কাজী নজরুল ইসলাম
কীর্তন
  
আমি  তুরগ ভাবিয়া মোরগে চড়িনু
    সে লইল মিয়াঁর ঘরে।
আমার  কালী-মা ছাড়ায়ে কলেমা পড়ায়ে
    বুঝি মুসলিম করে॥
আমায়  বুঝি মুসলিম করে গো –
  মুরগির লোভে দর্গায় এসে
    বুঝি টিকি মোর হরে গো!
আমার  শিখা করে দূর রেখে দেবে নূর,
    জবাই করিবে পরে গো!
আমি  বাসব ভাবিয়া রাসভে পূজিনু
    স্বর্গে যাইতে সোজা;
সে যে লয়ে এঁদো ঘাটে আছড়ায় পাটে
    ভাবিয়া ধোবির বোঝা!
    হল হিতে-বিপরীত সবই গো!
আমি  ভবানী বলিয়া করিতে প্রণাম
    হেরি বাগ্দিনী ভবী গো!
আমি  শীতল হইতে চাহিনু, আনিল
    শীতলা-বাহনে ধরি গো!
বাবা  শিবের বাহন বলিয়া বৃষভ –
    লাঙুল ঠেকানু ভালে,
হায়  নিল না সে পূজা, শিং দিয়ে সোজা
    গুঁতায়ে ফেলিল খালে!
    আমার কপাল এমনই পোড়া গো!
আমি  শালগ্রাম ভেবে রাখিনু চক্ষে
    হেরি ঝাল-মাখা নোড়া গো!
    আমার ভাগ্য বেজায় ফুটো গো,
বাঁকা  অঙ্গ হেরিয়া জড়ায়ে ধরিতে
    হেরি ত্রিভঙ্গ খুঁটো গো!
আমার  মহিষী-গৃহিণী খুশি হবে ভেবে
    মহিষ কিনিয়া আনি,
বাবা    মরি এবে ত্রাসে শিং নেড়ে আসে
    মহিষ, মহিষীরানী!
    আমি কেমনে জীবন ধরি গো!
আমি   ‘হরি বোল’ বলে ডাকিতে হরিরে
    হয়ে যায় ‘বল হরি’ গো॥
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন