রাজসিংহ – ৬.২

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : অরণিকাষ্ঠ–পুরুরবা

উদ্যোগ মাণিকলালেরই বেশী। তাহার একটা নমুনা সে একদিন নির্‍মলকুমারীকে দেখাইল। নির্‍মল সবিস্ময়ে দেখিল, তাহার কাটা আঙ্গুলের স্থানে আবার নূতন আঙ্গুল হইয়াছে। সে মাণিকলালকে জিজ্ঞাসা করিল, “এ আবার কি?”
মাণিকলাল বলিল, “গড়াইয়াছি |”
নির্‍মল । কিসে?
মাণিক। হাতীর দাঁতে। কলকব্জা বেমালুম লাগাইয়াছি, তাহার উপর ছাগলের পাতলা চামড়া মুড়িয়া আমার গায়ের মত রঙ করিয়াছি। ইচ্ছানুসারে খোলা হয়, পরা যায়।
নির্‍মল । এর দরকার?
মাণিক। দিল্লীতে জানিতে পারিবে। দিল্লীতে ছদ্মবেশের দরকার হইতে পারে। আঙ্গুলকাটার ছদ্মবেশ চলে না। কিন্তু দুই রকম হইলে খুব চলে।
নির্‍মল হাসিল। তার পর মাণিকলাল একটি পিঞ্জরমধ্যে একটা পোষা পায়রা লইল। এই পারাবতটি অতিশয় সুশিক্ষিত। দৌত্যকার্‍যে সুনিপুণ। যাঁহারা আধুনিক ইউরোপীয় যুদ্ধে ‘Carrier-pigeon’ গুলির গুণ অবগত আছেন, তাঁহারা ইহা বুঝিতে পারিবেন। পূর্‍বে ভারতবর্ষে এই জাতীয় শিক্ষিত পারাবতের ব্যবহার চলিত ছিল। পারাবতের গুণ মাণিকলাল সবিশেষ নির্‍মলকুমারীকে বুঝাইয়া দিলেন।
রীতি ছিল যে, দিল্লীর বাদশাহের নিকট দূত পাঠাইতে হইলে, কিছু উপঢৌকন সঙ্গে পাঠাইতে হয়। ইংলণ্ড, পর্ত্তুগাল প্রভৃতির রাজারাও তাহা পাঠাইতেন। রাজসিংহও কিছু দ্রব্যসামগ্রী মাণিকলালের সঙ্গে পাঠাইলেন। তবে, অপ্রণয়ের দৌত্য, বেশী সামগ্রী পাঠাইলেন না।
অন্যান্য দ্রব্যের মধ্যে শ্বেতপ্রস্তরনির্‍মিত, মণিরত্নখচিত কারুকার্‍যযুক্ত কতকগুলি সামগ্রী পাঠাইলেন। মাণিকলাল তাহা পৃথক বাহনে বোঝাই করিয়া লইলেন।
অবধারিত দিবসে রাণার আজ্ঞালিপি ও পত্র লইয়া, নির্‍মল কুমারী সমভিব্যাহারে, দাস-দাসী, লোকজন, হাতী-ঘোড়া, উট-বলদ, শকট, এক্কা, দোলা, রেশালা প্রভৃতি সঙ্গে লইয়া বড় ঘটার সহিত মাণিকলাল তাম্বু ফেলিয়া নির্‍মলকুমারীকে ও অন্যান্য লোকজনকে তথায় রাখিয়া, একজন মাত্র বিশ্বাসী লোক সঙ্গে লইয়া দিল্লী চলিল। আর সেই পাথরের সামগ্রীগুলিও সঙ্গে লইল। গড়া আঙ্গুল খুলিয়া নির্‍মলকুমারীর কাছে রাখিয়া গেল। বলিল, “কাল আসিব |”
নির্‍মল জিজ্ঞাসা করিল, “ব্যাপার কি?”
মাণিকলাল একখানা পাথরের জিনিস নির্‍মলকে দেখাইয়া, তাহাতে একটি ক্ষুদ্র চিহ্ন দেখাইল। বলিল, “সকলগুলিতেই এইরূপ চিহ্ন দিয়াছি |”
নির্‍মল । কেন?
মাণিক। দিল্লীতে তোমাতে আমাতে ছাড়াছাড়ি অবশ্য হইবে। তার পর যদি মোগলের প্রতিবন্ধকতায়, পরস্পরের সন্ধান না পাই, তাহা হইলে, তুমি পাথরের জিনিস কিনিতে বাজারে পাঠাইও। যে দোকানের জিনিসে তুমি এই চিহ্ন দেখিবে, সেই দোকানে আমার সন্ধান করিও।
এইরূপ পরামর্শ আঁটিয়া মাণিকলাল বিশ্বাসী লোকটি ও প্রস্তরনির্‍মিত দ্রব্যগুলি লইয়া দিল্লী গেল। সেখানে গিয়া, একখানা ঘর ভাড়া লইয়া পাথরের দোকান সাজাইয়া, ঐ সমভিব্যাহারী লোকটিকে দোকানদার সাজাইয়া, শিবিরে ফিরিয়া আসিল।
পরে সমস্ত ফৌজ ও রেশালা এবং নির্‍মলকুমারীকে লইয়া পুনর্‍বার দিল্লী গেল। এবং সেখানে যথারীতি শিবির সংস্থাপিত করিয়া বাদশাহের নিকট সংবাদ পাঠাইল।

সকল অধ্যায়

১. রাজসিংহ – ১.১
২. রাজসিংহ – ১.২
৩. রাজসিংহ – ১.৩
৪. রাজসিংহ – ১.৪
৫. রাজসিংহ – ১.৫
৬. রাজসিংহ – ২.১
৭. রাজসিংহ – ২.২
৮. রাজসিংহ – ২.৩
৯. রাজসিংহ – ২.৪
১০. রাজসিংহ – ২.৫
১১. রাজসিংহ – ২.৬
১২. রাজসিংহ – ২.৭
১৩. রাজসিংহ – ৩.০১
১৪. রাজসিংহ – ৩.০২
১৫. রাজসিংহ – ৩.০৩
১৬. রাজসিংহ – ৩.০৪
১৭. রাজসিংহ – ৩.০৫
১৮. রাজসিংহ – ৩.০৬
১৯. রাজসিংহ – ৩.০৭
২০. রাজসিংহ – ৩.০৮
২১. রাজসিংহ – ৩.০৯
২২. রাজসিংহ – ৩.১০
২৩. রাজসিংহ – ৪.১
২৪. রাজসিংহ – ৪.২
২৫. রাজসিংহ – ৪.৩
২৬. রাজসিংহ – ৪.৪
২৭. রাজসিংহ – ৪.৫
২৮. রাজসিংহ – ৪.৬
২৯. রাজসিংহ – ৪.৭
৩০. রাজসিংহ – ৫.১
৩১. রাজসিংহ – ৫.২
৩২. রাজসিংহ – ৫.৩
৩৩. রাজসিংহ – ৫.৪
৩৪. রাজসিংহ – ৫.৫
৩৫. রাজসিংহ – ৫.৬
৩৬. রাজসিংহ – ৬.১
৩৭. রাজসিংহ – ৬.২
৩৮. রাজসিংহ – ৬.৩
৩৯. রাজসিংহ – ৬.৪
৪০. রাজসিংহ – ৬.৫
৪১. রাজসিংহ – ৬.৬
৪২. রাজসিংহ – ৬.৭
৪৩. রাজসিংহ – ৬.৮
৪৪. রাজসিংহ – ৬.৯
৪৫. রাজসিংহ – ৭.১
৪৬. রাজসিংহ – ৭.২
৪৭. রাজসিংহ – ৭.৩
৪৮. রাজসিংহ – ৭.৪
৪৯. রাজসিংহ – ৮.০১
৫০. রাজসিংহ – ৮.০২
৫১. রাজসিংহ – ৮.০৩
৫২. রাজসিংহ – ৮.০৪
৫৩. রাজসিংহ – ৮.০৫
৫৪. রাজসিংহ – ৮.০৬
৫৫. রাজসিংহ – ৮.০৭
৫৬. রাজসিংহ – ৮.০৮
৫৭. রাজসিংহ – ৮.০৯
৫৮. রাজসিংহ – ৮.১০
৫৯. রাজসিংহ – ৮.১১
৬০. রাজসিংহ – ৮.১২
৬১. রাজসিংহ – ৮.১৩
৬২. রাজসিংহ – ৮.১৪
৬৩. রাজসিংহ – ৮.১৫
৬৪. রাজসিংহ – ৮.১৬
৬৫. রাজসিংহ – ৮.১৭ (শেষ)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন