অভিরূপ সরকার
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
দুপুরে রত্না ফোন করেছিল। ফোনটা সাইলেন্ট করে আদিত্য তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছে। অত ভোরে উঠে দুপুরবেলা ঘুম পেয়ে গিয়েছিল তার। ঘুম থেকে উঠে দ্যাখে তিন-তিনটে মিসড কল। তিনটেই রত্নার। এতদিনে রত্না নিশ্চয় ছেলে নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে ফিরে এসেছে। কিন্তু রত্নার আজ কলেজ নেই? ভাবতে ভাবতে আদিত্য রত্নার ফোনটা লাগাল।
‘তোর ব্যাপারটা কী? ফোন ধরিস না, ফোন বেজে যায়। এদিকে আসিসও না। কী এমন রাজকার্য করিস?’ রত্না ফোন তুলে একগাদা কথা শুনিয়ে দিল।
‘আরে তোদের মতো দশটা-পাঁচটার চাকরি করব এমন সৌভাগ্য নিয়ে তো জন্মাইনি। একটা নতুন কেস এসেছে। সেটার জন্যে দৌড়োদৌড়ি করতে হচ্ছে। আজ ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠেছি। বিশ্বাস না হলে গৌতমকে জিজ্ঞেস করতে পারিস। তাই দুপুরে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’ আদিত্য সামান্য ঘুম-জড়ানো গলায় বলল।
‘ছাড়, ছাড়। শুধু বাজে কথা। ভাল করে শোন। আজ সকালে গড়িয়াহাট থেকে অমিতাভ একটা আস্ত চিতল মাছ কিনে এনেছে। খুব বড় নয় আবার খুব ছোটও নয়। আমি সারাদুপুর লেবার দিয়ে চিতল মাছের মুইঠ্যা বানিয়েছি। আর আমার ইন্সট্রাকশানে সন্ধেবেলা রান্নার মাসি চিতল মাছের পেটি রাঁধবে। তুই সন্ধের মধ্যে চলে আসবি। কাজ আছে বললে ভুঁড়ি ফাঁসিয়ে দেব।’
‘আমার তো ভুঁড়িই নেই, ফাঁসাবি কী করে?’
‘আবার বাজে কথা। আসবি কি না বল।’
‘আসতে তো হবেই। তবে যেতে যেতে সাতটা বেজে যাবে। একটা ছোট্ট কাজ সেরে যাব।’
‘ছটা হলে ভাল হতো। ঠিক আছে সাতটাতেই আয়।’
‘তোদের কলেজ কি আজকাল মুইঠ্যা রান্না করার ছুটি দিচ্ছে? আজ কলেজ যাসনি কেন?’
‘মুইঠ্যা রান্নার ছুটি নয়। আজ আমাদের কলেজের ফাউণ্ডেশন ডে। তাই ছুটি। আমি তোর মতো ফাঁকিবাজ নই। আর তোর সঙ্গে বাজে কথা বলার সময়ও আমার নেই। রাখছি। অনেক কাজ বাকি আছে। তুই সাতটার মধ্যে চলে আসবি।’
রত্না ফোন রেখে দেবার পর আদিত্য ইলেকট্রিক কেটলিতে চায়ের জল গরম করতে দিল। চা ভিজতে না ভিজতেই আবার ফোন। এবার কেয়া।
‘আর পনের মিনিটের মধ্যে বোর্ডিং শুরু হবে। ফ্লাইটটা টাইমেই আছে। তার মানে পাঁচটা নাগাদ দমদম পৌঁছব। নেমে ফোন করব। এখন রাখছি।’
এইজন্যেই আদিত্য খানিকটা সময় হাতে রেখেছিল। সে জানত কেয়া দমদমে নেমেই ফোন করবে। সেই সময়টা সে রাস্তায় কিংবা রত্নাদের বাড়িতে থাকতে চায়নি। আসলে কেয়ার সঙ্গে যে সে ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছে এটা আদিত্য অমিতাভ-রত্নাকেও বলেনি। বলার আগে অনেকবার ভেবে দেখতে হবে। আপাতত যেমন চলছে চলুক। আদিত্যর অব্যবহিত সমস্যাটা অন্য। কেউ তাকে নিয়োগ করুক বা না করুক ফিরদৌসের খুনিকে সে খুঁজে বার করবেই। এটা তার নিজের কাছে নিজের চ্যালেঞ্জ।
একটা প্রশ্ন তাকে গভীরভাবে ভাবাচ্ছে। ফিরদৌসের ঘরে দু-পিস লাগেজ পাওয়া গেছে। একটা কালো সুটকেস, একটা নীল ব্যাগ। কালো সুটকেসটাতে তো ফিরদৌসের সমস্ত জিনিসপত্র এঁটে যাচ্ছে। তাহলে নীল ব্যাগটা কীসের জন্যে? এছাড়া আরও দু-একটা ছোটখাট ধাঁধা আছে। কিন্তু আদিত্যর মনে হচ্ছে সবার আগে ব্যাগ-রহস্যের কিনারা করা দরকার।
প্রায় পৌনে ছ’টার সময় কেয়া ফোন করল। তার আগে আদিত্য দু’বার ফোনে কেয়াকে ধরার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুবারই কেয়ার ফোনটা সুইচড অফ পেয়েছে। তার মানে কেয়ার উড়োজাহাজ তখনও মাঝ আকাশে।
‘ফ্লাইটটা একটু লেট ছিল। তার ওপর কনভেয়ার বেল্টের সামনে পনের মিনিট হাপিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে। এখন এয়ারপোর্টের বাইরে এসে গাড়ির জন্যে ওয়েট করছি।’ কেয়ার গলাটা কিছু ক্লান্ত শোনাল।
‘তাহলে আজ আর কথা বলব না। তুমি বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম কর।’ আদিত্য সংক্ষেপে বলল। ‘তোমার পৌঁছ-সংবাদটা পেয়ে গেলাম এটাই যথেষ্ট। কাল ভাল করে কথা বলা যাবে।’
‘তোমার জন্যে একটা গিফট এনেছি। কাল দেখা করব ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার এক পিসি মারা গেছেন। পিসতুতো দিদি ফোন করেছিল। আমরা তখন জঙ্গলে ঘুরছি। হঠাৎ ফোন এল। আগামীকাল কাজ। সারাদিন ওখানেই থাকতে হবে। পরশু সন্ধেবেলা দেখা করতে পারবে?’
‘কোথায়? তোমার স্কুলের পাড়ায়? ওই যে আমাদের স্কুলের কাছে ক্যাফে অ্যান্ড সুগার বলে জায়গাটা আছে, ওখানে?’
‘না, না। স্কুলের কাছে দেখা না করাই ভাল। ছাত্রীরা যদি দ্যাখে দিদিমনি ধেড়ে বয়েসে একজন পুরুষ মানুষের সঙ্গে রেস্টোরেন্টে বসে কফি খাচ্ছে তাহলে চারদিকে ঢি-ঢি পড়ে যাবে।’ কেয়ার গলাটা উদ্বিগ্ন শোনাল।
‘তাহলে কি কফি হাউস?’
‘না, না। কফি হাউসে ভীষণ গরম। ওখানে বসতে পারব না।’
‘তাহলে এক কাজ করা যাক। পার্ক স্ট্রিটে দেখা করা যাক। রাত্তিরে ডিনার খেয়ে আমি তোমাকে হস্টেলে নামিয়ে দেব।’
প্রস্তাবটা মনে হল কেয়ার পছন্দ হয়েছে। একটু থেমে সে বলল, ‘তিনটে অব্দি আমার স্কুল। চারটে থেকে টোলে পড়ানো আছে। চারটে থেকে পাঁচটা, পাঁচটা থেকে ছ’টা। পরপর দু’টো ব্যাচ। তারপর হস্টেলে ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কলেজ স্ট্রিটের মোড় থেকে তোমাকে তুলে নেব। এই ধর সাড়ে সাতটায়?’
‘একদিন না পড়ালে হয় না?’ আদিত্য জানে কেয়ার রোরিং টিউশনির ব্যবসা। দু’তিনটে টিউটরিয়াল হোমের সঙ্গে ব্যবস্থা আছে।
‘না হয় না। ডুয়ার্স বেড়াতে গিয়ে একটা সপ্তাহ ক্লাশ মিস করেছি। আর করা যাবে না। সামনে হায়ার সেকেন্ডারি। আমাকে সিলেবাস শেষ করতে হবে। যা একখানা সিলেবাস বানিয়েছে, আইনস্টাইন এলেও দুবছরে পড়ে শেষ করতে পারত না।’ কেয়া হঠাৎ থেমে গেল। তারপর বলল, ‘এই, আমার গাড়ি এসে গেছে। তাহলে ওই কথাই রইল। পরশু সন্ধে সাড়ে সাতটায় পাতিরামের সামনে থেকে তোমাকে তুলে নেব। রাখছি।’
সাড়ে সাতটা নাগাদ রত্নাদের বাড়িতে পৌঁছল আদিত্য। ভেবেছিল, দেরি হয়েছে বলে রত্না বকাবকি করবে। কিন্তু কী অজ্ঞাত কারণে কে জানে, রত্না শান্তভাবেই বলল, ‘আয়। মাত্র আধ ঘন্টা দেরি করেছিস। নট ব্যাড। আমরা বলাবলি করছিলাম তুই আটটা সাড়ে আটটার আগে কিছুতেই আসতে পারবি না।’
‘তোর বর কোথায়?’ আদিত্য জুতো খুলতে খুলতে বলল।
‘পড়ার ঘরে। স্কাইপে নট ওনলি বাট অলসো করে সাহেব কো-অথরের সঙ্গে কথা বলছে।’
‘ও বাবা। তাহলে তো অনেকক্ষণ লাগবে। টুবলু কোথায়?’
‘নিজের ঘরে বসে পড়ছে। ওর তো সামনেই অ্যানুয়াল।’
‘তাহলে একটু চা খাওয়া।’
‘চা করছি। রান্নাটাও একটু দেখে আসি। অমিতাভ আর বেশিক্ষণ স্কাইপে থাকবে বলে মনে হয় না। সেই সাড়ে ছ’টা থেকে স্কাইপ শুরু করেছে। তুই একটু বোস। আমি বরং টিভিটা খুলে দিয়ে যাই। খবরটা দ্যাখ।’
টিভি খুলে দিয়ে রত্না রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। বাংলা খবর হচ্ছে। পলিটিকাল খবর। নেতাদের পরস্পরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির খবর। একজন আর একজনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে। যার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে সেও পালটা বিবৃতি দিয়েছে। তাই নিয়ে দুপক্ষের তরজা। আদিত্যর এ সবে কোনও ইনটারেস্ট নেই। সে অমিতাভর বুক-শেলফ থেকে একটা বই বেছে নেবে বলে উঠে দু’পা এগিয়েছে ঠিক তখনই শুনতে পেল টিভির অ্যাঙ্কর মেয়েটি অন্য কিছু বলছে।
অ্যাঙ্কর মেয়েটি বলছে, ‘গতকাল জ্যাকেরিয়া স্ট্রিটের হোটেলে নৃশংস খুনের ঘটনার পর আজ আবার পুলিশ রাজারহাট নিউ টাউনে একটা চাঞ্চল্যকর খুনের হদিশ পেয়েছে। খুন হয়েছেন বছর পঁচিশেকের এক যুবতী। যে বাড়িতে তিনি খুন হয়েছেন সেটি চারতলা, এক তলায় গ্যারেজ, অন্য তিনটি তলায় একটি করে ফ্ল্যাট। বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে যুবতী একাই থাকতেন। তিন এবং চারতলার ফ্ল্যাটের মালিক দুজনেই অনাবাসী। তাঁরা অ্যামেরিকায় থাকেন। পুলিশ সূত্রে প্রকাশ, ডাকাতির উদ্দেশ্য নিয়ে দুষ্কৃতিরা মহিলার বাড়িতে ঢুকেছিল। সম্ভবত তারা জানত বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড কিছুদিনের জন্য ছুটি নিয়ে দেশে গেছে। মহিলা বাড়িতে একা রয়েছেন। বাড়ির সমস্ত জিনিস লণ্ডভণ্ড অবস্থায় পাওয়া গেছে। দু’টো আলমারিই খোলা। অনুমান করা হচ্ছে, আলমারি থেকে অনেক দামী জিনিস নিয়ে দুষ্কৃতিরা চম্পট দিয়েছে। আলমারির চাবি আদায় করার জন্য খুনের আগে মহিলার ওপর মনে হয় শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল। সব থেকে আশ্চর্য ব্যাপার, মৃতদেহের অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে এই খুন এবং ডাকাতির ঘটনাটা ঘটেছে বেশ কিছুদিন আগে। সিকিউরিটি গার্ড ছুটি থেকে ফিরে এসে আজ সকালে প্রথম এটা আবিষ্কার করে।
আদিত্য মগ্ন হয়ে খবরটা শুনছিল, খেয়াল করেনি কখন অমিতাভ পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ‘অত মন দিয়ে টিভিতে কী দেখছিস?’ অমিতাভ আলগোছে জিজ্ঞেস করল। ‘কতক্ষণ এসেছিস?’
‘এই মিনিট পাঁচ-সাত।’ টিভিতে চোখ রেখে আদিত্য অন্যমনস্কভাবে বলল।
টিভিতে এখন চারজন বিশেষজ্ঞকে দেখা যাচ্ছে—একজন মনোবিজ্ঞানী, একজন সমাজবিজ্ঞানী, একজন প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা আর একজন মহিলা কমিশনের সদস্য। এই বিশেষজ্ঞরা এখন এই খুনের ঘটনার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। আদিত্য তার জায়গায় ফিরে গিয়ে বসল। আলোচনা শোনার কোনও উৎসাহ তার নেই। অমিতাভও বসেছে।
‘রত্নাকে চা দিতে বলেছিস?’
‘বলেছি। ও চা করতে গেছে।’ আদিত্য এখনও খানিকটা অন্যমনস্ক হয়ে রয়েছে।
আদিত্যর অন্যমনস্কতা অবশ্য অমিতাভ খেয়াল করেনি। সে বলল, ‘পুরাতনী বাংলা গানের ওপর একটা বই লিখছি। একা নয়, আমার সঙ্গে টমাস সেসেমস্কা বলে একজন মিউসিকোলজিস্ট আছে। বাবা পোলিশ, মা আইরিশ, টমের জন্ম-কম্ম অ্যমেরিকায়। একেবারে পাগলাটে লোক। এক সময় রচেস্টার, নিউ ইয়র্কের ইস্টম্যান স্কুল অফ মিউজিকে অধ্যাপনা করত। সেটা ছেড়ে দিয়ে এখন এথনিক সঙ্গীতের খোঁজে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়। নিজে চমৎকার চেলো বাজাতে পারে। ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতে প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য, আর অতি সম্প্রতি অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকের বাংলা গানে প্রবল উৎসাহ হয়েছে। বছর দুয়েক আগে শিকাগোয় একটা কনফারেন্সে ওর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। দাঁড়া, টিভিটা বন্ধ করে দিই। আরে, রিমোটটা গেল কোথায়?’ অমিতাভ উঠে গিয়ে টিভিটা বন্ধ করে আবার ফিরে এল।
‘আমাদের ম্যানুস্ক্রিপ্টটা পাবলিশারের কাছে পাঠানোর আগে একটা লাস্ট রিভিশন করছিলাম। আমার কমেন্টগুলো দিয়ে টমের কাছে পাঠিয়েছিলাম। সেগুলো পড়ে ও স্কাইপ করল। ওর সঙ্গেই এতক্ষণ স্কাইপে কথা বলছিলাম।’
‘তোরা কি অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকের বাংলা গানের একটা ইতিহাস লিখছিস?’
‘ইতিহাস তো বটেই। কিন্তু শুধু ইতিহাস নয়। আমাদের একটা রিসার্চ কোয়েশ্চেন আছে। সেটা হল, বাংলা পুরাতনী গান, যে গানগুলো একশ বছর কী ধর আশি-নব্বই বছর আগেও বেশ পপুলার ছিল, রেগুলার আসরে গাওয়া হতো, সেগুলো হঠাৎ হারিয়ে গেল কেন? হিন্দুস্তানি মার্গসঙ্গীত তো হারিয়ে যায়নি। মারাঠি নাট্যসঙ্গীতও তো হারিয়ে যায়নি। তাহলে নিধুবাবু, শ্রীধর কথক, গোপাল উড়ে এমনকি রামপ্রসাদ বা কমলাকান্তর গান এখন আর লোকে শোনে না কেন?’
‘ভেরি ইন্টারেস্টিং কোয়েশ্চেন। কিছু পুরোনো গান নিশ্চয় সংগ্রহ করেছিস?’
‘প্রচুর সংগ্রহ করেছি। গ্র্যামাফোন রেকর্ডে যা বেরিয়েছিল তার সবই হার্ড ডিস্কে তোলা আছে। আঙুরবালা, ইন্দুবালা, কমলা ঝরিয়া, কে মল্লিক। তাছাড়াও নানা ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। আর গত মাসে দিল্লির ন্যাশানাল আর্কাইভ থেকে কালীপদ পাঠকের গাওয়া অনেকগুলো গান পেয়েছি। এগুলো একেবারে অথেন্টিক টপ্পা, রিয়াল জেমস। তুই শুনে দেখতে পারিস।’
‘সেই গানটা আছে? শ্যাম নাগর হে আমার, আমি আর প্রেম করব না, ফিরে যাও? আমার বাবার খুব প্রিয় ছিল গানটা।’
‘অবশ্যই আছে। দুতিনটে ভারশান আছে। এখন শুনবি?’
‘নিশ্চয় শুনব। কিন্তু তার আগে একটা দরকারি কথা সেরে নিই।’
রত্না চা নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। সঙ্গে ছোট ছোট আলুর টিকিয়া। ‘খুব বেশি দিলাম না। এখন টিকিয়া খেয়ে পেট ভরে গেলে রাত্তিরে খেতে পারবি না।’ রত্না আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলল। রত্নাও চা নিয়ে ওদের সঙ্গে বসেছে।
আদিত্য একটা টিকিয়ায় কামড় দিয়ে বলল, ‘সুপার্ব হয়েছে। ধনে পাতা দিয়েছিস, না?’
‘তোর ভাল লাগে বলে দিলাম। অমিতাভরও খুব ভাল লাগে। আমি ততটা ধনে পাতার ভক্ত নই।’
‘আমি জানি। ধনে পাতার ব্যাপারটায় মাঝামাঝি কিছু হয় না। যার ভাল লাগে, তার খুব ভাল লাগে আর যার লাগে না, তার একেবারেই লাগে না।’ আদিত্য কথাটা বলে অমিতাভর দিকে ফিরল।
‘কাজের কথাটা বলে নিই। তুই এক সময় বর্ধমান ইউনিভার্সিটিতে পড়াতিস না? মানে তোর বিদেশ যাবার আগেকার কথা বলছি।’
‘পড়াতামই তো। দুবছরের বেশি পড়িয়েছি। আমাদের বিয়ের সময় তো আমি বর্ধমানেই পড়াতাম।’
‘বেশ। আমার মনে আছে তুই তখন কলকাতা থেকে বর্ধমান যাতায়াত করতিস। ঠিক বলছি তো?’
‘বলে যা। এখন অব্দি একদম ঠিক বলেছিস।’
‘সেই সময় বর্ধমান মেডিকেল কলেজের কিছু ডাক্তারও তোর সঙ্গে নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করতেন। তুই বলেছিলি, তাদের কারও কারও সঙ্গে তোর বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিল। এখন কি তাদের কেউ বর্ধমান মেডিকেল কলেজে আছেন?’
‘এখন কি আর কেউ বর্ধমানে আছে? এতদিনে নিশ্চয় বদলি হয়ে গেছে। তোর ঠিক কী দরকার বলত?’
‘বর্ধমান মেডিকেল কলেজে একজন ডাক্তার আছেন, ডাক্তার সামন্ত। বয়েস খুব বেশি নয়। পেডিএট্রিশিয়ান। তার সঙ্গে কথা বলা দরকার। কেউ যদি ইনট্রোডিউস করে দিত খুব সুবিধে হত। তোর চেনা কেউ আছে যে আমাকে ডাক্তার সামন্তর সঙ্গে একটু ইনট্রোডিউস করে দিতে পারে?’
অমিতাভ অনেকক্ষণ ভেবে মাথা নাড়ল। ‘না রে। কাউকে মনে পড়ছে না। আমি বর্ধমান মেডিকেল কলেজের যেসব ডাক্তারদের চিনতাম তাদের বেশিরভাগের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই। আর দু-একজন যাদের সঙ্গে আছে তারা কেউই আর বর্ধমানে নেই। সরি।’
রত্না মন দিয়ে ওদের কথা শুনছিল। হঠাৎ বলে উঠল, ‘নীলাদ্রি বলে তোমার যে ইস্কুলের বন্ধু পিজিতে বাচ্চাদের ডাক্তার ছিল, সে কিছুদিন আগে বদলি হয়ে বর্ধমান না কোথায় গেল না?’
‘গেলে ভাল হত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নীলাদ্রি বদলি হয়ে বর্ধমানে যায়নি। মেদিনীপুরে গেছে।’
‘তোর বন্ধু কি বাচ্চাদের ডাক্তার? তাহলে একবার জিজ্ঞেস করে দেখ না? হয়তো ডাক্তার সামন্তকে চিনতেও পারে।’
‘ঠিক আছে। জিজ্ঞেস করে দেখব। তবে মনে হয় চেনার চান্স কম।’ অমিতাভ আড়মোড়া ভাঙল। বলল, ‘কালী পাঠকের গানটা তাহলে লাগাই?’
সেই রাত্তিরটা আদিত্য অমিতাভদের বাড়িতে থেকে গেল। পরদিন বেলা দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরবে বলে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে হাজরার মোড়ে যাবার অটোতে উঠেছে, গৌতমের ফোন এল।
অটোতে ড্রাইভারের পাশে বসলে পকেট থেকে মোবাইলটা বার করাই শক্ত। অতি কষ্টে আদিত্য যদি বা মোবাইলটা বার করতে পারল, সেটা কানে লাগিয়ে শুনল গৌতমের কথাগুলো খুব কেটে কেটে আসছে।
‘অটোতে আছি। তোর কথাগুলো খুব কেটেকেটে আসছে। শুনতেই পাচ্ছি না।’ আদিত্য কোনও রকমে বলল। উত্তরে গৌতম কী বলল আদিত্য বুঝতে পারল না। সে হাজরার মোড়ে অটো থেকে নেমে গৌতমকে একটা মেসেজ করল, ‘তুই কি আপিসে আছিস? তাহলে আমি মিনিট চল্লিশের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছি।’
কিছুক্ষণ পরে আদিত্য যখন যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনে ঢুকতে যাচ্ছে, দেখল গৌতম মেসেজ করেছে, ‘চলে আয়।’
গৌতমের অফিসে পৌঁছতে পৌঁছতে আদিত্যর প্রায় এক ঘণ্টা লেগে গেল। সেই পুরোনো সমস্যা। মেট্রোর গণ্ডগোল।
‘সেই কখন থেকে তোর সঙ্গে চা খাব বলে বসে আছি। এত দেরি করলি কেন?’ গৌতমের পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তার অফিসের চায়ের মানও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘণ্টা বাজিয়ে গৌতম বেয়ারাকে চা আনতে বলল।
‘আরে মেট্রোর পুরোনো গল্প। কোথায় লাইনে গণ্ডগোল, তাই ট্রেন আসতে দেরি করল।’
‘তোর স্ট্যাচারের একজন ডিটেকটিভের কিন্তু একটা নিজস্ব গাড়ি থাকাটা এসেনশিয়াল।’ গৌতম মুচকি হাসল।
‘গাড়ি! ভাত-ডাল জোটে না আবার গাড়ি! ভাল বলেছিস।’
বেয়ারা পটে করে চা নিয়ে এসেছে। সঙ্গে ক্রিম ক্র্যাকার। ‘রেখে যাও। একটু ভিজুক। আমি ঢেলে নেব।’ গৌতম বেয়ারাকে বলল।
তারপর বেয়ারা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া অব্দি অপেক্ষা করে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোকে কয়েকটা দরকারি জিনিস জানানোর ছিল। ফোনে অত কথা বলা শক্ত। তুই এসে খুব ভাল করলি।’
‘আমারও তোর সঙ্গে দু-একটা জিনিস ডিসকাস করার ছিল। তবে তার আগে একটা কথা বলে নিই। সেদিন সকালে তাড়াতাড়িতে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। জাহাঙ্গির খান আমাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। আমি এখন আর কারও হয়ে কাজ করছি না। তবে ফিরদৌসের খুনটা আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কেউ আমাকে এমপ্লয় করুক না করুক ওই রহস্যের কিনারা আমাকে করতেই হবে। শুধু তোদের একটু সাহায্য দরকার।’
‘শোন। আমরাই তোর সাহায্য চাইছি। তুই অতীতে আমাদের কত ভাবে সাহায্য করেছিস সেটা তো আমরা জানি। এবং তুই যে আর জাহাঙ্গির খানের হয়ে কাজ করছিস না, এটা আমাদের পক্ষে খুব ভাল হল। তোর পক্ষেও। কেন ভাল হল একটু পরে বলছি।’
গৌতম দু-টো কাপে চা ঢালল। যেমন রঙ তেমনি গন্ধ। আদিত্য তার কাপটা তুলে নিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে একটা প্রলম্বিত তৃপ্তির শব্দ করল।
‘প্রথম কথা হচ্ছে’, গৌতম আবার বলতে শুরু করেছে, ‘আমার মনে হয়, ফিরদৌসের খুনের পেছনে ওই উধাও হয়ে যাওয়া কুড়ি কোটি টাকার একটা বড় ভূমিকা আছে। ফিরদৌসের হাত দিয়ে পৌঁছে দেওয়া কুড়ি কোটি উধাও হয়ে গেল আর তারপর ফিরদৌস খুন হল এ দুটো ঘটনা জাস্ট কোয়েন্সিডেন্স হতে পারে না। আমি ভাবছি, এই দুটো ঘটনার মধ্যে যখন একটা সম্পর্কই আছে তখন একজন অফিসারই যদি দুটো ঘটনা ইনভেস্টিগেট করে তাহলে কেমন হয়? অবশ্য কুড়ি কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে বলে আমাদের কাছে কেউ কমপ্লেন করেনি। আমরা তোর কাছ থেকে ঘটনাটা জানতে পেরেছি। কিন্তু কুমুদিনী বিত্ত নিগম নিয়ে যে ইনভেস্টিগেশনটা চলছে তার সঙ্গে কুড়ি কোটির কেসটা অনায়াসে জুড়ে দেওয়া যায়। ইন ফ্যাক্ট, কুমুদিনীর ভেতরের ব্যাপারটা ভাল করে বুঝতে না পারলে ফিরদৌসের খুনের রহস্যটা সলভ করা যাবে না। সব মিলিয়ে আমি ভাবছি, শিকদারকে কুমুদিনীর কেসটা থেকে সরিয়ে সোমেন মুখুটিকে ফিরদৌসের মার্ডার এবং কুমুদিনী দু-টোরই দায়িত্ব দেব। তোর কী মনে হয়?’ গৌতম কথা থামিয়ে চায়ে চুমুক দিল।
‘আমার মনে হয় সেটা খুব ভাল একটা মুভ হবে। দুটো কেস যে রিলেটেড তাতে সন্দেহ নেই। শিকদার একটু সিক্রেটিভ টাইপ। ওর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে ও ইনভেস্টিগেশন করে যা পেয়েছে তার সবটা আমাকে বলছে না। আমি একদিন কুমুদিনীর অফিসটা দেখতে চেয়েছিলাম। শিকদার বলেছিল, কবে দেখতে যেতে পারি আমাকে জানাবে। কিন্তু এখনও তো জানাল না। অন দি আদার হ্যান্ড, সোমেন মুখুটি ছেলেটা চমৎকার। ব্রাইট, এলার্ট এবং কো-অপরেটিভ। সোমেন কুমুদিনী কেসটার চার্জ নিলে আমার অন্তত খুব সুবিধে হবে।’
‘সোমেন মুখুটি ছেলেটাকে আমারও পছন্দ। বেশ প্রোঅ্যাকটিভ। ও নিজেই এসে আমাকে বলল, স্যার কুমুদিনীর কেসটাও যদি আমাকে দায়িত্ব দেন তাহলে এই মার্ডার কেসটার সঙ্গে ওটাও ইনভেস্টিগেট করতে পারি। দুটোর মধ্যে একটা পরিষ্কার লিঙ্ক আছে স্যার। একসঙ্গে ইনভেস্টিগেট করতে পারলে আমার খুব সুবিধে হবে। যদিও পদমর্যাদায় দুজনেই এক, শিকদার ওর থেকে বয়েসে সিনিয়ার। তাই শিকদারকে সরাসরি কিছু বলতে ওর বাঁধছিল।’ আবার কথা থামিয়ে গৌতম চায়ে চুমুক দিল।
‘তাহলে এটা তো ডিসাইডেডই হয়ে গেল যে সোমেন কুমুদিনীর ব্যাপারটা ইনভেস্টিগেট করবে। আর কী বলবি বলছিলি?’ আদিত্য চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিল।
‘হ্যাঁ। আরও দুটো ব্যাপার তোকে জানানোর ছিল।’ গৌতম একটু থামল। ‘আমরা ঠিক করেছি জাহাঙ্গির খানকে ফিরদৌসের মার্ডার কেসে আপাতত পুলিশ কাস্টডিতে নিয়ে রাখব। এটা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই। জাহাঙ্গির তো ইনভ্যালিড। সে নিজে খুন-টুন করতে পারবে না। কিন্তু কাউকে দিয়ে তো করাতেই পারে। অবশ্য আমি একবারও বলছি না জাহাঙ্গির খানই ফিরদৌসকে খুন করিয়েছে। কিন্তু তোর কাছ থেকে আমরা যা তথ্য পেয়েছি তাতে মনে হয় এই খুনটার সঙ্গে জাহাঙ্গির খানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। কী ধরনের যোগাযোগ সেটা জানার জন্যে জাহাঙ্গির খানকে পুলিশ কাস্টডিতে রেখে ইন্টারোগেট করতে হবে। তাই বলছিলাম, তুই যে এখন আর জাহাঙ্গির খানের পে-রোলে নেই সেটা তোর পক্ষে এবং আমাদের পক্ষে, সকলের পক্ষেই ভাল হয়েছে।’
‘আমার মনেই হচ্ছিল জাহাঙ্গির খানকে তোরা অ্যারেস্ট করতে পারিস। আমি এতে একটুও অবাক হচ্ছি না। আমি তোদের সঙ্গে এ-ব্যাপারেও একমত যে, জাহাঙ্গিরই ফিরদৌসকে খুন করিয়েছে এটা এখনও বলার সময় আসেনি। তবে ফিরদৌস খুনের সঙ্গে ওর একটা ইনভলভমেন্ট থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে আমার মনে হয় এক্ষুনি ওকে অ্যারেস্ট না করে ওর ওপর নজর রাখলে বেটার হত। ও তো ইনভ্যালিড। চট করে পালাতে পারবে না।’
‘ঠিক আছে। তাহলে ওকে ক’টা দিন বাইরে রেখে দেখা যায় কিনা ভেবে দেখব।’
‘আর কিছু বলবি?’ আদিত্য খানিকটা অন্যমনস্কভাবে জিজ্ঞেস করল।
‘হ্যাঁ। দ্বিতীয় কথাটা হল, বটুক সামন্ত যে টেম্পোরারি বেলটা পেয়েছিল সেটা হাইকোর্টে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। হাইকোর্ট আমাদের অ্যাপিলটা খারিজ করে দিয়েছে। ফলে বটুক সামন্তকে পুলিশ কাস্টডিতে আর নেওয়া যাচ্ছে না। মনে হল, এটা তোকে জানিয়ে রাখি।’
তারপর গৌতম খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘তুই কী বলবি বলছিলি?’
‘সেদিন সকালে সিতারা হোটেলে গিয়ে কয়েকটা জিনিস স্ট্রাইক করল। সেগুলো তোর সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। ফিরদৌস ন-তারিখ, অর্থাৎ যেদিন তার কুড়ি কোটি টাকা কুমুদিনীতে জমা দেবার কথা তার একদিন পরে সিতারা হোটেলে চেক ইন করেছিল। যেদিন কুমুদিনী রেড হয়েছিল, ঠিক সেদিন। সিতারা হোটেল থেকে কুমুদিনীর আপিস খুব দূরে নয়। কুমুদিনী রেড হবার দিনই অফিসের অত কাছে একটা হোটেলে ফিরদৌস চেক ইন করতে গেল কেন?’
‘হুঁ, তারপর?’
‘দ্বিতীয় লক্ষণীয় বিষয়, ফিরদৌসের লাগেজ বলতে একটা সুটকেস আর একটা বড় নীল ব্যাগ। ফিরদৌসের সব জিনিসপত্র সুটকেসে এঁটে গেছে। ব্যাগটা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তাহলে ব্যাগটা ফিরদৌসের কী কাজে লাগছিল বা লেগেছিল?’
‘ইনটারেস্টিং অবজারভেশন। আর কিছু?’
‘হ্যাঁ। যতদূর মনে হচ্ছে, খুনি দিলীপ সাক্সেনা নাম নিয়ে রাত্তিরবেলা হোটেল সিতারার চারতলার একটা ঘরে চেক ইন করেছিল। আর তাকে সে ঘরে দেখা যায়নি। মনে হয়, সে ফিরদৌসের পরিচিত ছিল। তাই বিনা বাধায় ফিরদৌস তাকে নিজের ঘরে ঢুকতে দিয়েছিল। ফিরদৌসকে খুন করার পরে সম্ভবত সে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ে। প্রশ্ন হচ্ছে, সে যখন হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সিকিউরিটি গার্ড তাকে দেখতে পেল না কেন?’
‘হয়তো সিকিউরিটি গার্ড ঘুমিয়ে পড়েছিল।’
‘অসম্ভব নয়। তবে সিকিউরিটি গার্ড হলফ করে বলছে সে সারা রাত্তির জেগে ছিল।’
‘বেশ, বেশ। প্রচুর চিন্তার খোরাক দিয়ে গেলি। আমি নিশ্চয় ভেবে দেখব।’
‘আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে। ফিরদৌসের লাগেজের মধ্যে দুটো মোবাইল ফোন ছিল। একটা সুইচ অফ রেখেছিল, তাই জাহাঙ্গির ওকে ফোন করে পায়নি। অন্য মোবাইল দিয়ে ও ওর বউ-এর সঙ্গে কথা বলত। খুনি দুটো মোবাইলই রেখে গেছে। কেন? এর একটাই কারণ হতে পারে। মোবাইলগুলো থেকে খুনির হদিশ পাওয়া যাবে না। খুনি ফিরদৌসের চেনা লোক, সে খুনিকে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকিয়েছিল, কিন্তু ফিরদৌসের মোবাইল থেকে তার কোনও হদিশ পাওয়া যাবে না, এটা কী করে হয়? খুনির হদিশ না পাওয়া গেলেও দেখা দরকার সম্প্রতি ফিরদৌস কার কার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল। একটু দেখবি?’
‘নিশ্চয় দেখব। আর কিছু?’
‘হ্যাঁ। সোমেন মুখুটি যেদিন কুমুদিনীর অফিসটা দেখতে যাবে আমাকে একটা খবর দিতে বলিস। আমিও সঙ্গে যাব।’
শ্যামল মুড়ি মেখেছিল। বিকেলের পর থেকে বৃষ্টি নেমেছে, প্রথমে ঝিরঝিরে বৃষ্টি, তারপর অঝোর, অবিশ্রাম, অনর্গল। সন্ধের মুখে ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হল। বউবাজার স্ট্রিটের গাছগুলো মহা শঙ্কিত হয়ে মাথা ঝাঁকাচ্ছে। আদিত্য ভাবছিল সঙ্গে ছাতা নেই, বাড়ি ফিরবে কী করে? অবশ্য এই ঝড়ের মধ্যে ছাতা থাকলেও খুব একটা লাভ হত না। আদিত্যর যখন একটু একটু খিদে পাচ্ছে আর বৃষ্টিটা অঝোরে পড়ে যাচ্ছে, হঠাৎ দেবদূতের মতো এক ঠোঙা মুড়ি নিয়ে শ্যামল এসে হাজির। আজকাল মাঝে মাঝে বৃষ্টি-বাদলার দিনে শ্যামল নিজের ঘরে বসে গামলায় মুড়ি মাখে। তারপর এই বিল্ডিং-এর আপিসে আপিসে বিক্রি করে। দামটা একটু বেশি নেয় বটে তবে স্বাদ তোলে চমৎকার। এক গাল খেয়ে আদিত্যর মনে হল লঙ্কার আচারের তেল দিয়ে মুড়িটা মেখেছে।
মুড়িটা খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর আদিত্যর কফি এবং সঙ্গীত পিপাসা এক সঙ্গে চাগাড় দিয়ে উঠল। সে ইলেকট্রিক কেটলিতে জল এবং ইউ টিউবে মইনুদ্দিন ও আমিনুদ্দিন ডাগরের একটা পুরোনো মিয়া মল্লার চাপিয়ে মৌজ করে বসে সিগারেট ধরাল। আর ঠিক তখনই দরজায় খট খট শব্দ, কেউ এসেছে। আদিত্য ভাবল শ্যামল বুঝি মুড়ির পয়সা নিতে এসেছে। দরজা খুলে দেখে ছাতা হাতে একজন অজ্ঞাত পরিচয় বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তার পাশে বোরখা পরা এক মহিলা।
‘আপনি আদিত্য মজুমদার?’ ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন।
আদিত্য ঘাড় নেড়ে বলল, ‘হ্যাঁ।’
‘আপনার সঙ্গে দরকার আছে। আমরা ভেতরে আসতে পারি?’
কয়েক মিনিট পরে দু’জনে যখন আদিত্যর উল্টোদিকে চেয়ারে বসেছেন এবং আদিত্য মিয়া মল্লারটা বন্ধ করে দিয়েছে, ভদ্রমহিলা তাঁর মুখের আবরণ উন্মোচন করলেন। মুখটা আদিত্যর চেনা। এই মহিলার সঙ্গে কিছুদিন আগেই তার কথা হয়েছিল। ভদ্রমহিলা জাহাঙ্গির খানের স্ত্রী।
‘আশা করি, আমাকে আপনার মনে আছে।’ ভদ্রমহিলা আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললেন।
‘নিশ্চয় মনে আছে। এই তো সেদিন আপনার সঙ্গে কথা হল।’
‘ঠিক। কিছুদিন আগেই আপনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আপনি বলেছিলেন ফিরদৌস যদি নিরপরাধ হয়, আপনি তাকে বাঁচাতে চেষ্টা করবেন।’ ভদ্রমহিলার হয়তো আরও কিছু বলার ছিল। উদ্গত কান্না চাপতে গিয়ে তিনি থেমে গেলেন।
আদিত্য কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রইল। তারপর মৃদুস্বরে বলল, ‘আমি ফিরদৌসকে বাঁচাতে পারিনি এটা ঠিক। কিন্তু ফিরদৌস সম্পূর্ণ নিরপরাধ এটা আমার মনে হয় না। কোনও একটা বেআইনি ব্যাপারে ও জড়িয়ে ছিল। কীসের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল কিংবা কতটা জড়িয়ে ছিল আমি এখনই বলতে পারব না। কিন্তু নিশ্চয় জড়িয়ে ছিল। যে ওকে খুন করেছে সে কষ্ট দিয়ে ওর কাছ থেকে কোনও কথা বার করতে চেয়েছিল। অর্থাৎ ফিরদৌস একটা কিছু জানত। হয়তো ওই কুড়ি কোটি টাকা কোথায় রয়েছে সেটা জানা ছিল ওর। তবে একটা ব্যাপার আপনার কাছে স্বীকার করি। আমি ভেবেছিলাম, আপনার স্বামী ফিরদৌসের কোনও বড় ক্ষতি করবেন না। ভেবেছিলাম বলেই আমি আপনার স্বামীকে ফিরদৌসের হদিশ দিয়েছিলাম। ফিরদৌসও ভেবেছিল ফুফাজি তার কথা বিশ্বাস করবেন। বস্তুত সেইজন্যেই সে আমাকে দিয়ে জাহাঙ্গির খানকে বার্তা পাঠাতে চেয়েছিল যে সে নির্দোষ। এখন, ফিরদৌস খুন হবার পর, আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশও আপনার স্বামীকেই সন্দেহ করছে। কারণ তারা কুড়ি কোটি টাকা উধাও হয়ে যাবার খবরটা পেয়েছে। আমার কাছ থেকেই পেয়েছে। এত বড় একটা খবর তো আর আমি লুকিয়ে রাখতে পারি না।’
এইটুকু বলে আদিত্য থামল। বয়স্ক ভদ্রলোক এবার মুখ খুললেন।
‘আমার পরিচয়টা আগে দিয়ে নিই। আমি ইনামুর রহমান, নুসরতের মেজদা।’ ভদ্রলোক তার পাশে উপবিষ্ট বোনের দিকে তাকালেন। আদিত্য এই প্রথম জানতে পারল জাহাঙ্গিরের স্ত্রীর নাম নুসরত। ‘নুসরত একা আসতে পারছিল না। তাই আমি সঙ্গে এলাম। একে এই ঝড়-বৃষ্টি, তার ওপর নুসরত একা খুব বেশি বাইরে বেরোয় না। তাছাড়া সাবিনাকে নুসরত ছাড়া আর কেউ সামলাতে পারছে না। সাবিনাকে হালিশহরে রেখে এখানে আসাটাও এক মুস্কিল।’
আদিত্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এদের এখানে আসার কারণটা সে এখনও বুঝতে পারছে না। কেটলির জলটা গরম হয়ে গেছে। মুখ থেকে অনর্গল ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আদিত্য ইনামুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনারা কফি খাবেন?’ কথাটা বলেই আদিত্য বুঝল বিরাট ফোপা করে ফেলেছে। তার আপিসে কাপ আছে মাত্র দুটি। তার মধ্যে যেটিতে সে নিজে কফি খায় তার গায়ে গভীর দাগ জমেছে। বাইরের লোককে তাতে কফি দেওয়া যায় না। ফলে হাতে রইল একটাই ভদ্রস্থ কাপ। তাতে দুজন কফি খাবে কী করে? আদিত্য মনে মনে ঠিক করে নিল কালকেই সে গোটা ছয়েক কাপ কিনে আনবে।
আদিত্যর ভাগ্য ভাল নুসরত বললেন, ‘আমি চা-কফি খাই না।’
ইনামুর রহমান বললেন, ‘আমি একটু কফি খেতে পারি। দুধ-চিনি ছাড়া।’
আদিত্য কফি করতে উঠল। বাইরে ঝড়ের তাণ্ডব খানিকটা কমে গেছে। কিন্তু তার বদলে বেড়েছে বৃষ্টির বেগ। সে ইনামুরকে বলল, ‘এই বৃষ্টিতে আপনারা এলেন কী করে?’
‘আমরা যখন রওনা হয়েছিলাম তখনও বৃষ্টি নামেনি। তবে আকাশটা কালো করে এসেছিল।’
আদিত্য দু-কাপ কফি নিয়ে টেবিলে ফিরে এল। একটা কাপ ইনামুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এবার বলুন, আমি কীভাবে আপনাদের সাহায্য করতে পারি।’
ইনামুর রহমান তার বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুই বল।’
নুসরত আদিত্যর দিকে সোজাসুজি তাকালেন। কোনও রকম গৌরচন্দ্রিকা না করে সরাসরি বললেন, ‘আমি চাই আপনি ফিরদৌসের খুনিকে খুঁজে বার করুন। এর জন্য আপনার যা ফি লাগে আমি দেব। আমি ফিরদৌসের খুনির শাস্তি চাই।’ ভদ্রমহিলার কণ্ঠস্বরে আদিত্য একটা অদ্ভুত কাঠিন্য লক্ষ করল।
‘ফিরদৌসের খুনিকে আমিও খুঁজে বার করতে চাই। ফিরদৌসের খুনের জন্য আমি নিজেকে খানিকটা দায়ী মনে করি। তাই ফিরদৌসের খুনিকে খুঁজে বার করার কাজটা আমাকে করতেই হবে। আর এটাও ঠিক যে কাজটা করার জন্য কেউ যদি আমাকে নিয়োগ করেন তাহলে আমার খুব সুবিধে হয়। কারণ এই এটাই আমার রুটি-রুজি। কিন্তু ম্যাডাম, আপনার কাছ থেকে এই কাজটা নিতে আমার দুটো অসুবিধে আছে।’ এইটুকু বলে আদিত্য থামল। অন্য দু-জন তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
‘আমার প্রথম অসুবিধে’ আদিত্য আবার বলতে শুরু করল, ‘যদি দেখা যায় ফিরদৌস হত্যার পেছনে আপনার স্বামীর কোনও হাত আছে তাহলে আমি আপনার স্বামীকেই পুলিশের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হব। এটা কি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? আর দ্বিতীয় অসুবিধে, যেহেতু আপনার স্বামী জাহাঙ্গির খান সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, এবং দোষী প্রমাণিত হলে আমি তাকে ধরিয়ে দিতে বাধ্য হব, তাই তার কোনও টাকা আমি নিতে পারব না। আমি কি আমার সমস্যাগুলো ঠিকমতো বুঝিয়ে বলতে পারলাম?’ আদিত্য কথা বলা থামিয়ে কফির কাপে চুমুক দিল।
‘দু-টো অসুবিধের কোনওটাই আপনার হবে না।’ নুসরত পরিষ্কার গলায় বললেন। ‘যদি দেখা যায় আমার স্বামী দোষী তাহলে আপনি তাকে স্বচ্ছন্দে ধরিয়ে দিতে পারেন। দোষীর শাস্তি পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সে যেই হোক। আর আপনার কাজের জন্যে যে টাকাটা আমি আপনাকে দেব সেটা আমার স্বামীর টাকা নয়। সম্পূর্ণভাবে আমার নিজের টাকা। আপনি হয়তো জানেন না আমার জন্য আমার আব্বা একটা মোটা টাকা রেখে গেছিলেন। সেটা আমি আমার ছোট ভাই-এর ব্যবসায় খাটিয়েছি। ছোট ভাই কাতারে যে ব্যবসা করে আমিও তার অংশীদার। ব্যবসাটা খুব ছোট নয় আর তাই আমার টাকারও কোনও অভাব নেই। অর্থাৎ আমার নিজের টাকায় আমি আপনাকে নিয়োগ করতে চাই। আপনি রাজি কিনা বলুন।’
‘হ্যাঁ-না বলার আগে আমি আর একটা প্রশ্ন করব। বাজারে এত গোয়েন্দা থাকতে আমাকেই কেন নিয়োগ করতে চান?’
‘আমি মোটামুটি লোক চিনি। আপনার সঙ্গে সেদিন কথা বলে মনে হয়েছিল আপনি লোভী লোক নন।’ নুসরত বললেন।
‘তাছাড়া আমরা আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করেছি। আপনি রিসেন্টলি কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কেস সলভ করে পুলিশকে সাহায্য করেছেন। আপনার সঙ্গে পুলিশের সম্পর্কও খুব ভাল। তাই আমরা জানি আপনি বেআইনি কিছু করবেন না। আর আমরাও শুধু ন্যায়ের পথেই নয়, আইনের পথেও থাকতে চাই।’ ইনামুর রহমান জানালেন।
‘আর একটা কথা আপনাকে জানিয়ে রাখি।’ এবার নুসরতের গলা। ‘আমরা যে আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি সেটা আমার স্বামী জানেন না। আমরা যদি আপনাকে নিয়োগ করতে পারি তাহলেও আমার স্বামী জানতে পারবেন না। প্লিজ আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। একা পুলিশের কাজ এটা নয়। তাছাড়া আমি জানি পুলিশের মধ্যেও অনেক ঘুণ আছে। আপনিই এই কাজটা পারবেন।’
‘ঠিক আছে। আপনাদের প্রস্তাবে আমি রাজি।’ আদিত্য খানিকটা ভেবে নিয়ে বলল। ‘আমাকে কিন্তু কোনও কথা লুকোনো চলবে না। কথা লুকোলে আমি সত্যিটাকে বার করতে পারব না। প্রথমে একটা প্রশ্ন। আপনারা কি জানতেন ফিরদৌস কোথায় ছিল?’
‘আমি জানতাম না। সাবিনা হয়তো জানত। কিন্তু আমাকে বলেনি।’
‘সাবিনার সঙ্গে দেখা করা যেতে পারে?’
নুসরত একটু অস্বস্তিতে পড়েছেন। খানিক ইতস্তত করে বললেন, ‘সাবিনা এখনও ঠিক কথা বলার অবস্থায় আসেনি। তাছাড়া আপনার সঙ্গে ওকে কথা বলাতে গেলে ওকেই কলকাতায় আনতে হবে। আপনি হালিশহরে গিয়ে ওর সঙ্গে কথা বললে আমার স্বামী জানতে পেরে যাবেন। কিন্তু আপাতত সাবিনাকে কলকাতায় আনা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় সাবিনার সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকে সপ্তাহ খানেক অপেক্ষা করতে হবে।’
মিনিট পনেরো পরে বৃষ্টি মাথায় করেই ভাই-বোন রওনা হয়ে গেলেন। ওদের সঙ্গে অবশ্য গাড়ি ছিল। কিন্তু বৃষ্টি থামা অব্দি অপেক্ষা করা ছাড়া আদিত্যর উপায় নেই। একটা ট্যাক্সি পেলে সে বাড়ি চলে যেত। কিন্তু একে এইরকম ঝড়-বাদল তার ওপর এটা আপিস পাড়া। কাতারে কাতারে লোক বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ট্যাক্সি খুঁজছে। এই অবস্থায় এখান থেকে এখন ট্যাক্সি পাওয়া কার্যত অসম্ভব। সন্ধে সাড়ে সাতটা বেজে গেল, বৃষ্টি কমার লক্ষণ নেই। আটটা বেজে গেল। সাড়ে আটটা বেজে গেল। আদিত্য জানলা দিয়ে দেখল রাস্তার ধারে একটু একটু জল জমছে। বৃষ্টির বেগ কমেনি। মহা মুশকিল, আদিত্যর আবার খিদে পাচ্ছে। এক ঠোঙা মুড়ি হজম হতে আর কতক্ষণ লাগবে?
আপিস বাড়িটা কি ফাঁকা হয়ে এসেছে? একটু আগে শ্যামল মুড়ির পয়সা নিয়ে চলে গেছে। এতক্ষণে সে বোধহয় শেয়ালদা স্টেশনে পৌঁছে গেছে। ডানকুনি লোকালে শ্যামল যাতায়াত করে। ডানকুনির ঠিক আগের স্টেশন রাজচন্দ্রপুরে তার বাড়ি। আদিত্যর আর গান শুনতে ইচ্ছে করছে না। মন বিক্ষিপ্ত থাকলে গান শোনা যায় না। খুব বেশি দেরি হলে মেসের খাবার ঘরটা বন্ধ হয়ে যাবে। সে আর এক ঝামেলা।
কেয়াকে ফোন করতে খুব ইচ্ছে করছিল। কেয়ার সঙ্গে কথা বললে সময়টা কেটে যেত। কিন্তু আদিত্য জানে, কেয়া এখন ছাত্র পড়াচ্ছে। ফোন ধরতে পারবে না। এই বিরক্তিকর অবস্থায় একটাই বড় সান্ত্বনা। নুসরত একটা মোটা টাকা অগ্রিম দিয়ে গেছেন। তার মানে, কাল কেয়াকে আদিত্য মন খুলে পার্ক স্ট্রিটে ট্রিট করতে পারবে। বারবার কেয়া খাওয়াবে এটা হতে দেওয়া যায় না। দরকারের সময় এই রকম অযাচিতভাবে টাকা এসে গেলে ভগবানে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।
হঠাৎ টেবিলের ওপরে রাখা আদিত্যর মোবাইলটা বেজে উঠল। অচেনা নম্বর। আদিত্য ফোন তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই ওপার থেকে ঈষৎ পাতলা গলায় ভেসে এল, ‘আমি কি আদিত্য মজুমদারের সঙ্গে কথা বলছি?’
‘হ্যাঁ, বলুন। আমিই আদিত্য মজুমদার।’
‘আদিত্যবাবু আমার নাম গোবিন্দ রায়। আপনার ফোন নম্বরটা খুন হবার আগে ফিরদৌস আমাকে দিয়েছিল। আপনার সঙ্গে দেখা করা আমার খুব দরকার।’
আদিত্যর নামটা মনে পড়ে গেল। গোবিন্দ রায়। কুমুদিনীর সব থেকে পুরোনো এজেন্ট। সে মুখে বলল, ‘আপনি কি কুমুদিনী বিত্ত নিগমের এজেন্ট গোবিন্দ রায় বলছেন?’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমিই কুমুদিনীর গোবিন্দ রায়। আপনার সঙ্গে বিশেষ দরকার। সামনা-সামনি দেখা করে কিছু বলতে চাই।’
কথাগুলো খুব কেটে কেটে আসছে। মনে হয় যেখান থেকে গোবিন্দ রায় কথা বলছে সেখানে ভাল সিগনাল পাওয়া যায় না। হয়তো জায়গাটা কলকাতার বাইরে। কিংবা হয়তো ঝড়-বৃষ্টির জন্য এরকম হচ্ছে।
আদিত্য থেমে থেমে বলল, ‘আপনি কবে আমার সঙ্গে দেখা করতে চান?’
মনে হয় কথাগুলো গোবিন্দ রায় ভাল করে শুনতে পেল না। সে আবার বলল, ‘আপনার সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেখা করে কথা বলা দরকার। টেলিফোনে কথাগুলো বলা যাবে না।’
‘কবে দেখা করবেন?’
‘পরশুদিন দেখা করা যাবে? আমি কাল রাত্তিরের আগে কলকাতা পৌঁছতে পারব না। পরশু সকালে দেখা করতে পারবেন?’
ভাগ্যক্রমে সিগনালটা একটু ভাল হয়েছে। আদিত্য গোবিন্দ রায়ের কথাগুলো এখন পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে।
সে বলল, ‘ঠিক আছে। পরশু সকাল এগারোটা নাগাদ আমার অফিসে চলে আসুন। আমার অফিসটা বউবাজার স্ট্রিট মানে এখন যার নাম বিপিনবিহারি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, তার ওপরে। সেন্ট্রাল এভিনিউ থেকে বউবাজার স্ট্রিট ধরে বিবাদী বাগের দিকে এগোলে আমার অফিসটা ডান হাতে পড়বে। বাড়ির নাম বিনানি ম্যানসন। পাঁচতলা বাড়ি। আমার আপিস দোতলায়। গেটে শ্যামল বলে একজন সিকিউরিটি বসে থাকে। তাকে বললেই আমার অফিসটা দেখিয়ে দেবে। আপনি শুনতে পাচ্ছেন?’
‘শুনতে পাচ্ছি। পরশু সকাল এগারোটার সময় আপনার অফিসে পৌঁছে যাব। একটা অনুরোধ। আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছি এটা দয়া করে পুলিশকে বলবেন না। পুলিশ কিন্তু আমাকে খুঁজছে। দেখতে পেলেই ধরে নিয়ে যাবে। তাহলে দরকারি কথাগুলো বলাই হবে না। ফিরদৌস বলেছিল আপনাকে বিশ্বাস করা যায়।’
‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। পুলিশ কিচ্ছু জানতে পারবে না। আপনি এগারোটায় চলে আসুন।’
আদিত্য মোবাইলটা পকেটে পুরে দেখল বৃষ্টি একেবারে থামেনি বটে, তবে অনেকটা কমেছে। এই সুযোগে বেরিয়ে পড়তে হবে।
যে আর্দ্র, কৃষ্ণ মেঘমালা সুদূর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের অনন্ত ঊর্মিরাশি থেকে উৎপন্ন হয়ে হাজার হাজার ক্রোশ উত্তাল জলপথ অতিক্রম করতে করতে প্রতি মুহূর্তে আরও আরও শক্তি সঞ্চয় করছিল, গতকাল বিকেলে বাংলার নরম, সবুজ মাটির প্রলোভনে সে স্থলপথে প্রবেশ করে। আজ সেই মেঘমালা সকাল থেকে শহরের ওপর অঝোর ধারায় ঝরে পড়ছে। বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই। যেন এই শহরের শরীরে মিশে যাওয়াই তার শেষতম লক্ষ্য। কাল রাত্তিরে অন্তত কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টির বেগ সামান্য কমেছিল, না হলে আদিত্য বাড়ি পৌঁছতেই পারত না। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি তার গত রাতের সাময়িক বিচ্যুতি কড়ায় গণ্ডায় পূরণ করে দিচ্ছে। আদিত্য মগ্ন হয়ে বৃষ্টি দেখছিল। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটাগুলো জানলার কাঁচের ওপর পড়ে, ভেঙে, ছড়িয়ে গিয়ে, পদহীন সরীসৃপের মতো বুকে হেঁটে নিচে নেমে আসছে।
ঘড়িতে সাড়ে নটা বাজতে চলল। আদিত্যর বিছানা ছেড়ে উঠতেই ইচ্ছে করছে না। হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল আজ সন্ধেবেলা কেয়ার সঙ্গে দেখা করার কথা। কেয়া কি আসতে পারবে? সে-ই বা যাবে কী করে? কেয়াকে একটা ফোন করলে হত।
ফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বেজে গেল। এরকম তো সচরাচর হয় না। কোথায় গেল কেয়া? আদিত্যর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। আর পরের মুহূর্তেই তার মনে হল বাবাকে বাদ দিলে সে তো কখনও কারও জন্যে এরকমভাবে চিন্তা করেনি। ভেবে আদিত্যর ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল। নিজের অজান্তেই সে কেয়ার জন্য চিন্তা করতে শুরু করেছে। একেবারে অন্যরকম একটা অনুভব।
আবার ফোনটা লাগাল আদিত্য। আবার অনেকক্ষণ ধরে ফোনটা বেজে গেল। আদিত্য চিন্তিত মুখে বাথরুমে ঢুকল। বেরিয়ে আবার ফোনটা লাগাল, আবার বেজে গেল ফোনটা। ঘড়িতে দশটা বেজে গেছে।
জানলায় বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া। বৃষ্টির থেকে এখন ঝোড়ো হাওয়াটাই বেশি। কেয়ার একটা হদিশ করতে পারলে মুহূর্তটা খুব উপভোগ করা যেত। কিন্তু এখন কিছুই ভাল লাগছে না। গান শুনতেও ইচ্ছে করছে না। আদিত্য ইন্টারনেট খুলে দেখল বিকেলের মধ্যে ঝড়বৃষ্টি নাকি বাংলাদেশের দিকে সরে যাবে। খবর কাগজের হেডলাইনগুলোতে চোখ বোলাল। আরও দু-বার ফোন লাগাল, উত্তর নেই।
মিনিট কয়েক পরে যখন আদিত্য কফির কাপটা মুখে তুলে প্রথম চুমুকটা দিতে যাবে, ফোনটা বেজে উঠল হঠাৎ। কেয়া।
‘কোথায় ছিলে এতক্ষণ? কতবার ফোন করলাম। ভীষণ চিন্তা হচ্ছিল।’ কথাগুলো আদিত্যর ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে।
‘আদিত্য মজুমদার আমার জন্য চিন্তা করছিল? ও মা আমি কোথায় যাব!’ কেয়া কি ঠাট্টা করছে? খুশি হয়েছে? বিরক্ত?
‘কোথায় গিয়েছিলে বলবে তো?’ আদিত্য ধমকের স্বরে জিজ্ঞেস করল।
‘কোথায় যাব আবার? নিচে খাবার ঘরে চা খেতে খেতে গল্প করছিলাম। আজ সব স্কুলে রেনি ডে হয়ে গেছে। স্কুলের দিদিমণিদের সকলের ছুটি। তাই সবাই মিলে গল্প করছিলাম। খেয়াল করিনি মোবাইলটা ওপরে ফেলে এসেছি।’
‘আর কখনও ওপরে মোবাইল ফেলে রেখে নিচে বসে গল্প করবে না। আমার খুব চিন্তা হয়।’ আদিত্য নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে কথাগুলো বলছে।
‘আর কখনও এরকম করব না গো।’ কেয়ার গলাটা হঠাৎ ভীষণ নরম শোনাল। একটু থেমে সে বলল, ‘তোমাকে ঠিক চারটের সময় তোমার মেসের সামনে থেকে তুলে নেব। ঝড়বৃষ্টি তার আগেই তো চলে যাচ্ছে।’
‘ঝড়বৃষ্টি চলে যাচ্ছে? কী করে জানলে?’
‘সবাই জানে। টিভিতে বারবার বলছে। তুমি আঁতেল বলে টিভি দেখ না। তাই দরকারি খবরও জানতে পার না।’
আদিত্য ভাবল একবার বলে সেও ইন্টারনেট থেকে খবরটা পেয়েছে। কিন্তু সেকথা না বলে সে শুধু বলল, ‘চারটের সময় আমি নিচে দাঁড়িয়ে থাকব। কিন্তু তোমার ছাত্র পড়ানো?’
‘বৃষ্টির জন্যে আজ টোলও বন্ধ।’
বৃষ্টির বিকেলের জন্য কেয়া মন্দ প্ল্যান করেনি। চারটের সময় যখন সে আদিত্যকে তুলে নিল তখনও আদিত্য জানত না তারা কোথায় যাচ্ছে। বৃষ্টি সমানে পড়ে যাচ্ছে। খুব আস্তে নয়, আবার এতটাই জোরে নয় যে রাস্তায় জল জমে যাবে। বৃষ্টির বোধহয় বাংলাদেশ যাবার ইচ্ছেটা চলে গেছে। বেরনোর আগে আদিত্য ইন্টারনেটে দেখল হাওয়া মোরগ বলছে, মাঝরাত্তির অব্দি কলকাতায় এরকম ঝড়বাদল চলবে।
‘থিয়েটার রোডের পেছনে, শর্ট স্ট্রিটে একটা রেস্টোরেন্ট আছে। আমরা বন্ধুরা মিলে কয়েকবার গেছি। রেস্টোরেন্টটা দোতলায়। দোতলার জানলা থেকে রাস্তার উল্টোদিকে একটা সবুজ পার্ক দেখা যায়। চমৎকার লাগে। আমরা এখন সেখানে গিয়ে কফি খেতে খেতে বৃষ্টি দেখব। অনেকক্ষণ ধরে। তারপর ওখানে বা অন্য কোথাও ডিনার খাব।’ গাড়ি চলতে শুরু করার পর কেয়া জানাল।
‘ওখানে কফি নিয়ে অনেকক্ষণ বসতে দেবে?’
‘বসতে দেবে বলেই তো ওখানে যাচ্ছি। আসলে ওখানে বেলা সাড়ে-তিনটে অব্দি বুফে লাঞ্চ চলে। আবার সন্ধে আটটা থেকে বুফে ডিনার শুরু হয়। এই মাঝখানের সময়টা রেস্টোরেন্টটা একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। তখন কফি নিয়ে বসে থাকলে ওরা কিচ্ছু বলে না। আমি বসে দেখেছি।’
আদিত্য ভাবল জিজ্ঞেস করে ‘কার সঙ্গে ওখানে বসতে?’। কিন্তু সাহস পেল না। কী দরকার ঘুমন্ত অতীতকে জাগিয়ে? সে তার বদলে জিজ্ঞেস করল, ‘রেস্টোরেন্টটার নাম কী?’
‘ভাইনইয়ার্ড। খুব ভাল কন্টিনেন্টাল করে। ইন্ডিয়ানও করে, তবে সেটা সাদামাটা।’
‘ভিনইয়ার্ড। আঙুরের খেত।’ আদিত্য মৃদুস্বরে বলল।
‘ওই হল। আমি তোমার মতো সাহেবি ইস্কুলে পড়িনি যে অত উচ্চারণ শিখব। বহরমপুর জেলা ইস্কুলে পড়েছি। ক্লাস ফাইভ অব্দি ইংরিজিই ছিল না।’ কেয়া আদিত্যর সাহেবিয়ানাকে পাত্তাই দিল না।
কেয়ার চরিত্রের এই দিকটা আদিত্যর খুব ভাল লাগে। কোনও ব্যাপারে তার কোনও হীনমন্যতা নেই। সে আসলে যা, তাই নিয়ে মহাখুশি। সে যা নয় বা হতে পারেনি, তাই নিয়ে তার কোনও দুঃখ নেই। কেয়া সহজ, সরল, কাঁচের মতো স্বচ্ছ। আদিত্য ভাবে, এই একটা ব্যাপারে সে যদি কেয়ার মতো হতে পারত, তাহলে জীবনটা আরও অনেক সুন্দর কাটত। আদিত্য জানে তার মধ্যে অনেক জটিলতা আছে, অনেক অপূর্ণতা, অপ্রাপ্তি। টাকা-পয়সার অপূর্ণতা নয়, আধ্যাত্মিক অপূর্ণতা। যা আসলে আত্মম্ভরিতার আরেকটা রূপ। যা মানুষকে সুখী হতে দেয় না। কেয়া আধ্যাত্মিকভাবে তার তুলনায় অনেক পূর্ণ।
‘কী ভাবছ জানলার দিকে তাকিয়ে?’ কেয়া জিজ্ঞেস করল।
‘ভাবছি, সকালে অতবার ফোন করলাম, একবারও তো জিজ্ঞেস করলে না কেন?’
‘কেন আবার? তুমি নিজেই তো বললে আমার জন্যে তোমার খুব চিন্তা হয়। সেই জন্যে অতবার ফোন করলে।’
‘কেন চিন্তা হয় বলত?’
‘কেন আবার? আমার জন্যে তোমার খুব টান।’ কেয়া বাচ্চা মেয়ের মতো খিলখিল করে হাসল। তারপর নিজের কথায় নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল।
‘সেসব ছাড়াও অন্য কারণ আছে।’ আদিত্য গম্ভীর মুখে বলল। ‘কিছুদিন আগে টিভিতে দেখলাম রাজারহাটে একটি অল্প বয়সী মেয়েকে কারা যেন খুন করে তার সব টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছে। কলকাতা শহরে এরকম তো আজকাল মাঝে মাঝেই হচ্ছে। খুব সাবধানে থেকো।’
‘তুমি টিভি দেখ?’
‘এমনিতে খুব একটা দেখা হয় না। সেদিন রত্নাদের বাড়ি গিয়ে দেখছিলাম।’
‘আরে ওসব খুন-টুন হয় রাজারহাট নিউটাউন, সল্ট লেক, বাইপাস এইসব ফাঁকা ফাঁকা জায়গায়। আমাদের বাগবাজারে এসব হয় না। তাছাড়া আমি তো আর একা থাকি না। হস্টেলে পাঁচজনের সঙ্গে থাকি। আমার কীসের ভয়? ওই মেয়েটা একা-একা থাকত।’
‘তুমি জান মেয়েটার কথা?’
‘না জেনে উপায় কী? কদিন ধরে ওটাই তো খালি টিভিতে দেখাচ্ছে। দেখাচ্ছে আর পুলিশের শ্রাদ্ধ করছে। পুলিশ এখনও কাউকে ধরতে পারেনি। তবে মেয়েটাও মনে হয় ভাল ছিল না। একটা নাইট ক্লাবে কাজ করত। ওই নাইট ক্লাবেরই মালিকের সঙ্গে থাকত। রাজারহাটের ওই বাড়িটায়। সেই রাত্তিরে লোকটা নাকি দিল্লিতে ছিল। পুলিশকে তার প্রমাণও দিয়েছে। তাই পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। অদ্ভুত নাম লোকটার। পিটার অরোরা। কী জাত কে জানে?’
‘নাম শুনে মনে হয় পাঞ্জাবি। মেয়েটার নাম কী?’
‘মেয়েটার নাম পল্লবী। পল্লবী ভদ্র। বাঙালি। আর যে নাইট ক্লাবে মেয়েটা কাজ করত সেটার নামটাও অদ্ভুত। বুটলেগার। ক্লাবটা নাকি রাজারহাটের দিকেই। বুটলেগার মানে কী গো?’
‘বুটলেগার মানে যারা বেআইনি জিনিসপত্র বিক্রি করে। বিশেষ করে বেআইনি মদ।’
আদিত্য আবার অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। ‘বুটলেগার’ নামটা সে সম্প্রতি কোথায় যেন শুনেছে। টেলিভিশনে নয়। অন্য কোথাও। কুমুদিনীর ব্যাপারে কোথাও? একটু ভাবলেই মনে পড়ে যাবে। বৃষ্টিটা আবার ঝেঁকে এল। সামনের কাঁচটা ঝাপসা হয়ে আসছে। ড্রাইভার ওয়াইপারের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
‘আবার কী ভাবছ?’
‘ভাবছি, বাগবাজার হোক, মেয়েদের হস্টেল হোক, যাই হোক, তুমি সাবধানে থাকবে। সাবধানের মার নেই।’
কেয়া চুপ করে রইল। তারপর ব্যাগ থেকে একটা পাউচ বার করল। মৃদুস্বরে বলল, ‘তোমার গিফটটা দেখবে না?’
আদিত্য দেখল পাঁচশ গ্রাম খাঁটি দার্জিলিং চা।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন