জগদীশচন্দ্র বসু
এরূপ একটি ঘটনা কুমায়ুন-অবস্থাকালে দেখিয়াছিলাম। তরাই হইতে এক ভীষণ ব্যাঘ্র আসিয়া দেশ বিধ্বস্ত করিতেছিল। অল্প দিনেই শতাধিক লোক ব্যাঘ্র-কবলিত হইল। সরকার হইতে বাঘ মারিবার অনেক চেষ্টা হইয়াছিল; কিন্তু সকলই নিষ্ফল হইল। গ্রামবাসীরা তখন নিরুপায় হইয়া কালু সিংহের শরণাপন্ন হইল। সে কোনো কালে শিকার করিত, কিন্তু অস্ত্র আইনের নিষেধহেতু বহুকাল যাবৎ তাহার পুরাতন এক-নলা বন্দুক ব্যবহার করে নাই। বাঘ দিনের বেলায় মাঠে মহিষ বধ করিয়াছিল; সেই মহিষের আর্তনাদ স্পষ্ট শুনিতে পাইয়াছিলাম। রাত্রে সে স্থানে বাঘ ফিরিয়া আসিবে, এই আশায় নিকটের ঝোপের আড়ালে কালু সিং প্রতীক্ষা করিতেছিল। সন্ধ্যার সময় সাক্ষাৎ যমস্বরূপ বাঘ দেখা দিল; মাঝখানে ৩ হাত মাত্র ব্যবধান। ভয়ে কালু সিংহের সমস্ত শরীর কাঁপিতেছিল, কোনোরূপেই বন্দুক স্থির করিয়া লক্ষ্য করিতে পারিতেছিল না। কালু সিংহের নিকট পরে শুনিলাম-‘তখন আমি নিজকে ধমক দিয়া বলিলাম; একি কালু সিং? স্ত্রী, বহিন, বাল-বাচ্চাদের জান বাঁচাইবার জন্য তোমাকে এখানে পাঠাইয়াছে, আর তুমি ঝোপের আড়ালে শুইয়া আছ? অমনি ভিতর দিয়া আগুনের মতো কি একটা ছুটিয়া গেল; তাহাতে শরীর লোহার মতো শক্ত হইল। তখন বাঘের সামনে দাঁড়াইলাম। বাঘ আমাকে লক্ষ্য করিয়া লাফ দিল সেই সঙ্গেই আমার বন্দুকের আওয়াজ হইল, আর বাঘ মরিল।’
স্নায়ুর ভিতর দিয়া কি-একটা ছুটিয়া যায়, যাহাতে শরীর লোহার মতন কঠিন হয়। তখন সেই লৌহ-বর্ম ভেদ করিয়া বাহিরের কোনো ভয় ভিতরে প্রবেশ করিতে পারে না। স্নায়ুসূত্রে কি পরিবর্তন ঘটে যাহা দ্বারা এরূপ অসম্ভবও সম্ভব হয়? স্নায়ুর ভিতরে উত্তেজনা-প্রবাহ সম্পূর্ণ অদৃশ্য; তাহার প্রকৃতি কি, তাহা কি নিয়মে চালিত হয়, তাহার কিছুই জানা নাই। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দ্বারা এই তথ্য নির্ণীত হইবে মনে করিয়া বিশ বৎসর যাবৎ সন্ধানে নিযুক্ত ছিলাম।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন