যে ঘেরাও করে। তিনি এবং তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা কোন প্রকারে আত্মরক্ষা করিয়া নদীতে ঝাঁপ দেন। তের বৎসর বয়স্ক তাহার ভ্রাতা ভাল সাতার জানিত না। সে মধ্য নদী হইতে নদীর তীরে ফিরিয়া আসিতে বাধ্য হয়। কূলে অপেক্ষমান শত্রুগণ তাহাকে হত্যা করে।
আবদুর রহমান নদী অতিক্রম করিয়া নিরাপদে ফিলিস্তিন (প্যালেস্টাইন) পৌঁছেন। সেখানে তিনি তাহার পরিবার ও তাহার মুক্তদাস বদর এবং তাহার ভগ্নি উম্মে আসবাগ, মুক্তদাস আবুল সৃজা সেলিম-এর সহিত মিলিত হইয়া আফ্রিকায় রওয়ানা হন। আফ্রিকা এবং স্পেন তখনও আব্বাসীদের প্রভুত্ব স্বীকার করে নাই। আফ্রিকা এবং স্পেন তখন শাসিত হইত ফিহরী গভর্নর যথাক্রমে আবদুর রহমান বিন হাবিব আল ফিহরী এবং তাহার পুত্র ইউসুফ আল ফিহরী কর্তৃক। আবদুর রহমান তাহার মামা মাসলামাহ বিন আবদুল মালিকের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ করিয়া উৎসাহিত হইয়া শাসক হইবার আশা পোষণ করেন। তিনি ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ধূর্ত, সাহসী ও নির্ভীক। প্রথমে তিনি আফ্রিকাতে তাহার ভাগ্য পরীক্ষা শুরু করেন।
ইবনে হাবিব সেখানে নিজেকে স্বাধীন শাসক বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিলেন। ইবনে হাবিব উমাইয়া উদ্বাস্তৃদিগকে ঘৃণা করিতেন এবং কিছু সংখ্যক উমাইয়া উদ্বাস্তুকে তিনি হত্যা করেন। কারণ তাহার নিকট এক ইহুদী গণক ভবিষ্যত বাণী করিয়াছিল যে, কপালে দুইটি বলিরেখা বিশিষ্ট উমাইয়া পরিবারের জনৈক রাজপুত্র তাহার পুত্রের সাম্রাজ্য অধিকার করিয়া লইবে আবদুর রহমান নিজে তাহার হাতে নিহত হওয়া হইতে অল্পের জন্য বাঁচিয়া যান। তাহিরাতের রুস্তমীদসের এক রাজ পরিবারে মিকনাশাহ বার্বারদের মধ্যে পরবর্তীকালে তিনি আশ্রয় গ্রহণ করেন। আবদুর রহমানের ষড়যন্ত্র সম্বন্ধে অবগত হইয়া মিকনাশাহ বার্বারগণ আফ্রিকায় তাহার উদ্দেশ্য পরিত্যাগের জন্য চাপ দেন।
তিনি সিউটাতে নাফজাহ (নাফজাদাহ) গোত্রীয় বার্বার তাহার মামার নিকট গমন করেন। প্রায় পাঁচ বৎসর কালব্যাপী তিনি মুক্ত দাসের সহিত ঘুড়িয়া বেড়াইয়া এখন তিনি স্পেন এবং আফ্রিকার সিংহাসন লাভের আশায় শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টায় ব্রতী হন। সিউটাতে তিনি বার্বারদের সমর্থন লাভ করেন। কিন্তু আফ্রিকায় তাহার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ার কোন আশা ছিল না। অতঃপর তিনি স্পেনে স্থায়ীভাবে বসবাস করিবার জন্য চেষ্টা করেন। তাহার ভগ্নির ক্রীতদাস সালিম তাহার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যে ভবিষ্যত
বাণী করিয়াছিল স্পেনই তাহা পূর্ণ হওয়ার সঠিক জায়গা বলিয়া মনে করেন। অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য আবদুর রহমান তাহার বিশ্বস্ত মুক্ত দাস ও দুঃসময়ের সহচর বদরকে উত্তর স্পেনের এলভিরা, জাইন ও অন্যান্য জেলাতে প্রেরণ করেন। দামেস্ক এবং কিন্নিসরিন বিভাগের প্রায় পাঁচশত উমাইয়া অনুগামী এই এলাকায় বসতি স্থাপন করিয়াছিল।
আবদুর রহমানের উচ্চাশা পূর্ণ করার জন্য তৎকালীন স্পেনের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই সহায়ক। গোত্রীয় দ্বন্দ্বে ও দলীয় কোন্দলে পরিবেশ ছিল তখন উত্তপ্ত ও অশান্ত। খ্রীস্টান, ইহুদী এবং বার্বাররা ছাড়াও স্পেনে মুজারী ও ইয়ামানী আরবরা গুরুত্বপূর্ণ দল গঠন করিয়াছিল। পূর্ব বর্ণনা অনুযায়ী দীর্ঘদিন যুদ্ধে শেষোক্ত দুইদল এই মীমাংসায় উপনীত হয় যে, প্রতি এক বৎসর অন্তর পালাক্রমে তাহাদের প্রতিনিধিগণ স্পেনের শাসন ক্ষমতা লাভ করিবে। এই চুক্তি অনুসারে শাসনকর্তা হওয়ার প্রথম সুযোগ পান মুজারী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ইউসুফ আল ফিহরী। ইয়ামানী সম্প্রদায়ের পালা আসিলে অত্যাচারী ও স্বেচ্ছাচারী আল ফিহরী ক্ষমতা হস্তান্তর করিতে অস্বীকৃতি জানান এবং দশ বৎসর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন। তিনি আব্বাসীয় খলিফা আল-সাফফাহর প্রতি শুধু মৌখিক আনুগত্য প্রকাশ করেন। মুজারী শাখার কাইসীপ্রধান সুমায়েল ছিল ইউসুফের দৃঢ় সমর্থক।
ইউসুফ কাইসী সম্প্রদায়কে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা ও আনুকূল্য প্রদর্শন করেন। তাঁহার শাসনকালে ইয়ামানী কালবিয়াগণ সবচেয়ে বেশি অত্যাচারিত ছিল। এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত সেভিলের ওয়ালা (প্রতিনিধি) আহমদ বিন আমর নিজেকে স্বাধীন বলিয়া ঘোষণা করেন এবং ইউসুফের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। সারাদেশে গৃহযুদ্ধ ছড়াইয়া পড়ে। বিশৃঙ্খল ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলার সুযোগ লইয়া আস্তুরীয়গণ তাহাদের রাজ্যকে আরও উত্তরে সম্প্রসারিত করিতে চেষ্টা করে।
একদিকে আকস্মিক দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টি, এবং অন্যদিকে খ্রীস্টানদের আক্রমণ জনগণের মধ্যে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করে। ফলে তাহারা একটা পরিবর্তন চাহিতেছিল। বার্বার ও নওমুসলিমগণ আরব শাসনে বিরক্ত ও বীতশ্রদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিল। তাহারা পুরাতন শাসকের স্থলে একজন নতুন শাসকের আগমনকে স্বাগত জানায়। স্পেনে আবদুর রহমানের সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে ছিল উমাইয়া, মাওয়ালী ও মুক্ত দাসগণ।
সর্বোপরি আবদুর রহমান ছিলেন একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি যিনি সময়ের মত সুযোগ গ্রহণ করিতে জানিতেন। ইউসুফ যদিও স্পেনের শাসক ছিলেন তথাপি প্রকৃত পক্ষে দেশ শাসন করিতেন সুমায়েল। ৭৫৫ খ্রীস্টাব্দের শেষের দিকে উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের ভীষণ অবনতি ঘটে। আবদুর রহমানের অভিপ্রায় সম্বন্ধে সুমায়েল পূর্ণভাবে
অবগত হইয়া তাহাকে ইউসুফের অগোচরে আফ্রিকা হইতে স্পেনে আমন্ত্রণ করেন এবং শেষ পর্যন্ত ইউসুফের পতন ঘটে।
স্পেনে যখন বদর আগমন করেন তখন সেখানকার রাজনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই গোলযোগপূর্ণ এবং ঘোলাটে। তিনি এলভিরাতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী দামেস্ক প্রদেশের প্রধান আবদুল্লাহ বিন খালিদ এবং ওবায়দুল্লাহ বিন ওসমানের হাতে আবদুর রহমানের একটি চিঠি প্রদান করেন। উভয় নেতা ছিলেন হযরত ওসমানের মাওয়ালী। তাহারা এবং সেভিলের নিকট মুরাহর অধিবাসী আবুল সাববাহ বিন ইয়াহা আল ইয়াহ সুবির অধীন ইয়ামানীদের মন জয় করিয়া তাহাদের পক্ষে আনয়ন করে এবং মুজারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তাহাদিগকে উত্তেজিত করে। তাহারা ইউসুফের দক্ষিণ হস্ত সুমায়েল বিন হাতিম বিন শিমারকে তাহাদের পক্ষে আনিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। দেশের উত্তরাংশে ইউসুফ এবং সুমায়েল যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন জানিতে পারিয়া, ইয়ামানীরা
সাহায্যের আশ্বাস প্রদান করিয়া উমাইয়াদের দ্বারা মুক্ত ব্যক্তিগণ বদরের সহিত আবু গালিব তাম্মাম এবং অন্য আরও দশজন গোত্রীয় প্রধানকে ইউসুফ সামরিক সাহায্যের জন্য যে টাকা পাঠাইয়াছিল তাহা প্রদান করিয়া আবদুর রহমানকে আনয়নের জন্য প্রেরণ করেন। স্পেনের দুই বিখ্যাত নেতা ওবায়দুল্লাহ বিন ওসমান এবং আবদুল্লাহ বিন খালিদ সমভিব্যাহারে আবদুর রহমান ১৩৮ হিঃ আখের ৭৫৫ খ্রীস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে আল মুনেকার বন্দরে অবতরণ করেন। আবদুর রহমান জেবিল নদীর তীরে ইজনাজার ও লোজার মধ্যবর্তী স্থলে অবস্থিত টোরোক্সের দুর্গের দিকে অগ্রসর হন। তাহাকে আন্তরিক ভাবে অভ্যর্থনা জানান হয়।
তিনি ভবিষ্যতে অনিবার্য যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। যুদ্ধে অংশ গ্রহণেচ্ছু ব্যক্তিগণ দলে দলে তাহার সৈন্য বাহিনীতে যোগ দান করে। টোরোক্সে তাঁহার সেনা বাহিনীতে যে সব বিখ্যাত নেতাগণ যোগদান করিয়াছিলেন তাহাদের মধ্যে ছিলেন টোরোক্সের আবুল হাজ্জাজ ইউসুফ বিন বখত, সেভিলের আবু আবদাহ হাসান বিন মালিক কালবী, আবুল সাবাবাহ বিন ইয়াহা ইয়াহ সুবি ও আলকামাহ বিন গিয়াস লাখমী। দেশের সুদূর দক্ষিণাংশে যখন এই সমস্ত ঘটনা ঘটিতেছিল সেই মুহূর্তে ইউসুফ আমীর আল-আবদারী ও হুবাব আল জুহরীর নেতৃত্বাধীনে ছাগারের (আরাগোন) বিদ্রোহীদের দমনে ব্যস্ত ছিলেন। সারাগোসায় বাবার বিদ্রোহের বিরুদ্ধে তাহার অভিযান সফল হইয়াছিল। তিনি তাহার অঙ্গীকার ভঙ্গ করিয়া হুবাব আল জুহরী ও আমীর এবং তাহার পুত্র ওহাব ও হুবাবসহ বহু ইয়ামানী ও কুরাইশ নেতাকে হত্যা করিয়াছিলেন। এবং সুমায়েলের প্ররোচনায় ইবনে শিহাবের উপর অত্যাচার করিয়াছিলেন। ইহার ফলে সেনাদের মধ্যে আস্থাহীনতা দেখা দেয় এবং তাহার বহু দৃঢ়
সমর্থক তাহাকে ত্যাগ করিয়া যুবরাজ আবদুর রহমানের পক্ষে যোগদান করে। এই সময় কর্ডোভায় অবস্থানরত তাঁহার স্ত্রী উম্মে ওসমান তাহাকে আবদুর রহমানের আগমন সম্বন্ধে অবহিত করায়, তিনি দ্রুত রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু আবদুর রহমানকে আক্রমণের জন্য সেনাবাহিনীর তরফ হইতে কোন সমর্থন ও সাড়া পাওয়া যায় না। উপরন্তু বর্ষাকাল হওয়ায় সেনা পরিচালনায় অসুবিধা দেখা দেয়। ইহাতে উমাইয়া যুবরাজ সেনা সংগ্রহ ও তাহাদেরকে ট্রেনিং দিয়া গড়িয়া তোলার জন্য প্রচুর সময় পান। ইউসুফের সেনাবাহিনী টোরোক্সে আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে যদি যুদ্ধ করিত তাহা হইলে স্পেনের ইতিহাস হয়ত অন্য রকম ভাবে লিখিত হইত। নিজেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখিয়া ইউসুফ যুবরাজের সহিত বিরোধ মীমাংসা করিতে চেষ্টা করেন। বিরোধ মীমাংসায় উপনীত হওয়ার জন্য তিনি খালেদের হাতে সুললিত ভাষায় লিখিত একখানা চিঠি ও তাহার কন্যাসহ প্রচুর উপঢৌকন, দুইজন বিশেষ দূত, উবায়েদ বিন আলী এবং ইসা বিন আবদুর রহমানকে, যুবরাজের নিকট প্রেরণ করেন। কিন্তু সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়। অস্ত্রধারণ ব্যতীত তাহার সম্মুখে তখন আর অন্য কোন পথ খোলা ছিল না। ইউসুফের দলত্যাগকারী সৈন্যদের যোগদানের ফলে আবদুর রহমানের সেনাবাহিনী বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। কাইসী দলপতিগণ, জাবির ইবনে শিহাবের পুত্র, যাহাকে সুমায়েল বাসকিউস এলাকায় প্রেরণ করিয়া হত্যা করিবার ষড়যন্ত্র করিয়াছিল এবং ইবনে শিহাবের সঙ্গী হুসাইন অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত হইতে রক্ষা পান। এবং সম্প্রতি আফ্রিকা হইতে আগত বহু সংখ্যক অশ্বারোহী সৈন্য আবদুর রহমানের সঙ্গে যোগদান করে। ইহা জানিতে পারিয়া ইউসুফ তাহাকে বাধা প্রদান করিবার জন্য রাজধানী ত্যাগ করিয়া অগ্রসর হন। আবদুর রহমান ইউসুফের অনুপস্থিতির সুযোগ লইয়া কর্ডোভা দখল করিবার জন্য যাত্রা করেন।
আর্কিডোনায় ও সিদোনীয়ায় আবদুর রহমানকে জনগণ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সহিত গ্রহণ করেন। আরকিডোনা ও সিদোনীয়াতে জর্দান এবং প্যালেস্টাইন অঞ্চলের সিরীয়রা বসবাস করিত। আবদুর রহমান ১৩৮ হিঃ ১লা শাওয়াল/৭৫৬ খ্রীঃ ৮ই মার্চ রাইউহর (রেজিওর) রাজধানী আরকিডোনায় প্রবেশ করেন। সেখানে তাহাকে আমীর রলিয়া ঘোষণা করা হয়। তাহার নামে খোবা পাঠ করা হয়। রাইউহর (Regio) গভর্নর ইসা বিন মাসাওয়ার জিদার বিন ওমর জনৈক কাইসী নেতা ও উপস্থিত জনগণ তাহার প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন। আবদুর রহমান ৪০০ মাওয়ালী ও তাহাদের অশ্বারোহী সৈন্য এবং রোণ্ডা জিলার বার্বার ও ইয়ামানীদের সঙ্গে লইয়া সেভিলে পৌঁছেন। সেখানে প্রধানত হিমসের আরবগণ বসবাস করিতেন। সিদোনীয়া ও রোণ্ডার গভর্নর গিয়াস বিন আল কামাহ আল লাখমী এবং ইব্রাহীম বিন শাজরাহ আবদুর রহমানের সহিত যোগদান করেন। এইরূপে
রক্তপাতহীনভাবে যুবরাজ আবদুর রহমান ৭৫৬ খ্রীস্টাব্দে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে স্পেনের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত জেলাসমূহের শাসন ক্ষমতা দখল করেন।
টলেডো এবং মুরসিয়া প্রদেশের দুর্ধর্ষ সৈন্য সংগ্রহ করিয়া ইউসুফ যুবরাজের গতিকে প্রতিহত করিবার জন্য গোয়াদালকুইভির নদীর ডান পাশ দিয়া কর্ডোভা হইতে সেভিলের দিকে অগ্রসর হন কিন্তু যুবরাজ ইতিমধ্যে উক্ত স্থান ত্যাগ করিয়া একই নদীর বাম পাশ দিয়া কর্ডোভা অভিমুখে যাত্রা করেন। ছয় বৎসর যাবত দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত কর্ডোভা লুণ্ঠন করিবার জন্য আবদুর রহমান হুমকি দিলেন। আবদুর রহমানের সেনাবাহিনী ইউসুফের সেনাবাহিনীর ন্যায় প্রয়োজনীয় রসদের স্বল্পতায় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্ডোভা অবরোধের খবর পাইয়া ইউসুফ বিচলিত হইয়া পড়েন এবং তিনি সেভিল হইতে বিরাট সেনাবাহিনী লইয়া রাজধানীর দিকে দ্রুত অগ্রসর হন। আবদুর রহমান তাহার কিছু সংখ্যক সহচরকে কর্ডোভা অবরোধের জন্য রাখিয়া নিজে ১০,০০০ হাজার সৈন্যকে সঙ্গে লইয়া শত্রুর মোকাবিলা করিবার জন্য মুসারাহতে রওয়ানা হন।১৩ গোয়াদালকুইভির নদী মুসারাহ ও পশ্চিমে কর্ডোভার মধ্য দিয়া প্রবাহিত। গোয়াদালকুইভির নদী তুসিনার নিকট দিয়া পারাপার হইবার জন্য পায়ে হাঁটা রাস্তা ছিল।
কিন্তু পানি ছিল অধিক। ইউসুফের পূর্বে প্রেরিত শান্তি প্রস্তাব গ্রহণের ভান করিয়া আবদুর রহমান মুসারাহর নিকট নদী অতিক্রম করিতে সমর্থ হন এবং ১৩৮ হিঃ জিলহজ্জ শুক্রবার ৭৫৬ খ্রীস্টাব্দের ১৪ই মে ইউসুফের সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করেন। এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আবদুর রহমানের অশ্বারোহী সেনাবাহিনীর তীব্র আক্রমণে ইউসুফের সেনাবাহিনী ছত্রভঙ্গ হইয়া পলায়ন করে। ইউসুফের অশ্বারোহী সৈন্য দ্বারা তাহার স্বীয় পলায়নপর বিশৃঙ্খল সেনাদল পদদলিত হয়। এই ছিল মুসারাহর যুদ্ধ, যাহা পরবর্তী বহু বছরের জন্য স্পেনের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে। ইউসুফ টলেডোতে পলাইয়া যান এবং সুমায়েল আশ্রয় গ্রহণ করে জায়েনে।১৪ ইউসুফের পুত্র আবদুল্লাহ এবং সুমায়েলের পুত্র জাওশান যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়। প্রথম আবদুর রহমান বহু সৈন্যকে বন্দী করেন। তিনি পরের দিন ১০ই জিলহজ্জ (১৩৮ হিঃ) কর্ডোভা দখল করেন এবং নিজে জুমার নামাজে ইমামতি করেন। যাহারা আত্মসমর্পণ করিয়াছিল তাহাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়। পরাজিত গভর্নরের হেরেমকে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। ইউসুফের কন্যা আবদুর রহমানকে হুলাল অথবা হোরা নামে তাহার এক যুবতী দাসীকে উপহার হিসাবে প্রদান করেন। এই দাসী—হোরার গর্ভেই পরবর্তীকালে হিশামের জন্ম হয়। যদিও আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুরের১৫ নামে খুত্বা পাঠ করা হইত তথাপি আবদুর রহমান নিজেকে স্পেনের আইনসম্মত শাসক বলিয়া নিজেকে দাবী করিতেন।
এইরূপে পূর্বে উমাইয়া সাম্রাজ্যের পতনের ছয় বৎসর পর পশ্চিমে উমাইয়া রাজত্ব স্থাপিত হয়। তাহার অবস্থা তখন এমন ছিল না যে, তিনি নিজেকে খলিফা বলিয়া দাবী
করিতে পারেন। অন্য দিকে খলিফা মনসুরের স্বীকৃতিরও প্রয়োজন ছিল না আবদুর রহমানের।
আবদুর রহমানের সম্মুখে বিরাট সমস্যা ছিল, খ্রীস্টান সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর বিদ্রোহ ও বিপ্লবের প্রয়াস। দেশকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত করার আরব অভিজাত সম্প্রদায়ের পরিকল্পনা এবং অত্যাচারে জর্জরিত জনসাধারণের গভীর আর্তনাদ তাঁহাকে আরো বিপর্যস্ত করিয়া তোলে। আবদুর রহমানের অবস্থা তখন পর্যন্ত নিরাপদ ছিল না। ইউসুফ জায়েনে সুমায়েলের সহিত মিলিত হইয়া ও তাহার বিক্ষিপ্ত সেনাদল সংগ্রহ করিয়া এলভিরার পার্শ্ববর্তী এলাকায় গোলযোগ সৃষ্টি করিতে আরম্ভ করে। আবদুর রহমান তাহার প্রধান সমর্থক আবু ওসমানকে কর্ডোভার গভর্নর নিযুক্ত করেন। ইহার পর তিনি শত্রুদমনে অগ্রসর হন। ইউসুফ ইতিমধ্যে কর্ডোভা দখল করিয়া লইয়াছিল। আবু ওসমান প্রধান মসজিদের চূড়ায় আত্মগোপন করেন। আবদুর রহমানের অগ্রাভিযানের মুখে ইউসুফ ও সুমায়েল তাহাদের বাধা দান ব্যর্থ হইবে ভাবিয়া আত্মসমর্পণ করেন। ইহা সফর ১৩৯ হিঃ/৭৫৬ খ্রীঃ জুলাই মাসে ঘটে।
আবু জাইদ আবদুর রহমান ও আবুল আসওয়াদ মুহম্মদ জামিন হিসাবে থাকে এবং তাহাদের পিতা ইউসুফ ও সুমায়েল নির্বিঘ্নে তাহাদের সম্পত্তি ভোগ দখলে রাখেন।৬ আবদুর রহমান এবং ইউসুফের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি দুই বৎসরের অধিক কাল স্থায়ী হয় না। প্রাচ্য হইতে আগত আবদুল মালিক বিন ওমর বিন মারওয়ান ও খাইরী বিন আবদুল আজিজ বিন মারওয়ানের মত নিজ বংশীয় লোকদের মধ্যে আমীর ভূমি বণ্টন করেন। আবদুর রহমান এবং ইউসুফের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। ইউসুফ মেরিদাতে পলাইয়া যান। সেখানে (২০,০০০) বিশ হাজার লোক তাঁহার সহিত যোগদান করে।১৭ সুমায়েল এবং ইউসুফের দুই পুত্র কারারুদ্ধ হয়।১৮ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। শেষ যুদ্ধ হয় ১৪১ হিঃ/৭৫৮ খ্রীস্টাব্দে লুকসা যুদ্ধক্ষেত্রে।
ইউসুফ সেভিলের গভর্নর আবদুল মালিক বিন মারওয়ানের নিকট পরাজয় বরণ করেন। তাহার বহু সমর্থক নিহত হয় এবং সে মারাত্মক ভাবে জখম হইয়া আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হয়। পরের বৎসর রজব মাসে তাহার পুরাতন শক্র আবদুল্লাহ বিন আমর আল আনসারীর হাতে তিনি টলেডোর নিকট এক গ্রামে নিহত হন। সুমায়েল কারারুদ্ধ হন এবং পরে বিষ প্রয়োগের কারণে মারা যান। আবু জাইদ নিহত হন এবং আবুল আসওয়াদ বহু বৎসর কারাবাসের পর অন্ধ মানুষের ছদ্মবেশে কারাগার হইতে পলাইয়া যান।
নারবোনে অবরুদ্ধ সেনাবাহিনীকে সাহায্যের জন্য সুলাইমানের সেনাপতিত্বে রাজকীয় সেনাবাহিনীর একদল সৈন্য প্রেরিত হয়। কিন্তু ৭৫৯ খ্রীঃ গিরিসঙ্কটে পতিত হইয়া সেনাদল বিভক্ত হইয়া যায়। খ্রীস্টানগণ পেপিনের সেনাবাহিনীর আগমনের জন্য নারবোনে শহরের প্রবেশ পথ উন্মুক্ত করিয়া দেন। নগরের পতন ঘটে এবং মুসলমানরা বিতাড়িত হয়।
ইউসুফ পরাজিত ও নিহত হওয়ার পরেও আবদুর রহমানের বিপদ বিদূরিত না হওয়ায় তাহাকে অন্যান্য বিদ্রোহী নেতাদের মোকাবিলা করিতে হয়। ইয়ামানী ও বার্বারগণ তাহার পুরুষানুক্রমিক শাসনকে পছন্দ করিতেছিল না। ফলে একাধিক বিদ্রোহ দেখা দেয়। আবদুর রহমান তাহার ক্ষমতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার পর কর্ডোভার আশেপাশের বিদ্রোহকে দমন করিবার জন্য অগ্রসর হন। ৭৬০ খ্রীস্টাব্দে আরজাক বিন নোমান গাসসানী আলজিরিয়াতে বিদ্রোহ ঘোষণা করিয়া মদীনা সিদোনিয়া এবং সেভিল দখল করেন।২১
ইয়ামানী নেতা আবুল সাববাহ সেভিলের গভর্নর, সারাহর যুদ্ধের পর আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। আবুল সাববাহ ৭৬৬ খ্রীস্টাব্দে ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হন। ইহাতে অন্যান্য ইয়ামানী নেতাগণ বিরূপ হইয়া ওঠেন। আবুল সাবাহর ক্ষুব্ধ আত্মীয়-স্বজন যেমন আবদুল গাফফার বিন হামিদ, আমির বিন তালুত, আবু কুলসুম বিন ইয়াসুর এবং হায়াত বিন মুলামিস২২ বিদ্রোহী হইয়া ওঠেন এবং বহু মুজারীকে নিহত করেন। আমীর আবদুর রহমান দ্রুত উত্তর সীমান্ত হইতে কর্ডোভাতে ফিরিয়া আসেন এবং দক্ষিণাংশে বিদ্রোহ দমনের জন্য অগ্রসর হন। কর্ডোভা প্রদেশে বেমবেজার নামে পরিচিত মাইসার নদীর তীরে ৭৭৪ খ্রীস্টাব্দে ইয়ামানীদের সহিত তিনি যুদ্ধে লিপ্ত হন। আমীরের বাবার অনুচরদের দ্বারা প্ররোচিত হইয়া বহু সংখ্যক বার্বার যাহারা বিদ্রোহে যোগদান করিয়াছিল দলত্যাগ করে। ইয়ামানীরা পরাজিত হয়, তাহাদের ২০,০০০ হাজার সৈন্য নিহত হয় এবং তাহাদের ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়। নিয়েবলার ইয়ামানী বিদ্রোহী নেতা মাতারী পরাজিত ও নিহত হন।
টলেডোর প্রাক্তন গভর্নর হিশাম বিন উরওয়াহ২৩ ৭৬১ খ্রীস্টাব্দে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। শহর অবরুদ্ধ হইলে বিদ্রোহী নেতা আত্মসমর্পণ করিতে বাধ্য হন এবং তাহার পুত্রকে জামিন হিসাবে প্রেরণ করেন। কিন্তু তিনি পুনরায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং আমীরকে অবরোধ প্রত্যাহারে বাধ্য করেন। শহরে প্রত্যাবর্তন করিয়া আমীর হিশামের পুত্র যিনি জামিন (জিম্মি) ছিলেন তাহাকে হত্যা করেন।২৪ চারি বৎসর পর ৭৬৪ খ্রীস্টাব্দে টলেডো আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। বদর বিদ্রোহী নেতাকে কর্ডোভাতে আনিয়া ফাসি দেন। তামামা বিন আলকামা টলেডোর গভর্নর নিযুক্ত হন।
প্রথম আবদুর রহমান আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুরের নামে খুতবা পাঠ করিতেন। পরবর্তীকালে আবদুল মালেক বিন ওমর বিন মারওয়ার পরামর্শে আব্বাসীয় খলিফাদের নামপাঠ স্থগিত করেন। যদিও তিনি নিজেকে তখন পর্যন্ত খলিফা না বলিয়া আমীর বলিতেন। আব্বাসীয় খলিফা মনসুর কায়রোওয়ানের ওয়ালী আলা বিন মুগিস ইয়াহসুবীকে আন্দালুসীয়া আক্রমণের আদেশ
প্রদান করেন। আলা বিন মুগিস ১৪৬ হিঃ/৭৬৩ খ্রীস্টাব্দে বেজা প্রদেশে আগমন করেন এবং ইয়ামানীদের সাহায্যে আব্বাসীয় কাল পতাকা উত্তোলন করেন। ইবনুল কুতিয়াহর মতে “বেজার নেতা আলা বিন মুগিস আব্বাসীয়দের সমর্থনে তথায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেন২৬।” তাহার সহিত বেজায় বসবাসকারী বহু মিশরীয় এবং ওয়াসীত বিন মুগিস ও উমাইয়া বিন কুতনের ন্যায় বহু নেতা যোগদান করেন। আলা তাহার পর সেভিলের দিকে অগ্রসর হন এবং সেখানে ইয়ামানীদের সমর্থন লাভ করেন। আমীর সেভিলের দিকে অগ্রসর হন আলাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। আলা সঙ্কটজনক অবস্থা দেখিয়া কারমোনার দিকে পশ্চাদপসারণ করেন। বদর সিকোনীয়ার গিয়াস বিন আল কামাহকে আব্বাসীয় প্রতিনিধির সহিত যোগদানে বাধা দান করিয়া দ্রুত কারমোনার দিকে অগ্রসর হন এবং সেখানে আমীর বদরের সহিত যোগ দান করেন। আলা কারমোনা অবরোধ করেন। শহরটি সুরক্ষিত হওয়ায় অধিকার করা সহজ ছিল না। অবরোধ দুই মাস স্থায়ী হয়।
ইতিমধ্যে আলার বহু সমর্থক খাদ্যাভাবে কষ্ট পাইয়া তাহাকে ত্যাগ করে। অকস্মাৎ এক রাত্রিতে আমীর ৭০০/১০০ সৈন্য লইয়া আক্রমণ করে। ফলে ভীষণ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে প্রথম আবদুর রহমানের সেনাবাহিনী আলার অশ্বারোহী সৈন্য দলকে ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়। আলা তাহার ৭,০০০ হাজার বার্বার সমর্থকসহ নিহত হন। অন্যরা যুদ্ধ ক্ষেত্র ত্যাগ করিয়া পলাইয়া যায়। এই বিদ্রোহ ছিল নতুন রাজ্যের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এই বিদ্রোহকে দমন করিয়া আলার ছিন্ন মস্তক ও আব্বাসীয় খলিফার নিকট হইতে প্রাপ্ত অভিষেক পত্র/নিয়োেগ পত্র জনৈক বণিকের মাধ্যমে আব্বাসীয় খলিফার নিকট মক্কায় প্রেরণ করেন। খলিফা তাহাকে সাকর কুরায়েশ (কুরায়েশের রাজ) (falcon of the gurash)২৭ বলিয়া অভিহিত করেন। আব্বাসীয় খলিফা মনসুর এবং ফ্রাঙ্ক সম্রাট পেপিনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়িয়া ওঠে এবং উভয়ের মধ্যে রাষ্ট্রদূত বিনিময় হয় ৭৬৫ এবং ৭৬৮ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে।
আবদুর রহমান তৎপর বার্বার শক্তিকে নির্মূল করিতে আত্মনিয়োগ করেন। গোয়াদিয়ানা নদীর তীরে শান্তাব্রীয়াতে (বর্তমানে Castro de santaver) তাঁহাদের এই বিদ্রোহ দশ বৎসর স্থায়ী হইয়াছিল। তাহাদের নেতা আবদুল্লাহ অথবা সুফিয়ান বিন আবদুল ওয়াহেদ শাকনা” নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন মিনকনাসহ বার্বারদের স্কুল শিক্ষক। তিনি নিজেকে রসুলের বংশধর ফাতেমী বলিয়া দাবি করিতেন এবং ১৫১ হিঃ/৭৬৮ খ্রীস্টাব্দে শান্তাব্রীয়াতে নিজকে স্বাধীন বলিয়া ঘোষণা করেন। তিনি একাধারে নয় বৎসর আবদুর রহমানকে বিব্রত রাখেন। রাজকীয় সেনাবাহিনীর আগমনের সময় তিনি পাহাড়ের অরণ্যে আত্মগোপন করিতেন। তাহার সমর্থকগণ অনিশ্চিত জীবন যাপনে পরিশ্রান্ত হইয়া উঠিয়াছিল।
খ্রীস্টাব্দে তাহার দুই সমর্থকের হস্তে তিনি নিহত হন। শাবতারানে অবস্থিত তাহার দুর্গের পতন হয় এবং তাহার দুষ্কর্মের সহচর ওয়াজিহ গাসসানী এলভিরাতে ধৃত ও নিহত হয়।
৭৫৯ খ্রীস্টাব্দে নারবোনের পতনের এক বৎসর পর বার্সিলোনার গভর্নর সুলায়মান নিজেকে কর্ডোভার সার্বভৌম শাসক বলিয়া ঘোষণা করিবার জন্য পেপিনের সাহায্য কামনা করেন। পেপিন ইহাতে সাড়া দেন নাই। প্রথম আবদুর রহমানকে তাহার শাসন আমলের শেষাংশে পূর্ব স্পেনের আরব নেতা আবুল আসওয়াদ ও আবদুর রহমান বিন হাবিব এবং যথাক্রমে ইউসুফের পুত্র ও জামাতা এবং বার্সিলোনার কালবী সম্প্রদায়ভুক্ত গভর্নরের ঐক্যবদ্ধ শক্তির মোকাবিলা করিতে হয়। তাহারা স্পেন হইতে আবদুর রহমানকে বিতাড়িত করিতে চাহিয়াছিল। উত্তর স্পেনের খ্রীস্টান শাসক এবং নেতাদেরও ইহাই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু আরব নেতাদের মধ্যে কোন ঐক্য ছিল না।
জোটভুক্ত তিন মিত্র ফ্রান্সের রাজা শালমানকে ৭৭১-৮১৪ খ্রীস্টাব্দে স্পেন আক্রমণের জন্য আহবান জানান। পরিকল্পনা ছিল শালমান যখন পবর্তশ্রেণী অতিক্রম করিবে, এবরোর উত্তরে আল আরাবী তাহাকে সমর্থন করিবে এবং সেখানে শার্লমানের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হইবে আর ইবনে হাবিব বার্বারদের সহযোগিতায় আব্বাসী খলিফার পতাকা উত্তোলন করিয়া তাহাকে মুরসিয়াতে সাহায্য করিবে। পরিকল্পনা মাফিক শালমান পাদেরবর্ণ হইতে যাত্রা শুরু করেন।
১৬১ হিঃ/৭৭৭ খ্রীস্টাব্দে শার্লমান পীরেনীজ পর্বত অতিক্রম করিয়া স্পেনে পৌঁছে। অভ্যন্তরীণ মতভেদের দরুন মৈত্রীবন্ধন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আক্রমণকারী একাকী উত্তরাংশের কয়েকটি প্রদেশের ধ্বংস সাধন করেন। সুলায়মান তাঁহাকে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হইবার সুযোগ প্রদান করেন কিন্তু হুসায়েন বিন ইয়াহিয়া আল আনসারী ইহা সমর্থন না করিয়া নিজে সারাগোসা অধিকার করেন। ১৬২ হিঃ ৭৭৮ খ্রঃ সারাগোসায় শার্লমান হুসায়েন বিন ইয়াহিয়া আল আনসারীর হাতে শশাচনীয়ভাবে পরাজিত হন।
স্যাক্সোনদের নেতা উইটেকিন্ড (wittekind) ফ্রান্সে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কোন প্রকার সাফল্য ব্যতীতই শার্লমানকে স্পেন হইতে ফ্রান্সে ফিরিয়া যাইতে হয়। পশ্চাদগমন কালে তিনি সুলায়মান বিন ইয়াকজান বিন আল আরাবীকে বিশ্বাসঘাতক সন্দেহে বন্দী করিয়া লইয়া যান। মুতরুহ ও আবসুন (আইশুন) পশ্চাদগমনকারী ফ্রাঙ্ক সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করিয়া তাহাদের পিতাকে মুক্ত করিতে সমর্থ হন। শার্লমান-সেনাবাহিনী যে সময় পীরেনীজ পর্বতশ্রেণী অতিক্রম করিতেছিলেন, সেই সময় পাম্পলোনা হইতে বিশ মাইল দূরে রনসেসভকসের (Roncesvalles) সংকীর্ণ গিরিসঙ্কটে বাঙ্কুয়েস সেনাবাহিনীর পশ্চাদভাগ আক্রমণ করিয়া সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস সাধন করে। এইরূপে আবদুর রহমানকে ক্ষমতাচ্যুত করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত মৈত্রীজোট
সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হইয়া যায়। আবদুর রহমান কর্তৃক সারাগোসা অবরুদ্ধ হয়। হুসায়েন কর্তৃক সুলায়মান নিহত হইয়াছিল, ফলে হুসায়েনকে একা রাজকীয় বাহিনীর মোকাবিলা করিতে হয়। অবশেষে ১৬৪/৭৮০ খ্রীস্টাব্দে রাজকীয় বাহিনী সারাগোসার দুর্গ অধিকার করে।৩২ ইহার পর আবদুর রহমান দৃষ্টি নিবন্ধ করেন আসওয়াদের প্রতি।
আসওয়াদ দেশের উত্তরে এক পর্বত চূড়ায় শক্তিশালী ঘাঁটি নির্মাণ করিয়াছিল। সেখানে আরও অনেক বিদ্রোহী তাহার সহিত যোগদান করে। আসওয়াদকে বন্দী করিবার জন্য আবদুর রহমান সৈন্য প্রেরণ করেন। বিদ্রোহীগণ ক্যাটালোনীয়ার পর্বতে আত্মগোপন করে এবং তাহাদের সহিত সংঘর্ষে রাজকীয় বাহিনী প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়। শেষ পর্যন্ত আবুল আসওয়াদ ৭৭৮ খ্রীস্টাব্দে গোয়াদালিমার নদীর তীরে পরাজিত হয় ও তাহার ৪,০০০ হাজার সৈন্য নিহত হয়। তিনি এক অরণ্যে আত্মগোপন করেন এবং পরে টলেডোর নিকট একটি গ্রামে দরিদ্র অবস্থায় লোকচক্ষুর অন্তরালে ৭৮৬ খ্রীস্টাব্দে হইলোক ত্যাগ করেন। ইহার পর হইতে কর্ডোভার আমীর দ্বারা অত্যাচারিত এবং উমাইয়া যুদ্ধাস্ত্রের শিকার হইয়া স্পেনের উত্তরাংশের খ্রীস্টান যুবরাজ ও মুসলমান গভর্নরগণ যখনই ফ্রান্সের রাজার সাহায্য প্রার্থনা করে, ফরাসীগণ তাহাদের সাহায্যে আগাইয়া আসে।
আবদুর রহমান দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বে বিদ্রোহ দমন করিয়াছিলেন কিন্তু আল ফাসর পুত্র ফোরভিলা অথবা তুফভিলা খ্রীস্টান রাজ্যের সীমা সম্প্রসারিত করেন। তিনি লক, সালামানকা, সামোরা ও ক্যাস্টাইল নগরীগুলি দখল করিয়া মুসলমানদিগকে সীমান্ত হইতে ৭৫৭/৫৮ খ্রীস্টাব্দে বিতাড়িত করেন।৩৩ অভ্যন্তরীণ সমস্যাদি দক্ষতার সহিত মোকাবিলা করিয়া আমীর ১৬৪ হিজরী/ ৭৮০ খ্রীস্টাব্দে বহির্বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। দেশের উত্তরাংশের অধিকাংশ খ্রীস্টান নেতাগণ আত্মসমর্পণ করে এবং কর দিতে বাধ্য হয়।৩৪।
আবদুর রহমানের মৃত্যু : আবদুর রহমান তাহার পারিবারিক সাদাপোষাক পরিধান করিতেন। তিনি এমন একটি রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন যাহা কয়েক পুরুষ পর্যন্ত টিকিয়াছিল। তিনি ৫৯ বৎসর বয়সে ১৭৩ হিঃ/ ৭৮৮ খ্রীঃ রবিউল আওয়াল মাসে পরলোক গমন করেন। তাহাকে কর্ডোভা প্রাসাদে সমাহিত করা হয়।
উপরের বর্ণনা হইতে ইহা পরিষ্কার ভাবে বুঝা যায় যে প্রথম আবদুর রহমান তাহার ৩২ বৎসরের শাসন আমলে বার্বার ইয়ামানী ও ফিহরীদের বৈরিতার মোকাবিলা করিয়াছেন। আমীরের ইহা সৌভাগ্য যে আরবগণ ঐক্যবদ্ধ হইতে ব্যর্থ হয়। আরবরা অস্ত্র ধারণ করিয়াছে হয় ব্যক্তিগত ক্ষতির প্রতিশোধ গ্রহণার্থে নয়তো শুধু আক্রোশে। যে বিশেষ পন্থায় আবদুর রহমান রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং জনগণের হৃদয় জয় করিয়া নিজের পক্ষে আনয়ন করেন তাহা সকলের প্রশংসা পাইবার যোগ্য।
তিনি ছিলেন বিনয়ী ও অনুগতদের প্রতি দয়ালু। যাহারা তাহার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করিত তাহাদের জন্য ছিলেন নির্মম ও কঠোর। যাহারা তাহাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করিয়াছিল তাহারা লাঞ্ছিত ও নিহত হইয়াছিল। বদর যখন তাহার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করিয়াছে তখন তিনি তাহার এ বিশ্বস্ত অনুচরকেও কারারুদ্ধ করিতে দ্বিধাবোধ করেন নাই। পরবর্তীকালে বদর এক সীমান্ত শহরে নির্বাসিত জীবন যাপন করেন।
প্রথম আবদুর রহমান ছিলেন জ্ঞানী, বিচক্ষণ ও কৃতবিদ্য এবং সংস্কৃতিমনা শাসক। তাহার বুদ্ধিমত্তা ও বাগ্মিতার বহু প্রমাণ রহিয়াছে। তিনি ছিলেন প্রাচ্যের সাম্রাজ্যবাদী ধারণার ধারক-এক নতুন পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা। একটি সার্বভৌম রাজতন্ত্রের ধারণাকে পরিপূর্ণ রূপদানের উদ্দেশ্যে তিনি গোত্রীয় ঘৃণা আরব সাহসিকতার সঙ্গে বার্বারদের গণতান্ত্রিক উপলব্ধির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিয়াছেন। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বৈদেশিক অশান্তি তাঁহাকে বিরামহীনভাবে যুদ্ধে ব্যস্ত রাখে। ফলে বড় ধরনের সংস্কার ও আকাঙ্ক্ষিত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিতে তিনি নানা বাধার সম্মুখীন হন। রাজ্যশাসন প্রণালী ও কার্যধারা সম্বন্ধে তিনি কাহারও সহিত আলোচনা করিতেন না। বিনা কাজে তিনি সময় নষ্ট করিতেন না। নিজের বুদ্ধিমত্তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করিয়া তিনি নিজের প্রশাসনের খুঁটিনাটি বিষয় দেখাশুনা করিতেন। তিনি ছিলেন সামরিক স্বেচ্ছাচারিতা মূলক শাসন পদ্ধতির প্রতিষ্ঠাতা যাহার উত্তরাধিকার লাভ করেন তাহার বংশধরগণ। তিনি আরব নেতাদের ক্ষমতা হ্রাস করেন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিপ্রাপ্ত দাস ও বার্বারদের মধ্য হইতে সংগৃহীত ২,০০,০০০ লক্ষ বেতনভোগী সৈন্যের সাহায্যে তিনি রাজ্য শাসন করিতেন।৩৫ তাহার সেনাপতিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বদর, তাম্মাম বিন আল কামাহ, হাবিব বিন আবদুল মালিক আল কারশী এবং আছিম বিন মুসলিম ছাকাফী।
অনেক সময় আমীর নিজেই সৈন্য পরিচালনা করিতেন। দ্রুততার সহিত ক্ষমতায় আরোহণ ও স্পেনকে তাহার অধীনে আনয়নের জন্য আব্বাসী খলিফা মনসুর তাহাকে “কুরায়েশের বাজ পাখি ” বলিয়া অভিহিত করেন। ৭৭৩ খ্রীস্টাব্দে তিনি খলিফা মনসুরের নামে খোবা পাঠ বন্ধ করেন এবং নিজে ‘আমীরুল মুসলিমীন’ খেতাব ধারণ করেন। পবিত্র নগরী মক্কা মদীনা ও জেরুজালেম৩৬ আব্বাসীয় খলিফার অধীন ছিল এবং এই সমস্ত জায়গার অধিবাসীদের আন্তরিক সমর্থন ছিল খলিফার প্রতি। এমন কি যাহারা প্রত্যক্ষ ভাবে তাহার অধীন ছিলনা তাহারাও মূল মুসলিম সাম্রাজ্যের অংশ বলিয়া মনে করিতেন। এইসব কারণে উমাইয়া আমীর খলিফার উপাধি “আমীর আল মুসলিমীন” গ্রহণ করিতেন না। এবং তাহাকে আমীর বলিয়া ডাকিলেই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন।
আমীর তাহার রাজ্যকে ছয়টি প্রদেশে বিভক্ত করেন এবং প্রত্যেকটি প্রদেশের শাসনভার একজন গভর্নরের উপর ন্যস্ত ছিল। প্রাদেশিক উম্মাল (রেভিনিউ কালেকটর) পুলিশ বিভাগ এবং বিচারকদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল কেন্দ্রের সহিত। আমীরের একটি উপদেষ্টা পরিষদ ছিল। ইহার প্রধান ছিলেন আবদুল মালিক মারওয়ানী, যিনি পরবর্তীকালে উজির নিযুক্ত হন। আমীরের অধীনে দুইজন সচিব ছিল। তাহাদের একজনের উপরে ছিল চিঠিপত্র আদান প্রদানের ভার, অন্যজন অর্থনৈতিক বিষয়াদি দেখাশুনা করিতেন। কেন্দ্রের দায়িত্বপূর্ণ পদে যাহারা ছিলেন তাহারা হইলেন হাজীব। (প্রধানমন্ত্রী), কায়েদ (প্রধান সেনাপতি), কাতিব (সচিব), কাজী উম্মোল জামা (প্রধান বিচারপতি), কাজীউল আসাকির (সেনা বিভাগের বিচারক) এবং সাইব আলসুরতা, (পুলিশ প্রধান)। তাহার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তামাম বিন আলকামাহ। ইউসুফ বিন বখত পারস্য অধিবাসী এবং তাহার বংশধরগণ—করিম বিন সিহরান, আবদুর রহমান বিন মুগিছ, (কর্ডোভা বিজয়ী মুগিছ) রুমীর পুত্র। মুয়াবিয়া বিন মারওয়ানের বিশ্বস্ত অনুচর যিনি ইউসুফ আল ফিহরীর সাকিব হিসাবে কাজ করিয়াছিলেন। সেই বিখ্যাত উমাইয়া বিন জাইয়াদ ছিলেন তাঁহার প্রাসাদের সচিব। তিনি উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় অংশ গ্রহণ করিতেন। তাহার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার জন্য তিনি যথেষ্ট প্রশংসার পাত্র ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে আমীর তাঁহার সহিত পরামর্শ করিতেন।
প্রধান বিচারপতি পদে ইয়াজিদ আল ইয়াকুবি বহাল ছিলেন।৩৭ তাহার পরে শায়েক মাসার বিন ইমরান উক্ত পদে অধিষ্ঠিত হন। সেনা বিভাগের বিচারপতি জিকার বিন উমরু।৩৮ পরবর্তীকালে সাইদ বিন বশির কর্ডোভার প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। সচিবালয় অবস্থিত ছিল বাবুল সুদ্দার নিকট আল কাইজারে। এখান হইতে একটি গ্রাম্য চলার পথ গোয়াদালকুইভির নদীর তীর দিয়া বিখ্যাত কর্ডোভা সেতু পর্যন্ত অগ্রসর হয়। আমীর প্রায়ই তাহার প্রজাদের অভাব অভিযোগ ও কর্মচারীদের আচরণ সম্বন্ধে খবর সংগ্রহের জন্যে ভ্রমণে বাহির হইতেন। তিনি রোগীদের দেখাশুনা ও বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ধর্মের লোকদের সহিত মিলামেশা করিতেন। তিনি ছিলেন সুবিচারক। তাহার সহিত অবাধে সকলে সাক্ষাৎ করিতে পারিত। তিনি সর্বদা অত্যাচারিতদের ফরিয়াদ ধৈর্য্যের সহিত শ্রবণ করিতেন এবং তাহাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করিতে সদা সচেষ্ট ছিলেন। সুবিচারের জন্য ইতিহাস-বিখ্যাত আবু আমর বিন মুয়াবিয়া বিন সালিহ হিমসী ছিলেন তাহার বিচারকদের অন্যতম। আমীর যে শান্তিপূর্ণ স্বল্প সময় পান তাহারই মধ্যে বহু জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি অফিসারদের পদের পুনর্বিন্যাস করেন এবং পুলিশ কর্মধারার পরিবর্তন সাধন করেন। কৃষির উন্নয়নের জন্য বহু নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। স্পেনে রোমানদের নির্মিত পুরাতন রাজপথগুলি তিনি মেরামত করান। গুরুত্বপূর্ণ সরকারী সংবাদ দ্রুত আদান প্রদানের জন্য (Relays of Post horses) অশ্বের মাধ্যমে
সংবাদ প্রেরণ পদ্ধতির প্রচলন করেন। কর্ডোভার পুরাতন প্রাসাদ বিলাত রাজরীফ সংস্কার ও আকারে বড় করা হয়। রাজধানীর নিকটে পশ্চিমদিকে আড়ম্বরপূর্ণ এক বাগান বাড়ী নির্মাণ করা হয়। এই বাগান বাড়ীর নামকরণ করেন (দামেস্কে অবস্থিত তাহার দাদার বাগান বাড়ীর নামে) মুন্যাত আল রুসাফা। প্রথম আবদুর রহমান তাহার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কৃত্রিম জল প্রণালী নির্মাণ করান কর্ডোভা নগরে, বিশেষ করিয়া তাহার বাগান বাড়ী মুন্যাত আল রুসাফাতে পানি সরবরাহ করার জন্য। স্পেনের জল প্রণালী ব্যবস্থা প্রাচ্যে অবস্থিত সিরিয়ার ওরোনটেস এবং ইরাকের ইউফ্রেটিস জল প্রণালীসমূহের ন্যায় ছিল। বাগানের প্রতি আমীরের ছিল গভীর রুচি। ফল ও ফুলের প্রতি তাহার ছিল অনুরাগ। তিনি সিরিয়া ইরাক মিশর ও প্রাচ্যের অন্যান্য দেশ হইতে সব রকমের ফল ও ফুলের বীজ সংগ্রহের জন্য লোক প্রেরণ করেন। এইরূপে তিনি সিরিয়ার রুসাফার অনুকরণে অতি চমৎকার বাগান তৈয়ার করেন। তিনি প্রাচ্যের বহু বৃক্ষের সহিত দূর-দূরান্ত হইতে সংগৃহীত পাম, পিচ (খণ্ডআলু) ও ডালিম গাছ এই বাগানে রোপণ করেন।৪২ প্রাসাদ বাগানে চারা গাছ তৈয়ার করিয়া স্পেনের বিভিন্ন অংশে বিতরণ করেন। রুমান সাফরী ডালিম অতি চমত্তার সুগন্ধিযুক্ত ও সুমিষ্ট রুসাফা ডালিমের জাত। প্রাচ্য হইতে এই দুষ্প্রাপ্য ডালিমের গাছটি প্রেরণ করিয়াছিলেন তাহার ভগ্নি উম্মে আসবাগ অথবা জনৈক বন্ধু।৩
দামেস্ক হইতে প্রচারিত মুদ্রার ন্যায় মুদ্রা তৈয়ার করিবার জন্য কর্ডোভাতে তিনি একটি টাকশাল নির্মাণ করেন।৪৪ দরিদ্রদের তিনি সাহায্য করিতেন। জনগণের জন্য উন্নয়নমূলক কার্যে তিনি প্রচুর টাকা পয়সা ব্যয় করিতেন। তিনি মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম ও সৌন্দর্যে অদ্বিতীয় কর্ডোভার জামে মসজিদ তৈয়ার করিতে ব্যয় করেন ৮০,০০০ হাজার দিনার। ৭৮৫ খ্রীস্টাব্দে প্রধান গীর্জার দ্বিতীয়াংশ ১,০০,০০০ লক্ষ দিনারে খরিদ করেন। ইহার প্রথমাংশ পূর্ববর্তী মুসলিমগণ মসজিদে পরিণত করিয়াছিলেন ৭৪৮ খ্রীস্টাব্দে এবং ক্ষতিপূরণ হিসাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত কয়েকটি গীর্জাকে পুনর্নির্মাণের অনুমতি প্রদান করেন। কঠিন চাপে পড়িয়া এই মসজিদের বহু কিছু পূর্ববর্তী রোমান স্থাপত্যের উপর নির্মাণ করিতে হয়। উত্তর হইতে দক্ষিণে লম্বা ১১ সারির (Naves) এই মসজিদ ১৭০ হিজরীতে ৭৫০ খ্রীস্টাব্দে ১২ মাসে নির্মাণ করা হয়। তাহার সময়ে নির্মিত কর্ডোভা মসজিদের কাঠের সিলিং একটি উত্তম নিদর্শন। হাজীব আল-মনসুরের যুগ পর্যন্ত ইহার কারুকার্যে উন্নতি সাধিত হয়। তাহার শাসন আমলে নির্মিত অধিক সংখ্যক চক্রাকারসিলিং-এ জ্যামিতিক সংখ্যা অঙ্কন করিয়াছেন কাঠমিস্ত্রী শিল্পীগণ। মসজিদ সংলগ্ন একটি মাদ্রাসা নির্মিত হয় তাহার সময়ে—-যাহা পরবর্তীকালে কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। ৭২০ খ্রীস্টাব্দে সামাহ বিন মালিক আল খাওলানী নির্মিত কর্ডোভা প্রাচীর ব্যবহারের অনুপযোগী হইয়া পড়িয়াছিল। সাতটা দরজাসহ এই প্রাচীর
তিনি পুনর্নির্মাণ করেন। রাজ্যের প্রতিটি মসজিদে জনগণের জন্য হাম্মাম এবং দুর্গ নির্মিত হয়। যাহা খ্রীস্টান জগতের নিকট অজ্ঞাত ছিল। জ্ঞানী পন্ডিতদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতার কারণে শিক্ষিত লোকেরা তাঁহার দরবারের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি নিজে একজন সুসাহিত্যিক ছিলেন। মাঝে মাঝে তিনি সাহিত্য সভার অনুষ্ঠান আয়োজন করিতেন, সে সভায় দেশের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিকদেরকে আমন্ত্রণ করা হইত। তাহার দরবারের বিখ্যাত সাহিত্যিকবৃন্দের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত আবু আল মুতাহাশশা, কবি সায়েখ আবু মুসা হাওয়ারী, আইনবিদ শায়েখ গাজী বিন কায়েস। ভাষা ও ধর্মশাস্ত্রবিদ যাহাকে আবদুর রহমানের শাসন আমলে মালিক বিন আনাস (৭১৫-৯২ খ্রীঃ) আল মুয়াত্তা স্পেনে আনয়ন করেন। ইশা বিন দিনার, ইয়াহিয়া বিন ইয়াহিয়া এবং সাইদ বিন হাসান তাহার দরবারের সুবিখ্যাত সাহিত্যিক। তাহার প্রিয় গায়িকা ছিলেন আফজা, সে উত্তম গান জানিত এবং সে উদ্ (সেতার) বাজাইতে পারিত। প্রথম আবদুর রহমান যুদ্ধ বিগ্রহে ব্যস্ত থাকিলেও তাহার সময়ে স্পেন সাহিত্য ও শিল্পে উন্নতি লাভ করে। দেশে ও বিদেশে তাহার কৃতিত্বের প্রশংসা গীত হয় এমন কি তাহার ঘোরতর শত্রু আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুরও তাহার প্রশংসা করিতেন। তিনি ছিলেন সত্যিকার সৎ গুণের অধিকারী। স্পেনে মুসলিম সভ্যতার প্রশংসা তাহারই প্রাপ্য কারণ তাহার অবদান ও জ্ঞানই ছিল ইহার মূল কারণ। আবদুর রহমান তাহার সাম্রাজ্য স্থাপন করিতে না পারিলে ইউরোপে সভ্যতার বিকাশ বহু শতাব্দী পরে হইত।
তথ্য নির্দেশ
ইবনুল খাতিব, খেলাফত-ই-মুয়াহিদীন (উর্দু অনুবাদ) পৃঃ ১৩। এডউইন হোল, আন্দালুস, লন্ডন, ১৯৫৮, পৃঃ ১৫৪-৫৫।
ইবনুল আছির, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৭৬-৭৭। ৪। নাফলুল-তিব, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৪; ইবনুল কুতাইবা, পৃঃ ২২-২৩। ৫। পারেজা ফিলিক্স এম, ইসলামোলোজিয়া, পৃঃ ১৬৫ দেখুন।
ডজি, পৃঃ ১৭৬ ও টীকা-৩; আধুনিক টুর নহে। আল-মাক্কারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৬। কূটনীতিকদের প্রধান দায়িত্ব ছিল ভদ্রোচিত ভাষায় পত্র বিনিময় এবং আরবি ভাষা ছাড়াও তাহাকে হিব্রু ও স্পেনিশ ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করিতে হইত। ইহা ছাড়া তাহাকে শিল্পকলা ও বিজ্ঞান বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হইতে হইত।
ডজি, স্পেনিশ ইসলাম, পৃঃ ১৮১-৮৪, ১৯৪ দেখুন। ১০। ঐ, পৃঃ ১৮৫, রিয়ৗসত আলী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২১১ দেখুন। ১১। ইবনে কুতাইবা ইহাকে বাগিদা বলে উল্লেখ করেছেন (আল-মাকারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৯) এবং
স্পেনিশে আলমাজারা। ১২। ইউসুফ জায়েনের সুজারে (Xodon) এবং স্যামুয়েল মেরিদাতে আত্মগোপন করেন (আল
মাক্কারী, পৃঃ ৭২)।
১৩। ইবনুল আছির, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৮১; আল-রিয়াসত আলী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৬০। ১৪। ইবনুল আছির, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৭৮। ১৫। মাজমুয়া আখবার, পৃঃ ৭৬, ৯৪-৯৫। ১৬। ইবনুল আছির, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৮১; নাফলুল-তিব, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৬। ১৭। ইবনুল আছির, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৮১, রিয়াসত আলী কর্তৃক উল্লেখিত, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৬০। ১৮। এইচ, কে, শেরওয়ানী, মুসলিম কলোনিস, পৃঃ ৮১-৮২ দেখুন। ১৯। ইবনুল আছির, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৯০। ২০। রিয়াসত আলী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৮৮; ই, জি, গমেজ, ইশানা মুসলমানস (হিষ্টোরটা ডি ইস্পনা)
৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৬৯। ২১। ঐ, পৃঃ ২৭৩; ঐ, পৃঃ ৭১-৭২। ২২। মাজমুয়া আখবার, আন্দালুস, পৃঃ ১০১। ২৩। ঐ, পৃঃ ১০১, ১০৪। ২৪। ইবনুল কুতাইবার মতে, আলা আল-মুগীত বেজার প্রধান ছিলেন। এবং আব্বাসীয়দের সমর্থনে
ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। ২৫। ইবনুল আছির, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৪৪০; ইবনে খালদুন, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১২৩; আল-মাক্কারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ
৬৭। ২৬। ইবনুল আছির, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৭; স্টোরি অব দ্যা মেডিরাজ (স্পেন) ৩৬ খণ্ড, পৃঃ ৩২। ২৭। ইবনুল আছির, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৪২, ৪৩, ৪৫; মাজমুয়া, পৃঃ ১১৩-১৬। ২৮। ইবনুল আছির, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৮২; ইবনে খালদুন, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১১৩; নাফলুল-তিব, ১ম খণ্ড, পৃঃ
১৫৫। ২৯। ঐ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৬৩; ঐ, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৮০। ৩০। কুব্বাত, আল-সাকরাহ (দ্যা ডোম অব দ্যা রক) বিল্ট টু ডাইভার্ট দ্যা এটেনশন অব দ্যা
পিলগ্রিমেজ ফ্রম কা’বা হোইজ ওয়াজ আন্ডার দ্যা অকোপেশন অব আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ইন
৭২হিঃ/৬৯১-৯২ A.D. ৩১। নাফলুল-তিব, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৭২ ৩২। ঐ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৭২। ৩৩। শাকিয়া আব্দুল্লাহ বিন মুহম্মদ, ডজি, পৃঃ ২০২ দেখুন। ৩৪। ইবনুল আছির, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৪৬৩-৬৪; আল মাক্কারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭৩। ৩৫। ইবনুল কুতাইবা, পৃঃ ৩৪, ৩৫, ৩৬। ৩৬। ইবনুল খাতিব, খেলাফত-ই-মুয়াহিদীন, পৃঃ ১৩-১৪ দেখুন। ৩৭। মেনেন্দেজ পিদাল, হিস্টোরিয়া ডি ইস্পনা, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫৬৯-৫৭০। ৩৮। গায়ানগোস, ১ম খণ্ড পৃঃ ৮৬। ৩৯। ইবনুল আছির, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৭৯; ইবনে খালদুন, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৪২১। ৪০। গায়ানগোস, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৮৬। ৪১। নাফলুল-তিব, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২১৭-২১৮, রিবেরা আলজুকসানী মূল পৃঃ ৩৩, অনুবাদ পৃঃ ৪১। ৪২। আমীরাত শাসনামলের কোন মুদ্রা আমাদের হস্তগত হয় নাই। ৪৩। ইবনুল আছির, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৭৬; নাফলুল তিব ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৯। ৪৪। ঐ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৭৭, ঐ, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৯, ৭৬।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন