রাজসিংহ – ৪.৬

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : ফলভোগী রাণা

যুদ্ধক্ষেত্রের নিকটবর্তী এক নিভৃত স্থানে নির্মমল কে নামাইয়া দিয়া, তাহাকে সেইখানে বসিয়া থাকিতে উপদেশ দিয়া, মাণিকলাল, যেখানে রাজসিংহের সঙ্গে মবারকের যুদ্ধ হইতেছিল, একেবারে সেইখানে, মবারকের পশ্চাতে উপস্থিত হইল।
মাণিকলাল দেখিয়া যায় নাই যে, তৎপ্রদেশে যুদ্ধ উপস্থিত হইয়াছে। কিন্তু রন্ধ্রপথে রাজসিংহ প্রবেশ করিয়াছেন; হঠাৎ তাহার শঙ্কা হইয়াছিল যে, মোগলেরা রন্ধ্রের এই মুখ বন্ধ করিয়া রাজসিংহকে বিনষ্ট করিবে। সেই জন্যই সে রূপনগরে সৈন্য সংগ্রহার্থে গিয়াছিল, এবং সেই জন্য সে প্রথমেই এই দিকে রূপনগরের সেনা লইয়া উপস্থিত হইল। আসিয়াই বুঝিল যে, রাজপুতগণের নাভিশ্বাস উপস্থিত বলিলেই হয়–মৃত্যুর আর বিলম্ব নাই। তখন মাণিকলাল মবারকের সেনার প্রতি অঙ্গুলিনির্দেেশে করিয়া দেখাইয়া বলিল, “ঐ সকল দস্যু! উহাদিগকে মারিয়া ফেল |”
সৈনিকেরা কেহ কেহ বলিল, “উহারা যে মুসলমান!”
মাণিকলাল বলিল, “মুসলমান কি লুঠেরা হয় না? হিন্দুই কি এত দুষ্ক্রিয়াকারী? মার |”
মাণিকলালের আজ্ঞায় একেবারে হাজার বন্দুকের শব্দ হইল।
মবারক ফিরিয়া দেখিলেন, কোথা হইতে সহস্র অশ্বারোহী আসিয়া তাঁহাকে পশ্চাৎ হইতে আক্রমণ করিতেছে। মোগলেরা ভীত হইয়া আর যুদ্ধ করিল না। যে যে দিকে পারিল, সে সেই দিকে পলায়ন করিল। মবারক রাখিতে পারিলেন না। তখন রাজপুতেরা “মাতাজীকি জয়!” বলিয়া তাহাদের পশ্চাদ্ধাবিত হইল।
মবারকের সেনা ছিন্ন ভিন্ন হইয়া পর্বাতরোহণ করিয়া পলায়ন করিতে লাগিল, রূপনগরের সেনা তাহাদিগের পশ্চাদ্ধাবিত হইয়া পর্বইতরোহণ করিতে লাগিল। মবারক সেনা ফিরাইতে গিয়া, সহসা অশ্বসমেত অদৃশ্য হইলেন।
এই অবসরে মাণিকলাল বিস্মিত রাজসিংহের নিকট উপস্থিত হইয়া প্রণাম করিলেন, রাণা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি এ কাণ্ড মাণিকলাল? কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। তুমি কিছু জান?”
মাণিকলাল হাসিয়া বলিল, “জানি। যখন আমি দেখিলাম যে, মহারাজ রন্ধ্রপথে নামিয়াছেন, তখন বুঝিলাম যে, সর্ব“নাশ হইয়াছে। প্রভুর রক্ষার্থ আমাকে আবার একটি নূতন জুয়াচুরি করিতে হইয়াছে |”
এই বলিয়া মাণিকলাল যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, সংক্ষেপে রাণাকে শুনাইল। আপ্যায়িত হইয়া রাণা মাণিকলালকে আলিঙ্গন করিয়া বলিলেন, “মাণিকলাল তুমি যথার্থ প্রভুভক্ত। তুমি যে কার্যর করিয়াছ, যদি কখন উদয়পুর ফিরিয়া যাই, তবে তাহার পুরস্কার করিব। কিন্তু তুমি আমাকে বড় সাধে বঞ্চিত করিলে। আজ মুসলমানকে দেখাইতাম যে, রাজপুত কেমন করিয়া মরে!”
মাণিকলাল বলিল, “মহারাজ! মোগলকে সে শিক্ষা দিবার জন্য মহারাজের অনেক ভৃত্য আছে। সেটা রাজকার্যেতর মধ্যে গণনীয় নহে এখন উদয়পুরের পথ খোলসা। রাজধানী ত্যাগ করিয়া পর্বরতে পর্বযতে পরিভ্রমণ করা কর্তরব্য নহে। এক্ষণে রাজকুমারীকে লইয়া স্বদেশে যাত্রা করুন |”
রাজসিংহ বলিলেন, “আমার কতকগুলি সঙ্গী এখন ও দিকের পাহাড়ের উপরে আছে–তাহাদের নামাইয়া লইয়া যাইতে হইবে |”
মাণিকলাল বলিল, “আমি তাহাদিগকে লইয়া যাইব। আপনি অগ্রসর হউন। পথে আমাদিগের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইবে |”
রাণা সম্মত হইয়া, চঞ্চলকুমারীর সহিত উদয়পুরাভিমুখী যাত্রা করিলেন।

সকল অধ্যায়

১. রাজসিংহ – ১.১
২. রাজসিংহ – ১.২
৩. রাজসিংহ – ১.৩
৪. রাজসিংহ – ১.৪
৫. রাজসিংহ – ১.৫
৬. রাজসিংহ – ২.১
৭. রাজসিংহ – ২.২
৮. রাজসিংহ – ২.৩
৯. রাজসিংহ – ২.৪
১০. রাজসিংহ – ২.৫
১১. রাজসিংহ – ২.৬
১২. রাজসিংহ – ২.৭
১৩. রাজসিংহ – ৩.০১
১৪. রাজসিংহ – ৩.০২
১৫. রাজসিংহ – ৩.০৩
১৬. রাজসিংহ – ৩.০৪
১৭. রাজসিংহ – ৩.০৫
১৮. রাজসিংহ – ৩.০৬
১৯. রাজসিংহ – ৩.০৭
২০. রাজসিংহ – ৩.০৮
২১. রাজসিংহ – ৩.০৯
২২. রাজসিংহ – ৩.১০
২৩. রাজসিংহ – ৪.১
২৪. রাজসিংহ – ৪.২
২৫. রাজসিংহ – ৪.৩
২৬. রাজসিংহ – ৪.৪
২৭. রাজসিংহ – ৪.৫
২৮. রাজসিংহ – ৪.৬
২৯. রাজসিংহ – ৪.৭
৩০. রাজসিংহ – ৫.১
৩১. রাজসিংহ – ৫.২
৩২. রাজসিংহ – ৫.৩
৩৩. রাজসিংহ – ৫.৪
৩৪. রাজসিংহ – ৫.৫
৩৫. রাজসিংহ – ৫.৬
৩৬. রাজসিংহ – ৬.১
৩৭. রাজসিংহ – ৬.২
৩৮. রাজসিংহ – ৬.৩
৩৯. রাজসিংহ – ৬.৪
৪০. রাজসিংহ – ৬.৫
৪১. রাজসিংহ – ৬.৬
৪২. রাজসিংহ – ৬.৭
৪৩. রাজসিংহ – ৬.৮
৪৪. রাজসিংহ – ৬.৯
৪৫. রাজসিংহ – ৭.১
৪৬. রাজসিংহ – ৭.২
৪৭. রাজসিংহ – ৭.৩
৪৮. রাজসিংহ – ৭.৪
৪৯. রাজসিংহ – ৮.০১
৫০. রাজসিংহ – ৮.০২
৫১. রাজসিংহ – ৮.০৩
৫২. রাজসিংহ – ৮.০৪
৫৩. রাজসিংহ – ৮.০৫
৫৪. রাজসিংহ – ৮.০৬
৫৫. রাজসিংহ – ৮.০৭
৫৬. রাজসিংহ – ৮.০৮
৫৭. রাজসিংহ – ৮.০৯
৫৮. রাজসিংহ – ৮.১০
৫৯. রাজসিংহ – ৮.১১
৬০. রাজসিংহ – ৮.১২
৬১. রাজসিংহ – ৮.১৩
৬২. রাজসিংহ – ৮.১৪
৬৩. রাজসিংহ – ৮.১৫
৬৪. রাজসিংহ – ৮.১৬
৬৫. রাজসিংহ – ৮.১৭ (শেষ)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন