ছিন্নপত্র-৬

কালিম্পং থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফেরার পর রবীন্দ্রনাথ উঠেছিলেন জোড়াসাঁকোর পুরনো বাড়ির দোতলার এই পাথরের ঘরেই। দু’দিকের দেয়ালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের বড় ছবি ছিল। পূর্বপুরুষদের সঙ্গ যেন ছিল একটা ভরসা। এবার এই ঘরেই কবিকে অপারেশন করা হবে বলে ঘর ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে। জীবাণুমুক্ত করার জন্য ঘরে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। রাতে স্ট্রেচার থেকে তুলে কবিকে খাটে শোয়ানো হল। ঘোরের ভেতর হারিয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ।

পরদিন ২৬ জুলাই রবীন্দ্রনাথকে সকালে ভাল মেজাজে দেখা গেল। অনেকে এলেন। অবনীন্দ্রনাথ রবিকাকার করুণ দশা দেখে গতকাল সামনে আসেননি। আজ রানী চন্দকে দেখে ইশারায় জানতে চাইলেন, কবি কেমন আছেন। ভাল আছেন শুনে ঘরে ঢুকলেন। আশি বছরের কাকা আর সত্তর বছরের ভাইপো মুহূর্তে আড্ডায় জমে গেলেন। রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় আসার আগেই রানী চন্দকে অবনের কাছে পাঠিয়েছিলেন ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থের জন্য আরও কিছু গল্প অবনের মুখে শুনে নেওয়ার জন্য। সেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব প্রসঙ্গই আড্ডায় উঠছিল। খুশি ছড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “অবন, তোমার স্মৃতিচারণাতেই আমার ঠিক-ঠিক রূপ ফুটেছে। সবাই আমাকে ছিন্ন-ভিন্ন করেছে। আবার, স্তুতি করতে গিয়ে প্রকৃত আমাকে প্রকাশ করতে পারেনি। এবার সবাই জানবে তোমাদের রবিকাকাকে।”

রবিকাকার মুখে নিজের প্রশংসা শুনে অবনীন্দ্রনাথ খুব লজ্জা পেলেন যেন। তিনি পুরনো দিনের গল্প করতে লাগলেন। অবনীন্দ্রনাথের জন্ম-উৎসব ভাল করে হোক, রবীন্দ্রনাথের তেমনই ইচ্ছে। কিন্তু কোনও প্রস্তাবকেই তিনি আমল দিচ্ছেন না, এড়িয়ে যাচ্ছেন। শরীরের এই সংকটজনক সময়েও কবি বিষয়টি ভোলেননি। আড্ডার মাঝেই হঠাৎ তিনি অবনীন্দ্রনাথকে ধমক দিলেন, “অবন, তুমি নাকি জন্ম-উৎসবে আপত্তি করছ? দেশের লোক যদি চায় কিছু করতে, তোমার তো তাতে হাত নেই।”

রবীন্দ্রনাথের বকুনি খেয়ে অবনীন্দ্রনাথ ছোট ছেলের মতো হয়ে গেলেন যেন। সবাই দৃশ্যটা উপভোগ করল। মাথা চুলকে ভয়-পাওয়া গলায় অবনীন্দ্রনাথ একটু পরে বললেন, “তা আদেশ যখন করছ, মালা-চন্দন পরব, ফোঁটানাটা কাটব, তবে কোথাও যেতে পারব না কিন্তু।”

কথা শেষ করেই কবিকে প্রণাম করে এক ছুটে পালালেন অবনীন্দ্রনাথ। হেসে উঠলেন রবীন্দ্রনাথ। বললেন, “পাগলা যেন পালিয়ে বাঁচল! … শোনো, অবন কিছু চায় না। জীবনে চায়নি কিছু। কিন্তু এই একটি লোক যে শিল্পজগতে যুগ-প্রবর্তন করেছে, দেশের সব রুচি বদলে দিয়েছে। ওঁকে সমাদর করতেই হবে।”

রবীন্দ্রনাথ অবনকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে পুরনো সময়ে ডুব দিলেন। আন্দোলনের সময়ে। গোপন সভা, চাঁদা তুলতে বেরোনো দলবেঁধে, পুলিশি ঝামেলা—উত্তেজনাপূর্ণ সেই সময়। যৌবনের দীপ্তিতে, নতুন কিছু করার আনন্দে সময়টা ঝলমল করে উঠত তখন। ভরা বয়সে সব যেন বানানো আচরণ হয়ে গিয়েছে।

বিকেল বেলায় রবীন্দ্রনাথকে গ্লুকোজ ইনজেকশন দেওয়া হল। দিলেন ডা. সত্যেন্দ্রনাথ রায়। তাঁর নির্দেশেই কবির হাতে নুনের পুঁটলির সেঁক দিচ্ছেন রানী মহলানবিশ, হঠাৎ কবির হাতটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। অস্ফুট আর্তনাদ করে উঠলেন তিনি। তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে ডেকে আনা হল। ততক্ষণে সারা শরীরে কাঁপুনি হচ্ছে প্রবল। কম্বল চাপা দিয়ে তিন-চারজন ধরে রয়েছেন। ডাক্তারবাবু সব দেখে বললেন, “কোনও কোনও সময় গ্লুকোজের রিয়্যাকশন এরকম হতে পারে। একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।”

এসব তো ডাক্তারের কথা, যাঁরা দিনরাত সেবা করছেন কবিকে, কবি যাঁদেরকেই কেবল মনের কথা খুলে বলছেন, যাঁরা জানেন রবীন্দ্রনাথ প্রবল অনিচ্ছার সঙ্গে মেনে নিয়েছেন অপারেশনের সিদ্ধান্ত, সেই সেবিকাদের চোখে জল নামল। তাঁরা চিন্তিত হলেন, কী হল কবির? দেখা গেল রবীন্দ্রনাথের জ্বর এসে গেছে। থার্মোমিটারে তাপমাত্রা দেখাল ১০২.৪°”। জ্বরে বেহুঁশ হয়েই রাতটা পার করলেন সকলের প্রিয় কবি।

প্রশান্ত মহলানবিশ অসুস্থ থাকায় রানী রাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার পরদিন বেলাবেলি গুরুদেবের কাছে আসছেন। ২৭ জুলাই সকালে জোড়াসাঁকো পৌঁছে তিনি দেখলেন গতরাতে দেখে-যাওয়া জ্বরে বেহুঁশ কবি বেশ উৎফুল্ল হয়ে আছেন। অমিতা ঠাকুর, বুড়ি অর্থাৎ নন্দিতা, রানী চন্দরা ঘরে কাজকর্ম করছে। কবি রানীকে দেখে হাসলেন। বললেন, “প্রত্যেকবারই ভাবি এই বুঝি শেষ, কিন্তু আবার একটা বেরোয়। আজও একটা কবিতা এল নতুন। মুখে বললুম, ওই রানী লিখে নিল। প্রত্যেকবারই ভাবি ঝুলি খালি হয়ে গেল, এবারে চুপচাপ থাকি, পারি নে। এ তো পাগলামিই।”

রানী মহলানবিশ বললেন, “পাগলামিই থাকুক। আরও কবিতা আসুক রোজ। কবির দান পেয়েই তো আমরা ভাগ্যবতী।”

রবীন্দ্রনাথ কথাটা কতটা শুনতে পেলেন, কে জানে? আপন মনে বলতে থাকলেন, “সকালবেলার অরুণ আলোর মতো মনে পড়ে কয়েক লাইন…না লিখে রাখলে ওরা যে হারিয়ে যাবে…”

রানী মহলানবিশ কবিকে আত্মমগ্ন হয়ে যেতে দেখে রানী চন্দের কাছে গিয়ে কবিতাটা একবার পড়বার জন্য চেয়ে নিলেন। প্রথমবার বলার পর কবি কয়েক জায়গা রানীকে দিয়ে সংশোধনও করিয়েছেন। কত বড় সাধক যে উনি! কাল রাতে ওই রকম যায়-যায় অবস্থা, অচেতন হয়ে রইলেন জ্বরে, সকালে উঠেই আবার মন্ত্রের মতো কবিতা বলছেন, খুঁতখুঁতানি নিয়ে পরে লেখাটি আবার শুনছেন, শব্দ বদলাচ্ছেন। প্রগাঢ় শ্রদ্ধায় রানী কবিতাটি পড়লেন:

প্রথম দিনের সূর্য

প্রশ্ন করেছিল

সত্তার নূতন আবির্ভাবে—

কে তুমি।

মেলে নি উত্তর।

বৎসর বৎসর চলে গেল,

দিবসের শেষ সূর্য

শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল

পশ্চিম সাগরতীরে,

নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়—

কে তুমি।

পেল না উত্তর।

কবিতাটি শেষ করে অবরুদ্ধ গলায় রানী মহলানবিশ আস্তে উচ্চারণ করলেন, “কবি!”

স্পষ্টভাবেই তিনি বুঝলেন, মৃত্যুকে দেখতে পাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ। দীর্ঘদিন রোগের সঙ্গে লড়াই করে এবার অস্ত্রোপচারের প্রাক্‌মুহূর্তে কবি মানসচক্ষে পড়ে ফেলছেন নিজেরই পরমায়ু, জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সময়। প্রথম দিনের সূর্য এক প্রশ্ন করেছিল, শেষবেলার সূর্যও সেই প্রশ্ন করল, সত্তার প্রকৃত পরিচয় অজানাই থেকে গেল বলে কোনও উত্তর দেওয়া গেল না। গভীর দর্শন আছে কবিতাটিতে, তা ছাপিয়ে প্রধান হয়ে উঠেছে মৃত্যুচেতনা, রোমান্টিকতাকে দূরে সরিয়ে রাখা এক নগ্ন মৃত্যুচেতনা, কান্না-নিরপেক্ষ মৃত্যুচেতনা।

মুখে অবশ্য রবীন্দ্রনাথ মজা করতে ছাড়ছেন না। ডাক্তাররা তাঁর রক্ত নিচ্ছে, নানা রকম পরীক্ষা করছে অপারেশনের আগে। তাই নিয়ে ঠাট্টা করে বললেন, “ডাক্তারদের ভারী বিপদ। আমাকে নিয়ে কত কিছু করছে। কিন্তু কোনও দোষই পাচ্ছে না তাতে! এ তো অদ্ভুত! রোগী আছে, রোগ নেই। ডাক্তারদের মনখারাপ না হয়ে পারে?”

মজাই করলেন, তবে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, যেসব ব্যাপারে তাঁর ঘোর আপত্তি ছিল, সেই সবের প্রতি একটু যেন খোঁচাও মিশে থাকল।

গত এক বছর ধরে অসুস্থ থাকাকালীন দীর্ঘকায় রবীন্দ্রনাথ আধ-শোয়া ভাবে বিছানায় শুতেন। কোমর থেকে ঘাড় এলানো থাকত অনেকগুলো বালিশের গায়ে। হাঁটুর নীচেও মোটা বালিশ থাকত। এখন ডাক্তাররা বলেছেন, রোজ দু’-একটা করে বালিশ কমিয়ে দিতে হবে। কারণ অপারেশনের পর তাঁকে সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে হবে কিছুকাল। ফলে অভ্যস্ত হয়ে নেওয়া দরকার। রানী চন্দ একদিন বিকেলে পায়ের নীচের বালিশটা ঠিক করে দিচ্ছেন, তখন আর-একবার অভিমান-মিশ্রিত মজা করলেন, “আর কেন রে? পা তুলে থাকা আমার আর চলবে না গো, তোদের ডাক্তারদের বিধান। উঁচু ঘাড়ও চলবে না। যে ঘাড় কোনও দিন নামাইনি, আজ তোদের ডাক্তাররা বলছে, ঘাড় নামাও, পা সোজা করো। কী অধঃপতন হল আমার বল দেখি!”

গ্লুকোজ ইনজেকশন দেওয়ার সময়ও ডাক্তারদের হুল ফোটান কবি, “বড় খোঁচার ভূমিকা স্বরূপ এই ছোট ছোট খোঁচা আর কতদিন চালাবে?”

প্রবল অভিমানী কবি অপারেশনে তাঁর অনিচ্ছাকে এভাবেই মৃদু-মৃদু প্রকাশ করছেন। আর, শুভানুধ্যায়ীরা মনে করছেন, ভয় থেকেই কবির এই আচরণ।

৩০ জুলাই অস্ত্রোপচারের দিন ঠিক করা হয়েছে। কবিকে আগে থেকে জানানো হয়নি। কারণ, কবির আগাম উদ্বেগ হবে। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য উদ্বিগ্ন হয়েই ছিলেন। তিনি কিছু একটা টের পেয়ে আগের দিন জ্যোতিবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হে জ্যোতি, কবে দিন ঠিক হল?”

জ্যোতি দ্রুত প্রস্থান করার আগে বলে গেলেন, “ললিতবাবু যেদিন ভাল মনে করবেন।”

দায়সারা উত্তরে রবীন্দ্রনাথের সন্দেহ বাড়ল। তিনি শুনেছেন, তাঁকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করা হবে না, কেবলমাত্র অস্ত্রোপচারের জায়গাটাকে অবশ করা হবে ইনজেকশনে। জ্যোতিকে আবার ডেকে পাঠিয়ে তিনি জানতে চাইলেন, “আমাকে বুঝিয়ে বলো তো, আমার কত দূর লাগবে। আগে থেকে সব বুঝে নেওয়াই ভাল।”

অন্য ডাক্তারদের তিনি কিছু জিজ্ঞেস করেন না। জ্যোতির সঙ্গে তাঁর সহজ সম্পর্ক। তাই ওঁকেই চেপে ধরা। জ্যোতি বললেন, “কী আর লাগবে! কিচ্ছুটি টের পাবেন না। গ্লুকোজ ইনজেকশন যেমন নিচ্ছেন, তেমনই সামান্য লাগবে। এমনও হতে পারে, এক দিকে ডাক্তাররা অপারেশন করছেন, অন্য দিকে শুয়ে শুয়ে আপনি কবিতা বলে যাচ্ছেন।”

“তাহলে বলছ তেমন গুরুতর ব্যাপার নয়?”

“আরে না-না!” বলে সরে পড়লেন জ্যোতি।

রবীন্দ্রনাথের চিন্তা তবু কাটল না। বিকেল নাগাদ রানী চন্দকে ডেকে কবিতা বলতে লাগলেন আস্তে আস্তে, রানী লিখে নিলেন। ২৯ জুলাই বলা সেই কবিতার একটি অমর পঙ্‌ক্তি “মৃত্যুর নিপুণ শিল্প বিকীর্ণ আঁধারে”।

পরদিন অপারেশনের সকালেও কবিকে জানানো হল না আজই তাঁর অস্ত্রোপচার। পাথরের ঘরের পুবদিকের লম্বা বারান্দার দিক ঘেঁষে টেবিল সাজানো হয়েছে। চারদিকে অপারেশনের জিনিসপত্র। নিঃশব্দে ঘর-বারান্দা ধোয়া মোছা হচ্ছে। সাদা কাপড়ের পর্দা টাঙিয়ে অপারেশন-টেবিল আড়াল করা হয়েছে। সেবক-সেবিকারা অনেকেই বুঝতে পারছেন না কেন এই চুপিচুপি আয়োজন!

রানী চন্দ কবির কাছেই আছেন। প্রশান্ত আর রানী মহলানবিশ ভোরেই জোড়াসাঁকো এসেছেন। রানীরা যাঁকে অনুযোগ জানাতে পারতেন, সেই প্রতিমা দেবী অসুস্থ হয়ে শান্তিনিকেতনে পড়ে আছেন। তাঁর ওপর খুব নির্ভর করতেন শেষবেলার রবীন্দ্রনাথ। শিশুর মতো যাবতীয় নালিশও করতেন তাঁর ‘মা-মণি’কে। খুব অসহায় লাগলেও কবি মুখে কিছু প্রকাশ করছেন না। সকালে রানী চন্দকে ডেকে তিনি একটি কবিতা বললেন ক্লান্ত গলায়। রানী লিখে নিলেন নির্দেশ মতো। তখনও কেউ জানে না এটাই বিশ্ববরেণ্য কবির শেষ কবিতা।

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি

বিচিত্র ছলনা-জালে,

হে ছলনাময়ী।

মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে

সরল জীবনে।

এই প্রবঞ্চনা দিয়ে মহত্ত্বেরে করেছ চিহ্নিত;

তার তরে রাখ নি গোপন রাত্রি।

তোমায় জ্যোতিষ্ক তারে

যে-পথ দেখায়

সে যে তার অন্তরের পথ, সে যে চিরস্বচ্ছ,

সহজ বিশ্বাসে সে যে

করে তারে চিরসমুজ্জ্বল।

বাহিরে কুটিল হোক অন্তরে সে ঋজু,

এই নিয়ে তাহার গৌরব।

লোকে তারে বলে বিড়ম্বিত।

সত্যেরে সে পায়

আপন আলোকে ধৌত অন্তরে অন্তরে।

কিছুতে পারে না তারে প্রবঞ্চিতে,

শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে

আপন ভাণ্ডারে।

এতটুকু কোনও ক্রমে বলে রবীন্দ্রনাথ ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে থাকলেন। চরম ক্লান্তিতে চোখ বুজে ফেললেন। বুকের ওপর দু’হাত জড়ো করা। রানী কাগজ-কলম নিয়ে বসে রইলেন গুরুদেবের রুগ্‌ণ, ধ্যানস্থ শরীরের পাশে।

সাড়ে ন’টা নাগাদ চোখ খুলে রবীন্দ্রনাথ ভাঙা গলায় বললেন, “আছিস নাকি?”

রানী শশব্যস্ত হয়ে বললেন, “হ্যাঁ, গুরুদেব।”

ক্লান্ত, দীর্ঘশ্বাস-মেশা স্বরে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “লিখে নে তো—

অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে

সে পায় তোমার হাতে

শান্তির অক্ষয় অধিকার।”

একটুক্ষণ চুপ করে থেকে রবীন্দ্রনাথ জানালেন, “সকালের কবিতাটির সঙ্গে এই তিন লাইন জুড়ে দিস।”

আবার আচ্ছন্ন হয়ে থাকলেন কবি। কিছু পরে শোনা গেল অস্পষ্ট স্বরে বলছেন, “মা-মণি!”

রানী শুনে তৎপর হলেন। প্রতিমা দেবী নিজের অসুস্থতার জন্য শান্তিনিকেতনে পড়ে আছেন। সেই জন্য রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখেছেন দুঃখ করে। রবীন্দ্রনাথকে পড়ে শোনানো হয়েছে চিঠি। এদিকে রানী জানেন, আজই গুরুদেবের অপারেশন হবে, গুরুদেব নিজে তো তা জানেন না। তিনি ‘মা-মণি’র নাম নেওয়ায় সাহস করে রানী বললেন, “শুনছেন গুরুদেব?”

কয়েক বার বলার পর রবীন্দ্রনাথ মৃদু সাড়া দিলেন। রানী বললেন, “বৌঠান বড় ভাবনায় আছে আপনার জন্য। একটা চিঠি লিখবেন বৌঠানকে?”

কবি বলতে লাগলেন, লিখে নিলেন রানী। সেখানে লেখা হল, “..শুনেছি বড়োর আক্রমণ তেমন দুঃসহ নয়। এইসব ছোটো ছোটোর উপদ্রব যেমন। —যা হোক এরও তো অবসান আছে এবং তারও খুব বেশি দেরি নেই। চুকে গেলে নিশ্চিন্ত থাকব।”

চিঠিটা রবীন্দ্রনাথকে দেওয়া হল। কলম নিয়ে চিঠির নীচে অতি কষ্টে কাঁপা কাঁপা হাতে তিনি লিখলেন “বাবামশায়”। হস্তাক্ষরটা দেখলেই বোঝা যায় তাঁর শরীর কোন দুর্দশায় গিয়ে পৌঁছেছে।

এবারও কেউ জানতে পারল না, এটাই কবির শেষ হস্তাক্ষর।

দশটা বাজে। রানী মহলানবিশ, প্রশান্ত মহলানবিশ ততক্ষণে গুরুদেবের ঘরে। রবীন্দ্রনাথ প্রশান্তকে দেখে যুদ্ধের খবর জানতে চাইলেন। রাশিয়ান সৈন্য জার্মানদের একটু প্রতিহত করতে পেরেছে শুনে খুব খুশি হলেন। বললেন, “পারবে, পারবে, ওরাই পারবে। ভারী অহংকার হয়েছে হিটলারের!”

আর কথা বললেন না কবি। চোখ বুজে ফেললেন।

সাড়ে দশটা নাগাদ অপারেশনের প্রস্তুতি শেষ হল। তখন ডা. ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের ঘরে এসে ঢুকলেন। উপস্থিত সকলে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন। শুনে রবীন্দ্রনাথের কী প্রতিক্রিয়া হবে। রানী চন্দ বললেন, “ললিতবাবু এসেছেন, গুরুদেব!”

রবীন্দ্রনাথ চোখ মেললেন।

ললিতবাবু বললেন, “আজ দিনটা ভাল আছে। তাহলে আজই সেরে ফেলি?”

রবীন্দ্রনাথ হকচকিয়ে উঠে বসতে চাইলেন। দুর্বলতায় পারলেন না। মেয়েরা সব তাঁর পাশে ছুটে গেল। তাঁদের চোখেমুখে বিষণ্ণতা।

রবীন্দ্রনাথ একবার বললেন, “আজই?” তারপর সকলের দিকে চেয়ে বললেন, “তা ভাল। এরকম হঠাৎ হয়ে যাওয়া মন্দ নয়।” বলে চুপ করে গেলেন। তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হল বিছানায়। খানিক পরে তাঁকে খুব শান্ত দেখাল। যেন তৈরি হয়ে নিলেন মনে মনে। কাজও ফেলে রাখতে চান না। রানী চন্দকে বললেন, “সকালের কবিতাটা শোনা তো!”

রানী কবির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে জোরে জোরে পড়ে শোনালেন। কবি বললেন, “কিছু গোলমাল আছে। তা থাক। ডাক্তাররা তো বলছে অপারেশনের পর মাথাটা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। ভাল হয়ে তারপর ঠিক করব’খন।”

এগারোটার সময় রবীন্দ্রনাথকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে এসে অপারেশন-টেবিলে শুইয়ে দেওয়া হল। পর্দার কারণে অপারেশন-টেবিলে শোয়ানো গুরুদেবকে অন্যরা আর দেখতে পেলেন না। সবাই কাছে-দূরে উদ্বিগ্ন হয়ে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলেন। রথীন্দ্রনাথকেও দেখা গেল আশেপাশে। পরদার আড়ালে দশ-বারোজন ডাক্তার অস্ত্রোপচারে মগ্ন হলেন। ললিতবাবুই তাঁদের প্রধান। জোড়াসাঁকোর অত বড় বাড়িটা নিঝুম হয়ে রইল। সবাই সময় গুনছে।

বারোটা নাগাদ সব শেষ হল। কবিকে আনা হল তাঁর নিজের খাটে। জানা গেল, অজ্ঞান করার গ্যাস নিয়ে একজন ডাক্তার উপস্থিত থাকলেও তাঁকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করার দরকার হয়নি। কবি যন্ত্রণাকাতর গলায় একজন সেবিকাকে বললেন, “জ্যোতি মিথ্যা কথা বলেছে। আমার খুব লেগেছে জানো!”

রথীন্দ্রনাথ কথাটা জানতে পেরে ডাক্তারদের জিজ্ঞেস করায় জবাব এসেছে, “বিষয়টা অনেকখানি সাইকোলজিক্যাল।”

এদিন সারাটা সময় কবি ঘুমিয়ে থাকলেন। শরীরের তাপমাত্রাও অন্য দিনের চেয়ে বেশ কম—৯৮.৪°।

একদিন পরেই রবীন্দ্রনাথের হিক্কা আরম্ভ হল। খুব কষ্ট পেতে লাগলেন। টোটকা, কবিরাজি কিছুতেই স্থায়ী উপশম হল না। গায়ের তাপও বেড়ে গেল। কেমন নিঃসাড় হয়ে গিয়েছেন। মাঝে মাঝে ‘উঃ’, ‘আঃ’ করছেন। পরদিন কষ্ট আরও বাড়ল। অল্প অল্প জল, ফলের রস খাওয়ানো হল। ডাক্তাররা কেবলই অবস্থার ওপর নজর রাখছেন, আর আলোচনা করছেন। দুশ্চিন্তার আবহাওয়া চারদিকে।

দোসরা অগস্ট আচ্ছন্নতা ভেঙে দু’-একটা কথা বললেন। তাতেই সবার মুখে হাসি ফুটল। ডাক্তার জানতে চাইলেন, “কী রকম কষ্ট হচ্ছে আপনার?”

রবীন্দ্রনাথ হাসবার চেষ্টা করে জবাব দিলেন, “এর কি কোনও বর্ণনা আছে?”

দুপুর থেকে আবার আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন কবি। ডা. বিধানচন্দ্র রায় এসে পরিস্থিতি দেখে গেলেন।

পরের দিন সংকট বেড়ে গেল কবির। কিডনি ঠিক মতো কাজ করছে না। শান্তিনিকেতনে প্রতিমা দেবীর কাছে ফোন করে জানানো হল জোড়াসাঁকোয় চলে আসবার জন্য। বিকেলের ট্রেনেই তিনি রওনা হলেন। সঙ্গে শান্তিনিকেতনের ডাক্তার শচীনবাবু। প্রতিমা দেবীও গুরুতর অসুস্থ। কৃষ্ণ কৃপালনি আর ইংরেজ নার্স বাসন্তীও তাঁর সঙ্গে আসছে। প্রতিমা দেবীর অবস্থা এমন, জোড়াসাঁকোয় পৌঁছানোর পর তাঁকে ব্র্যান্ডি খাওয়াতে হল। রথীন্দ্রনাথ, মীরা দেবী—সবাই মুষড়ে পড়েছেন, কিন্তু কর্তব্য করে যাচ্ছেন একমনে।

চৌঠা অগস্ট খুব সকালের দিকে রবীন্দ্রনাথের একটু সাড়া মিলল। সামান্য খেলেনও। তার পরই আবার আচ্ছন্ন দশা। প্রতিমা দেবী কাছে গিয়ে বললেন, “আমি এসেছি। আপনার মা-মণি”। কোনও সাড়া নেই। এবার কানের কাছে মুখ নিয়ে কথাটা সামান্য জোরে বলার পর চোখ দু’টি জোর করে যেন খুললেন, একটু যেন মাথা নাড়লেন, আবার হারিয়ে গেলেন অবচেতনের অন্ধকারে। সকলের চোখে জল। প্রতিমা দেবী আবার বললেন, “জল খাবেন?”

কী একটা অস্ফুট আওয়াজ বেরোল। তাকে ‘হ্যাঁ’ ধরে নিয়ে প্রতিমা দেবী কবির মুখে ধীরে ধীরে জল দিলেন।

কোনও ওষুধেই কাজ হচ্ছে না। মন খারাপ করা খবরটা ঠাকুরবাড়ির আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিডনি ফেল করেছে রবীন্দ্রনাথের।

পাঁচই অগস্টও আচ্ছন্ন, অচৈতন্য অবস্থায় কাটল। বিকেলে বিধানচন্দ্র রায়, নীলরতন সরকার এলেন। কবিকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপারেশন করানোয় বিধানবাবুর মতই ছিল প্রবলতম। তিনি মনে করেছিলেন, দেশবাসীর স্বার্থে রবীন্দ্রনাথের নিরাময় প্রয়োজন, এক্ষেত্রে কবির নিজের মত ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রয়োজনীয়তার বাস্তব দিকের ওপরেই তিনি জোর দিয়েছিলেন, কবির আবেগ বা ইচ্ছাকে গৌণ মনে করেছিলেন। ডা. নীলরতন সরকার কিন্তু ভিন্ন মত পোষণ করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, রবীন্দ্রনাথকে সাধারণ মানুষ বা সাধারণ রোগী মনে করলে ভুল হতে পারে।

যা হোক, অপারেশনের পরে রবীন্দ্রনাথের পরিস্থিতি দ্রুত আশঙ্কাজনক হওয়ায় অন্যদের মতো বিধানবাবুও বারবার ছুটে এসেছেন, সাধ্যমতো পরামর্শ দিয়েছেন। এই করুণ দৃশ্যও তাঁকে দেখতে হয়েছে যে, তাঁর অনুরোধে কবির মুখে জল ঢেলে দেওয়া হলে তা দু’ঠোঁটের কোল বেয়ে বাইরে গড়িয়ে পড়েছে।

রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ মানুষেরা অনেকেই ক্ষুব্ধ। কবি স্পষ্টই বলেছিলেন, যেন তাঁর শান্তিনিকেতনে মৃত্যু হয়। নিজের শেষ সময়টাকে টের পেয়ে অস্ত্রাঘাতহীন থাকতে চেয়েছিলেন। কিছুতেই কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আসতে চাননি। রাতের পর রাত জাগা কাছের মানুষরা তাই কবির এই পরিণতিতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন, কর্তব্যের আড়ালেই তাঁরা চোখের জল মুছছেন।

নীলরতন সরকার কবির দীর্ঘ দিনের সুহৃদ। যতক্ষণ ছিলেন, অচেতন রবীন্দ্রনাথের ডান হাতের ওপর পরম ভালবাসায় নিজের হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। যাওয়ার সময় তিনি বিশেষ চোখে রবীন্দ্রনাথকে আবার দেখলেন, সেই ভঙ্গিটি যেন চিরবিদায় যাওয়ার। মেয়েরা অনেকেই কেঁদে ফেললেন তখন।

স্যালাইন দেওয়া হল রবীন্দ্রনাথকে। অক্সিজেনও জোগাড় হয়েছে, যদি লাগে। রবীন্দ্রনাথের নাক বাঁ দিকে হেলে গিয়েছে, গাল ফোলা, বাঁ চোখ ছোট হয়ে এসেছে, তার রং লাল, হাত-পায়ের আঙুল ঘেমে যাচ্ছে।

অগস্টের ছয় তারিখে জোড়াসাঁকোর বাড়ি মানুষের ভিড়ে ভরে গেল। কবির মৃত্যু-সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে, খবর রটতেই মানুষ দলে দলে ছুটছে জোড়াসাঁকোয়। ভিড় ঠেকানো যাচ্ছে না কিছুতেই।

বিভ্রান্ত রানী মহলানবিশ রথীবাবুর অনুমতি নিয়ে কবিরাজ বিমলানন্দকে ডেকে আনতে গেলেন। উনি বললেন, “আমার কাছ থেকে মানুষটাকে কেড়ে নিয়ে অপারেশন করালে। এখন তো আমার কিছুই করার নেই।”

রানী কাতর ভাবে বললেন, “একবার শেষ চেষ্টা করুন না!”

বিমলানন্দ বললেন, “শেষ চেষ্টা করতে গেলে আগে ওই এম.বি.৬৯৩ ওষুধটা বন্ধ করতে হবে। নাহলে আমি ওষুধ দিলে কাজ হবে না, আরও খারাপ হবে।”

রথীন্দ্রনাথ এই বৃত্তান্ত শুনে রানীকে বললেন, বিধানচন্দ্র রায়কে গিয়ে কবিরাজ মশাইয়ের কথাটা জানাতে। বিধানচন্দ্র রায় সব শুনে খেপে লাল। রানীকে ধমক দিলেন। সেই সঙ্গে বললেন, “কবির এই রকম অবস্থায় একদিনের জন্যও এম. বি. বন্ধ করা যাবে না। আমার মতে আরও বেশি ডোজে দেওয়া উচিত হবে।”

বিফল-মনোরথ রানী মুখ কালো করে ফিরে এলেন। তাঁর বাড়িতে স্বামী গুরুতর অসুস্থ। এদিকে রবীন্দ্রনাথ। প্রতিদিন বেলঘরিয়া-জোড়াসাঁকো করে তিনি ক্লান্ত। বিশেষত স্নায়ুচাপে বিধ্বস্ত। তাঁকে ভেঙে পড়তে দেখে কবিকন্যা মীরাদেবী বললেন, “তুমি ভাই এবার বাড়ি যাও। প্রশান্ত অসুস্থ, সে একা রয়েছে।”

ছলছল চোখে রানী বললেন, “আমি যে কবিকে কথা দিয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত ওঁর কাছে থাকব।”

মীরাদেবী সস্নেহে বললেন, “তুমি যাও। সেরকম সময় যদি হঠাৎ উপস্থিত হয়, আমি তোমাকে ফোন করে ডেকে নেব।”

শ্রাবণ-পূর্ণিমার রাত। চারদিক চাঁদের আলোয় থইথই করছে। প্রতিমা দেবী বারান্দায় দাঁড়িয়ে টের পাচ্ছেন কোমল জোছনায় কার যেন কান্না লেগে আছে। উঠোনে নিঝুম হয়ে আছে ডাক্তারদের গাড়ি। বাবামশায়ের ঘরে আলো জ্বলছে। লোকজন পা টিপে-টিপে যাতায়াত করছে। খবর আসতে পারে যখন-তখন, রবীন্দ্রনাথ চলে গিয়েছেন। মর্তলোকের লীলা সাঙ্গ হয়েছে তাঁর। ভরা শ্রাবণ আজ বৃষ্টি লুকিয়েছে। মানুষের চোখের জলে তাই বুঝি মাটি ভিজবে এবার। একা একা অঝোরে কাঁদছিলেন প্রতিমা দেবী। একসময় সুধাকান্ত ও রানী চন্দ এসে তাঁকে বললেন, “চলুন একবার।” রবীন্দ্রনাথের ঘরের দিকে ধীরে পা বাড়ালেন প্রতিমা। শেষ সময়ে বাবামশায়ের পাশে নিকটজনেরা জড়ো হচ্ছে।

রাত বারোটার পরেই কবি অনন্তের দিকে যেন যাত্রা শুরু করলেন। রানী গুরুদেবের পায়ের কাছে বসে দেখছেন, রবীন্দ্রনাথের পুবমুখী শিয়রের ওপাশের আকাশে শান্ত, স্নিগ্ধ পূর্ণিমার চাঁদ। জোছনায় চন্দন ঝরে পড়ছে বিশ্বকবির অনন্তলোকগামী দুই ডানায়। ওই কবি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছেন। রানী থরথর করে কাঁপতে লাগলেন। গান ভেসে আসছে ‘কে যায় অমৃতধামযাত্রী…’

রাত দুটোয় রানী মহলানবিশ ফোন পেলেন। চারটে থেকে নিকট-আত্মীয়, বন্ধু-পরিজন, প্রিয়জন দলে দলে আসতে লাগলেন। ঠাকুরবাড়ির বাইরে সকাল থেকে কৌতূহলী জনতা। সাতটায় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় কবির শেষশয্যার পাশে উপাসনা করলেন। মেয়েরা গাইছে কবির রচিত ব্রহ্মসংগীত। ন’টা থেকে অক্সিজেন দেওয়া শুরু হল। গুরুদেবের দু’পায়ে হাত রেখে রানীরা টের পেলেন ক্রমশ উষ্ণতা কমে আসছে। ১২-১০ মিনিটে কবি সম্পূর্ণ চলে গেলেন। শ্রাবণের শরীরে হাত রাখল চিরবিষাদ।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন