দশমহাবিদ্যার সন্ধানে

পৃথ্বীরাজ সেন

পুরাণের বিভিন্ন পর্বে দশমহাবিদ্যার কথা বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আমরা মহাভাগবত পুরাণের অষ্ট অধ্যায়ের ওপর আলোকপাত করব। এই অধ্যায়ে দশমহাবিদ্যার আবির্ভাবের কাহিনি বিস্তৃত ভাবে আলোচিত হয়েছে। এই কাহিনিটি মোটামুটি আমরা সকলেই জানি। নিমন্ত্রণ ছাড়া দক্ষযজ্ঞে থাকার জন্য সতী আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। মহাদেব কিন্তু তাঁকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। তখন ক্রোধান্বিতা দেবী ভয়ংকরী মূর্তি ধারণ করে শিবের অনুমতি লাভ করেছিলেন। তিনি যে দশটি মূর্তিতে আবির্ভূতা হয়েছিলেন সেগুলি হলো যথাক্রমে—কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলামুখী, মাতঙ্গী এবং কমলা।

পুরাণকাররা বলে থাকেন এই গল্পের অন্তরালে আমাদের তন্ত্রকেন্দ্রিক এবং আধ্যাত্মিক সাধনার বিশেষ একটি তত্ত্ব নিহতি আছে। আমরা সারা বছর ধরে নানা রূপে মাতৃ আরাধনা করে থাকি। ভয়ংকরী আলুলায়িত কুণ্ডলাদেবীকে আমরা নিষ্ঠাভরে পূজা এবং প্রণাম নিবেদন করি। বিশেষ করে অবিভক্ত বঙ্গদেশে শাক্তসাধনার যে পরম্পরা প্রচলিত আছে সেখানে দশমহাবিদ্যার অন্তর্গত দেবীরা প্রাধান্য লাভ করেছেন। রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত, রাজা রামকিঙ্কর অর্থাৎ শ্রীরামকৃষ্ণ সকলেই ছিলেন শাক্ত মায়ের সন্তান। তাদের মধ্যে কালীই সবথেকে জনপ্রিয় একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যান্য দেবীরা তন্ত্রসাধক কূলের ইষ্টদেবী।

তন্ত্রশাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় এই সব দেবীদের পূজা পদ্ধতি বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে। কোন বীজমন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে আমরা দশমহাবিদ্যার অন্তর্গত কোন দেবীর পূজা করব তাও বলা হয়েছে। আসুন একে একে আমরা দশমহাবিদ্যার বিভিন্ন দেবীর কথা শুনে নিই।

কালী : দেবী দক্ষিণাকালিকা করালবদনা, কোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভুজা, মুণ্ডমালাশোভিতা। তাঁর বাম দিকে অধ ও ঊর্ধ্ব হস্তে মুণ্ড ও খড়্গ, দক্ষিণের অধ ও ঊর্ধ্ব হস্তে বর ও অভয়মুদ্রা। এখানে যে ধ্যানমন্ত্র উচ্চারিত হয় তাতে বলা হয় দেবী শ্যামা, সিদ্ধেশ্বরী, তাঁর কণ্ঠের মুণ্ডমালা থেকে রক্ত ঝরে চলেছে।

একজন সাধকের চোখে দেবী কালিকা হলেন চিন্ময়ী, ব্রহ্মস্বরূপা, সগুণা এবং নির্গুণা। তাঁর চারটি হাত একটি অখণ্ড বৃক্ষের প্রতীক। তিনি অখণ্ডমণ্ডলাকার। তিনি তাঁর মূর্তির মধ্যে পূর্ণতার আভাস এনেছেন। তিনি দিগ্বসনা। বস্ত্র আবরণের প্রতীক। যেহেতু তিনি আবরণহীনা তাই মায়াতীতা। তাঁর মুক্তকেশ হল বন্ধনের পাশ। দেবী কালিকা জীবের সংসারবন্ধনকারিণী অথবা অনেকে বলেন তাঁর কেশজাল হল মৃত্যুর প্রতীক। তিনি কালোরূপিণী হয়ে অবস্থান করছেন। রোগ, শোক এবং মহামারী বিষকুম্ভে ভরে বিতরণ করছেন।

তাঁর হাতে যে খড়্গ আছে সেই খড়্গকে আমরা জ্ঞানখড়্গ বলতে পারি। এই খড়্গের মাধ্যমে তিনি পক্ষপাশ, কর্মবন্ধন এবং মোহপাশ ছিন্ন করছেন। তাঁর মস্তক হল তত্ত্বজ্ঞানের আধার। দেবী মোহমুক্ত ভক্তকে তত্ত্বজ্ঞান দান করেন। তিনি শব হাতের মেখলা পড়ে আছেন। আমরা জানি হাত হল কর্মের প্রতীক। যে কোনও কাজ করতে হলে হাত ব্যবহার করতে হয়। তিনি মৃতজীবের কর্মফল ধারণ করে থাকেন বলেই এমনভাবে তাঁর হাতের মেখলা। কল্পান্তে জীবের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত দেবী এভাবে ক্রিয়াশীলা থাকেন।

তাঁর কণ্ঠে পঞ্চাশটি মুণ্ড আছে। এই মুণ্ডগুলি মাতৃকাবর্ণের প্রতীক। অর্থাৎ এগুলি স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণের সমন্বয়। তিনি পঞ্চাশৎ বর্ণময়ীরূপে উপস্থাপিত। সব শব্দের সংহত রূপ ওঁঙ্কার—দেবী কালিকা হলেন ওঁঙ্কাররূপিণী।

দু’টি বালকের শব হল এই দেবীর কর্ণভূষণ। বালকস্বভাব সাধক তাঁর প্রিয়—তাই বোধহয় তিনি এমন কর্ণভূষণ ধারণ করেছেন। তাঁর ললাটে আমকলা অর্থাৎ চন্দ্রের সপ্তদশী কলা। এই কলা থেকে নিত্য অমৃত ক্ষরিত হচ্ছে। দেবীর সঙ্গে যে সমস্ত আনুষঙ্গিক বিষয়গুলি সংযোজিত হয়েছে, তার প্রতিটির অন্তর্নিহিত অর্থ আছে। আমরা চোখের সামনে যা দেখতে পাচ্ছি, সেটাই কিন্তু বস্তুর আসল পরিচয় নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এর অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে পারব না ততক্ষণ আমরা দেবী কালিকাশক্তির রহস্য উদঘাটন করতে পারব না।

তিনি ঘোর দ্রংষ্ট্রা। লেলিহান রক্তবর্ণা তাঁর জিহ্বা। আছে শুভ্র উজ্বল দন্ত পঙক্তি। এর মাধ্যমে তিনি সত্ত্বগুণ দিয়ে রজোগুণকে সংহত করছেন। তাঁর দুই ওষ্ঠ প্রান্তে রক্তধারা বয়ে চলেছে। দেবী রজোগুণরহিতা হয়ে শুদ্ধসত্ত্বময়ী শবরূপী মহাদেবের হৃদয়ে স্থাপিতা। শব হল নির্গুণ ব্রহ্মের প্রতীক। আর দেবী বোধহয় এই বিষয়টিকেই অতিকায়িত করেছেন। তিনি কখনও স্বরূপ থেকে বিচ্যুত হন না।

মায়ের রূপকল্পনায় বিভিন্ন কাহিনি শোনা যায়। একটি কাহিনির সঙ্গে অন্য কাহিনির খুব একটা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে প্রত্যেক কাহিনির অন্তরালে একটি আধ্যাত্মিক তত্ত্ব লুকিয়ে আছে। একবার মা দানবদলনী রূপে শত্রু নিধন করছিলেন। জগৎবিধ্বংসী চমক এবং রজোগুণের প্রাবল্যে উন্মত্ত হলেন তিনি। একের পর এক শত্রু ধ্বংস করে দেবতাদের দিকে ধাবিত হলেন। দেবতারা বুঝতে পারলেন অবিলম্বে তাঁকে সংযত করতে হবে। না হলে সর্বনাশ ঘটে যাবে। দেবতারা শিবের স্মরণাপন্ন হলেন। এর আগে শিব অনেক সময় দেবতাদের নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। তিনি কালরূপের প্রতীক, কিন্তু তিনিও দেবীর এই উগ্রচণ্ডালিনী মূর্তি দেখে ভয় পেলেন। তিনি দেবীর সামনে যাবেন কি করে? শেষ পর্যন্ত শিব শবরূপে মায়ের আসার পথে শুয়ে পড়লেন।

এই গল্পটির মাধ্যমে আমাদের আধ্যাত্মিক তত্ত্ববসাধনার একটি নিগূঢ় রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। শিব হলেন মহা সত্ত্বগুণময়। রজো এবং তমোগুণের আধিক্যে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। অবিলম্বে এই সাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। সাম্য নেই বলেই বোধহয় সংকেত বেজে উঠেছে। মহাসত্ত্বগুণী শিবের বুকে পা দিতেই মায়ের মধ্যে সাম্যবাদ ফিরে এলো। তাঁর গতি স্তব্ধ হলো। তিনি দন্তে জিহ্বা ধরে রজোকে আকর্ষণ করলেন। আর যোগস্থ হয়ে চোখ রাখলেন সদাশিবের চোখে। এভাবেই আমরা দেবী কালিকার রূপ কল্পনা করেছি। কথিত আছে যে মহাসাধক শ্রীরামকৃষ্ণ এই অনন্ত জ্যোতির্ময়ী সত্তাকেই তাঁর মানসলোকে অবলোকন করেছিলেন।

মায়ের যে ধ্যানমূর্তিটি আমাদের সামনে উপস্থাপিতা সেই ধ্যানমূর্তির সাথে মহাকালের ধ্যানমূর্তির সদৃশতা বিদ্যমান। একজন ঋষি অবশ্য ভিন্ন দৃষ্টি দিয়ে এই মূর্তির পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁর কাছে এই মূর্তির মধ্যে ধ্বংস এবং মৃত্যু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

এই পৃথিবীতে কোনও কিছুই চিরপ্রবহমানা নয়, জন্ম হলে মৃত্যু অনিবার্য, এমন একটি ধারণার কথাই বোধহয় এই মূর্তি বারবার বলছে। আবার এই মূর্তি দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে দেবী সবসময় আমাদের কৃপাশীলা। আবার এর সাথে মিশেছে করুণা ও বরাভয়। তিনি তো সকল মানুষের ওপর অপরিমাপ্য করুণা বর্ষণ করছেন। তাঁর আশীর্বাদ না পেলে আমরা সংসার সমুদ্র পার হবো কি করে?

যখন তিনি বাঁ পা—টি বাড়িয়ে দাঁড়ান তখন তাঁকে বলা হয় বামাকালী। তিনি সাধকের সংসার বন্ধন ছেদন করেন। আবার যখন তিনি ডান পা—টি বাড়িয়ে দেন তখন তাঁকে আমরা দক্ষিণাকালী বলে থাকি। গৃহস্থ এই দেবীকেই পুজো করেন।/তিনি প্রসন্নবদনা। তিনি ভক্তকে অনুগ্রহ প্রদান করছেন। আবার মহামারী এবং দুর্ভিক্ষের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমরা রক্ষাকালীর পুজো করে থাকি। তাছাড়াও দেবী ভদ্রকালী, চামুণ্ডাকালী, গুহ্যকালী নামেও পূজিতা হয়ে আসছেন।

এই কালীমূর্তির তত্ত্ব অনুধাবন করা খুব একটা সহজ নয়। তাই বোধহয় একজন সাধক তাঁকে এইভাবে বর্ণনা করেছেন—চিদাকাশে যার যা ভাসে/তাই তাদের বোধের সীমানা।

তারা : দশমহাবিদ্যার পরবর্তী দেবী হলেন তারা। তারা দেবীর সঙ্গে কালীর সাদৃশ্য বিদ্যমান। বামাকালীর মতো তারা তাঁর বাম পা—টি শিবের বুকে রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি খর্বা, লম্বোদরী, ভীমা এবং ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা। জ্বলন্ত চিতার মধ্যে তাঁর অবস্থান। চিতার আগুন—শিখায় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। চিতা তাই দার্শনিক অভিজ্ঞানের স্বরূপ। যিনি তারাকৃত, তিনি তো এখানেই অবস্থান করবেন। তিনি চতুর্ভুজা, ডান হাতে খড়্গ এবং কাটারি, বাম হাতে খর্পর ও পদ্ম। তাঁর কেশজাল একটিমাত্র পিঙ্গল জটায় বদ্ধ হয়েছে। মাথার উপর সর্পরূপী অক্ষোভ্য অর্থাৎ মহাদেব। তিনি নবযৌবনা। নানা আভূষণে বিভূষিতা। তাঁর গাত্রবর্ণ ঘন নীল এবং নয়ন দুটি রক্তাভ ধারণ করেছে। তাঁর মাথায় নরকপালের ভূষণ। তিনি অবস্থান করছেন বিশ্বব্যাপী জলের মধ্যে ভাসমান শ্বেতপদ্মের ওপর।

তাঁর গলায় নাগের যজ্ঞোপবীত। তিনি ত্রিনয়নের মাধ্যমে অভয় প্রদর্শন করছেন।

সাধক তিনটি ভিন্নভাবে তাঁর পূজা করে থাকেন। একটি পদ্ধতিকে বলা হয় ব্রাহ্মজটা, অপরটি উগ্রতারা এবং তৃতীয়টি হল নীলসরস্বতী। ‘ম’ হল ওঁঙ্কারের দীর্ঘতান। তিনি শব্দব্রহ্মরূপা ওঁঙ্কাররূপিণী মা। যদি কোনও সময়ে বাকশক্তির জড়তা থাকে তাহলে নিয়মিত তারামন্ত্র জপ করতে হয়। তারার সাধনায় সাধকের নাদ সিদ্ধি ঘটে যায়। তিনি শব্দব্রহ্মের প্রতিপাদ্য ব্রহ্মের অপার্থিব অনুভূতি লাভ করে থাকেন।

স্বতন্ত্র তন্ত্রানুসারে দেবী উগ্র আপদ থেকে তাড়ন করেন বলেই উগ্রতারা নামে পরিচিতা। মেরুর পশ্চিম কূলে এক মহানদে তাঁর জন্ম হয়েছিল। জন্মের পরমুহূর্ত থেকে তিনি তিন যুগ ধরে গভীর ধ্যানে মগ্না ছিলেন। নিজ মুখের তেজোরাশিতে নীলবর্ণ ধারণ করেন। তারাদেবী হলেন বিশ্বময়ী। তাঁকে আমরা ধরিত্রী বা বসুন্ধরার সমতুল্যা হিসাবে মনে করতে পারি। তাঁর মন্ত্রে চৈতন্য লাভ করলে জীব জীবন্মুক্ত অবস্থা লাভ করে। তারাদেবীর কৃপায় অনর্গল কবিতা বলার শক্তি জন্মায় এবং সাধক সর্বজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেন।

ষোড়শী : দশমহাবিদ্যার তৃতীয় দেবী হলেন ষোড়শী। কথিত আছে শ্রীরামকৃষ্ণদেব তন্ত্রসাধনকল্পে এই দেবীর দর্শন লাভ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ষোড়শী বা ত্রিপুরা মূর্তির অঙ্গ থেকে রূপসৌন্দর্য বিগলিত হচ্ছে।

দেবী ষোড়শী হলেন কালীর বিপরীত। তাঁর মধ্যে ষোলকলায় পূর্ণ চন্দ্রের মতো প্রজ্ঞা বিদ্যমান। তিনি সৌন্দর্যরূপিণী। রজ এবং তমের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। দেবী ষোড়শীকে বলা হয়ে থাকে ঘনীভূত ঘৃতের মতো শুদ্ধ সত্ত্বের প্রতীক। এই মহাশক্তিকে আমরা পরম শিব থেকে অভিন্না হিসেবে ঘোষণা করেছি। তিনি ষোড়শী অরূপা, মায়া শক্তিবলে অনন্তরূপিণী। বামকেশ্বরতন্ত্রমতে ত্রিপুরাদেবী ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বরূপিণী। তিনি একদিকে চেতনা রূপে বিদ্যমানা আবার অন্যদিকে জড়শক্তির আধার।

দেবীর অধিষ্ঠান উজ্জ্বল পদ্মে। তাঁর মস্তকে মুকুট। তাঁর মাথায় আছে কুঞ্চিত কেশরাশি। মনে হয় তা বুঝি কৃষ্ণ ভ্রমর শ্রেণীর। তাঁর ললাটে হরধনুর মতো ভ্রূ—লতা। সমুন্নত বক্ষদেশে শোভা পাচ্ছে মুক্তাহার। অঙ্গ উদ্ভাসিত হয়েছে শত চন্দ্রকান্তিতে।

দেবী চতুর্ভুজা। হাতে পঞ্চবাণ ধনু। দু’হাতে পাশ এবং অঙ্কুশ। রক্তাভ তাঁর অঙ্গ। তিনি জগৎ কারণরূপিণী। তাঁকে আমরা সর্বমন্ত্রময়ী হিসেবে ঘোষণা করতে পারি। তিনি সকলের মঙ্গল কামনা করছেন। তাঁর মধ্যে সর্বশক্তির আধার লুকিয়ে আছে।

তাঁর সিংহাসনের পাদচতুষ্টয় হল যথাক্রমে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র এবং ঈশ। এই সিংহাসনটি সদাশিবময়। সেখানে পঞ্চশিবের অবস্থান। পঞ্চশিবকে আবার তন্ত্রানুসারে পঞ্চপ্রেত বলা হয়েছে। দেবী পঞ্চপ্রেতাসনা।

দেবী ষোড়শী ব্রহ্মবিদ্যা প্রদান করেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেব যখন সারদা মাকে দেবী জ্ঞানে আরাধনা করছিলেন তখন তিনি মাকে এই ষোড়শী হিসেবেই পূজা করেন। তাঁর পূজায় ষোড়শাক্ষরী শ্রীবিদ্যার মাহাত্ম্য ঘোষিত হয়েছে। তাঁর পূজায় ষোড়শাক্ষরী মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছে।

দেবী ষোড়শী আচার্য শঙ্কর প্রতিষ্ঠিত মঠের অধিষ্ঠাত্রী। আবার রামকৃষ্ণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সন্ন্যাসী সংঘেও তাঁকে আরাধ্যা দেবী হিসেবে পুজো করা হয়।

ভুবনেশ্বরী : দশমহাবিদ্যার অন্যতম দেবী হলেন ভুবনেশ্বরী। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে তাঁর যে ধ্যানমন্ত্র উচ্চারিত হয় সেখানে বলা হয়েছে তিনি উদীয়মান সূর্যের মতোই রক্তিমাভা। তিনি চন্দ্রকিরীট পরিহিতা। দেবী ত্রিনয়নযুক্তা। তিনি হাস্যমুখী। বামদিকে নীচের হাতে বর মুদ্রা প্রদান করছেন, ওপর হাতে পাশ। ডানদিকে নীচের হাতে অভয়মুদ্রা এবং ওপর হাতে অঙ্কুশের অবস্থান।

ত্রিভুবনের ঈশ্বরী বলেই তিনি ভুবনেশ্বরী নামে পরিচিতা। স্বর্গের দেবতারাও পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তি ভরে তাঁর পুজো করে থাকেন। দেবী ভাগবতে তাঁর সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে। অম্বর তলে আদ্যাশক্তির মূর্তি দর্শন করেছিলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। ওই দেবীর মুখনিঃসৃত আদেশ অনুসারে তাঁরা যথাক্রমে সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয়ের দেবতা হিসাবে পূজিত হলেন। তখন সমস্ত পৃথিবী ছিল জলময়। দেবীর প্রেরিত একটি বিমানে তাঁরা এলেন দেবীর আলয়ে মণিদ্বীপে। যেখানে এসে সকলেই নারীতে রূপান্তরিত হলেন। দেবীর পরিচর্যায় এবং আতিথেয়তায় সেই দ্বীপে তাঁরা অযুত বছর কাটিয়েছিলেন। লাভ করেছিলেন মহাসরস্বতী, মহালক্ষ্মী এবং মহাকালীকে। তখন এই দেবতারা বুঝতে পেরেছিলেন যে ভুবনেশ্বরী হচ্ছেন এই বিশ্বের নিয়ন্ত্রণকর্ত্রী।

এই দেবীকে আমরা শতাক্ষী, শাকম্বরী এবং দুর্গমাসুরের হন্তী হিসেবেও বর্ণনা করে থাকি। দুর্গমাসুর ব্রহ্মার কাছে বেদ প্রার্থনা করেছিলেন। এর ফল হল ভয়াবহ। দেবতারা শেষ পর্যন্ত পর্বতগুহায় আত্মগোপন করে থাকতে বাধ্য হলেন। হোমের অভাবে বৃষ্টি বন্ধ হল। সর্বত্র দেখা দিল বিপর্যয়। খরার আগুনশিখা জ্বলে উঠল। তখন আবার মণিদ্বীপের অধিবাসিনী অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ড নায়িকাকে স্মরণ করলেন সকল দেব—দেবী। সকলের দুঃখে তাঁর অনন্ত নয়নে নয় রাত্রি ধরে মহাবর্ষণ হল। পৃথিবী আবার শান্ত হল। খরার অবসান হল। এবার সকলে দেবীর কাছে ক্ষুধার অন্ন চাইল। অন্ন বিনা বেদস্মৃতি বিলুপ্ত হতে চলেছে। অন্ন না থাকলে আমরা শারীরিক ক্রিয়া সম্পাদন করব কি করে?

যতদিন পর্যন্ত বসুন্ধরা শস্য—শ্যামলা হয়নি ততদিন পর্যন্ত মা তাঁর করস্থিত সুস্বাদু ফলমূল, শাক ইত্যাদি দিয়ে সকলের প্রাণ রক্ষা করলেন। এইজন্যই তাঁকে শতাক্ষী এবং শাকম্ভরী বলা হয়।

তাঁকে আবার ভ্রামরী নামেও ডাকা হয়। অরুণ নামে এক দৈত্য ব্রহ্মার বরে অত্যন্ত বলীয়ান হয়ে উঠেছিল। দ্বিপদ, চতুষ্পদ কোনও প্রাণীরই সে বধ্য নয়। কিভাবে তাকে হত্যা করা যায়? দেবতাদের আর্তিতে দেবী আবির্ভূতা হলেন। তাঁর হাতে ছিল বিচিত্র কৃষ্ণভ্রমরমালী। তিনি ধীরে ধীরে ধীরে হ্রী�ঙ্কার মন্ত্রগুঞ্জনকারী কোটি কোটি ভ্রমর দ্বারা বেষ্টিতা হয়ে অসুরের দিকে এগিয়ে গেলেন। এইসব ভ্রমররা একযোগে দৈত্যদের বক্ষস্থল বিদীর্ণ করল। এইভাবেই ভুবনেশ্বরী দেবী বারবার পৃথিবীকে অসীম বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তাই একজন ভক্তের চোখে তিনি হলেন অসীম করুণা ও ভালোবাসার প্রতিমূর্তি। তিনি হলেন সন্তানবৎসলা এবং ভক্তদের পরম আশ্রয়।

ত্রিপুরভৈরবী : এবার আমরা ত্রিপুরভৈরবীর কথা বলব। ত্রিপুরভৈরবী হলেন জগন্মাতা সতীর অভিনব সাধিকা এবং চণ্ডরূপ। একসময় মহাদেবকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য হিমালয় কন্যা কঠোর তপস্যায় নিমগ্না হয়েছিলেন। তাঁর এই তপস্যার কাঠিন্য দেখে তপস্বীজীবী ঋষিরা পর্যন্ত অবাক হয়ে যান। তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে দেবীর ওপর ঐশী শক্তি ভর করেছে। তিনি পঞ্চতপা সাধনে নিযুক্তা হলেন। এর জন্য তাঁকে আকণ্ঠ হিমশীতল জলে দাঁড়িয়ে তপোশ্চারণ করতে হয়েছিল। আহার ত্যাগ করে দিনের পর দিন অতিবাহিত করলেন। যেহেতু বৃক্ষের গলিত পত্রও গ্রহণ করেননি তাই তিনি হলেন অপর্ণা। ব্রহ্মচারিণী উমার এই তপস্যার রূপটি ভৈরবীস্বরূপ।

শ্রীশ্রীচণ্ডীর তৃতীয় অধ্যায়ে ত্রিপুরভৈরবীর উদ্ভব কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে তিনি দেবতাদের সম্মিলিত তেজ থেকেই সৃষ্টি হয়েছেন। মহিষাসুর বধের আগে তাঁকে চণ্ডমূর্তিতে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। তিনি ভগবান নৃসিংহের অভিন্না শক্তি। এই ত্রিপুরদেবী মধু পান করে জড়িত কণ্ঠস্বরে বলেছিলেন, ‘গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম।” তারপর তিনি ত্রিশূলের আঘাতে মহিষাসুরকে বিদ্ধ করেন। তিনি প্রচণ্ড অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিলেন। এই হাসির মধ্যেই বোধহয় চণ্ডরূপের আভাস লুকিয়েছিল। ভৈরবীরূপে তিনি শিবকে দেখা দিলেন। তখনও তাঁর কণ্ঠে ছিল অট্টহাসি। এই দেবীকে বলা হয় কালভৈরবের ভার্যা। তিনি রক্তবর্ণা এবং রক্তবস্ত্র পরিহিতা। তাঁর কণ্ঠে মুণ্ডমালা দোদুল্যমান। তাঁর বক্ষদেশে রক্ত চন্দনের লেপন। তিনি পদ্মাসনা। তাঁর চার হাতে জপমালা, পুস্তক, বর এবং অভয়মুদ্রা। তাঁর মুণ্ডমালার এক একটি মুণ্ড এক একটি বর্ণের প্রতীক। তাঁর হাতে যে পুস্তকটি সেটি হল ব্রহ্মবিদ্যা সংক্রান্ত পুস্তক। তিনটি নেত্রে তাঁর তিনটি বেদ অবস্থান করছে। তাঁকে বলা হয় ভৈরবী, দুঃখসংহন্ত্রী, যমদুঃখনাশিনী।

ছিন্নমস্তা : দশমহাবিদ্যার এক অভিনব রূপকল্পনা হলেন দেবী ছিন্নমস্তা। এই মূর্তিটি দেখলে মনে হয় ইনি বোধহয় কোনও এক গূঢ় সাধনপথের প্রতি ইঙ্গিত করছেন। তাঁর খণ্ডিত মূর্তি তত্ত্বের দৃষ্টিতে পূর্ণত্বের প্রতীক। তাঁর সাধনরহস্য গুরু পরম্পরায় বিবৃত হয়েছে। এই রহস্য উদঘাটন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। নারদপঞ্চরাত্রে এই দেবীর বিচিত্র আবির্ভাব কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। আসুন আমরা সেই কাহিনিটি শুনে নিই।

একবার দেবী ভবানী তাঁর দুই সহচরী বর্ণিনী ও ডাকিনীকে নিয়ে মন্দাকিনীতে গিয়েছিলেন অবগাহন করার জন্য। স্নানান্তে তিনি স্বয়ং ক্ষুধার্তে কৃষ্ণবর্ণা হলেন। তাঁর সহচরীরাও তখন ক্ষুধার্ত। তারা বারবার খাদ্যের জন্য আবদার করছিলেন। তাঁদের করুণ আবেদনে দেবী নখাগ্রে স্বীয় মস্তক ছিন্ন করলেন। আলুলায়িত কেশ সমেত ছিন্নমুণ্ডটি বামহস্তে ধারণ করলেন। সেই মস্তকের কণ্ঠের থেকে তিনটি শোণির ধারা নির্গত হল। একটি ডাকিনী এবং অন্যটি বর্ণিনীর মুখে পড়তে লাগল। মধ্য ধারাটি পড়ল তার ছিন্ন অধরে। এইভাবেই তিনি নিজের ক্ষুধা নিবারণ করেছিলেন এবং দুই সঙ্গিনীকে তৃপ্ত করেছিলেন।

এই দেবীর ধ্যানমন্ত্র দীর্ঘ। সাধক নিজের নাভিতে বিকশিত শ্বেতপদ্মের কোষে রক্তবর্ণের সূর্যমণ্ডলের ত্রিকোণে দেবীর ধ্যান করবেন। দেবীর ধ্যানমন্ত্রের মধ্যে যে সমস্ত শব্দ আছে সেই প্রতিটি শব্দকে আলাদা আলাদাভাবে উচ্চারণ করতে হবে। চিদানন্দের স্থূলবৃত্তি কাম ও রতির ওপর দেবী তাঁর বামপদ সামনে দিয়ে অবস্থান করছেন। তিনি হলেন ত্রিকোণমণ্ডলের প্রতীক। তাঁর মধ্যে সত্ত্ব, রজ এবং তমোগুণের মিশ্রণ ঘটে গেছে। নিখিল সৃষ্টি তাঁর দ্বারাই সম্ভব হয়েছে।

দেবী ছিন্নমস্তা কোটি সূর্যের আলোক প্রভায় উজ্জ্বলিত। মস্তক ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও তিনি কিন্তু মৃতা নন। তিনি মহা চৈতন্যময়ী সত্তায় এসে অবস্থান করছেন। তাঁর দক্ষিণ হাতে কর্তনী বা কাটারি। তাঁর গলায় নাগ ও যজ্ঞোপবীত। তিনি সর্বদা ষোড়শবর্ষীয়া হিসেবে অবস্থান করেন। তাঁর দুই সঙ্গিনী বর্ণিনী এবং ডাকিনী সদা সর্বদা দেবীকে সেবা করছেন।

ছিন্নমস্তা দেবীর আরাধনায় জিবের শিবত্ব লাভ হয়। তাঁকে প্রচণ্ড চন্ডিকা নামেও ডাকা হয়। যে সাধক রতি কামকে অর্থাৎ সাধারণ মিলনকে পদদলিত করেন, তাঁরাই অমৃতধারা পান করে ধন্য হন।

আবার আমাদের মস্তক হল অহংকারের মূল। এই অহংকারের সূত্রটিকে দেবী নিজের হাতে কর্তন করছেন। নির্মম এবং নিরহঙ্কার সাধনই হল আসল সাধন।

ধূমাবতী : সতীর দশমহাবিদ্যা রূপের মধ্যে ধূমাবতী রূপটি দেবীর বিধবা রূপ। এই রূপ ও তার অন্তরলেও একট কাহিনি আছে। অসালে দশমহাবিদ্যার অন্তর্গত প্রতিটি দেবীমূর্তির বিন্যাসে এক একেকটি কাহিনি বিদ্যমান।

নারদপঞ্চরাত্রের উপাখ্যানে আছে একদিন গিরিজা দেবী মহাদেবের অঙ্কে বসেছিলেন। অকস্মাৎ তিনি ক্ষুধায় পীড়িত হলেন। বারবার আহার প্রার্থনা করলেন। তৃতীয়বার বিফল হবার পর আর ক্ষুধার জ্বালায় থাকতে না পেরে তিনি পতিকেই নিজের মুখে ভরে ফেললেন। কালরূপিণী জননী মহাকালকেই গ্রাস করলেন। ক্ষণকালের মধ্যে ধূম্ররাশি দেবী—দেহকে আচ্ছন্ন করল। মহাদেব মায়ার সাহায্যে নিজ দেহকে পুনঃনির্মাণ করলেন। তিনি দেবীকে বললেন, এই জগতে আমি ছাড়া কোনও পুরুষ নেই, তোমা ভিন্ন স্ত্রীও নেই। এখন তুমি বিধবা, তাই তুমি পতিব্রতের সমস্ত চিহ্ন পরিত্যাগ করে ফেলো। তুমি এখন শঙ্খ সিঁদুর পরিত্যাগ করো। তোমার এই মূর্তি বগলামুখী নামে খ্যাত হবে। আবার যেহেতু ধূম তোমার সমস্ত শরীর পরিব্যাপ্ত হয়েছিল তাই তুমি ধূমাবতী নামে পরিচিতি অর্জন করবে।

আবার অন্য একটি কাহিনি অনুসারে বলা হয় যে দক্ষ প্রজাপতির যজ্ঞে দেবী সতী স্বামী নিন্দা সহ্য না করতে পেরে দেহত্যাগ করেছিলেন। সেই দেহ থেকে মহা ধূমরাশি উৎপাদন হয়। জন্ম হয় সর্বশক্তি বিনাশিনী দেবী ধূমাবতীর। তাঁর ধ্যানে আছে—তিনি হলেন বিবর্ণা, চঞ্চলা, রুষ্ট এবং দীর্ঘাঙ্গী। তাঁর পরিধানে মলিন বস্ত্র। তাঁর মাথায় মুক্ত কেশরাশি। তিনি দন্তহীনা, লম্বিতস্তনা, কাকধ্বজা রথে উপবিষ্টা। তাঁর নাসিকা দীর্ঘ, নয়ন কুটিল। তিনি অত্যন্ত ক্রুর স্বভাবের অধিকারিণী। ক্ষুধাতৃষ্ণায় দেবী সর্বদা কাতর এবং ভয়ঙ্কর। তাঁর দুটি হাত কম্পমান। এক হাতে কুলো ও অন্য হাতে অভয়মুদ্রা। এই দেবীকে আমরা মোক্ষদাত্রী না বলে ‘অরিক্ষয়কার’ বলেছি। অর্থাৎ তিনি বহিঃশত্রু এবং অন্তঃশত্রু এই দু’ধরনের শত্রুকে নাশ করতে পারেন।

বগলামুখী : দশমহাবিদ্যার অষ্টম মহাবিদ্যা বগলামুখী দেবী। তাঁকে সিদ্ধবিদ্যা এবং পীতাম্বরাবিদ্যা হিসেবে ডাকা হয়। বগলাদেবীর মন্ত্রের ভিতরে আছে ব্রহ্মাস্ত্র স্বরূপ চিন্তা। এই মন্ত্র উচ্চারণ করলে সাধকবর্গ পরম সিদ্ধিলাভ করেন। এমনকি এই মন্ত্র শত্রুস্তম্ভনকারী ব্রহ্মাস্ত্ররূপেও ব্যবহৃত হয়। এই মন্ত্রশক্তির যথাযথ প্রয়োগে যাগ কিরণশীল বায়ুর গতিবেগও রুখে দেওয়া সম্ভব। বগলামুখীর ধ্যানমন্ত্রে শক্তিশালী দেবী দুর্গার স্মরণ হয়—এই মন্ত্র অনুসারে বলা হয়েছে—”বাম করে জিহ্বা—কে টেনে ধরে শত্রুকে পীড়ন করতে করতে যিনি দক্ষিণ হাতে গদার আঘাত করছেন, সেই পীতাম্বরভূষিতা দ্বিভূজা দেবীকে আমি প্রণাম করি।”

কুব্জিকাতন্ত্রে প্রথম পর্বে বগলা শব্দের অক্ষরগুলির তাৎপর্য এইভাবে বর্ণিত হয়েছে—

‘ব—কারে বারুণী দেবী গ—কারে সিদ্ধিকা স্মৃতা।

ল—কারে পৃথিবী চৈব বৈতন্যা মে প্রকীর্তিতা।।’

—ব—কারের অর্থ বারুণী অর্থাৎ দেবী অসুর দমনকালে মদনমত্তা অবস্থায় আছেন। গ—কারে তিনি মানবকে সর্বপ্রকার সিদ্ধিপ্রদান করেন। ল—কারে পৃথিবী—তিনি আমাদের কাছে মাতৃসমা। তাঁর সঙ্গে সর্বংসহা বসুন্ধরার মিল আছে। দেবী পালনীশক্তির আধার আবার চৈতন্যরূপিণী। এইসব গুণের আধার স্বরূপিণী বলেই তিনি বগলা।

মহাপ্রভাবসম্পন্না বগলাদেবীর আবির্ভাব কেমনভাবে হয়েছে? আসুন তাঁর উৎপত্তির কাহিনি শুনে নিই। স্বতন্ত্রতন্ত্রে তাঁর উৎপত্তির কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। তিনি দস্যুদের হাত থেকে মানুষ এবং দেবতাদের রক্ষা করার জন্যই পৃথিবীতে আবির্ভূতা হন।

এই দেবীর পুজো করলে আমরা দৈবী প্রকোপ থেকে রক্ষা পাই। শুধু তাই নয়, বগলাদেবীর পুজোতে আমরা অভিচারিক কর্ম সম্পাদন করতে পারি। ভোগ এবং মোক্ষ—উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর পূজা সিদ্ধিদায়ক।

দেবীর রূপকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্বভাবের সুন্দর বৈশিষ্ট্যগুলিকেও বিভিন্ন তন্ত্রশাস্ত্রে বর্ণিত করা হয়েছে। দেবী বগলা পীতবস্ত্রা পরিহিতা, পীতপুষ্পপ্রিয়া এবং পীতঅলঙ্কারধারিণী। তিনি শত্রুকে সম্মোহিত করেন বলেই ‘শত্রু সম্মোহজননী’। শত্রুর বাকস্তব্ধ করেন বলে তাঁকে আমরা ‘শত্রুবাক্যস্তম্ভনকারিণী’ বলে থাকি। সমগ্র দুষ্টের বিনাশ করেন বলে তিনি ‘সর্বদুষ্টবিনাশিনী’। দুষ্টদের ক্ষোভ বর্ধিত করেন বলে ‘দুষ্টক্ষোভ—বর্ধিনী’ এবং ভক্তের ক্ষোভ দূর করেন বলে ‘ভক্তক্ষোভনিবারিণী’। দুষ্টদের সন্তাপের কারণ বলে ‘দুষ্টসন্তাপিনী’, আবার ভক্তদের সন্তাপনাশ করেন বলে তিনি ‘ভক্তসন্তাপনাশিনী’। মহাস্তম্ভনকর্ত্রী—তিনি ইচ্ছা করলেই এক লহমায় এই বিপুল বিশ্বের গতি স্তব্ধ করে দিতে পারেন। যদি কোনও ভক্তের প্রতি কেউ যদি স্তম্ভনবিদ্যা প্রয়োগ করে, তবে মা বগলামুখী ‘ভক্তস্তম্ভনকারিণী’ রূপে তাকে কৃপাদান করেন।

সুবর্ণকান্তি দেবী গম্ভীরা, ত্রিনয়না এবং কমলাসনে আসীনা। তিনি শত্রুমোহিনী। এই দেবীর অপার মহিমার কথা বগলামুখী স্তোত্রে বিবৃত হয়েছে এইভাবে

‘বাণী মূকতি রঙ্কতি ক্ষিতিপতির্বৈশ্বানরঃ শীততি

ক্রোধী শম্যতি দুর্জনঃ সুজনতি ক্ষিপ্রানুগঃ খঞ্জতি।

গর্বী খর্বতি সর্ববিচ্চ জড়তি ত্বন্মন্দ্রিমনান্দ্রিতঃ

শ্রীনিত্যে বগলামুখি প্রতিদিনং কল্যাণি তুভ্যং নমঃ।’

—হে দেবী, তোমার মন্ত্রোচ্চারণে বাক্পটু মূক হয়। ক্ষিতিপতি হন পথের ভিক্ষু, বৈশ্বানর অগ্নি শীতল হন। তোমার মন্ত্রোচ্চারণে ক্রোধীর ক্রোধ প্রশমিত হয়। দুর্জন ব্যক্তি সুজনে পরিণত হয়। ক্ষিপ্রগামী হয় খঞ্জ। অহংকারীর সব অহংকার দূরীভূত হয়। সর্বজ্ঞ পণ্ডিত এক নিমেষে হন জড়প্রায়। হে কল্যাণী বগলামুখী, আমি তোমাকে প্রণাম জানাই।

মাতঙ্গী : মহামায়ার বিচিত্র লীলাবিলাস তরঙ্গে মাতঙ্গী এক অপরূপা সৃষ্টি। এঁকে জড়িয়ে অনেক কাহিনি—গল্পকথা প্রচলিত আছে। তিনি তত্ত্ব এবং সাধনার বিকাশকল্পে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। দেবী মাতঙ্গী সাধককে পুরুষার্থ সিদ্ধি দান করেন। যেকোনও গৃহস্থের কাছে তিনি সুখদায়িনী শক্তিরূপে বিভূষিতা।

নারদপঞ্চরাত্রে মাতঙ্গী রূপের এক অদ্ভুত লীলার কথা বিবৃত করা হয়েছে। যেখানে শিব হলেন চণ্ডাল এবং দেবী হলেন উচ্ছিষ্টা চণ্ডালিনী। একবার কৈলাস শিখরে মহাদেবের অঙ্কে উপবিষ্টা মহাদেবী পার্বতী পিত্রালয়ে যাবার বাসনা প্রকাশ করেছিলেন। আবার অন্যদিকে সেই একই সময়ে পার্বতীর পিতা—মাতা—হিমালয় ও মেনকা নাতি ক্রৌঞ্চকে শিবসদনে প্রেরণ করেন। বলা হয়েছিল, হিমালয় আবাসে কয়েকদিন বাদে বিশেষ উৎসব পালিত হবে। আদরের কন্যা যেন কিছুকালের জন্য পিত্রালয়ে বাস করেন।

পার্বতী হর্ষচিত্তে পিতৃগৃহের উদ্দেশে রওনা হলেন। মহাদেব ক’দিন বাদে আসবেন। দেখতে দেখতে বেশ কয়েক মাস কেটে গেল। শিব একদিন শঙ্খকারের বেশ ধরে উমার পিতৃগৃহে এলেন। অন্তপুরের সকল নারীর হাতে শাঁখা পরিয়ে দিলেন। কেবল পার্বতীকে শঙ্খ দিলেন না। অনেক অনুরোধের পর শঙ্খকার পার্বতীকে শঙ্খ পরিয়েছিলেন। শঙ্খের মূল্য স্বরূপ এক অদ্ভুত জিনিষ চাইলেন। পার্বতীর পরিচয় জেনেও তিনি বলেছিলেন—’শীঘ্রং বরয় মাং ভদ্রে নান্যৎ পণ্যং মমেপ্সিতম্’—অর্থাৎ তুমি আমাকে বরণ করো, এছাড়া অন্য কোনও মূল্যে আমার কোনও অভিলাষ নেই। সামান্য শঙ্খকারের মুখনিঃসৃত এই কথাগুলি শুনে পার্বতী অত্যন্ত বিস্মিত হন। তিনি শাপ দেবার আগে ধ্যানস্থ হলেন। তখন মহাদেবের স্বরূপ বুঝতে পেরে হেসে বললেন, দিনান্তরে তোমার মনোবাসনা পূর্ণ করব।

কিরাতরূপী মহাদেব যেখানে সন্ধ্যা করছিলেন সেই মানস সরোবরের তীরে পার্বতী তাঁর সখীদের নিয়ে পৌঁছে গেলেন। চণ্ডালিনীর বেশে অপরূপা পার্বতীকে নিয়ে মহাদেব বিহার করলেন। নিজেও চণ্ডাল বেশ ধারণ করলেন। এই নতুন বিহারে তাঁরা দু’জনেই যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছিলেন। মহাদেব তখন বর দান করে বলেন, যেহেতু তুমি চণ্ডালিনী বেশে আমার সঙ্গে মিলিত হয়েছো তাই তুমি ‘উচ্ছিষ্টা চণ্ডালিনী’ নামে প্রসিদ্ধা হবে। শক্তিপূজার পর তোমার পূজা করলেই তবে সেই পূজার সিদ্ধি ঘটবে। অন্যদিকে তোমার এই মূর্তি দশমহাবিদ্যার অন্যতম রূপ মাতঙ্গী নামে খ্যাত হবে। ‘মাতঙ্গী নাম মূর্তিস্তে ভবিষ্যতি ন সংশয়।’

শ্রীশ্রীচণ্ডীর সপ্তম অধ্যায়ে আমরা দেবী মাতঙ্গীর রূপবর্ণনা পাই এইভাবে—

‘ধ্যায়েয়ং রত্নপীঠে শুককলপঠিতং শৃন্বতীং শ্যামলাঙ্গীম্।

নাস্তৈকাঙঘ্রিং সরোজে শশিশকলাধরাং বল্লবকীং বাদয়স্তীম্।।

কহ্লারাবদ্ধমালাং নিয়মিতবিলাসচ্চচূড়িকাং রক্তবস্ত্রাম্।

মাতঙ্গীং শঙ্খপাত্রাং মধুরমধুমদাং চিত্রকোদভাসিভালাম্।।’

—দেবী রত্নময়বেদিতে অধিষ্ঠিতা। তিনি শুকপাখির কলরব করছেন। প্রস্ফুটিত শতদলের ওপর তাঁর একটি চরণ রেখেছেন। মস্তকে শোভিত চন্দ্রকলা। তিনি বীণাবাদনে রতা, শ্বেতপদ্মের পুষ্পমালা তাঁর কণ্ঠে দোদুল্যমান, পরিধানে রক্তবস্ত্র। মাথার চুল চূড়া করে বাঁধা। শঙ্খপাত্রে সুমিষ্ট অমৃতপানে তিনি বিহ্বলা। তাঁর কপালে বিচিত্র তিলক শোভিত। এই শ্যামলাঙ্গী মাতঙ্গী দেবীকে আমি ধ্যান করি। দেবীর হাতে বল্লকী বা বীণা আছে। বীণা নাদের প্রতীক। আবার পদ্ম বহু বর্ণাত্মক সৃষ্টির প্রতীক। শঙ্খ পাত্র হল ব্রহ্মরন্ধ্র এবং মধু হল অমৃত। অর্থাৎ দেবী হলেন ব্রহ্মবিদ্যাস্বরূপিণী রূপে অধিষ্ঠিতা। তাঁর রক্তবর্ণের বস্ত্র অগ্নি ও জ্ঞানের প্রতীক। এর সঙ্গে তাঁর চারটি হাত চারটি বেদের প্রতীক স্বরূপ বিরাজ করছে। শুকের কলধ্বনি এক্ষেত্রে বীজমন্ত্র। দেবী বেদবিদ্যাপ্রদাত্রী। শুকপাখি শিক্ষা বা অন্তেবাসীর প্রতীক।

তান্ত্রিকরা বলে থাকেন দেবী মাতঙ্গী হলেন দশমহাবিদ্যার অন্যতম মহাবিদ্যা। আবার বৈদিক পণ্ডিত ও আচার্যদের কাছে তিনি হলেন সরস্বতী স্বরূপা। তান্ত্রিক শক্তি পূজার একেবারে শেষে উচ্ছিষ্টা চণ্ডালিনীর পূজা করা বিধেয়। তিনি মাতঙ্গী দেবী—ত্রিনয়না। তাঁর বেদতুল্য চারটি হাতে বিভিন্ন অস্ত্রের কথাও কোনও কোনও ধ্যানমন্ত্রে উল্লিখিত আছে। তিনি বেদবাহুচতুষ্টয়ে খড়্গ, খেটক, পাশ ও অঙ্কুশ ধারণ করে আছেন—

‘বেদৈর্রাহুদণ্ডৈরসিখেটক পাশাঙ্কুশধরাম্।’

দেবী মাতঙ্গী আরাধনায় সাধক বিপুল কবিত্বশক্তি লাভ করেন। তাঁর পার্থিব সত্তার সার্বিক বিকাশ ঘটে যায় এবং তিনি অনন্ত সম্পদকে করায়ত্ত করতে পারেন।

কমলা : এবার আমরা দশমহাবিদ্যার সর্বশেষরূপ দেবী কমলার কথা বলব। দেবী কমলা হলেন মহালক্ষ্মীর প্রতীক স্বরূপ। তাঁর স্নিগ্ধ মূর্তি। তিনি সদাসর্বদা কৃপা ও করুণা দান করছেন। বলা হয়ে থাকে কালী এবং কমলা হলেন একই সত্তায় দুই প্রতিরূপ। অরূপা কালী হলেন বিমূর্ততার প্রতীক আর দেবী কমলা শ্রীরূপিণী মূর্তিময়ী বিগ্রহ—দেখলে মনে হয় তিনি বুঝি বৈষ্ণবীমায়া, কালীরূপে যে অব্যক্ততার জ্যোতি ‘নীলাশ্মদ্যুতি’ রূপে ঋষির ধ্যাননেত্রে প্রকটিত হয়েছিল, কমলাতে সেই জ্যোতি সগুণাত্মক পরিপূর্ণ রূপে প্রকাশিত হয়েছে। অপূর্ব সুন্দরী দেবী কমলা সুবর্ণবর্ণা, পদ্মালয়া—তাঁর ধ্যানমন্ত্রটি উচ্চারণেই তাঁর রূপের আভিজাত্য উপলব্ধি করা সম্ভব হয়। বলা হয়েছে দেবীর অঙ্গে কাঁচা সোনার কান্তি। চারদিকে হিমগিরিসম বিরাটাকৃতির চারটি হাতি শুঁড়ে কলস ধরে অমৃতবারি সিঞ্চনে দেবীর অভিষেক করছে। দেবীর চারটি হাত, দু’টি হাতে দু’টি পদ্ম, অপর দু’টি হাতে বর এবং অভয়মুদ্রা। তাঁর মাথায় উজ্জ্বল মুকুট ও তিনি পট্টবস্ত্র পরিহিতা। তাঁর লাবণ্যময়ী শরীর। রক্তোৎপলে আসীনা এই দেবীকে আমি সদা সর্বদা প্রণাম করি।

তিনি সর্বসৌভাগ্যদায়িনী। সমুদ্র মন্থনে তাঁর উদ্ভব। তিনি বিষ্ণুর বক্ষ বিলাসিনী। ভাগবতে সমুদ্র মন্থনকালে এই দেবীর আবির্ভাব—

”ততশ্চাবিরভূৎ সাক্ষাচ্ছ্রী রমা ভাগবৎ পরা।

রঞ্জয়ন্তী দিশাঃ কান্তা বিদ্যুৎ সৌদামিনী যথা।।” (৮/৮/৮)

দেবীর রূপ, ঔদার্য, যৌবন, সৌন্দর্য ও মহিমায় দেবতা, অসুর ও মানব সকলেই একেবারে বিমোহিত হয়ে গেছে। সমুদ্র থেকে যখন ধীরে ধীরে এই দেবী উত্থিতা হলেন তখন স্বয়ং ইন্দ্র তাঁর জন্য আসন বানিয়েছিলেন। অভিষেকের জন্য পৃথিবী সমস্ত ওষধি, পঞ্চগব্য, ফুল, ফল নিয়ে এসেছিলেন। ঋষিরা এইসব সামগ্রী দ্বারা এই অভিষেক সম্পন্ন করেছিলেন। মেঘেরা মৃদঙ্গ, ডমরু, শঙ্খ, বীণা বাজিয়েছিলেন। লক্ষ্মীদেবী সিংহাসনে আসীন হলেন। ভগবান আদি শঙ্করাচার্য দেবীর স্তব রচনা করেছিলেন। এই দেবী প্রসন্না হন ওই কনকধারা স্তব শ্রবণ করে। তিনি বেদের শ্রীযুক্ত পাঠ শ্রবণ করতে ভালোবাসেন। এই দুই শ্লোক স্তুতিতেই দেবীর প্রিয় পদ্মপুষ্পের ব্যঞ্জনাময় প্রাচুর্য পরিলক্ষিত হয়।

শ্রীযুক্তে দেবীর স্তুতিতে বলা হয়েছে—

”পদ্মপ্রিয়ে পদ্মিনী পদ্মহস্তে মদদলায়তাক্ষি।”

কনকধারাস্তবে রয়েছে—”সরসিজ নিলয়ে সরোজহস্তে।”

স্বতন্ত্রতন্ত্রের মতে কোলাসুর বধের জন্যই দেবী কমলার আবির্ভাব।—

”নমস্তে গরুঢ়ারূঢ়ে কোলাসুরভয়ঙ্করি।”

পদ্মপুরাণে আবার দেবীর স্তবস্তুতিতে বলা হয়েছে যে, স্বয়ং ইন্দ্র তাঁর স্তুতি করে বলেছেন—

”পদ্মাসনস্থিতে দেবি পরব্রহ্মস্বরূপিণী।

পরমেশি জগন্মার্তমহালক্ষ্মীর্ণমোহোস্তুতে।।”

মহালক্ষ্মাষ্টকম—এ কমলা দেবীর বন্দনা করা হয়েছে। তিনি ঘরে ঘরে পূজিতা। মানুর অনন্ত বৈভব অর্জন করার জন্য তাঁর পুজো করে আরাধনা করে থাকেন।

তাঁর দু’হাতে সৌভাগ্য এবং সম্পদের প্রতীকস্বরূপ পদ্ম বিদ্যমান। এইভাবে আমরা মানবমনের পূর্ণ বিকাশকে অন্তরে ও বাহিরে প্রতীকায়িত করতে চেয়েছি। অপর দুই হাতে তিনি অভয় ও কৃপা বর্ষণ করছেন।

এই হল দশমহাবিদ্যার অন্তর্গত বিভিন্ন দেবীর পরিচয়। এই পরিচয়লিপিটুকু পাঠ করলে আমরা বুঝতে পারব যে শক্তির এক একটি রূপকে এক একটি মূর্তির মাধ্যমে অতিকায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যে সমস্ত যশস্বী পণ্ডিতবর্গ এবং ঋষিরা এই রূপকল্পনা করেছেন তারা যে কত বড় বৈদিক শক্তির অধিকারী ছিলেন তা সহজেই অনুমেয়।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন