গুন্টার গ্রাস

তসলিমা নাসরিন

গুন্টার গ্রাস

গুন্টার গ্রাসের সঙ্গে আমার দুবার দেখা হয়েছিল। প্রথমবার চেক রিপাবলিকের প্রাগে, এক সাহিত্য সম্মেলনে। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে। আর দ্বিতীয়বার, বার্লিনে। পূর্ব বার্লিনে। যখন তিনি তাঁর বই থেকে পড়তে এসেছিলেন। তখন আমি বার্লিনেই থাকি। এই ছবিটা প্রাগের সম্মেলনে যখন দুজন কথা বলছিলাম।

মনে আছে,তিনি যখন পাঠ করতে এসেছিলেন তাঁর নতুন বেরোনো আইন ওয়েটিস ফেল্ড (একটা প্রশস্ত মাঠ) থেকে, আমার সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল অডিটোরিয়ামের বাইরে। অনেকক্ষণ কথা বললেন আমার সঙ্গে। টিভি ক্যামেরগুলো প্রজাপতির মতো উড়ে চলে এলো আমাদের দেখে। এতে আমাদের কিছু যায় আসেনি। আমরা কথা বলে যাচ্ছিলাম, উনি বললেন, তোমার ফতোয়ার মতো সিরিয়াস না হলেও আমার ওপর জারি করা ফতোয়া কিন্তু একেবারেই ফেলনা নয়। তাঁর ওই বইটা নিয়ে তখন জার্মানিতে তোলপাড়। ডাস স্পিগাল পত্রিকার প্রচ্ছদ ছাপানো হয়েছিলো বিখ্যাত পুস্তক সমালোচক মারচেল গ্রাসের বইটাকে ছিঁড়ে দু টুকরো করে ফেলেছেন। বাক স্বাধীনতার প্রশ্নে ডাস স্পিগালের ভূমিকা নিয়েও তখন আলোচনা তুঙ্গে। গ্রাস তাঁর বইয়ে দুই জার্মানি এক হওয়ার বিরুদ্ধে লিখেছেন। গ্রাস নিজে বামপন্থী আদর্শের মানুষ। তিনি পুঁজিবাদের কাছে পূর্ব জার্মানির হেরে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি। তিনি মনে করেন, পূর্ব জার্মানিকে স্রেফ কিনে নিয়েছে পশ্চিম জার্মানি। খুব স্বাভাবিকভাবেই যারা বার্লিন দেয়াল ভাঙার পক্ষে ছিলো, গ্রাসের তীব্র সমালোচনা করেছিল। ফতোয়া, সমালোচনা, নিন্দা নিয়ে আরও কিছুক্ষণ রসিকতা করলেন গ্রাস। তবে দুজনের একান্ত আড্ডাটা শেষ করলাম এই বলে, যে, লোকে যাই বলুক, যা কিছুই ঘটুক, যতো ফতোয়াই দেওয়া হোক, যত ঘৃণাই আমাদের করা হোক, আমাদের যা বলতে ইচ্ছে করে, তা আমরা বলে যাবো, আমরা যা বিশ্বাস করি, তা আমরা লিখে যাবো।

সেদিন গুন্টার গ্রাসের পাঠ মন দিয়ে শুনেছিলাম। আমি কি জার্মান জানি। জানি, তারপরও শুনেছি। হাজার হাজার মানুষ শুনেছে, দাঁড়িয়ে, বসে। তিল ধারণের জায়গা ছিল না। কী আশ্চর্য। মানুষ তাঁর সঙ্গে একমত নয়, কিন্তু মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে। কেউ চিৎকার করে উঠছে না, কেউ গালি দিচ্ছে না, কেউ সামান্য শব্দ করছে। না। পিন পতন নিস্তব্ধতার মধ্যে তিনি বই থেকে পাঠ করলেন। কতক্ষণ? দুঘণ্টা? হ্যাঁ দুঘন্টাই। আমার মতো অস্থির মানুষও একটিও জার্মান শব্দ না বুঝে দুঘণ্টা বসে রইলাম। আসে কিছু কিছু সময় মানুষের জীবনে, যখন চারপাশের সব কিছু অনুভব করা যায়, ভাষা বোঝার দরকার হয় না।

গুন্টার গ্রাস আজ মারা গেছেন। বয়স হয়েছিল ৮৭। ভালো যে নোবেল কমিটি এত বড় লেখককে নোবেল প্রাইজটা দিয়েছিলেন। নোবেল না পেলেও গুন্টার গ্রাস গুন্টার গ্রাসই থাকতেন, নোবেল কমিটিকে লজ্জায় মাথা হেঁট করতে হতো।

গুন্টার গ্রাসের অতুলনীয় প্রতিভাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আজও জানি না তিনি কেন এত দীর্ঘদিন লুকিয়ে ছিলেন যে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর এসএস ছিলেন।

সকল অধ্যায়

১. কুপমন্ডুক
২. ধর্মীয় সন্ত্রাস
৩. গৃহকর্মীদের নির্যাতন করছে গৃহকর্ত্রীরা!
৪. নাকুশা
৫. সন্ত্রাসের দুনিয়া
৬. একটি মৃত্যু
৭. ঈদের নামাজ নিষিদ্ধ
৮. ঈদ
৯. ও আমার দেশের মাটি
১০. মেয়েদের কেন ঠকানো হয়?
১১. লজ্জা দিবস
১২. গোমাংস নিষিদ্ধ
১৩. ব্যক্তিগত শোক
১৪. নতুন পৃথিবী
১৫. বজরঙ্গি ভাইজান
১৬. হুমায়ুন আজাদ
১৭. ভারতে পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ
১৮. নার্গিস
১৯. অসহিষ্ণুতা
২০. ইসলামী খুনী
২১. বইমেলায় প্রবেশ নিষেধ
২২. দৈনন্দিন জীবন
২৩. উইকিপিডিয়া
২৪. কোথায় আছি
২৫. দ্বিখণ্ডিত
২৬. ফাঁসি
২৭. স্টেটমেন্ট
২৮. হাতি ঘোড়া
২৯. আইসিস
৩০. খুন
৩১. দুর্বৃত্ত
৩২. প্রতিবাদ
৩৩. ফ্রিডম ফ্রম রিলিজন
৩৪. গুলাম আলী
৩৫. হজ্ব
৩৬. সৌদি আরবের কীর্তিকলাপ
৩৭. কোরবানির ঈদ
৩৮. ডেঙ্গি
৩৯. তাইপেই
৪০. কবিতা
৪১. এস
৪২. কবিতা
৪৩. সৌদি আরবে সেক্স শপ
৪৪. অভিজিৎকে কেন মরতে হলো
৪৫. বারসেলোনা
৪৬. মেক্সিকো
৪৭. অনুভূতিতে আঘাত না করে সমাজ বদলানো যায় না
৪৮. অভিজিৎকে যেভাবে চিনি
৪৯. পড়ানো
৫০. অসম্মান
৫১. গরবাচেভ
৫২. ভাষা দিবস
৫৩. ভারতের হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা মুক্তমনাদের খুন করছে
৫৪. অ্যাসেম্বলি
৫৫. আমার দুঃখিনী বর্ণমালা
৫৬. খাওয়াদাওয়া
৫৭. আমি কোথায় এখন?
৫৮. গার্হস্থ্য
৫৯. পুরোনো পাপী
৬০. উপহার
৬১. বর্ণবাদ
৬২. বিলবাও
৬৩. ইলিশ কোরবানি
৬৪. পাটনা
৬৫. লিঁও
৬৬. ইহা বোমা নহে
৬৭. এই সময়
৬৮. এলোমেলো
৬৯. জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকে নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা
৭০. মা
৭১. ফেসবুক
৭২. দেশ ১
৭৩. কল্পনার রাজ্য
৭৪. ওরা আটজন
৭৫. চূর্ণী গাঙ্গুলী
৭৬. এসব কী হচ্ছে দেশে?
৭৭. ভিন্নমতের নিরাপত্তা নেই, বাংলাদেশ কি আদৌ কোনও ডেমোক্রেসিং?
৭৮. অভিজিৎ
৭৯. কীরকম যেন ভয় ভয় লাগে
৮০. গরিবের গ্রেনেড
৮১. কোকো, খালেদা আর দেশের দগ্ধ সন্তানেরা
৮২. গুন্টার গ্রাস
৮৩. চুম্বন
৮৪. ছিঃ!
৮৫. ছোট ছোট ভাবনা
৮৬. নারী
৮৭. নারী দিবস
৮৮. নাস্তিক নাগরিকদের নিরাপত্তা দিন
৮৯. নারী দিবস
৯০. ধর্ম আর রাজনীতি
৯১. টুকরো ভাবনা
৯২. পতিতাপ্রথা বন্ধ হোক
৯৩. পাকিস্তানে খুন
৯৪. বাংলা সংস্কৃতি চলবে কী চলবে না
৯৫. টুকরো টুকরো জীবন
৯৬. বাংলাদেশের কী কী করা উচিত ছিল এবং ছিল না
৯৭. বাক স্বাধীনতা
৯৮. বাঘ আর বেড়াল
৯৯. ভূমিকম্প, গরুর মাংস
১০০. স্বপ্নগুলো
১০১. ব্লগার হত্যা?
১০২. মানুষ মানুষের জন্য?
১০৩. মেনোপজ?
১০৪. ইসলামী ইনকুইজেশন
১০৫. লিঙ্গসূত্র
১০৬. মুসলিম শরণার্থীদের সাহায্য করছে অমুসলিম দেশগুলো
১০৭. স্যানিটারি প্রতিবাদ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন