জগদীশচন্দ্র বসু
গাছের লিখনভঙ্গী ব্যাখ্যা অনেক সময়-সাপেক্ষ। তবে উত্তেজিত অবস্থায় সাড়া বড়ো হয়, বিমর্ষ অবস্থায় সাড়া ছোটো হয় এবং মুমূর্ষ অবস্থায় সাড়া লুপ্তপ্রায় হয়। এই যে সাড়ালিপি সম্মুখে দেখিতেছেন তাহা লিখিবার সময় আকাশ ভরিয়া পূর্ণ আলো এবং বৃক্ষ উৎফুল্ল অবস্থায় ছিল। সেইজন্য সাড়াগুলির পরিমাণ কেমন বৃহৎ! দেখিতে দেখিতে সাড়ার মাত্রা কোনো অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ ছোটো হইয়া গেল। ইতিমধ্যে যদি কোনো পরিবর্তন হইয়া থাকে তাহা আমার অনুভূতিরও অগোচর ছিল। বাহিরে আসিয়া দেখিলাম, সূর্যের সম্মুখে একখানা ক্ষুদ্র মেঘখণ্ড বাতাসে উড়িয়া যাইতেছে। তাহার জন্য সূর্যলোকের যে যৎকিঞ্চিৎ হ্রাস হইয়াছিল তাহা ঘরের ভিতর হইতে কোনোরূপে বুঝিতে পারি নাই; কিন্তু গাছ টের পাইয়াছিল, সে ছোট্ট সাড়া দিয়া তাহার বিমর্ষতা জ্ঞাপন করিল। আর যেই মেঘখণ্ড চলিয়া গেল অমনি তাহার পূর্বের ন্যায় উৎফুল্লতার সাড়া প্রদান করিল। পূর্বে বলিয়াছি যে, আমি বৈদ্যুতিক পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করিয়াছিলাম যে, সকল গাছেরই অনুভব-শক্তি আছে। এ কথা পশ্চিমের বৈজ্ঞানিকেরা অনেক দিন পর্যন্ত বিশ্বাস করিতে পারেন নাই। কিয়দ্দিন হইল ফরিদপুরের খেজুর বৃক্ষ আমার কথা প্রমাণ করিয়াছে। এই গাছটি প্রত্যুষে মস্তক উত্তোলন করিত, আর সন্ধ্যার সময় মস্তক অবনত করিয়া মৃত্তিকা স্পর্শ করিত। ইহা যে গাছের বাহিরের পরিবর্তনের অনুভূতিজনিত তাহা প্রমাণ করিতে সমর্থ হইয়াছি। যে সকল উদাহরণ দেওয়া গেল তাহা হইতে বুঝিতে পারিবেন যে, বৃক্ষলিখিত সাড়া দ্বারা তাহার জীবনের গুপ্ত ইতিহাস উদ্ধার হইতে পারে। গাছের পরীক্ষা হইতে জীবন সম্বন্ধে এইরূপ বহু নূতন তথ্য আবিষ্কার সম্ভবপর হইয়াছে। বৈজ্ঞানিক সত্য ব্যতীত অনেক দার্শনিক প্রশ্নেরও মীমাংসা হইবে বলিয়া মনে হয়।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন