পরিশিষ্ট-ক
(৮২৭-৯৬১ খ্রীঃ)
কর্ডোভা বিদ্রোহ: স্পেনের উমাইয়া আমীর প্রথম হাকাম (৭৯০-৮২২ খ্রঃ) ফোকাহাগণের নিকট প্রিয়ভাজন ছিলেন না। তাহারা ৮০৫ খ্রীঃ হাকামের ভ্রাতা ইবনে শাম্মাসকে সিংহাসনে বসাইবার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। আমীর কাহাকেও বিশ্বাস করিতেন
মুসলমান ও খ্রীস্টান ক্রীতদাসদের সমন্বয়ে গঠিত তাহার দেহরক্ষী সেনার সংখ্যা তিনি প্রায় ৬০০০ (ছয় হাজার)-এ উন্নীত করেন। এই দেহরক্ষীদল আরবী জানিত না বলিয়া তাহাদিগকে বোবা বলা হইত। এই বিশেষ বাহিনীর পিছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করিবার ফলে আমীরকে নগরশুল্ক ও বর্ধিত কর আরোপ করিতে হয়। ফলে কর্ডোভাবাসীগণ আমীরের বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ হইয়া ওঠে। নিগ্রো ক্রীতদাস সৈনিকগণ অধিকাংশ সময় আইন শৃংখলা ভঙ্গ করিত। ইহার ফলে কর্ডোভাবাসীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দেয়। ৮০৭ খ্রীস্টাব্দে টলেডোের অভিজাত সম্প্রদায়ের উপর নির্মম ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালাইবার পর টলেডো ও কার্ডোভায় সাত বৎসর শান্তি বিরাজ করে। রাজধানীর দক্ষিণাংশে অবস্থিত সেকুন্দার আররা বেল দেল সুরের মহল্লায় ছাত্র ও ফোকাহাদের মধ্যে দ্রুত অসন্তুষ্টি ছড়াইয়া পড়ে এবং ৮১৪ খ্রীস্টাব্দে মারাত্মক বিদ্রোহ দেখা দেয়। নিয়ম মাফিক মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য গমন কালে পথিমধে, একদিন এক সাধারণ লোেক আমীরকে অপমান করে। ইহাতে জনগণ খুবই আনন্দিত হয়। এই অপমানে ক্রোধান্বিত হইয়া আমীর দশ ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন। ইহাতে কর্ডোভাবাসীগণ অতিশয় বিক্ষুব্ধ হইয়া ওঠেন। ইয়াহিয়া আন্দোলন পরিচালনা করেন কিন্তু আমীরের বিরুদ্ধে জনগণকে উত্তেজিত করিবার কাজে যিনি ইন্ধন জোগান তিনি ছিলেন তালুত।
রমজান ১৯৮ হিঃ/ মে ৮১৪ খ্রীঃ একদিন আমীরের ক্রীতদাস দেহরক্ষী দলের জনৈক সদস্য এক অস্ত্র প্রস্তুতকারককে তাহার তরবারি পালিশ করিয়া দিতে বলে, যাহা পূর্বে বর্ণিত হইয়াছে। অস্ত্র প্রস্তুতকারক ইহাতে একটু দেরী করিলে দেহরক্ষী উত্তেজিত হইয়া তাহাকে হত্যা করে। বিরাট সংখ্যক সমরাস্ত্রোধারী কর্ডোভাবাসী হাকামের প্রাসাদ সম্মুখে তাঁহাকে হত্যা করিবার উদ্দেশ্যে সমবেত হয়। আমীর তাহাদিগকে ছত্রভঙ্গ করিবার উদ্দেশ্যে সৈন্যদল প্রেরণ করেন কিন্তু তাহারা পরাজয় বরণ করে। কর্ডোভার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে হাকাম প্রাসাদের বাহিরে আগমন করেন এবং সমসাময়িক কালের দুঃসাহসী যোদ্ধা, তাহার পিতব্য পুত্র ওবায়দুল্লাহকে শ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী বাহিনী সহযোগে বিদ্রোহীদের মধ্য দিয়া রাস্তা করিয়া অগ্রসর হইতে এবং আররাবাল (রাবাদ) দেল সুরে ফোকাহাদের মহল্লায় অগ্নি সংযোগের আদেশ করেন।
জনগণ অগ্নিনির্বাপণ ও তাহাদের পরিবার পরিজনসহ সম্পত্তি রক্ষা করিবার জন্য প্রাসাদ ত্যাগ করিলে হাকাম ও ওবায়দুল্লাহ উভয়দিক হইতে প্রচণ্ডবেগে বিদ্রোহীদের উপর হামলা করিলে বিদ্রোহীগণ প্রাণভয়ে বিশৃংখলভাবে পলাইতে শুরু করে। নিগ্রো দেহরক্ষী বাহিনী তাহাদিগকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। দুর্ঘটনার দিনই কতিপয় ধমীয়নেতা কর্ডোভাবাসীদের তরফ হইতে ক্ষমা ভিক্ষার জন্য আমীরের প্রাসাদে আগমন করেন কিন্তু তাহাদিগকে অদুইরা-র কারাগারে বন্দী করা হয় এবং প্রহরী জুদাইর তাহাদিগকে হত্যা করিবার নির্দেশ লাভ করে। জুদাইর এই আদেশ পালন করিতে বিলম্ব করিলে তাহার স্থলে ইবনে নাদিরকে প্রেরণ করা হয়। কর্ডোভার তিনশত বিদ্রোহী সর্দারকে মাথা নীচের দিকে ঝুলাইয়া হত্যা করা হয়।
হত্যালীলার কবল হইতে যাহারা প্রাণে রক্ষা পায় তাহাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হাকাম উজিরদের সহিত পরামর্শ করেন। উজিরদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। হাকাম বিদ্রোহীদের সবাইকে হত্যার পরামর্শ বাতিল করেন এবং নির্বাসনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ফোকাহাদের অনুসারী নব মুসলিমদের মজবুত ঘাটি গোয়াদালকুইভিরের দক্ষিণে সেকুন্দার আররাবেল দেল সুরকে ধূলিস্মাৎ করিয়া বিদ্রোহীদিগকে তিনদিনের মধ্যে স্পেন ত্যাগ অন্যথায় মৃত্যু বরণ করিবার আদেশ জারি করেন। ইয়াহিয়া তালুত ও অন্যান্য বিখ্যাত ধর্মীয় নেতাগণ মুক্তি লাভ করেন। এ সম্পর্কে লিখিতে যাইয়া স্কট মন্তব্য করেন, “সাধারণ অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হইলেও দুষ্কর্মের হোতা রাজদ্রোহে ইন্ধন দাতাগণ বিশেষ ক্ষমা লাভ করে। পক্ষপাতিত্বের ব্যাখ্যা হিসাবে দেখান হয় যে, বিদ্রোহীগণ ছিল বিদেশী এবং গোড়া ধর্মবিশ্বাসী অত্যন্ত ঘৃণিত জাতি। অপরদিকে মালেকী সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ধর্মীয়গুরু ছিলেন কুরায়েশ বংশোদ্ভূত। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বনের সময় ব্যক্তিগত অপমান ও সিংহাসনের নিরাপত্তার চেয়ে আল হাকামের মনে তাহাদের রক্তের সম্পর্ক ও জাতি বিদ্বেষ বিশেষভাবে কাজ করে। পূর্বতন বিদ্রোহের বিখ্যাত নেতাগণ দেশ ত্যাগের অনুমতি, সংক্ষিপ্ত কারাবাস ও সাধারণ ক্ষমার সুযোগ লাভ করেন। ক্ষমা প্রাপ্তদের মধ্যে ধূর্ত ষড়যন্ত্রকারী ইয়াহিয়া তাহার প্রতিভা অথবা দুঃসাহসিকতার দরুন পুনরায় কিছুটা রাজআনুকূল্য লাভে সমর্থ হন।” কর্ডোভাবাসীদের দেশত্যাগের আদেশের সাথে সাথে গণহত্যা ও লুণ্ঠনের অবসান ঘটে। বড় বড় দলে দেশ ত্যাগের অনুমতি না থাকায় তাহারা স্ত্রী, পুত্র ও ছোট ছোট বহনযোগ্য গাটরিসহ স্পেন ত্যাগ করে। ইহা সত্ত্বেও তাহারা অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টে পতিত যাত্রাপথে দস্যুদল ও চরিত্রহীন সেনাবাহিনীর লোকেরা ঝোপ জঙ্গলে আত্মগোপন করিয়া থাকিত তাহাদের যথাসর্বস্ব লুণ্ঠন করিবার উদ্দেশ্যে। যাহারা ধনসম্পত্তি রক্ষা
করিবার চেষ্টা করে তাহারা নিহত হয়। গন্তব্য স্থল উপকূলে পৌছিবার পূর্বেই তাহাদের অনেকে লুণ্ঠিত ও নিহত হয়। উপকূলে পৌছিবার পর তাহারা দুই দলে বিভক্ত হইয়া একদল উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা ও অপর দল মিশর গমন করে।
আট হাজার পরিবার মরক্কোতে আশ্রয় গ্রহণ করে। দ্বিতীয় ইদ্রিস, তাহার পিতা প্রথম ইদ্রিস কর্তৃক ৭৮৯ খ্রীঃ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ফাস-এ (ফেজ) তাহাদিগকে সাদরে গ্রহণ করেন। সেখানে পূর্বেই স্পেন হইতে উদ্বাস্তু আগমন করিয়াছিল। দ্বিতীয় ইদ্রিস কর্তৃক নবনির্মিত শহর, মাদিনাতুল আলীয়া অথবা আল কায়রোওয়ানের উপকণ্ঠে তাহারা বসতি স্থাপন করে। মাদিনাতুল আন্দালুস অথবা ইদওয়াতুল আন্দালুস (আন্দালুসীয় মহল্লা) ৭ নামে তাহারা পরিচিত হইয়া ওঠে। কায়রোওয়ান ও কর্ডোভার আরবগণ একে অপরকে ঘৃণা করিত। ফলে মহল্লার মধ্যবর্তী স্থানে প্রাচীর নির্মাণ করিয়া তাহাদিগকে পৃথক করিয়া রাখা হইত। কর্ডোভার পারদশী বাগান রচনাকারী, স্থপতি ও শিল্পী উদ্বাস্তুগণ ফেজের অমূল্য সম্পদে পরিণত হয়। তাহাদের অভিজ্ঞ হাত ও কৌশল ব্যবহারে শহর ও শহরতলী উন্নত এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত হইয়া পড়িয়া ওঠে।
তাহারা ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়া পূর্বদিকে যাত্রা শুরু করে এবং ১৯৯ হিঃ/ ৮১৪-৫১০ খ্রীঃ নাগাদ আলেকজান্দ্রিয়ার উপকূলে নঙ্গর করে। আমার মত প্রকাশ করেন যে, কর্ডোভার ধ্বংসযজ্ঞের আট বৎসর পর তাহারা আলেকজান্দ্রিয়ায় পৌছে। এই সময়ে তাহারা স্পেনের এখানে সেখানে এবং উত্তর আফ্রিকায় স্বল্প সময়ের জন্য বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীকালে প্রথম হাকাম অথবা তাহার পুত্র দ্বিতীয় আবদুর রহমান তাহাদিগকে দূর দেশে পাঠাইবার উদ্দেশ্যে নৌযান সরবরাহ করেন। আলেকজান্দ্রিয়ার শহরতলীতে একত্রিত হইবার পূর্বে বিত্ত ও কপর্দকহীন অবস্থায় তাহারা বেলেয়ারিক দ্বীপপুঞ্জের অপর পাড়ে ও ইটালীতে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ঘুড়িয়া বেড়ায়।”১১ কিন্তু তাহার বর্ণনার সহিত নুয়ায়রী ও অপর আরব লেখকদের সাদৃশ্য নাই। কর্ডোভান বিদ্রোহের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তাহারা আলেকজান্দ্রিয়াতে আগমন করে, আরব ঐতিহাসিক লেখকদের মতবাদে আমাদের এই বিশ্বাস জন্মে।১২
প্রথম হাকামের বিরুদ্ধে কর্ডোভাবাসীদের বিদ্রোহ ঘোষণার সমসাময়িক কালে বাগদাদে আব্বাসীয় খলিফা মামুনের বিরুদ্ধেও মিশরীয়গণ বিদ্রোহ করে।১৩ বিদ্রোহী নেতা ওবায়দুল্লাহ বিন আল-সারী নিজেকে স্বাধীন শাসক বলিয়া ঘোষণা করেন।১৪ লাখমী আরব ও শুদ্ধি-আদর্শের অনুসারীদের সহযোগিতায় তিনি একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশৃংখলাপূর্ণ অবস্থায় আলেকজান্দ্রিয়ার জনগণ তাহাদের নামমাত্র শাসক মামুনের অস্তিত্বকে বিপন্ন করিয়া তোলে। পেডরোসেস (ফাহস আল বালুত)
উপত্যকার আবু হাফস উমর বিন-ইসা বিন-শোয়াইব আল বালুতী নামে জনৈক কর্ডোভাবাসীর নেতৃত্বে কর্ডোভার উদ্বাস্তুগণ আলেকজান্দ্রিয়াতে নিজেদিগকে প্রতিষ্ঠিত করিবার উদ্দেশ্যে বিদ্রোহের সুযোগ গ্রহণ করে। আবু হাফস স্থানীয় শক্তিশালী বেদুইন উপজাতির সহিত যুক্তরাষ্ট্র গঠন করেন। ঘৃণা এবং বিদ্বেষের দরুন সখ্যতা বজায় রাখিতে ব্যর্থ হইয়া তাহারা ২০০ হিঃ / ৮১৬ খ্রীঃ আলেকজান্দ্রিয়াতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।১৬ উল্লেখযোগ্য যে, একদিন কর্ডোভার জনৈক উদ্বাস্তুর সহিত আলেকজান্দ্রিয়ার এক কশাইয়ের সামান্য ব্যাপারে ঝগড়া হওয়ার ফলে উদ্বাস্তু নিহত হয়। অতঃপর কর্ডোভার উদ্বাস্তুগণ আলেকজান্দ্রিয়ার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করিয়া বহু আলেকজান্দ্রীয়কে হত্যা করে এবং শহর দখল করে।
সর্ব প্রকারের অসুবিধা এবং আব্বাসীয়দের উপর্যুপরি আক্রমণ সত্তেও কর্ডোভার মোহজেরগণ আলেকজান্দ্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাহাদের অধিকারে রাখে এবং বার বৎসরের অধিককাল শাসন করে।”১৮ তাহারা আব্বাসীয় আক্রমণ প্রতিহত করে এবং ভূমধ্যসাগরীয় উপদ্বীপসমূহে আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করে।১৯ টমাস দে ক্যাপ্লাডোসিয়া কর্তৃক অনুপ্রাণিত হইয়া ইসাওরীয়ান রাজবংশের সম্রাট দ্বিতীয় মাইকেলের বিরুদ্ধে বাইজান্টীয় জনগণ এই সময়ে (৮২০- ২৯ খ্রীঃ) গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল। ইহার ফলে এজিয়ান সমুদ্রে বাইজান্টীয়দের অধিকার হুমকীর সম্মুখীন হয়। আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ আবু হাফসকে তাহার অনুসারীদের সহযোগিতায় আলেকজান্দ্রিয়াতে পুনর্বাসনের সুযোেগ করিয়া দেয় এবং শেষ পর্যন্ত তাহাকে শাসন কায়েমে সাহায্য করে। একই রূপে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের গৃহযুদ্ধের ফলে ৮২১ খ্রীস্টাব্দে তাহারা পরবর্তী সময়ে এজিয়ান সমুদ্রের গ্রীক দ্বীপসমূহে আকস্মিক আক্রমণের সুযোগ গ্রহণ করে। এই সময় পূর্ব ভূমধ্যসাগরের সর্ববৃহৎ দ্বীপ ক্রীট যেখানে হাজার বছর পূর্বে গ্রীক সাম্রাজ্যের উদ্ভব হইয়াছিল, কর্ডোভার মোহাজেরগণ সেখানেও অভিযান পরিচালনা করে। বিখ্যাত ভৌগোলিক ইয়াকুত বলেন যে, “ক্রীট দ্বীপ সম্পূর্ণরূপে বিজীত হইবার বহু পূর্বে ইহার কিছু অংশ আবু হাফসের পুত্র শোয়ায়েব অধিকার করিয়াছিল।”২০ ভ্যাসিলিভের বর্ণনা মতে, “কর্ডোভাবাসী দশ অথবা বিশটি নৌযান যোগে ক্রীট দ্বীপ আক্রমণ করে এবং বহু বন্দীসহ ধনসম্পদ লুণ্ঠন করিয়া মিশর গমন করে।”২১
আব্বাসী খালিফা মামুন তাহার সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। তাহির বিন হুসায়েন২২ যিনি (৮২০-২২ খ্রীঃ) পূর্বাঞ্চলের ভাইসরয় ছিলেন। তাহার পুত্র আব্দুল্লাহকে আব্বাসী খলিফা বিদ্রোহ দমনের জন্য ২০৯ হিঃ / ৮২৪-৫ খ্রীঃ সিরিয়া ও মিশরের গভর্নর নিয়োগ করেন। আব্বাসীয় সেনাপতি মেসোপটেমীয়াতে শান্তি শৃংখলা
পুনঃস্থাপন এবং ফুসতাতের বিদ্রোহী ওবায়দুল্লাহকে দমন করেন।২৩ তিনি ২১০ হিঃ ৮২৫-৬ খ্রীস্টাব্দের এপ্রিল মাসে আলেকজান্দ্রিয়ার দিকে অগ্রসর হন এবং কর্ডোভার মোহাজেরদিগকে শহর সমর্পণ অথবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইতে বলেন।২৪ আবু হাফস কঠিন চাপে পড়িয়া এই শর্তে প্রথম প্রস্তাব গ্রহণ করেন যে, তাহার অনুসারীদের আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের বাহিরে গমনের জন্য টাকা পয়সা ও স্বাধীনভাবে দেশ ত্যাগের সুযোগ দিতে হইবে। আব্দুল্লাহ তাহার শর্ত গ্রহণ করেন।২৫ ৮২৬ খ্রীঃ জুনের পরবর্তী সময়ে চল্লিশটি জাহাজ যোগে স্ত্রী পুত্রসহ কর্ডোভার উদ্বাস্তুগণ আলেকজান্দ্রিয়া হইতে ক্রীট দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ক্রীট দ্বীপ অতি সহজে অধিকার করা যাইবে বলিয়া তাহারা ইহাকে নতুন বাসস্থান হিসাবে নির্বাচন করে।২৬।
আলেকজান্দ্রিয়াতে দীর্ঘ অবস্থান কালে এজিয়ান দ্বীপসমূহের পরিস্থিতি সম্পর্কে কর্ডোভাবাসী অবহিত ছিল। আব্বাসীয়দের নিকট হইতে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী, টাকা-পয়সা পাইয়া এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সহযোগিতায় ৮২৬ খ্রীঃ শেষে অথবা ৮২৭ খ্রীঃ প্রথমে তাহারা আলেকজান্দ্রিয়া হইতে অতি সহজে ক্রীট দ্বীপে অবতরণ করে।২৮ আমীর বলেন, “ক্রীট দ্বীপে অবতরণের পর আবু হাফস আলেকজান্দ্রিয়া হইতে জরুরী ভিত্তিতে প্রাপ্ত জলযানের কিছু পুনরায় সমুদ্র গমনে অনুপযোগী বিধায় জ্বালাইয়া দেন।”২৯ বাইজান্টীয় সূত্র মতে, “কর্ডোভার আমীর আবু হাফস যাহাকে বাইজান্টাইনরা আপোকাপসো বলিত, তিনি কর্ডোভাবাসী যাহাতে পুনরায় তাহাদের প্রিয় দেশে পাড়ি জমাইতে না পারে, সেইজন্য ক্রীটে অবতরণের পর সমস্ত জাহাজ জ্বালাইয়া দিতে আদশে করেন। ইহাতে কর্ডোভাবাসীদের অন্তরে গভীর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।৩০ স্পেনে পরিত্যক্ত স্ত্রী পুত্রদের সহিত পুনর্মিলন ও প্রত্যাবর্তনে তাহারা সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হইয়া পড়ে।” আবু হাফস নিম্নবর্ণিত বাক্যে তাহাদিগকে সান্ত্বনা দান করেন, “কেন তোমরা দুঃখ (আপশোস) করিতেছ? আমি তোমাদিগকে এমন দেশে আনিয়াছি যেখানে দুধ ও মধুর প্রাচুর্য রহিয়াছে। ইহাই তোমাদের প্রকৃত দেশ, এখানে তোমরা শান্তিতে বসবাস কর এবং জন্মভূমির মায়া ভুলিয়া যাও। এখানেই তোমরা পূর্বাপেক্ষা মনোহারিণী ও অপরূপ সুন্দরী নারী লাভ করিবে এবং তাহারা তোমাদিগকে ইন্সিত আনন্দ দান করিবে।”৩১ মুসলিম ঐতিহাসিকগণ কর্তৃক ইহা সমর্থিত নহে।
আবু হাফস লাদা (সৌদা৩২) উপসাগরের নিকটবর্তী নিম্নভূমিতে বুক সমান উঁচু প্রাচীর ও পরিখাতে পরিবেষ্টিত এলাকায় প্রথম শিবির স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে সেখান হইতে চারাক্স অন্তরীপের নিকটবর্তী উচ্চভূমিতে স্থানান্তর করেন। পরিখা দ্বারা সুরক্ষিত এই শিবির কালক্রমে উন্নত হইয়া আলখক শহরে পরিণত হয়।৩৩ আধুনিক চান্দাক্স অথবা চান্দীয়া শব্দ সমগ্র দ্বীপের জন্য ব্যবহৃত হইয়া
থাকে। গৃহযুদ্ধ অবসানের পর ৮২৪ খ্রীঃ দ্বিতীয় মাইকেল ক্রীটের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। কিন্তু এজিয়ান সাগরে তাহার অধিকার রক্ষা করিবার উদ্দেশ্যে কর্ডোভা হইতে আগমনকারী অথবা স্পেন ও আফ্রিকার জলদুস্যদের (লুইসের) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে তিনি ব্যর্থ হন। কর্ডোভাবাসীদিগকে ক্রীট হইতে বিতাড়নের জন্য দুইটি অভিযান পরিচালিত হয়।৩৪ প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধন করিয়া কর্ডোভাবাসীরা এই অভিযান প্রতিহত করে। দ্বিতীয় অভিযানে অংশ গ্রহণকারী প্রতি সৈনিককে চল্লিশ স্বর্ণমুদ্রা দিতে হয়। ৩৫ একটি দুর্গের অধিকারী আবু হাফস অতি সহজে একের পর এক দুর্গ অধিকার করিয়া নেন। মূল দ্বীপবাসীদের হস্তে শেষ পর্যন্ত একটি দ্বীপও অবশিষ্ট থাকে না। ভ্যাসিলিভের মতে, “আলখক শহর প্রতিষ্ঠার পর বিশটি নতুন শহর মুসলমানদের হস্তগত হয় এবং ইহার অধিবাসীগণ আত্মসমর্পণ করিতে বাধ্য হয়। তাহার মতে খ্রীস্টানদের হস্তে একটি মাত্র শহর অবশিষ্ট থাকে।৩৬ তিনি তাহার ক্ষমতাকে ক্রমে ক্রমে এমন ভাবে সুসংহত করেন যে, তাহার বংশধরগণ প্রায় একশত পঁয়ত্রিশ বৎসর এই দ্বীপ শাসন করেন।”৩৭ আবু হাফস দেশের উন্নতি সাধনে আত্মনিয়োগ করেন। সুশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি দ্বীপটিকে চল্লিশটি অঞ্চলে বিভক্ত করেন। ক্রীট অতি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধশালী হইয়া ওঠে। স্পেন, মিশর ও সিরিয়ার মুসলমানদিগকে ক্রীট দ্বীপে আগমনের আহবান জানান হয়। কালক্রমে ইহা মুসলমানদের শক্তিশালী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সুরক্ষিত দুর্গে পরিণত হয়।
ক্রীটের প্রাকৃতিক সম্পদ ও উর্বর ভূমির আকর্ষণ মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।৩৯ ক্রীটবাসী চাষ আবাদ করিত, মেষপাল চড়াইত ও অন্যান্য পশু পালন করিত। ক্রীট দ্বীপের অধিবাসীদের প্রধান পেশা ছিল গৃহপালিত পশু লালন পালন করা। এই দ্বীপসমূহের কোন একটির অধিবাসীকে আরব লেখকগণ পশুপালক (আস হাবুল বকর) হিসাবে বর্ণনা করায় ইহার প্রমাণ পাওয়া যায়।১ ক্রীটবাসী দুধ ও মধু প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করিত। তাহারা পার্শ্ববর্তী দ্বীপসমূহ ও উপকূলীয় শহরের সহিত ব্যবসা বাণিজ্য করিত ৩ ক্রীটের অধিবাসীগণ প্রতিবেশীদের তুলনায় নৌশক্তিতে শক্তিশালী হইবার দরুন এইসব দেশের ব্যবসায়ী ও নাবিকগণকে বিনা শুল্কে এজিয়ান সমুদ্রে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা ও জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিত না।
ক্রীটবাসীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ অথবা আবু হাফস ও তাহার বংশধরদের শাসন ও প্রশাসন পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়।
এমন কি আবু হাফস উমর আল বালুতি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজবংশের শাসকদের একটি পূর্ণ তালিকাও আমাদের হস্তগত হয় নাই।
মধ্য যুগে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে সিরিয়া, আফ্রিকা ও ক্রীটে মুসলমানদের প্রধান তিনটি নৌঘাটি বিদ্যমান ছিল। ইহাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ক্রীটের নৌঘাটি। নবম ও দশম শতাব্দীতে ভূমধ্যসাগরের নৌবাহিনীর ইতিহাসে ক্রীটদের প্রাধান্য বিস্তারের পশ্চাতে আবু হাফস ও তাহার বংশধরদের অবদান অনস্বীকার্য। ক্রীট নবম শতাব্দীর সিকি অংশ হইতে পরবর্তী একশত পঁয়ত্রিশ বৎসর পূর্ব ভূমধ্যসাগরের সামুদ্রিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।৪৫ ক্রীট দ্বীপ অধিকারের পর আবু হাফস নিজেকে রাজা বলিয়া ঘোষণা করেন। কনস্টান্টিনোপলের সম্রাটের ভৎর্সনাকে উপেক্ষা করিয়া তিনি চল্লিশটি জাহাজ যোগে প্রতিবেশী দ্বীপসমূহে অভিযান পরিচালনা করেন।৪৬ মারিয়ানো বলেন, “ক্রীটীয় মুসলমানগণ উপকূলে ও পার্শ্ববর্তী দ্বীপসমূহে একের পর এক অভিযান পরিচালনা করিয়া বন্দী আটক ও লুণ্ঠিত দ্রব্যের সাহায্যে প্রচুর ধনসম্পদের অধিকারী হয়।৭ উপর্যুপরি অভিযানে এজিয়ান দ্বীপসমূহ লোকহীন জনপদে পরিণত হয়। প্রচুর সংখ্যক দ্বীপবাসী বন্দী হয় ও অবশিষ্টরা পলায়ন করে। থিসসালোনিকার থিওডোেরাও তাঁহার স্বামীর সহিত দেশত্যাগ করেন এবং দ্বীপপুঞ্জে ইসমাইলীদের (ফাতেমী) হস্তগত হয় ও দশম শতাব্দী পর্যন্ত বিরাণ জনপদ হিসাবে থাকে। অনুরূপ ভাবে আরচিপেলের ন্যায় বহু দ্বীপ আফ্রিকান ও ক্রীটদের অভিযানের ভয়ে লোকহীন জনপদে পরিণত হয়। বাইজান্টীয় সম্রাজ্যে ক্রীটবাসীদের একাধিক আক্রমণে বাইজান্টীয় সম্রাটের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়। তিনি কোন কোন সময় সফলতার সহিত প্রতিআক্রমণ পরিচালনা করেন। ৮২৯ খ্রীঃ অক্টোবর মাসে থাসসাসের অদূরে ক্রীটের নৌবহর কর্তৃক আক্রমণে বাইজান্টীয় নৌবহর সম্পূর্ণ রূপে বিধ্বস্ত হয়।৪৯ পরবর্তীকালে বাইজান্টীয় সম্রাট দ্বিতীয় মাইকেল এশিয়া মাইনরের উপকূলে ক্রীটবাসীদের বিরুদ্ধে সত্তরটি যুদ্ধজাহাজ প্রেরণ করিয়া বহু আরবকে বন্দী করেন।৫০ কিন্তু ৮৪৩ খ্রঃ মার্চ মাসের বাইজান্টীয় অভিযানে দামিয়েত্তা (দিমিয়াত) লুণ্ঠনের সময় ২৩৮ হিঃ ৮৫৩ খ্রঃ বাইজান্টীয়গণ জাহাজের যন্ত্রপাতির গুদাম জ্বালাইয়া দেয়।৭১ ৮৬২ খ্রীঃ ক্রীটবাসীরা মিটেলেন্সের দ্বীপ আক্রমণ করিয়া আথোসের সন্ন্যাসীর মঠ (আশ্রয়) ধ্বংস করে এবং ৮৬৬ খ্রীঃ নিওনের ক্ষুদ্র দ্বীপের ক্ষতি সাধন করে। বাইজান্টীয় সম্রাট তৃতীয় মাইকেল ক্রীট অধিকারের উদ্দেশ্যে একাধিক অভিযান পরিচালনা করিয়া ব্যর্থ হন। পরবর্তীকালে বাইজান্টীয় সম্রাট ষষ্ঠ লিও এবং সপ্তম কনস্টান্টাইন দশম শতাব্দীতে ক্রীটের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাইয়া ব্যর্থ হন। ৯৪৯ খ্রীঃ সপ্তম কনস্টান্টাইনের রাজত্বকালে বাইজান্টীয়দের জোরপূর্বক ক্রীটে অবতরণ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। উভয় শাসকই অভিযানসমূহ পরিচালনায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। কোন কোন সময় একটি অভিযান পরিচালনায় ১,৪০,০০০ পাউন্ড ব্যয় হয়।৫৩ খ্রীস্টীয় দশম শতাব্দীতে ক্রীটবাসীগণ গ্রীসের উপকূল দখল করিয়া এথেন্সে বসতি স্থাপন করেন ৫৪
পরবর্তীকালে এখান হইতে একটি কূফী শীলালিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে। ক্রীটের জাহাজ শুধু বাইজান্টীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং গ্রীক উপকূলেই অভিযান পরিচালনা করে নাই, উপরন্তু ৮৪১ খ্রীস্টাব্দে এশীয় উপকূলেরও ধ্বংস সাধন করে এবং ৮৬২ খ্রীস্টাব্দে এশিয়া মাইনরের উপকূলেও লুণ্ঠন চালায়। বিশটি গুমারী, সাতটি মালবাহী জাহাজ ও কতিপয় সাটুরা৫৫ সমন্বয়ে গঠিত ক্রীট নৌবহর এশিয়া মাইনর হইতে নগদ টাকা, বন্দী ব্যক্তি ও প্রচুর লুণ্ঠিত মাল বহন করে ৭৬
বাইজান্টীয় সম্রাটদের পূর্বসীমান্তে আব্বাসী আক্রমণ এবং উপকূল দ্বীপসমূহে ক্রীটবাসীদের নিয়মিত অভিযানে অতিষ্ঠ হইয়া বাইজান্টীয় সম্রাট আন্দালুসিয়ার সহিত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ৮৪০খ্রীঃ বাইজান্টীয় সম্রাট থিওফিলাস তাহার সহিত মৈত্রী চুক্তি সম্পাদনের অনুরোধ জানাইয়া কর্ডোভার তৃতীয় আবদুর রহমানের রাজপ্রাসাদে আরবী ভাষায় অভিজ্ঞ জনৈক গ্রীককে প্রেরণ করেন। একই সময়ে তিনি তাহার পূর্ব পুরুষের রাজ্যকে পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এবং আব্বাসী ও তাহাদের অনুগত আগলাবিদদের মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেন। কর্ডোভার নেতা আবু হাফস আল বালুতী কর্তৃক অধিকৃত ক্রীট পুনরুদ্ধার ও সেখানে তাহার অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন।
আমীরের সহিত যোগাযোগে বিশেষ কোন ফায়দা হয়না এবং তাহার পূর্ব পুরুষের রাজত্ব সম্পর্কিত আবেদন আমীরের সহানুভূতি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়। মৈত্রীচুক্তি সম্পাদনের আবেদনে আমীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ও উপহার উপঢৌকনসহ দুইজন সভাসদকে তাহার নিকট প্রেরণ করেন।৫৭ থিওফিলাসের উত্তরাধিকারীগণও ক্রিটের বিরুদ্ধে কর্ডোভার সাহায্য ও সহযোগিতা লাভে ব্যর্থ হন। বাইজান্টীয় সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া তৃতীয় আবদুর রহমান গ্রীক সম্রাটের সহিত মৈত্রীচুক্তি সম্পাদন করেন যদিও এই চুক্তি দ্বারা রাজনৈতিক কোন উপকার সধিত হয় নাই।
পর্কঃ বাইজান্টীয় পদক্ষেপকে মোকাবিলা করিবার উদ্দেশ্যে ক্রীট প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলির সহিত মৈত্রীচুক্তি সম্পাদন করে। তাহারা সিরিয়া, উত্তর-আফ্রিকা ও স্পেনের মুসলমানদিগকে ক্রীটে বসতি স্থাপন এবং আগলাবিদ শাসকদের সাহায্য করিতে আহ্বান জানান, সাহারা, সিসিলি বিজয়ের সময় বাইজান্টানীয়দের শত্রু ছিল ৫৮ আরব পর্যটক, বিদ্বান ও রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন জীবন চরিত হইতে প্রতীয়মান হয় যে ক্রীটে বসতি স্থাপনের পর সেখানকার কর্ডোভাবাসী ও স্পেনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়িয়া ওঠে। ইবনুল ফারাজী বলেন যে,
“কর্ডোভার মারওয়ান বিন আবদুল মালিক বিন আল-ফাখখার (কাজি বাকী বিন মাখলাদের প্রবীণ শিষ্য) প্রাচ্যের বহুদেশ ভ্রমণ করেন এবং খ্রীস্টীয় দশম শতাব্দীতে আমীর শোয়ব বিন আবু হাফসের রাজত্ব কালে তাহাকে সাদর আমন্ত্রণ জানান হলে তিনি ক্রীটে স্থায়ী বসতিস্থাপন করেন এবং দ্বীপের প্রধান বিচারপতির পদ অলংকৃত করেন। সেখানে তাহার দেশের বহু লোকের সহিত সাক্ষাৎ ঘটে। জীবন চরিতের লেখক আরও বলেন যে, তাহার স্বদেশবাসী স্পেনে প্রত্যাবর্তনের পর তাহারা ক্রীটে ঘটনার সাথে সম্পর্কিত আল-ফাখখারের কঠিন জীবন সম্পর্কে বর্ণনা দেন। যদিও তিনি যেখানে বিশজন মূল্যবান ক্রীতদাসী, বহু তলা বিশিষ্ট অট্টালিকা এবং ইতিহাস সম্বন্ধে ঐতিহ্যপূর্ণ লাইব্রেরির অধিকারী ছিলেন।
বাইজান্টীয়দের দ্বারা ক্রীট পুনর্বিজয়ের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে নুয়ারী বলেন, বাইজান্টীয় সম্রাট দ্বিতীয় রোমান নিয়মিত যুদ্ধে ক্রীট দখলে ব্যর্থ হইয়া কূটকৌশল অবলম্বনের চিন্তা করেন এবং ক্রীটের শাসক হাবিরের পুত্র আবদুল আজিজ বিন উমরের নিকট মূল্যবান পোশাক প্রেরণ করেন। কালক্রমে তাহাদের মধ্যে একটি মৈত্রীচুক্তি সম্পাদিত হয়। পরবর্তীকালে বাইজান্টীয় সম্রাট জনৈক ক্রীটবাসী মুসলিমকে রাষ্ট্রদূত হিসাবে আবদুল আজিজের দরবারে প্রেরণ করেন। তিনি পার্শ্ববর্তী দ্বীপসমূহের পক্ষ হইতে বলেন যে, তাহারা আপনার প্রতিবেশী ও বন্ধু। তিনি আরও বলেন যে, এই সমস্ত দ্বীপের অধিবাসীগণ খুবই দরিদ্র এবং তাহারা ক্রীটের পুনঃপুনঃ আক্রমণের ফলে স্থায়ীভাবে শান্তিতে বসবাস করিতে পারে নাই।
যে সমস্ত দ্বীপবাসী ক্রীটের আক্রমণের ভয়ে দ্বীপ ত্যাগ করিয়াছিল তাহাদিগকে জানমালের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের কার্যে বৈষয়িক সাহায্য প্রদান করিলে তাহারা পুনরায় দ্বীপে ফিরিয়া আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে।৬০ ক্রীটের রাজা সারা বৎসর অভিযান পরিচালনা করিয়া যে পরিমাণ ধন সম্পদ উপার্জন করিত বাইজেন্টীয় সম্রাট এই শর্তে উহার দ্বিগুণ অর্থ দিতে রাজী হয় যে তাহাদিগকে দ্বীপে পুনর্বাসনের অনুমতি দিতে হইবে এবং দ্বীপসমূহও ক্রীটদের মধ্যে এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তাহাদের ব্যবসা বাণিজ্যের অবাধ সুযোগ দিতে হইবে। ক্রীটরাজ সরল বিশ্বাসে বাইজান্টীয় সম্রাটের প্রস্তাব গ্রহণ করিয়া সেইভাবে সম্পর্ক গড়িয়া তোলেন। তাহাকে সন্তুষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে বাইজান্টীয় সম্রাট বাৎসরিক প্রচুর কর দিতে রাজি হয়।৬১ দ্বিতীয় রোমান নিয়মিত কর প্রদান করেন। গ্রীক ব্যবসায়ীগণ ক্রীটে, পার্শ্ববর্তী দ্বীপসমূহে ও কনস্টান্টিনোপলের সহিত ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করে। ব্যবসা বাণিজ্য আরম্ভ হইবার ফলে ক্রীটের ঐশ্বর্য ও সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং সামরিক ব্যয় হ্রাস পায়। পরবর্তী কালে কনস্টান্টিনোপল দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হয়। গ্রীক সম্রাট দূত প্রেরণ করিয়া আবদুল আজিজকে প্রস্তাব দেন যে, তাহার কিছু আরব অশ্ব আছে, দেশে অনাবৃষ্টি দেখা
দেওয়াতে তিনি ইহা প্রতিপালন করিতে অক্ষম। তিনি মুসলিম রাজার নিকট অশ্ব পালনের চারণভূমির অনুমতি প্রার্থনা করেন এবং অঙ্গীকার করেন যে, এই অশ্ব হইতে সৃষ্ট সমস্ত পুরুষ অশ্ব রাজাকে দিবেন। কূটকৌশল অনুধাবন করতে ব্যর্থ হইয়া আবদুল আজিজ এই প্রস্তাবে সম্মতি দেন। ৫০০ অশ্বের চারণভূমি লাভ করিবার পর বাইজান্টীয় সম্রাট দ্বীপ দখলের দুরভিসন্ধি করেন। মহরম ৩৫০ হিঃ/ফেব্রুয়ারী ৯৬১ খ্রীঃ তিনি নিসেফর ফোকাসের৬২ সেনাপতিত্বে এক সুদক্ষ সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। গ্রীক অশ্বগুলিকে যে দ্বীপে সৈনিকদের জন্য প্রস্তুত রাখা হইয়াছিল, যুদ্ধ জাহাজ সেখানে উপস্থিত হয়। মুসলিম রাজা ও প্রজা হতবাক হইয়া যায়। আবদুল আজিজ নিজকে এবং দেশকে রক্ষা করিতে চেষ্টা করেন কিন্তু ইহাতে বিফল হন। প্রভূত ক্ষতি সাধন করিয়া তাহারা মুসলিম রাজধানী অধিকার করে। রাজাসহ বহু অভিজাত ও সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ লোককে হত্যা করা হয়। মুসলিম অভিজাত ও সৈনিকদের পরিবার পরিজনকে বন্দী করা হয়। সাধারণ জনগণের উপর কোনরূপ অত্যাচার করা হয় না। অতঃপর দ্বীপটি বাইজান্টীয়দের দ্বারা সুরক্ষিত হয়। ক্রীটবাসীগণ বুঝিতে পারেন যে, বাইজান্টীয়রা আবদুল আজিজকে দ্বিগুণ কর প্রদানে সন্তুষ্ট করিয়া কূটকৌশল ও চাতুরীর মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত দ্বীপ দখল করিতে সক্ষম হইয়াছে।৬৩
বাইজান্টীয়দের দ্বারা ক্রীট পুনর্দখলের নুয়ায়রীর বর্ণনা সম্পর্কে মারিয়ানো গাসপার সন্দেহ প্রকাশ করেন। ইয়াকুত ও ইবনে খালদুনের ন্যায় আরব ঐতিহাসিকগণ সংক্ষেপে উল্লেখ করিয়াছেন যে, ৭২০০০ পদাতিক ও ৫০০০ অশ্বারোহী লইয়া নিসেফর ফোকাস জামাদিউল আওয়ালের শেষে ৩৪৯ হিঃ/ জুন ৯৬০ খ্রীঃ ক্রীট দ্বীপ আক্রমণ করেন। যুদ্ধে ক্লান্ত মুসলমানগণ সাত মাসের বিরামহীন অবরোধে খাদ্যের অভাবের দরুন আত্মসমর্পণ করিতে বাধ্য হয়।৬৪ ফেব্রুয়ারি মাসে ৯৬১ খ্রীঃ/১৫০ হিঃ মহররম মাসের মাঝামাঝি সময়ে নিসেফোরাস দাঙ্গাহাঙ্গামা ও আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে দ্বীপে অনুপ্রবেশ করিয়া আবদুল আজিজসহ তাহার বহু সৈনিক ও পরিষদবর্গকে বন্দী করেন। প্রচুর লুটের মাল খ্রীস্টানদের হস্তগত হয়। কনস্টান্টিনোেপলে যুদ্ধ বন্দীদের আনয়নের জন্য তিনটি জাহাজ ব্যবহৃত হয়।৬৫ বাইজান্টীয়গণ প্রত্যক্ষ সামরিক অভিযান অথবা কুটকৌশলের দ্বারা ক্রীট দ্বীপ অধিকার করিয়াছিল তাহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু ইহা আশ্চর্যের বিষয় যে, ভূমধ্যসাগরের পূর্বতীরে অবস্থিত যে দ্বীপ ছিল মুসলিম নৌবাহিনীর শক্তিশালী ঘাটি এবং যাহা সপ্তম কনস্টান্টাইনের ন্যায় বাইজান্টীয় সাম্রাজ্যের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি করিত সেই দ্বীপ দ্বিতীয় রোমানের স্বল্পকালীন শাসন আমলে কি করিয়া বাইজেন্টীয়দের সহজ শিকারে পরিণত হইল! খ্রীস্টীয় দশম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে পরিচালিত বাইজান্টীয় বহু অভিযান সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ আছে এবং এ সম্পর্কে সতর্কতার সহিত গবেষণার প্রয়োজন। ক্রীট পতনের পূর্বে দ্বীপের অভ্যন্তরীণ ও
বাহ্যিক সমস্যাসমূহ আলোচনা করা দরকার। আমরা বাইজান্টীয়দের ক্রীট দখল সম্পর্কে নুয়ায়রীর মতামতকে বাতিল করিলেও আমাদিগকে বিশ্বাস করিতে হইবে যে, বাইজান্টীয় সম্রাট ও ক্রীটের রাজার মধ্যে মৈত্রী চুক্তি সম্পাদিত হইয়াছিল। পুনর্দখল সম্পর্কিত অন্যান্য সূত্র হইতে ইহা স্পষ্ট অবগত হওয়া যায় যে, মৈত্রীচুক্তি ক্রীটবাসীদের লুণ্ঠন প্রবৃত্তিকে সংযত করে এবং তাহাদিগকে সামরিক সংগঠন ও সতর্কতা অবলম্বন করা হইতে বিরত রাখে। অপরদিকে বাইজান্টীয় সম্রাট তাহার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং সময় ও সুযোগকে সম্পূর্ণ রূপে ব্যবহার করেন। তিনি স্পেনের উমাইয়া খলিফা তৃতীয় আবদুর রহমানের সহিত সুসম্পর্ক গড়িয়া তোলেন। আবদুর রহমান আর কিছু না হইলেও বাইজান্টীয় আক্রমণের মুখে আবদুল আজিজের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাইতে পারিতেন। উপরন্তু তৃতীয় আবদুর রহমান ও মিশরের ফাতেমী খলিফা মুইজের প্রতিদ্বন্দীতাও বাইজান্টীয়দের ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে প্রভাব বিস্তার এবং শেষ পর্যন্ত ক্রীটদ্বীপ বিজয়ের সুযোেগ করিয়া দেয়।
বাইজান্টীয় লেখকের মতে, ক্রীটের শেষ মুসলিম আমীর বন্দী হিসাবে কনস্টান্টিনোপলে আনীত হন এবং সেখানে তিনি প্রাসাদবৃত্তি ভোগ করিতেন ও তাহার পুত্র আনেমাস৬৬ সাম্রাজের নিজস্ব কর্মচারী হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করেন। মুসলমানদিগকে দ্বীপে বসবাস করিবার অথবা যে কোন দেশে যাইবার অনুমতি দেওয়া হয়। বিখ্যাত ভূগোলবিদ ইসতাখরি যিনি দীর্ঘদিন জ্ঞান অর্জনে নিজেকে ভ্রমণে ব্যাপৃত রাখেন। তিনি খ্রীস্টীয় দশম শতাব্দীতে জীবিত ছিলেন এবং ইতিহাস রচনা করেন। তাহার লেখা হইতে জানা যায় যে, ক্রীটের অধিকাংশ অধিবাসী ছিলেন মুসলমান৬৭ কিন্তু ক্রীট বাইজান্টীয়দের হস্তগত হইবার পর জোরপূর্বক ধর্মান্তর করা শুরু হয়। বাইজান্টীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অতি উৎসাহী পাদ্রিগণ মুসলমাদের খ্রস্টধর্মে দীক্ষিত করিবার কাজে আত্মনিয়োগ করে।৬৮। নুয়ায়রী ক্রীট পুনর্দখল সম্পর্কে বর্ণনা প্রদান করিয়াছেন। তিনি মুসলমানদের খ্রস্টধর্মে দীক্ষা সম্পর্কেও একটি চিত্তাকর্ষক বর্ণনা দিয়াছেন। অন্যান্য লেখকদের সমর্থনে তিনি বলেন যে, বাইজান্টীয়দের ক্রীট পুনর্দখলের অব্যবহিত পরেই দ্বীপের মুসলমান নেতাগণকে সম্রাটের আনুগত্য স্বীকার করিয়া লইবার আহ্বান জানান হয়। এই সময় একশত মধ্যবিত্ত ক্রীটবাসী কনস্টান্টিনোপলে পৌছিবার পর সম্রাট তাহাদিগকে অতি সাদরে গ্রহণ করেন এবং তাহাদের প্রত্যেককে দশ কাপ স্বর্ণ উপহার দেন। তাহারা সুখী ও সন্তুষ্টচিত্তে ক্রীটে প্রত্যাবর্তন করে। পাসকুয়া দে পেন্টিকোস্টেস উৎসবে একই ব্যক্তিবর্গ পুনরায় কনস্টান্টিনোপলে প্রেরিত হয়। এইবার তাহারা সম্রাটের সম্মুখে উপস্থিত হইলে সম্রাট তাহাদিগকে পানি ও খাবার ব্যতীত কারাগারে পাঠাইতে আদেশ করেন। পরে খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ নতুবা পানি ও খাবার অভাবে মৃত্যুবরণ, ইহার
যে কোন একটা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হয়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাহারা খ্রস্টধর্ম গ্রহণ করিতে বাধ্য হয়। ইহার পরে তাহারা সম্রাটের সহৃদয় ব্যবহার লাভ করে। পরিবার পরিজনের নিকট ফিরিয়া আসিলে তাহাদিগকে পরিবার পরিজনের সহিত মেলামেশা করিতে নিষেধ করা হয়, কেননা তাহারা তখনও পর্যন্ত মুসলমান ছিল। এখন তাহাদিগকে যে কোন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে বলা হয়। হয় তাহাদের পরিবার-পরিজনকে খ্রীস্টান ধর্মে দীক্ষিত করিয়া সুখে জীবন অতিবাহিত করিবার সুযোগ গ্রহণ করিতে হইবে নতুবা তাহাদিগকে কারাগারে পাঠানো হইবে। এইরূপে একদিনের মধ্যে ক্রীটের অবশিষ্ট মুসলমানগণ খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করে।৬৯ এখানে পুনরায় নুয়ায়রী যেভাবে মুসলমানদের খ্রীস্টধর্ম গ্রহণের বর্ণনা করিয়াছেন তাহা হয়তো বুদ্ধিগ্রাহ্য নাও হইতে পারে। কিন্তু ইহার পরবর্তী ঘটনা হইতে অনুধাবন করা যায় যে, ক্রীট পুনর্দখলের অল্পদিনের মধ্যেই মুসলমানদিগকে খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করিতে বাধ্য করা হয়।
তথ্য নির্দেশ
১। ইবনুল খাতিব, দ্যা খেলাফত-ই মুয়াহিদীন, পৃঃ ১৬। ২। বর্তমান ক্যাম্পু ডি ক্যালাটারাভা।
ইবন আল-কুতিয়া (জে রিবেরা) হিস্ট্রোরিয়া, মাদ্রিদ ১৯২৬, পৃঃ ৫৫-৫৭; অনুবাদ ৪৪-৪৬। ৪।
ইবনে আব্বার, হুল্লাহ, পৃঃ ৩৮; ইবন আল-কুতিয়া, ইফতিতাহ আল-আন্দালুস, পৃঃ ৫০-৫১: মাজমুয়া আখবার আল-আন্দালুস, পৃঃ ১৩০, ১৩২, ১৫৯।
হিস্ট্রি অব দ্যা মুরিশ ইম্পায়ার ইন ইউরোপ, ১ম খণ্ড ফিলাডেলফিয়া, ১৯০৪, পৃঃ ৪৬৭-৬৮। ৬। গমেজ, ই, গার্সিয়া, হিস্ট্রোরিয়া ডি ইস্পনা, ৪র্থ খণ্ড, মাদ্রিদ ১৯৫০, পৃঃ ১১১। ৭। পি, কে, হিট্টি, হিস্ট্রি অব দ্যা আরবস, পৃঃ ৫১২, টীকা-২। ৮। ক্রেমার, ডিসক্রিপশান ডি এল আফ্রিকো, পৃঃ ৬৯।
লেভি প্রভেঙ্কাল, লা ফনডেশন, ১৯৩৮, পৃঃ ২৩-৫৩। ১০। ডজি, হিস্ট্রোয়ার, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৫৫; আলবোরনোজ, লা ইস্পানা মুসলমানা, আর্জেন্টিনা, পৃঃ ১৩৬
৭। ১১। স্টোরিয়া ডেল, মুসলমানি ডি সিসিলিয়া, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৬০; জি. উইট, এল ইজিপ্ট-ডি না
কনকুইটি আরব এ লা কনকুইটি অটোম্যান ইন দ্যা হিস্ট্রেয়ার ডেল নেশন ইজিপ্টাইন, জি,
হাউটিয়াক্স, ৪র্থ খণ্ড, প্যারিস, ১৯৩৭, পৃঃ ৬৮-৬৯, ৭১-৭২। ১২। গাসপার ওয়াই রামীর, নাচিয়াত আল-আরব (ফ্রেন্স অনুবাদ) ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৭৪: মাক্কারী, নাফলুল
তিব, পৃঃ ২১৯; ইবনে আছির, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২৭৯-৮১। ১৩। রিয়াসত আলী, দ্যা তারিখ-ই-আন্দালুস, ১ম খণ্ড, আজমগড়, ১৯৫০, পৃঃ ৩৮৫। ১৪। ই. গার্সিয়া গমেজ, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১১১। ১৫। ঐ, পৃঃ ১১১; ইবনে খালদুন (ইবার ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২১১) আল-জাব্বি, বাগেয়াত আল-মুলতামিস, মাদ্রিদ, ১৮৮৫, পৃঃ ৩৯৪।
১৬। কন্দে, হিস্টোরিয়া, ১ম খণ্ড, বার্সিলোনা, ১৮৪৪, পৃঃ ২৪৮-৫২ (যদিও ভিন্নতর ঘটনা জানানো
হয়েছে)। ১৭। ইবন আল খাতিব, দ্যা খেলাফত-ই মুয়াহিদ্দীন, পাণ্ডুলিপি নং ৩৭ (রয়্যাল একাডেমী অব হিষ্ট্রি)
মাদ্রিদ, পৃঃ ১৪৮। মারিয়ান, পৃঃ ২২৩। ১৮। গমেজ, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১১১, ১০ বছর; স্কট, ১ম খণ্ড, ৪৬৭-বিশ বৎসরের অধিককাল। ১৯। মারিয়ান, হোমনেজ, পৃঃ ২২৩। ২০। আবদ-আল্লাহ আল-হুমাইদির হইতে কন্দে কর্তৃক উদ্ধৃত, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২০৬। ২১। বাইজেন্স, ইট লাস আরবস, ১ম খণ্ড, ব্রুক্সেলেস, ১৯৩৫, পৃঃ ৫৪ টীকা-২। ২২। ইবনে খাল্লিকান, বায়োগ্রাফিক্যাল ডিকনারী (দে স্নান কর্তৃক ফ্রেন্স অনুবাদ) ২য় খণ্ড, প্যারিস
১৮৪৩, পৃঃ ৪৮-৫৩। ২৩। রিয়াসত আলী, তারিখ-ই-আন্দালুস, ১৯৫০, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৮৬। ২৪। কিন্দি, কিতাব আল-ওমর, এইস গেস্ট কর্তৃক সম্পাদিত, লেডেন, ১৯১২, পৃঃ ১৫৮, ১৬১; রিয়াসত
আলী, তারিখ-ই আন্দালুস, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৮৬। ২৫। ভ্যাসিলেভ, পৃঃ ৫৫। ২৬। ইবনে আছির, ৪র্থ খণ্ড, ২৭৯, ২৮১; আল-মাক্কারী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২১৯; ইবনে খালদুন, ৪র্থ খণ্ড,
পৃঃ ৪৭, ১২৭, ২১১; ভ্যাসিলেত, পৃঃ ৫২, ৫৫। ২৭। মারিয়ান, হোমনেজ, পৃঃ ২৪৪; আমীর আলী, স্যারাসিনস্ পৃঃ ২৬৯-৭০। ২৮। ইহা সম্ভাব্য তারিখ, ঐতিহাসিক ভিন্ন তারিখের উল্লেখ করেছেন ২১১-১২ হিঃ/জুন ৮২৬-৮২৭;
ইংলিশ হিস্ট্রোরিক্যাল রিভিউ, ২৮তম খণ্ড, ১৯১৩, ৪৩১-৩৩ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ই. ডব্লিউ রুকস
কর্তৃক লিখিত দ্যা আরব অকোপেশন অব দ্যা ক্রীট, প্রবন্ধ দেখুন। ২৯। স্টোরিয়া ভেল মুসলমান ডি সিসিলিয়া, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৬০, ভ্যাসিলেভ, পৃঃ ৫৫। ৩০। মারিয়ান, হোমনেজ, পৃঃ ২২৫। ৩১। থিওফোমস্ কন্টিনিউয়েটুস, পৃঃ ৭৩-৭৭, ৭৯-৮১; সায়মিয়ন ম্যাজিস্টার, পৃঃ ৬২১-২৪; গিবন (স্পেনিশ অনুবাদ) ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৪০৬: হোমনেজ, পৃঃ ২২৪; ভ্যাসিলেভ, পৃঃ ৫৬, টীকা-৩। ৩২। হোমনেজ, পৃঃ ২২৪; ভাসিলেভ, পৃঃ ৩৫। ৩৩। ভ্যাসিলেভ, পৃঃ ৫৬, টীকা-১; দ্যা ইংলিশ হিস্ট্রোরিক্যাল রিভিউ, ২৮তম খণ্ড, ১৯১৩, পৃঃ ৪৩১
৩৪। ৩৪। ভ্যাসিলেত, পৃঃ ৬১। ৩৫। হোমনেজ, পৃঃ ২২৫। ৩৬। বাইজেন্স ইটলাস-আরবস, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫৬-৫৭। ৩৭। হোমনেজ, পৃঃ ২২৫ (ভুলবশতঃ ১৪০ বৎসর গণনা করেছেন)। ৩৮। ঐ, পৃঃ ২২৫। ৩৯। ভ্যাসিলেভ, পৃঃ ৫৫, টীকা-১। ৪০। ঐ পৃঃ ৫৯। ৪১। ঐ, পৃঃ ৫৩; হোমনেজ, পৃঃ ২২৪, টীকা-৩। ৪২। হোমনেজ, পৃঃ ২২৫, রিয়াসত আলী, দ্যা তারিখ-ই সাকলিয়া, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৭৮। ৪৩। গার্সিয়া গমেজ, হিস্ট্রোরিয়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৩৬৭, টীকা-১৫৫। ৪৪। আলবোরনোজ, লা ইস্পানা মুসলমানা, ১ম খণ্ড, আর্জেন্টিনিয়া, ১৯৪৬, পৃঃ ১৩৭। ৪৫। হোমনেজ, পৃঃ ২২৫। ৪৬। ভ্যাসিলেভ, পৃঃ ৫৭-৮। ৪৭।ঐ, পৃঃ ৫৮, টীকা-২। ৪৮। হোমনেজ, পৃঃ ২২৫। ৪৯। ভ্যাসিলেভ, পৃঃ ৬০ টীকা-২। ৫০। আলী-মুহাম্মদ ফাহমী, মুসলিম সী পাওয়ার ইন দ্যা ইস্টার্ন মেডিটরিয়ান, লন্ডন, ১৯৫০, পৃঃ ৭২
টীকা-৪, ৫। ৫১। ঐ, পৃঃ ৭৩। ৫২। ঐ, পৃঃ ৩১, টীকা-৪। ৫৩। ভ্যাসিলেভ, পৃঃ ২৫৮। ৫৪। ফাহমী, পৃঃ ৯৫ টীকা-৭। ৫৫। হিট্টি, দ্যা হিস্ট্রি অব দ্যা আরবস, পৃঃ ৪৫১ টীকা-৪। ৫৬। এ হিস্ট্রি অব গ্রীস ফরম দ্যা কনকুয়েস্ট বাই দ্যা রোমানস টু দ্যা প্রেজেন্ট টাইম, অক্সফোর্ড, ১৮৭৭, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৯০ টীকা-২; ভ্যাসিলেভ, পৃঃ ২৫৮; এ হিস্ট্রি অব দ্যা ইস্টার্ন রোমান
ইম্পায়ার, লন্ডন, ১৯১২, পৃঃ ২৯৩, টীকা-৫। ৫৭। গার্সিয়া গমেজ, পৃঃ ১৬২, ৩৪৬। ৫৮। ঐ পৃঃ ২২৩। ৫৯। গার্সিয়া গমেজ, পৃঃ ৩৬৭ টীকা-১৫৫। ৬০। হোমনেজ, পৃঃ ২৫৫, ২৩২। ৬১। আল বোরনোজ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৩৭-৩৮। হোমনেজ, পৃঃ ২২৫-২৬, ২৩১-৩২। ৬২। গার্সিয়া গমেজ, পৃঃ ১১৪, হোমনেজ, পৃঃ ২২৭। ৬৩। হোমনেজ, পৃঃ ২৩১-৩৩; আলবোরনোজ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৩৭-৩৮। ৬৪। সালভাদর ভিলা, রেনেসাঁস ভেল ইসলাম, (স্পেঃ অনুবাদ) পৃঃ ১৯। ৬৫। হোমনেজ, পৃঃ ২২৭; মাক্কারী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২১৯; কিন্দি, পৃঃ ১৬১-৬৫; মাররাকুশী, পৃঃ ১৩-১৪;
ইবনে আব্বার, পৃঃ ৩৯-৪০; ইয়াকুত, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৭: গমেজ, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৩৬৭ টীকা
১৫৬। ৬৬। হোমনেজ, পৃঃ ২২৭; এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৮৭৯। ৬৭। ভ্যাসিলেভ, পৃঃ ৫৬-৫৭। ৬৮। হোমনেজ, পৃঃ ২২৭। ৬৯। ঐ, পৃঃ ২২৭-২৮। ৭০। এস, এম, ইমামউদ্দিন, জার্নাল অব দ্যা পাকিস্তান হিস্ট্রোরিক্যাল সোসাইটি, ১৯৬০, পৃঃ ২৯৭
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন