২৩.
বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তান,
দেশদরদী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব,
দেশের জন্য সংগ্রাম করেন সারা জীবন ভর।
জেল খেটেছিলেন কত,
করেন নাই এইতো মাথা নত,
স্বাধীনতার নেতৃত্ব তার অশেষ অবদান।
দেশকে ভালোবেসে এ দেশ স্বাধীন করেন যিনি,
গরিব-ধনী সব মানুষের বন্ধু ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে,
শেখ মুজিব সবার অন্তরে,
ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে রয়েছে প্রমাণ।
[রচনাকাল: ১০-০২-১৯৯৮; সুরকার: জাহিদ মনসুর]
২৪.
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ব্বে,
পেয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা,
আমরা পেয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
৭ই জুনের ৬ দফা বঙ্গবন্ধুর আবিষ্কার,
পাকিস্তানের নির্যাতন আর শোষণ বন্ধ করিবার।
৬ দফা করেছে উত্থান,
৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান,
একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে এনেছে সফলতা,
পেয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
২৪ বছর শেখ মুজিব করেছিলেন আন্দোলন,
জেল-জুলুম ভোগ করেছেন, জানে দেশের জনগণ।
৭ কোটি বাঙালি ছিল, শেখ মুজিব নেতৃত্ব দিল,
৩০ লক্ষ জীবন গেল ইতিহাসের কথা,
পেয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
[রচনাকাল: ১৫-০২-১৯৯৮; সুরকার: জাহিদ মনসুর]
২৫.
বিশ্ববাসী সবার মুখে শুনি শুধু একটি নাম,
শেখ মুজিব, শেখ মুজিব,
জাতির জনক শেখ মুজিব
গরিব-ধনী সবার প্রিয়, স্মরণীয় একটি নাম,
শেখ মুজিব, শেখ মুজিব,
জাতির জনক শেখ মুজিব।
মুজিব ছিলেন প্রতিবাদী, সংগ্রামী এক চেতনা,
শ্রমজীবী সব মানুষের কল্যাণেরও প্রেরণা।
দেশকে ভালোবেসেছেন, সুখ-সমৃদ্ধি চেয়েছেন,
জ্বালাতে চেয়েছেন তিনি
শান্তিরও মঙ্গল প্রদীপ।
জীবনে কখনো নিজের সুখ-শান্তি চাইলেন না,
মানুষের কল্যাণ চেয়ে ভোগ করেছেন লাঞ্ছনা।
দেশকে আপন জেনেছেন, স্বাধীনতা এনেছেন,
তাই বাংলাদেশের লাল-সবুজ
পতাকা রবে চিরঞ্জীব।
[রচনাকাল: ০৭-১১-১৯৭২; সুরকার: জাহিদ মনসুর]
২৬.
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু,
বল রে সবাই বল,
অর্থনৈতিক মুক্তির পথে
চল এগিয়ে চল।
বাংলার মানুষ একসাথে লড়বো এবার লড়বো,
বঙ্গবন্ধুর সুখের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো।
ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলবো,
সোনার বাংলা গড়ে তুলবো,
আয়রে আয় সেই একাত্তুরের
বীর সৈনিকের দল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বিরোধিতা করেছে,
আবার তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর শত্রু যারা,
এবার ধরা পড়বে তারা,
বাংলার শত্রু ধ্বংস হবে,
যাবে রে সব রসাতল।
[রচনাকাল: ২০-০৪-১৯৭৩]
২৭.
যদি এমন একটি খবর পেতাম,
লালদীঘির পাড়ে চট্টগ্রাম,
বঙ্গবন্ধু করছেন সভা,
ছুটে যেতাম, ছুটে যেতাম।
হাইলারা হাল ছেড়ে, জাইলারা জাল ফেলে,
বঙ্গবন্ধুর জনসভায় আসতো সবাই চলে।
দোকানি দোকান বন্ধ করে,
দেখতে যেত বঙ্গবন্ধুরে,
লক্ষ মানুষের সেই মিছিলে আমিও যেতাম,
আমিও যেতাম।
হঠাৎ যদি শোনা যেত আগামীকাল দিনে,
বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিবেন রেসকোর্সের ময়দানে।
বঙ্গবন্ধুর নাম শুনিলে,
যেত সবাই দলে দলে,
তার বজ্রকণ্ঠের ভাষণ শুনতে আমিও যেতাম,
আমিও যেতাম।
[রচনাকাল: ১২-০২-১৯৯৮; সুরকার: জাহিদ মনসুর]
২৮.
রাত দুপুরে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখি বঙ্গবন্ধুরে,
স্বপ্ন দেইখা কাইন্দা উঠি, জাইগা দেখি নাই রে নাই,
আমার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নাই।
শোকের ছায়া নাইমা আইলো,
বঙ্গবন্ধু শহীদ হইলো রে,
(বিধিরে) মোদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে
খুঁজিয়া বেড়াই।
ষড়যন্ত্র করলো ওরা কোন দেশের বাঙালি,
৩২ নম্বর বাড়িটারে করলো চির খালি,
ওরা কোন দেশের বাঙালি!
বাঙালি জাতির জনকের বংশ
কার হুকুমে করলো ধ্বংস রে, (বিধিরে)
সেই শোকে আজ বাঙালি মোরা
কাইন্দা বুক ভাসাই।
দামাল ছেলে জামাল, কামাল, রাসেল ছিল শিশু,
পাখির মতো মারলো ওরা, রাখলো না আর কিছু,
রাসেল ছিল শিশু।
বাঙালি আজ মুজিবহারা,
মাজার হয় তার টুঙ্গিপাড়া রে, (বিধিরে)
মুজিবের আদর্শ রাখবো মোরা,
জানবো মুজিব মরে নাই।
[রচনাকাল: ০৭-০৩-১৯৭৬]
২৯.
ওদের দয়ামায়া ছিলো না,
বঙ্গবন্ধুকে বাঁচতে দিলো না ওরা (২)।
চক্রান্ত কইরা বেঈমানেরা ঘটাইলো দুর্ঘটনা,
বঙ্গবন্ধুকে বাঁচতে দিলো না ওরা (২)।
আচম্বিতে আন্ধার রাইতে ষড়যন্ত্র করিয়া,
বঙ্গবন্ধুকে মাইরা ক্ষমতা নিলোরে কাড়িয়া।
মিথ্যা ইতিহাস করলো প্রকাশ,
২১ বছর করে ছলনা,
বঙ্গবন্ধুকে বাঁচতে দিলো না ওরা (২)।
মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাঙালি জীবন দিল,
রাজাকারেরা স্বাধীনতার বিপক্ষেতে ছিল।
আজিও তারা জাতির পিতাকে মেনে নিতে পারলো না,
বঙ্গবন্ধুকে বাঁচতে দিলো না ওরা (২)।
[রচনাকাল: ২২-০৪-১৯৯৮]
৩০.
বলো কার হুকুমে মাইরাছে,
বঙ্গবন্ধুর বংশ কেন ওরা
ধ্বংস কইরাছে?
উনিশ শত পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টে,
চোখের জলে শোক ঘটনা লিখি অনেক কষ্টে।
বঙ্গবন্ধু হইলো শহীদ সাথে পরিবার,
ঐতিহাসিক এই ঘটনা ভোলা যায় না আর।
খুনিদের বিচার হওয়া দরকার,
ওরা দেশের শত্রু, বেঈমানের পুত্র গো,
শুধু ক্ষমতার লোভে এ কাজ কইরাছে,
বঙ্গবন্ধুর বংশ কেন ওরা ধ্বংস কইরাছে।
দামাল ছেলে জামাল, কামাল, রাসেল ছিল শিশু,
পাখির মতো মারলো তাদের, রাখলো না আর কিছু।
দয়া-মায়া নাই কি ওদের? হায় কি রে বাঙালি!
৩২ নম্বর বাড়িটারে করে দিলো খালি,
ওরা কেমন বাঙালি!
মারলো শেখ মনি আর সেরনিয়াবাদকে গো,
তারা এমন কি দোষ কইরাছে,
বঙ্গবন্ধুর বংশ কেন ওরা ধ্বংস কইরাছে।
[রচনাকাল: ১৯-০৩-১৯৯৬]
৩১.
সোনার মানুষ জন্মেছিল
এই সোনার বাংলাদেশে,
যার নেতৃত্বে স্বাধীনতা পেলাম অবশেষে।
মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির আসল প্রেরণা,
বাঙালিদের মুক্তির সংগ্রাম শেখ মুজিবের সূচনা।
বাংলাদেশের বন্ধু সেজন,
সংগ্রাম করেন সারা জীবন,
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র যে উপহার দিয়ে গেছে।
শেখ মুজিবুর রহমানের গুণের কোনো নাই রে শেষ,
তাঁর জন্ম না হলে আমরা পেতাম না এই বাংলাদেশ।
বাঙালি একটি জাতি আছে,
প্রমাণ রয় তা বিশ্বের কাছে,
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাইতো অমর ইতিহাসে।
[রচনাকাল: ১০-০২-১৯৭৩]
৩২.
মুজিব মরে নাই ও মুজিব মরে নাই,
ও শোন বাঙালি বোন-ভাই,
মুজিব মরে নাই ও মুজিব মরে নাই।
এক মুজিব জন্মেছিল সোনার বাংলাদেশে,
লক্ষ কোটি মুজিব এখন চলে তার আদর্শে।
যার আদর্শ মেনে আমরা স্বাধীনতা পাই,
মুজিব মরে নাই ও মুজিব মরে নাই।
শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়বো,
তার আদর্শ সবাই মোরা বাস্তবায়ন করবো,
তার ৭ই মার্চের ভাষণ আমরা আজও শুনতে পাই,
মুজিব মরে নাই ও মুজিব মরে নাই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রে,
বেঁচে থাকবে সব মানুষের অন্তরে অন্তরে।
কুটি মনসুর বলে, জাতির পিতার গুণের সীমা নাই,
মুজিব মরে নাই ও মুজিব মরে নাই।
[রচনাকাল: ১২-০২-১৯৭৭]
৩৩.
বঙ্গবন্ধু একটি নাম,
বঙ্গবন্ধু এক পতাকা,
বঙ্গবন্ধু একটি দেশ,
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধু একটি ভাষা,
বাংলা ও বাঙালির বাঁচার আশা।
ধনী-গরিব আর মুটে-চাষা,
কোটি কোটি মানুষের ভালবাসা।
বঙ্গবন্ধু এই তোমার-আমার,
বঙ্গবন্ধু সবার নেতা।
বঙ্গবন্ধু একটি জাতি,
বাঙালি চিন্তা-চেতনার সাথী।
বাঙালির প্রতিটি ঘরে ঘরে,
বঙ্গবন্ধু বসত করে।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ,
বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা।
[রচনাকাল: ১৭-০৮-১৯৯৭; সুরকার: জাহিদ মনসুর]
৩৪.
শিয়াল কয় খাটাশ ভাই রে, উপায় নাই রে,
জীবন বাঁচাই কেমন করে,
ওরে জোয়ার আইলো, বর্ষা হইলো,
পানি গেল চকপাথারে।
জ্যৈষ্ঠ মাসে গোষ্ঠিসহ পাটক্ষেতে করিতাম বাস,
পাড়ায় গিয়া খুব করিয়া ধইরা খাইতাম মুরগি-হাঁস।
খাইতাম ভালো, থাকতাম সুখে, টের পাইতো না গাঁয়ের লোকে,
সাথে করে শিয়ালনীকে হাওয়া খাইতাম সন্ধ্যার পরে।
আষাঢ় মাসে পানি আসে ধানক্ষেতে আর পাটক্ষেতে,
সেখান থেকে মনের দুঃখে আবার গেলাম ছনক্ষেতে।
সেই ছনক্ষেতেও পানি আসে, কেমনে থাকি বাংলাদেশে,
প্রাণে মারা যাবো শেষে পোলাপানের হাতে পড়ে।
বর্ষাকালে শিয়াল যেমন গাছে উইঠা বাঁচায় প্রাণ,
তেমনি মতো প্রাণ বাঁচাইলো ইয়াহিয়া টিক্কা খান।
ইয়াহিয়ার পাকিস্তানে বর্ষার পানি নাই সেখানে,
শিয়াল পণ্ডিত টিক্কা খানে তাইতো গেল বাংলা ছেড়ে।
ইয়াহিয়া, টিক্কা খান আর যুদ্ধবন্দী বেঈমান,
জ্বালাইয়া-পোড়াইয়া সোনার বাংলাদেশ করে শ্মশান।
বঙ্গবন্ধু নির্দোষী, হুকুম দেয় তার হবে ফাঁসি,
কুটি মনসুর বলে, বিশ্ববাসী বিচার কর ইয়াহিয়ারে।
[রচনাকাল: ০৭-০৪-১৯৭১; প্রথম কণ্ঠশিল্পী: কুটি মনসুর]
৩৫.
যার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা পাই,
শোনেন ভাই রে ভাই,
তাঁর শৈশবকালের কথা বলে যাই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বিশ্বনেতা যিনি,
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নিলেন তিনি।
উনিশ শত বিশ সালে এই নেতার জন্ম হয়,
শৈশবেই দিলেন সে যে নেতার পরিচয়।
আজব এক ঘটনা সেদিন ঘটেছিলো ভাই,
শৈশবকালের সেই ঘটনা এখন বলে যাই,
শোনেন ভাই রে ভাই,
তাঁর শৈশবকালের কথা বলে যাই।
টুঙ্গিপাড়া হাইস্কুলের ছাত্র মুজিব ছিল,
সাহসের পরিচয় সে তখন থেকেই দিল।
সে স্কুলের টিনের চাল উড়ে গেল ঝড়ে,
ঢাকা থেকে নেতা গিয়ে টাকা স্যাংশন করে।
স্যাংশন করা সেই টাকা স্কুলে আর যায় না,
শিক্ষকেরা চেষ্টা করেও টাকা আর পায় না।
টাকা পাবে আশায় আশায় দিন চলে যায় ভাই,
মাস গেল, বছর গেল, টাকার খবর নাই।
শোনেন ভাই রে ভাই,
তাঁর শৈশবকালের কথা বলে যাই।
স্কুল ঘরের চাল নিয়েছে ঝড়েতে উড়াইয়া,
আবার এলো দুই নেতা টেক্সিতে চড়িয়া।
ফজলুল হক আর সোহরাওয়ার্দী, এই দুই নেতায়,
টেক্সি করে টুঙ্গিপাড়া হাইস্কুলে যায়।
হাইস্কুলে মিটিং করে এক লক্ষ টাকা স্যাংশন করে,
দুই নেতা ফিরছিলেন ঢাকা,
ঐ স্কুলে শেখ মুজিব ক্লাস নাইনে পড়ে।
দুই নেতার সামনে গিয়ে গাড়ি আটক করে,
একটি কথা সেদিন মুজিব বলেছিলেন ভাই,
নেতারা শুধু স্যাংশন করে, টাকার খবর নাই।
শোনেন ভাই রে ভাই,
তাঁর শৈশবকালের কথা বলে যাই।
গাড়ি থেকে নেমে তখন বললো দুই নেতা,
‘কি নাম এই তোমার? কি চাও বাবা? বলো সত্য কথা।’
মুজিব বললো, ‘ভাঙ্গা ঘরে বসতে আর পারবো না,
স্যাংশন চাই না, নগদ টাকা না দিলে ছাড়বো না।’
শেখ মুজিবের কথায় তারা খুব আশ্চর্য্য হলো,
সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ টাকার চেক লিখে দিল।
দুই নেতায় শেখ মুজিবকে বললো, ‘বাবা ধন,
স্কুল মেরামত করা হলে পড়ায় দিও মন।’
সোহরাওয়ার্দী আদর করে শেখ মুজিবকে বলে,
‘মেট্রিক পাস করে কোলকাতায় এসো চলে।’
হক সাহেব আর সোহরাওয়ার্দী দোয়া করলেন তাই,
‘তুমি হবে বিশ্বনেতা, আমরা বলে যাই।’
শোনেন ভাই রে ভাই,
তাঁর শৈশবকালের কথা বলে যাই।
[রচনাকাল: ১৯-১২-১৯৯৭]
৩৬.
বাঙালি যার জন্য স্বাধীন হইলা, তারে চিনলা না,
বাংলাদেশটা কেমনে পাইলা,
সেই খবর কেউ নিলা না।
শেখ মুজিব নেতৃত্ব দিল, শোনেন দেশের জনগণ,
রাষ্ট্রভাষা বাংলা করতে প্রথম করেন আন্দোলন।
তখন সালাম, বরকত শহীদ হইছে,
ভুইলা গেলে চলবে না।
বায়ান্ন থেকে বাইশটি বছর অত্যাচার আর অপমান,
জেল-জুলুম ভোগ করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান।
তারপর সত্তুর সনের নির্বাচনের
ইতিহাস কেউ ভুলবে না।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারাইতে পারে নাই,
তবুও সেই পাকিস্তানে ক্ষমতা ছাড়ে নাই।
শেষে একাত্তুরে যুদ্ধ করে
স্বাধীন হইলো, বুঝলা না?
বাংলাদেশটা স্বাধীন হইলো বঙ্গবন্ধুর উসিলায়,
পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী বাংলা ছাইড়া চইলা যায়।
বর্তমান প্রজন্মের মানুষ
এই ইতিহাস জানলো না।
উনিশ শো একাত্তর সালে স্বাধীন বাংলাদেশটা পাই,
বর্তমান প্রজন্মের কাছে সেই ইতিহাস বলে যাই।
ইতিহাসে প্রমাণ আছে,
মিথ্যা বলা চলবে না।
[রচনাকাল: ০২-১১-১৯৭৩; প্রথম প্রকাশ: ২৫-০৭-১৯৭০]
৩৭.
এই তোমার জন্য ছাড়লাম বাড়িঘর রে মুজিবর,
এই তোমার জন্য ছাড়লাম বাড়িঘর।
এই তোমার কথায় ভোট দিলাম, মিলিটারির গুলি খাইলাম,
নয় মাস ছিলাম হইয়া দেশান্তর।
ভাই-বোন সকল হারাইলাম, কত কষ্ট ভোগ করিলাম,
গুলি নিলাম বুকেরও উপর রে মুজিবর,
এই তোমার জন্য ছাড়লাম বাড়িঘর।
রক্ত দিল বাঙালিরা, ইজ্জত দিল মা-ভগ্নিরা,
জীবন দিল ভাই-বেরাদর।
এই তোমার সাথে সংগ্রাম করে তিরিশ লক্ষ মানুষ মরে,
মনে করে দেখ রে একবার রে মুজিবর,
এই তোমার জন্য ছাড়লাম বাড়িঘর।
পাকিস্তানের কারাগারে আটকাইয়া রাখে এই তোমারে,
বাঙালিরা কান্দে জারে জার।
বাংলার মানুষ এই তোমার তরে,
রোজা রাখে, নামাজ পড়ে,
কত দোয়া করে নামাজের ভিতর রে মুজিবর,
এই তোমার জন্য ছাড়লাম বাড়িঘর।
[রচনাকাল: ১৭-০২-১৯৭৪]
৩৮.
সখিনাকে একা রেখে যুদ্ধে চলে যাই,
বাড়ি ফিরে আর তো তারে খুঁজিয়া না পাই,
একাত্তরের যুদ্ধের কথা ভুলতে পারি নাই।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছিলাম,
বাংলাকে জয় করবো বলে কঠিন শপথ নিলাম।
পাক হানাদার হটিয়ে দিলাম,
স্বাধীনতা ঠিকই পেলাম,
সেই সখিনার চোখের পানি আজও দেখতে পাই,
একাত্তরের যুদ্ধের কথা ভুলতে পারি নাই।
সখিনারা বীরাঙ্গনা খুঁজে পায় না অন্ন,
এত বছর কি করেছি আমরা তাদের জন্য?
পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা যারা,
অবহেলিত কেন তারা?
পুনর্বাসন করবে কারা, ভাবিয়া না পাই,
একাত্তরের যুদ্ধের কথা ভুলতে পারি নাই।
[রচনাকাল: ১১-০৯-১৯৯৫; প্রথম কণ্ঠশিল্পী: ফকির আলমগীর]
৩৯.
বাঙালি বীরেরই সন্তান,
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পেয়ে,
একাত্তরে যুদ্ধে গিয়ে দিয়েছিল প্রাণ,
বাঙালি বীরেরই সন্তান।
অনেক রক্তের বিনিময়,
বাংলাদেশটা স্বাধীন হয়,
উড়াইয়া বিজয় পতাকা গায় বিজয়ের গান।
মুক্তিযোদ্ধা, শহীদান,
জীবন তারা করছে দান,
তাদের জন্য দোয়া করে হিন্দু-মুসলমান।
১৬ তারিখ ডিসেম্বরে,
আনন্দ উল্লাস ঘরে ঘরে,
বাংলাদেশের ইতিহাসে রয়েছে প্রমাণ।
[রচনাকাল: ১৬-০৭-১৯৭১]
৪০.
(পুঁথি : মুজিবের দুঃখের বাণী)
প্রথমে আল্লাহর নাম
জানাই সালাম রাসুলের কদমে,
এই নিবেদন করি আমি দীনহীন অধমে।
সভায় আছেন যত শত শত সালামও জানাই,
এই মিনতি করি আমি চরণধুলি চাই।
আমি বিদ্যাহীন চিরদিন, মনেতে বাসনা,
কবিতা লিখিতে একটি করেছি কল্পনা।
আমি কুটি মনসুর গাইবো সুর, বাঙালির ছেলে,
বাংলাদেশে জন্ম নিয়া এই দুঃখ কপালে।
শোনেন দুঃখের কথা বলি তথা, বললে না হয় শেষ,
শোষণ কইরা লুটে খাইলো সোনার বাংলাদেশ।
রইলো প্রাণে ব্যথা, মনের কথা প্রকাশ করে যাই,
এমন সময় শেরে বাংলা হক সাহেব আর নাই।
আরও সোহরাওয়ার্দী থাকতো যদি জীবিত,
এখন বাংলাদেশের এমন দশা হইতো না কখন।
দেখেন চিন্তা করে অন্তরে, পাকিস্তানি ভাই,
রক্ত দিয়ে সংগ্রাম করে স্বাধীনতা পাই।
এনে স্বাধীনতা, নাই ক্ষমতা বাঙালিদের হাতে,
গরিব-দুঃখী জনগণে মরতে আছে ভাতে।
এমন দুরবস্থা, শাসনকর্তা চাইলো না ফিরিয়া দেখতে,
দেখতে বাইশটি বছর গেল পার হইয়া।
গত দশ বছরে শাসন করে আইয়ুব আর মোনেম,
ইচ্ছামত রাজত্ব করছিলো কায়েম।
হয় নাই নির্বাচন, দুঃখের কারণ, শোনেন বলে যাই,
জনগণের প্রাণের দাবি কিছুই মানে নাই।
হায় রে বাংলাদেশ, সোনার দেশ, রক্ষা করবে কে?
রক্ষণকারী ভক্ষণ করছে, মরি সেই দুঃখে।
বলছেন শেখ মুজিবর, ভাই-বেরাদর বাঙালি ধারা,
সর্বদিকে বাঙালিকে করছে সর্বহারা।
বাইশটি পরিবারে শোষণ করে দুঃখেরই কারণ,
শোষক গুষ্ঠীর ইচ্ছামত চলছিলো শাসন।
তাইতো মুজিব রে দাবি করে আইয়ুব খানের তরে,
ন্যায্য কথা বলতে গিয়া কতই কষ্ট করে।
শোনেন বন্ধুগণ, আজব গঠন, আগরতলার মামলা,
দুশমনি করিয়া সাজায় ষড়যন্ত্রের ডালা।
চালায় শাসনশক্তি, করলো যুক্তি আইয়ুব-মোনেম খানে,
‘মুজিবকে দেব না মুক্তি, কষ্ট দেব প্রাণে।’
তবু মুজিব কয়, ‘ছাড়বো নয় প্রাণ থাকিতে ধড়ে,
সারা জীবন সংগ্রাম করবো জনগণের তরে।’
উনিশ শো উনসত্তুরে দেশের তরে বলবো কি রে হায়,
বলতে গেলে চোখের জলে বুক ভাসিয়া যায়।
শুনলে দুঃখের বাণী পাকিস্তানি, বাংলা মায়ের সন্তান,
জহিরুল, আনোয়ার আর আসাদুজ্জামান।
যেদিন শহীদ হইলো, জানা গেল গোপনে গোপনে,
গুলির হুকুম দিয়েছিলো আইয়ুব-মোনেম খানে।
শোনেন তার পরে, ঢাকা শহরে লাগলো হুলস্থুল,
দলাদলি, গোলাগুলি, রক্ত সমতুল।
যত মিলিটারি পাইকারি গুলি করেছিলো,
হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী, জনতা মরিলো।
এমন পরিস্থিতি, দুর্নীতি, দেখছোনি সংসারে,
শিয়াল ও কুকুরের মতো বাঙালিদের মারে।
মানুষ দিশেহারা, স্বামীহারা, পুত্রহারা,
মায়ে পুত্রশোকে মা জননী কান্দিয়া লুটায়।
শিশু কোলে লইয়া, দুধ খাওয়াইয়া বসিলো উঠানে,
এমন সময় গুলি করলো জাহেল ও শয়তানে।
ঢাকার নাখালপাড়া, স্বজনহারা, দেখছোনি রে ভাই,
এমন নিদয়া, নিষ্ঠুর কান্ড কভু দেখি নাই।
দেশের নেতা যত শত শত বন্দী করে রাখে,
সাংবাদিক, খবরের কাগজ তাহাও বন্ধ থাকে।
একদিন রাত দুপুরে ঢাকা শহরে সকলেই জানে,
কারফিউ অর্ডার ভঙ্গ করে বাহির হয় ময়দানে।
মানুষ হাজার হাজার, আজব কারবার, রাস্তায় বাহির হইলো,
ভয় করে না বন্দুক, কামান, বুক পাতিয়া দিলো।
ছিলো মিলিটারি, গুলি ভরি, যেমন পাখি শিকার করে,
নিরীহ এই বাংলার মানুষ তেমন কইরা মারে।
মানুষ দিশেহারা, সর্বহারা, সোনার বাংলাদেশে,
ঢাকা শহর, গ্রাম-বন্দর রক্তের স্রোতে ভাসে।
তবু ভয় করে না যত জনা বেঁচে রয় বাঙালি,
গণতন্ত্র কায়েম করবে, ভয় করে না গুলি।
গিয়া ক্যান্টনমেন্টে প্রধান গেটে এই দাবি জানায়,
বাংলার বন্ধু শেখ মুজিবর মুক্তি চাই তাহায়।
যেদিন খালাস পাইলো, বাহির হইলো শেখ মুজিবর,
মিটিং করে রমনার মাঠে রেসকোর্সের ভিতর।
বলছেন দুঃখের কথা, যত ব্যথা প্রকাশ করেছিলো,
এই দিকেতে আইয়ুব-মোনেম গদি ছেড়ে দিলো।
হায় রে মোনেম খান, সোনার চান, সবার পরিচিত,
কতেক লোকে পাইলে তারে কান কাটিয়া দিতো।
যা’ক গে ওসব কথা বলি তথা, ক্ষান্ত করে যাই,
বর্তমানে দেশের জন্যে প্রাণ কেঁদেছে ভাই।
আগামী শুভ দিনে রেখো মনে দেশের জনগণ,
ছয় দফা, এগারো দফার শায়ত্ব শাসন।
যদি কায়েম হয়, দেশের জয় নিশ্চয়ই হইবে,
অবিচারে শোষণ করা আর না চলিবে।
যত দুর্নীতি, শাসননীতি জনগণের হাতে,
ইচ্ছামত ভোট দিয়ে বসাবে গদিতে।
চলবে সমান সমান, আদান-প্রদান হিসাব-নিকাশ চাই,
সব জিনিসের মূল্য যদি সমানভাবে পাই।
দাবি পূর্ণ হবে, শোনেন তবে যত দুঃখের বাণী,
কবিতার সুর ক্ষান্ত দিয়া ইতির রেখা টানি।
এখন পয়ার ছন্দে…
ন্যায্য কথা বলতে গিয়া শেখ মুজিবর জেলে যায়,
বাঙালিরা দোষী কোন জায়গায়?
জুন মাসের ২৫ তারিখ করিলো প্রকাশ,
খবরের কাগজে পাইলাম হিসাব ও নিকাশ।
আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা শেখ মুজিবর,
কুড়িগ্রামের জনসভায় এই প্রশ্নটি করে,
‘পূর্ব-পশ্চিম উভয় দেশে পাকিস্তান কয়,
একই পাকিস্তানে কেন দুই রকম হয়?’
শাসনকর্তার ইচ্ছামত যার রাজত্ব সেই চালায়,
বাঙালিরা দোষী কোন জায়গায়?
এই দেশেতে চাউলের মণ পঞ্চাশ টাকা খায়,
পশ্চিম পাকিস্তানে চাউল বিশ টাকা মণ পায়।
এক শ আশি টাকা স্বর্ণের ভরি পূর্ব পাকিস্তানে,
পশ্চিম পাকিস্তানে এক শ তিরিশ টাকায় কিনে।
পাঁচ টাকা সের সর্ষের তেল এই দেশেতে খায়,
পশ্চিম পাকিস্তানে তেল আড়াই টাকায় পায়।
এই দেশে খিচুড়ি পায় না, সেই দেশে বিরিয়ানি খায়,
বাঙালিরা দোষী কোন জায়গায়?
এই দেশেতে যে কাপড় ছয় টাকা গজ কিনে,
সেই কাপড় দুই টাকা গজ পশ্চিম পাকিস্তানে।
চন্দ্রঘোনা পেপার মিলে কাগজ তৈরি হয়,
দেশের জিনিস সস্তায় পাই না দুঃখেরই বিষয়।
ফলমূল, সোনালি ফসল এই দেশেতেই ফলে,
এমন দেশটি লুটে খাইলো শোষণকারীর দলে।
গোলার ধান সিজ করে আতপ চাল কন্ট্রোলে দেয়,
বাঙালিরা দোষী কোন জায়গায়?
জনগণের বাঁচার দাবি ছয় দফার ভিতর,
জেল-জুলুম ভোগ করেছেন শেখ মুজিবর।
মুজিবরের জন্য কত হাজার হাজার লোক,
রক্ত দিল, গুলি খাইলো, পাইলো কত শোক।
বাংলা মায়ের সন্তান মোরা বাংলায় কথা বলি,
আল্লাহ, নবীর ইসলাম ধর্ম মান্য কইরা চলি।
মোটা কাপড়, মোটা ভাতে বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়,
বাঙালিরা দোষী কোন জায়গায়?
[রচনাকাল: ১২-০২-১৯৭০; প্রথম প্রকাশ: ২৫-০৭-১৯৭০]
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন