কাজী নজরুল ইসলাম
সর্দা-আইন
 (বেহাগ – দাদরা)
 কোরাস :
 ডুবু ডুবু ধর্ম-তরি, ফাটল মাইন সরদা-র।
 সামাল সামাল পড়ল সাড়া ব-মাল মেয়ে মর্দার॥
এ কোন্ এল বালাই, এবে পালাই বলো কোন্ দেশ,
 গাছের নীচে ঘড়েল শেয়াল, কাকের মুখে সন্দেশ।
 কন্যা-ডোবা বন্যা এল, ভাসল বুঝি ঘর দ্বার॥
আয়েশ করে ধুমড়ো মেয়ের বাড়বে বয়েস চৌদ্দ
 বাপের বুকের তপ্ত-খোলায়? দিব্যি গেয়ান-বোধ তো!
 হদ্দ হলেন বউদি ভেবে, ছাড়ল নাড়ি বড়দা-র॥
দিব্যি স্বর্গ-মার্গে যেত গৌরী-দানের মারফত
 যমের যমজ জামাতৃকে লিখে দিয়ে ফার্খত!
 (হল) নৈকষ্য কস্য এখন, জাত গেল ‘মেল-খড়দার’॥
দেবতা বুড়ো শিব যে মাগেন আট-বছরি নাতনি,
 চতুর্দশী মুক্তকেশী – কনে নয়, সে হাতনী!
 পুঁটুলি নয় – এঁটুলি সে, কিংবা পুলিশ-সর্দার॥
সিঙ্গি-চড়া ধিঙ্গি মেয়ে বউ হবে কি? বাপ্ রে।
 প্রথম প্রণয়-সম্ভাষণেই হয়তো দিবে থাপ্ড়ে।
 লাফ দিয়ে সে বাইরে যাবে ঝাঁপ খুলে ওই পর্দার॥
সম্বন্ধ ভুলে শেষে যা-তা বলে ডাকব?
 বধূ ত নয়, যদুর পিসি! কোথায় তারে রাখব?
 ধর্মিণী নয়, জার্মানি শেল! গো-স্বামী, খবরদার॥
টাকাতে নয়, ভাবনাতে শেষ মাথাতে টাক পড়বে,
 যোদ্ধা বামা গুটিয়ে জামা কথায় কথায় লড়বে,
 যেই পাবে না সেমিজ, বডিস, কৌটো পানের জর্দার॥
স্বামীকে সে বলবে না নাথ, রাখবে না মান দুর্গার,
 হয়তো কবে বলবে, ‘পিয়ো, ঝোল রেঁধেছি মুর্গার!’
 আনবে কে বাপ গুর্খা-সেপাই দন্ত-নখর-বর্দার॥
 গটমটিয়ে কইবে কথা, কটমটিয়ে চাইবে,
 ‘বামা’ সে নয়, ‘ডাইনে’ সে যে, ডাইনে সদা ধাইবে!
 নিতুই নিতুই চাইবে যেতে সিমলা শিলং হরদ্বার॥
ভেবেছিলাম জাত নিয়েছিস, জাতিটা নয় যাকগে,
 গৃহিণীরূপ গ্রহণী রোগ, তাও ছিল শেষ ভাগ্যে!
 দোক্তা ফেলে গিন্নি কাঁদেন, কর্তা করেন ঘর-বার॥
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন