ঈশ্বর ভালো নেই – ১০

এরপরের সময়টা হুহু করে বয়ে গেল। হোটেলে ফিরে প্যাকেজিং, সেখান থেকে চেক আউট করে বেরিয়ে জংশন থেকে ট্রেন ধরা, অবশেষে কলকাতায় ফেরা— এগুলো একটা ঘোরের মধ্যে করেছে অনির্বাণ। কাঁধের পট্টিটা অবশ্য বিনোদ ভটচাজ নিজেই করে দিয়েছেন। এখনও যে ওদের প্রত্যেককে প্রচুর কৈফিয়ত দিতে হবে, সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে ওরা। কলকাতা আসার পর প্রথমেই ওদের দুজনকে হসপিটালে অ্যাডমিট করেন বিনোদ বাবু। একটু সুস্থ হওয়ার পর বাড়িতে ফেরে অনির্বাণ। এই কটা দিন মিম বিনোদ বাবুর কাছেই ছিল। আজ অনেকদিন পর বিনোদ বাবু আবার এসে বসেছেন অনির্বাণের কলকাতার ফ্ল্যাটের সোফায়। অনির্বাণ সামনে বসে। ওর কাঁধের ব্যান্ডেজটা এখনও রয়েছে। টেবিলের ওপর ধোঁয়া ওঠা দুটো চায়ের কাপ। কুশল বিনিময় সেরে নেন বিনোদ ভটচাজ। যদিও অনির্বাণের কাছে এখনও পুরোটাই প্রায় ধোঁয়াশা। টুকিটাকি কথা বলার পর অবশেষে আসল প্রসঙ্গে আসেন বিনোদ বাবু, “তোমাকে সত্যি কথা বলি অনির্বাণ, আমি বিনোদ ভটচাজ নই… আমার আসল নাম অভিরূপ চাটুজ্যে… তোমাকে বলেছিলাম মনে আছে, আমি কীভাবে কোথায় গিয়ে সেই দ্বিতীয় ঈশ্বরের খোঁজ পেয়েছিলাম! সবকিছুই তো তোমাকে বলেছি প্রথমে, একফোঁটাও মিথ্যে নেই তাতে। শুধু আমার আসল পরিচয়টা আমি গোপন করে গিয়েছিলাম। আসলে কী জানো তো বাবা, লোভ বড়ো সাংঘাতিক বস্তু। এই লোভে যে একবার পড়েছে, সে পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার ছেলের বিষয়ে বলেছিলাম যে, ছেলেটা আমার মতোই ঘুরতে ভালোবাসে… সত্যিই তাই। একটা ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত ছিল আমার ছেলে। ঘুরত, ফিরত, নিজের মতো ইনকাম করত। তার থেকে কিছু টাকা আবার আমাকেও পাঠাত। তবে সুখ সবার ভাগ্যে সয় না… আমি দায়ে পড়ে সেই দ্বিতীয় ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। তোমার তো এটা অজানা নয়। আমি প্রচুর সম্পত্তির মালিক হই, ভেবেছিলাম জীবনটা হয়তো পুরোপুরি সেট হয়ে গেল। কিন্তু বুঝিনি যে, খারাপ শক্তির আরাধনায় আমার সঙ্গেও খারাপ কিছু ঘটতে পারে! প্রথম প্রথম সব ঠিকঠাক চলছিল। এই ঘটনার বেশ কয়েক বছর পর আমার গিন্নী একটা কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। ডাক্তার হাল ছেড়ে দিয়েছিল, ছেলেটাও ভীষণ কান্নাকাটি করছিল। একদম শেষ মুহূর্তে আমার মনে পড়েছিল এই দ্বিতীয় ঈশ্বরের কথা। মাথা কাজ করছিল না তখন, স্ত্রী হসপিটালে ভর্তি ছিলেন। আমি ছেলেকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলাম জয়সলমীরের উদ্দেশে। আমার আত্মীয় সেই ভদ্রলোক বলেছিলেন, কখনও লোভে পড়ে যেন একা একা না আসি। ভেবেছিলাম এই ঈশ্বরের দয়ায় হয়তো আমার স্ত্রী বেঁচে যাবেন। কিন্তু যার যতটুকু আয়ু, তার বেশি তাকে আটকে রাখা যায় না। আমি ভুল করে এমনই এক রাতের অন্ধকারে ছেলেকে নিয়ে ভাংড়ুর আরাধনা করি। সেই প্রথম আমি ছেলেকে সামনে বসে সবকিছু বুঝিয়েছিলাম। সব নিয়ম ঠিকঠাক পালন করার পরেও আমার হয়তো মন্ত্রোচ্চারণে কিছু ভুল রয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম ভোগ পেলেই হয়তো দেবতা খুশি হয়ে যাবেন, কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম যে, এ দেবতা সাধারণ দেবতাদের মতো নন। নিয়ম ঠিকভাবে পালন না করায় ভাংড়ু কুপিত হন। আর সেজন্যই আমি আমার স্ত্রী, আমার ধন সম্পদ সব হারিয়ে ফেলি। ছেলেকে এরপর পইপই করে বলে দিয়েছিলাম যে, এই সবকিছু যেন সে মন থেকে মুছে ফেলে। কারণ ছেলেটাই আমার একমাত্র সম্বল ছিল। ওকে আমি আর হারাতে চাইনি। ছেলে আমাকে কথা দিয়েছিল, আমিও নিশ্চিন্ত ছিলাম। ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত থাকায় কোনো এক ফাঁকে ওর সঙ্গে পরিচয় ঘটে মৈত্রেয়ীর। প্রথমে টুকিটাকি আলাপচারিতা থেকে বন্ধুত্ব, শেষে দুজনেই একটা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ছেলে আমাকে সবকিছু জানাত। তাই এটাও লুকায়নি আমার থেকে। সবকিছু জানার পর আমি ওকে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছিলাম। ও জানিয়েছিল, মৈত্রেয়ীর স্বামী নাকি ভীষণ নৃশংস এক পুরুষ। মৈত্রেয়ী তাই তাকে ডিভোর্স দিয়ে আমার ছেলেকে বিয়ে করতে চায়। তবে ডিভোর্সের জন্য তার স্বামী নাকি প্রচুর টাকা-পয়সা চেয়ে বসেছে। আমি জানি না ওই মেয়েটা আমার ছেলেকে কী মোহে ভুলিয়েছিল! ছেলেটাও আবেগের বশবর্তী হয়ে ওকে ভাংড়ুর ব্যাপারে সবকিছু জানিয়ে দেয়। তারপর তোমরা বোধহয় একবার এর আগেও রাজস্থানে গিয়েছিলে। কোনোভাবে তোমাকে মিথ্যে বলে মৈত্রেয়ী আমার ছেলের সঙ্গে ভাংড়ুর আরাধনা করে। আরও একটা বিষয় আমি আঁচ করতে পারি যে, এই দ্বিতীয় ঈশ্বরের ব্যাপারে মৈত্রেয়ী আগে থেকেই কিছু জানত। শুধু ওঁর নির্দিষ্ট বাসস্থানটা ওর জানা ছিল না। সেইদিন ভাংড়ুর কাছে ও আমার ছেলেকে বলি দিয়ে এসেছিল। ওর চাল আমার বোকা ছেলেটা ধরতে পারেনি। পিছন থেকে আঘাত করে আমার ছেলেকে অজ্ঞান করে ওকে খুন করে সে। তারপর ওর রক্তে স্নান করায় ভাংড়ুকে। সেখান থেকে ফিরে আসার পর ও ভেবেছিল হয়তো সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ছেলের কাছ থেকে কোনো খবর না পেয়ে আমি ফের হাজির হয়েছিলাম সেই স্থানে। নিজের ছেলের মৃতদেহ চোখের সামনে দেখে কোন্ বাবা তার মাথা ঠিক রাখতে পারে, বলতে পারো? মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই ও জানিয়েছিল মৈত্রেয়ীর গর্ভে ওর সন্তান আছে। তারপর থেকেই আমি তোমাদের ওপর একপ্রকার নজর রাখতে শুরু করি। মৈত্রেয়ীকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমি এমন সব চিঠি পাঠাতাম, যেটা দেখে ওর মনে হয়েছিল যে আমার ছেলে কোনোভাবে বেঁচে গেছে আর ওর পিছু নিয়েছে। কিন্তু একবার যে লোভে পড়েছে, তাকে কেউ আটকাতে পারে না। তোমার সঙ্গে মিশে আমি বুঝেছিলাম, মৈত্রেয়ী পুরোপুরি মিথ্যে কথা বলেছে। তা ছাড়া ও হয়তো তোমায় লুকিয়ে গিয়েছিল যে, মিম তোমার সন্তান নয়… ও আমার ছেলের সন্তান। দাদু হিসেবে আমি কখনই চাইব না যে, ওর কোনো ক্ষতি হোক। তাই সবসময় তোমাদের আগলে রাখতে চেয়েছি।

একটা কথা আজ আমি স্বীকার করি, মৈত্রেয়ী যখন বাড়িতে থাকত না আর তুমি ডুবে থাকতে তোমার লেখা নিয়ে, তখন আমি মাঝেমাঝে আসতাম। মিম বাবুর সঙ্গে দরজার বাইরে থেকে গল্প করে যেতাম, যদিও ছদ্মবেশেই আসতাম। তাও পরে যখন তোমার সঙ্গে আলাপ করতে এলাম, মিম বাবু হয়তো কিছুটা হলেও আন্দাজ করেছিল, কারণ বাচ্চাদের থেকে সহজে কিছু লুকোনো যায় না, আর আমি তো একখানা গোটা মানুষ… ওকে অনেক গল্প শোনাতাম, পুরোপুরি যদিও বলিনি, কারণ আমি চাইতাম তুমি এই সবকিছু ওর মুখ থেকে শোনো… আমি আঁচ করেছিলাম মৈত্রেয়ী তোমাদের নিয়ে আবার যাবে রাজস্থানে… ভেবেছিলাম বাচ্চাটার মুখ থেকে এসব শোনার পর তুমি হয়তো রাজস্থানে যাওয়ার প্ল্যান ক্যানসেল করে দেবে। এমনকি নিজের সঙ্গে ঘটা ঘটনাগুলো তোমায় শুনিয়ে ভেবেছিলাম তুমি হয়তো নিজেই মৈত্রেয়ীকে যেতে বাঁধা দেবে। কিন্তু তারপরেও যখন তোমরা গেলে, আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে ফের রাজস্থানে গেলাম। দুর্ঘটনার যে গল্পটা আমি মিমকে বানিয়ে বলেছিলাম, সেটাকে ইচ্ছে করেই সত্যি করলাম। কিন্তু তারপরেও তোমাদের যাত্রা আটকাতে পারলাম না। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটা বিশেষ তিথি আসে, যে তিথিতে সেই দ্বিতীয় ঈশ্বর আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তখন ওঁর কাছে আরাধনা করে যে মনস্কামনা করে, তার সব আশা পূরণ হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুজো সমাপ্ত না করলে দেবতা নিজেই নিজের শিকার করে নেন। আর এখানেও ঠিক সেটাই হয়েছে। আসলে কী বলো তো বাবা, সব খারাপের মধ্যেও একফোঁটা ভালো মিশে থাকে আর সেজন্যেই তোমরা আজ বেঁচে আছো… শুধু একটাই কথা বলব, কখনও লোভ করে ওই জায়গায় একা একা যাওয়ার চেষ্টা কোরো না বাবা।”

সবকিছু শুনে চুপ হয়ে যায় অনির্বাণ। ইতিমধ্যে ও নিজের ব্যাঙ্ক একাউন্ট, অন্যান্য ডিটেলস দেখে বুঝতে পেরেছে যে, মৈত্রেয়ী মিথ্যে কিছু বলেনি। শুধু যে ক্ষতিটা হতে যাচ্ছিল, সেটা নিমেষেই যেন আটকে গিয়েছে। এবার কয়েকটা প্রশ্ন করে ও, “সেদিন আপনার হাতে বাঁশির মতো কিছু একটা দেখেছিলাম, ওটা কী ছিল?”

— ওটা আদিবাসীদের একধরনের অস্ত্র ‘ডার্ট’, যার মধ্যে সরু সূঁচের মতো তির থাকে। সেই তিরের ডগায় বিষ মাখানো থাকে, যেটা ছুঁড়ে শত্রুকে খতম করে ওরা… আমার ডার্টের তিরের ডগায় বিষ ছিল না। ছিল এমন একটা গাছের রস, যেটা শরীরের কোথাও লাগলে বেশ কিছুক্ষণের জন্য জায়গাটা যন্ত্রণায় টনটন করবে।

— আপনি বলেছিলেন ভাংড়ুর পুজোয় একটা কালো বেড়ালকে বলি দিতে হয়, কিন্তু সেদিন ওখানে কোনো বিড়াল চোখে পড়েনি।

— কারণ বিশেষ কিছু তিথিতে বেড়ালের পরিবর্তে একটা গোটা মানুষকে দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দিতে হয়।

শেষ প্রশ্ন করে অনির্বাণ, “আপনার ছেলের নাম কী?”

— দেবরূপ চাটুজ্যে।

আর কোনো প্রশ্ন করে না অনির্বাণ। এত বছর ধরে যে মানুষটার সঙ্গে সংসার করে এসেছে, সেই মানুষটার এই পরিবর্তনটা ওর চোখে ধরা পড়েনি! যাকে ও নিঃসন্দেহে ভালোবেসে এসেছে, সেই কিনা পিছনে পিছনে ওর পিঠে ছুরি মারার প্ল্যান করেছিল! তাহলে আর ভরসা করবে কাকে? সবকিছু যেন একটা গল্পের মতো মনে হচ্ছে ওর। যেন চোখ খুললেই দেখতে পাবে মৈত্রেয়ী অফিস থেকে বাড়িতে ফিরেছে। ওর হাতের বাক্সের মধ্যে একটা পিৎজা।

এসব ভুলতে সময় লাগবে। একটা মানুষের সঙ্গে এভাবে জড়িয়ে যাওয়ার পর তাকে এত তাড়াতাড়ি মন থেকে মুছে ফেলা সহজ নয়। নিঃস্বার্থ ভালোবাসার পরেও যে মানুষটা এভাবে ঠকায়, তাকে সে ক্ষমা করবে কীভাবে!

“মিম আমার নিজের ছেলের সন্তান বলে বলছি না, তুমি ওর যোগ্য বাবা হয়ে উঠতে পেরেছ… জানি না এতকিছু জানার পরেও তুমি ওকে কতটা ভালোবাসবে, তবু একটাই কথা বলব, বাচ্চাটাকে একলা করে দিয়ো না বাবা… তোমরা আধুনিক যুগের মানুষ, নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে এত ব্যস্ত থাকো যে, বাচ্চার যখন দরকার, যেভাবে দরকার— সেভাবে বাবা-মাকে পায় না তারা। তাই হয়তো খুব ছোটো বয়স থেকেই ওরা একাকীত্বে ভুগতে শুরু করে। মিম কোনোদিনও মায়ের ভালোবাসা পায়নি, তুমি যতটা সম্ভব ওকে আগলে রেখেছ। কিন্তু বাকি বাচ্চাদের সঙ্গে কখনও সেভাবে মেলামেশা করতে দাওনি, না তো কখনও ওকে ওর মতো করে জীবনটা উপভোগ করতে দিয়েছ… আমি তোমার দোষ দেব না। কিন্তু কী বলো তো, একটা বিষয় আমি এই বয়সে এসে উপলব্ধি করতে পেরেছি, আর সেটা হল বাচ্চাদের চেয়ে বড়ো ঈশ্বর কেউ নন। সকল ক্ষমতা রয়েছে তাদের মধ্যে। আমরা ঘরের ঈশ্বরকে ফেলে রেখে বাইরের ঈশ্বরের কাছে সমাধান খুঁজতে ছুটি, অথচ এই ঘরের ঈশ্বরেরা কী চায়, কাকে চায়— সেটাই বুঝে উঠতে পারি না। ডাক্তারেরা সবসময় এই ঈশ্বরদের আসল অসুখটা ধরতে পারে না বাবা… মনে আছে, এর আগে একদিন আমি ওকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, তুমি যেতে দাওনি… তোমার লেখালেখির বাইরে বেরিয়ে বাচ্চাটাকে একটু সময় দাও বাবা… ওকে বাকিদের সঙ্গে মিশতে শেখাও, খেল ওর সঙ্গে, এতদিন ধরে যা যা হয়ে এসেছে— তার কোনো প্রভাব ওর ওপর পড়তে দিয়ো না… সেই দ্বিতীয় ঈশ্বরেরও ক্ষমতা নেই এই ঈশ্বরকে হারাবার… শুধু বাচ্চাটাকে বোঝো, তাকে ভালোবাসা দাও, তার অপূর্ণতা পূরণ করতে একমাত্র তুমিই পারো… আর এই ঈশ্বরেরা যদি ভালো না থাকেন, আমরা কখনও ভালো থাকতে পারব না বাবা… এই ঈশ্বরকে যে খুশি রাখতে পারে, তার জীবনে কখনও খুশির অভাব ঘটে না… আশা করি আমি তোমাকে বোঝাতে পেরেছি আমি কী বলতে চাই!”

একটানা এতগুলো কথা বলে চুপ করে যান বৃদ্ধ।

.

সেই ঘটনার পর প্রায় সাত মাস কেটে গিয়েছে। মিম আগের তুলনায় আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। ওকে এখন প্রতিদিন ওর দাদু স্কুলে দিয়ে আসেন, আবার নিয়েও আসেন। বিকেলবেলায় বাবা আর দাদুর সঙ্গে সামনের পার্কে খেলাধুলা করতে যায় ও। অনির্বাণ আর অভিরূপকে এই বয়সেও ওর সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে হয়। বাড়ি ফিরে অনির্বাণ নিজের হাতে রান্না করে। তিনজনে মিলে হইহই করতে করতে সেই খাবার খাওয়া হয়। কখনও কখনও মিমের পছন্দের রেস্টুরেন্টে গিয়ে হাজির হয় ওরা। রাতের বেলায় ছাদে দাঁড়িয়ে অনির্বাণ আকাশের তারা চেনায় ওকে। ঘুমানোর আগে দাদুকে জড়িয়ে ধরে নানা রকমের গল্প শোনে মিম। এখন আর ওকে ডাক্তারের কাছে চেকআপে নিয়ে যেতে হয় না। অনেক ভালো আছে ও। নিজে থেকে হোমওয়ার্ক করে, কার্টুন দেখে, দুধ খাবে না বলে বায়না করে, আবার দুধটা খেয়ে নিয়ে হিহি করে হাসতে থাকে। ওদের এই জীবনটায় তেমন কোনো সমস্যা নেই আর। অনির্বাণ বুঝে গেছে ঈশ্বরকে কীভাবে ভালো রাখতে হয়। উপলব্ধি করেছে এই ঈশ্বর ভালো থাকলে সবকিছু ভালো থাকে।

আজ অনেকদিন পর অনির্বাণ ওর টেবিলে নতুন একটা লেখা লিখতে বসে। ‘ছায়ালোক’ পত্রিকার সম্পাদক ত্রিদিব বাবুর এতদিনের আবদার পূরণের প্রথম পদক্ষেপ আজ নেবে ও। সাদা পাতার বুকে কালো কালিতে ফুটে উঠতে থাকে নতুন একটা উপন্যাস। উপন্যাসের নাম ‘ঈশ্বর ভালো নেই’।

***

অধ্যায় ১০ / ১০

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন