০৮. আলোর বিবিধ বর্ণ

জগদীশচন্দ্র বসু

পূর্বে বলিয়াছি যে, দৃশ্য আলোক নানা বর্ণের। অনুভুতির দ্বারা বর্ণের বিভিন্নতা সহজেই করিতে পারি; কিন্তু বর্ণের বিভিন্নতা অনেকেই ধরিতে পারেন না। তাঁহারা বর্ণ সম্বন্ধে অন্ধ। বর্ণের বিভিন্নতা অন্য উপায়ে ধরা যাইতে পারে; সে বিষয় পরে বলিব। এইখানে বলা আবশ্যক যে, মানুষের দৃষ্টি-সীমার ক্রমবিকাশ হইতেছে। বহু পূর্বপুরুষদের বর্ণজ্ঞান সংকীর্ণ ছিল, তাহা অন্ততঃ এক দিকে প্রসারিত হইয়াছে। আর অন্য দিকেও কোনোদিন প্রসারিত হইবে। তাহা হইলে এখন যাহা অদৃশ্য তখন তাহা দৃশ্যের মধ্যে আসিবে।
সে যাহা হউক, অদৃশ্য আলোর রঙ সম্বন্ধে কয়েকটি অদ্ভুত পরীক্ষা বর্ণনা করিব। জানালার কাচের কোনো বিশেষ রঙ নাই, সূর্যের আলো উহার ভিতর দিয়া অবাধে চলিয়া যায়। সুতরাং দৃশ্য আলোর পক্ষে কাচ স্বচ্ছ, জলও স্বচ্ছ। কিন্তু ইট-পাটকেল অস্বচ্ছ, আলকাতরা তদপেক্ষা অস্বচ্ছ। দৃশ্য আলোকের কথা বলিলাম। অদৃশ্য আলোকের সম্মুখে জানালার কাচ ধরিলে তাহার ভিতর দিয়া এইরূপ আলো সহজেই চলিয়া যায়। কিন্তু জলের গেলাস সম্মুখে ধরিলে অদৃশ্য আলো একেবারে বন্ধ হইয়া যায়। কিমাশ্চর্যমতঃপরম্‌! তদপেক্ষাও আশ্চর্যের বিষয় আছে। ইট-পাটকেল, যাহা অস্বচ্ছ বলিয়া মনে করিতাম তাহা অদৃশ্য আলোকের পক্ষে স্বচ্ছ। আর আলকাতরা? ইহা জানালার কাচ অপেক্ষাও স্বচ্ছ! কোথায় এক অদ্ভুত দেশের কথা পড়িয়াছিলাম; সে দেশে জলাশয় হইতে মৎস্যেরা ডাঙায় ছিপ ফেলিয়া মানুষ শিকার করে। অদৃশ্য আলোকের কার্যও যেন অনেকটা সেইরূপই অদ্ভুত হইবে।

কিন্তু বস্তুতঃ তাহা নহে। দৃশ্য আলোকেও এরূপ আশ্চর্য ঘটনা দেখিয়াছি; তাহাতে অভ্যস্ত বলিয়া বিস্মিত হই না। সম্মুখের সাদা কাগজের উপর দুইটি বিভিন্ন আলো-রেখা পতিত হইয়াছে; একটি লাল আর একটি সবুজ। মাঝখানে জানালার কাচ ধরিলে উভয় আলোই অবাধে ভেদ করিয়া যায়। এবার মাঝখানে লাল কাচ ধরিলাম; লাল আলো অবাধে যাইতেছে, কিন্তু সবুজ আলো বন্ধ হইল। সবুজ কাচ ধরিলে সবুজ আলো বাধা পাইবে না; কিন্তু লাল আলো বন্ধ হইবে। ইহার কারণ এই যে, ১. সব আলো এক বর্ণের নহে; ২. কোনো পদার্থ এক আলোর পক্ষে স্বচ্ছ হইতে পারে, কিন্তু অন্য আলোর পক্ষে অস্বচ্ছ। যদি বর্ণজ্ঞান না থাকিত তাহা হইলেও একই পদার্থের ভিতর দিয়া এক আলো যাইতেছে এবং অন্য আলো যাইতেছে না দেখিয়া নিশ্চয়রূপে বলিতে পারিতাম যে, দুইটি আলো বিভিন্ন বর্ণের। আলকাতরা দৃশ্য আলোর পক্ষে অস্বচ্ছ এবং অদৃশ্য আলোর পক্ষে স্বচ্ছ, ইহা জানিয়া অদৃশ্য আলোক যে অন্য বর্ণের তাহা প্রমাণিত হয়। আমাদের দৃষ্টিশক্তি প্রসারিত হইলে ইন্দ্রধনু অপেক্ষাও কল্পনাতীত অনেক নূতন বর্ণের অস্তি দেখিতে পাইতাম। তাহাতেও কি আমাদের বর্ণের তৃষ্ণা মিটিত?

সকল অধ্যায়

১. ০১. কথারম্ভ
২. ০২. যুক্তকর
৩. ০৩. আকাশ-স্পন্দন ও আকাশ-সম্ভব জগৎ
৪. ০৪. উদ্ভিদের জন্ম ও মৃত্যু
৫. ০৫. মন্ত্রের সাধন
৬. ০৬. অদৃশ্য আলোক
৭. ০৭. আলোর সাধারণ প্রকৃতি
৮. ০৮. আলোর বিবিধ বর্ণ
৯. ০৯. মৃত্তিকা-বর্তুল ও কাচ-বর্তুল
১০. ১০. সর্বমুখী এবং একমুখী আলো
১১. ১১. বক-কচ্ছপ সংবাদ
১২. ১২. তারহীন সংবাদ
১৩. ১৩. পলাতক তুফান
১৪. ১৪. অগ্নি পরীক্ষা
১৫. ১৫. ভাগীরথীর উৎস-সন্ধানে
১৬. ১৬. বিজ্ঞানে সাহিত্য
১৭. ১৭. কবিতা ও বিজ্ঞান
১৮. ১৮. বিজ্ঞানে সাহিত্য – অদৃশ্য আলোক
১৯. ১৯. বৃক্ষজীবনের ইতিহাস
২০. ২০. বৃক্ষের দৈনন্দিন ইতিহাস
২১. ২১. ভারতে অনুসন্ধানের বাধা
২২. ২২. গাছের লেখা
২৩. ২৩. উপসংহার
২৪. ২৪. নির্বাক জীবন
২৫. ২৫. তরুলিপি
২৬. ২৬. গাছ লাজুক কি অ-লাজুক
২৭. ২৭. অনুভূতি কাল নিরূপণ
২৮. ২৮. সাড়ার মাত্রা
২৯. ২৯. বৃক্ষে উত্তেজনাপ্রবাহ
৩০. ৩০. স্বতঃস্পন্দন
৩১. ৩১. বনচাঁড়ালের নৃত্য
৩২. ৩২. মৃত্যুর সাড়া
৩৩. ৩৩. নবীন ও প্রবীণ
৩৪. ৩৪. দলাদলি
৩৫. ৩৫. পরিষদ-গৃহে বক্তৃতা
৩৬. ৩৬. বোধন
৩৭. ৩৭. জীবনসংগ্রাম
৩৮. ৩৮. লোকসেবা
৩৯. ৩৯. শিল্পোদ্ধার
৪০. ৪০. মানসিক শক্তির বিকাশ
৪১. ৪১. বিফলতা
৪২. ৪২. মনন ও করণ
৪৩. ৪৩. রানী-সন্দর্শন
৪৪. ৪৪. নিবেদন
৪৫. ৪৫. পরীক্ষা
৪৬. ৪৬. জয়-পরাজয়
৪৭. ৪৭. পৃথিবী পর্যটন
৪৮. ৪৮. বীরনীতি
৪৯. ৪৯. বিজ্ঞান-প্রচারে ভারতের দান
৫০. ৫০. আশা ও বিশ্বাস
৫১. ৫১. আবিষ্কার এবং প্রচার
৫২. ৫২. অর্ঘ্য
৫৩. ৫৩. দীক্ষা
৫৪. ৫৪. আহত উদ্ভিদ
৫৫. ৫৬. জীবনের মাপকাঠি
৫৬. ৫৭. গাছের উত্তেজনার কথা
৫৭. ৫৮. গাছের লিপিযন্ত্র
৫৮. ৫৯. গাছের লেখা হইতে তাহার ভিতরকার ইতিহাস উদ্ধার
৫৯. ৬০. পাত্রাধার তৈল
৬০. ৬১. আহতের সাড়া
৬১. ৬২. আঘাতে অনুভূতি-শক্তির বিলোপ
৬২. ৬৩. জন্মভূমি
৬৩. ৬৪. স্নায়ুসূত্রে উত্তেজনা-প্রবাহ
৬৪. ৬৫. স্বতঃস্পন্দন ও ভিতরের শক্তি
৬৫. ৬৬. ইন্দ্রিয়-অগ্রাহ্য কিরূপে ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য হইবে?
৬৬. ৬৭. বাহিরের শক্তির প্রতিরোধ
৬৭. ৬৮. বৃক্ষে স্নায়ুসূত্র
৬৮. ৬৯. আণবিক সন্নিবেশে উত্তেজনা-প্রবাহের হ্রাস-বৃদ্ধি
৬৯. ৭০. পরীক্ষা
৭০. ৭১. ভিতর ও বাহির
৭১. ৭২. হাজির
৭২. ৭৩. বৃক্ষের অঙ্গভঙ্গী
৭৩. ৭৪. সবিতার রথ
৭৪. ৭৫. ছাত্রসমাজের প্রতি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন