০৭. আলোর সাধারণ প্রকৃতি

জগদীশচন্দ্র বসু

এখন দেখা যাউক, দৃশ্য এবং অদৃশ্য আলোকের প্রকৃতি একবিধ অথবা বিভিন্ন। দৃশ্য আলোকের প্রকৃতি এই যে–

১. ইহা সরল রেখায় ধাবিত হয়।
২. ধাতুনির্মিত দর্পণে পতিত হইলে আলো প্রতিহত হইয়া ফিরিয়া আসে। রশ্মি প্রতিফলিত হইবারও একটা বিশেষ নিয়ম আছে।
৩. আলোর আঘাতে আণবিক পরিবর্তন ঘটিয়া থাকে। সেইজন্য আলো-আহত পদার্থের স্বাভাবিক গুণ পরিবর্তিত হয়। ফোটোগ্রাফের প্লেটে যে ছবি পড়ে তাহাতে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং ডেভেলপার ঢালিলে ছবি ফুটিয়া উঠে।
৪. সব আলোর রঙ এক নহে; কোনোটা আলো লাল, কোনোটা পীত, কোনোটা সবুজ এবং কোনোটা নীল। বিভিন্ন পদার্থ নানা রঙের পক্ষে স্বচ্ছ কিংবা অস্বচ্ছ।
৫. আলো বায়ু হইতে অন্য কোনো স্বচ্ছ পদার্থের উপর পতিত হইলে বক্রীভূত হয়। আলোর রশ্মি ত্রিকোণ কাচের উপর ফেলিলে ইহা স্পষ্টত দেখা যায়। কাচ-বর্তুলের ভিতর দিয়া আলো অক্ষীণভাবে দূরে প্রেরণ করা যাইতে পারে।
৬. আলোর ঢেউয়ে সচরাচর কোনো শৃঙ্খলা নাই; উহা সর্বমুখী; অর্থাৎ কখনও ঊর্ধ্বঃ কখনও বা দক্ষিণে বামে স্পন্দিত হয়। স্ফটিকজাতীয় পদার্থ দ্বারা আলোক-রশ্মির স্পন্দন শৃঙ্খলিত করা যাইতে পারে; তখন স্পন্দন বহুমুখী না হইয়া একমুখী হয়। একমুখী আলোর বিশেষ ধর্ম পরে বলিব।

দৃশ্য ও অদৃশ্য আলোর প্রকৃতি যে একই রূপ, এক্ষণে সেই পরীক্ষা বর্ণনা করিব।
প্রথমতঃ, অদৃশ্য আলোক যে সোজা পথে চলে তাহার প্রমাণ এই যে, বিদ্যুতোর্মি বাহির হইবার জন্য লণ্ঠনে যে নল আছে সেই নলের সম্মুখে সোজা লাইনে কৃত্রিম চক্ষু ধরিলে কাঁটা নাড়িয়া উঠে। চক্ষুটিকে এক পাশে ধরিলে কোনো উত্তেজনার চিহ্ন দেখা যায় না।
দর্পণে যেরূপ দৃশ্য আলো প্রতিহত হইয়া ফিরিয়া আসে এবং সেই প্রত্যাবর্তন যে নিয়মাধীন, অদৃশ্য আলোকও সেইরূপে এবং সেই নিয়মে প্রতিহত হইয়া প্রত্যাবর্তন করে।
দৃশ্য আলোর আঘাতে আণবিক পরিবর্তন ঘটিয়া থাকে। অদৃশ্য আলোকও যে আণবিক পরিবর্তন ঘটায় তাহা পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করিতে সমর্থ হইয়াছি।

সকল অধ্যায়

১. ০১. কথারম্ভ
২. ০২. যুক্তকর
৩. ০৩. আকাশ-স্পন্দন ও আকাশ-সম্ভব জগৎ
৪. ০৪. উদ্ভিদের জন্ম ও মৃত্যু
৫. ০৫. মন্ত্রের সাধন
৬. ০৬. অদৃশ্য আলোক
৭. ০৭. আলোর সাধারণ প্রকৃতি
৮. ০৮. আলোর বিবিধ বর্ণ
৯. ০৯. মৃত্তিকা-বর্তুল ও কাচ-বর্তুল
১০. ১০. সর্বমুখী এবং একমুখী আলো
১১. ১১. বক-কচ্ছপ সংবাদ
১২. ১২. তারহীন সংবাদ
১৩. ১৩. পলাতক তুফান
১৪. ১৪. অগ্নি পরীক্ষা
১৫. ১৫. ভাগীরথীর উৎস-সন্ধানে
১৬. ১৬. বিজ্ঞানে সাহিত্য
১৭. ১৭. কবিতা ও বিজ্ঞান
১৮. ১৮. বিজ্ঞানে সাহিত্য – অদৃশ্য আলোক
১৯. ১৯. বৃক্ষজীবনের ইতিহাস
২০. ২০. বৃক্ষের দৈনন্দিন ইতিহাস
২১. ২১. ভারতে অনুসন্ধানের বাধা
২২. ২২. গাছের লেখা
২৩. ২৩. উপসংহার
২৪. ২৪. নির্বাক জীবন
২৫. ২৫. তরুলিপি
২৬. ২৬. গাছ লাজুক কি অ-লাজুক
২৭. ২৭. অনুভূতি কাল নিরূপণ
২৮. ২৮. সাড়ার মাত্রা
২৯. ২৯. বৃক্ষে উত্তেজনাপ্রবাহ
৩০. ৩০. স্বতঃস্পন্দন
৩১. ৩১. বনচাঁড়ালের নৃত্য
৩২. ৩২. মৃত্যুর সাড়া
৩৩. ৩৩. নবীন ও প্রবীণ
৩৪. ৩৪. দলাদলি
৩৫. ৩৫. পরিষদ-গৃহে বক্তৃতা
৩৬. ৩৬. বোধন
৩৭. ৩৭. জীবনসংগ্রাম
৩৮. ৩৮. লোকসেবা
৩৯. ৩৯. শিল্পোদ্ধার
৪০. ৪০. মানসিক শক্তির বিকাশ
৪১. ৪১. বিফলতা
৪২. ৪২. মনন ও করণ
৪৩. ৪৩. রানী-সন্দর্শন
৪৪. ৪৪. নিবেদন
৪৫. ৪৫. পরীক্ষা
৪৬. ৪৬. জয়-পরাজয়
৪৭. ৪৭. পৃথিবী পর্যটন
৪৮. ৪৮. বীরনীতি
৪৯. ৪৯. বিজ্ঞান-প্রচারে ভারতের দান
৫০. ৫০. আশা ও বিশ্বাস
৫১. ৫১. আবিষ্কার এবং প্রচার
৫২. ৫২. অর্ঘ্য
৫৩. ৫৩. দীক্ষা
৫৪. ৫৪. আহত উদ্ভিদ
৫৫. ৫৬. জীবনের মাপকাঠি
৫৬. ৫৭. গাছের উত্তেজনার কথা
৫৭. ৫৮. গাছের লিপিযন্ত্র
৫৮. ৫৯. গাছের লেখা হইতে তাহার ভিতরকার ইতিহাস উদ্ধার
৫৯. ৬০. পাত্রাধার তৈল
৬০. ৬১. আহতের সাড়া
৬১. ৬২. আঘাতে অনুভূতি-শক্তির বিলোপ
৬২. ৬৩. জন্মভূমি
৬৩. ৬৪. স্নায়ুসূত্রে উত্তেজনা-প্রবাহ
৬৪. ৬৫. স্বতঃস্পন্দন ও ভিতরের শক্তি
৬৫. ৬৬. ইন্দ্রিয়-অগ্রাহ্য কিরূপে ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য হইবে?
৬৬. ৬৭. বাহিরের শক্তির প্রতিরোধ
৬৭. ৬৮. বৃক্ষে স্নায়ুসূত্র
৬৮. ৬৯. আণবিক সন্নিবেশে উত্তেজনা-প্রবাহের হ্রাস-বৃদ্ধি
৬৯. ৭০. পরীক্ষা
৭০. ৭১. ভিতর ও বাহির
৭১. ৭২. হাজির
৭২. ৭৩. বৃক্ষের অঙ্গভঙ্গী
৭৩. ৭৪. সবিতার রথ
৭৪. ৭৫. ছাত্রসমাজের প্রতি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন