ছিঃ!

তসলিমা নাসরিন

ছিঃ!

১৭ই ফেব্রুয়ারির ‘দেশ’এ শ্ৰী বাদল বসু তাঁর ধারাবাহিক রচনা পিওন থেকে প্রকাশকএ আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছেন, যার প্রতিবাদ করতেই এই চিঠি। যাঁরা আমাকে চেনেন-জানেন বলে বিশ্বাস করি, তাঁরা যখন মিথ্যে বলেন আমার সম্পর্কে, তখন বিস্মিত হই, ব্যথিত হই। আমার সম্পর্কে মিথ্যে বলার লোকের অভাব নেই, সম্ভবত এই কারণে যে, আমিই একমাত্র একজন, যার দিকে ঢিল ছুড়লে, কাদা ছুড়লে, যার চরিত্র হনন করলে, জবাবদিহি করতে হয় না, সমালোচিত হতে হয় না, নিন্দা শুনতে হয় না, মামলায় ফাঁসতে হয় না, মার খেতে হয় না।

তিনি লিখেছেন, সুনীলের চিঠি পেয়ে বুদ্ধবাবু সেই ফ্ল্যাটের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন তসলিমাকে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ফ্ল্যাটটা নেয়নি তসলিমা। মিথ্যে কথা লিখেছেন বাদল বসু। আমার জন্য কোনও ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা বৃদ্ধবাবু কখনও করেননি। আর, এ কথা বাদল বসুই সবচেয়ে ভালো জানতেন। পত্রিকায় বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখে আর রাস্তায় ঘুরে ঘুরে টু লেট লেখা দেখে ফ্ল্যাট খুঁজেছি, ভাড়া নিয়েছি। বুদ্ধবাবু তখন আমার দ্বিখণ্ডিত বইটি নিষিদ্ধ করতে ব্যস্ত।

একবার শান্তিনিকেতনে দোলের দিন অনেকের সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সেটি ছিল ১৯৯২ সাল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দোল খেলে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ লোক সৌমিত্র মিত্র বাংলাদেশ থেকে শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব দেখতে আসা আমাদের কয়েকজনকে বললেন, সুনীলদা বলেছেন আমাদের নিয়ে যেন তিনি তাঁর বাড়িতে যান। সে কারণেই যাওয়া। বাদল। বসু লিখেছেন, আমার সারা গায়ে রং মাখা, বোঝা যায় দোল খেলেছে। সেটিই শান্তিনিকেতনে আমার প্রথম দোল। দোল খেলায় মোটেই আমি অভ্যস্ত নই। চেনা পরিচিত কেউ কেউ জোর করে আবীর মাখিয়ে দিয়েছিল। যতটুকু ঝেড়ে ফেলা সম্ভব, ফেলেছিলাম। বাদল বসু লিখেছেন আমি নাকি নেশায় চুর ছিলাম। আমি মদ্যপান করি না, মাদকদ্রব্য সেবনও করি না। নেশায় চুর থাকার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বরং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছে দেখলাম বাদল বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং আরও যাঁরা ছিলেন, মদ্যপান করছেন। নেশায় চুর যদি কেউ হয়ে থাকেন সেদিন, সে বাদল বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং সে বাড়িতে মদ্যপানরত লোকেরা।

বাদল বসু লিখেছেন আমি নাকি সটান গিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পা জড়িয়ে ধরে বলেছি, শুভ দোল। মিথ্যে কথা। আমি কোনওদিনই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পায়ে হাত দিইনি, জড়িয়ে ধরা তো দূরের কথা। খুব শ্রদ্ধা করি, এমন কাউকে আমি বড়জোর হাত জোড় করে নমস্কার করি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কেও হাত জোড় করেই নমস্কার করেছি, কিন্তু তাঁর বাড়িতে নয়, কারণ তাঁর বাড়িতে যাওয়ার আগেই তাঁর সঙ্গে আমাদের কলাভবনে এবং ইন্দ্রনাথ মজুমদারের বইএর দোকান সুবর্ণরেখায় দেখা হয়েছিল। শুভ দোল আমি কাউকে আজ অবধি বলিনি।

বাদল বসু লিখেছেন, ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা থতমত খেয়ে গিয়েছি। সুনীলও কিছু বলার এবং বাধা দেওয়ার সুযোগ পাননি। যে ঘটনা আদৌ ঘটেনি, তার আকস্মিকতা বলে তো কিছু থাকতে পারে না। এবং সেই না-ঘটা ঘটনাকে গ্রহণ করা এবং বাধা দেওয়ারও কিছু থাকতে পারে না।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে আমরা বেশিক্ষণ ছিলাম না। লাঞ্চের আগেই চলে আসি। বাদল বসু লিখেছেন, তিনি নাকি ভেতরের ঘরে গিয়ে দেখলেন স্বাতী নিঃশব্দে কাঁদছেন। বাদল বসু কি বলতে চাইছেন তসলিমা সুনীলের জড়িয়ে ধরে শুভ দোল বলেছে, সুতরাং স্বাতী কেঁদেছেন? আমার প্রশ্ন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পা জড়িয়ে যদি আমি শুভ দোল বলতামই সেই দোলের দিন, তাতে স্বাতী কেন কাঁদবেন?

আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পা জড়িয়ে ধরে শুভ দোল যে বলে, তাকে কি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যৌন হেনস্থা করতে পারেন না? বাদল বসু মনে হয় বলতে চাইছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তসলিমাকে যৌন হেনস্থা করবে কী, তসলিমাই সুনীলকে যৌন হেনস্থা করেছিল ৯২ সালে সুনীলের জড়িয়ে শুভ দোল বলে! যদিও ঘটনাটি বাদল বসুর বানানো, কিন্তু যদি সত্যিও হতো, তাহলেও শান্তিনিকেতনে দোলের দিন কোনও বয়োজ্যেষ্ঠ লেখককে বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে পা জড়িয়ে ধরে শুভ দোল বলাটা কোনওভাবেই কোনও রকম যৌন হেনস্থা নয়। এবং যার পা জড়িয়ে ধরা হয়, তার পক্ষে যে পা জড়িয়ে ধরে, তাকে, যৌন হেনস্থা করাটা সম্ভব নয় –এ সম্পূর্ণই অযৌক্তিক।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করাতে বাদল বসু আমার সম্পর্কে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে, কুৎসা রটিয়ে, মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন যে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমাকে যৌন হেনস্থা করেননি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে বাদল বসু কিন্তু তাঁর অনেক গোপন কথা জানতেন। মেয়েদের যে তিনি যৌন হেনস্থা করেন, তা আমার চেয়েও ভালো জানতেন বাদল বসু। কিন্তু এখন সুনীলকে মহান প্রমাণ করতে যদি চান, তাহলে আমার নিন্দা করে সুনীলকে মহান করার পথ তিনি কী কারণে বেছে নিলেন? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনও বদ উদ্দেশ্য আছে।

সকল অধ্যায়

১. কুপমন্ডুক
২. ধর্মীয় সন্ত্রাস
৩. গৃহকর্মীদের নির্যাতন করছে গৃহকর্ত্রীরা!
৪. নাকুশা
৫. সন্ত্রাসের দুনিয়া
৬. একটি মৃত্যু
৭. ঈদের নামাজ নিষিদ্ধ
৮. ঈদ
৯. ও আমার দেশের মাটি
১০. মেয়েদের কেন ঠকানো হয়?
১১. লজ্জা দিবস
১২. গোমাংস নিষিদ্ধ
১৩. ব্যক্তিগত শোক
১৪. নতুন পৃথিবী
১৫. বজরঙ্গি ভাইজান
১৬. হুমায়ুন আজাদ
১৭. ভারতে পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ
১৮. নার্গিস
১৯. অসহিষ্ণুতা
২০. ইসলামী খুনী
২১. বইমেলায় প্রবেশ নিষেধ
২২. দৈনন্দিন জীবন
২৩. উইকিপিডিয়া
২৪. কোথায় আছি
২৫. দ্বিখণ্ডিত
২৬. ফাঁসি
২৭. স্টেটমেন্ট
২৮. হাতি ঘোড়া
২৯. আইসিস
৩০. খুন
৩১. দুর্বৃত্ত
৩২. প্রতিবাদ
৩৩. ফ্রিডম ফ্রম রিলিজন
৩৪. গুলাম আলী
৩৫. হজ্ব
৩৬. সৌদি আরবের কীর্তিকলাপ
৩৭. কোরবানির ঈদ
৩৮. ডেঙ্গি
৩৯. তাইপেই
৪০. কবিতা
৪১. এস
৪২. কবিতা
৪৩. সৌদি আরবে সেক্স শপ
৪৪. অভিজিৎকে কেন মরতে হলো
৪৫. বারসেলোনা
৪৬. মেক্সিকো
৪৭. অনুভূতিতে আঘাত না করে সমাজ বদলানো যায় না
৪৮. অভিজিৎকে যেভাবে চিনি
৪৯. পড়ানো
৫০. অসম্মান
৫১. গরবাচেভ
৫২. ভাষা দিবস
৫৩. ভারতের হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা মুক্তমনাদের খুন করছে
৫৪. অ্যাসেম্বলি
৫৫. আমার দুঃখিনী বর্ণমালা
৫৬. খাওয়াদাওয়া
৫৭. আমি কোথায় এখন?
৫৮. গার্হস্থ্য
৫৯. পুরোনো পাপী
৬০. উপহার
৬১. বর্ণবাদ
৬২. বিলবাও
৬৩. ইলিশ কোরবানি
৬৪. পাটনা
৬৫. লিঁও
৬৬. ইহা বোমা নহে
৬৭. এই সময়
৬৮. এলোমেলো
৬৯. জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকে নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা
৭০. মা
৭১. ফেসবুক
৭২. দেশ ১
৭৩. কল্পনার রাজ্য
৭৪. ওরা আটজন
৭৫. চূর্ণী গাঙ্গুলী
৭৬. এসব কী হচ্ছে দেশে?
৭৭. ভিন্নমতের নিরাপত্তা নেই, বাংলাদেশ কি আদৌ কোনও ডেমোক্রেসিং?
৭৮. অভিজিৎ
৭৯. কীরকম যেন ভয় ভয় লাগে
৮০. গরিবের গ্রেনেড
৮১. কোকো, খালেদা আর দেশের দগ্ধ সন্তানেরা
৮২. গুন্টার গ্রাস
৮৩. চুম্বন
৮৪. ছিঃ!
৮৫. ছোট ছোট ভাবনা
৮৬. নারী
৮৭. নারী দিবস
৮৮. নাস্তিক নাগরিকদের নিরাপত্তা দিন
৮৯. নারী দিবস
৯০. ধর্ম আর রাজনীতি
৯১. টুকরো ভাবনা
৯২. পতিতাপ্রথা বন্ধ হোক
৯৩. পাকিস্তানে খুন
৯৪. বাংলা সংস্কৃতি চলবে কী চলবে না
৯৫. টুকরো টুকরো জীবন
৯৬. বাংলাদেশের কী কী করা উচিত ছিল এবং ছিল না
৯৭. বাক স্বাধীনতা
৯৮. বাঘ আর বেড়াল
৯৯. ভূমিকম্প, গরুর মাংস
১০০. স্বপ্নগুলো
১০১. ব্লগার হত্যা?
১০২. মানুষ মানুষের জন্য?
১০৩. মেনোপজ?
১০৪. ইসলামী ইনকুইজেশন
১০৫. লিঙ্গসূত্র
১০৬. মুসলিম শরণার্থীদের সাহায্য করছে অমুসলিম দেশগুলো
১০৭. স্যানিটারি প্রতিবাদ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন