সাত দিন পরে

অর্পিতা সরকার

‘প্রথমে একটা কথা বলুন তো, আপনি নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী জবটা পেয়েছেন তো? নাকি ধরে কয়ে? মানে, বাবার মুখে এতদিন শুনছিলাম হেভি ব্রিলিয়ান্ট একজন আসবে। ইয়া বড় রেলের অফিসার। এত কম বয়সে এমন উন্নতি নাকি লোকজন চাক্ষুষ করেনি। আমার তো মনে হল, এসব জাস্ট ঢপের গল্প।’

সৌরিশ অপলক তাকিয়ে আছে আহেলী নামক মেয়েটার দিকে। প্রথম দর্শনে কোনো মেয়ে যে এত কথা বলতে পারে, এটাই যেন ওই কাছে বিস্ময়। তাও আবার পাত্রপক্ষের কাছে। পাশের ঘরে যতক্ষণ বসেছিল, ততক্ষণ তো বেশ শান্ত নম্র হয়েই বসেছিল। ‘একলা কথা বলতে চাই’ বলে নিজের ঘরে এনেই কথার তুবড়ি ছোটাতে শুরু করল আহেলী।

সৌরিশ বরাবরই ভীষণ শান্ত স্বভাবের। এত কথা বলায় পারদর্শী নয়। তবুও শান্তভাবে বলল, ‘আমার অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারের সবকিছুই তো বায়োডাটার সঙ্গে ছিল। আপনি দেখেননি? তাহলে সেগুলোকে আচমকা মিথ্যে মনে হওয়ার কারণ?’ আহেলী বলল, ‘সামান্য ইশারা বুঝছিলেন না বলে ব্রিলিয়েন্সি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলাম। বয়েজ স্কুলে পড়েছেন, তাই না?’

সৌরিশ বলল, ‘আমি মিশনের ছাত্র।’

আহেলী হেসে বলল, ‘বুঝেছি। দূর দূর তক কল্পনা করতে পারেননি যে, কোনো মেয়ে ইশারায় আপনাকে ডাকছে আলাদাভাবে একটু কথা বলার জন্য। এনিওয়ে এটা কী প্রথম মেয়ে দেখতে এলেন, নাকি অভিজ্ঞতা আছে? এসিটা একটু বাড়িয়ে দেব? ঘামছেন কেন? আরে মলেস্ট করব না আপনাকে। দুটো কথা বলেই ছেড়ে দেব।’

নিজের কাজের জায়গায় এনাফ সাকসেসফুল সৌরিশের স্মার্টনেস নিয়ে কোনো কথা হবে না। কিন্তু মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে হলে ও একটু সমস্যায় পড়ে।

খেয়াল করে দেখেছে, মহিলাদের বলা হয় এক, আর ওরা বোঝে আরেক। নিজের মা, মাসিমনি, মাসির মেয়ে অঙ্কিতা সবাই এই একই গোত্রের। অন্যের কথা শোনার প্রয়োজন নেই। নিজেরাই নিজেদের মতো করে যুক্তি সাজিয়ে নিয়ে কখনও হেসে গড়িয়ে পড়ছে, আবার কখনও দুঃখে কেঁদে ভাসাচ্ছে। তাই মহিলামহলের যুক্তিতর্ক থেকে বরাবরই দূরে থেকেছে সৌরিশ।

বাবা বলে, ‘দু’দিকে ঘাড় নাড়িয়ে গেলাম আজীবন। তবেই এ সংসারে সুখ দেখতে পাস সৌর। না হলে দেখতিস তোর মায়ের অযৌক্তিক যুক্তির ঠ্যালায় আমাদের পোঁটলা বেঁধে হিমালয় যাত্রা করতে হত। একটা কথা সার বুঝে নিয়েছি, মেয়েদের বোঝাতে গেছ তো তোমার যাবতীয় শিক্ষা বৃথা। ওরা যেটা বলবে, সেটাকেই অন্তত ওদের সামনে ঠিক বলো, তাহলে গ্রীষ্মকালের দাবদাহের মধ্যেও শান্তির বৃষ্টি। বিয়ের পর থেকে আমি এই মতাদর্শ অবলম্বন করে কাটিয়ে দিলাম। ওই জন্যই তোর মা বলে, ‘সৌরর বাবার মতো মানুষ হয় না।’ আর তোর মেসোকে দেখ ঝগড়া করে করে হেরে গো-হারা হয়ে কাটিয়ে দিল। আজ অবধি তোর মাসির কাছে ঝগড়ায় শেষ রক্ষা করে জিততে পারেনি, তবুও নিজের যুক্তি খাটাতে গিয়ে নাকানিচোবানি খায়। এত বলি, ‘বাসুদেব, যা পারবে না, তাতে শক্তিক্ষয় করো কেন?’ কিন্তু কে শোনে কার কথা!’

বাবা, মেসো এসব বিজ্ঞ মানুষদের পরাস্ত হতে দেখে দেখে সৌরিশ মহিলাদের একটু ভয়ই পায়। ত্রিশ বছর বয়সে ও একবারই প্রেমে পড়েছিল, তাও একতরফা। মেয়েটাকে কোনোদিন প্রোপোজ করে উঠতে পারেনি। সাহসে কুলায়নি। যদি রাস্তার মাঝে টেনে থাপ্পড় কষিয়ে দেয়, তাহলে গুড বয় সৌরিশের ইমেজের ফালুদা হয়ে যাবে। সেই ভেবেই আর এগোয়নি। দূর থেকেই দেখতে পেত মাধুরীকে। পাড়ার লোক বলত, নিজেকে মাধুরী দীক্ষিত মনে করে। কিন্তু মাধুরীর নিজেকে নিয়ে ওই অল্প অহংকারটাই সৌরিশকে আকর্ষণ করেছিল। মাধুরী নিজেকে ঠিক কী মনে করত জানা নেই সৌরিশের। তবে মনে হত, ও নিজের জগতে মত্ত থাকে। আশেপাশে কে কী করছে তা নিয়ে ওর মাথাব্যথা নেই। মাধুরীর হাঁটার মধ্যে বন্ধুরা একটা দম্ভ খুঁজে পেত। সৌরিশ পেত আত্মবিশ্বাস। এত কিছুর পরেও স্বতন্ত্র স্বভাবের মাধুরীকে প্রোপোজ করা হয়ে ওঠেনি ওর। পড়াশোনা ছাড়া জীবনে আর কী করেছে ও, সেটা সৌরিশ নিজেও জানে না। সৌরিশ মানেই বই মুখে বসে থাকা আর ভালো রেজাল্ট আর গুরুজনদের উদাহরণ। ‘দেখেছিস? সৌরিশকে দেখে শেখ।’

বড্ড একঘেয়ে হয়ে গিয়েছিল ওর জীবন। তাই হয়তো নিজের চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের প্রতি ওর একটা তীব্র আকর্ষণ ছিল। হয়তো নিজে হতে পারবে না বলেই আকর্ষণ ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় দেখেছে ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে বসে তুমুল আড্ডা দিয়েছে, সিগারেট ফুঁকেছে, ড্রিংক করেছে, স্ল্যাং ইউজ করেছে যথেচ্ছ। আর সৌরিশ রয়ে গিয়েছিল শুধুই ভালো ছেলে হয়ে। জীবনে এই একটা তকমা যাতে ওর কাছ থেকে কেউ না নিয়ে নেয়, তারই চেষ্টা ও চালিয়ে গেছে। ত্রিশ বছর বয়সে এসে বুঝেছে, স্কুল লাইফ, কলেজ লাইফ কোনোদিন আর ফিরবে না। তাই যারা নিজেদের কোনো বেড়াজালে না জড়িয়ে মুখোশহীনভাবে জীবনটাকে এনজয় করতে পারে তাদের সৌরিশ ভিতরে ভিতরে একটু হিংসাই করে।

আহেলী চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল, ‘এই যে স্যার… রূপকথার জগতে অনেক কিছু আছে আমি শুনেছিলাম ঠাকুমার কাছে। তাই ওই জগতে প্লিস ভেসে যাবেন না। ওখানে ভেসে গেলে আপনাকে আমার আসল কথাটাই বলা হবে না। তাই প্লিস, এই জগতে মাত্র পাঁচ মিনিট বিচরণ করুন।’

সৌরিশ অপ্রস্তুত গলায় বলল, ‘হ্যাঁ, বলুন।’

আহেলী বলল, ‘দেখুন আমরা হলাম নিতান্ত মিসম্যাচ। আপনি হলেন গিয়ে জেন্টলম্যান, মশা মারতে গেলেও জেসাসের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলবেন, ‘হে প্রভু আমায় ক্ষমা করুন। এই মশাটি দীর্ঘক্ষণ ধরে আমায় কামড়ে কামড়ে হাত ফুলিয়ে দিল, তাই আমি বাধ্য হয়ে ঈশ্বরের সন্তানকে হত্যা করতে প্রস্তুত হলাম।’ এইরকম টাইপের মানুষ। আমি হচ্ছি সম্পূর্ণ তার অপজিট। মশা উড়ছে দেখলে আমার ঘরে ঢোকার অপরাধে তাদের উঠে গিয়ে মেরে আসি।

আপনি হচ্ছেন, ভিড় ট্রেনে ওঠার আগে ‘এক্সকিউজ মি, সাইড প্লিস’ বলা পাবলিক। আর আমি হলাম, ‘গেটটা ছেড়ে দাঁড়া শুয়োরের দল’ বলা পাবলিক। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এটা হল পারফেক্ট মিসম্যাচ। ঠিক এই কারণেই আপনাকে এঘরে ডেকে আনলাম। ওঘরে গুরুজনরা ছিলেন। ওদের সামনে এসব বললে হার্টফেল করার সম্ভাবনা ছিল ওদের। কিন্তু তাই বলে তো আমি আপনাকে ঠকাতে পারি না। আসল আমিটা কী বস্তু সেটা আপনাকে জানিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। দেখুন আমি ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল না হতে পারি, কিন্তু লয়্যাল ছিলাম বস। জীবনে টুকলি না করেই পাশটাশ করে এই চাকরিটা করছি। হতে পারে স্যালারি কম। হতে পারে প্রাইভেট ব্যাঙ্ক। তবুও নিজের চেষ্টাতেই পেয়েছি। তাই একজন সৎ নাগরিক হিসেবে আমার মনে হল সত্যিটা ক্লিয়ার করা উচিত।’

সৌরিশ বলল, ‘এর আগে আপনাকে আর কতজন পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিল?’ আহেলী আঙুল গুনে বলল, ‘আপনারা পাঁচ নম্বর।’

সৌরিশ বলল, ‘তাদেরকে কি আপনি রিজেক্ট করেছেন, নাকি, আপনার সঙ্গে স্বভাবের মিসম্যাচ হয়ে তারা বাতিল করেছে?’

আহেলী একটু চমকে উঠে বলল, ‘আরে না না। হাতের লক্ষ্মী কেউ পায়ে ঠেলে? আমি কাউকে বাতিল করিনি বিশ্বাস করুন। কিন্তু কোনো শান্ত-ভদ্র ছেলে কেন আমার মতো ঠোঁটকাটা পাবলিককে বিয়ে করবে বলুন তো? এই আলাদাভাবে নিজেকে চেনাতে এসেই বাতিল হয়েছি সবগুলোর কাছে। আপনি ভাবতেই পারেন তাহলে কেন নিজের আসল স্বভাবটা সকলের সামনে আনছি! ওঘরে যেমন ভদ্র হয়ে ছিলাম তেমনই তো থাকতে পারতাম। ওই যে বললাম, স্বভাবে আমি ভীষণ লয়্যাল। আমি চাই না বিয়ের পরে কেউ আঁতকে উঠুক। দেখুন, যার যা স্বভাব সেটা ফুটে উঠবেই তার আচরণে। মুখোশ ব্রাইডাল মেকআপের মতোই ধুয়ে যাবে। তখন শুরু হবে আসল অশান্তি। তার থেকে সব ক্লিয়ার হয়ে যাওয়া ভালো। আমি এরকমই। মোটেই ওয়াইফ মেটিরিয়াল নই। এবারে নিশ্চয়ই আপনি ওঘরে গিয়ে সকলের সামনে বলে দেবেন, মেয়ে আমার পছন্দ নয়।’ একটু দুঃখ দুঃখ গলা করে আহেলী বলল, ‘এটাই আমার ভবিতব্য বুঝলেন। বাবা বাজারের সেরা ছেলেদের ধরে আনছে, সরি, মানে সম্বন্ধ আনছে আর কী। আর আমার এই চঞ্চল টাইপ স্বভাবের জন্য সবাই চলে যাচ্ছে রিজেক্ট করে দিয়ে। বিশ্বাস করুন, আমার গাইতে ইচ্ছে করে…বাবা আমার কি বিয়ে হবে না?’

সৌরিশ ফিক করে হেসে বলল, ‘এইটুকু আলোচনার মধ্যে আপনি নিজেকে অন্তত দশবার লয়্যাল বলেছেন। অথচ এখনও অবধি সত্যিটা বললেন না, এটা কি ঠিক করলেন?’

আহেলী একটু কাঁচুমাচু করে বলল, ‘সত্যি বলতে? আর কোন সত্যির কথা জানতে চাইছেন? দেখুন স্মোক আমি রেগুলার করি না। কালেভদ্রে কোনো বন্ধুদের পার্টি থাকলে ওই দু-এক টান।’

সৌরিশ আরেকটু চওড়া হেসে বলল, ‘যাই হোক, আমার কিন্তু আপনাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। সত্যি বলতে কী, এত স্পষ্ট কথা আমিও হয়তো বলতে পারতাম না। যার এমন সৎ সাহস আছে তাকে আমি স্যালুট করি। আরেকটা কথা জানেন তো, বিপরীত মেরুর আকর্ষণ থাকে সব থেকে বেশি। যেহেতু আমরা দুজনে দুই মেরুর, তাই আশা করা যায় আমরা জমিয়ে সংসার করব। এখন বলুন, আপনার আদৌ আমাকে পছন্দ হয়েছে তো? মানে আমি একটু শান্ত স্বভাবের। কথা কম বলে সব কিছু এনজয় করা পাবলিক। আপনার মতো এতটা উচ্ছল হয়তো নই, কিন্তু তা বলে বোরিংও নই। চিন্তা করবেন না, আপনি একটু গড়েপিটে নিলে চলে যাব মার্কেটে। একেবারে অচল পয়সা নই। যাই হোক, আহেলী এখন চলুন, আমরা পাশের ঘরে যাই। ওরা হয়তো আমাদের মতামতের জন্য ওয়েট করছে।’

আহেলী প্রায় কঁকিয়ে উঠে বলল, ‘আপনি কি এখনই আপনার মত জানিয়ে দেবেন নাকি? আপনি বরং বলুন মিনিমাম দিন সাতেক সময় লাগবে। আরে, আপনি সেন্ট্রালের জব করেন, দেখতে শুনতে মন্দ নয়, ভালো ফ্যামিলি। মেয়ের বাবার কাছে একটু দেমাক নেবেন না? তাই কখনও হয়? বলুন দিন সাতেক পরে জানাবেন।’

সৌরিশ বলল, ‘দিন সাতেকের মধ্যে আপনার বয়ফ্রেন্ড রাজি হবে আপনাকে বিয়ে করতে? কত দিনের সম্পর্ক আপনাদের?’

আহেলী একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, ‘তিন বছরের।’

সৌরিশ বলল, ‘যে ছেলে তিন বছরে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, সে সাতদিনের মধ্যে নিয়ে নেবে আপনার মনে হয়? বেশ, আমি সাত দিন পরেই আমার মতামত জানাব আপনার কথা মতো।’

আহেলী বলল, ‘আপনি কী করে বুঝলেন আমি এনগেজড?’

সৌরিশ বলল, ‘ধরে-কয়ে নয়, রেজাল্টের এক নম্বর দাগটা আমায় অর্জন করতে হয়েছে ম্যাডাম। তাই ব্রেনটা পুরো ফাঁকা নয়।’

আহেলী মাথা নীচু করে বলল, ‘সরি। বাবাকে বলতে পারছি না আমাদের সম্পর্কের কথা। বাবা কিছুতেই মেনে নেবে না প্রদীপ্তকে। আসলে প্রদীপ্ত খুব বড় চাকরি করে না। ছোট একটা চাকরি করে। ওই জন্যই বাবা রাজি হবে না। আর বাবাকে বলার সাহস নেই আমার। আজ অবধি বাবা আমার জন্য যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো সব আমার ভালো করেছে। তাই বাবার দৃঢ় বিশ্বাস, আমার জন্য বাবার নেওয়া সিদ্ধান্তই শেষ কথা। বাবাকে কোনোভাবেই কষ্ট দিতে পারব না আমি। তাই কিছু বলতেও পারছি না। এদিকে প্রদীপ্তকেও ভালোবাসি। কী যে সমস্যায় আছি! পাত্রপক্ষ ক্যানসেল করে দিলে একটু নিশ্চিন্ত হই। হয়তো বাবা বিরক্ত হয়ে বলবে, ‘অলি তোর কোনো পছন্দ থাকলে বল।’ তখন আমি প্রদীপ্তকে সামনে এনে দাঁড় করাব। এই আশাতেই আছি।’

সৌরিশ বলল, ‘বুঝলাম। আমার কপালেও দেখছি বিয়েটা নেই। লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট হয়ে গিয়েও কেঁচিয়ে গেল। যাক গে, আর কী করা যাবে। বেশ, আমি সাতদিন পরে আপনাকে রিজেক্ট করছি আপনার কথা মতো।’

আহেলী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল, ‘আপনি সত্যিই ভালো মানুষ। আমরা বন্ধু হতে পারি?’

সৌরিশ বলল, ‘সে হতেই পারি। কিন্তু মুশকিলটা অন্য জায়গায়। আমি অকারণে দুর্বল হয়ে পড়ব আপনার প্রতি। তার থেকে বরং দূরত্ব ভালো। বেস্ট অফ লাক। আপনি আর প্রদীপ্ত ভালো থাকবেন।’

সৌরিশ আর আহেলী বাইরে বেরিয়ে এল। আহেলীর বাবা-মা বেশ প্রত্যাশা নিয়ে তাকালেন সৌরিশের দিকে। অদ্ভুত একটা মনখারাপ করছে সৌরিশের। আহেলীকে প্রথম দর্শনেই ভালো লেগেছে বলে নয়, আহেলীর কথাবার্তা শুনে ওর প্রেমে পড়ে গেছে বলেও নয়, ওর বাবা আসার পর-পরই বলেছিলেন, ‘সৌরিশকে জামাই হিসাবে পেলে শুধু অলির নয়, আমাদের জীবনটাও নিশ্চিত হয়। বড্ড আদরে মানুষ করেছি কিনা মেয়েকে। যার তার হাতে দিতে মন সয় না।’

অয়ন পালের কথাগুলো শুনে কেমন একটা গিলটি ফিলিংস হচ্ছিল। সৌরিশের যদি আহেলীকে পছন্দ না হত, বা আহেলীর না হত তাহলে কোনো সমস্যাই ছিল না। কিন্তু একটা মিথ্যা বলার দায়িত্ব ও কাঁধে নিয়েছে, তাই বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু আহেলী যে ওই প্রদীপ্ত নামের ছেলেটাকে বেশ ভালোবাসে সেটা বোঝা গেল ওর পাত্রপক্ষের সামনে নিজেকে খারাপ প্রতিপন্ন করার আকুল ইচ্ছে দেখে। বাবা-মেয়ের মধ্যে এভাবে পড়ে গিয়ে সৌরিশের বেশ সমস্যা হচ্ছে।

সৌরিশের মা বললেন, ‘ঋষি, মেয়ে পছন্দ হয়েছে? বাকি অয়নদাকে তোর বাবা বা মামারা চেনেন। অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। ফ্যামিলি খুবই ভালো। আহেলী মেয়েটাও বেশ মিশুকে। তোর আপত্তি না থাকলে আমরা কথা এগোব।’

সৌরিশ মাকে আস্তে আস্তে বলল, ‘দিন সাতেক সময় দাও মা। এটা আমার সারা জীবনের সিদ্ধান্ত। একটু ভাবা দরকার।’

সৌরিশের মা কেমন একটা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে, ভাব তাহলে। আমরা অয়নদাকে ওই কথাই বলছি না-হয়।’

আহেলী বেরিয়ে আসার সময় এগিয়ে এসে সবার কান বাঁচিয়ে বলল, ‘ধন্যবাদ বড্ড ছোট্ট শব্দ। আমি কৃতজ্ঞ রইলাম আপনার কাছে। আমার ফোন নম্বরটা দিলাম, কখনও কোনো প্রয়োজনে বন্ধু ভেবে ফোন করতে পারেন।’

সৌরিশের অদ্ভুত একটা কষ্ট হচ্ছে। কেমন যেন শূন্যতা। আচমকা মনে হল, প্রদীপ্তর আগে যদি আহেলীর সঙ্গে দেখা হত সৌরিশের, তাহলে বেশ ভালো হত। মেয়েটা যেন পাহাড়ি নদীর মতো ঝকঝকে। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তলদেশের পাথরগুলোও পরিষ্কার দেখা যায়।

কেন কে জানে আহেলী অন্য কাউকে ভালোবাসে জানার পরও, ওকে রিজেক্ট করার পরেও, আহেলীর ওপর ওর রাগ হচ্ছে না।

সৌরিশ ফিরে এসেছে, হাতে সাতদিন সময় আছে আহেলীর। এবারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সবাই সৌরিশ নয় যে, আহেলীর কথা শুনে ওকে রিজেক্ট করে দেবে। কেউ কেউ তো এভাবে ডেকে এনে অপমান করার জন্য আহেলীর বাবাকে অবধি অপমান করতে ছাড়বে না। মেয়ে বিয়ে করতে চায় না, আর পাত্রপক্ষকে ডেকে এনে ইয়ার্কি হচ্ছে বলে হয়তো চূড়ান্ত অপমান করে দিল ওর বাবাকে! বাবার অপমান কিছুতেই সহ্য হবে না আহেলীর। এবারে ডিরেক্ট প্রদীপ্তকে এনে বাবার সামনে দাঁড় করানোর সাহস জোগাড় করতে হবে ওকেই। প্রদীপ্তর দিক থেকে যে এক পা-ও এগোবে না, সেটা ও ভালোই জানে। ইনফ্যাক্ট, মেট্রোতে যেদিন প্রদীপ্তর সঙ্গে ওর প্রথম দেখা হয়েছিল, সেদিন ওর পার্স পড়ে গিয়েছিল মাটিতে। সেটাও হাতে তুলে নিয়ে ওকে ডাকবে কিনা চারবার ভেবেছিল প্রদীপ্ত। সেই অবস্থাতেই প্রদীপ্তর হাতে নিজের পার্স দেখে চমকে উঠেছিল আহেলী। এমন ভদ্র পোশাকের পকেটমারকে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, হল্লা করা উচিত ভেবেই রেডি হচ্ছিল আহেলী। তখন খুব সংকোচের সঙ্গে প্রদীপ্ত বলেছিল, ‘ম্যাডাম, আপনার পার্সটা নীচে পড়ে গিয়েছিল। এই নিন।’

আহেলী বিরক্ত হয়ে বলেছিল, ‘এখুনি তো ধোলাই খাওয়াবার ব্যবস্থা করছিলাম। কোন গ্রহে বাস করেন যে, পার্স ফেরত দিতে এত সংকোচ!’

প্রদীপ্ত মাথা নীচু করে বলেছিল, ‘বুঝতে পারছিলাম না কী বলে ডাকা উচিত।’ আহেলী মুচকি হেসে বলেছিল, ‘আপনারা আছেন বলেই এই নীলগ্রহটা মঙ্গলে পরিণত হয়নি।’

দু’দিন পরে আবারও মেট্রোতে দেখা হয়েছিল প্রদীপ্তর সঙ্গে। চোখাচোখি হতে হালকা হেসে চোখ নামিয়ে নিয়েছিল প্রদীপ্ত। লাজুক লাজুক ছেলেদের দেখে বেশ মজা লাগে আহেলীর। চিরকালের ডাকাবুকো মেয়ে ও। স্কুল-কলেজ সব জায়গায় নেতৃত্ব দেওয়া পাবলিক। স্যারদের কাছে ও নালিশ করতে যেত, পিছনে থাকত লম্বা বাহিনী। কলেজে তিনবছর ইউনিয়ন করেছিল। থার্ড ইয়ারে জিএস হয়েছিল। সুতরাং বরাবরই ও নেত্রী গোছের।

আহেলী এগিয়ে গিয়ে বলেছিল, ‘লজ্জা পাচ্ছেন কেন আমায় দেখে?’

প্রদীপ্ত অপ্রস্তুত হয়ে বলেছিল, ‘কই না তো!’

আহেলী হেসে বলেছিল, ‘আরে সেদিন তো আপনাকে থ্যাঙ্কস জানানো হয়নি। এমনকী কফি অবধি খাওয়ানো হয়নি। আজ চলুন আপনাকে কফি খাওয়াই। আপনি সেদিন পার্সটা না তুললে চোপাট হয়ে যেতে পারত।’

প্রদীপ্ত বলল, ‘আরে না না, ঠিক আছে। তাছাড়া আপনি তো আমার দু’স্টপেজ আগে নামেন।’

আহেলী মুচকি হেসে বলেছিল, ‘আপনি আজ আমার সঙ্গেই নামুন। পরের মেট্রো ধরে চলে যাবেন।’

প্রদীপ্ত কাঁচুমাচু করে বলেছিল, ‘না, মা চিন্তা করবে, মাকে বলে আসা হয়নি তো।’ আহেলী বুঝেছিল, এ মাম্মাস বয়। মায়ের কথার বাইরে পা দেয় না এই বয়েসে এসেও। আহেলী আর জোর করেনি। আসলে জীবনে সামান্যতম সিদ্ধান্ত নিজে না নিতে পারা মানুষগুলোকে দেখলে ওর একটু অবাক লাগে। আহেলীও বাবার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়েছে জীবনে। কিন্তু একটা মুভি দেখতে গেলে বা বন্ধুদের সঙ্গে কফি খেতে গেলে কখনও কারোর পারমিশন নিতে হয়নি। আহেলী নেমে পড়েছিল নিজের স্টপেজে। স্টেশন ছাড়ানোর মুখে শুনেছিল পিছন থেকে ডাকটা।

‘ম্যাম, আমন্ত্রণ করে এখন দৌড়ে পালাচ্ছেন যে!’

থমকে দাঁড়িয়েছিল আহেলী। পিছন ঘুরেই দেখেছিল, প্রদীপ্ত মুচকি মুচকি হাসছে। আহেলী হেসে বলেছিল, ‘মায়ের বকুনির ভয়ে আপনি তো আসবেন না বললেন।’

প্রদীপ্ত হেসে বলেছিল, ‘বন্ধুরা বলেছিল, সুন্দরী মেয়েরা আমাদের মতো ছেলেদের সঙ্গে কদাচিৎ কথাবার্তা বলে। চা খেতে নিমন্ত্রণ করা মানে লটারির টিকিটে এক কোটি টাকার প্রাইজ জেতা। তাই এমন সুযোগ যেন কেউ হাতছাড়া না করে। বন্ধুদের বাণী মনে পড়তেই ঝপ করে নেমে পড়লাম আপনার পিছন পিছন।’

আহেলী হেসে বলেছিল, ‘আপনাকে যতটা ভদ্র ছেলে মনে হচ্ছিল, ততটা কিন্তু নয়।’

প্রদীপ্ত সংকোচে বলল, ‘তাহলে কি কফির আমন্ত্রণ বাতিল হল? ভেবেছিলাম বন্ধুদের আড্ডায় একটু কলার তুলব, সে গুড়ে বালি?’

আহেলী হেসে বলল, ‘না না, একেবারেই নয়। কফির সঙ্গে ফিস ফ্রাই যুক্ত হল। আপনার সামনে ভদ্র, অতি ভদ্র সেজে থাকতে হবে না তাই।’

কফি খেতে খেতে আড্ডা হয়েছিল অনেক। প্রদীপ্ত নিজের সবটুকু প্রায় বলে দিয়েছিল আধঘণ্টার মধ্যেই। আহেলী বুঝেছিল, প্রদীপ্তর জীবনে ওর মায়ের প্রভাব খুব। কফি খেতে খেতেই বার দুয়েক ফোন এল। প্রদীপ্ত বলল, ‘মা একটু বন্ধুদের সঙ্গে কফি খেতে এসেছি। পরের ট্রেনে যাচ্ছি।’

পরের ট্রেনের সময় পেরিয়ে যাওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয় ফোনটা ঢুকেছিল। প্রদীপ্ত আহেলী সামনে একটু অপ্রস্তুত হয়েই বলেছিল, ‘মা আসছি।’ দ্বিতীয় ফোন রাখার পরেই প্রদীপ্তর মধ্যে একটা চঞ্চলতা দেখা দিয়েছিল। সেটা বুঝেই আহেলী বলেছিল, ‘চলুন ওঠা যাক।’

প্রদীপ্ত বলেছিল, ‘আশা করি, আপনার পার্স দু’বার পড়বে না। আর আমি দ্বিতীয়বার কুড়িয়ে ফেরত দেওয়ার সুযোগ পাব না।’

কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আহেলী বলেছিল, ‘ক্যাহেনা কেয়া চাহতে হো?’

প্রদীপ্ত হেসে বলেছিল, ‘সিম্পল। আর কি কফি খাওয়ার বা খাওয়াবার ডাক পাব?’

আহেলীর বেশ ভালো লেগেছিল প্রদীপ্তকে। অত্যন্ত ভদ্র, মার্জিত কথাবার্তা। কিন্তু বেশ হিউমার যুক্ত কথাবার্তা বলে। সহজ-সরলভাবেই স্বীকার করেছিল, ওর বাবা হাইস্কুলের হেড মাস্টারমশাই হলেও ও প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে। এবং সেটাও খুব হাই-ফাই কিছু নয়। মা একা হাতে ওদের সংসারটাকে ধরে রেখেছে। দিদির বিয়ে হয়েছে বছর দুয়েক আগেই। বাবা এ বছর রিটায়ার করবেন। বাড়ির অবস্থা মোটামুটি সচ্ছল। তবে বাবাকে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছোট ভাইয়ের সংসার টানতে হয়েছে। কারণ ওর ছোটকাকা যে ব্যবসাতেই হাত দিয়েছে, তাতেই ভরাডুবি হয়েছে। এত পার্সোনাল কথা যে বন্ধু ভেবে মুহূর্তে বলে দিতে পারে, তার মধ্যে খুব জটিলতা যে প্রবেশ করেনি সেটুকু উপলব্ধি করেছিল আহেলী। ফোন নম্বর বিনিময় হয়েছিল ওদের মধ্যে।

প্রায়ই ওদের দেখা হচ্ছিল মেট্রোতে। কখনও ছুটির দিনে প্রদীপ্ত ফোন করে বলত, ‘যদি বন্ধু ভাবো, তাহলে চলো আজ দেখা করি ক্যাজুয়াল ড্রেসে। অফিস থেকে ফেরার পথে তাড়াহুড়োয় তো কথাই হয় না।’

আহেলী মজা করে বলেছিল, ‘কেন ক্যাজুয়ালে বুঝি তোমায় ঋত্বিক রোশন লাগবে? আর সেটা হলে কি আমি ধপাস করে প্রেমে পড়ে যেতে পারি বলে বিশ্বাস করো তুমি?’

প্রদীপ্ত লজ্জা পেয়ে বলেছে, ‘কুল ইয়ার। আমি এরকম কিছু ভাবিনি। মানে অফিস ফেরতা দুজনেরই বিধ্বস্ত অবস্থা থাকে, তাই ভাবলাম, একদিন ফ্রেশ মুডে আড্ডা দিই।’

আহেলী তবুও লেগ পুলিংয়ের সুযোগ একবিন্দুও না ছেড়ে বলেছিল, ‘ধুর যাওয়ার ইচ্ছেটাই তো নষ্ট করে দিলে ওই ‘‘কুল ইয়ার’’ বলে। কেমন একটা স্কুল ফ্রেন্ড, স্কুল ফ্রেন্ড ফিলিংস আসছে এখন।’

প্রদীপ্ত বলেছিল, ‘এতদিন কি অন্যরকম ফিলিংস ছিল তোমার আমার প্রতি? আমিই কি এক ড্রপ লেবুর রস ফেলে ছানা কেটে দিলাম?’

আহেলী কোনোমতে হাসি চেপে বলেছিল, ‘ঠিক ধরেছ। এতদিন মেট্রোতে তোমায় দেখলেই অন্যরকম একটা ফিলিংস আসত।’

গাঢ় গলায় প্রদীপ্ত বলেছিল, ‘বলোনি কেন আগে? কী ফিল করতে? প্লিস বলো?’

আহেলী গলায় আবেগ মিশিয়ে বলল, ‘এই ব্যস্ত তিলোত্তমা, যেখানে মানুষের সময় নেই একে অপরকে নিয়ে এক সেকেন্ড ভাবার, এত মানুষ, সকলে যেন সকলের অপরিচিত, সেখানে মেট্রোতে তোমাকে দেখলেই আমার মনে হত, এই একটা মানুষ আছে যে আমায় চেনে, আমার গ্রে আর পার্পেলে মেশানো পার্সটা চেনে। বেখেয়ালে পড়ে গেলে ঠিক তুলে নেবে। সত্যি বলতে কী খুব ভালো সহযাত্রী সহযাত্রী ফিল হত।’

ধৈর্যের বাঁধ ভাঙা গলায় প্রদীপ্ত বলেছিল, ‘ধুস্‌, তোমায় আসতে হবে না। থাকো তুমি তোমার গ্রে পার্স নিয়ে আর ওই হাঁদারাম সহযাত্রী নিয়ে। ভেবেছিলাম নিজেকে একটু স্মার্ট প্রমাণ করব তোমার সামনে। সদ্য স্যালারি ঢুকেছে। মাসের পনেরো তারিখ হলেই আবার পকেট গড়ের মাঠ হয়ে যাবে, তার আগে একটা ট্রিট দেব, তা নয়।’

আহেলী বলেছিল, ‘চটপট বলো তোমার কোন রং পছন্দ?’

প্রদীপ্ত বলেছিল, ‘এটা আবার কেন? আবার কোনো লেগপুলিং চলবে নাকি?’

আহেলী আবার রিপিট করেছিল, ‘আরে বলো না।’

‘আমার বেবি পিঙ্ক খুব পছন্দ। ছেলেদের পরলে মানায় না ঠিকই। কিন্তু আমার পছন্দের রং।’

আহেলী বলেছিল, ‘বিকেল পাঁচটায় ভিক্টোরিয়া চত্বরে চলো তাহলে।’

প্রদীপ্ত বলেছিল, ‘এ বাবা! ওখানে তো কাপলরা যায় বেশি।’

আহেলী হেসে বলেছিল, ‘আমার বন্ধুরা বুদ্ধি দিয়েছিল, যদি কোনো ছেলেকে জীবনে পটাতে পারিস, তাহলে অবশ্যই একবার ভিক্টোরিয়া যাবি। ওখানে না গেলে নাকি ব্যাচেলার লাইফ কমপ্লিট হয় না। আর তাছাড়া সহযাত্রীকে যদি লোকজন প্রেমিক ভাবে, তাতে তোমার সমস্যা কোথায়?’

প্রদীপ্ত একটু থেমে কথাগুলো হজম করে বলেছিল, ‘বেশ, তাহলে তাই চলো।’

নিজের আলমারি ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা পিঙ্ক লং ফ্রক খুঁজে পেল আহেলী। ফ্রকটা খুব পছন্দ করে কিনেছিল সে। কিন্তু অফিস আর বাড়ি, ছুটির দিনে জমে থাকা কাজের চাপে এসব ছোট ছোট পছন্দগুলো যেন হারিয়ে গেছে। লাস্ট কবে এই ড্রেসগুলো পরেছে, ভুলেই গেছে আহেলী। পিঙ্ক আর স্কাইয়ের ম্যাচ করা লং ফ্রকটা গায়ে আলতো করে ধরে আয়নার সামনে দাঁড়াল। আহেলী কি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ছে প্রদীপ্তর প্রতি! যদি সত্যিই ভালোবেসে ফেলে তাহলে কি আদৌ বাবা-মা মেনে নেবে ওকে জামাই হিসাবে? বাবা তো আহেলী জন্য বড় বড় চাকরি করা ছেলে খুঁজছে। প্রদীপ্ত নেহাতই সাধারণ। তবে আহেলী অয়ন পালকে একটু চেনে, মেয়ে কষ্ট পাবে এমন কাজ কিছুতেই করবে না। আহেলী যদি প্রদীপ্তকে বিয়ে করতে চায়, বাবা হয়তো একটু রাগ করবে, দুঃখ পাবে, কিন্তু মেনে নেবে শেষ পর্যন্ত। আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল আহেলী। ইস্, ভাবনার গতিবেগ আলোর থেকেও দ্রুত হয় কেন? প্রদীপ্তকে নিয়ে এত কিছু ভাবছে কেন আহেলী?

কনজারভেটিভ বাড়ি বলেই এই বয়েসে এসেও প্রেমে পড়া আর হয়নি আহেলীর। বাবার ধারণা, প্রেম করে কোনোদিন যোগ্য জীবনসঙ্গী পাওয়া সম্ভব নয়। প্রেম হল অল্প বয়েসের ভুল। এই একই ভাঙা রেকর্ড বাড়িতে শুনতে শুনতে আর অতি শাসনের কারণে সব প্রোপোজাল রিজেক্ট করতে করতে এগিয়েছে আহেলী। ঠিক যেন জেসিপি গাড়ি। সামনে যত আগ্রহী প্রেমিকই থাকুক, আহেলী তাকে সরিয়ে নিজের রাস্তা বানিয়ে চলেছে। আচমকা কেন যে প্রদীপ্তকে নিয়ে এতটা ভেবে ফেলল, কে জানে! কে যেন বলেছিল, প্রেম হল কালবৈশাখী ঝড়ের মতো। কখন আসবে আর সব উড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে, কেউ বলতে পারে না। কথাটা রবীন্দ্রনাথ বা হুমায়ুন আহমেদ যে বলেননি, সেটা নিশ্চিত।

আহেলী কলেজে রাজনীতি করেছে, ছেলে বন্ধুরা বাড়িতে এসেছে, জিন্স টপ পরে ঘুরে বেড়িয়েছে, কোনো কিছুতেই বাবার সমস্যা নেই। সমস্যা শুধু প্রেমে। মা মজা করে বলত, ‘তোর বাবা মনে হয় অল্পবয়সে প্রেমে ধাক্কা খেয়েছিল। সেই থেকেই প্রেমে অ্যালার্জি, বুঝলি!’ যে যাই বলুক বাবা নিজের জায়গায় স্থির থেকেছে। সব স্বাধীনতা দিয়েছে, শুধু আপত্তি প্রেমে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি পেরিয়ে গিয়ে কেউ নাকি আর সেভাবে প্রেমে পড়ে না, এমনই জ্ঞান দিয়েছিল সবজান্তা বন্ধু-বান্ধব। তাহলে প্রদীপ্তর সঙ্গে আলাদা মিট করতে যাবে ভেবেই অদ্ভুত একটা অনুভূতি কেন হচ্ছে আহেলীর! আহেলী নিজের মনে হেসে উঠল, তবে কি নবেন্দু স্যার যেমন দেরিতে ক্লাসে ঢুকে বলতেন, ‘আমি দেরিতেই আসি, কারণ কম সময়ে বেশি বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি।’ তেমনই আহেলীর জীবনেও প্রেম একটু অসময়েই এল!

ভিক্টোরিয়া গেটের সামনে লেমন ইয়েলো টি শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স পরে দাঁড়িয়ে আছে প্রদীপ্ত। ওর জন্য কেউ এভাবে অপেক্ষা করছে ভাবতেই কেমন একটা শিহরন হয়েছিল।

ওকে দেখেই হাত নেড়ে এগিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত। বলেছিল, ‘ওহ এই জন্য আমার ফেভারিট কালার জানতে চাওয়া হয়েছিল? মানে, তুমি বলে বলে ছক্কা হাঁকাবে আর আমি একবার ক্যাচ মিস করলেই দোষ!’

আহেলী বলেছিল, ‘মানে?’

প্রদীপ্ত আর আহেলী পাশাপাশি হাঁটছিল। হাঁটতে হাঁটতেই প্রদীপ্ত বলল, ‘এভাবে আমাকে কুপোকাত করে দিয়ে ‘‘শুধুই সহযাত্রী’’ বলাটা কি মহামান্য আদালত মেনে নেবে?’

আহেলী হেসে বলেছিল, ‘তো মহামান্য আদালতের নির্দেশে কী বলতে হবে শুনি?’

প্রদীপ্ত ওর হাতটা নিজের হাতে রেখে বলেছিল, ‘আমার মনে ঘর বাঁধবে? চিরস্থায়ী ঘর। হাজার ঝড়-ঝাপটাতেও যে ঘর ভেঙে যাবে না?’

আহেলী কেঁপে উঠেছিল। এত কথা বলা মেয়েও যে কখনও কখনও চুপ করে যায় সেটা বোধহয় সেই প্রথম বুঝেছিল ও। ঠোঁটটা তিরতির কাঁপছিল, গলার কাছে বুজে আসা এক অনুভূতি। বেশ কিছুক্ষণ একটাও কথা বলেনি আহেলী। শুধু মুহূর্তটুকুকে উপভোগ করেছিল।

সেই থেকেই প্রদীপ্তকে বড্ড ভালোবাসে আহেলী। প্রদীপ্তও ওকে ভালোবাসে। কিন্তু বিয়ের কথা বললেই গত তিনবছরে ক্রমশ পিছিয়ে গেছে প্রদীপ্ত।

এমনকী, ওকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে শোনার পরেও বলেছে, ‘যেভাবে হোক ক্যানসেল করো বিয়েটা। আমি বাড়িতে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি।’

না, এখনও ম্যানেজ করে উঠতে পারেনি প্রদীপ্ত। মায়ের সামনে দাঁড়ালেই নাকি ওর গলা শুকিয়ে যায়।

প্রতিটা পাত্রপক্ষের দেখতে আসার আগে প্রদীপ্তর সঙ্গে প্ল্যান করে পাত্রপক্ষকে ক্যানসেল করেছে আহেলী। কিন্তু সৌরিশ অন্য ধাতুতে গড়া। তাই তাকে মিথ্যে দিয়ে বশ করা যাবে না।

ফোনটা বেজে যাচ্ছে প্রদীপ্তর। মনে মনে অধৈর্য হচ্ছে আহেলী। এখনও ফোনটা রিসিভ কেন করছে না! ওর হাতে মাত্র ছ’দিন আছে। প্রদীপ্ত যদি ওর ফ্যামিলিকে নিয়ে ওদের বাড়িতে এসে বিয়ের কথাটা বলে, বাকিটা ও ম্যানেজ করে নেবে। কিন্তু প্রদীপ্তর কোনো চেষ্টাই নেই। ধুর, এত ভীতু টাইপের ছেলে হলে চলে!

বার তিনেক বাজার পরে ফোনটা তুলল প্রদীপ্ত। বলল, ‘কী হয়েছে অলি? একটা মিটিংয়ে ছিলাম, বলো।’

আহেলী বিরক্ত হয়ে বলল, ‘শোনো, হাতে মাত্র ছ’দিন বাকি। যদি বাড়িতে বলতে না পারো তো আমি তোমার মায়ের সঙ্গে কথা বলছি। তোমায় ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। প্লিস প্রদীপ্ত, ডু সামথিং।’

প্রদীপ্ত বলল, ‘এভাবে কেন প্রেশার দিচ্ছ অলি? আমি কি তোমায় চাই না? ভালোবাসি না তোমায়? কিন্তু বাবা-মাকে বলতে একটু দ্বিধা হচ্ছে এই যা। আসলে মায়ের মত না নিয়ে আজ অবধি কিছু করিনি। মা একটু শকড হবে। একটু সময় দাও প্লিস।’

আহেলী প্রায় চিৎকার করে বলল, ‘সময়? প্রদীপ্ত আমরা প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন বছর সম্পর্কে আছি। এটা কি খুব কম সময়? শুধু তুমি বাড়িতে বলোনি বলে আমিও আমার বাড়িতে ভরসা করে বলে উঠতে পারিনি। একটার পর একটা সম্বন্ধ ভেঙে দিচ্ছি। এবারে হয়তো কোনো পাত্রপক্ষ বাবাকে ওপেনলি অপমান করে দিয়ে যাবে। তুমি কি সেটা চাও?’

প্রদীপ্ত বলল, ‘আচ্ছা, আজ বাড়ি ফিরে কথা বলছি।’

আহেলী ফোনটা রেখে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল।

সৌরিশ এক চান্সে বলেছিল, ‘তিন বছরে যে বলতে পারেনি, সে সাত দিনে বলতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন আপনি? আপনাকে দেখে ভালোবাসায় বিশ্বাস রাখতে শিখবে মানুষজন। এটা অবশ্য গুড সাইন।’

কিছুতেই কারোর কাছে হারতে চায় না আহেলী। প্রদীপ্তকে ভালোবাসে আহেলী। ওর সঙ্গেই শুরু করতে চায় জীবনের দ্বিতীয় পর্ব। রাতে ফোন করেও আহেলী শুনল, প্রদীপ্তর আজকে অসম্ভব মাথা ব্যথা করছিল তাই মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।

গুনে গুনে তিনদিন পর প্রদীপ্ত ফোন করে বলল, ‘মা আর বাবা তোমায় দেখতে যেতে চায় আহেলী।’

আহেলী আনন্দে নেচে উঠেছিল। অবশেষে নিজের সব দ্বিধা কাটিয়ে বাড়িতে জানিয়েছে প্রদীপ্ত। এটাই যেন ওদের সম্পর্কটাকে চিরস্থায়ী করে দিল।

আহেলী মা-বাবাকে একসঙ্গে বসিয়ে বলেছে, ‘তোমরা রাগ করো না আমার ওপরে। আমি একজনকে ভালোবাসি।’

বাবার চমকে ওঠা নজর এড়ায়নি আহেলীর। কিন্তু আজ আর কোনো উপায় নেই। সবটা বলতেই হবে বাবাকে। মাকে নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। মা হয়তো একটু আন্দাজও করেছিল। একদিন বলেছিল, ‘যদি কাউকে পছন্দ থাকে তাহলে বাবাকে জানিয়ে দিস। অকারণে তোর বাবা ভালো পাত্র খুঁজে যাচ্ছে হন্যে হয়ে আর তুই যেনতেন প্রকারে ক্যানসেল করছিস।’

আহেলী বুঝেছিল, মা সন্দেহ করেছে ওকে।

বাবা একটু গম্ভীর হয়ে বলল, ‘ছেলে কী করে? বাড়ি কোথায়? এতদিন বলোনি কেন? এভাবে আমাকে হ্যারাস করার মানে কী?’

আহেলী রেডি ছিল এই প্রশ্নগুলোর জন্য। প্রদীপ্তর সবটুকু শোনার পরে বাবা গম্ভীরভাবে বলল, ‘তোমার মাকে প্রথম জীবনে আমি খুব ভালো রাখতে পারিনি। তোমার মায়ের অনেক শখ অপূর্ণ রয়ে গেছে। তখন এত কম মাইনে পেতাম যে, বাড়িতে দিয়ে তেমন কিছুই হাতে থাকত না। তোমার মায়ের শখ ছিল হানিমুনে পেলিং যাবে। খরচের ভয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পরে অনেক জায়গায় ঘুরিয়ে ছিলাম, কিন্তু সেদিন তোমার মায়ের চোখে অভিমান ছিল। বলেছিল, ‘আমরা কি তবে হানিমুনে যাবই না?’ তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমার ঠিকঠাক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে। যাই হোক, তুমি যখন পছন্দ করেছ, নিজেও তো চাকরিটা করছ, অসুবিধা বোধ হয় তেমন হবে না। প্রদীপ্তকে আসতে বলো, ওর অভিভাবকদের নিয়ে। আমায় ফোন নম্বর দিও, আমি ওর বাবাকে আমন্ত্রণ জানাব।’

আহেলী নিজের খুশিটুকু কীভাবে খরচ করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। এত সহজে যে বাবা ওর কথা মেনে নেবে, ওর ধারণা ছিল না।

মা এসে বলল, ‘তাহলে সৌরিশদের বলে দেওয়া উচিত তাই না?’

বাবা বলল, ‘ওরাই তো সাতদিন সময় চেয়েছিল। পছন্দ হয়নিটা ডিরেক্ট বলতে পারেনি হয়তো, তাই সময় নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। ওরাই জানাবে। আমাদের চিন্তা করতে হবে না।’

আহেলী আর বিষয়টাকে জটিল করার জন্য বলল না যে, সৌরিশের ওই সাতদিন ওরই পরামর্শে নেওয়া। প্রদীপ্তর বাবা-মা আসুক ওদের বাড়িতে। তারপর আহেলীই সৌরিশকে ফোনে বলে দেবে। তাহলে আর বাবার অযথা সন্দেহ হবে না।

মা, বাবা ওঁরা আসবেন বলে সব মেনু ঠিক করেছে। মঙ্গলাদিকে নিয়ে সকাল থেকেই মা রান্না ঘরে ঢুকে গেছে। আহেলী আজ বেবি-পিঙ্ক কালারের একটা শাড়ি পরবে ভেবেছে। কে জানে কেন এত পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও যেন মনে হচ্ছে প্রদীপ্ত ওকে আজ প্রথম দেখবে। সেই প্রথম মিট করার দিনটার কথা মনে রেখেই শাড়ি বাছাই করল।

প্রদীপ্ত লাজুক লাজুক মুখে বসে আছে ওদের কর্নারের একটা সোফাতে। যেন প্রেম নয়, ভদ্রলোক খুনখারাপি করে ফেলেছে। রীতিমতো ফাঁসির আসামির মতো মুখ করে বসে আছে। আহেলীর প্রচণ্ড হাসি পেয়েছিল প্রদীপ্তকে দেখে। হ্যান্ডসাম লাগছে ড্রেসের কালার কম্বিনেশনে। কিন্তু মুখটা দেখলে মনে হচ্ছে, মিনিমাম তিনবার উচ্চমাধ্যমিকের ম্যাথসে ব্যাক পেয়েছে। তবে এমন কাঁচুমাচু মুখই ভালো বাবা-মায়েদের জন্য। তাহলেই ওরা মনে করে ছেলে অসম্ভব শান্ত-ভদ্র। মানুষের মুখ দেখে যদি মানুষ চেনা যেত, তাহলে আর এ বিশ্বে কঠিন বা অসমাপ্ত কাজ বলে কিছুই থাকত না।

আহেলী শাড়ির আঁচল সামলে এসে বসতেই ওর মা হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘আহেলী তুমি আমার পাশে এসে বসো। বোঝো ছেলের কাণ্ড! এমন একটা মিষ্টি মেয়েকে লুকিয়ে রেখেছিল। হ্যাঁ রে, মা শাসন করে যাতে বদ পাল্লায় না পড়িস। মা তো আর বাঘ-ভাল্লুক নয় যে, এমন মিষ্টি একটা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বাধা দেবে?’

আহেলীর খুব ভালো লাগছিল প্রদীপ্তর মাকে। ও যেমন চব্বিশঘন্টা ভয়ে থাকে মায়ের নামে, তেমন কিছুই নন। বদমাশ ছেলেটা নিজে ভয় পায় বলে ওকেও ভয় পাওয়ায়। প্রদীপ্তর বাবা খুবই কম কথা বলেন। কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছে বা কোন কোম্পানিতে জব করো এই দুটো প্রশ্ন ছাড়া আর কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না। তুলনামূলকভাবে ওদের ফ্যামিলিটা যে ওর মায়ের নির্দেশেই পরিচালিত হয় সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছিল।

ওর মা বললেন, ‘একটা ভালো করে ছবি তোল বাবু। পূবালীকে পাঠাতে হবে। আর বলো না, আমার মেয়ে ছটফট করছে ভাইয়ের বউ দেখবে বলে। কিন্তু কাজের চাপে আজ আসতে পারল না। বলেছে, যেন ছবি তুলে নিয়ে যাই।’

কোনোরকম খুঁতখুঁতে স্বভাব নয় ভদ্রমহিলার। মায়ের সঙ্গেও ঘরোয়া গল্প জুড়েছিলেন। খাবার টেবিলে মায়ের রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। আহেলীকে বললেন, ‘তুমি রান্না পারো কিনা জানতে চাইলাম না। চাকুরিজীবী মেয়ে ক’দিন আর রান্নার সময় পাবে? আমি যা পারি ওই খেয়ে অফিস যেতে হবে কিন্তু।’

আহেলী বলল, ‘আমিও টুকিটাকি রান্না শিখেছি মায়ের কাছ থেকে। ছুটির দিনে আপনাকে বানিয়ে খাওয়াব।’

দুই বাড়িরই পছন্দ হয়েছে দুজনকে। তবুও প্রদীপ্তর মুখে হাসি নেই। গোমড়া মুখে বসে আছে দেখে ইশারায় আহেলী বলল, ‘তোমার কি আমায় পছন্দ হয়নি হাঁদারাম? মুখটা এমন করে রেখেছ কেন?’

প্রদীপ্ত যেন অনেক কষ্টে একটু হাসল।

ছেলেটাকে মানুষ করতে পারল না আহেলী। এখনও ভীতুরাম রয়ে গেল। আজ এমন একটা খুশির মুহূর্তে যখন দুই বাড়ি গ্ল্যাডলি ওদের রিলেশনটা মেনে নিয়েছে, তখন মুখটা এমন করে রেখেছে যেন অপরিচিত কোনো মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওর সঙ্গে। নিজের মনে মনেই একচোট হেসে নিল আহেলী। কালকে অফিস থেকে ফেরার পথে দেখাচ্ছি মজা।

সবাই স্ন্যাকস খেতে খেতে হাসাহাসি করছে। ঠিক তখনই কফির কাপে চুমুক দিয়ে প্রদীপ্তর মা সুমিত্রাদেবী বললেন, ‘তাহলে দাদা একটা ভালো ডেট দেখে বিয়ের দিনটা ফাইনাল করে ফেলি। এর মধ্যে আহেলীর সঙ্গে গল্প করতে আমার মেয়ে আর বোন একবার করে আসবে। ওদেরও খুব ইচ্ছে বাবুর বউকে একবার দেখে যাওয়ার। ওরা যখন নিজেরাই পছন্দ করেছে, তখন আমাদের তো এক্ষেত্রে কোনো করণীয় নেই। শুধু দাঁড়িয়ে থেকে চারহাত এক করে দেওয়া ছাড়া।

তবে দাদা একটা কথা, আমার ওই একটি ছেলে। গয়না আপনি আপনার মেয়েকে দিলে দেবেন, না দিলে না দেবেন। আমায় দশলাখ টাকা ক্যাশ দেবেন। ওই দোতলার ঘরগুলো ওদের জন্যই ইন্টিরিয়ার ডেকোরেশন করে দেব, আর আপনার মেয়ে-জামাইয়ের জন্য একটা গাড়ি কিনে দেবেন। সত্যি বলতে কী আমাদের আর ভোগের বয়েস নেই। এখন ওরাই সব ভোগ করবে।’

এই কথা শুনে আহেলীর থেকেও বোধহয় বেশি চমকে ছিলেন অয়নবাবু। তাঁর একমাত্র মেয়ে, যতটা সম্ভব তিনি খরচ করবেন মেয়ের বিয়েতে, কিন্তু পণ দেবেন একটি শিক্ষিত ছেলেকে, বিয়ে দেওয়ার সময়, এই আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে, এটা যেন ওঁর কল্পনার অতীত।

আহেলী সোজাসুজি তাকাল তার তিনবছরের প্রতিমুহূর্তের ভাবনায় বসবাস করা মানুষটার দিকে। অপলক তাকিয়ে রইল, নিজেদের বিবাহিত জীবন নিয়ে প্ল্যান করা, হানিমুন নিয়ে বারংবার পাহাড় না সমুদ্র করা মানুষটার দিকে। মাথা নীচু করে বসে আছে প্রদীপ্ত। কিছুতেই চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। কোনো প্রতিবাদ নেই ঠোঁটে। এটা ওরা বাড়ি থেকেই প্ল্যান করে এসেছিল, সেইজন্যই প্রদীপ্ত আজ একটু বেশিই চুপচাপ। এতক্ষণে ওর মুখের অমন এক্সপ্রেশনের মানে বুঝেছে আহেলী। বিস্ময় এখনও কাটেনি ওর, তার মধ্যেই প্রদীপ্তর মা বললেন, ‘আমিও আমার জামাইকে হীরের আংটি দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলাম। আপনি আশা করি, তাই করবেন।’

আহেলী দেখছে নির্লজ্জের মতো বসে থাকা ওর স্বপ্নের পুরুষকে।

অয়নবাবু একটু গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘আচ্ছা এটা নিয়ে আমি বাড়িতে একটু আলোচনা করে নিই।’

সুমিত্রাদেবী কফির কাপটা সেন্টার টেবিলে নামিয়ে রেখে বললেন, ‘নিশ্চয়ই। দেখুন ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে রেখে আমাদের কাজ তো অর্ধেক করে দিয়েছে। এখন শুধু দু’বাড়ির মধ্যে এই দেনা-পাওনা, নমস্কারি বা আশীর্বাদের কথাবার্তাগুলোই যা ফাইনাল হওয়ার থাকল।’

প্রদীপ্ত যাওয়ার আগেও একবারও তাকাল না আহেলীর দিকে।

আহেলীদের বাড়িতে আজ নিস্তব্ধ একটা বাতাস বইছে। একটু আগের আনন্দ যেন মুহূর্তের মধ্যে কেউ মুছে দিয়েছে। শাড়িটা এক টানে খুলে ফেলে, ঘরে পরার পোশাক পরে নিল আহেলী। ড্রয়িং রুমের বাতাসে এখনও প্রদীপ্তর পারফিউমের চেনা গন্ধটা ঘুরপাক খাচ্ছে।

ঘন্টাখানেক পরে প্রদীপ্ত মেসেজ করল, ‘মায়ের তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে, বাবারও। দিভাইও তোমার ছবি দেখে খুব প্রশংসা করল। তোমার বাবা-মা আমার সম্পর্কে কী বলল অলি?’

অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আহেলী মেসেজগুলোর দিকে। এত বড় একটা অপমান করে চলে যাওয়ার পরেও এসব কী করে লিখতে পারে একটা মানুষ! কোনো উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না আহেলীর।

বাবার পায়ের আওয়াজ শুনে নিজের গালের অপমানের নোনতা জলটুকু মুছে নিল আহেলী।

বাবা এসে বসল ওর ঘরের চেয়ারে। আস্তে আস্তে বলল, ‘তোর বিয়ের জন্য গয়নাগাটি তোর মা সবই করিয়ে রেখেছে। আমিও লাখ ছয়েক রেখেছিলাম ধুমধাম করে বিয়েটা দেব বলেই। আরেকটা ফিক্সড ডিপোজিট আছে আমার লাখ বারোর। ওটা ভেঙে ফেলব ভাবছি। টাকা নিয়ে তুই চিন্তা করিস না। তোর অ্যাকাউন্টেও জমেছে ভালোই। অসুবিধা হবে না। কিন্তু পণ দিয়ে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে হবে—এটা মেনে নিতেই যা কষ্ট হচ্ছে।’

আহেলী বলল, ‘বাবা আমি এ নিয়ে কাল অফিস থেকে ফিরে কথা বলব।’

কেন কে জানে নিজের ভালোবাসাই কেন ব্যঙ্গাত্মক ঢঙে বারংবার ওর সামনে আয়নাটা ধরছে। সেদিকে তাকিয়ে চোখ নীচু করে নিতে বাধ্য হচ্ছে আহেলী। এত খারাপ পছন্দ ওর! প্রদীপ্ত এতটা মেরুদণ্ডহীন ছেলে! ও তো সব জানত, বাবা পণ দিয়ে বিয়ে দেবে না। আহেলী নিজেও এভাবে পণ নেওয়াকে ঘৃণা করে। তারপরেও এটা কী করে করতে পারল প্রদীপ্ত! এখনও যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না ও। ভাবছে এখুনি বোধহয় প্রদীপ্ত ফোন করে হো হো করে হেসে বলবে, ‘এটা আমরা মজা করেছিলাম আহেলী। আমি তোমায় ভালোবাসি। অর্থের বিনিময়ে তার বিচার করব, এটা ভাবলে কী করে!’

না, সারারাত কোনো ফোন এল না।

পরের দিন রেডি হয়ে অফিস বেরোনোর আগে পর্যন্ত মা, বাবা দুজনেই কোনো কথা বলল না। মা শুধু বলল, ‘সৌরিশ ফোন করেছিল। তোর বাবার সঙ্গে কথা বলছিল। কী কথা হয়েছে আমি জানি না।’

সত্যি বলতে কী কোনো কথাই মাথায় ঢুকছিল না আহেলীর। অপমানে নীল হয়ে আছে ওর স্বপ্ন দেখা মনটা। কে সৌরিশ, সে কেন বাবাকে ফোন করেছিল—এসব কোনো কথাই মাথায় ঢোকেনি। অফিসে গিয়েও কাজে মন লাগছিল না ওর। কৌশানী এসে মজার সুরে জিজ্ঞাসা করল, ‘কী গুরু বিয়েটা কবে খাচ্ছি?’

একমাত্র কৌশানী জানত প্রদীপ্তরা দেখতে আসবে।

আহেলী অন্যমনস্কভাবে বলল, ‘কৌশানী বিয়েটা হয়তো হবে না রে। নিজেকে এতটা ছোট করতে পারব না।’

কৌশানী নিজেও পুরোটা শুনে চমকে উঠে বলল, ‘তোমরা ভালোবেসে বিয়ে করছ, এতে এত টাকার ডিমান্ড কেন হবে?’

ফেরার পথে একটু ওয়েট করল আহেলী। শেষবার মুখোমুখি হতে চায় প্রদীপ্তর। নিজের সম্মানের কথা না ভেবেই আরেকবার কথা বলতে চায়। মেট্রো স্টেশনেই দেখা হয়ে গেল প্রদীপ্তর সঙ্গে।

প্রদীপ্ত বেশ হাসি মুখে এগিয়ে এসে বলল, ‘শপিং শুরু করবে কবে থেকে?’

আহেলীর ইচ্ছে করছিল ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিতে। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল, ‘প্রদীপ্ত তোমার লজ্জা করল না, একজন শিক্ষিত ছেলে হয়ে এভাবে পণ চাইতে! আজকাল অ্যারেঞ্জড ম্যারেজেও কেউ টাকা চায় না। আর তুমি?’

প্রদীপ্ত বিরক্ত হয়ে বলল, ‘জানতাম, তুমি ভুল বুঝবে। দেখো মা কোনো পণ চাইছে না। আমরা যাতে বিয়ের পরে দুজনে আরামে থাকি তাই একটা ছোট্ট আবদার করেছে মাত্র! তুমি একটা ছোট্ট বিষয়কে এত বড় কেন করছ? এতদিন তো আমি বাড়িতে বলতে পারছিলাম না বলে খুব কথা শোনাতে। এখন যখন সবাই রাজি তখন তোমার সমস্যা কী? তাছাড়া তোমার বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা যদি খারাপ হত, তাহলে কি মা চাইত? তোমার বাবার এটুকু দেওয়ার সামর্থ্য আছে।’

আহেলী প্রদীপ্তর ঠোঁট দুটোর দিকে তাকিয়ে আছে। কী অবলীলায় বলে চলেছে ও! আহেলী শেষ চেষ্টা করে বলল, ‘এভাবে অপমান করতে পারো না তুমি আমাদের সম্পর্কটাকে। কোনো পণ দেবে না আমার বাবা।’

প্রদীপ্ত বিরক্ত হয়ে বলল, ‘এরপর মা বেঁকে বসলে আমি কিন্তু আর রাজি করাতে পারব না।’

প্রদীপ্তর কথা শুনে মনে হচ্ছে বিয়ের ইচ্ছেটা একা আহেলীর। এই সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে তাকে নাম দেওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আহেলীর। প্রদীপ্তর যেন কোনো দায় নেই। ও যেন আহেলীকে বিয়ে করে কোনো কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে দায়মুক্ত করছে!

অসহ্য জ্বালায় চোখ দুটো জ্বলছে আহেলীর। চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল একটা ট্রেন। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না আহেলী, চোখদুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে জলে। আচমকাই একটা হাত এসে ধরল ওকে। বলল, ‘এতক্ষণ এখানে কী করছ আহেলী? আমি কখন থেকে ওয়েট করছিলাম তোমাদের বাড়িতে। শেষে আঙ্কেল বললেন, তুমি মেট্রোতে ফিরবে। তাই খুঁজতে খুঁজতে এলাম।’

প্রদীপ্ত অপলক তাকিয়ে আছে সৌরিশের দিকে।

আহেলীর গলাটা বুজে আছে যন্ত্রণায়। কোনো কথা বলার ক্ষমতা নেই যেন। সৌরিশ ছেড়ে দিলেই হয়তো পড়ে যাবে ও। প্রদীপ্ত যে এভাবে ওকে আঘাত করবে, এতটা ও বোধহয় কল্পনা করতে পারেনি। ভেবেছিল এটা ওর মায়ের সিদ্ধান্ত, এতে হয়তো প্রদীপ্তর সমর্থন নেই। এখন পরিষ্কার হল, এতে প্রদীপ্তর সায় আছে সমানভাবে।

প্রদীপ্ত বলল, ‘আপনি কে? ওর হাত ধরে টানছেন কেন?’

সৌরিশ হেসে বলল, ‘আমি কে, সেটা না হয় ক’দিন পরেই জানবেন। তবে আহেলীর বাবা যে নিজের মেয়ের বিয়ে আপনার সঙ্গে দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা হয়তো আজ রাতেই আপনাকে জানানো হবে। আমিই সুখবরটা আগাম দিয়ে দিলাম। আসলে আঙ্কেল বলেছেন, শিরদাঁড়া ভাঙা ছেলে আমার মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারবে না। এনিওয়ে, আহেলী চলো বাইরে আমার গাড়ি আছে। আমরা কোনো রেস্টুরেন্টে ডিনার করে ফিরব। আঙ্কেল আর আন্টিকে রান্না করতে বারণ করেছি। প্যাক করে নেব। আসি প্রদীপ্তবাবু। ভালো থাকবেন। ভবিষ্যতে মায়ের পারমিশন না নিয়ে, আর দরাদরি না করে খবরদার কোনো মেয়ের প্রেমে পড়বেন না। ভালোবাসার যোগ্যতা সকলের থাকে না। বিশেষ করে আহেলীকে অর্জন করার যোগ্যতা সকলের নেই।’

সৌরিশ হাত ধরে টানতে অবশ পাগুলো দিয়ে যন্ত্রের মতো হাঁটতে শুরু করল আহেলী।

পিছন থেকে তীব্র রাগে প্রদীপ্ত বলল, ‘ওহ, বড় চাকুরেওয়ালা ছেলেকে বিয়ে করবে বলেই পণ নিয়ে এত কথা! এটাই তাহলে আসল কারণ।’

আহেলীর আর ইচ্ছে করছে না পিছন ঘুরে প্রদীপ্তর মুখটা দেখতে। ইচ্ছে করছে না সত্যিটা ওকে বোঝাতে।

সৌরিশ গাড়িতে উঠেই বলল, ‘এভাবে হাটে বাজারে নিজের মূল্যবান মনটাকে বিলিয়ে দিতে বসেছ কেন আহেলী? তার জন্যই মনখারাপ করো, যে তোমার মন ভালো রাখার চেষ্টা করে এসেছে বরাবর। তাকেই উজাড় করে ভালোবাসো, যে তোমার ভালোবাসাকে মূল্যবান ভাববে।’

সৌরিশ গাড়িটা আহেলীর বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে বলল, ‘আমি আঙ্কেলকে ফোন করেছিলাম সকালে। তোমায় পছন্দ নয়—কথাটা জানাব বলে। আজকেই তোমার দেওয়া সাত দিনের শেষ দিন। কিন্তু আঙ্কেল প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে গতকালের প্রদীপ্তদের সব কথা বলে ফেললেন। কবে আমি ওঁর এতটা ভরসার জায়গা হয়ে গেলাম নিজেও টের পেলাম না। আর বলা হল না, তোমায় পছন্দ হয়নি। আঙ্কেল বিকেলবেলা ফোন করে বললেন, ওঁর নাকি প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে। কারণ, তোমার অফিসের বান্ধবী কৌশানী অঙ্কেলকে জানিয়েছে, তুমি অফিসে খুব অন্যমনস্ক ছিলে। তাই আমি সবটুকু জেনে মেট্রো স্টেশনে এসে ওয়েট করছিলাম। কিছু মনে করো না, প্রদীপ্তকে অপমান করার লোভ ছাড়তে পারলাম না। ছেলেটা ক্রমাগত তোমায় হার্ট করছিল। ওর সামনে ইচ্ছে করেই বললাম, আমরা এখন রেস্টুরেন্টে খাব। আমি জানি আহেলী, তোমার মনের অবস্থা এখন সেরকম নেই। তুমি বাড়ি গিয়ে রেস্ট করো। আঙ্কেল তোমায় নিয়ে চিন্তা করছেন, পারলে ওঁকে একটু সান্ত্বনা দিও।’

আহেলী অস্ফুটে বলল, ‘ভিতরে আসবে না?’

সৌরিশ বলল, ‘আরেকদিন আসব না হয়। তুমি নিজেকে সামলানোর সময় নাও একটু। তারপর একদিন এসে তোমার কলেজে রাজনীতির গল্প শুনে যাব কফি খেতে খেতে। এই কান্না ভেজা, বিধ্বস্ত আহেলীর প্রেমে তো আমি পড়িনি প্রথম দর্শনেই। আমি সেই আহেলীর প্রেমে পড়েছিলাম, যে কিনা গল্পের আকারে নিজেকে প্রায় ডনে পরিণত করেছিল। প্লিস আহেলী অনেকটা সময় নাও, কিন্তু পাল্টে যেও না।’

আহেলী যাওয়ার সময় বলল, ‘থ্যাংক ইউ। আমার বাবার চয়েস আমার জন্য সবসময় ভালোই হয়েছে। আজ বড্ড ছোট হয়ে যেতাম প্রদীপ্তর কাছে। মাটিতে মিশিয়ে দিতে চাইছিল ও। ভাগ্যিস তুমি এলে।’

সৌরিশ গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বলল, ‘টেক কেয়ার। ভালোবাসায় বিশ্বাস হারিও না আহেলী। ভালোবাসার কোনো দোষ নেই, ভুল মানুষকে ভালোবাসলে দোষ সেই মানুষটার। ওই অনুভূতিটার নয়। ওই ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ডগুলো এখনও একইরকম সজীব। আর সাত দিন পরে আমি আঙ্কেলকে ফোন করে জানিয়ে দেব, আমার আপনার মেয়েকে খুব পছন্দ। ঠিক সাতদিন পরে। তুমি সময় নাও আহেলী, দীর্ঘ সময় নাও, শুধু প্লিস আমায় ওই প্রথম দিনের আহেলীকে ফেরত দিও।’

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন