রাজসিংহ – ৮.০৯

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

নবম পরিচ্ছেদ : অগ্নিতে জলসেক

সভাভঙ্গ হইল, তবু মাণিকলাল গেল না। সকলেই চলিয়া গেল, মাণিকলাল গোপনে মহারাণাকে জানাইল, “মবারকের বখ‍‍শিশের কথাটা এই সময়ে মহারাজকে স্মরণ করিয়া দিতে হয় |”
রাজসিংহ জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে কি চায়?”
মা। বাদশাহের যে কন্যা আমাদিগের কাছে বন্দী আছে, তাহাকেই চায়।
রা। তাহাকে যদি বাদশাহের নিকট ফেরৎ না পাঠাই, তবে বোধ করি, সন্ধি হইবে না। আর স্ত্রীলোকের উপর কি প্রকারে আমি পীড়ন করিব?
মা। পীড়ন করিতে হইবে না। শাহজাদীর সঙ্গে মবারকের গত রাত্রে সাদী হইয়াছে।
রা। সেই কথা শাহজাদী বাদশাহকে বলিলেই বোধ হয়, সব গোল মিটিবে।
মা। এক রকম–কেন না, দুই জনেরই মাথা কাটা যাইবে।
রা। কেন?
মা। শাহজাদীদের শাহজাদা ভিন্ন বিবাহ নাই। এই শাহজাদী একজন ক্ষুদ্র সৈনিককে বিবাহ করিয়া দিল্লীর বাদশাহের কুলের কলঙ্ক করিয়াছে। বিশেষ বাদশাহের কুলের কলঙ্ক করিয়াছে। বিশেষ বাদশাহকে না জানাইয়া এ বিবাহ করিয়াছে, এজন্য তাহাকে দিল্লীর রঙ‍মহালের প্রথানুসারে বিষ খাইতে হইবে। আর মবারক সাপের বিষে যখন মরেন নাই, তখন তাঁহাকে হাতীর পায়ে, কি শূলে যাইতে হইবে। যদি সে অপরাধও মার্‍জনা হয়, তবে তিনি মহারাজের যে উপকার করিয়াছেন, তাহার জন্য বাদশাহের কাছে শূলে যাইবার যোগ্য। জানিতে পারিলে বাদশাহ তাঁহাকে শূলে দিবে। তাহা ছাড়া তিনি বিমাননুমতিতে শাহজাদী বিবাহ করিয়াছেন, সে জন্যও শূলে যাইতে বাধ্য।
রাজসিংহ। আমি ইহার কিছু প্রতিকার করিতে পারি কি?
মাণিক। ঔরঙ্গজেব, কন্যা-জামাতাকে মার্‍জনা না করিলে আপনি সন্ধি করিবেন না, এই নিয়ম করিতে পারেন।
রাজসিংহ বলিলেন, “তাহা আমি করিতে স্বীকৃত হইতেছি। উহাদের জন্য আমি একখানি পৃথক্ পত্র বাদশাহকে লিখিতেছি। তাহাও তুমি ঐ সঙ্গে লইয়া যাও। ঔরঙ্গজেব কন্যাকে মার্‍জনা করিতে পারেন। কিন্তু মবারককে মার্‍জনা করিতে তিনি আপাতত: স্বীকৃত হইলেও, তাহাকে যে তিনি নিষ্কৃতি দিবেন, এমন আমার ভরসা হয় না। যাই হউক, মবারক যদি ইহাতে সন্তুষ্ট হয়, তবে আমি ইহা করিতে প্রস্তুত আছি |”
এই বলিয়া রাজসিংহ একখানি পৃথক পত্র স্বহস্তে লিখিয়া মাণিকলালকে দিলেন। মাণিকলাল পত্র দুইখানি লইয়া সেই রাত্রিতে উদয়পুর চলিল।
উদয়পুরে গিয়া মাণিকলাল প্রথম নির্‍মলকুমারীকে এই সকল সংবাদ দিলেন। নির্‍মল সন্তুষ্ট হইল। সেও একখানি পত্র বাদশাহকে এই মর্‍মে লিখিল–
“শাহান‍শাহ!
বাঁদীর অসংখ্য কুর্‍ণিশ। হুজুর যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, বাঁদী তাহা সম্পন্ন করিয়াছে। এক্ষণে হুজুরের সম্মতি পাইলেই হয়। আমার শেষ ভিক্ষাটা স্মরণ রাখিবেন। সন্ধি করিবেন |”
সে পত্রও নির্‍মল মাণিকলালকে দিল। তার পর নির্‍মল জেব-উন্নিসাকে সকল কথা জানাইল, তিনিও তাহাতে সন্তুষ্ট হইলেন। এ দিকে মাণিকলাল মবারককে সকল কথা জানাইলেন। মবারক কিছু বলিল না। মাণিকলাল তাহাকে সতর্ক করিবার জন্য বলিল, “সাহেব! বাদশাহের নিকট ফিরিয়া গেলে, তিনি যে যথার্‍থ মার্‍জনা করিবেন, এমন ভরসা আমি করিব না।
মবারক বলিল, “নাই করুন |”
পরদিন প্রাতে মাণিকলাল, নির্‍মলকুমারীর পায়রা চাহিয়া লইয়া গিয়া, পত্রগুলি কাটিয়া ছোট করিয়া তাহার পায়ে বাঁধিয়া দিল। পায়রা ছাড়িয়া দিবামাত্র সে আকাশে উঠিল। পায়ের ভরে বড় পীড়িত। তথাপি কোন মতে উড়িয়া যেখানে ঔরঙ্গজেব ঊর্‍ধ্বমুখে আকাশ নিরীক্ষণ করিতেছিলেন, সেইখানে বাদশাহের কাছে পত্র পৌঁছাইয়া দিল।

সকল অধ্যায়

১. রাজসিংহ – ১.১
২. রাজসিংহ – ১.২
৩. রাজসিংহ – ১.৩
৪. রাজসিংহ – ১.৪
৫. রাজসিংহ – ১.৫
৬. রাজসিংহ – ২.১
৭. রাজসিংহ – ২.২
৮. রাজসিংহ – ২.৩
৯. রাজসিংহ – ২.৪
১০. রাজসিংহ – ২.৫
১১. রাজসিংহ – ২.৬
১২. রাজসিংহ – ২.৭
১৩. রাজসিংহ – ৩.০১
১৪. রাজসিংহ – ৩.০২
১৫. রাজসিংহ – ৩.০৩
১৬. রাজসিংহ – ৩.০৪
১৭. রাজসিংহ – ৩.০৫
১৮. রাজসিংহ – ৩.০৬
১৯. রাজসিংহ – ৩.০৭
২০. রাজসিংহ – ৩.০৮
২১. রাজসিংহ – ৩.০৯
২২. রাজসিংহ – ৩.১০
২৩. রাজসিংহ – ৪.১
২৪. রাজসিংহ – ৪.২
২৫. রাজসিংহ – ৪.৩
২৬. রাজসিংহ – ৪.৪
২৭. রাজসিংহ – ৪.৫
২৮. রাজসিংহ – ৪.৬
২৯. রাজসিংহ – ৪.৭
৩০. রাজসিংহ – ৫.১
৩১. রাজসিংহ – ৫.২
৩২. রাজসিংহ – ৫.৩
৩৩. রাজসিংহ – ৫.৪
৩৪. রাজসিংহ – ৫.৫
৩৫. রাজসিংহ – ৫.৬
৩৬. রাজসিংহ – ৬.১
৩৭. রাজসিংহ – ৬.২
৩৮. রাজসিংহ – ৬.৩
৩৯. রাজসিংহ – ৬.৪
৪০. রাজসিংহ – ৬.৫
৪১. রাজসিংহ – ৬.৬
৪২. রাজসিংহ – ৬.৭
৪৩. রাজসিংহ – ৬.৮
৪৪. রাজসিংহ – ৬.৯
৪৫. রাজসিংহ – ৭.১
৪৬. রাজসিংহ – ৭.২
৪৭. রাজসিংহ – ৭.৩
৪৮. রাজসিংহ – ৭.৪
৪৯. রাজসিংহ – ৮.০১
৫০. রাজসিংহ – ৮.০২
৫১. রাজসিংহ – ৮.০৩
৫২. রাজসিংহ – ৮.০৪
৫৩. রাজসিংহ – ৮.০৫
৫৪. রাজসিংহ – ৮.০৬
৫৫. রাজসিংহ – ৮.০৭
৫৬. রাজসিংহ – ৮.০৮
৫৭. রাজসিংহ – ৮.০৯
৫৮. রাজসিংহ – ৮.১০
৫৯. রাজসিংহ – ৮.১১
৬০. রাজসিংহ – ৮.১২
৬১. রাজসিংহ – ৮.১৩
৬২. রাজসিংহ – ৮.১৪
৬৩. রাজসিংহ – ৮.১৫
৬৪. রাজসিংহ – ৮.১৬
৬৫. রাজসিংহ – ৮.১৭ (শেষ)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন