হাসি – বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

লীলা মজুমদার

হাসি – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

স্টেশনের ওয়েটিং রুমের ভেতরে বাইরে কোথাও অন্য লোক ছিল না, বেয়ারাটাকেও ডেকে ডেকে পাওয়া গেল না। অগত্যা চায়ের আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা কয় বন্ধু বেশ করে রাগ টেনে নিয়ে ইজিচেয়ারে শুয়ে পড়লাম।

মাঘের শেষ যদিও, শীত কিন্তু বাংলাদেশের পৌষ মাসের চেয়েও বেশী। রমেন বললে–ওহে, তোমরা যা বোঝ করো, আমি কিন্তু চা নইলে রাত কাটাতে পারবো না। বসো তোমরা, একটা ব্যবস্থা দেখি।

দোর খোলার সঙ্গে সঙ্গে এক ঝলক ীক্ষ্ণ শীতল পশ্চিমে বাতাস তীরের মত ঘরে ঢুকতেই আমরা হাঁ হাঁ করে উঠলাম … রমেন ততক্ষণে চলে গিয়েছে। খোলা দোরটা বন্ধ করে দিতে গিয়ে চেয়ে দেখি বাইরে বেজায় কুয়াশা। পৃথ্বীশ আমাদের দলের দার্শনিক। এতক্ষণ সে র‍্যাগ দিয়ে আপাদমস্তক আবৃত করে শুয়েছিল। হঠাৎ মুখ খুলে গম্ভীরভাবে বললে দেখ, আমার কিন্তু একটা uncanny sensation হচ্ছে, কেন বল তো?

আমি বললাম–কিভাবে uncanny? ভূত-ট্রুত?

সে র‍্যাগ খুলে ফেলে ইজিচেয়ারে উঠে বসলো। চারিধারে চেয়ে দেখে বললে–তা ঠিক জানিনে, কিন্তু কেমন যেন ….

আমরা সকলেই ততক্ষণে পুনরায় খাড়া হয়ে উঠে বসেছি। সলিল বললে -বিচিত্র নয়। আমি একটা ব্যাপার জানি, এই রকম একটা স্টেশনের ওয়েটিং রুমে রাত দশটার পরে লোক থাকতে পারতো না। শুধু তাই নয়, একবার অনেক রাত্রের ট্রেনে এক ভদ্রলোক নেমে রাত্রের মত স্টেশনের ওয়েটিং রুমেই ছিলেন— সকালেও তিনি ওঠেন না দেখে সকলে তুলতে গিয়ে দেখলো তিনি অচৈতন্য অবস্থায় মুখ উপুড় করে পড়ে আছেন। তারপর অনেক যত্নে তাঁর জ্ঞান হয়। তিনি সকলের কাছে বলেন, শেষ রাত্রির দিকে এক সাহেব এসে তাঁকে ওঠায়। পরে হঠাৎ সে পকেট থেকে ক্ষুর বার করে নিজের গলায় বসিয়ে এমন জোরে টানতে থাকে যে কাঁচা চামড়া কাটার অস্বস্তিকর খ্যাচ খ্যাঁচ আওয়াজে তাঁর সারা শরীর শিউরে ওঠে। তিনি চীৎকার করে লোক ডাকতে যেতেই দেখেন কেউ কোথাও নেই, সাহেবের চিহ্নও নেই ঘরে – তারপর কি হলো তিনি আর জানেন না। সেই স্টেশনে ওয়েটিং রুমের বাথরুমটার মধ্যে এক ছোকরা সাহেব এঞ্জিনীয়ার কি জন্যে একবার ঠিক ওইভাবে গলায় ক্ষুর বসিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তারপর থেকেই এই ব্যাপার …

আমরা সকলে আমাদের বাথরুমটার দিকে চেয়ে দেখলাম। লুপ-লাইনের নির্জন পাহাড়ে জঙ্গলের ধারে, লাইনের ওপারে কেবল স্টেশন মাষ্টারের কোয়ার্টার এবং লেভেল ক্রসিং-এর ফটকে দারোয়ানের গুমটি। ওয়েটিং রুমের বাইরে স্টেশনের হাতার পরেই একটা ছোট্ট পান-সিগারেটের ও চায়ের দোকান। দিনমানে এমন কি সন্ধ্যার একটু পর পর্যন্তও দেখেছিলাম, তারপর থেকেই আর দোকানীর পাত্তা নেই – দোকান বন্ধ করে চলে গিয়েছে।

গল্প ভাল জমতে না জমতে হঠাৎ দোরটা খুলে গেল। একটা কুলীর হাতে কাঁসার থালার ওপর গোটা আষ্টেক পেয়ালা ভর্তি চা নিয়ে ঢুকলো হাসিমুখে রমেন। ঢুকেই বললে, দেখছো? Where there is a will, there is a way । আমি বলেছিলাম না চায়ের ব্যবস্থা করবোই?স্টেশন মাষ্টারের সঙ্গে আলাপ হয়ে গেল, তাঁর বাড়িও আমাদের জেলায়। তিনি বললেন বিলক্ষণ, আপনারা ভদ্রলোকের ছেলে, বাঙ্গালী, চা খাবেন এ তো সৌভাগ্য। ছাড়লেন না কিছুতেই নিজের বাসা থেকে তৈরী করে পাঠিয়ে দিলেন।

রমেনের কথা শেষ হতে না হতে দোর ঠেলে এক ভদ্রলোক ঢুকলেন। রমেন প্রায় খেলার পুতুলের মত লাফিয়ে উঠে বললে–এই যে মিত্তিরমশায়, আসুন আসুন। পরে আমাদের দিকে চেয়ে বললে – ইনিই এখানকার স্টেশন-মাষ্টার হরিদাসবাবু। আসুন আসুন।

ততক্ষণে হরিদাসবাবু টেবিলের সামনের হাতল শূন্য কেদারাতে আমাদের সকলের উদ্দেশ্যে অভিবাদনের জন্যে হাত উঁচু করে গরুড়ের মত বসে আছেন। মিত্তিরমশায়ের বয়স পঁয়তাল্লিশের কম নয়, দোহারা গড়ন, কানের পাশের চুলগুলোতে বেশ পাক ধরেছে, গোঁফ-দাড়ি কামানো। পশ্চিমের আটা-জলে বেশ স্বাস্থ্যবান শরীর।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম – আপনি এখানে কতদিন আছেন মিত্তিরমশায়?

আজ্ঞে, এই আসছে ফেব্রুয়ারীতে দেড় বছর হবে। বড় কষ্ট মশাই, মাছ তো একেবারে মেলে না, বাঙ্গালীর মুখ মোটে দেখতে পাওয়া যায় না। তাই আপনারা আজ এসেছেন শুনে ভারী আনন্দ হলো। উনি চায়ের কথা যেমন তুললেন, আমি বললাম – তার আর কি, আমার বাসা যখন নিকটেই রয়েছে, তখন কি আর–তা আপনারা কতদূর যাবেন সব?

আমরা সাইকেলে দিল্লী যাব বলে বেরিয়েছি, ওপার থেকে আসছি কিনা? এইখানে নদী পার হয়ে ভাগলপুরের পথ ধরে গিয়ে গ্রান্ডট্রাঙ্ক রোডে উঠবো ইচ্ছে আছে। ভাগলপুরের গাড়িটা ঠিক ক’টায় পাওয়া যাবে কাল সকালে?

তারপর অনেক কথাবার্তা ও আমাদের ভ্রমণ সম্বন্ধে অনেক কৌতূহলপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এবং কথিত ট্রেনঘটিত নানা আবশ্যকীয় সংবাদের আদান প্রদানের পর কথাবার্তার বেগ মন্দীভূত হয়ে পড়লো।

কারুরই ঘুম পাচ্ছিল না, বিশেষ করে, গরম চা খাবার পরেই আলস্য ও তন্দ্রার ভাবটা কেটে গিয়ে সকলেরই শরীর যেন বেশ তাজা হয়ে উঠেছিল। নির্বাণোন্মুখ কথাবার্তার শিষটাকে পুনরায় খোঁচা দিয়ে প্রদীপ্ত করবার জন্যেই আমি হঠাৎ বলে উঠলাম – হ্যাঁ মশাই, আপনাদের এ ওয়েটিং রুমে ভূত-টুত নেই তো? এ প্রশ্নের পরে সলিলের সেই অজ্ঞাত স্টেশনটির বাথরুম ও ছোকরা এঞ্জিনীয়র সাহেবের গল্প পুনরায় ফিরে এল। পুনরায় আমাদের একচোট হাসি হল এবং কেউ কেউ এমন ভাণ্ডের ভান করলেন যে এ স্টেশনের বাথরুম সম্বন্ধেও তাঁরা ভয়ের ধারণা পোষণ করেন।

রমেন বললে — যত সব গাঁজাখুরি …

হরিদাসবাবু অনেক্ষণ কোন কথা বলেননি। আমাদের উপহার দেওয়া সিগারেটের চতুর্থটির ছাই ঝাড়তে ঝাড়তে তিনি হাই তুলে খাড়া হয়ে বসলেন। বললেন–আপনারা হাসবেন হয়তো কিন্তু আমার নিজের জীবনের একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা এখানে বলছি শুনুন।

পরে তিনি পঞ্চম সিগারেটটি ধরিয়ে নিজের অদ্ভূত গল্পটি বলে গেলেন।

.

অনেক দিনের কথা। আমার বয়স তখন খুব বেশী না হলেও বারো তেরোর কম নয়। আমার এক কাকা ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্টে কাজ করতেন এবং সে সময় তিনি খুলনা মরেলগঞ্জ আউট-পোস্টে থাকতেন। একবার কি উপলক্ষে তা এখন ঠিক স্মরণ হয় না, আমি আমাদের বাড়ির সকলের সঙ্গে কাকার কাছে বেড়াতে যাই। কাকা তখন ছিলেন খুলনার বাসাতে, সেইখানেই অনেকদিন আমরা ছিলাম। বেশীদিন থাকবার কথাবার্তা হওয়াতে আমি সেখানকার একটা স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম।

আমরা পূজোর পরটাতেই সেবার খুলনা যাই। কয়েক মাস পড়বার পরে গ্রীষ্মের ছুটি হলো প্রায় এক মাসের ওপর। কাকাকে ধরলাম তাঁর সঙ্গে তাঁর কার্যস্থান মরেলগঞ্জে যাবো। কাকা আমায় নিয়েও গেলেন। সেই সময়টা মোম- মধু সংগ্রাহকদের লাইসেন্স নতুন করে করবার সময়। কেউ ফাঁকি দিয়ে পুরনো লাইসেন্সের বলে জঙ্গলে মোম-মধু সংগ্রহ করে কিনা পাহারা দেবার জন্য ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্টের বোট ও স্টিমলঞ্চ সব সময় সুন্দরবনের নদী, খাড়ি ও খালের মধ্যে ঘুরে ঘুরে পাহারা দিত। কতবার আমি কাকার সঙ্গে এই সরকারী বোটে সুন্দরবনের মধ্যে বেড়াতে গিয়েছি।

আমার মনে এই সুন্দরবনের একটা অপূর্ব স্বপ্ন ছবি মুদ্রিত আছে।

তখন আমি ছেলেমানুষ, সবে তেরো–শহর থেকে গিয়েছি। সুন্দরবনের অপূর্ব বন্য সৌন্দর্য্য এই এক মাসের প্রতিদিন আমার ক্ষুধার্ত ব্যগ্র বালক-মনে কি আনন্দের বার্তা বয়ে আনতো তা আমি মুখে আপনাদের বোঝাতে পারি না। আর কখনও সে দেশে যাইনি, অনেক দিনের কথা হলেও এখনো মাঝে মাঝে সুন্দরবনের–বিশেষ করে জ্যোৎস্না ওঠা সুন্দরবনের ছবি অপরিসর খালের শঠির জঙ্গলে ভরা ঢালু পাড় … নতুন পাতা-ওঠা গাব গাছের ও বন্য গোলগাছের সারি … খাড়ির মুখে জোয়ারের শব্দ–যখনই মনে হয়, একটা জিনিসের জন্যে বেদনায় এই বয়সেও মনটা কেমন করে ওঠে।

সেদিনের কথাটা আমার বেশ মনে আছে। সুন্দরবনের সেই অংশটা তখন জরীপ হচ্ছিল। তাদের একটা বড় লঞ্চ বড় গাঙের মাঝখনে বাঁধা থাকতো। দুপুরবেলা সেদিন সেই লঞ্চটাতে আমাদের নিমন্ত্রণ ছিল। চার পাঁচজন আমীন, একজন কানুনগো, একজন কেরানী সবাই বাঙালী, সব সুদ্ধ সাত আট জন লোক লঞ্চটাতে। খাওয়া দাওয়াটা খুব গুরুতর রকমের হলো, তারপর একটু গান বাজনাও হলো। বেলা পড়ে গেলে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে আমাদের বজরাটা ছাড়লাম।

ক্রমে রাত হলো, জ্যোৎস্না উঠলো। খালের দু’ধারের নতুন পাতা ওঠা বনের মাথাটা জোৎস্নায় চিকচিক করছিল … দূর থেকে নৈশ পাখীর দু’একটা অদ্ভুত রকমের ডাক কানে আসছিল জোয়ারে জলে মগ্ন গোলগাছের আনত শাখাগুলো ভাটার পরে একটু একটু করে জল থেকে জেগে উঠতে লাগলো বাঘের উপদ্রবের ভয়ে সব সময় আমাদের বজরাতে দু’জন বন্দুকধারী সিপাহী থাকতো, তারা বজরার ওধারের তোলা উনুনে রান্না চাপিয়ে দিলে।

রাতটা বড় গরম, গুমোট ধরণের। গাছের পাতাটি পর্যন্ত নড়ছিল না, চারিদিকে একটা নীরব থমথমে ভাব। ছই-এর ভিতরে থাকবার উপায় নেই। বজরার ছাতে তক্তার পাটাতনের ওপর এসব গ্রীষ্মের রাতে শুয়ে থাকতে খুব আরাম ঘটে, কিন্তু অপরিসর খালের দু’ধারের ঘন বন থেকে বাঘ লাফিয়ে পড়বার ভয়ে সেখানে থাকবার যো ছিল না। ছই-এর মধ্যে বসে কাকা ও বিনোদবাবু দাবা খেলছিলেন। ছইয়ের ঘুলঘুলিগুলো সব খোলা, আমি নিকটে বসে বই পড়ছি।

খেলতে খেলতে রাত হয়ে গেল দশটার বেশী। সিপাহীদের রান্না হয়ে গেল।

কাকা কি একটা কঠিন চাল সামলাবার কথা একমনে ভাবছেন– আমি মিটমিটে আলোতে আখ্যান মঞ্জরী পড়ছি – বিনোদবাবু খেলোয়াড়কে সমস্যায় ফেলবার আত্মপ্রসাদে তাকিয়া ঠেস দিয়ে ঘুলঘুলির বাইরে ভাটার টান ধরা জলের দিকে চেয়ে আছেন। দীর্ঘ বন গাছের ছায়া পড়েছে জলের ওপর।

এমন সময় একটা ব্যাপার ঘটলো।

সামনের ঘন বনের মধ্যে অনেক দূর থেকে একটা উচ্চ সুস্পষ্ট কৰ্কশ অট্টহাসির রব উঠলো – হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ ..

অবিকল মানুষের গলার আওয়াজের মত হলেও মনে হল যেন এটা অমানুষিক অস্বাভাবিক স্বর। আমরা কিছু ভাববার পূর্বেই সেইরকম আর একবার এবং তারপর আবার। হাসির শব্দটা এত উচ্চ ও তীক্ষ্ণ যে মনে হল বনের গাছগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে … মাটি যেন কাঁপছে … বোটটা যেন দুলছে।

সিপাহীরা তাড়াতাড়ি খাওয়া ছেড়ে উঠে এল। কাকা, বিনোদবাবু, আমি সকলেই দুই-এর বাইরে এলাম। গাছপালা ছবির মত দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও হাওয়া নেই, পাতাটি পর্যন্ত নড়ে না সুমুখে জ্যোৎস্না রাতের চাঁদ বন-গাছের আড়ালে ঢলে পড়ছে। ..

বিনোদবাবু বললেন–কি মশাই রামবাবু? ব্যাপারটা কি?

মাঝিরা ভারি ভয় পেয়ে গিয়েছে। তারা বজরার মান্তুলের তলায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে বনের দিকে চেয়ে আছে।

 আমরা সকলে ছই-এর মধ্যে ঢুকতে যাচ্ছি এমন সময় আবার সেই হাসির শব্দটা উঠলো। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ …

শব্দটি এত ক্রুর ও মর্মস্পর্শী যে আমাদের সকলের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। মাঝিরা দুই কানে হাত দিয়ে বলে উঠলো আল্লা। আল্লা। কাকা ও বিনোদবাবু ছই-এর মধ্যে পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। কাকা বললেন— কি মশাই, হায়েনা নাকি? কিন্তু তাঁর মুখ দেখে ও গলার সুরে মনে হলো, তিনি কথাটা নিজেই বিশ্বাস করেন না। তারপর পরামর্শ হলো নৌকাটা সেখান থেকে সরানো যায় কিনা। কিন্তু ভাঁটার টান এত বেশী যে, বড় গাঙের টান ঠেলে তত রাত্রে কোন মতেই অত ভারী বজরাটা উজানে নেওয়া চলে না। অগত্যা সেইখানেই রাত কাটাতে হলো। সবাই জেগে রইলো, কারুর চোখে ঘুম এল না সে রাত্রে।

শেষরাত্রে একবার শব্দটা শুনলাম। বনভূমি নিস্তব্ধ চাঁদ ডুবে গিয়ে নদী আকাশ বন সব অন্ধকারে একাকার। আমার চোখ ঘুমে ঢুলে এসেছে, এমন সময় অন্ধকার ভরা গভীর বনভূমির দিক থেকে আর একবার সেই বিকট হাসির রোল উঠলো। শেষ রাত্রের চাঁদ ডোবা অন্ধকারে সেটা এত অমানুষিক, এত পৈশাচিক ঠেকলো যে তখন আমার বালক বয়স হলেও হাসিটার প্রকৃত রূপ বুঝে বুকের রক্ত যেন হিম হয়ে গেল।

সকালে জোয়ারের মুখে বজরা ছেড়ে আমরা দুপুরের সময় স্টিম লঞ্চে ফিরে এলাম। সেখানে সব কথা শুনে প্রধান সারেং খালাসীদের মধ্যে কেউ কেউ বললে, ঐ শব্দটা এর আগেও তারা শুনেছে, তবে স্থানটা বড় গভীর বনের মধ্যে বলে সে দিকটায় লোক চলাচল খুব কম। শোনা গেল, ঐ বনের মধ্যে নাকি অনেক দূর গেলে প্রাচীন কালের ঘর-বাড়ির চিহ্ন পাওয়া যায়। জঙ্গলের মধ্যে শ্রেণীবদ্ধ বৃদ্ধ বকুল গাছের সারি দেখে মনে হয় কোন সময়ে সে সব স্থানে লোকের বাস ছিল।

সে যাই থাকুক আজও এতদিন পরে যখনই কথাটা মনে পড়ে তখনই এই কথাটাই মনে হয়, গভীর রাত্রির অন্ধকারে, জনহীন জনপদের ধ্বংসস্তুপের চারিপাশে ঘূর্ণায়মান কোন অভিশপ্ত অশরীরী আত্মার পৈশাচিক উল্লাসভরা অট্টহাসিই সেদিন কানে গিয়েছিল। …

তাই হাসির রোলটা যখনই মনে আসে, আজও এতকাল পরেও যেন সারা শরীর শিউরে ওঠে।

সকল অধ্যায়

১. টমসাহেবের বাড়ী – ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়
২. এথেন্সের শেকল বাঁধা ভূত – হেমেন্দ্রকুমার রায়
৩. দিনে দুপুরে – বুদ্ধদেব বসু
৪. ঠিক দুপুরে আকাশকুসুম – স্বপন বুড়ো
৫. রাক্ষুসে পাথর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬. লোকসান না লাভ – আশাপূর্ণা দেবী
৭. মাঝরাতের কল – প্রেমেন্দ্র মিত্র
৮. ওয়ারিশ – লীলা মজুমদার
৯. তান্ত্রিক – ধীরেন্দ্রলাল ধর
১০. বোধহয় লোকটা ভূত – শুদ্ধসত্ত্ব বসু
১১. ছক্কা মিঞার টমটম – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
১২. ভূতেরা বিজ্ঞান চায় না – অদ্রীশ বর্ধন
১৩. হুড়কো ভূত – অমিতাভ চৌধুরী
১৪. ভূতে পাওয়া হরিণ – সংকর্ষণ রায়
১৫. মড়ার মাথা কথা বলে – রবিদাস সাহারায়
১৬. ফ্রান্সিসের অভিশাপ – শিশিরকুমার মজুমদার
১৭. সত্যি ভূতের মিথ্যে গল্প – বরেন গঙ্গোপাধ্যায়
১৮. শব্দের রহস্য – বিমল কর
১৯. পুরনো জিনিষ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২০. ভাড়া বাড়ি – মঞ্জিল সেন
২১. জ্যোৎস্নায় ঘোড়ার ছবি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
২২. শাঁখারিটোলার সেই বাড়িটা – লক্ষ্মণকুমার বিশ্বাস
২৩. হাসি – বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
২৪. ভূতুড়ে রসিকতা – আনন্দ বাগচী
২৫. ভূতেশ্বরের দরবারে কোয়েল – জগদীশ দাস
২৬. ভূত আছে কি নেই – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
২৭. ভূতের সঙ্গে লড়াই – শেখর বসু

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন