০১১. আবু কারব হাসসান ইবনে তুব্বান আস’আদ কর্তৃক ইয়ামতান রাজ্য অধিকার এবং ইয়াসরিব আক্রমণ

রাবিয়ার মৃত্যুর পর সমস্ত ইয়ামানের রাজত্ব বলে যায় আবু কারব হাস্সান ইবনে তুব্বান আস’আদের হাতে। তাঁর পিতা তুব্বান আস’আদ আগে থেকেই পূর্ব দিক দিয়ে মদীনায় (ইয়াসরিব) আসতেন এবং এভাবে মদীনাবাসীদেরকে বিব্রত না করেই সুকৌশলে আপন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেন। সেখানে তিনি নিজের এক পুত্রকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। কিন্তু উক্ত পুত্র সহসা গুপ্তঘাতক কর্তৃক নিহত হয়। এরপর তুব্বান মদীনা ধ্বংস ও তার অধিবাসীদেরকে নির্মূল করার পরিকল্পনা নিয়ে আবার সেখানে আসেন। অতঃপর আমর বিন তাল্লার নেতৃত্বে লোকদের একটি দল সংঘবদ্ধ হয়। তারা শেষ পর্যন্ত তাঁর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই দলটি এমন ভাব দেখায় যে, তারা যেন দিনের বেলায় তাঁর সাথে যুদ্ধ করে ও রাত্রে আতিথেয়তা করে। তুব্বান তাদের এ আচরণে বিষ্মিত হয়ে বলেন, আশ্চর্য! এ জাতি বাস্তবিক পক্ষেই ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত। এভাবে যুদ্ধ অব্যাহত থাকলো। এমতাবস্থায় একদিন দু’জন ইহুদী পন্ডিত মদীনা ও তার অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করার ব্যাপারে তাঁর ইচ্ছ্রা কথা জানতে পেরে তাঁর কাছে আসেন। তারা তাঁকে বললেন,“হে রাজা, এ কাজটি করবেন না আপনি যদি জিদ ধরেন, তাহলেও আপনার সমনে অপ্রতিরোধ্য বাধা আসবে। ফলে আপনি যা চান তা করতে পারবেন না। অথচ আপনি অচিরেই শাস্তি ভোগ করবেন।” রাজা বললেন, “কি আরণে আমি শাস্তি ভোগ করবো?” তারা বললেন, “মদীনা শেষ যামানার নবীর আশ্রয় স্থল। কুরাইশদের দ্বারা তিনি পবিত্র স্থান থেকে বহিস্কৃত হবেন এবং এখানে এসে বসবাস করবেন।”

এ কথা শুনে রাজা নিবৃত্ত হলেন। তাঁর মনে হলো নোক দুটো যথার্থই জ্ঞানী লোক। তাদের কথঅয় রাজা মুগ্ধ হলেন। তিনি মদীনা ত্যাগ করে ঐ পন্ডিতদ্বয়ের ধর্ম গ্রহন করলেন।

তুব্বা তথা তুব্বান আস’আদ ও তাঁর গোত্রর লোকেরা পৌত্তলিক ছিলেন।তিনি ইয়ামানের পথে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হলেন। উসমান ও আমাজ নামক স্থানদ্বয়ের মধ্যস্থলে পৌঁছলে হাযাইল ইবনে মুদারাকা গোত্রের কতিপয় লোক তাঁর কাছে বললো,“হে রাজা, আপনি কি এমন এবটি অজানা ঘরের সন্ধান পেতে ইচ্ছুক, যা হীরক, মণিমুক্তা, চুন্নিপান্না প্রভৃতি মূল্যবান সম্পদে পরিপূর্ণ, অথচ আপনার পূর্ববর্তী রাজারা সে ব্যাপারে অজ্ঞ ছিল।” রাজা বললেন, “হ্যাঁ, এরকম ঘরের সন্ধান অবশ্যই পেতে চাই।” তারা বললো, ‘মক্কাতে একটি ঘর আছে। মক্কাবাসীরা সেখানে ইবাদাত করে ও তার পাশে নামায পড়ে।”

আসলে বনী হুযাইলের লোকেরা তুব্বানকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে েেদয়ার উদ্দেশ্যেই এ পরামর্শ দিয়েছিল। কেননা তারা জানতো, কাবাঘরকে করতলগত করার ইচ্ছে যে রাজাই করেছ এবং তার ওপর আক্রমণ যে-ই চালিয়েছে, সে-ই ধ্বংস হয়েছে।

তুব্বানের ইচ্ছাহলো, বনী হুযাইলের পরামর্শ অনুসারে কাজ করবে। কিন্তু তা করার আগে সেই ইহুদী পন্ডিতদ্বয়ের কাছে দূত পাঠিয়ে তাদের মতামত জানতে চাইলেন। পন্ডিতদ্বয় বললেন, “আপনাকে ও আপনার সৈন্য সামন্তকে ধ্বংস করাই বনী হুযাইলের ইচ্ছা। পৃথিবীতে আল্লাহর কোন ঘরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ নিজের মালিকানায় নিতে পেরেছে বলে আমাদের জানা নেই। তারা যে পরামর্শ দিয়েছে সে অনুসারে আপনি যদি কাজ করেন তাহলে আপনার ও আপনার সহচরদের সমূলে বিনাশপ্রাপ্ত হতে হবে। এটা অনিবার্য ও অবধারিত।” রাজা বললেন, “তাহলে আমি যখন ঐ ঘরের কাছে যাব তখন আমার কি করা উচিত বলে আপনারা মনে করেন?” তারা বললেন “মক্কাবাসীরা যা করে আপনিও তাই করবেন। ঘরের চারপাশে তাওয়াফ করবেন এবং তার সম্মান ও তাজীম করবেন। তার কাছে থাকাকালে মাথায় চুল কামিয়ে ফেলবেন। যতক্ষণ ঐ ঘরের কাছ থেকে বিদায় না হন ততক্ষণ অত্যন্ত বিনয়াবনত থাকবেন।” রাজা বললেন, “আপনারা এসব করেন না কেন?”তারা বললেন, “খোদার কসম, ওটা আমাদের পিতা ইব্রাহীমের বানানো ঘর। এ ঘর সম্পর্কে আপনাকে আমরা যা যা বলেছি সবই সত্য। তবে ঘরের চারপাশে বহুসংখ্যক মূর্তি স্থাপন করে মক্কাবাসী আমাদের ঐ ঘরের কাছে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। ঐ ঘরের কাছে রক্তপাত(নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও) চালু রেখেও তারা আমাদের যাওয়া বন্ধ করেছে। তারা অংশীবাদী ও অপবিত্র।”

তুব্বান ইহুদী আলেমদ্বয়ের উপদেশ মেনে নিলেন এবং তা বাস্তবায়িত করলেন। এরপর হুযাইল গোত্রের সেই লোকদের কাছে গেলেন এবং তাদের হাত পা কেটে দিলেন। অতঃপর মক্কায় গেয়ে পবিত্র কা’বাঘর তাওয়াফ করলেন, তার পাশে পশু জবাই করে কুরবানী আদায় করলেন এবং মাথার চুল কামালেন। এভাবে তিনি ছয়দিন মক্কায় কাটালেন। এ ছয়দিন পশু কুরবানী করে মক্কাবাসীকে খাওয়ানো এবং মধু পান করানোই ছিল তাঁর প্রধান কাজ। তিনি স্বপ্নে দেখলেন কা’বা শরীফকে তিনি যেন গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদিত করছেন। অতঃপর তিনি খাসফ নামক মোটা কাপড় দিয়ে কা’বায় গিলাফ চড়ালেন।

তিনি আবার স্বপ্ন দেখলেন যে, আরো ভালো কাপড় দিয়ে কা’বাকে গিলাফ পরাচ্ছেন। সুতরাং পরে তিনি মূল্যবান ইয়ামানী কাপড়ে কা’বাকে আবৃত করলেন। ঐতিহাসিকদের ধারণা, এই তুব্বা তথা তুব্বানই প্রথম ব্যক্তি যিনি কা’বা শরীফকে গিলাফ পরিয়েছিলেন এবং কা’বার মুতাওয়াল্লী জুরহুম গোত্রের লোকদেরকে গিলাফ পরানোর অসীয়াত করে গিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম কা’বা ঘরকে পবিত্র করার (মূর্তি থেকে মুক্ত করা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল) নির্দেশ দেন, কা’বার ধারেকাছে যেন তারা রক্তপাত না ঘটায়, মৃতদেহ এবং ঋতুবর্তী মহিলাদের ব্যবহৃত ময়লা বস্ত্রখ- ফেলে না রাখে-এসব ব্যাপারে তিনি সবাইকে সাবধান করে দেন। তিনি কা’বা ঘরের জন্য দরজা তৈরী ও তালাচাবির ব্যবস্থা করেন।

এরপর তুব্বা মক্কা থেকে বেরিয়ে তাঁর সৈন্য সামন্ত ও ইহুদী প-িতদ্বয়কে নিয়ে ইয়ামান অভিমুখে যাত্রা করেন। ইয়ামানে পৌঁছে তিনে সেখানকার জনগণকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে তাঁর গৃহীত ধর্মমত গ্রহণের দাওয়াত দেন। ইয়ামান বাসী সুস্পষ্টভাবে জানায় তারা তাদের প্রথামত আগুনের কাছে ফায়সালা চাওয়া ছাড়া ধর্ম ত্যাগ করবে না।

ইয়ামনবাসীরা আগুনের মাধ্যমে ঝগড়া বিবাদের মীমাংসা করতো। ঐ আগুন অত্যাচারীকে গ্রাস করতো কিন্তু মযলুমের ক্ষতি করতো না। একদিন ইয়ামনবাসী তাদের প্রতিমাসমূহ ও তাদের ধর্ম পালনের অন্যান্য সরঞ্জামাদি সহকারে এবং ইহুদী প-িতদ্বয় তাদের আসমানী কিতাব কাঁধে ঝুলিয়ে যে স্থান দিয়ে আগুন বেরোয় সেখানে গিয়ে বসলো। আগুন বেরিয়ে প্রথমেই ইয়ামানবাসীদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। ইয়ামান বাসী তা দেখে ভীত হয়ে পড়লো এবং আগুন থেকে দূরে সরে গেল। উপস্থিত লোকেরা তাদেরকে তিরষ্কার করে ধৈর্যের সাথে যথাস্থানে বসে থাকতে বললো। তারা ধৈর্য ধারণ করে বসতেই আাগুন তাদেরকে ঘেরাও করে ফেললো এবং প্রতিমা ও অন্যান্য ধর্মীয় সাজ সরঞ্জাম পুড়িয়ে ভষ্ম করে দিল। হিমইয়ার গোত্রের যে ক’জন পুরোহিত ধর্মীয় সাজ সরঞ্জাম বহন করছিল তারাও ভষ্মীভ’ত হলো। ফলে হিমইয়ার গোত্র তুব্বানের ধর্মে দীক্ষা নিল। তখন থেকে ইয়ামানে ইহুদী ধর্মের পত্তন হলো।

তুব্বানের পর ইয়ামানের রাজ সিংহাসনে আরোহণ করেন তাঁর ছেলে হাস্সান। তিনি সমগ্র ইয়ামনবাসীকে সাথে নিয়ে সমগ্র আরব ও অনারাব জগত দখল করার অভিপ্রায়ে এক বিজয় অভিযান শুরু করেন। এভাবে বাহরাইন ভূখ-ে পৌঁছলে হিমইয়ার ও অন্যান্য ইয়ামানী গোত্রগুলো তাঁর সাথে আর সামনে এগুতে চাইল না। তারা তাদের স্বদেশ ও পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধাস্ত নিল। তারা ঐ বাহিনীতে অংশগ্রহণকারী হাস্সানের এক ভাই আমরের কাছে এ অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বললো,“তুমি তোমার ভাই হাস্সানকে হত্যা কর এবং আমাদের সাথে স্বদেশে ফিরে চল। আমরা তোমাকেই রাজা হিসেবে বরণ করে নেব।” আমর তার বহিনীর লোকজনের সাথে আলোচনা করলে সবাই একমত হলো। কেবল যূ-রুআইন আল হিমইয়ারী এর বিরোধিতা করলো ও হত্যাকা- ঘটাতে নিষেধ করলো। কিন্তু আমর তার নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করলো। তখন যূ-রুআইন নিম্নলিখিত কবিতা আবৃতি করলো,

“হুঁশিয়ার! কে আছে নিজের নিদ্রার বিনিময়ে নিদ্রাহীনতাকে বরণ করে নেবে।

যে ব্যক্তি তার সুখময় জীবনকে অব্যাহত রাখে

সে-ই প্রকৃত ভাগ্যবান। কিন্তু

হিমাইয়ার বিশ্বাসঘাতকতা করলো। আর যূ-রুআইনের জন্য খোদার স্বীকৃত ওজর রইল।”

এই কবিতাটুকু সে ইক টুকরো কাগজে লিখে তাতে সীল মারলো। অতঃপর আমরের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো, “আমার লেখা এই চিরকুট আপনার কাছে রেখে দিন।” আমর সেটা রেখে দিল। অতঃপর সে তার ভাই হাস্সানকে হত্যা করলো এবং দলবল সাথে নিয়ে ইয়ামানে প্রত্যাবর্তন করলো।

আমর ইবনে তুব্বান ফিরে আসার পর ঘোর অনিদ্রায় আক্রান্ত হলো। রোগ যখন মারাত্নক আকার ধারণ করলো তখন সে চিকিৎসক পাখীর সাহায্যে ভাগ্য গণনাকারী জ্যোতিষী ও ভবিষ্যদ্বক্তাদের ডাকলো এবং তার রোগের রহস্য উদ্ঘাটনে তাদের মতামত চাইলো। একজন বললো, “দেখুন, আপনি যেভাবে নিজের ভাইকে হত্যা করেছেন, এভাবে আপন ভাই বা রক্ত সম্পর্কীয় আপনজনকে যখনই কেউ হত্যা করেছে তাকে এ ধরনের নিদ্রাহীনতহায় ভুগতে হয়েছে।”

একথা শোনা মাত্রই আমর তার ভাই হাস্সানকে হত্যার পরামর্শ দানকারী ইয়ামানের সকল প্রভাবশালী ব্যক্তিকে হত্যা করতে লাগলো। একে একে তাদের সবাইকে হত্যা করার পর যখন যূ-রুআইনের কাছে এলো তখন সে বললো, “আমার নির্দোষিতার প্রমাণ আপনার কাছেই রয়েছে।” আমর বললো, “সেটা কি?” যূ-রুআইন বললো, “আমার লিখিত এক টুকরো কাগজ যা আমি আপনাকে দিয়েছিলাম।” তখন আমর সেটা বের করে দেখলো তাতে দু’টি পংক্তি লেখা আছে। সে বুঝতে পারলো যে, যূ-রুআইন তাকে সদুপদেশই দিয়েছিল। তাই সে তাকে হত্যা করলো না।

এরপর আমর মারা গেল। তার মৃত্যুর পর হিমইয়ারী শাসনের ক্ষেত্রে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিল এবং তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়লো। এই সুযোগে ঘাড়ের উপর শাসক হয়ে চেপে বমলো লাখনিয়া ইয়াসূফ যূ-শানাতির নামক রাজ পরিবার বহির্ভূত এক ভয়ঙ্কর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি। সে তাদের সম্ভ্রান্ত লোকজনদেরকে হত্যা করলো এবং রাজ পরিবারের লোকজনদের সাথে আমোদ প্রমোদে লিপ্ত হলো।

লাখনিয়ার সবচেয়ে বড় পাপাবার ছিল সমকাম। হাস্সানের ভাই এবং তুব্বানের ছেলে যূর’আ যু-নাওয়অসকে একদিন সে এই অভিপ্রায়ে ডেকে পাঠালো। হাস্সান নিহত হওয়ার সময় যূর’আ ছিল ছোট বালক। কিছু দিনের মধ্যে সে এক সুঠামদেহী ও বুদ্ধিমান তরুণ যুবকে পরিণত হলো। যূর’আর কাছে লাখনিয়ার বার্তাবাহক এলে সে তার কমতলব বুঝতে পারলো। সে একখানা তীক্ষèধার হালকা ছুরি নিজের পায়ের তলায় জুতার ভেতর লুকিয়ে নিয়ে লাখনিয়ার কাছে গেল। লাখনিয়া নিভৃতে ডেকে নিয়ে যূর’আর ওপর চড়াও হলো। সে সুযোগ বুঝে তৎক্ষণাৎ ছুরি দিয়ে তাকে প্রচ-ভাবে আঘাত করলো। যূর’আ লাখনিয়অকে হত্যা করে জনসাধারণের সামনে এসে সগর্বে নিজের কীর্তি প্রচার করতে লাগলো। এবার জনগণ বললো,“তুমি আমদেরকে এই নরাধমের হাত থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছ। সুতরাং আমাদের শাসক হিসেবে তুমিই যোগ্যতম ব্যক্তি।”

হিমইয়ার গোত্র ও সমগ্র ইয়ামানবাসীর সহযোগিতায় যূর’আ যূনাওয়াস তাদের ওপর দীর্ঘস্থায়ী পরাক্রমশালী রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করলো। যূর’আ ছিলেন হিমইয়ার বংশের সর্বশেষ সম্রাট এবং সে (কুরআনের সূরা বুরূজের) পরিখায় পুরে আগুনে পুড়িয়ে মারার গটনার নায়ক।

ইয়ামানের নাজরান প্রদেশে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের প্রকৃত অনুসারীদের অবশিষ্ট একটি গোষ্ঠী তখনও বেঁচে ছিল। তাঁরা ছিলেন জ্ঞানী-গুণী ও সুদৃঢ় মনেবলের অধিকারী। তাঁদের নেতা ছিলেন আবুদল্লাহ ইবনে সামের। যূ-নাওয়াস তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইহুদীবাদ গ্রহণের দাওয়াত দিলো এবং পরিষ্কার বলে দিলো, “হয় ইহুদী হও, নচেৎ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।” সুতরাং তাদের জন্য পরিখা খনন করা হলো। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে মারা হলো এবং অনেককে তরবারি দিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ বিকৃত করা হলো। এভাবে যূ-নাওয়াস প্রায়২০ হাজার লোককে হত্যা করলো।

এই যূ-নাওয়াস ও তার সৈন্য-সামন্তের প্রসঙ্গেই আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ওহী নাযিল করেন, “পরিখার জ্বলন্ত অগ্নি কুন্ডলীর নায়কদের ওপর অভিসমাপ্ত। স্মরণ কর যখন তারা পরিখার পাশে বসেছিল, মুমিনদের ওপর তারা যে হত্যালীলা অনুষ্ঠানে ব্যাপৃত ছিল, সে দৃশ্য উপভোগ করছিল। মুমিনদের বিরুদ্ধে তাদের শুধু এই কারণে আক্রোশ ছিল যে, মহাপরাক্রান্ত, চিরনন্দিত আল্লাহ তায়ালার প্রতি তারা ঈমান এনেছিল।”

কথিত আছে যে, যূ-নাওয়াসের হাতে নিহত এই মুমিনদলের ইমাম ও অধিনায়ক ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সামের।

সকল অধ্যায়

১. ০০৪. সীরাতে ইবনে ইসহাক
২. ০০৫. সীরাতে ইবনে হিশাম
৩. ০০৬. সীরাতে ইবনে হিশামের মর্যাদা
৪. ০০৭. সীরাতে ইবনে হিশামের বক্ষ্যমাণ সংক্ষিপত রূপ
৫. ০০৮. মুহাম্মদ (সা) থেকে আদম (আ) পর্যন্ত উর্ধতন বংশ পরম্পরা
৬. ০০৯. ইসমাঈর (আ) এর অধস্তন পুরুষদের বংশ পরম্পরা
৭. ০১০. রাবিয়া ইবনে নসরের স্বপ্ন
৮. ০১১. আবু কারব হাসসান ইবনে তুব্বান আস’আদ কর্তৃক ইয়ামতান রাজ্য অধিকার এবং ইয়াসরিব আক্রমণ
৯. ০১২. হাবশীদের দখলে ইয়ামান
১০. ০১৩. আরিয়াত ও আবরাহা দ্বন্দ্ব
১১. ০১৪. আসহাবুল ফীলের ঘটনা
১২. ০১৫. নিযার ইবনে মা’আদের বংশধর
১৩. ০১৬. আবদুল মুত্তালিব বিন হাশিমের সন্তান-সন্ততি
১৪. ০১৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতামাতা
১৫. ০১৮. যমযাম কূপ খনন ও সে বিষয়ে সৃষ্ট মতবিরোধ
১৬. ০১৯. আবদুল মুত্তালিব কর্তৃক তার পুত্রকে কুরবানীর মানত
১৭. ০২০. মহানবীর (সা) আমিনার গর্ভে থাকাকালের ঘটনাবলী
১৮. ০২১. রাসূলুল্লাহর (সা) জন্ম
১৯. ০২২. হালীমার কথা
২০. ০২৩. বক্ষ বিদারণের ঘটনা
২১. ০২৪. দাদার অভিভাবকত্বে
২২. ০২৫. চাচা আবু তালিবের অভিভাবকত্বে
২৩. ০২৬. পাদ্রী বাহীরার ঘটনা
২৪. ০২৭. ফিজারের যুদ্ধ
২৫. ০২৮. খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে বিয়ে
২৬. ০২৯. ওয়ারাকা বিন নাওফেলের ভাষ্য
২৭. ০৩০. পবিত্র কাবার পুনর্নির্মাণ
২৮. ০৩১. আরব গণক, ইহুদী পুরেহিত ও খৃস্টান ধর্মযাজকদের ভবিষ্যদ্বাণী
২৯. ০৩২. রাসূলুল্লাহর (সা) দৈহিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
৩০. ০৩৩. ইনজীলে রাসূল্লাহর বিবরণ
৩১. ০৩৪. নবুওয়াত লাভ
৩২. ০৩৫. কুরআন নাযিলের সূচনা
৩৩. ০৩৬. খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদের ইসলাম গ্রহণ
৩৪. ০৩৭. ওহীর বিরতি
৩৫. ০৩৮. প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী
৩৬. ০৩৯. প্রকাশ্য দাওয়াত
৩৭. ০৪০. কুরআন সম্পর্কে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরার মন্তব্য
৩৮. ০৪১. রাসূলুল্লাহর (সা) ওপও উৎপীড়নের বিবরণ
৩৯. ০৪২. হামযার ইসলাম গ্রহণ
৪০. ০৪৩. রাসূল্লাহর (সা) আন্দেলন প্রতিরোধে উতবার ফন্দি
৪১. ০৪৪. কুরাইশ নেতাদের সাথে রাসূলুল্লাহর (সা) কথোপকথন
৪২. ০৪৫. আবু জাহলের আচরণ
৪৩. ০৪৬. নাদার ইবনে হারেনের বিবরণ
৪৪. ০৪৭. দুর্বল মুসলমানদের ওপর মুশরিকদের অত্যাচার
৪৫. ০৪৮. আবিসিনিয়ায় মুসলমানদের প্রথম হিজরাত
৪৬. ০৪৯. মুহাজিরদের ফিরিয়ে আনার জন্য আবিসিনিয়ায় কুরাইশদের দূত প্রেরণ
৪৭. ০৫০. উমার ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ
৪৮. ০৫১. চুক্তিনামার বিবরণ
৪৯. ০৫২. রাসূলুল্লাহর (সা) ওপর কুরাইশদের নির্যাতন
৫০. ০৫৩. আবিসিনিয়া থেকে মক্কার লোকদের ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে মুহাজিরদের প্রত্যাবর্তন
৫১. ০৫৪. চুক্তি বাতির হওয়ার কাহিনী
৫২. ০৫৫. ইরাশ গোত্রের এক ব্যক্তির আবু জাহলের নিকট উট বিক্রির ঘটনা
৫৩. ০৫৬. ইসরা বা রাত্রীকালীন সফর
৫৪. ০৫৭. মিরাজের ঘটনা
৫৫. ০৫৮. আবু তালিব ও খাদীজার ইন্তিকাল
৫৬. ০৫৯. সাহায্য লাভের আশায় বনু সাকীফ গোত্রের শরণাপন্ন হওয়া
৫৭. ০৬০. নাসীবীনের জ্বীনদের ঘটনা
৫৮. ০৬১. ইসলামের দাওয়াত পৌঁছতে রাসূলুল্লাহ (সা) সব গোত্রের কাছে হাজির হলেন
৫৯. ০৬২. মদীনায় ইসলাম বিস্তারের সূচনা
৬০. ০৬৩. মদীনায় প্রথম বাইয়াত
৬১. ০৬৪. আকাবার দ্বিতীয় বাইয়াত
৬২. ০৬৫. আকাবার শেষ বাইয়াত ও তার শর্তাবলী
৬৩. ০৬৬. সশস্ত্র যুদ্ধের নির্দেশ লাভ
৬৪. ০৬৭. মুসলমানদের মদীনায় হিজরাত করার অনুমতি লাভ
৬৫. ০৬৮. মদীনায় হিজরাতকারী মুসলমানদের বিবরণ
৬৬. ০৬৯. রাসূলুল্লাহর (সা) হিজরাত
৬৭. ০৭০. কুবায় উপস্থিতি
৬৮. ০৭১. মদীনায় উপস্থিতি
৬৯. ০৭২. মদীনাতে ভাষণ দান ও চুক্তি সম্পাদন
৭০. ০৭৩. আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃ সম্পর্ক স্থাপন
৭১. ০৭৪. আযানের সূচনা
৭২. ০৭৫. কতিপয় সাহাবীর রোগাক্রান্ত হওয়ার বিবরণ
৭৩. ০৭৬. হিজরাতের তারিখ
৭৪. ০৭৭. প্রথম যুদ্ধাভিযান
৭৫. ০৭৮. উবাইদা ইবনে হারিসের নেতৃত্বে অভিযান । রাসূলুল্লাহ (সা) নিজে এই যুদ্ধের ঝান্ডা বেঁধেছিলেন
৭৬. ০৭৯. সমুদ্র উপকূলেন দিকে হামযার নেতৃত্বে অভিযান
৭৭. ০৮০. বুয়াত অভিযান
৭৮. ০৮১. উশাইরা অভিযান
৭৯. ০৮২. সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাসের সেতৃত্বে সামরিক অভিযান
৮০. ০৮৩. সাফওয়ান অভিযান : প্রথম বদর অভিযান
৮১. ০৮৪. আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশের নেতৃত্বে সামরিক অভিযান
৮২. ০৮৫. কিবলা পরিবর্তন
৮৩. ০৮৬. বদরের যুদ্ধ
৮৪. ০৮৭. বনু সুলাইম অভিযান
৮৫. ০৮৮. সাওয়ীক অভিযান
৮৬. ০৮৯. যূ-আমার অভিযান
৮৭. ০৯০. বাহরানের ফুরু অভিযান
৮৮. ০৯১. বনু কাইনুকার যুদ্ধ
৮৯. ০৯২. যায়িদ ইবনে হারিসার কারাদা অভিযান
৯০. ০৯৩. উহুদ যুদ্ধ
৯১. ০৯৪. হিজরী তৃতীয় সন : রাজী সফর
৯২. ০৯৫. বীরে মাউনার ঘটনা (৪র্থ হিজরী)
৯৩. ০৯৬. বনু নাবীরের বহিষ্কার (চতুর্থ হিজরী)
৯৪. ০৯৭. যাতুর রিকা অভিযান (৪র্থ হিজরী)
৯৫. ০৯৮. দ্বিতীয় বদর অভিযান (৪র্থ হিজরী সন)
৯৬. ০৯৯. দুমাতুল জান্দাল অভিযান (৫ম হিজরী: রবিউল আউয়াল)
৯৭. ১০০. খন্দক যুদ্ধ (৫ম হিজরী, শাওয়াল)
৯৮. ১০১. বনু কুরাইযা অভিযান (৫ম হিজরী)
৯৯. ১০২. যী কারাদ অভিযান
১০০. ১০৩. বনু মুসতালিক অভিযান
১০১. ১০৪. ৬ষ্ঠ হিজরী সনে বনু মুসতালিক অভিযানকালে অপবাদের ঘটনা
১০২. ১০৫. হুদাইবিয়ার ঘটনা
১০৩. ১০৬. বাইয়াতু রিদওয়ান
১০৪. ১০৭. শান্তিচুক্তি বা হুদাইবিয়ার সন্ধি
১০৫. ১০৮. খাইবার বিজয়: ৭ম হিজরীর মুহাররাম মাস
১০৬. ১০৯. জাফর ইবনে আবু তালিবের আবিসিনিয়া থেকে প্রত্যাবর্তন
১০৭. ১১০. উমরাতুল কাযাঃ ৭ম হিজরী সনঃ জিলকাদ মাস
১০৮. ১১১. মুতার যুদ্ধঃ ৮ম হিজরী সনঃ জামাদিউল উলা
১০৯. ১১২. মক্কা বিজয়ঃ ৮ম হিজরী, রমাযান মাস
১১০. ১১৩. হুনাইনের যুদ্ধ: ৮ম হিজরী
১১১. ১১৪. তায়েফ যুদ্ধ: ৮ম হিজরী সন
১১২. ১১৫. হাওয়াযিনের জমিজমা, যুদ্ধবন্দী, তাদের কিছুসংখ্যক লোককে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য উপঢৌকন দান এবং কিচু লোককে পুরস্কার প্রদানের বিবরণ
১১৩. ১১৬. জি’রানা থেকে রাসূলুল্লাহর (সা) উমরা পালন
১১৪. ১১৭. তায়েফ ত্যাগের পর কা’ব ইবনে যুহাইরের ইসলাম গ্রহণ
১১৫. ১১৮. তাবুক যুদ্ধ
১১৬. ১১৯. দুমার শাসনকর্তা উকায়দের-এর নিকট রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক খালিদ ইবনে ওয়ালীদকে প্রেরণ
১১৭. ১২০. নবম হিজরীর রমযান মাসে বনু সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের আগমন ও ইসলাম গ্রহণ
১১৮. ১২১. নবম হিজরী সালকে ‘প্রতিনিধিদল আগমনের বছর’ হিসেবে আখ্যায়িতকরণ। সূরা আন নাছর এই বছরই নাযিল হয়
১১৯. ১২২. বনু তামীমের প্রতিনিধিদলের আগমন ও সূরা হুজুরাত নাযিল
১২০. ১২৩. বনু আমেরের প্রতিনিধি আমের ইবনে তুফাইল ও আরবাদ ইবনে কায়েসের ঘটনা
১২১. ১২৪. জারুদের নেতৃত্বে বনু আবদুল কায়েসের প্রতিনিধিদলের আগমন
১২২. ১২৫. মুসাইলিমা কাযযাবসহ বনু হানীফা প্রতিনিধিদলের আগমন
১২৩. ১২৬. হাতিম তাঈ-এর আদীর ঘটনা
১২৪. ১২৭. ফারওয়া ইবনে মুসাইক মুরাদীর আগমন
১২৫. ১২৮. আমর ইবনে মা’দী ইয়াকরাবের নেতৃত্বে বনু যুবাইদের প্রতিনিধিদলের আগমন
১২৬. ১২৯. আশয়াস ইবনে কায়েসের নেতৃত্বে কিন্দার প্রতিনিধিদলের আগমন
১২৭. ১৩০. সুরাদ ইবনে আবদুল্লাহ আযদীর আগমন
১২৮. ১৩১. হিমইয়ার বংশীয় রাজাদের দূতের আগমন
১২৯. ১৩২. মুয়ায ইবনে জাবালকে ইয়ামানে পাঠানোর সময় রাসূলুল্লাহর (সা) উপদেশ
১৩০. ১৩৩. অভিযান পরিচালনাকালে খালিদ ইবনে ওয়ালীদের (রা) হাতে বনু হারিস গোত্রের ইসলাম গ্রহণ
১৩১. ১৩৪. মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার মুসইলিমা ও আসওয়াদ আনসীর বিবরণ
১৩২. ১৩৫. রাসূলুল্লাহর (সা) নিযুক্ত কর্মচারী ও আমীরগণের যাকাত আদায়ের অভিযান
১৩৩. ১৩৬. রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট মুসাইলিমার চিঠি এবং রাসূলুল্লাহর পক্ষ থেকে তার জবাব
১৩৪. ১৩৭. বিদায় হজ্জ
১৩৫. ১৩৮. উসামা ইবনে যায়িদকে ফিলিস্তীনে প্রেরণ
১৩৬. ১৩৯. রাজা বাদশাহদের কাছে রাসূলুল্লাহর (সা) দূত প্রেরণ
১৩৭. ১৪০. সর্বশেষ অভিযান
১৩৮. ১৪১. রাসূলুল্লাহর (সা) পীড়ার সূচনা
১৩৯. ১৪২. রাসূলুল্লাহর (সা) স্ত্রীগণ বা উম্মুহাতুল মুমিনীনের বিবরণ
১৪০. ১৪৩. রাসূলুল্লাহর (সা) রোগ সংক্রান্ত অবশিষ্ট বিবরণ
১৪১. ১৪৪. নামাযের জামায়াতে আবু বাক্রের (রা) ইমামতি
১৪২. ১৪৫. বনু সায়েদা গোত্রের চত্বরে
১৪৩. ১৪৬. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ও ইমার (রা)- এর বর্ণনা
১৪৪. ১৪৭. রাসূলুল্লাহর (সা) কাফন-দাফন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন