আশাপূর্ণা দেবী
পাপিয়াকে দেখে বাড়ির সকলে হৈ হৈ করে উঠলো।
প্রথমটায় তার হঠাৎ আবির্ভাবে। কারণ ঠিক কবে নাগাদ ফিরতে পারবে জানা ছিলো না বলে। পরবর্তী হৈ হৈ–’এই ক’দিনেই তোর কী চেহারা হয়ে গেছে রে?’ বলে।
দাদু বলে ওঠেন, রুগী দেখতে গিয়ে কী নিজেই রুগী বনে গেছলি না কি ভাই? অসুখ-টসুখ করেছিলো বুঝি কিছু?
এ মা! অসুখ করতে যাবে কেন? পাপিয়া প্রতিবাদ করে ওঠে।
যেন, ‘অসুখ করাটা’ একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার।
তাহলে এমন রোগা কালো শুকনো রুক্ষু একখানা চেহারা বানিয়ে এলি যে?
এ প্রশ্ন জনে জনে।
অবশ্য কেউ কেউ নিজেরাই তার উত্তর আবিষ্কার করছেন। পুরুলিয়ার মতো একটা খারুখা দেশ, তায় আবার কালটা গরমকাল এবং কাজটা রোদের মধ্যে ঘোরা। এই ভ্রহস্পর্শের ফলেই এমন হয়েছে।
অতএব এখন তাড়াতাড়ি চান করে এবং খেয়েদেয়ে বিশ্রাম করো। অতঃপর বেশ কয়েকটা দিন ওই বিশ্রাম বাবদ ব্যয় করো। খাও, ঘুমোও, গাল-গল্প করো। নচেৎ চেহারাটিকে বাগে আনতে পারবে না।
চমৎকার! পাপিয়া হেসে ওঠে, আমার শরীর তো ঠিকই আছে। চেহারাটাকে নিয়ে সবাই এমন হৈচৈ করছো কেন?
করবো না? আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখগে না একবার, ‘কেন’ করছি। সঙ্গে তো আর আয়না-আশী নিয়ে যাসনি!
কেন নিয়ে যাবো না? আয়না চিরুনি তো তুমিই ব্যাগে ভরে দিয়েছিলে গো বড়মা!
ওঃ। সেই চার ইঞ্চি আয়নাটুকু। তাতে ভারী দেখা যায়। যাকগে, সোজা কথা আর দু-তিনটে দিন অন্তত ছুটি নে বাপু।
বলে তার বড়মা সন্ধ্যাতারা তাড়াতাড়ি এগিয়ে যান পাপিয়ার জন্যে যে লেবুর শরবৎ বানাতে বলে এসেছিলেন কাকে যেন, সেটা হয়েছে কিনা দেখতে।
পাপিয়ার ছোটকাকি বলে, ও বড়দি, লেবুর শরবৎ নয় এই একগ্লাস ‘রাসনা’ বানালাম।
রাখ তো তোদের ‘রসনা’! ওতে আবার আছেটা কী? ওতে শরীর ঠান্ডা হয় নাকি? টাটকা লেবুর রসের গুণই আলাদা! কেন লেবু ছিলো না ঘরে?
ও মা। থাকবে না কি? কত।
তবে বাবু তাই করে ফেল আর এক গ্লাস। তোদের ওই ‘রসনা’ আর কারুর রসনায় ঢালগে যা।
হেসে ওঠে সবাই।
এবং অতঃপর মা খুড়ি ছোটবোন ‘কাজের লোক সকলেই তৎপর হয় পাপিয়ার যত্নবিধানের জন্য।
একেই তো এই মেয়েটা তার স্বভাবগুণে, শৈশব থেকেই বাড়ির সকলের বিশেষ প্রিয়পাত্র।…প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে তার রূপটি। যেটি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ষোলোকলায় বিকশিত হয়ে উঠেছে।…তাছাড়া এ বাড়িতে কবে আবার এমন একখানা বিদুষী মেয়ে সৃষ্টি হয়েছে? মেয়ে ডাক্তারী পাশ করে ধন্যি ধন্যি ফেলে বাড়িতে একটা রেকর্ড স্থাপন করে রেখেছে। আবার এই আর এক নতুন রেকর্ড। এ বাড়ির আর কোনো মেয়ে কি কখনো একা বাড়ির বাইরে থেকেছে এতোদিন পুরুষের মতো কাজের দায়িত্বে?
এই মুখুয্যে বাড়িতে পাপিয়া তাই একটি ‘নিধি’। তবু সবকিছু ছাপিয়ে ওঠে তার সুন্দর মধুর স্বভাব। সকলের মতে, বড়মার হাতে মানুষ হওয়ার কারণেই তাঁর স্বভাবটি পেয়েছে।
তবে বড়মা হচ্ছেন শুধুই খনির হীরে। এ মেয়ের ব্যাপারে তুলনা করা যায়, ছিলেকাটা, পালিশ করা হীরে!
.
স্নানের পর সত্যিই আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো পাপিয়া। দোতলায় তার মায়ের ঘরের মস্ত আলমারিটার একখানা পাল্লাজোড়া আয়না। আগেকার কালে যা সহজেই গৃহস্থলভ্য ছিলো। এখন অবশ্য আর গৃহস্থজনের পক্ষে ততো সহজলভ্য নয় এ হেন জিনিস।
এভাবে নিজেকে অনেকক্ষণ ধরে নিরীক্ষণ করে দেখা, পাপিয়ার স্বভাবে মেলে না। অথচ আজ তা দেখছে। সত্যিই বটে, গায়ের ত্বকে রীতিমতো একটি মলিন ছোপ! চোখের কোলে কালি, মুখটা যেন কাঠ কাঠ। চুলগুলো পর্যন্ত যেন ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে।
সত্যি, এতো খারাপ হবার কারণ কী?
আর যারা গিয়েছিলো, সেই ছেলেগুলোর চেহারা তো এমন কিছু বদল হয়নি!
পাপিয়া ‘মেয়ে’ বলে? কমনীয় কায়া বলে?
না কি পাপিয়ার মনের মধ্যে আচমকা একটা ঝড় বহে যাওয়ার জন্যে?
পাপিয়া কি এ ঝড়ের জন্য প্রস্তুত ছিলো?
জন্মাবধি যাকে দেখে আসছে, একান্তই আত্মীয়জনেদের একজন হিসেবে, তার জন্যে কখন জমে উঠেছিলো এই আবেগের সমুদ্র?…যে সমুদ্রে সেদিন হঠাৎ ঝড় উঠলো—তাকে অকস্মাৎ অপ্রত্যাশিত আর অভাবিত একটা জায়গায় দেখে!
কিন্তু শুধুই কী জায়গাটা অভাবিত? তার সাজসজ্জা? পরিবেশ? যা দেখে হঠাৎ বুকের মধ্যেটা ভীষণভাবে মুচড়ে উঠেছিলো! হ্যাঁ, সেই মুচড়ে ওঠার মহা মুহূর্তেই পাপিয়া নিজেকে আবিষ্কার করে বসেছিলো। মুখোমুখি হয়েছিলো তার সদ্যজাগ্রত আপনি নারীসত্তার সঙ্গে।
এখন পাপিয়া খুব ভীত হচ্ছে।
পাপিয়া তার এই নতুন ‘আমি টাকে নিয়ে কী করবে? সামনে যে গভীর শূন্যতা। অকূল সমুদ্র! অথচ এই ‘আমি টাকে একান্তে বসে ভাবভাবনা করার অবকাশ নেই। পাপিয়া যে আরো মস্তবড় একটা তথ্যের আবিষ্কারক হয়ে বসেছে। এখন তাই সকলেই তার ‘সাক্ষাৎকার চায়। তার প্রতিটি কথা শোনবার জন্যে উদ্গ্রীব।
.
পুরুলিয়া থেকে ফেরার সময় চলন্ত ট্রেনে বসে পাপিয়া প্রথমটা ভেবেছিলো, যে ঝড় উঠেছে, সে ঝড় তার নিজের মধ্যেই থাক ঢাকা! কী দরকার তাকে বাইরের জগতের সামনে উদ্ঘাটিত করবার? সেই নির্মম নিষ্ঠুর হৃদয়ে’র বালাইহীন লোকটা তো অন্য কারো হৃদয়বেদনার ধার ধারবে না। কে জানে, হয়তো নিজের অজ্ঞাতবাসটা ধরা পড়ে গেছে জেনে ফেলে, আবার অন্য কোনো অজ্ঞাত আস্তানার সন্ধানে পলাতক হবে!
পাপিয়ার দেওয়া খবর পেয়ে যদি তার ব্যাকুল আত্মীয়জনেদের কেউ ছুটে তাকে দেখতে যায়? যদি তাকে ধরে নিয়ে আসবো ভেবে অবুঝ আশা পোষণ করে তার জন্যে ঘর গোছাতে বসে? তার থেকে বলে কাজ নেই।
হ্যাঁ, এই রকম অনেক কিছুই ভাবতে ভাবতে এসেছিলো পাপিয়া! এসেও ভেবেছে। তাই যেটা স্বাভাবিক হওয়া উচিত ছিলো সেটা হয়নি। এসেই বলে উঠতে পারেনি, ও বড়মা গো! তোমার নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ভাইপোটার উদ্দেশ পেয়ে এলাম।’
শুধু নানা চিন্তাও নয়, যেন সেটি বলে ফেললেই পাপিয়ার একান্ত নিজস্ব একটি সম্পদ পাঁচজনের হয়ে যাবে।
কিন্তু পাপিয়া তো কখনো এমন স্বার্থপর ছিলো না। পাপিয়া, নিজের লুকোনো সম্পদ আগলে রাখার চিন্তা করছে? আশ্চর্য বৈকি। না, বোধহয় ওই চিন্তার সঙ্গে একটা ভয়ও কাজ করছিলো।…সেই প্রসঙ্গ তুলতে হলে কীভাবে তুলবে পাপিয়া? যদি কেউ বুঝে ফেলে? যদি কেউ পাপিয়ার মুখের চেহারার মধ্যে দিয়ে ভিতরের লেখাগুলো পড়ে ফেলে?
চিরসরল দ্বন্দ্বহীন চিত্ত এই মেয়েটার মধ্যে চলেছিলো অনেক চিন্তার টানাপোড়েনের দ্বন্দ্ব।
তবু শেষ পর্যন্ত বিবেকের জয় হলো।
পাপিয়া যদি নীরব থাকে, বিবেকের কাছে কী জবাব দেবে?
.
নয়নতারা পাপিয়ার হাতটা চেপে ধরে ডুকরে উঠলেন, তুই তারে দেখে অ্যালি? আপন চোক্ষে? অ্যাঁ?
পাপিয়া একটু হাসবার চেষ্টা করে বলে, তো কী আর করা? জানা তো ছিলো না দিদা। থাকলে আপনার চোখ দুটো ব্যাগে ভরে নিয়ে যেতাম।
সত্যব্রত বললেন, তুমি তার কাছে আমাদের অবস্থা বোঝাতে পেরে উঠলে না দিদিভাই?
কই আর পারলাম দাদা?
পারবে কী করে? চিরকেলে নির্মায়িক যে। সন্ন্যাসীর নির্মমতা!
.
ডুকরে উঠেছিলো নীহারিকাও। বলেছিলো, পাপিয়া! তুমি তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসতে পারলে না? কটকট করে শুনিয়ে দিতে পারলে না? বলতে পারলে না যে লোক নিজের মা-বাপের দুঃখ বোঝবার ক্ষমতা ধরে না, সে আবার কোন মুখে পরের দুঃখু দেখবার ভান করতে বসে?
আদিত্য বললেন, আমি জানতাম। ওই হাড়হারামজাদা তারকটাই নাটের গুরু। ওর সহায়তা না পেলে এতোটা দূর এগোতে পারতো না হতভাগা ছেলে!
বলেছে জনে জনেই
শিলাদিত্য বললো, আমি এখুনি সেখানে চলে যেতে পারি পাপিয়া তোমার কাছে ডিরেকশান নিয়ে। তবে নিয়ে আসতে পারবো, এমন আত্মবিশ্বাস নেই। হয়তো ইচ্ছে করেই আমাকে ভাগাবার জন্যে খানিকটা অপমান করে বসবে! ‘হৃদয়’ বলে তো কিছু নেই।
শিলাদিত্যর মধ্যে যে ‘হৃদয়’ নামক বস্তুটা আছে, এটা একসময় এই মেয়েটার কাছে ব্যক্ত করবার খুবই চেষ্টা করেছিলো শিলাদিত্য। সেই অর্বাচীন যুগ পার হয়ে গেছে। এখন শিলাদিত্য বেশ একখানা মজবুত গাছে নৌকো বেঁধেছে। কাজেই বেশ সহজভাবেই কথা কয় পাপিয়ার সঙ্গে।
আর এ বাড়ির শেষতম সদস্যটি? অথবা সদস্যাটি? মেখলা? অথবা টুসকি? সে পাপিয়ার মুখের দিকে একটু তাকিয়ে থেকে আস্তে বলে, মনের পাপ ব্যক্ত করে ফেলছি পাপিয়া, তোকে একসময় প্রতিদ্বন্দ্বিনী ভেবে দারুণ হিংসেয় জ্বলেপুড়ে মরেছি। এখন দেখছি দারুণ হয়েছিলো ভুলটাই। তুই যে এই গাঙ্গুলীদেরই ঘরে মরে পড়ে আছিস, তখন তা বুঝতে পারিনি।
পাপিয়া চমকে উঠে বলে, তার মানে?
মানে না বোঝবার মতো বোকা তুই নস বাবা! তায় আবার এখন ডাক্তার হয়েছিস! শরীরের রোগ নির্ণয়ের সঙ্গে মনের রোগও ধরা পড়ে ডাক্তারদের কাছে। ছেলেবেলার মতো আবার তোকে ‘তুই’ করেই কথা বলছি ভাই। হঠাৎ তোকে খুব আপনজন বলে মনে হচ্ছে বলেই।
পাপিয়া মুখ নিচু করে বসে থাকে চুপচাপ!
টুসকি আবার বলে, ভাবতাম দাদাকে জব্দ করতে পারে হয়তো এই একমাত্র জিনিসটি। একটা মেয়ের ভালোবাসা অনেক কিছু ওলট-পালট করে দিতে পারে। জানি না—জব্দ হবে কিনা। জানি না তোর কতটা শক্তি!
আমার এক কণাও শক্তি নেই টুসকি! পাপিয়া বলে, কিন্তু তুমি কী করে? মানে কী করে এমন অদ্ভুতভাবে—
বুঝে ফেললাম? এই তো? দ্যাখ পাপিয়া, একটা মেয়ে-মনের কাছে অন্য মেয়ের মন ধরা পড়বেই। এ জিনিস অধরা থাকে না। তোর মুখ-চোখ দেখে তো বুঝে ফেললাম সত্যিই মরে বসে আছিস! এখন কী করা যায় বল তো?
আমি কী বলবো?
তুই-ই তো বলবি। তোকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমার ওই দাদাটাকে এলোমেলো পথ থেকে টেনে নিয়ে আসবি।…ওরা জানে না, ওদেরকে যারা পথ দেখাবার ছলনা করে দিশেহারা করেছে, তারা কী পরিমাণ সেয়ানা! তারা ভণ্ড, ধাপ্পাবাজ, স্বার্থপর। সরল-বিশ্বাসী ছেলেমেয়েগুলোকে একখানা মহৎ আদর্শের লক্ষ্যের ফাঁকে ফেলে তাদের দিয়ে কাজ বাগায় আর নিজের আখের গোছায়। আর যদি ওই বেচারাগুলোর কখনো চোট ফোটে, যদি এ পথ থেকে বীতস্পৃহ হয়ে সরে যেতে চায়, তাহলে তার গর্দান!
পাপিয়া চমকে বলে, গর্দান মানে?
‘গর্দান’ মানে গর্দান! ওর আর আলাদা কোনো মানে নেই। তুমি যতোক্ষণ আমার ছাতার তলায়, ততোক্ষণ আমি তোমার রক্ষক। কিন্তু তুমি যদি আমার ছাতার তলার ছায়াটাকে অপছন্দ করে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে আলোর সন্ধান করতে যাও, ব্যস, এ পৃথিবীতে থাকবার অধিকারটি তুমি হারাবে। কারণ—তুমি আমার দলের মধ্যে থেকে কাজ করে, আমার অনেক গোপন রহস্য জেনে ফেলে বসেছো। এরপর আর তোমায় পৃথিবীতে রাখা সেফ্? তখন—যে আমি একদা তোমায় ঘর বানিয়ে দিয়েছি, সেই আমি তোমার ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারবো!
পাপিয়া আস্তে বলে, তুমি এইসব নিয়ে এতো ভাবো টুসকি?
টুসকি একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে, দাদাই আমায় ভাবিয়েছে। দাদা ছিলো এ সংসারের কাছে আশা ভরসা ভবিষ্যৎ। সেই দাদা এইভাবে সংসারছাড়া হয়ে গেল! প্ৰথম দিকে ভাবতাম, আদর্শের জন্যে তো এমন করেই থাকে। সেটা সংসারকে মেনে নিতেই হয়। কিন্তু যখন চোখে পড়তে থাকলো, ওই ‘আদর্শ টা হচ্ছে একটা ফাঁকা বুলি, ভেক, তখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছি, আর আদর্শদাতা নেতাদের রীতিনীতি দেখে দেখে—
চুপ করে যায় টুসকি।
.
বাড়ি ফিরে যাবার সময় নীহারিকা বলে, তোমাকে আর কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাবো পাপিয়া। জানাবার ভাষা নেই। তুমি আমার বাপ্পার খবরটাও তো এনে দিলে।
বাপ্পার পিসি সন্ধ্যাতারা বলেছিলো, তোকে যে কী বলে আশীর্বাদ করবো রে পাপিয়া, ভাষায় কুলোবে না।
বাপ্পার মা বললো, কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাবো!
পিসির বাক্যের উত্তর দেয়নি পাপিয়া। দেবার কিছু ছিলো না। মায়ের বাক্যের উত্তর দিলো। বললো, ‘কৃতজ্ঞতা’ বলছেন কে মামীমা? এতে আমি দুঃখ পেলাম। আমাকে আপনি কৃতজ্ঞতা জানাবেন?
নীহারিকা একটু অপ্রতিভ হয়। বলে, না, মানে—মনের অবস্থা তো বুঝতেই পারছো?
পাপিয়া বললো, তা তো নিশ্চয়ই পাচ্ছি মামীমা, কিন্তু কৃতজ্ঞতা কেন? এতে আর আমার কৃতিত্ব কী? দৈবাৎই দেখা হয়ে গেল এই মাত্র!
চলে এসেছিলো!
.
তা জীবনের অনেক কিছুই তো দৈবাৎ ঘটে!
না হলে মেখলা গাঙ্গুলী যখন তার সদ্যলব্ধ একটু দীনহীন চাকরির দৈনিক কর্তব্য সেরে বাসের রাস্তার দিকে এগিয়ে চলেছে, তখন হঠাৎ একখানা গাড়ি থেকে একটি বিধবা মহিলা মুখ বাড়িয়ে মেখলাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবেন কেন?
এটা দৈবেরই কারসাজি।
মেখলা অবাক হয়ে কাছে যেতেই মহিলা বলে ওঠেন, যা কিছু কথা পরে হবে মেখলা। সব আগে গাড়িতে উঠে পড়ো।
মেখলা তো হতভম্ব।
কে ইনি? কথা বললেন যেন পরিচিতের মতো।…মেখলারও মনে হচ্ছে মুখটা বেশ যেন চেনাচেনা! অথচ চট করে মাথায় আসছে না, কোথায় দেখেছে।
অতো ভাবনা করছো কেন গো মা? আমায় দেখে কী মনে হচ্ছে একটা চোর ডাকাত? বলে একটু হাসলেন আর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতাঘাতের মতো মনে পড়ে যায়। আর মনে পড়ে মাথাটা হেঁট হয়ে যায়। ছি ছি, যুধাজিতের মারে টুসকি চিনতে পারলো না?
আস্তে গাড়িতে উঠে, হেঁট হয়ে গাড়ির মধ্যেই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে গেল। করতে অবশ্য পারলো না। কারণ বনছায়া তার হাতটা চেপে ধরে থাক থাক বলে, পাশে বসিয়ে নিয়ে আবারও একটু হেসে বলেন, এখনো যেন ঠিক চিনতে পারোনি মনে হচ্ছে-
টুসকি তখন বলে ওঠে, বাঃ। চিনতে পারবো না? আপনার নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশ উৎসবে নেমন্তন্ন গেলাম—
যাক। তাহলে চিনেছো। কিন্তু নেমন্তন্ন গেলে ঠিকই, কিন্তু ‘খেলে’ কী? সেইদিনই তোমার হঠাৎ কী রকম শরীর খারাপ হলো মনে আছে তো? না খেয়ে চলে এলে। আমি তো দুঃখে মরি।…তো সেই অবধি ছেলেটাকে কত বলছি, ‘আর একদিন ডাক না বাবা তোর ওই বন্ধুদের।’ তো বলে কী, পাগল হয়েছো? বিনা উপলক্ষ্যে আসতে যাবে কেন? …আচ্ছা বাপু, তুমিই বলো, উপলক্ষ্য আমি পাচ্ছি কোথায়? তাতে তো তুই-ই বাদ সেধে বসে আছিস। তো দুষ্টু ছেলেটা বলে কিনা—পাঁজিপুঁথি খুলে দেখো না যদি তেমন কোনো ব্রতট্ৰত পেয়ে যাও। জম্পেস করে তাহলে ওই একখানা ব্রত ঘটা করো। সেকালে তো বুড়িরা এইসব করতো শুনেছি।
মেখলা একটু জোরালো গলায় বলে ওঠে, আপনাকে ‘বুড়ি’ বলা হয়?
তা বাছা, বুড়ি ছাড়া আর কী? পঞ্চাশ পার করতে চললাম!
মেখলার কেন কে জানে মনে পড়ে গেল, তার মা পঞ্চাশ পার করেই বসে আছেন। কিন্তু তিনি কী নিজের সম্পর্কে ওই ‘বুড়ি’ শব্দটা প্রয়োগ করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন? তারপরেই অবশ্য মনে এলো, আমাদের অভ্যস্ত মানসিকতায় থানপরা মহিলাকে বুড়ি ভাবা হয়।
বনছায়া বলেন, তা বাপু বুড়ি হলেও ওই সব পাঁজি-পুঁথির ব্রতট্রত বুঝি না। তাই এখন একটি চালাকি খেলেছে। এই একখানা ড্রাইভারও গাড়ি ধরিয়ে দিয়েছে, বলে যতো ইচ্ছে মন্দির দেখে বেড়াও। আর একে রাস্তা চিনিয়ে চিনিয়ে যতো ইচ্ছে আত্মীয় বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বেড়াও। তা হলে সারাক্ষণ একা থাকার কষ্ট হবে না।
গাড়ি চলতে থাকে। মেখলা অবাক হয়ে বলে, বাড়িতে আর কেউ নেই?
আর কে থাকবে? ছেলে তো সারাদিন কাজের ধান্দায়। ওই যা দুটো কাজের মেয়ে আছে। তো তারা তো আর ‘সঙ্গ’ হয় না!
মেখলা আস্তে বলে, কিন্তু আপনার আরো ছেলেমেয়ে আছেন না?
বনছায়া একটা নিঃশ্বাস ফেলেন, তা আছে। তো তাদেরও তো নিজস্ব সংসার আছে। বড়ছেলে দুর্গাপুরে থাকে। আর মেয়ের সংসারে সেও একা!
বলেন, তবু নিঃশ্বাসটা চাপতে পারেন না।
মেয়ে যে কী অদ্ভুত একবগ্গা। সপ্তাহে সপ্তাহে তাদের সকলকে নেমন্তন্ন করে পাঠায় বটে যুধাজিৎ। তারাও যে না আসে তা নয়। খাওয়াদাওয়া, কী সব ক্যাসেট টেনে বার করে করে গান শোনা, সিনেমা দেখা সবই করে বর আর ছেলেমেয়েকে নিয়ে, কিন্তু ভাবটা এমন দেখায়, যেন নেহাৎ মার চিত্ত-বিনোদনের জন্যেই তার এই আসা সংসারের শত অসুবিধে করে। এই দেড় দিন এখানে পড়ে থাকার জন্যে তার কী কী অসুবিধে হয় তা শোনাতে থাকে।
জামাইটি অবশ্য ঠিক ওরকম নয়। তার কথাবার্তা বেশ দরাজমার্কা। মাঝে মাঝে বৌকে থামায়। বলে, কেন মিথ্যে টেনেবুনে সমস্যা জোটাচ্ছো বাবা। দিব্যি মুফতে গাড়ি চড়ে আসছো যাচ্ছো, ভালোমন্দ খাচ্ছো-দাচ্ছো, সংসারের খাটুনি খাটতে হচ্ছে না। পয়সা বাঁচছে দু’দিনের, তোফাই তো লাগা উচিত।…বৌ ঝঙ্কার দেয়, হ্যাঁ, তোমার মতো পেটুকের উপযুক্তই কথা!
মোট কথা, ‘মেয়ে আসার’ যে আনন্দ, সেটা উপভোগ করতে পারেন না বনছায়া, সবসময় তটস্থ থাকেন, পাছে কিছু এদিক ওদিক হয়ে যায়। মেয়ের মানের কানা খসে যায়। এবং বলে বসে, আর কখনো আসবো না’।
হ্যাঁ, এই আশঙ্কা বনছায়ার সর্বদা।
ছেলেবেলা থেকেই মেয়েটা ওইরকম। অকারণ মান-অভিমান। বাপ মারা যাওয়ার পর আরো ধারণা হয়েছে, মা তলে তলে ছেলের সঙ্গে পরামর্শ করে মেয়েকে বঞ্চিত করছে। কারণ মা মেয়ের থেকে ছেলেকে বেশী ভালোবাসে।
সন্দেহটা হয়তো অমুলক নয়। কিন্তু তার কারণটা ‘মেয়ে’ এবং ‘ছেলে’র মূল্যবোধের তারতম্যে নয়, ছেলের গুণের জন্যে।
বনছায়া নিজেকে সামলে নেন। তাড়াতাড়ি বলেন, আসল কথাটাই জিগ্যেস করা হয়নি। তোমার দাদার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি?
টুসকি আস্তে বলে, খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে ফিরে আসা সম্পর্কে কোনো ভরসা নেই।
বনছায়াও আস্তে সন্তর্পণে বলেন, কোথাও কোনো ভুলভাল বিয়ে করে ফেলে সংসার পেতেছে বুঝি?
মেখলা এখন হেসে ওঠে।
হায়। হায়। তা হলেও তো এরকম ভালো হতো। মনে হতো সে নিজে অন্তত সুখে আছে।…একদম উল্টো।…কোথায় কোনখানে আদিবাসীদের উন্নতি ঘটাবে বলে, তাদের সঙ্গে পড়ে আছে। তাদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করছে।
আদিবাসী! বনছায়া বলেন, তার মানে ভালো কাজই করছে মনে হচ্ছে।
টুসকি বলে, ভাবতে গেলে অবশ্যই তাই। তবে আমাদের দিক থেকে ভাবতে গেলে— মানে আমরা তো সবাই স্বার্থপরই।
বনছায়া হঠাৎ টুসকির একটা হাত চেপে ধরে যেন ব্যাকুলভাবেই বলে ওঠেন, ঠিক বলেছো মা। আমরা সবাই স্বার্থপর। আমরা আমাদের সন্তানকে তার নিজের মতন করে বাঁচতে দিতে চাই না। আমার মনের মতো করে চালাতে চাই তাকে। জিতু তাই বলে আমায়। বলে, ‘মা, তোমাদের মেয়েদের মনের জগতে জীবনের একটাই ছাঁচ আছে। সেটা হচ্ছে ছেলেমেয়ে হবে, তাদের যতোটা সাধ্য ভালোভাবে খাইয়ে পরিয়ে বড় করে তুলে, নিজেদের বাছাই করা এক একটা বর কী কনে জুটিয়ে বিয়ে দিয়ে, শেষ জীবনে ছেলেপুলে নাতি-নাতনী ইত্যাদি প্রভৃতি নিয়ে সুখে আরামে ঘরকন্না করবো। ব্যস। এই হলো জীবনের চরম লক্ষ্য, পরম আদর্শ!’ ধিক্কার দিয়ে দিয়েই বলে। তবু মনে কি মানে?
এসব কথার আর কি উত্তর আছে?
অন্তত টুসকির কাছে নেই। টুসকির মনের সামনে ভেসে উঠছে সেই ‘ধিক্কার দেওয়া’ মুখটা। তবে অবশ্যই ঘৃণায় তিক্ত নয়, কৌতুকে উজ্জ্বল। পুরু লেনসের চশমার কাচের মধ্য থেকে যে দৃষ্টি ঝিকঝিকিয়ে ওঠে।
টুসকির হাতটা যে ওই মহিলার হাতের মধ্যেই ধরা আছে তা মনে পড়ে না টুসকির। হঠাৎ উনি বলে ওঠেন, তা তোমার বড়দা তো ওইরকম হয়ে বসে আছে? কিন্তু ছোড়দা? আমার জিতুর যেটি বন্ধু? তার বিয়ে-থাওয়ার কথা বলেন না তোমার মা? পাত্ৰীটালী দেখেন না?
টুসকি একটু হেসে বলে, মা বলবার অপেক্ষা রাখেনি ছোড়দা, নিজেই পাত্রী ঠিক করে ফেলেছে। একদিন হয়তো হঠাৎ আমাদের নেমন্তন্ন করতে আসবে।
বনছায়া প্রথমটা বোধহয় একটু আহতভাবে ঘাবড়ে যান। বলেন, তাই? তারপরই আবার হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, আমার বাউণ্ডুলে ছেলেটা যদি এরকমও করতো, তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে মরতে পারতাম!
এ মা! এক্ষুণি আপনার মরার কথা কেন?
আহা, মরবো তো একদিন। তখন ওকে কে দেখবে বলো তো? নিজের কথা যে কিছু ভাবতে জানে না।
এই অতি সরল আবেগময় মুখের সামনে হেসে ওঠা সম্ভব নয় বলেই হেসে ওঠে না টুসকি। অন্য কেউ হলে হেসে উঠতো। হয়তো বা বলে বসতো, ‘তাহলে মরবার আগে ডজন ডজন ‘ফীডিং বটল’-এ দুধ ভরে রেখে যাবেন।’…
এঁর সামনে এমন অভব্যতা সম্ভব নয়। তাই কথায় জোর দিয়ে বলে, এখন ওসব মরাটরার চিন্তা করবেন না। আপনার স্বাস্থ্য তো খুব সুন্দর
বনছায়া অবশ্য এতে হেসে ফেলেন। বলেন, তা সত্যি। ঠাকুরের ইচ্ছেয় স্বাস্থ্য শরীর খুবই ভালো। সেটাও এক হিসেবে আমার বিপক্ষে বাছা! বলতে পারি না, ‘ঘরে একটা বৌ না থাকলে, আমায় রোগে অসুখে কে দেখবে?”
টুসকি যেন আচ্ছন্নের মতোই এই মহিলার কথার স্রোতে ভেসে যাচ্ছিলো। হঠাৎ চকিত হয়ে বলে, আচ্ছা আমরা কোনদিকে যাচ্ছি?
কেন, আমার বাড়িতে? এই তো এসে গেলাম।
সে কী? সেখানে কেন?
কেন মা, আমার বাড়িতে একবার গেলে কি হয়? বোধহয় অফিস থেকে ফিরছিলে? দেখে তাই মনে হলো। তো মাসিমার কাছে না হয় একটু চা জলখাবার খেয়েই বাড়ি ফিরবে। খুব অনিচ্ছে হচ্ছে?
টুসকি অপ্রতিভভাবে বলে, না, মানে, চিনতে দেরি হলে, বাড়িতে ভাবনা করবেন।
তা ঠিক। তবে এখনকার দিনে রাস্তায় ওই তোমাদের কী বলে ‘জ্যাম জেলি’ হয়েও তো, হেসে ওঠেন, কত সময় দেরি হয়ে যায়। তা ছাড়া এই গাড়িটাই আবার তোমায় পৌঁছে দেবে। বেশী দেরি হবে না।
টুসকিকে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
তবু একবাব. বলে, শুধু শুধু আপনার কষ্ট।
কষ্ট? শোনো কথা। বলে কতদিনের জমে থাকা মনোকষ্ট দূর হবে। সেই তুমি না খেয়ে চলে যাওয়া পর্যন্তই ইচ্ছে হয়েছে—তো রাস্তায় হঠাৎ তোমায় দেখেই না, যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেলাম। ব্যস! লুঠ করে নিয়ে যাচ্ছি। তাহলে এক হিসেবে হচ্ছি হাফ ছিনতাইবাজ মেয়ে। বলে হেসে ওঠেন।
তেমন সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে জানেন না বনছায়া, তবে প্রকাশভঙ্গী অত্যন্ত সরল আর প্রাঞ্জল। মনের তারে ঘা দেয়। টুসকির মনে হয় ‘মাতৃমূর্তি’ শব্দটি যেন এঁর কাছে ধরা দিয়েছে।
কথাটা বলে খোলা হাসি হেসে উঠলেও বনছায়ার মুখে সঙ্গে সঙ্গেই যেন একটা করুণ ছায়া নামে। আস্তে বলেন, এইটুকু পর্যন্তই দৌড়। তার বেশী তো হাত বাড়ানোর সাহস নেই। এই যে—এসে গেলাম।
ড্রাইভার নেমে পড়ে দরজা খুলে ধরে একপাশে দাঁড়ায়। নেমে পড়ে টুসকি। কিন্তু যেন অন্যমনস্কভাবে। মহিলার ওই বিষণ্ণ বিষণ্ণ ভাবের কথাটার মানে কী?
.
সেই অনেকদিন আগে আসা জায়গাটায়। সেদিন এসেছিল অন্য পরিবেশে। উৎসবের সাজে সাজা জায়গা। খোলা জমিটা ছিলো প্যান্ডেলে ঢাকা। তার মধ্যে অতিথি আপ্যায়নের বিরাট প্রস্তুতির চিহ্ন।
আজ গেট ঠেলে ঢুকতেই যা চোখে পড়লো তা হচ্ছে অনেকখানিটা সবুজের সমারোহ। … গেট-এর মধ্যে ঢুকতেই দু’পাশে গাছের সারি, বাড়ির ‘বারান্দায় উঠতে সিঁড়ির দু’পাশে টবের সারি, আর ওই বারান্দাটায় উঠে পড়ে কোনাচেভাবে বাঁ দিকে তাকালে যেটা প্রকৃতপক্ষে বাড়ির পিছন, সেখানে অগাধ সবুজ। যাকে যুধাজিৎ বলে মার ‘কিচেন গার্ডেন’।…কখনো বা বলে, মার তরকারির বাজার’।
টুসকির যেন চোখটা জুড়িয়ে যায়। তাদের বাড়ির বা পাড়ার ত্রিসীমানায় কারো বাড়িতে এমন দৃশ্য কল্পনা করাও যায় না। অজান্তেই বলে ওঠে, বাঃ! তারপর বলে, আপনার বুঝি খুব বাগানের শখ?
বনছায়া মাথা নেড়ে সত্য কবুল করেন, আগে তেমন কিছু ছিলো না বাছা। জমিই বা ছিলো কোথায়? এখানে—ছেলের তাড়নায় আর জমি পেয়ে—শুরু করে ক্রমশ নেশা লেগে গেছে। এখন তো সন্ধে হয়ে এলো। সময় দেখলে দেখাতাম। কত জিনিস কিনতে হয় না।…বাগান থেকেই পেয়ে যাই। জিতু বলে, ‘মার এখন বাজার করা হচ্ছে!’
বলতে বলতে বারান্দায় উঠে পড়ে একটু এগিয়েই উল্লাসে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন, ওমা। তুই এসে গেছিস? আজ আমার কী ভাগ্যি। দ্যাখ কাকে ধরে নিয়ে এসেছি!
টুসকি তাকিয়ে দেখে—সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে যুধাজিৎ! ধবধবে পায়জামা আর পাঞ্জাবি পরা। চেহারায় একটি সদ্যস্নানের নির্মল ছাপ।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন