লজ্জা দিবস

তসলিমা নাসরিন

লজ্জা দিবস

২২ নভেম্বর, ২০০৭ সাল। আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এই বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা দেড়-দুবছর ধরেই চলছিল। যে বইটি বামফ্রন্ট সরকার নিষিদ্ধ করেছিল ২০০৩ সালে, সেটিকে দুবছর পর কলকাতা হাইকোর্ট মুক্তি দেয়। বইয়ের এই মুক্তি পাওয়া বামপন্থীরা পছন্দ করেননি। থেকে থেকেই বলছিলেন রাজ্য ছাড়তে। চাপটা চরমে উঠলো হায়দারাবাদে মুসলিম মৌলবাদীরা আমার ওপর হামলা করার পর। কলকাতায় আমাকে গৃহবন্দি করা হলো। পুলিশ কমিশনার বাড়িতে এসে থ্রেট করতেন। রাজ্য ছাড়ার জন্য হুকুম দিতেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহকে দিয়েও মুখ্যমন্ত্রী বলতেন আমি যেন কলকাতা ছাড়ি। এমনকী বাড়িওয়ালা ডাক্তার দেবল সেনকে দিয়েও বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিলেন। এমন সময় পার্ক সার্কাসের গলিতে মুসলমানদের বের করা হলো। ছিল নন্দীগ্রাম,সিঙ্গুর আর রিজওয়ানকে নিয়ে বিক্ষোভ, হয়ে দাঁড়ালো তসলিমার ডিপোর্টেশনের পক্ষে মিছিল।

মুসলমানের আপরাইজিং হলে মেটিয়াবুরুজ, খিদিরপুরেও হতো। কোথাও কিন্তু কিছু হয়নি। পার্কসার্কাসের মুসলমানরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের সামনেই গাড়িটাড়ি পোড়ালো। খামোকা আর্মি নামানো হয়েছিল, মনে আছে। কাফু ঢাকা হয়েছিল। মশা মারতে কামান দাগা বোধহয় একেই বলে।

বামফ্রন্ট সরকার মুসলমানের ভোট পাওয়ার জন্য আমাকে তাড়িয়েছিল, কিন্তু মুসলমানের ভোট তাদের পাওয়া হয়নি। সামনেই ছিল পঞ্চায়েত ইলেকশন। সেই ইলেকশনো গোহারা হেরেছিল বামফ্রন্ট। (আজও রাজনীতিকদের এই শিক্ষাটা হয়নি যে তসলিমাকে গৃহবন্দি করে, মেরে, তাড়িয়ে, তার সর্বনাশ করে, তার টিভি সিরিয়াল ব্যান করে, তার বইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল করে মুসলমানের ভোট জোটেনা, জোটেনি কোনওকালে।)

এরপর তো ফতোয়াবাজরা ধর্মতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে বিরাট জনসভা করে আমার মাথার দাম আনলিমিটিড অ্যামাউন্ট টাকা ঘোষণা করলো। হায়দারাবাদি মোল্লাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। তিনি এবং কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম ছিলেন ফতোয়া ঘোষণার নায়ক। এই যে কারও মুণ্ডু কেটে নিয়ে এলে হাজার কোটি অথবা যত ইচ্ছে টাকা চাও তো দেবো বলা হলো, এর জন্য কারও কোনও শাস্তি হলো না। পুলিশ ছিল সভায়, ফতোয়াবাজদের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতেই ছিল। ওই ফতোয়াবাজ ইমাম আবার বামফ্রন্ট সরকারের, এবং এখনকার তৃণমুলী সরকারের পরম বন্ধু।

 কলকাতা থেকে তাড়াবার পর কিছু বন্ধু, খুব সাধারণ বন্ধু, প্রতিবাদ করতো এই ২২ নভেম্বর তারিখে। নাম দিয়েছিল এই দিনটির, লজ্জা দিবস। একজন বাঙালি লেখক, যে ভালোবেসে কলকাতায় থাকতো, তাকে কলকাতা থেকে বের করে দেওয়াটা কলকাতার জন্য লজ্জা, সে কারণেই ২২ নভেম্বরের দিনটিকে ওরা লজ্জা দিবস বলতো। তসলিমাকে কলকাতায় ফেরত চাই বলে বলে প্রতিবছর চিৎকার করতো ওরা কয়েকজন বড় লেখক কবি আসতেন প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে। ওই লেখক কবিরা তৃণমুলে ভিড়ে যাবার পর অবশ্য এ পথ আর মাড়ান না। লজ্জা দিবস বলে। কোনও দিবসের কথাও ওঁদের আর স্মরণ নেই।

সকল অধ্যায়

১. কুপমন্ডুক
২. ধর্মীয় সন্ত্রাস
৩. গৃহকর্মীদের নির্যাতন করছে গৃহকর্ত্রীরা!
৪. নাকুশা
৫. সন্ত্রাসের দুনিয়া
৬. একটি মৃত্যু
৭. ঈদের নামাজ নিষিদ্ধ
৮. ঈদ
৯. ও আমার দেশের মাটি
১০. মেয়েদের কেন ঠকানো হয়?
১১. লজ্জা দিবস
১২. গোমাংস নিষিদ্ধ
১৩. ব্যক্তিগত শোক
১৪. নতুন পৃথিবী
১৫. বজরঙ্গি ভাইজান
১৬. হুমায়ুন আজাদ
১৭. ভারতে পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ
১৮. নার্গিস
১৯. অসহিষ্ণুতা
২০. ইসলামী খুনী
২১. বইমেলায় প্রবেশ নিষেধ
২২. দৈনন্দিন জীবন
২৩. উইকিপিডিয়া
২৪. কোথায় আছি
২৫. দ্বিখণ্ডিত
২৬. ফাঁসি
২৭. স্টেটমেন্ট
২৮. হাতি ঘোড়া
২৯. আইসিস
৩০. খুন
৩১. দুর্বৃত্ত
৩২. প্রতিবাদ
৩৩. ফ্রিডম ফ্রম রিলিজন
৩৪. গুলাম আলী
৩৫. হজ্ব
৩৬. সৌদি আরবের কীর্তিকলাপ
৩৭. কোরবানির ঈদ
৩৮. ডেঙ্গি
৩৯. তাইপেই
৪০. কবিতা
৪১. এস
৪২. কবিতা
৪৩. সৌদি আরবে সেক্স শপ
৪৪. অভিজিৎকে কেন মরতে হলো
৪৫. বারসেলোনা
৪৬. মেক্সিকো
৪৭. অনুভূতিতে আঘাত না করে সমাজ বদলানো যায় না
৪৮. অভিজিৎকে যেভাবে চিনি
৪৯. পড়ানো
৫০. অসম্মান
৫১. গরবাচেভ
৫২. ভাষা দিবস
৫৩. ভারতের হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা মুক্তমনাদের খুন করছে
৫৪. অ্যাসেম্বলি
৫৫. আমার দুঃখিনী বর্ণমালা
৫৬. খাওয়াদাওয়া
৫৭. আমি কোথায় এখন?
৫৮. গার্হস্থ্য
৫৯. পুরোনো পাপী
৬০. উপহার
৬১. বর্ণবাদ
৬২. বিলবাও
৬৩. ইলিশ কোরবানি
৬৪. পাটনা
৬৫. লিঁও
৬৬. ইহা বোমা নহে
৬৭. এই সময়
৬৮. এলোমেলো
৬৯. জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকে নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা
৭০. মা
৭১. ফেসবুক
৭২. দেশ ১
৭৩. কল্পনার রাজ্য
৭৪. ওরা আটজন
৭৫. চূর্ণী গাঙ্গুলী
৭৬. এসব কী হচ্ছে দেশে?
৭৭. ভিন্নমতের নিরাপত্তা নেই, বাংলাদেশ কি আদৌ কোনও ডেমোক্রেসিং?
৭৮. অভিজিৎ
৭৯. কীরকম যেন ভয় ভয় লাগে
৮০. গরিবের গ্রেনেড
৮১. কোকো, খালেদা আর দেশের দগ্ধ সন্তানেরা
৮২. গুন্টার গ্রাস
৮৩. চুম্বন
৮৪. ছিঃ!
৮৫. ছোট ছোট ভাবনা
৮৬. নারী
৮৭. নারী দিবস
৮৮. নাস্তিক নাগরিকদের নিরাপত্তা দিন
৮৯. নারী দিবস
৯০. ধর্ম আর রাজনীতি
৯১. টুকরো ভাবনা
৯২. পতিতাপ্রথা বন্ধ হোক
৯৩. পাকিস্তানে খুন
৯৪. বাংলা সংস্কৃতি চলবে কী চলবে না
৯৫. টুকরো টুকরো জীবন
৯৬. বাংলাদেশের কী কী করা উচিত ছিল এবং ছিল না
৯৭. বাক স্বাধীনতা
৯৮. বাঘ আর বেড়াল
৯৯. ভূমিকম্প, গরুর মাংস
১০০. স্বপ্নগুলো
১০১. ব্লগার হত্যা?
১০২. মানুষ মানুষের জন্য?
১০৩. মেনোপজ?
১০৪. ইসলামী ইনকুইজেশন
১০৫. লিঙ্গসূত্র
১০৬. মুসলিম শরণার্থীদের সাহায্য করছে অমুসলিম দেশগুলো
১০৭. স্যানিটারি প্রতিবাদ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন