০৬৯. রাসূলুল্লাহর (সা) হিজরাত

সাহাবীগণ হিজরাত করে মদীনায় চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরাতের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় থেকে গেলেন। এ সময়ে আলী ইবনে আবু তালিব, আবু বাক্র সিদ্দীক ও মুষ্টিমেয় ক’জন সাহাবা ছাড়া আর কেউ মক্কায় ছিলেন না। অন্য যারা ছিলো তারা হয় কাফিরদের হাতে বন্দী ছিল নতুবা ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলো। আবু বাকর (রা) প্রায়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হিজরাত করার অনুমতি চাইতেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলতেন, “তুমি তাড়াহুড়ো করো না। হয়তো আল্লাহ তোমাকে একজন সাথী জুটিয়ে দেবেন।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই তাঁর হিজরাতের সঙ্গী হন। হযরত আবু বাক্র সিদ্দীক (রা) এরপর থেকে তাই কামনা করতেন। কুরাইশরা যখন দেখলো যে, অন্যত্র তাদের গোত্রের বাইরের বহু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী হয়েছে এবং তাঁর সঙ্গীরা তাদের কাছে হিজরাত করে চলে যাচ্ছে, তখন তারা বুঝতে পারলো যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সহচরগন একটা নিরাপদ আবাসভূমি পেয়ে গেছেন। তাই তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেশত্যাগের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে গেলো। তারা ভাবলো যে, তিনি তাদের সাথে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছেন।

এ ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্য তারা পরমর্শগৃহ ‘দারুন্ নাদওয়ায়’ সমবেত হলো। এই গৃহটি ছিলো কুসাই ইবনে কিলাবের বাড়ী। কুরাইশরা যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে এখানেই সমবেত হতো। এবার তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভয়ে ভীত হয়ে তাঁর ব্যাপারে কি করা যায়, তাই নিয়ে আলোচনা করতে বসলো। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তারা নির্ধারিত দিনে সেখানে সমবেত হলো। এই দিনকে ‘গণসমাবেশ দিবস’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তাদের পরামর্শ গৃহে ঢুকবার পথে ইবলিস কম্বল আচ্ছদিত এক বৃদ্ধের বেশে তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। সে ঠিক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তাকে দেখে সবাই বললো, “বৃদ্ধ এই লোকটি কে?” সে বললো, “আমি নাজদের অধিবাসী। [৪২.সুহাইলী মতে, শয়তান নিজেকে নাজদবাসী বলে পরিচয় দেয়ার কারণ হলো, কুরাইশরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলো যে, তিহামা অঞ্চলের কোন লোককে এই পরামর্শ সভায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। কেননা তারা মনে করতো, তিহামাবাসী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমর্থক। এজন্য ইবলিস নাজদবাসী বৃদ্ধের রূপ ধরে আত্মপ্রকাশ করেছিলো।]

তোমরা যে উপলক্ষে আজ সমবেত হচ্ছো, তা আমি শুনেছি। তাই তোমাদের কথাবার্তা শোনার জন্য এসেছি। আশা করি আমার উপদেশ ও পরামর্শ থেকেও তোমরা বঞ্চিত হবে না।”একথা শুনে সবাই তাকে পরম সমাদরে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিলো। সে সবার সাথে প্রবেশ করলো। ততক্ষণে কুরাইশদের বড় বড় নেতা ও সরদার ভেতরে আসন গ্রহণ করেছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, “এই লোকটির তৎপড়তা বর্তমানে কোন্ পর্যায়ে পৌঁছেছে, তোমরা সবাই তা জান। সে তার বাইরের অনুসারীদের নিয়ে কখন যে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তার কোন ঠিক নেই। তার আক্রমণ থেকে আমরা এখন নিরাপদ নই। অতএব, সবাই মিলে তার ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর।”

সলাপরামর্শ চলতে থাকলো। এক সময় একজন বললো, “তাকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে কোন অর্গলবদ্ধ কুঠরীতে বন্দী করে রাখ। তারপর ইতিপূর্বে তার মত কবিদের যে পরিণতি হয়েছে তারও সেই পরিণতি অর্থাৎ শোচনীয় মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাক। যুহাইব, নাবেগা ও তাদের মত অন্যান্য কবির এই পরিণতি হযেছিল। ” তখন বুড়ো বললো, “না, তোমাদের এই সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। তোমরা যদি তাকে বন্দী কর, তা হলে বদ্ধ কুঠরীতে তার বন্দী হওয়ার খবর তার বাইরের অনুসারীদের কানে চলে যাবে। সে অবস্থায় তারা তোমাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে তোমাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে। অতঃপর তাদের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং একদিন তারা তোমাদের ওপর বিজয়ী হবে। কাজেই তোমাদের এ সদ্ধিান্ত সঠিক নয়। অন্য কোন সিদ্ধান্ত নিতে পার কিনা, ভেবে দেখ।”

এরপর আবার আলাপ-আলোচনা চলতে লাগলো। একজন বললো, “আমরা তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবো। এরপর তাকে নিয়ে আমাদের আর কোন দুশ্চিন্তা থাকবে না। সে একাবার আমাদের কাছ থেকে চলে গেলে কোথায় গেলো বা কোথায় থাকলো আমরা তার কোন পরোয়া করবো না। সে চলে গেলে আমরা তার ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে যাবো। এরপর আমাদের পারস্পরিক মৈত্রী ও বন্ধুত্ব এবং অন্যান্য ব্যাপারে আমরা নিজেরাই শুধরে স্বাভাবিক করে নিতে পারবো।”

নাজদের বৃদ্ধ বললো, “না, এটাও সঠিক সিদ্ধান্ত হলো না। তোমরা কি তার অনুপম বাচনভঙ্গি, মিষ্ট ভাযা, যুক্তিগ্রাহ্য কথা এবং তথাকথিত ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত মন মগজ আছন্নকারী ব্যাপারগুলো দেখনি? তোমরা যদি এই পদক্ষেপ নাও, তাহলে এমনও হতে পারে যে, সে অন্য কোন আরব গোত্রে গিয়ে হাজির হবে, আর তার মিষ্ট ও হৃদয়গ্রাহী কথা দিয়ে তাদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করবে এবং তারা তার অনুসারী হয়ে যাবে। অতঃপর তাদের নিয়ে তোমাদের ওপর হামলা চালিয়ে তোমাদের দেশ দখল করে তোমাদের হাত থেকে কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেবে। তোমরা এটা বাদ দিয়ে অন্য কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর।”

এবার আবু জাহল বললো, “আমার একটা মত আছে য এতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কারো মাথায় আসেনি।” সবাই বললো, “বলো দেখি, আবুল হাকাম তোমার মত কি।”

সে বললো, “আমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে এক একজন শক্তিশালী সম্ভ্রান্ত যুবক বাছাই করতে হবে। তারপর তাদের প্রত্যেককে আমরা একটা করে ধারালো তরবারী দেবো। ওই যুবকেরা এক যোগে হামলা চালিয়ে মুহাম্মাদকে হত্যা করবে। এভাবে আমরা তার থেকে নিস্তার পেতে পারি। আর তারা সবাই মিলে যখন এ কাজটা করবে, তখন মুহাম্মাদের খুনের দায় দায়িত্ব সকল গোত্রের ঘাড়েই কিছু না কিছু পড়বে। ফলে আবদ মানাফ গোষ্ঠী সমগ্র জাতির বিরুদ্ধে লড়াই করে খুনের প্রতিশোধ নিতে পারবে না। রক্তপণ নিয়ে সন্তুষ্ট হতে বাধ্য হবে। আমরা সকল গোত্র মিলে তাদেরকে রক্তপণ দিয়ে দেবো।”

নাজদের বৃদ্ধ বললো, “এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি এর চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত আর হতে পারে না।”

এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে পরামর্শ সভার সমাপ্তি ঘোষনা করা হলো এবং সবাই যার যার বাড়ীতে চলে গেলো।

তৎক্ষণাৎ জিবরীল (আ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এস তাঁকে বললেন, “আপনি প্রতিদিন যে বিছানায় ঘুমান আজ রাতে সে বিছানায় ঘুমাবেন না।”রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হলে নির্ধারিত ঘাতকের দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের দরজায় এসে সমবেত হয়ে ওত পেতে থাকলো। তিনি কখন ঘুমান তার প্রতীক্ষা করতে লাগলো। ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর ওপর হামলা চালাবে এই তাদের বাসনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে আলী ইবনে আবু তালিবকে (রা) বললেন, “তুমি আমার বিছানায় ঘুমাও এবং আমার এই সবুজ হাদরামাউতী চাদর দিয়ে আপাদমস্তক আবৃত করে রাখ। তোমার ওপর তাদের দিক থেকে কোন আঘাত আসবে না, এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত থাক।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমাবার সময় ঐ চাদরটি গায়ে জড়িয়ে নিতেন।

মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল কারযী বলেন, ঘাতক দলে আবু জাহলও ছিলো। ঘাতকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাড়ীর দরজার জাময়েত হলে আবু জাহল তাদেরকে বললো, “ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে যে, তোমরা যদি তার অনুসরণ কর তাহলে তোমাদের আরব ও অনারব সবার জন্য জর্ডানের বাগ বাগিচার মত অসংখ্য বাগ বাগিচা তৈরী করে দেয়া হবে। কিন্তু যদি তার অনুসরণ না কর তা হলে তোমরা ধ্বংস ও নির্মূল হয়ে যাবে। মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করে তোমাদেরকে আগুনে পোড়ানো হবে।”

ঠিক সেই মুহূর্তেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে তাদের সামনে আসলেন। তিনি এক মুষ্ঠি ধূলি হাতে নিলেন। অতঃপর আবু জাহলকে লক্ষ্য করে বলতে লগলেন, “হ্যাঁ, আমি এ কথা বলি এবং যাদেরকে আগুনে পোড়ানো হবে তুমিও তাদেরই একজন।” এই সময় আল্লাহ তাদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিলেন। ফলে তারা তাঁকে দেখতে পেলো না। তিনি ঐ ধূলি তাদের মাথার ওপর ছড়িয়ে দিতে লাগলেন। তিনি তখন সূরা ইয়াসীনের নিন্মোক্ত আয়াতসমূহ পড়ছিলেন-

“ইয়াসীন! জ্ঞানের ভা-ার কুরআনের কসম, নিশ্চয়ই তুমি রাসূল। তুমি সঠিক পথের ওপর আছ। এ কুরআন মহাপরাক্রান্ত করুনাময়ের নাযিল করা, যাতে তুমি এমন একটি জাতিকে সাবধান করে দিতে পার যাদের পূর্বপুরুষদের সাবধান করা হয়নি। পলে তারা অজ্ঞতার মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে। তাদের অধিকাংশ লোকই আল্লাহর আযাবের যোগ্য তাই তারা ঈমান আনছে না। আমি তাদের গলায় বেড়ি লাগিয়ে দিয়েছি। সেই বেড়িতে তাদের থুতনি পর্যন্ত শ্রংখলিত হয়ে গেছে। এ জন্য তারা মাথা উঁচু করে রয়েছে। আমি তাদের সামনে একটি প্রাচীর এবং পেছনে আরেকটি প্রাচীর দাঁড় করিয়ে তাদেরকে ঢেকে দিয়েছি। তাই তারা দেখতে পায় না।” এই আয়াত কয়টি পড়তে পড়তে তিনি তাদের প্রত্যেকের মাথায় ধূলি নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর নিজের ইচ্ছামত একদিক চলে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর বাইরের এক ব্যক্তি তাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা এখানে কি জন্য অপেক্ষা করছো?” তারা বললো, “আমরা মুহম্মাদের অপেক্ষায় আছি।” সে বললো, “আল্লাহ তোমাদেরকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন। মুহাম্মাদ তো তোমাদের সামনে দিয়েই বেরিয়ে গেছে। তোমাদের মাথায় কি রয়েছে, তা কি দেখতে পাচ্ছো না?” তখন প্রত্যেকে মাথায় হাত দিয়ে দেখলো, ধূলিতে মাথা আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

অতঃপর তারা গৃহতল্লাশী শরু করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাদর গায়ে দিয়ে আলীকে (রা) বিছানায় শয়িত দেখে বললো, “এই তো মুহাম্মাদ, চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে।” তাই তারা ভোর পর্যন্ত অপেক্ষায় রইলো। সকালে আলী (রা) বিছানা থেকে উঠলে তাকে দেখে সবাই বলে উঠলো, “লোকটা তাহলে তো ঠিকই বলেছে যে, মুহাম্মাদ চলে গেছে।”

ইবনে ইসহাক বলেন, আবু বাক্র ছিলেন খুব ধনবান ব্যক্তি। তিনি রাসূলুল্লাহর কাছে হিজরাতের অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলতেন, “তুমি তাড়াহুড়া করোনা। আল্লাহ হয়তো তোমাকে নিজের কথাই বলেছেন। তাই তিনি তখন থেকেই দুটো উট কিনে নিজের বাড়ীতে রেখেছিলেন। হিজরাতের প্রস্তুতিস্বরূপ তিনি এই কাজ করেছিলেন।

আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বাক্রের বাড়ীতে সকালে হোক বা বিকেলে দিনে অন্ততঃ একবার যেতে ভুলতেন না। সেই দিনটা এসে উপনীত হলো যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কার স্বগোত্রীয়দেরকে ছেড়ে হিজরাত করে চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো। সেদিন তিনি দুপুরে আমাদের বাড়ীতে আসলেন। ঐ সময় কখনো তিনি আসতেন না। তাঁকে দেখে আবু বাক্র বললেন, “নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছে তা না হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সময় আসতেন না।” তিনি বাড়ীতে প্রবেশ করলে আবু বাক্রের বাড়ীতে তখন আমি আর আমার বোন আসমা বিনতে আবু বকর ছাড়া আর কেউ ছিলো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা এখানে অন্য যারা রয়েছে, তাদেরকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে দাও।” আবু বাক্র (রা) বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমার দুই মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই। আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনার কি হয়েছে? আমাকে বলুন।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহ আমাকে মক্কা থেকে চলে যাওয়ার ও হিজরাত করার অনুমতি দিয়েছেন।” আবু বাক্র বললেন, “আমিও কি সঙ্গে যেতে পারবো?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ, তুমিও সঙ্গে যেতে পারবে?।” আয়িশা (রা) সবলেন, সেদিনের আগে আমি জানতাম না যে, মানুষ আনন্দের আতিশয্যেও কাঁদতে পারে। আমি আবু বাক্র (রা) কে সেদিন কাঁদতে দেখেছি। অত:পর আবু কাক্র (রা) বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, এই দেখুন, আমি এই উট দুটো এই কাজের জন্যই প্রস্তুত করে রেখেছি।” অতঃপর তারা আবদুল্লাহ ইবনে আরকাতকে পথ দেখিয়ে নেবার জন্য ভাড়া করে সাথে নিলেন। সে ছিলো মুশরিক। উট দুটো তার কাছেই রেখে গেলেন। সে নির্ধারিত সময়ের জন্য উট দুটির দেখাশুনা ও তত্ত্বাবধান করতে থাকলো।

ইবনে ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা ত্যাগের সময় তাঁর মক্কা ত্যাগের কথা শধুমাত্র আলী ইবনে আবু তালিব (রা), আবু বাকর সিদ্দীক (রা) এবং আবু বাকরের পরিবার পরিজন ছাড়া আর কেউ জানতো না। আলীকে ব্যাপারটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁকে মক্কায় কিছুদিন থাকতে বলেছিলেন। মক্কার লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নানা রকমের জিনিস গচ্ছিত রাখতো। যারা কোন জিনিস নিজের কাছে রাখা নিরাপদ মনে করতো না তারা তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আমানত রাখতো। কারণ তাঁর সততা ও আমানতদারীর কথা সবার জানা ছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরাতের পর ঐ আমানত ফেরত দেয়ার জন্যই তিনি আলীকে (রা) দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং তাকে মক্কায় আরো কিছুদিন থাকার নির্দেশ দেন।

এবার আবু বাক্র রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাড়ী থেকে বের হবার পালা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আবু বাক্রের (রা) কাছে আসলেন। তারপর আবু বাক্রের ঘরের পেছনের জানালা দিয়ে উভয়ে বের হলেন। অতঃপর তাঁরা মক্কার নিম্নভূমিতে অবস্থিত ‘সাওর’ পর্বতের একটি গুহার পাশে গিয়ে তার ভেতরে প্রবেশ করলেন। আবু বাকর তাঁর ছেলে ‘আবদুল্লাহকে বলে গেলেন, দিনের বেলায় লোকেরা তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলাবলি করে কিনা, তা যেন সে মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং সন্ধ্যার সময় তাঁদের কাছে গিয়ে সব কথা জানায়। (মুক্তিপ্রাপ্ত গোলাম ও পরে স্বেচ্ছায় মজুরীর ভিত্তিতে কর্মরত) ভৃত্য আমের ইবনে ফুহাইরাকে নির্দেশ দিয়ে গেলেন, সে যেন দিনের বেলায় তাঁর মেষপাল চরায়, অতঃপর সেগুলোকে সাওরের ঐ পর্বত গুহার কাছে ছেড়ে দেয় এবং সন্ধ্যার সময় পর্বত গুহায় তাঁদের সাথে দেখা করে। আসমা বিনতে আবু বাক্র প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় তাঁদের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। [৪৩. হাসান বসরী (রহঃ) থেকে ইবনে হিশাম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ও আবু বাক্র (রা) সাওর পর্বত গুহায় পৌঁছেন রাতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রবেশের আগে আবু বাক্র (রা) গুহায় প্রবেশ করলেন। সেখানে কোন হিং¯্র প্রাণী বা সাপ আছে কিনা তা ভালো করে দেখে নিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিপদমুক্ত রাখার উদ্দেশ্যেই তিনি এরূপ ঝুঁকি নিয়েছিলেন। ]আবু বাক্রকে (রা) সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওর পর্বত গুহায় তিনদিন অবস্থান করেন। এদিকে কুরাইশরা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য একশো উট পুরস্কার ঘোষণা করলো। আবদুল্লাহ ইবনে আবু বাক্র সারা দিন কুরাইশদের সাথেই মিলেমিশে থাকতেন এবং তাদের সলাপরামর্শ শুনতেন। তারা তাঁদের উভয়ের সম্পর্কে যা যা মন্তব্য করতো তাও শুনতেন। অতঃপর সন্ধ্যার সময় তাঁদের কাছে গিয়ে সারা দিনের যাবতীয় খবর জানাতেন। আর ভৃত্য আমের ইবনে ফুহাইরা মক্কাবাসীদের পশুপালের সাথেই আবু বাকরের (রা) মেষপাল চরিয়ে বেড়াতো। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই সেগুলোকে ‘সাওর’ পর্বতগুহার কাছে নিয়ে ছেড়ে দিতো, তখন তাঁরা উভয়ে মেষের দুধ দোহন করতেন অথবা জবাই করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আবু বাক্র সকালে ‘সাওর’ পর্বত গুহা থেকে বেরিয়ে মক্কায় যেতেন তখন আমের ইবনে ফুহাইরা তার মেষপাল নিয়ে পিছু পিছু যেতেন যাতে তার পদচিহ্ন মুছে যায়। এভাবে তিনদিন অতিবাহিত হলে তাদের সম্পর্কে মক্কাবাসীদের হৈ চৈ ধীরে ধীরে থিতিয়ে আসলো। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আরাকাত নিজে একটি উটে চড়ে রাসূলুল্লাহ ও আবু বাক্রের (রা) উট দুটিকে সাথে নিয়ে সাওর পর্বত গুহায় হাজির হলো। আসমা বিনতে আবু বাকর পথের খাবার নিয়ে তাদের কাছে আসলো। কিন্তু খাবার ঝুলিয়ে বেঁধে দেয়ার মত কোন রশি আনতে সে ভুলে গিয়েছিলো। উভয়ে রওনা হলেন। আসমা খাবার ঝুলানো চেষ্টা করলো, কিন্তু দেখলো কোন রশি নেই। অগত্যা সে নিজের কোমর বন্ধনী খুলে তা ফেড়ে রশি বনিয়ে খাবার বেঁধে ঝুলিয়ে দিলো। এই জন্য আসমা বিনতে আবু বাক্রকে ‘যাতুননিতাকাইন’ দুটি কোমর বন্ধনীর অধিকারিণীর বলে অভিহিত করা হতো। [৪৪.ইবনে হিশাম বলেন, আমি একাধিক বিজ্ঞজনের কাছে শুনেছি যে, আমাকে যাতুননিতাকাইন অর্থাৎ ‘দুই কোমর বন্ধনীর অধিকারিণী বলা হতো। এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, আসমা যখন খাবারের পাত্র বেঁধে ঝুলিয়ে দিতে চাইলো, তখন নিজের বেল্টটি দ্বিখ-িত করলো, একটি দিয়ে তা ঘুরিয়ে বাঁধলো, অপরটি দিয়ে ঝুলালো।]

আবু বাক্র উট দুটোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এনে সবচেয়ে ভালো উটটি তাঁকে দিয়ে বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবার হোক। এতে আরোহণ করুন।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে উট আমার নয় তাতে আমি আরোহণ করবো না।” তিনি বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, এটি আপনার। আপনার উপর আমার পিতামাতা কুরবান হোক।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “না তবে কত দাম দিয়ে এটি কিনেছো বল।” আবু বাক্র উটের দাম বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি এই দামের বিনিময়ে উটটি নিলাম।” আবু বাক্র বললেন, “উট ও তার দাম উভয়ই আপনাকে দিয়ে দিলাম।”

অতঃপর উভয়ে উটের পিঠে সওয়ার হয়ে যাত্রা শুরু করলেন। আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর ভৃত্য আমের ইবনে ফুহাইরাকে পথিমধ্যে প্রয়োজনীয় সেবার জন্য পেছনে চড়িয়ে নিলেন।”

আসমা বিনতে আবু বাকর বলেন, আবু বাক্র (রা) ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওনা হয়ে যাওয়ার পর আবু জাহল সহ কুরাইশদের একটি দল আসলো। তারা আবু বাক্রের (রা) দরজার সামনে দাঁড়ালো। আমি তাদের কাছে গেলাম। তারা বললো, “তোমার আব্বা কোথায়? ” আমি বললাম, ‘আব্বা কোথায় জানি না।” সঙ্গে সঙ্গে পাষ- নরাধম আবু জাহল আমার মুখে এমন জোরে থাপ্পর মারলো যে, আমার কানবালাটি ছিটকে পড়ে গেলো।

অতঃপর তারা চলে গেলো। ইতিমধ্যে তিনদিন কেটে গেলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিকে রওয়ানা হয়েছেন তার কোন হদিস পাওয়া গেলো না। হঠাৎ মক্কার নিম্নভূমি থেকে এক জিন গান গাইতে গাইতে আসলো। লোকেরা তাকে দেখতে পাচ্ছিলো না। কিন্তু তার আওয়াজ শুনে তাকে অনুসরণ করতে লাগলো। দেখতে দেখতে সে মক্কার উচ্চভূমি অতিক্রম করে চলে গেল। সে যে গানটি গাচ্ছিলো তা হলো:

[আরবী *************]

“মানুষের প্রভু আল্লাহ সেই দুই বন্ধুকে সর্বোত্তম পুরস্কার দিক-যারা উম্মে মা’বাদের বাড়ীতে [৪৫. উম্মে মা’বাদের প্রকৃত নাম আতিকা বিনতে খালিদ। সে বনু কা’ব গোত্রের এক মহিলা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ‘আবু বাক্র, আমের ইবনে ফুইহারা ও আবদুল্লাহ ইবনে আরকাত এই মহিলার বাড়ীতে যাত্রাবিরতি করেন। তাঁরা এই মহিলার কাছ থেকে কিছু গোশত ও খোরমা ক্রয়ের ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন। কিন্তু সেখানে কোনটাই ছিলো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে মা’বাদের ঘরের এক কোণে একটা ছাগল দেখতে পেলেন। ছাগলটি দুধ দিতো না। তিনি ঐ মহিলার নিকট ছাগলটির দোহন করার অনুমতি চাইলেন। অতঃপর তিনি হাত দেয়ে তার পালান ধরতেই তা দুধে ভরে উঠলো। এ দৃশ্য দেখে মহিলা তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করলেন]

আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তারা বদান্যতা সহকারে যাত্রাবিরতি করেছে, অতঃপর পুনরায় যাত্রা করেছে। যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের বন্ধু হয়েছে, সে সফলকাম হয়েছে। বনু কা’বের যুবতীটির মুসলিমদের ব্যবস্থা তদারক করার জায়গায় উপস্থিত থাকা ও উপবিষ্ট থাকার জন্য সমগ্র বনু কা’বই অভিনন্দিত হোক।”

তার এ কথা শুনে আমরা বুঝতে পারলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেছেন।”

সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জু’সাম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার পথে মক্কা ত্যাগ করেন। কুরাইশরা তাঁকে পাকড়াও করে আনার বিনিময়ে একশো উষ্ট্রী পুরস্কার ঘোষণা করেন। একদিন আমি নিজ গোত্রের পরামর্শ সভায় বসে আছি আমাদেরই এক ব্যক্তি আমাদের কাছে এসে দাঁড়ালো। সে বললো, “আল্লাহর শপথ, আমি এই মাত্র তিনজনের একটা দলকে যেতে দেখে আসলাম। আমার মনে হয়, তারা মুহাম্মাদ ও তার সঙ্গী সাথীরাই হবে।” আম তাকে চোখ টিপে চুপ করতে ইশারা করলাম। অতঃপর বললাম, “ওরা অমুক গোত্রের লোকজন। তাদের একটা পশু হারিয়ে গেছে, সেটাই খুঁজে বেড়াচ্ছে।” সে বললো, “হয়তো তাই।”

সে আর কোন কথা বললো না। সেখানে অল্প কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমি বাড়ীতে গেলাম এবং ঘোড়া ও অস্ত্রশস্ত্র গুছিয়ে নিয়ে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। আমার ভাগ্য গণনার তীরটিও সাথে নিলাম। তারপর যুদ্ধের পোশাক পরে রওয়ানা হলাম। পথে বেরিয়ে এক জায়গায় গিয়ে তীর দিয়ে ভাগ্য গণনা করলাম। যা আমার একেবারেই অপছন্দ, তীর ঠিক সেই ভবিষ্যদ্বণীই করলো। অর্থাৎ ‘মুহাম্মাদের কোন ক্ষতি হবে না।’ আসলে আমার ইচ্ছা ছিলো তাকে পাকড়াও করে কুরাইশদের হাতে তুলে দিয়ে পুরস্কারের একশো উষ্ট্রী লাভ করা। তাদের পদচিহ্ন ধরে আমি দ্রুত ঘোড়া হাঁকিয়ে এগিয়ে চললাম ঘোড়টি আমাকে নিয়ে যেইমাত্র প্রবল বেগে ছুটতে আরম্ভ করেছে, অমনি সেটি হোঁচট খেলো। আমি ঘোড়ার পিঠের ওপর থেকে ছিটকে রাস্তার ওপর এসে পড়লাম। আমি তখন মনে মনে বললাম,‘ব্যাপার কি!’ আবার ভাগ্য গননার তীর বের করে তা দিয়ে গণনা করলাম। এবারও একই ফল পাওয়া গেলো: ‘তার কোন ক্ষতি হবে না।’ অথচ এরূপ সিদ্ধান্ত আমার কাম্য ছিলো না। আমি তবুও নাছোড়বান্দা।

কিছুতেই থামতে রাজী নই। আবার পায়ের ছাপ অনুসরণ করে জোরে ঘোড়া হাঁকালাম। মুহাম্মাদ ও তাঁর সঙ্গীরা আমার দৃষ্টিসীমার মধ্যে এসে গেলো এবং তাদেরকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম। হঠাৎ সেই মুহূর্তে ঘোড়াটি আবার হোঁচট খেলো। আমি ছিটকে পড়লাম। মনে মনে বললাম ব্যাপার কি! আবার তীর বের করে গণনা করলাম। এবারও অবাঞ্ছিত সিদ্ধান্ত বেরুলো: ‘তাঁর কোন ক্ষতি হবে না।’ এবারও আমি দমলাম না। তাদেরকে অনুসরণ করে এগিয়ে চললাম। আবার তাদেরকে স্পষ্ট দেখতে পেলাম। দেখতে পাওয়া মাত্রই ঘোড়া আবার হোঁচট খেলে এবার ঘোড়ার সামনের পা দুটি মাটিতে দেবে গেলো এবং আমি ছিটকে পড়ে গেলাম। পা দু’খানা টেনে বের করার সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গা থেকে কু-লি পাকিয়ে ধোঁয়া বের হতে থাকলো। এবার আমি বুঝতে পারলাম যে, মুহাম্মাদকে আমার হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে এবং সে অজেয়। অতঃপর আমি তাদেরকে ডাক দিয়ে বললাম, “আমি জুসামের পুত্র সুরকা। তোমরা একটু থামো, তোমাদের সাথে আমার কথা আছে। আল্লাহর শপথ, তোমাদের ব্যাপারে আমার সংশয় দূর হয়ে গিয়েছে। আমার দিক থেকে কোন অবাঞ্ছিত ব্যাবহার তোমরা পাবে না।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বাকরকে বললেন, “তাকে জিজ্ঞেস করো সে আমাদের কাছে কি চায়?” আমি বললাম, “আমাকে একটা বাণী লিখে দাও। সেই লেখা তোমাদের ও আমার মধ্যে একটা প্রমাণস্বরূপ থাকবে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকরকে কিছু লিখে দিতে বললেন।

আবু বাক্র (রা) একটা হাড়ের ওপর (অথবা কাপড়ের টুকরায় অথবা ভাঙ্গা মৃৎ পাত্রের টুকরায়) একটা বাণী লিখে আমার দিকে ছুড়ে মারলেন। আমি সেই টুকরাটা কুড়িয়ে নিলাম এবং আমার তীরের খাপের মধ্যে পুরে নিয়ে ফিরে আসলাম। এই ঘটনার কথা অতঃপর আর কারো কাছে ব্যক্ত করলাম না। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা জয় করলেন এবং হুনাইন ও তায়েফ অভিযান সম্পন্ন করলেন, তখন আমি ঐ লেখাটা নিয়ে তাঁর সাথে দেখা করতে গেলাম। মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী জো’রানায় তাঁর সাথে দেখা করতে গেলাম। আমি আনসারদের একটি সেনাদলের কাছে উপস্থিত হলাম। তারা বর্শা দিয়ে আমাকে মৃদু খোঁচা দিতে দিতে বললো, “ভাগো, ভাগো। কি চাও এখানে?” আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এগিয়ে গেলাম। তিনি তখন উটের ওপর সওয়ার ছিলেন। আমি যেন এই মুর্হূতেও দেখতে পাচ্ছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চর্বির মত সচ্ছ ও শুভ্র পাদু খানি জিনের পাদানিতে রেখে বসে আছেন। আমি সেই লিখিত টুকরাটি উঁচু করে দেখিয়ে বললাম, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটি সেই বস্তু যাতে আপনি একটি বাণী লিখে দিয়েছিলেন। আমি জুসামের পুত্র সুরাকা। ” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আজ ওয়াদা পালন ও সৌজন্য প্রদর্শনের দিন। কাছে আস।” আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং ইসলাম গ্রহণ করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করার মত একটি বিষয় মনে হলে তা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু এখন তা মনে সেই। আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল, আমি নিজের উটের জন্য পানি দিয়ে চৌবাচ্চা ভরে রাখি। কিন্তু অন্যদের পথহারা উটগুলো এসে তার ওপর চড়াও হয় এবং পানি পান করে ফেলে। এভাবে ঐ সব উটকে পানি পান করাই তা হলে আমার সওয়াব হবে কি? তিনি বললেন, “ যে কোন প্রাণীর চাহিদা পূরণ করলেই সওয়াব হয়।” এরপর আমি নিজ গোত্রের কাছে ফিরে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আমার সদকার প্রাণী পৌঁছিয়ে দিলাম।

ইবনে ইসহাক বলেন, পথপ্রদর্শক আবদুল্লাহ ইবনে আরকাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বাক্র রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সাথে নিয়ে মক্কার নিম্নভূমি দিয়ে এগিয়ে চললো। অতঃপর উপকূলবর্তী এলাকায় গিয়ে উপনীত হলো। সেখান থেকে উসফান অঞ্চলের নিম্নভূমি দিয়ে অগ্রসর হয়ে কুদাইদ অতিক্রম করার পর খাররার নামক স্থানে গিয়ে উপনীত হলো। অতঃপর লেকফ্ ও মাদলাজা লেকফ্ অতিক্রম করে মাদলাজ মাহাজ নামক জায়গায় পৌঁছলো। সেখান থেকে মারজাহ মাহাজ, মারজাহ যিল গাদাওয়াইন তারপর বাতন যি কাশর ও জাদাজিদ হয়ে আজরাদ পৌঁছলো। তারপর মাদলাজা তিহিনের শত্রু এলাকা যা-সালাম অতিক্রম করে আবাবিদ ও তারপরে আল-ফাজ্জাহ অতিক্রম করলো।

ইবনে হিশাম বলেন, অতঃপর সে তাদেরকে নিয়ে আরজ নামক স্থাকে উপনীত হলো। তাখন সেখানকার অধিবাসীদের বেশ কিছু লোক সেখানে তাদের জন্য প্রতীক্ষায় ছিলো। আসলাম গোত্রের আওস ইবনে হাজার নামক স্থানে উপনীত হলো। তখন সেখানকার অধিবাসীদের বেশ কিছু লোক সেখানে তাদের জন্য প্রতীক্ষায় ছিলো। আসলাম গোত্রের আওস হাজার নামক এক ব্যক্তি ইবনুর রিদা নামক তার একটা উটে আরোহণ করিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদীনায় যাওয়ার ব্যবস্থা করলো। মাসউদ ইবনে হুনাইদা নামক তার এক ভৃত্যকেও সে তাঁর সাথে পাঠালো। এরপর পথপ্রদর্শক তাদের উভয়কে নিয়ে আরজ ত্যাগ করলো। রুকুবার ডান দিক দিয়ে সানিয়াতুল আয়ের হয়ে বাতনু রীমে গিয়ে উপনীত হলো। সেখান থেকে সরাসরি কুবায় বনু আমর ইবনে আউফ গোত্রের বসতিতে গিয়ে হাজির হলো। তখন ছিলো রবিউল আউয়াল মাসের বার তারিখের প্রখর রৌদ্র ঝলসানো দুপুর। সূর্য তখন প্রায় মাথার ওপরে এসে গিয়েছে।

সকল অধ্যায়

১. ০০৪. সীরাতে ইবনে ইসহাক
২. ০০৫. সীরাতে ইবনে হিশাম
৩. ০০৬. সীরাতে ইবনে হিশামের মর্যাদা
৪. ০০৭. সীরাতে ইবনে হিশামের বক্ষ্যমাণ সংক্ষিপত রূপ
৫. ০০৮. মুহাম্মদ (সা) থেকে আদম (আ) পর্যন্ত উর্ধতন বংশ পরম্পরা
৬. ০০৯. ইসমাঈর (আ) এর অধস্তন পুরুষদের বংশ পরম্পরা
৭. ০১০. রাবিয়া ইবনে নসরের স্বপ্ন
৮. ০১১. আবু কারব হাসসান ইবনে তুব্বান আস’আদ কর্তৃক ইয়ামতান রাজ্য অধিকার এবং ইয়াসরিব আক্রমণ
৯. ০১২. হাবশীদের দখলে ইয়ামান
১০. ০১৩. আরিয়াত ও আবরাহা দ্বন্দ্ব
১১. ০১৪. আসহাবুল ফীলের ঘটনা
১২. ০১৫. নিযার ইবনে মা’আদের বংশধর
১৩. ০১৬. আবদুল মুত্তালিব বিন হাশিমের সন্তান-সন্ততি
১৪. ০১৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতামাতা
১৫. ০১৮. যমযাম কূপ খনন ও সে বিষয়ে সৃষ্ট মতবিরোধ
১৬. ০১৯. আবদুল মুত্তালিব কর্তৃক তার পুত্রকে কুরবানীর মানত
১৭. ০২০. মহানবীর (সা) আমিনার গর্ভে থাকাকালের ঘটনাবলী
১৮. ০২১. রাসূলুল্লাহর (সা) জন্ম
১৯. ০২২. হালীমার কথা
২০. ০২৩. বক্ষ বিদারণের ঘটনা
২১. ০২৪. দাদার অভিভাবকত্বে
২২. ০২৫. চাচা আবু তালিবের অভিভাবকত্বে
২৩. ০২৬. পাদ্রী বাহীরার ঘটনা
২৪. ০২৭. ফিজারের যুদ্ধ
২৫. ০২৮. খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে বিয়ে
২৬. ০২৯. ওয়ারাকা বিন নাওফেলের ভাষ্য
২৭. ০৩০. পবিত্র কাবার পুনর্নির্মাণ
২৮. ০৩১. আরব গণক, ইহুদী পুরেহিত ও খৃস্টান ধর্মযাজকদের ভবিষ্যদ্বাণী
২৯. ০৩২. রাসূলুল্লাহর (সা) দৈহিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
৩০. ০৩৩. ইনজীলে রাসূল্লাহর বিবরণ
৩১. ০৩৪. নবুওয়াত লাভ
৩২. ০৩৫. কুরআন নাযিলের সূচনা
৩৩. ০৩৬. খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদের ইসলাম গ্রহণ
৩৪. ০৩৭. ওহীর বিরতি
৩৫. ০৩৮. প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী
৩৬. ০৩৯. প্রকাশ্য দাওয়াত
৩৭. ০৪০. কুরআন সম্পর্কে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরার মন্তব্য
৩৮. ০৪১. রাসূলুল্লাহর (সা) ওপও উৎপীড়নের বিবরণ
৩৯. ০৪২. হামযার ইসলাম গ্রহণ
৪০. ০৪৩. রাসূল্লাহর (সা) আন্দেলন প্রতিরোধে উতবার ফন্দি
৪১. ০৪৪. কুরাইশ নেতাদের সাথে রাসূলুল্লাহর (সা) কথোপকথন
৪২. ০৪৫. আবু জাহলের আচরণ
৪৩. ০৪৬. নাদার ইবনে হারেনের বিবরণ
৪৪. ০৪৭. দুর্বল মুসলমানদের ওপর মুশরিকদের অত্যাচার
৪৫. ০৪৮. আবিসিনিয়ায় মুসলমানদের প্রথম হিজরাত
৪৬. ০৪৯. মুহাজিরদের ফিরিয়ে আনার জন্য আবিসিনিয়ায় কুরাইশদের দূত প্রেরণ
৪৭. ০৫০. উমার ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ
৪৮. ০৫১. চুক্তিনামার বিবরণ
৪৯. ০৫২. রাসূলুল্লাহর (সা) ওপর কুরাইশদের নির্যাতন
৫০. ০৫৩. আবিসিনিয়া থেকে মক্কার লোকদের ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে মুহাজিরদের প্রত্যাবর্তন
৫১. ০৫৪. চুক্তি বাতির হওয়ার কাহিনী
৫২. ০৫৫. ইরাশ গোত্রের এক ব্যক্তির আবু জাহলের নিকট উট বিক্রির ঘটনা
৫৩. ০৫৬. ইসরা বা রাত্রীকালীন সফর
৫৪. ০৫৭. মিরাজের ঘটনা
৫৫. ০৫৮. আবু তালিব ও খাদীজার ইন্তিকাল
৫৬. ০৫৯. সাহায্য লাভের আশায় বনু সাকীফ গোত্রের শরণাপন্ন হওয়া
৫৭. ০৬০. নাসীবীনের জ্বীনদের ঘটনা
৫৮. ০৬১. ইসলামের দাওয়াত পৌঁছতে রাসূলুল্লাহ (সা) সব গোত্রের কাছে হাজির হলেন
৫৯. ০৬২. মদীনায় ইসলাম বিস্তারের সূচনা
৬০. ০৬৩. মদীনায় প্রথম বাইয়াত
৬১. ০৬৪. আকাবার দ্বিতীয় বাইয়াত
৬২. ০৬৫. আকাবার শেষ বাইয়াত ও তার শর্তাবলী
৬৩. ০৬৬. সশস্ত্র যুদ্ধের নির্দেশ লাভ
৬৪. ০৬৭. মুসলমানদের মদীনায় হিজরাত করার অনুমতি লাভ
৬৫. ০৬৮. মদীনায় হিজরাতকারী মুসলমানদের বিবরণ
৬৬. ০৬৯. রাসূলুল্লাহর (সা) হিজরাত
৬৭. ০৭০. কুবায় উপস্থিতি
৬৮. ০৭১. মদীনায় উপস্থিতি
৬৯. ০৭২. মদীনাতে ভাষণ দান ও চুক্তি সম্পাদন
৭০. ০৭৩. আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃ সম্পর্ক স্থাপন
৭১. ০৭৪. আযানের সূচনা
৭২. ০৭৫. কতিপয় সাহাবীর রোগাক্রান্ত হওয়ার বিবরণ
৭৩. ০৭৬. হিজরাতের তারিখ
৭৪. ০৭৭. প্রথম যুদ্ধাভিযান
৭৫. ০৭৮. উবাইদা ইবনে হারিসের নেতৃত্বে অভিযান । রাসূলুল্লাহ (সা) নিজে এই যুদ্ধের ঝান্ডা বেঁধেছিলেন
৭৬. ০৭৯. সমুদ্র উপকূলেন দিকে হামযার নেতৃত্বে অভিযান
৭৭. ০৮০. বুয়াত অভিযান
৭৮. ০৮১. উশাইরা অভিযান
৭৯. ০৮২. সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাসের সেতৃত্বে সামরিক অভিযান
৮০. ০৮৩. সাফওয়ান অভিযান : প্রথম বদর অভিযান
৮১. ০৮৪. আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশের নেতৃত্বে সামরিক অভিযান
৮২. ০৮৫. কিবলা পরিবর্তন
৮৩. ০৮৬. বদরের যুদ্ধ
৮৪. ০৮৭. বনু সুলাইম অভিযান
৮৫. ০৮৮. সাওয়ীক অভিযান
৮৬. ০৮৯. যূ-আমার অভিযান
৮৭. ০৯০. বাহরানের ফুরু অভিযান
৮৮. ০৯১. বনু কাইনুকার যুদ্ধ
৮৯. ০৯২. যায়িদ ইবনে হারিসার কারাদা অভিযান
৯০. ০৯৩. উহুদ যুদ্ধ
৯১. ০৯৪. হিজরী তৃতীয় সন : রাজী সফর
৯২. ০৯৫. বীরে মাউনার ঘটনা (৪র্থ হিজরী)
৯৩. ০৯৬. বনু নাবীরের বহিষ্কার (চতুর্থ হিজরী)
৯৪. ০৯৭. যাতুর রিকা অভিযান (৪র্থ হিজরী)
৯৫. ০৯৮. দ্বিতীয় বদর অভিযান (৪র্থ হিজরী সন)
৯৬. ০৯৯. দুমাতুল জান্দাল অভিযান (৫ম হিজরী: রবিউল আউয়াল)
৯৭. ১০০. খন্দক যুদ্ধ (৫ম হিজরী, শাওয়াল)
৯৮. ১০১. বনু কুরাইযা অভিযান (৫ম হিজরী)
৯৯. ১০২. যী কারাদ অভিযান
১০০. ১০৩. বনু মুসতালিক অভিযান
১০১. ১০৪. ৬ষ্ঠ হিজরী সনে বনু মুসতালিক অভিযানকালে অপবাদের ঘটনা
১০২. ১০৫. হুদাইবিয়ার ঘটনা
১০৩. ১০৬. বাইয়াতু রিদওয়ান
১০৪. ১০৭. শান্তিচুক্তি বা হুদাইবিয়ার সন্ধি
১০৫. ১০৮. খাইবার বিজয়: ৭ম হিজরীর মুহাররাম মাস
১০৬. ১০৯. জাফর ইবনে আবু তালিবের আবিসিনিয়া থেকে প্রত্যাবর্তন
১০৭. ১১০. উমরাতুল কাযাঃ ৭ম হিজরী সনঃ জিলকাদ মাস
১০৮. ১১১. মুতার যুদ্ধঃ ৮ম হিজরী সনঃ জামাদিউল উলা
১০৯. ১১২. মক্কা বিজয়ঃ ৮ম হিজরী, রমাযান মাস
১১০. ১১৩. হুনাইনের যুদ্ধ: ৮ম হিজরী
১১১. ১১৪. তায়েফ যুদ্ধ: ৮ম হিজরী সন
১১২. ১১৫. হাওয়াযিনের জমিজমা, যুদ্ধবন্দী, তাদের কিছুসংখ্যক লোককে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য উপঢৌকন দান এবং কিচু লোককে পুরস্কার প্রদানের বিবরণ
১১৩. ১১৬. জি’রানা থেকে রাসূলুল্লাহর (সা) উমরা পালন
১১৪. ১১৭. তায়েফ ত্যাগের পর কা’ব ইবনে যুহাইরের ইসলাম গ্রহণ
১১৫. ১১৮. তাবুক যুদ্ধ
১১৬. ১১৯. দুমার শাসনকর্তা উকায়দের-এর নিকট রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক খালিদ ইবনে ওয়ালীদকে প্রেরণ
১১৭. ১২০. নবম হিজরীর রমযান মাসে বনু সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের আগমন ও ইসলাম গ্রহণ
১১৮. ১২১. নবম হিজরী সালকে ‘প্রতিনিধিদল আগমনের বছর’ হিসেবে আখ্যায়িতকরণ। সূরা আন নাছর এই বছরই নাযিল হয়
১১৯. ১২২. বনু তামীমের প্রতিনিধিদলের আগমন ও সূরা হুজুরাত নাযিল
১২০. ১২৩. বনু আমেরের প্রতিনিধি আমের ইবনে তুফাইল ও আরবাদ ইবনে কায়েসের ঘটনা
১২১. ১২৪. জারুদের নেতৃত্বে বনু আবদুল কায়েসের প্রতিনিধিদলের আগমন
১২২. ১২৫. মুসাইলিমা কাযযাবসহ বনু হানীফা প্রতিনিধিদলের আগমন
১২৩. ১২৬. হাতিম তাঈ-এর আদীর ঘটনা
১২৪. ১২৭. ফারওয়া ইবনে মুসাইক মুরাদীর আগমন
১২৫. ১২৮. আমর ইবনে মা’দী ইয়াকরাবের নেতৃত্বে বনু যুবাইদের প্রতিনিধিদলের আগমন
১২৬. ১২৯. আশয়াস ইবনে কায়েসের নেতৃত্বে কিন্দার প্রতিনিধিদলের আগমন
১২৭. ১৩০. সুরাদ ইবনে আবদুল্লাহ আযদীর আগমন
১২৮. ১৩১. হিমইয়ার বংশীয় রাজাদের দূতের আগমন
১২৯. ১৩২. মুয়ায ইবনে জাবালকে ইয়ামানে পাঠানোর সময় রাসূলুল্লাহর (সা) উপদেশ
১৩০. ১৩৩. অভিযান পরিচালনাকালে খালিদ ইবনে ওয়ালীদের (রা) হাতে বনু হারিস গোত্রের ইসলাম গ্রহণ
১৩১. ১৩৪. মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার মুসইলিমা ও আসওয়াদ আনসীর বিবরণ
১৩২. ১৩৫. রাসূলুল্লাহর (সা) নিযুক্ত কর্মচারী ও আমীরগণের যাকাত আদায়ের অভিযান
১৩৩. ১৩৬. রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট মুসাইলিমার চিঠি এবং রাসূলুল্লাহর পক্ষ থেকে তার জবাব
১৩৪. ১৩৭. বিদায় হজ্জ
১৩৫. ১৩৮. উসামা ইবনে যায়িদকে ফিলিস্তীনে প্রেরণ
১৩৬. ১৩৯. রাজা বাদশাহদের কাছে রাসূলুল্লাহর (সা) দূত প্রেরণ
১৩৭. ১৪০. সর্বশেষ অভিযান
১৩৮. ১৪১. রাসূলুল্লাহর (সা) পীড়ার সূচনা
১৩৯. ১৪২. রাসূলুল্লাহর (সা) স্ত্রীগণ বা উম্মুহাতুল মুমিনীনের বিবরণ
১৪০. ১৪৩. রাসূলুল্লাহর (সা) রোগ সংক্রান্ত অবশিষ্ট বিবরণ
১৪১. ১৪৪. নামাযের জামায়াতে আবু বাক্রের (রা) ইমামতি
১৪২. ১৪৫. বনু সায়েদা গোত্রের চত্বরে
১৪৩. ১৪৬. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ও ইমার (রা)- এর বর্ণনা
১৪৪. ১৪৭. রাসূলুল্লাহর (সা) কাফন-দাফন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন